০৯-১০. ইস্ট-এন্ড শপিং মল

ইস্ট-এন্ড শপিং মল একেবারে সিমেই স্টেশনের গায়ে। মাঝে শুধু একটা চাতালের ব্যবধান। রীতিমতো মেলা বসে গিয়েছে সেখানে। রঙিন ছাউনি টাঙিয়ে বিক্রি হচ্ছে বাচ্চাদের জামাকাপড়, খেলনা…আর চালের ওপারে যথারীতি সুসজ্জিত পাঁচতলা বাজার।

বিল্ডিংয়ে ঢোকার মুখে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল মিতিন। কোণের ছোট্ট এক রেস্টুরেন্টের সামনে। কাচের ওপর লেখা খাদ্যতালিকা পড়ছে। ঘুরে টুপুরকে বলল, নতুন খাবার টেস্ট করবি?

কী গো?

স্কুয়িড খাবি? কিংবা বেবি অক্টোপাস?

সেন্টোসা দ্বীপের সামুদ্রিক অ্যাকোয়ারিয়ামটা পলকের জন্য টুপুরের চোখে ভেসে উঠল। ঢোক গিলে বলল, তুমি যদি খাও, তো খাব।

এক বৃদ্ধা, সম্ভবত ভিয়েতনামি, দোকান চালাচ্ছেন। কথা বলছেন দুর্বোধ্য ইংরিজিতে। ভাষাটা বোধ হয় বোঝেনও না। তাঁকে স্কুয়িড ভাজা আর কোল্ড ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিতে গিয়ে মিতিনমাসির গলদঘর্ম দশা। শ্রেফ বোঝানো গেল না বলেই বেবি অক্টোপাস চাখার ইচ্ছেটