০৯-১০. নষ্টনীড়ের লোহার গেট

০৯.

নষ্টনীড়ের লোহার গেটের সামনে টম হার্পার গাড়ি থামাল।

গাড়ি থেকে নেমে গেট খুলতে গিয়ে সে মুখের ঘাম মুছল ভয়ে। সঙ্গে কোনো অস্ত্র নেই। গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে সদর দরজায় ঘন্টি বাজাতে হবে। তার কর্তার অনুমান ঠিক হলে ঐ বাড়ির মধ্যে একদল সাংঘাতিক দস্যু আছে। ওরা যদি নক্রমে জানতে পারে যে সে পুলিস অফিসার, তাহলে আর প্রাণ থাকবে না, অপহরণের সঙ্গে সঙ্গে তারা চরম অপরাধে অপরাধী হয়ে পড়বে–যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সুতরাং তাকে হত্যা করে পালাবার চেষ্টা করবে।

আস্তে আস্তে হার্পার গাড়ি চালিয়ে বাড়িটার দিকে চলল। সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশ দেখলে কোথাও এতটুকু আড়াল-আবডাল নেই। ছোটখাট কয়েকটা বালির স্তূপ আছে। সে আরো লক্ষ্য করল যে কাঁচা রাস্তাটা দিয়ে কোনো গাড়ি এলে অনেক আগে থেকেই বুঝতে পারা যায় ধুলোর মেঘ দেখে।

সিকি মাইল দূরে সবুজ লনের মাঝখানে বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে, এদিক ওদিক আরো কতকগুলো ছোট ঘর ও কেবিন। সকালবেলায় এদের অজান্তে এই বাড়িতে হানা দেওয়া অসম্ভব। রাতের বেলায় হানা দেওয়াও অত্যন্ত শক্ত ও বিপজ্জনক হবে।

সে আপনমনে শিস্ দিতে দিতে ভাবল, ডেনিসনের যদি খুব তাড়াতাড়ি এখানে হানা দেওয়ার মতলব থাকে তাহলে সহজ হবে না।

লম্বা বারান্দাটা ফাঁকা ও সবকটা জানালা বন্ধ দেখতে পেল। তারপর চোখে পড়ল বাড়ির কাছে একটা লিংকন গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাড়িটার সর্বাঙ্গে ধুলো আর পেছনে ক্যালিফোর্নিয়ার এক নম্বর প্লেট লাগানো। টম নিজের গাড়ি থামাতে থামাতে নম্বরটা মুখস্থ করে নিল।

সে বুঝতে পারল তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে দুরুদুরু বক্ষে, সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠে ঘন্টি বাজাল।

সে অপেক্ষা করতে করতে ভাবল, হবু শ্বশুর হলে কি হবে সবচেয়ে শক্ত কাজগুলো তার ঘাড়ে চাপাতে দ্বিধা করেন না।

চিতা দরজা খুলে নির্বিকার চোখে তার দিকে তাকাল।

চিতাকে দেখামাত্র সে চিনতে পারল যে জেলডা ভ্যান ওয়াইলি অদৃশ্য হবার আগে টহলদারী পুলিশ অফিসার মার্ফি তার গাড়িতে যে মেয়েটিকে দেখেছিল, তার বর্ণনা সে শুনেছিল ডেনিসনের কাছে।

ডেনিসনের অনুমান মিলে গেল। সে এক ডাকাতের আড্ডায় ঢুকে পড়েছে।

বিরক্ত করলাম বলে মনে কিছু করবেন না। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তাই ভাবলাম একবার। দেখা করে যাই। মিঃ ডারমেটের সঙ্গে দেখা হবে কি? আপনি বোধহয় মিসেস ডারমট?

ঠাণ্ডা গলায় চিতা বলল, তারা দুজনেই বেরিয়েছেন।

মিঃ হ্যারিস জোনস, অর্থাৎ এ বাড়ির মালিক আমায় এ বাড়িটা দুমাসের জন্য ভাড়া দিচ্ছেন। ভাবলাম একবার দেখে যাই। বাড়ির সাইজটা একটু দেখে নেওয়া দরকার।

এখন বাড়িতে কেউ নেই। আমি আপনাকে ঢুকতে দিতে পারছি না।

সে তো নিশ্চয়। ঠিক আছে আমি তাহলে চলি। আপনাকে বিরক্ত করতাম না, কিন্তু

 হা হা, শুনেছি আমি, আপনি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন।বলেই সশব্দে দরজা বন্ধ করে দিল।

গাড়ির দিকে হার্পার হেঁটে চলল। বুঝতে পারছে যে, এখনও তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে লোমগুলো যেন খাড়া হয়ে উঠল। মনে হচ্ছে এই বুঝি তার পিঠে একটা বুলেট এসে বিধল।কিন্তু তার চোখ থেমে নেই। গাড়িতে উঠতে পেরে হার্পার এবার স্বস্তি পেল। ডেনিসন যে খবর চাইছিলেন তা সে সংগ্রহ করে অক্ষত দেহে ফিরতে পেরেছে।

হার্পার বাড়ির নাগালের বাইরে গিয়েই গাড়ি থামিয়ে লিংকন গাড়ির নম্বর টুকে নিল। তারপর পীট শহরে পৌঁছে ডেনিসনকে ফোন করল।

আপনার আন্দাজ একেবারে মিলে গেছে। মিস ভ্যান ওয়াইলির গাড়িতে যে মেয়েটিকে দেখা গিয়েছিল সেই এসে দরজা খুলল। তারপর বাড়িটিতে যাবার রাস্তা এবং চারিপাশের বিস্তারিত বর্ণনা দিল।

ঠিক আছে। এবার কি করতে হবে শোনন। ব্রডি আর লেটুস্ কে নিয়ে রাতের অন্ধকারে ওখানে গিয়ে গা ঢাকা দিয়ে পড়ে থাকবে। শেষ রাস্তাটুকু বরং পায়ে হেঁটে যাও। সঙ্গে একটা দূরবীন নিও। দিনরাত কড়া নজর রাখবে বাড়িটার ওপর। তৈরী হয়ে নাও। পীট শহরের পুলিশ দপ্তরের ফ্রাংকলিনের কাছ থেকে তোমার যা যা দরকার নিয়ে যাও। আমি জানতে চাই যে বাড়ির ভেতরে কে কে আছে।

হার্পার বলল, হু।

একটা কথা মনে রাখবে বাড়ির বাসিন্দারা যেন বিন্দুমাত্র সন্দেহ না করে যে তাদের ওপর নজর রাখা হয়েছে। এটা তোমার দায়িত্ব। কোনো ঝুঁকি নিও না। শুভেচ্ছা রইল।

.

ভিক্টর ডারমট লস এঞ্জেলসের মাউন্ট ক্রেসেন্ট হোটেলের রিসেপশন ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়াল। বলল, আমার জন্য একটা কামরা রিজার্ভ করা আছে। আমার নাম জ্যাক হাওয়ার্ড।

আছে বৈকি, মিঃ হাওয়ার্ড। রুম নম্বর পঁচিশ আপনি তো কেবলমাত্র একরাত্রি থাকবেন, তাই না?

ভিক্টর বুঝতে পারল যে ক্লার্কটি কৌতূহলী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, হ্যাঁ, কেবল একটা রাত।

রেজিস্টারে সই করে, বেয়ারার হাতে সুটকেশ দিয়ে তার পেছন পেছন এগিয়ে গেল।

ছটা বাজতে কুড়ি মিনিট। বেয়ারা চলে যাবার পর ভিক্টর খাটের ওপর বসে পড়ল। মুখটা এখনো ব্যথা করছে। ক্যারী ও খোকা কেমন আছে?

এখন তার সুটকেসে একশ ডলারের নোটে মোট আট লক্ষ ডলার। প্রথম দুটো চেক ভাঙাতে অসুবিধে হয়নি। তাকে আরেকটা সুটকেশ কিনে চেস ন্যাশনাল ব্যাংকে তৃতীয় চেকটা ভাঙাতে যেতে হবে। তারপর সে লস এঞ্জেলস ছেড়ে নির্দেশানুযায়ী উপকূলবর্তী বিভিন্ন শহরে পরিক্রমা শুরু করবে। আজ রাত এগারোটায় সেই ডাকাতটার ফোন করবার কথা।

সারাদিনের এই স্নায়বিক উত্তেজনা আর মুখের টনটনে ব্যথা তাকে পরিশ্রান্ত করে দিয়েছে। বিছানায় শুয়ে ঘুমোবার জন্য চেষ্টা করছে।

ক্র্যামার স্যান ফ্রানসিসকো রোজ আমর্স হোটেলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা বোতলটা থেকে বড় এক গেলাস হুইস্কি ঢাললেন। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মত জল মিশিয়ে ইজিচেয়ারে আরাম করে বসলেন যদিও তার তুলনায় চেয়ারটা ছোট।

অধীরভাবে বার বার তিনি ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন। এগারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট। ডারমট টাকার প্রথম কিস্তিটা ঠিকমত জোগাড় করতে পেরেছে তো? এক চুমুক হুইস্কি খেয়ে ভাবলেন আর মদ টানা উচিত হবেনা। নৈশভোজের পর থেকে একটানা ড্রিংক করে চলেছেন তিনি। গা বেশ গরম লাগছে আর সঙ্গে সেই বুকের যন্ত্রণাটা। সিগার ধরিয়ে হোটেলের টেলিফোন অপারেটরকে বললেন লস এঞ্জেলসের মাউন্ট ক্রেসেন্ট হোটেল ধরে দিতে। একটু দেরি হল নম্বরটা পেতে।

ভিক্টরের গলা চিনতে পারলেন ক্র্যামার।

তিনি বললেন, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমি কে? কাজ কেমন চলছে? সাবধানে কথা বলুন। কোনো ঝামেলা হয়নি তো?

না।

পয়লা কিস্তির মাল পেয়ে গেছেন?

হ্যাঁ।

চমৎকার। কাল আপনি সান্টা বারবারা যাবেন। সেখান থেকে সালিনাস শহর। সেখানে ক্যামব্রিয়া হোটেলে একই নামে আপনার জন্য একটা ঘর রিজার্ভ করে রেখেছি। কাল এই সময় আবার আপনাকে ফোন করব।

বুঝেছি। কিন্তু আমার স্ত্রীকে একটা ফোন করতে চাই। পারবো করতে?

সেটা ঠিক উচিত হবে না। আমার বন্ধুটি বিরক্ত হতে পারে, সে তেমন ফোন টোন পছন্দ করে না। বলে তিনি ফোন ছেড়ে দিলেন।

.

গেলাস শেষ করে আবার হুইস্কি ঢাললেন। তাঁর ভারী মুখ লাল হয়ে উঠেছে।

আমার হাতে এখন আট লক্ষ ডলারক্র্যামার মনে মনে ভাবলে। আর তিনদিনের মধ্যে পুরো চল্লিশ লক্ষ ডলার হাতে আসবে। মো আর ঐ ছোঁড়া–দুড়ী দুটোকে কিছু টাকা দিতে হবে। তার পরেও হাতে পঁয়ত্রিশ লাখের বেশী থাকবে। অনায়াসে জীবনের বাকি দিনগুলো এই টাকায় কেটে যাবে।

হেলেনের সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে হল। নিজেকে সান্ত্বনা দিলেন, না, বিপদের সম্ভাবনা কিছু নেই। বিপদ আবার কী হবে। অপারেটরকে বাড়ির নম্বরটা দিয়ে ফোন নামিয়ে রাখলেন। হেলেন নিশ্চয় খুব দুশ্চিন্তা করছে। এবার ওকে সলি লুকাসের ব্যাপারটা জানানো উচিত। আজ হোক কাল যোক তাকে কথাটা তো জানাতেই হবে। একসঙ্গে সবকিছু দুম করে ফাঁস করা ঠিক হবে না।

টেলিফোন বেজে উঠতেই ক্র্যামার রিসিভার তুলে নিলেন।

হ্যালো হেলেনের গলা কেমন যেন দূরাগত ও উত্তেজিত মনে হল কে কথা বলছেন?

ক্র্যামার খোশ মেজাজে হেসে বললেন, তোমার প্রেমিক কথা বলছি।

ও, জিম! ব্যাপার কি বলো তো? তুমি কোথায় আছ?

ডেনিসনের কর্মচারী জো সীসগারের ওপর ক্র্যামারের বাড়ির ফোন ট্যাপ করবার ভার ছিল। সে এবার নিঃশব্দে টেলিফোন লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত টেপ রেকর্ডারটি চালিয়ে দিল।

কেমন আছো প্রিয়ে? আমার জন্য মন কেমন করছে নাকি?

জিম! দুজন পুলিশ অফিসার এখানে এসেছিলেন। তোমার খোঁজ করছিলেন।

ততক্ষণে সীস ব্রুগার টেলিফোন ইঞ্জিনীয়ারকে ডাক দিয়েছে। ফিস ফিস করে বলল, শিগগীর বার করো এই ফোনটা কোথা থেকে আসছে।

ক্র্যামার বললেন, কী বললে? কী জন্য তারা এসেছিল?

তোমার সঙ্গে ওঁদের কথা বলবার ছিল। জিম, আমার ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মো যে এখানে এসেছিল, তা-ও ওরা জানেন। এই অফিসারটি, অর্থাৎ ইন্সপেক্টর ডেনিসন

হাত থেকে রিসিভার প্রায় খসে পড়ল ক্র্যামারের, ডেনিসন!

হ্যাঁ। উনি বললেন মোর নাকি রেস্তোরাঁ টেস্তোরাঁ কিছু নেই। ওর নিজের বলতে একটি পয়সাও নেই। উনি–উনি বললেন যে তুমি যদি মঙ্গল চাও তাহলে কোনোরকম কুকীর্তি, কুমতলব কোরো না। জিম! তুমি নিশ্চয় তেমন কিছু করছ না, কি বল? …

ক্র্যামার ভাবছিলেন, ডেনিসন! এফ.বি. আই-এর সবচেয়ে সুদক্ষ অফিসারদের একজন এবং তার অনেক দিনের শত্রু।

তিনি বললেন, আমি তোমায় পরে ফোন করব। চিন্তা করবার কিছু নেই। এখন আমায় বেরোতে হবে। খামোকা দুশ্চিন্তা কোরো না।

টেলিফোন ইঞ্জিনীয়ার জানাল, ফোনটা এসেছিল স্যান ফ্রানসিসকোর রোজ আর্মস হোটেল থেকে।

সীস ব্রুগার খপ করে রিসিভার তুলে স্যান ফ্রানসিসকোর পুলিশ দপ্তরের কানেকশন চাইল।

ক্র্যামার উঠে দাঁড়ালেন। হেলেনকে ফোন করা অত্যন্ত বোকামি হয়েছে। মো-কে তার সঙ্গে মিলিত হতে দেখেই পুলিশ বুঝতে পেরেছে যে তার মাথায় বদ মতলব আছে। রঙ্গমঞ্চে যখন ডেনিসন এসে গেছে তখন ধোঁকা দেওয়া অসম্ভব। ডেনিসন নির্ঘাত তার বাড়ির লাইনে আড়ী পাতবার ব্যবস্থা করেছিল। তারা জেনে গেছে যে তিনি এই হোটেলে আছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এসে পড়বে। ক্র্যামার গায়ে কোট চাপিয়েছেন। তার সুটকেসে জামা কাপড় ও টুকিটাকি জিনিষ ছাড়া আর কিছু নেই আর হোটেলের টাকা মেটাবার সময়ও নেই–পুলিশ এসে। পড়বে। চটপট বেরিয়ে পড়া দরকার।

দুজন পুলিশ অফিসার এগারো মিনিটের মধ্যেই বোজ আর্মস হোটেলে এসে ঢুকল। চটপট নিজেদের পরিচয় পত্র দেখিয়ে স্তম্ভিত রিসেপশন ক্লার্কটির নাকের সামনে ক্র্যামারের ফটোটি তুলে ধরল।

এ লোকটিকে দেখেছ?

বাঃ, নিশ্চয় দেখেছি। এতো মিঃ ম্যাসনের ছবি। ভদ্রলোক মাত্র দুমিনিট আগে বেরিয়ে গেলেন।

দুজনের মধ্যে যে একটু বেশি লম্বা তার নাম বব আর্লান। সে বলল, আজ রাতে মিঃ ম্যাসন কি কোনো টেলিফোন করেছিলেন?

সেটা আমি জানি না তবে খুব সহজেই জানা যেতে পারে। বলে সে পাশের ঘরে ঢুকল। এ ঘরে সুইচ বোর্ড রয়েছে টেলিফোনের। আলান তার পিছু পিছু এল।

পুলিশ অফিসারের প্রশ্নের জবাব টেলিফোন অপারেটর এক এক করে দিল।

বাড়ি ফেরবার যোগাড় করছেন ডেনিসন, এমন সময় আলানের ফোন এল।

ক্র্যামার একটুর জন্য আমাদের ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছেন। বাড়ি ছাড়া আরেক জায়গায় ফোন করেছিলেন তিনি। রাত এগারোটায় লস এঞ্জেলসের মাউন্ট ক্রেসেন্ট হোটেলে জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন।

ডেনিসন বললেন, ঠিক আছে। আপাততঃ ক্র্যামারের কথা ভুলে যাও। এখনো তাকে ধরবার সময় হয়নি। তিনি লাইন কেটে এবার সীস ব্রুগারকে ফোন করলেন, কান খাড়া করে বসে থাকো। মিসেস ক্র্যামারের কাছে আসা প্রতিটি ফোনের বিবরণ আমার চাই।

বারোটা বাজতে দশ মিনিট, ডেনিসন বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিলেন যে ফিরতে অনেক রাত হবে, নীচে নেমে নিজের মোটরে বসে লস এঞ্জেলসের দিকে ছুটলেন।

.

ক্যারীর শোবার ঘরে সবাই জড়ো হয়েছে। ঘরের ভেতর ভ্যাপসা গরম কারণ হার্পারকে আসতে দেখেই মো ঘরের সব জানালা বন্ধ করে দিয়েছে।

বাচ্চার খাটের পাশেক্যারীদাঁড়িয়ে। গরমে বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়েছে। জেলআর রিফ জানালার পাশে, লেসের পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। মো পিস্তল হাতে এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে যেখান থেকে জানলার ফাঁক দিয়ে বাইরেটা দেখতে পাবে। আর এই তিনজনকে পাহারাও দিতে পারবে।

গাড়ি চালিয়ে হার্পারকে বেরিয়ে যেতে দেখল। তারা হার্পার ও চিতার কথাবার্তা সবই শুনেছে। এবার চিতা ঘরে ঢুকল।

মো আশ্বস্ত হয়ে বলল, ঠিক আছে। যত ব বাজে ব্যাপার। জানলাগুলো খোলো।

মো বলল, শোনো তোমরা দুজনে মুক্তিপণ পাবার পর কি কর না কর তাতে কিসসু যায় আসে না। কিন্তু ক্র্যামার টাকা নিয়ে না আসা পর্যন্ত কেউ এখান থেকে এক পা নড়তে পারবে না। তোমার মত গুণ্ডাদের চরিয়ে আমার সারাটা জীবন কেটেছে। বদমায়েশি করলে করতে পার কিন্তু এখন থেকে আমার কথার আগে গুলি ছুটবে। বুঝতে পেরেছ?

রিফ রাগে ফুলছে কিন্তু মো যেরকম অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় পিস্তল বার করেছিল তার পরে তার সামনে দাঁড়াবার মত ক্ষমতা বা সাহস নেই।

রিফ খেঁকিয়ে উঠল, তোমার মাথা বিগড়ে গেছে? বুঝতে পারছ না যে এর ফলে আমরা সাদা হাতে বেরিয়ে আসতে পারব? ওকে ফেরৎ দিলেই আমরা বেকসুর খালাস পাবো। কিন্তু মুক্তিপণ একবার নিলেই আমরা ফেঁসে যাবো।

মো শান্ত গলায় বলল, আমরা কেউ ফাসব না। এ কাজের প্রতিটি খুঁটিনাটি আগে থেকেই প্ল্যান করা আছে। তোমরাদুজনে-ক্রেন ভাইবোনদের দিকে পিস্তল তুলে বলল, এবাড়ি থেকে বেরোও। এখন থেকে বাইরের একটা কেবিনে থাকবে তোমরা। জেলডা এখানেই থাকবে। তোমাদের দুজনের একজন ও যদি এ বাড়ির পঞ্চাশ গজের মধ্যে পা দাও, স্রেফ গুলি খাবে। প্রাণে মারব না। তবে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব। মাথায় ঢুকেছে?

শয়তানি হাসি হেসে রিফ বলল,আর তুমি কি করবে মোটকু? তিনরাত্তির জেগে আমাদের পাহারা দেবে?

পিস্তলের গর্জনে ঘর কেঁপে উঠল।

এক ঝলক ভয়ংকর হলদে আগুন ফটোগ্রাফারের ফ্ল্যাশগানের মত মুহূর্তের মধ্যে আলো করে দিল। জেলডা চীৎকার করে উঠল।

রিফ টলতে টলতে পিছু হটে এল। হাত কানের ওপর উঠে এল। আঙুল দিয়ে রক্ত বেরোল, ঘাড়ের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল। রিফ রক্তের দিকে তাকিয়ে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।

সে নরম গলায় বলল, গুলি চালাতে আমি জানি। এবার এখান থেকে সোজা বেরিয়ে যাও, আর ফেরবার চেষ্টা কোরো না। তুমিও যাও, চিতার উদ্দেশ্যে বলল।

কানে একটা নোংরা রুমাল চাপা দিয়ে রিফ বেরিয়ে গেল। বুলেটটা দক্ষ ম্যার্সেনের ছুরির মত তার কানের লতি উড়িয়ে দিয়েছে।

পিছু পিছু চিতাও বেরিয়ে গেল। খোকা জেগে কান্না শুরু করল। জেলডা উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। পিস্তলের গর্জনে ক্যারীর মুখ সাদা হয়ে গিয়েছিল। সে খোকাকে তুলে নিল।

যতক্ষণ না রিফ আর চিতা সবুজ লন পেরিয়ে কেবিনে না ঢোকে, মো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সে ক্যারীর দিকে ঘুরে দাঁড়াল।

তোমার এই মেয়েটিকে পাহারা দিতে হবে। একে চোখের আড়াল কোরো না। আমি ওই দুজনের ওপর নজর রাখছি। তুমি যদি তোমার বাচ্চাশুদ্ধ জ্যান্ত বেরোতে চাও, আমার সঙ্গে সহযোগিতা করতেই হবে। টাকা পৌঁছতে এখনো তিনদিন বাকি। আমার সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি তো?

ক্যারী ভেবে দেখল এই মোটা ইটালিয়ানটি এ পর্যন্ত তার সঙ্গে ভালোই ব্যবহার করেছে। ক্রেন ভাইবোনদের বা এই মূর্খ মেয়েটাকে একবিন্দুবিশাসকরা চলেনা। এই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ থাকা চলবে না। কারো না কারো পক্ষ নিতেই হবে। তাই মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে। আমি আপনাকে সাহায্য করব।

অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে মো পিস্তল ভরে রাখল। ক্রন্দনরত খোকার দিকে তাকিয়ে, আমার ভাইয়ের দশটি ছেলেমেয়ে। যুদ্ধের সময় সে মারা গিয়েছিল। তার ছেলেমেয়েদের আমিই মানুষ করেছি। বাচ্চাদের আমি খুব ভালো সামলাতে পারি। ওকে আমার কোলে দেবে?

ক্যারী আপত্তি করতে যাচ্ছিল কিন্তু মোর চোখে অদ্ভুত এক কোমল দৃষ্টি দেখে থেমে গেল।

ক্যারী বলল, ও-ও নতুন মুখ তেমন পছন্দ করে না। আপনার কাছে হয়ত

ততক্ষণে মো দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছ। অগত্যা কারী খোকাকে তুলে দিল। খোকা হঠাৎ কান্না থামিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে মো-কে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। মো দুগাল ফুলিয়ে, মৃদু শিসের মত আওয়াজ করল, তারপরেই একমুখ হাসি। খোকাও হাসতে লাগল।

কান্না থামিয়ে জেল মো ও ক্যারীর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল। তবু তারা জেলডার দিকে ভ্রূক্ষেপ করল না।

মো বলল, বাচ্চাদের আমার খুব ভাল লাগে। ওরাও আমায় খুব ভালবাসে। তুমি, আমি আর তোমার বাচ্চা তাহলে একদলে, কি বল? তুমি মেয়েটার ওপর নজর রেখো। কোনো গণ্ডগোল করলে আমায় ডাকবে। আমি এক থাপ্পড়ে সিধে করে দেব।

খোকাকে ক্যারীর কাছে দিয়ে মো বারান্দায় গিয়ে বসল। সেখান থেকে কেবিনটা দেখা যাচ্ছিল। ক্যারীকে বিশ্বাস করা চলে কিন্তু ঐ ক্রেন ভাইবোন দুজন সাপের মত ধূর্ত। তিনরাত্রি জেগে পাহারা দেওয়া সত্যিই অসম্ভব। মোর একমাত্র আশা,যদি ইতিমধ্যে ক্র্যামার ফোন করেন তাহলে সে তাকে সবকিছু জানাতে পারবে। কেবিনের দিকে দেখল, জানালার খড়খড়ি ও দরজা বন্ধ। ক্রেন ভাইবোন এখন কী করছে?

রিফ ওয়াশ বেসিনে নিজের কানে জলের ঝাঁপটা দিচ্ছিল আর শাপ-শাপান্ত করছিল। গুলি খেয়েই তার সব সাহস উবে গেল।

চিতা ইজিচেয়ারে আরাম করে শুয়ে ভাইকে দেখতে পাচ্ছিল, কিন্তু তাকে সাহায্য করবার চেষ্টা করল না।

এখনো রক্ত পড়ছে দেখে রিফ খেঁকিয়ে উঠল, তুই একটু হাত লাগাতে পারছি না। চুপ করে বসে আছিস যে। রক্তটা থামাবার ব্যবস্থা করতে পারছিস না?

জীবনে এই প্রথম ভাইকে সাহায্য করবার একটুও ইচ্ছে হল না চিতার। রিফ ঐ টাকাওয়ালা কুত্তীটাকে বিয়ে করবার জন্য মেতে ওঠায় তার মনে এত ঘেন্না ও হিংসে জন্মেছে মনে হচ্ছে যে আজ এক জল্লাদের কুঠারাঘাতে তাদের জন্মের যোগসূত্রটুক নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

রিফকে চিতা ভাল করেই চেনে। রিফ যখন বলেছে যে সে জেলডাকে বিয়ে করবে তখন রিফ সত্যিই এ বিয়ে চাইছে। রিফ ইতিমধ্যেই স্বপ্ন দেখছে, কী করে মেয়েটার টাকা ওড়াবে। কী করে সে চিতার একান্ত প্রিয় সেই দুরূহ বর্ণহীন জীবন ছেড়ে, পালিয়ে আসবে। কী করে ঐশ্বর্যের নরম পাঁকে ডুবে থাকবে। শীগগিরই একদিন রিফ তাকে ছেড়ে চলে যাবে। সে কখনও চাইবেনা যে সারাজীবন চিতা তার লেজুড় হয়ে জ্বালাতন করুক। সে চিতাকে টাকা দেবে নিশ্চিত কিন্তু সেই সঙ্গে চাইবে চিতা তাকে নিষ্কৃতি দিক, যাতে সে ধনীদের সেই নরম, অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন জীবন স্রোতে গা ঢেলে দিতে পারে।

রিফ গালাগালি দিতে দিতেই শোবার ঘরে এসে বিছানার চাদর থেকে একফালি চাদর ছিঁড়ে একটা প্যাডের মতন তৈরী করে কানের ওপর চেপে ধরল। তারপর আরেকফালি কাপড় দিয়ে সেটাকে মাথার সঙ্গে বাঁধল। এতক্ষণে রক্ত বন্ধ হল।

এতক্ষণে অন্ধকার হয়ে এসেছে। রিফ বসবার ঘরে এল। তার চামড়ার জ্যাকেটে রক্তের দাগ। মুখ ফ্যাকাশে, চোখে রাগের আগুন।

কী হয়েছে তোর? আমায় একটু সাহায্য করলি না যে?

চিতা নির্বিকার মুখে চেয়ে রইল।

ঐ ব্যাটা মোটকু। কে জানে ব্যাটা অত ভাল গুলি চালায়। ও ইচ্ছে করলেই আমায় খতম করতে পারত।

চিতা ভ্রূক্ষেপও করল না।

অনেকক্ষণ অস্বস্তির সঙ্গে রিফ চিতার দিকে তাকিয়ে ভাবল চিতার এব্যবহার একেবারে নতুন। কিন্তু কথা বলানোর জন্য সাধ্যসাধনা করতে তার অহমিকায় বাঁধল। তাই সে একবার জানলার কাছে গিয়ে খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে উঁকি মারল। মো-কে বারান্দায় দেখতে পেল। একটা পিস্তল থাকলে এখান থেকে গুলি চালালে লক্ষ্যভ্রষ্ট হত না। হঠাৎ মনে পড়ল সেই হারানো রিভলবারের রহস্য। ডারমটের রিভলবারটা হিপ পকেটে রেখেছিল। কিন্তু বার করতে গিয়ে দেখে সেটা নেই। নিশ্চয় কেউ নিয়েছে। মো তখন বাড়ি ছিল না। সুতরাং তিনজন মেয়ের একজন কেউ সরিয়েছে ওটি।

সন্দিগ্ধ চোখে রিফ চিতার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার রিভলভারটা নিয়েছিস?

উদাসীনভাবে ঠাণ্ডা গলায় চিতা বলল, রিভলভার? কিসের রিভলভার?

 ডারমটের রিভলভার। প্যান্টের পকেটে রেখেছিলাম তারপর দেখি নেই।

 চিতা মুখ ভেংচে বলল, নিজের প্যান্টের পকেট সামলাতে পারিস না।

তুই নিয়েছিস কিনা বল?

আমি কেন নিতে যাব? দারুণ ক্ষিধে পেয়েছে, বলে চিতা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল।

রিফ খপ করে তার হাত চেপে চীৎকার করে উঠল, নিয়েছিস তুই?

এত জোরে ঝটকা মেরে চিতা হাত ছাড়িয়ে নিল যে রিফ অবাক।

গায়ে হাত দিনে। রিভলভারটা আমার কাছে নেই। কার কাছে আছে তা নিয়ে আমার মাথাব্যথাও নেই।

রান্নাঘরে ঢুকে গেল চিতা।

রিফ গালাগাল দিতে দিতে চিন্তিত মনে জানালায় গিয়ে মোর দিকে তাকিয়ে রইল।

ডেনিসন রাত একটার পর লস এঞ্জেলসের মাউন্ট ক্রেসেন্ট হোটেলে এসে ঢুকলেন।

রিসেপশন ডেস্কের ক্লার্কটির কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলেন এ হোটেলে আজ নতুন কে কে এসেছে। ক্লার্কটি তাকে রেজিস্টার দেখাল। অল্প জিজ্ঞাসাবাদের পর ডেনিসন বললেন, আর এই ভদ্রলোক, জ্যাক হাওয়ার্ড-এর চেহারা মনে আছে?

হ্যাঁ, নিশ্চয়, লম্বা শ্যামলা চেহারা পোশাক আশাক বেশ দামী। মুখের একপাশে কাটা দাগ-বড় বিশ্রী দাগটা।

এর ঘরের একটা বাড়তি চাবি আমায় দাও দেখি, এর সঙ্গেই আমি দেখা করতে চাই।

দ্বিধাগ্রস্ত ভাবে ক্লার্কটি পেছনের একটা হুক থেকে চাবি নিয়ে ডেনিসনকে দিল।

ইন্সপেক্টর আমরা এখানে কোন গণ্ডগোল চাই না। আসা করি কথাটা মনে রাখবেন।

নিশ্চয়, নিশ্চয়, গণ্ডগোল কে চায়?

 ভিক্টর অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে ক্যারীর কথা ভাবছিল। দুঘণ্টা ধরে একই চিন্তা ঘুরছে সে যদি নিজের কাজ ঠিকমত করে যায়, তাহলে ক্যারী ও খোকার কোনো বিপদ হবে না। কিন্তু ক্রেন ভাইবোনদের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছিল না। এদের অসাধ্য কিছুই নেই। সহসা কানে এল এক মৃদু শব্দ সে সচকিত হয়ে উঠল।

আস্তে করে তালায় চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিলেন ডেনিসন, দরজা খুলে গেল। সেই মুহূর্তে ভিক্টর ঘরের আলো জ্বালাল।

ডেনিসন ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বললেন, আমি ইন্সপেক্টর ডেনিসন, ফেডারেল ব্যুরো থেকে আসছি। আপনি মিঃ ভিক্টর ডারমট, তাই না?

ভিক্টর বলল, হ্যাঁ। কী ব্যাপার বলুন তো? আপনি হঠাৎ আমার ঘরে?

সব ঠিক আছে, মিঃ ডারমট। আমি আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি। আমরা সবকিছুই জেনেছি। আপনি যে কী বিপদে পড়েছেন, তা আমরা জানি। এবার আসুন, একসঙ্গে কাজ করা যাক। আমরা এই ডাকাতদের ধরতে চাই। অবশ্য সেই সঙ্গে মিসেস ডারমট ও আপনার বাচ্চার যাতে কোনো বিপদ না হয়, সেটাও আমরা দেখবো। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, যতক্ষণ না টাকা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং মিসেস ডারমট মুক্তি পাচ্ছেন, ততক্ষণ আমরা কিছু করবার চেষ্টা করব না। আপনি শুনে হয়ত ভরসা পাবেন যে,ঠিক এই মুহূর্তে আমার তিনজন অফিসারনষ্টনীড় পাহারা দিচ্ছে। খারাপ কিছু ঘটতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তারা গিয়ে আপনার স্ত্রীকে সাহায্য করবে।

ভিক্টর রেগে বলল, এ ব্যাপারে নাক না গলালেই আপনাদের চলত না? ভ্যান ওয়াইলির মত ধনী লোকের কাছে চল্লিশ লক্ষ ডলার কতটুকু? এই ডাকাতগুলো অতি সাংঘাতিক। বিপদ বুঝলে বাড়ির সবাইকে শেষ করতে দ্বিধা করবে না। ওরা ইতিমধ্যেই আমার চাকরকে খুন করেছে। ওরা ।

দাঁড়ান, দাঁড়ান, আপনি বলছেন আপনার চাকরকে ওরা খুন করেছে?

নিজেকে সামলে নিয়ে ভিক্টর বলল, সঠিক কিছু বলতে পারি না, তবে চাকরটার শোবার ঘরে অনেক রক্ত জমেছিল। তারপর আর তাকে দেখিনি।

ডেনিসন সান্ত্বনার সুরে বললেন, হয়ত আপনারই মত জোর চোট লেগেছে তার। এবার একটু শান্ত হবার চেষ্টা করুন মিঃ ডারমট। হয়ত আপনার পরিস্থিতিতে পড়লে আমিও ওরকম করতাম। আমাদের এই সাক্ষাতের কথা কেউ জানেনা। আপাততঃ আপনার কাছে কিছু খবর চাই। সবকটা ডাকাতের বর্ণনা চাই আমি। আবার বলছি, আপনার স্ত্রী ও ছেলে নিরাপদ না হলে আমরা কিছু করবোনা।

আমি আপনাকে কিছু বলতে পারব না। আমার বৌ-ছেলের নিরাপত্তা ছাড়া আর কোনো বিষয়ে আমার আগ্রহ নেই।

সে বুঝতে পারছি কিন্তু ব্যাপারটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মিঃ ডারমট। আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেন। আমি বরং বলে যাই আর আপনি জানান ঠিক আছে কিনা আমার অনুমান। আমার ধারণা এই অপহরণের নায়ক যিনি তার বয়েস ষাট, দীর্ঘ, ভারী চেহারা, আর গায়ের রং লালচে। ঠিক আছে?

একবার দ্বিধা করে ভিক্টর মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

তার সঙ্গে আরেকটি লোক আছে? ইটালিয়ান বেঁটে মোটা এবং গায়ের রং কালচে। ঠিক কিনা?

ভিক্টর মাথা নাড়ল।

ওদের সঙ্গে একটি মেয়ে আছে; মাথার চুল সোনালী, লম্বা। একটু রুক্ষ ধরনের মুখ সুশ্রী চেহারা। বয়েস বাইশ কি তেইশ, ঠিক বলছি?

ভিক্টর আবার মাথা নাড়ল।

এছাড়াও আরেকটি ছেলে আছে কিন্তু তার সম্বন্ধে আমি কিছু জানি না আর আমার আগ্রহ নেই জানার।

ভিক্টর বলল, ঐ মেয়েটির যমজ ভাই এই ছেলেটি। একেই আমি বেশী ভয় পাচ্ছি–এক হিংস্র নৃংশস গুণ্ডা। এই ছেলেটিই আমায় চোট লাগিয়েছে। হাতের মুঠোয় একটা সাইকেলের চেন জড়িয়ে রাখে।

কেমন চেহারা তার?

রিফের বর্ণনা দিল ভিক্টর। তাঁর বলা শেষ হতেই ডেনিসন উঠে দাঁড়ালেন।

আপনি এখন যা করছেন তাই করে যান, মিঃ ডারমট। মুক্তিপনের টাকা জোগাড় করুন।একটা কার্ড দিয়ে বললেন, এতে আমার ফোন নম্বর আছে। মুখস্থ করে কার্ডটা পুড়িয়ে ফেলবেন। পুরো টাকা জোগাড় করা হলেই আমাকে ফোন করবেন। ডাকাতগুলো ভেবেছে একবার টাকাটা হাতে। পেলেই কাম ফতে। কিন্তু ভ্যান ওয়াইলিকে তারা চেনে না। আপনার স্ত্রী, ছেলে ও মিস ভ্যান। ওয়াইলি মুক্তি পেলেই আমরা ওদের পিছু নেব। এখন থেকে আমার তিনজন অফিসার আপনার সঙ্গে থাকবে। সাহায্যের প্রয়োজন হলেই তাদের ডাকবেন–আপনি মিথ্যা দুশ্চিন্তা করবেন না। আমরা তাড়াহুড়োর মাথায় কিছু করব না।

অসহায় ভঙ্গিতে ভিক্টর বলল, মনে হচ্ছে আপনার ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু যতক্ষণ না ডাকাতগুলো নষ্টনীড় থেকে বেরোয়, দয়া করে কিছু করবেন না।

ডেনিসন দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন, আমি কথা দিচ্ছি, ভাববার কিছু নেই। এভাবে ঘরে ঢুকে বিরক্ত করলাম বলে মনে কিছু করবেন না।

শুভরাত্রি, মিঃ ডারমট। বলেই বেরিয়ে গেলেন।

ভিক্টর সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল শূন্য-দৃষ্টিতে।

.

১০.

সাবধানে মাথা তুলে ঘুমন্তকারীর দিকে জেলডা তাকাল। খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো ঘরে ঢুকছে। জেলডা ক্যারীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর খুব সতর্কতার সঙ্গে নেমে পড়ল।

থমথমে নিস্তব্ধতা বাড়ি জুড়ে, জেলডা ভাবল, চুপিসাড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঐ কেবিনে ঢোকার ঝুঁকি নেবে না শুয়ে পড়বে। মোটা ইটালিয়ানটা কি জেগে আছে? এতক্ষণে তো ঘুমিয়ে পড়বার কথা, কিছু বলা যায় না।

রিফের কাছে যেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। একবার তার কাছে যেতে পারলেই তারা এখান থেকে পালাতে পারবে নিশ্চিত। রিফের কাছে পৌঁছতে হবেই।

জেলডা উঠে খাটের পাশে রাখা শার্ট প্যান্টটা পরে নিল।

একবার ঘুমের মধ্যে ক্যারী পাশ ফিরল। সঙ্গে সঙ্গে জেলডা স্থির হয়ে গেল। বুক ঢিপঢিপ করছে। ক্যারীর ঘুমের গভীরভাব দেখে সে খালি পায়ে নিঃশব্দে দরজার দিকে এগোলো। আস্তে করে ছিটকিনি খুলে পা টিপে টিপে রান্নাঘরে ঢুকল। তারপর সেখানকার খিড়কির দরজা খুলে বেরিয়ে এল জ্যোৎস্নায় ভরা রাত্রির বুকে।

বারান্দায় মো জেগে বসে থাকবার অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাত জাগার অভ্যেস তার একেবারেই নেই। একটা চেয়ারে আরাম করে সে বসেছিল, পিস্তলটা কোলের ওপর রেখে। এখন সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

বাড়ির সামনের দিকে এসে মোর নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পেল। তারপর একদৌড়ে লন পেরিয়ে বালুর ওপর দিয়ে কেবিনের দিকে দৌড়ল।

চিতা কেবিনের ভেতর শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়েছিল। ঘুম যেন এসেও আসছে না। বসবার ঘরে রিফও শুয়ে শুয়ে ঝিমোচ্ছ। দীর্ঘ দুঘণ্টা ধরে সে দূরের বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বসেছিল। কিন্তু তারপর চাঁদটা বাড়ির পেছনে সরে যাবার সাথে সাথে বাড়ির চারপাশের ছায়াঘন হয়ে এল। সে আর মো-কে দেখতে পেল না। ওদিকে পা বাড়াবার সাহস তার নেই। ঠ্যাং খোঁড়া করবার ঝুঁকি নিতে সে রাজী নয়। সে দুটো চেয়ার এক করে গা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং ঝিমোতে ঝিমোতে ভাবছে জেলডার কথা।

হঠাৎ একটা শব্দ হতেই চিতা সজাগ হয়ে উঠল।দরজায় ক্যাচ করে শব্দ হল। তারপর বসবার ঘর থেকে ফিসফিসে গলার আওয়াজ ভেসে এল। সে নেমে দরজার দিকে গেল। দরজায় কান পাতল। জেলডার গলা। গায়ের রক্ত গরম হয়ে উঠল। সে আস্তে আস্তে ছিটকিনি খুলে দরজাটাকে ইঞ্চিখানেক ফাঁক করল। যাতে সব কথা শোনা যায়।

দরজার আওয়াজ হতেই রিফ ধড়মড় করে উঠে বসল, কিন্তু জেলডার গলায় আশ্বস্ত হল। জেলডা বলল, ভয় পেয়ো না রিফআমি এসেছি।

সে অন্ধকারে রিফের পাশে হাঁটু পেতে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখল।

জেলডা রিফের কদমছাট চুলের ভেতর আঙুল চালাতে চালাতে বলল, আমি থাকতে পারলাম না, তোমার কি খুব লেগেছে?

রিফ তাকে কাছে টেনে জিজ্ঞেস করল, ও লোকটা কোথায়? ঘুমিয়ে পড়েছে?

হা। রিফ, এখান থেকে পালানো যায় না? চলো না আমরা এখুনি পালিয়ে যাই।

মোটকু দারুণ গুলি চালায়। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমার কানের কী অবস্থা করল, দেখলে তো?

চিতা কোথায়?

পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছে। আস্তে কথা বলো, ও যেন শুনতে না পায়। সে জেলডাকে বুকে টেনে নিল।

দরজা বন্ধ করে চিতা খাটে গিয়ে বসল। ক্রমশঃ অস্ফুট কথাগুলো যখন একান্ত বল্গাহীন হয়ে উঠল, তখন সে উঠে দাঁড়াল। ভাবল ব্যাপারটাকে আর এগোতে দেওয়া চলবে না–তার ভাই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। একে রোধ করবার একটা মাত্র উপায় আছে। জেলডার গলায় তীব্র আনন্দের অস্ফুট চীৎকার শোনা গেল চিতার মনে আর দ্বিধা রইল না। জানলার কাছে গিয়ে খড়খড়ি খুলে জানালা গলে বাইরে বেরোল।

সে নিঃশব্দে গ্যারেজের সামনে গিয়ে সাবধানে দরজা টেনে তুলে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। কিছুক্ষণ হাতড়াবার পর আলোর সুইচ পেয়ে আলো জ্বালালো। গ্যারেজের অপর প্রান্তে দেখতে পেল পার্থিব বস্তুটি–একটা লম্বা হাতলওয়ালা কোদাল।

 চিতা কোদাল নিয়ে আলো নিভিয়ে বাইরে এল।

ডি-লঙের কবর খুঁজে বার করতে তার দুঘণ্টা লেগে গেল। অনেক খোঁড়াখুড়ি করে শেষে বালির তলায় মৃতদেহটাকে আবিষ্কার করল চিতা। ততক্ষণে রাত দুটো বেজে গেছে। নষ্টনীড়ের ওপর চাঁদ আলো বর্ষণ করছে।

আস্তে আস্তে মোনাক ডেকে চলেছে। ক্যারীভিক্টরের স্বপ্ন দেখছে। রিফ আর জেলডা অবসন্ন দেহে মাটিতে শুয়ে আছে অধজাগ্রত অবস্থায়।

টম হার্পার বাড়ি থেকে সিকি মাইল দূরে নিকটতম বালির স্তূপটার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে। তার সঙ্গে লেটস আর ব্রডি। হার্পার স্যান ফ্রানসিসকোর পুলিশের কাছ থেকে একটা পেরিস্কোপ এনেছে। এর সাহায্যে আড়াল থেকে বাড়ির ওপর নজর রাখতে পারছে। লেটুস্ ও ব্রডি ঘুমিয়ে পড়েছে। নজর রাখা সত্ত্বেও কেবিন থেকে চিতার বেরিয়ে আসা হার্পারের চোখে পড়েনি। পেরিস্কোপ তেমন কাজে দেয় না।

চিতা কায়দা করে ঘরে ফিরে এল। শুয়ে পড়ল, পাশের ঘর থেকে ফিসফিসানি ভেসে এলো।

জেলডার কাছ থেকে রিফ সরে গেল। তার বিরক্তি বোধ হচ্ছে।

রিফ বলল, এবার তুমি ঘরে ফিরে যাও, গা থেকে হাত সরাও! জোর করে জেলডাকে সরিয়ে দিল সে, আর এখনি ভোরের আলো ফুটে উঠবে।

জেলডা জামাকাপড় নিয়ে উঠে পড়ল।

কথা বলো আস্তে।

 –খুব ইচ্ছে গুলি খাওয়ার? রিফ বলল।

–ঐ মোটকু গুলি চালাবে–গুলি কি করে চালাতে হয়, তা ওর ভালো জানা আছে।

–ডার্লিং, পুঁচকে লোককে কি তুমি ভয় পাচ্ছো? প্রশ্ন করল জেলডা।

ওর পিস্তলটাকে ভয় নয় ওর টিপকে ভয়। দরজা দেখিয়ে বলল পালাও, আমি কিছু একটা করব। ভাগো এখান থেকে।

জেলডার সঙ্গে কেউ এভাবে কথা বলেনি। বেশ রোমাঞ্চকর লাগলো।

ভালবাস তুমি, তাই না? রিফের কাছে বলল সে।

সে জেলডার হাত ধরে মরুভূমির আলোছায়ায় ঠেলে বার করে দিল এক ধাক্কায়। পড়ল গিয়ে কেবিনের বাইরে, পরমুহূর্তেই তাকাল পায়ের কাছে পড়ে থাকা বীভৎস বস্তুটির দিকে। একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখলো রিফ সেদিকেই তাকিয়ে আছে, তারপর জেলডা দুহাতে মাথার চুল ধরে আর্তনাদ শুরু করল।

সেই আর্তনাদ শুনতে পেল চিতা।

.

 ক্র্যামার স্যালিনাস শহরের ক্যামব্রিয়া হোটেলে টেলিফোন অপারেটরকে বললেন প্যারাডাইস শহরের একটি নম্বর ধরে দিতে। তিনি ফিল বেকারকে ফোন করছেন। এ ভদ্রলোকের সঙ্গে তিনি নিয়মিত গলফ খেলেন আর বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু বটে!

শেষে এই ক্যামব্রিয়া হোটেলে ক্র্যামার উঠলেন। ভিক্টর ডারমটের আজ এই হোটেলেই আসবার কথা। ক্রমশঃ ক্র্যামার নার্ভাস হয়ে পড়ছেন। তিনি অত্যন্ত বিচলিত ডেনিসন তার বিষয়ে তদন্ত করছেন শুনে। ক্র্যামার ভাবছেন, এ পর্যন্ত ডারমট যা টাকা যোগাড় করেছে তাই নিয়েই চম্পট দেবেন কিনা। এতক্ষণে ডারমটের হাতে নগদ ষোল লাখ ডলার এসে যাওয়ার কথা। কিন্তু জেগেটি ও ক্রেনদের কলা দেখিয়ে চলে যাওয়া উচিত হবে কি? ভাবলেন এ সব করবার আগে একবার হেলেনের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

বিকেল পাঁচটা বেজে কয়েক মিনিট। অপরপ্রান্তে বেকার ফোন ধরল।

ক্র্যামার বললেন, ফিল–আমি জিম কথা বলছি। একটা গোলমাল হয়েছে। শোনো, বন্ধু। হিসেবে তোমায় একটা কাজের কথা বলব, সেটা তোমায় করতে হবে এবং কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। রাজী?

সে বললে, কোথায় গিয়েছ তুমি বল দেখি? তোমার জন্য বসে থেকে থেকে একটা দিন আমার খেলাই হল না।

দুঃখিত, কিন্তু আপাততঃ আমি অসুবিধেয় পড়েছি। আমার কাজটা করতে পারবে তো?

বাঃ, নিশ্চয় পারব। জিম–যে কোনো কাজ, কাজটা কী?

আমার বাড়ি গিয়ে তোমায় হেলেনকে বলতে হবে সে যেন ক্লাবে এসে ঠিক সাতটার সময় আমায় ফোন করে। পারবে বলতে?

একশোবার, কিন্তু ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারলাম না। তুমি নিজেই তো

আগেই বলেছি কোনো প্রশ্ন করা চলবে না। পারবে কিনা বলো?

বললাম তো পারব।

ঠিক আছে।

তাকে হোটেলের ফোন নম্বরটা দিয়ে ক্র্যামার বললেন, পরের হপ্তায় যখন দেখা হবে, তখন তোমায় সবকিছু বুঝিয়ে বলব। এখুনি ফাস করতে চাইছি না। ঠিক আছে, ফিল?

নিশ্চয় আমি আধঘণ্টার মধ্যে তোমার বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছি। তুমি কিছু ভেবোনা। জিম–তুমি কি কোনো বিপদে পড়েছ?

দোহাই ফিল! যা বলছি শুধু সেটুকু কর। এখনকার মত বিদায়।

ফোন ছেড়ে ক্র্যামার বসে অপেক্ষা করতে লাগলেন। সময় যেন কাটছেনা। হেলেন সাতটায় ফোন করল।

কী খবর প্রিয়ে? তুমি ভাল আছ তো?

হেলেন যেন এক অচেনা গলায় বলল, আমি কেমন আছি জানতে চাইছ? কী করে কথাটা বললে? কী হচ্ছে এসব, জিম? আমার জানবার অধিকার আছে। ফিল আমার কাছে গিয়ে এমনভাবে তাকাল, যেন এক দাগী আসামীকে দেখছে। ব্যাপার কী জিম?

শান্ত হও, হেলেন। পুলিশের কান বাঁচিয়ে তোমার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই।বুঝতে পারছ না। ওরা আমাদের বাড়ির ফোন ট্যাপ করেছে।

হেলেন তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, কী জন্যে তারা আমাদের ফোনের লাইন ট্যাপ করবে? তুমি কি কোনো অন্যায় কাজ করেছ? তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

ক্র্যামার রুক্ষভাবে বললেন, চুপ কর হেলেন। তোমায় আমার কাছে আসতে হবে। পুলিশ · তোমার পিছু নেবে। তাদের চোখে ধুলো দিতে হবে। এ কাজ তুমি আগে অনেক করেছ, আজও পারবে। তারপর তুমি স্যালিনাস শহরের ক্যামব্রিয়া হোটেলে চলে আসবে। আমি এখানেই আছি। দূরদেশে আমরা পাড়ি জমাব-হয়তো নিরুদ্দেশের পথে।

কিছুক্ষণ নীরবতার পর ক্র্যামার বিরক্ত হয়ে বললেন, হেলেন।

এখানেই আছি আমি। তুমি তাহলে বিপদে পড়েছ। এত টাকা আছে তোমার–এ বোকামি কেন করতে গেলে?

ক্র্যামার ভীষণ রেগে বললেন, মুখ সামলে কথা বলল। এসব ব্যাপারের তুমি কিসসু জানো না। সলি আমাদের সব টাকা মেরে দিয়েছে। শালা জোচ্চোর আমার সমস্ত টাকা ফাটকা খেলে উড়িয়ে দিয়েছেচল্লিশ লাখ ডলার।

হেলেন প্রায় চেঁচিয়ে, সলি? না, না! সে কখনও এমন কাজ করবে না।

ঠিক তাই করেছে। কিন্তু টাকাটা ফেরৎ আবার ব্যবস্থা আমি করেছি। শোনো হেলেন। তুমি এখানে চলে এসো।আমি তোমায় কিছু বুঝিয়ে বলব।ভগবানের দোহাই। একটু সাবধানে এসো। কেউ পিছু নিলে তাকে ধোকা দেওয়া চাই নইলে তোমার পিছু পিছু এসে ওরা আমার সন্ধান পেয়ে যাবে বুঝেছ তো?

ক্র্যামার বুকের যন্ত্রণায় ঘামছিলেন। হেলেন! শুনতে পাচ্ছ?

পাচ্ছি, ভাবছিলাম আমাদের তাহলে আর কোনো টাকা পয়সা নেই।

ঠিক তাই। কিন্তু আমি শীগগির টাকা পাব। আমার কাজ যদি হাসিল হয় তাহলে আমার সবটুকু টাকা ফিরিয়ে আনতে পারব। চলে এসো তুমি। সব বুঝিয়ে বলব।

না, জিম। মনে কিছু কোরোনা, আমি আসতে পারছি না। আমার বয়েস হয়েছে, তুমিও বুড়ো হয়েছ জিম–আবার অপরাধ জগতে ফিরে যাবার বয়েস তোমার আর নেই। বাড়ি এসো, আমরা একটা উপায় ভেবের করব।পনেরোবছর আগে হয়তপুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতে অনেক মজা পেতাম। কিন্তু আজ আর এতে কোনো মজা পাচ্ছি না। বাড়ি ফিরে এসো, জিম।

আজ আমাদের বাড়িবলে কিছু নেই।আমারকথা তোমার মগজে ঢুকছেনা?আমরা সেফ ফতুর হয়ে গেছি। কিন্তু নতুন করে টাকা রোজগারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তুমি এখানে চলে এসো।

আমি আসছি না। আগের দিনে আমরা দুজনে মিলে অনেকবার এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করেছি। ভেবেছিলাম আমরা দস্যুবৃত্তি থেকে সরে আসতে পেরেছি। কিন্তু তুমি আবার সেখানে ফিরে গেলেও আমি ফিরতে রাজী নই। বিদায় জিম। আমি যেমন করে তোক চালিয়ে নেব। যদি কোনদিন তোমার মত বদলায়, যদি কোনদিন ওপথ থেকে সরে আসতে পার তাহলে এসো। না হলে, এই শেষ বিদায় জিম।

লাইনটা কাটার শব্দে ক্র্যামারের মনে হল যেন একটা দরজা তার মুখের ওপর বন্ধ হয়ে গেল। ক্র্যামার টেলিফোনের বোম টেপাটেপি করতে লাগলেন। বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তার স্ত্রী ফোন ছেড়ে দিয়েছে। এই কী সেই হেলেন! এক তৃতীয় শ্রেণীর নাইট ক্লাবের দ্বিতীয় শ্রেণীর গায়িকা যাকে তিনি সেই জীবন থেকে উদ্ধার করেন। তার এই ব্যবহারযাকে তিনি অর্থ, প্রতিপত্তি, সম্মান কিছুই দিতে বাকি রাখেন নি।

ক্র্যামার আস্তে আস্তে রিসিভার নামিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। ঘাম হচ্ছে, কেমন যেন ভয় করছে আর ব্যথাটাও ছাড়ছে না।

 ক্র্যামার উঠে ভারী পদক্ষেপে স্যুটকেশের দিকে এগিয়ে একটা হুইস্কির বোতল বার করলেন। অনেকটা মদ গ্লাসে ঢেলে খেয়ে ফেললেন। আবার গ্লাস ভরলেন।

ফোন বেজে উঠতেই ক্র্যামার চমকে উঠলেন, রিসিভার তুললেন।

আপনি বলছিলেন মিঃ জ্যাক হাওয়ার্ড এলে জানাতে, উনি এইমাত্র এসে পৌঁছেছেন। একশ পঁয়ত্রিশ নম্বর ঘরে আছেন।

ধন্যবাদ বলে ক্র্যামার ফোন ছেড়ে দিয়ে সিগার ধরালেন। একশ পঁয়ত্রিশ নম্বর রুম এই তলাতেই হবে। ডারমটের কাছে ষোলো লাখ ডলার।

 ক্র্যামার ভাবলেন, এখন কী করা উচিত? হেলেন কি সত্যিই তাকে বিদায় দিয়েছে? তাহলে আর বিপদ ঘাড়ে করে বসে থাকবার প্রয়োজন কি? তার চেয়ে টাকাটা নিয়ে কেটে পড়লেই তো হয়? মো আর ক্রেনদের নিয়ে মাথাব্যথা করে কী হবে?

ষোলো লক্ষ ডলার জীবনের বাকী কটা দিনের জন্য যথেষ্ট। একটা নৌকায় চেপে কিউবা পালিয়ে যাওয়া শক্ত হবেনা। হয়তো একদিন হেলেন আসবে। ক্র্যামার চোখ বন্ধ করলেন। বুকের একটানা যন্ত্রণাটা ভাবিয়ে তুলেছে। মো-কে বঞ্চিত করা কি উচিত হবে? শেষে উঠে করিডোর বেয়ে একশ পঁয়ত্রিশ নম্বর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।

বাথরুমে ঢুকে ভিক্টর ডারমট হাত ধুচ্ছিলেন। এমনসময় দরজায় টোকা পড়ল। হাত মুছতে মুছতে দরজা খুলে ক্রামারকে দেখে চমকে গেলেন।ক্র্যা মার দরজা বন্ধ করে বললেন,কী? কেমন চলছে?

ভালই। আপনাকে এখানে দেখব বলে ভাবিনি।

কত টাকা যোগাড় হল?  

এ পর্যন্ত ষোলো লাখ। ভিক্টর বিছানার পাশে মেঝেতে পড়ে থাকা স্যুটকেশদুটোর দিকে আঙুল দেখালেন।

দেখা যাক খুলুন দুটোকে।

ভিক্টর শান্ত গলায়, আপনি নিজেই খুলুন না কেন।

ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে ক্র্যামার তাকাল। ভিক্টরও অকম্পিত চোখে তার দিকে তাকাল। তারপর একটা চাপা বিরক্তির শব্দ করে একটা স্যুটকেসের ডালা খুললেন। আর ঠিক তক্ষুণি মনে হল যেন একটা জ্বলন্ত বল্লম তার শরীরকে এ ফোড় ও ফোড় করে বেরিয়ে গেল। পরক্ষণেই তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন, দুই চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ সেই অজস্ব একশ ডলারের দিকে বুকের অসহ্য যন্ত্রণায় কথা বেরোচ্ছে না।

ক্র্যামার কী যেন বলতে চাইলেন সহসা তার শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেল। যেন এক ভেঙে যাওয়া খড়ের পুতুল। তিনি কাতরে উঠলেন যন্ত্রণায়। তারপর মৃত্যু এসে তাকে শান্ত করে দিল, তখনো সে টাকাগুলো আঁকড়ে ধরতে চাইছেন–যে টাকা তার আর কোনো কাজে লাগবে না।

ভিক্টর বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে বিশালদেহী মানুষটিকে মরতে দেখল। যখন সে হাত পা ছড়িয়ে উপুড় হয়ে পড়ে গেল তখন ভিক্টর অসহায়ভাবে সাহায্য করতে চেষ্টা করলেন।

তিনি প্রথমে ক্যারী ও খোকার কথা ভাবলেন। তারপরেই মনে পড়ল সেই পুলিশ অফিসারটি বলেছিলেন যে তার আশেপাশেই একজন না একজন পুলিশ থাকবেই। তিনি দরজা খুলে করিডোরে বেরিয়ে এলেন। একটু বাদে একটু দূরে আরেকটি দরজা খুলে একজন দীর্ঘ বলিষ্ঠ চেহারার লোক বেরিয়ে এল। সে ভিক্টরের দিকে তাকিয়ে ভুরু তুলল।

ভিক্টর বলল, একটু এদিকে আসুন, ভদ্রলোক মারা গেছেন।

ডেনিসন একঘণ্টার মধ্যে হোটেলে এলেন। ভিক্টরের ঘরে ঢুকলেন তার সঙ্গে ছিল সেই পুলিশ অফিসারটি এবং ম্যাসন। ডেনিসন ক্র্যামারের দিকে তাকিয়ে চিন্তিতভাবে গালে হাত ঘষে টাকা ভর্তি স্যুটকেশটার দিকে তাকালেন।

কত টাকা আছে ওটার মধ্যে? ভিক্টর জানালেন কত টাকা আছে। ডেনিসন ম্যাসনের দিকে ঘুরে বললেন, হোটেলের সবাই ঘুমিয়ে পড়লে চুপচাপ মৃতদেহটা সরাবার ব্যবস্থা কোরো। কেউ যেন জানতে না পারে। স্যুটকেশটা তুলে নিয়ে বললেন, চলুন মিঃ ডারমট। আমরা অন্য কোথাও গিয়ে কথাবার্তাগুলো সারি।

ক্র্যামারের ঘরে গিয়ে দুজনে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করলেন। ডেনিসন বিছানায় আর ভিক্টর ইজিচেয়ারে বসলেন।

ডেনিসন বললেন, বাকি তিনজন ডাকাতকে খুশি করবার পক্ষে যথেষ্ট টাকা আপনার হাতে এসেছে। আমার মনে হয়, এবার পুরোদমে কাজ শুরু করা উচিত। আপনি সোজা নষ্টনীড়ে গিয়ে ওদেরকে টাকাটা দিয়ে দিন। টাকা পেলেই ওরা সরে যাবে।নষ্টনীড় থেকে বেরোলে আমরা ওদের ফাঁকায় পাব। তখন আমার লোকেরা ওদেরকে ঘিরে ফেলবে। আপনি সঙ্গে একটা অস্ত্র নেবেন,, মিঃ ডারমট।

না–ওখানে গেলেই প্রথমে ওরা আমায় সার্চ করবে। তখন পিস্তল পেলে বুঝতে পারবে যে কিছু একটা গোলমাল আছে।

আপনার গাড়িতে একটা পিস্তল লুকিয়ে রাখতে পারেন।

ওসব কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছি না। তাছাড়া পিস্তল চালানো আমার তেমন আসে না।

বেশ, ঠিক আছে। হয়ত আপনার যুক্তিই ঠিক। ওরা জানতে চাইবে ক্র্যামার কোথায়? বলবেন, অ্যারোহেড হোটেলে। সাতান্ন নম্বর কেবিনে অপেক্ষা করছেন। হোটেলে পৌঁছবার আগেই তারা ধরা পড়ে যাবে। সুতরাং বলতে বাধা নেই। কথাটা বেশ বিশ্বাসযোগ্য শোনাবে।

ভিক্টর সন্দেহের সুরে, বলছেন? ধরুন ওরা যদি ঐ হোটেলে ফোন করে ক্র্যামারের খোঁজ নেয়?

সে ব্যবস্থা আমি করে রাখব, মিঃ ডারমট। ওদের ফোন পেলে হোটেলের মালিক বলে দেবেন যে ক্র্যামার বেরিয়েছেন।

আমার ধারণা, ক্র্যামার অন্যদের জানাননি যে তিনিকত টাকা আদায় করছেন। সুতরাং ষোলো লাখ ডলারেই ওরা সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। বাকি চেকগুলো আমায় দিয়ে দিন, আমি ভ্যান ওয়াইলিকে ফেরৎ দিয়ে দেব।

চেকগুলো দিতে দিতে ভিক্টর বলল, হিসেব মতন আমার আরো দুদিন পরে নষ্টনীড় ফেরবার কথা। এত আগে ফিরলে ওরা সন্দেহ করবে না?

ডেনিসন জবাব দিলেন, বলবেন ক্র্যামার তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে চাইছিলেন। চেক ভাঙাতে কোন অসুবিধে না হওয়ায় আপনি চটপট কাজ সেরে নিয়েছেন। ওরা এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাবে না।

ভিক্টর দেখলো পছন্দ না হলেও উপায় নেই। বললো, ঠিক আছে। আমি এবার বেরিয়ে পড়ি।

ডেনিম ঘড়ি দেখে বললেন, দুতিন ঘণ্টার মধ্যে আপনি স্যান বার্নাডিনো পৌঁছে যাবেন। বালিয়াড়ির আড়ালে আড়ালে আমার লোকেরা বাড়িটা পাহারা দিচ্ছে। তবুআপনি একটু সাবধানে কাজ করবেন। আমার বিশ্বাস, টাকা পেলেই ডাকাতগুলো যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পালাতে চেষ্টা করবে।

ভিক্টর দৃঢ় কণ্ঠে বলল, আমি কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারব না। আরেক রাত্রি আমার স্ত্রীকে ওখানে রাখতে আমি রাজি নই। আজই আমি নষ্টনীড়ে যাব।

দেখুন মিঃ ডারমট–

তাকে থামিয়ে ভিক্টর বললেন, আমি আজ রাতেই ওখানে যাব। আমায় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

হতাশ ভঙ্গীতে ডেনিসন বললেন, আপনার জায়গায় আমি হলেও বোধহয় একই কাজ করতাম। ঠিক আছে, তাই করুন, কিন্তু সাবধান।

ভিক্টর স্যুটকেশটা তুলে নিলেন, ডেনিসন টেলিফোনের দিকে হাত বাড়ালেন।

.

পাহারা দেবার পালা হার্পারের শেষ হলে, সে লেটুকে ঠেলে তুলতে যাচ্ছিল এমন সময় জেলডার আর্তনাদ কানে এল।

অন্য দুজন পুলিশ অফিসারও সেই শব্দে জেগে উঠল। তারা তিনজন উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে তাকাল।

লেটস বলল, কী হচ্ছে ওখানে?

হঠাৎ সেটা থেমে আবার গভীর নীরবতা নেমে এল।

 হার্পার বলল, আমি একবার দেখে আসি।

লেটস বলল, দাঁড়াও, এ কাজ তোমার চেয়ে আমি ভালো করতে পারব। ওদের সম্পূর্ণ অজান্তে যেতে হবে। আমাদের কাউকে দেখতে পেলে ওদের কিছু বুঝতে বাকি থাকবে না।

যুদ্ধের সময় ছোট রোগা চেহারার লেটস্ জঙ্গলে জঙ্গলে স্কাউটের কাজ করেছে। হার্পারকে তার যুক্তি মানতে হল যে লেটই একমাত্র সে কাজ সম্পন্ন করবার ক্ষমতা রাখে।

ঠিক আছে, আলেক্স। চটপট রওনা হয়ে পড়। ব্যাপারটা জানা দরকার।

লেটস বালির ওপর দিয়ে বুকে হেঁটে এগিয়ে গেল। হার্পার রেডিও টেলিফোনে জানল ডেনিসন অফিসে নেই।

হার্পার কড়া গলায় বলল, তাকে খুঁজে বার করো। এখানে বিপদ দেখা দিয়েছে। একটি মেয়ের চীৎকার শোনা যাচ্ছে তাকে খবরটা দাও।

মো-র গভীর ঘুম জেলডার চীঙ্কারে ভেঙ্গে গেল। চমকে, থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়াল। সে যে কোথায় আছে, সে খেয়াল হতেই কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল। তারপর সম্পূর্ণ সজাগ হয়ে সামনের কেবিনের দিকে তাকাল। দেখতে পেল জেলডা দুহাতে নিজের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে চীৎকার করছে।

রিফ দৌড়ে জেলডার কাছে এসে তার গালে কয়েকটা চড় কষিয়ে দিল। চীৎকার থেমে গেল। এবার সে ফোঁপাতে ফোঁপাতে রিফকে আঁকড়ে ধরতে চেষ্টা করল, কিন্তু রিফ তাকে ঠেলে সরিয়ে দিল।

বীভৎস গন্ধ আসছে সামনে পড়ে থাকা ভিয়েতনামী চাকরটির গলিত মৃতদেহ থেকে।

মো বারান্দার সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল। ক্যারীর ঘরে আলো জ্বলে উঠল, খোলা জানলা দিয়ে সভয়ে বাইরে তাকাল। ঘরের ভেতর থেকেই মৃতদেহের গন্ধ পাচ্ছে

এবার জেলডা দৌড় লাগাল। রিফ তার পেছনে ছুটতে যাচ্ছিল, কিন্তু পিস্তল হাতে মো-কে আসতে দেখেই দাঁড়িয়ে গেল।

চীৎকার করে মো জেলডাকে থামতে বলল, কিন্তু সে দৌড়েই চলল।

মো রিফকে বল, ধরো মেয়েটাকে। পালিয়ে যাচ্ছে। রিফের সেকথা কানেই ঢুকল না। সে একদৃষ্টে ভিয়েতনামী লোকটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সহসা সে অনুভব করল, জেলডাকে কোনদিন সে বিয়ে করতে পারবে না। প্রাচুর্যে ভরা নিশ্চিত জীবনের স্বপ্ন তার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।

এতক্ষণে ভিয়েতনামী চাকরটির মৃতদেহ মোর চোখে পড়ল। তার লোমগুলো সব খাড়া হয়ে উঠল।

খড়খড়ির ফাঁকে চোখ রেখে চিতা খোশমেজাজে দৃশ্যটা উপভোগ করছিল।

বাড়ির একশ গজের মধ্যে লেটুস্ এসে পড়েছে। বুঝতে পারল উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় নড়াচড়া করলেই ধরা পড়ে যাবে। দেখল মো এবং রিফ মাটিতে পড়ে থাকা একটা কালো বস্তুর দিকে তাকিয়ে আছে। তারপরেই দেখল জেলডা ছুটে আসছে। জেলড়াকে চিনতে পেরে ঝোঁকের মাথায় এক লাফে সে উঠে দাঁড়াল।

জেলডাকে থামিয়ে বলল, আমি পুলিশের লোক, সোজা দৌড়তে থাক ওখানে।

লেটসকে যেন মাটি খুঁড়ে বেরোতে দেখল মো। জেলডাকে দেখল এক লাফে সরে আবার দৌড়তে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে মোর পিস্তল থেকে গুলি ছুটল। সে ইচ্ছে করে ট্রিগার টানেনি। চমক ও ভয়ের ধাক্কায় আপনা থেকেই যেন ঘটে গেল।

মাথায় গুলি লেগে লেটস মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। জেলডা বালিয়াড়ির পেছনে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

–এসব কী হচ্ছে? মো বলল, তার মাথায় সবকিছু জট পাকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা কী?

 রিফ লেটস-এর দিকে দৌড়ে গেল। আর চিৎ করে জামাকাপড় হাতড়াতে লাগল। সে লেট-এর মানিব্যাগ পেল। বেরোল তার পুলিশী পদক, দেখেই হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়াল। ছুটল মোর দিকে।

লোকটা পুলিশ! মোরকাছে গিয়ে, খিঁচিয়ে সে বলল, বুদু কোথাকার, লোকটাকে খতম করে দিয়েছ।

পাগলের মত জেলডা ছুটে চলেছিল। হার্পার তাকে দেখে হাত চেপে ধরল।

আমরা পুলিশ অফিসার,ভয় পেয়োনা।বলেই সে জেলডার মুখ চেপে ধরল, যাতে চীৎকার করতে না পারে। জেলডা ছাড়া পাবার চেষ্টা করল, ভয়ে তার দুচোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠেছে। হার্পার মন্ত্রের মত আউড়াতে লাগল যে সে পুলিশের লোক। পরে জেল কথাটা বুঝতে পেরে ধস্তাধস্তি থামাল। তার শরীর শিথিল হয়ে হার্পারের গায়ের ওপর পড়ল।

 হার্পার উত্তেজিত গলায়, জ্যাক। একে এক্ষুনি ডেনিসনের কাছে নিয়ে যাও। এই মিস্ ভ্যান ওয়াইলি।

বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ব্রডি বলল, বাড়িতে যে একটা মেয়ে ও বাচ্চা রয়েছে। তাদের কি হবে?

হার্পার বলল, যা বলছি তাই করো। আমি ওদের যা পারছি করছি।

জেলডাকে একরকম টেনে ব্রডি নিয়ে চলল বালিয়াড়ির পেছনে লুকানো জীপের দিকে।

 হার্পার দেখতে পেল তিনটি মূর্তি বাড়ির ভেতর ঢুকল। দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পেল একটা ঘরের আলো নিভে গেল।

 সবে জীপ স্টার্ট দিয়েছে, এমন সময় সে এবং জীপে বসা ব্রডি দূরে একটি গাড়ির হেডলাইট দেখল। জেলডাডির পাশে বসে হিস্টিরিয়া রোগিনীর মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। তার বাহুতে একটা চাপড় মেরে ব্রডি জীপ থেকে নেমে পড়ল। হার্পার এসে তার পাশে দাঁড়াল। দুজনে পিস্তল হাতে নিয়ে এগিয়ে আসা গাড়িটার রাস্তা আটকে দাঁড়াল।

ব্রেক কষে গাড়ি থামালভিক্টর।এমন সময় ভিক্টর এক ভয়াবহ কান্নার শব্দ শুনতে পেল-একটি মেয়ে অস্বাভাবিক শুকনো গলায় কেঁদে চলেছে। ভয়ের শিহরণ তার গায়ে বয়ে গেল।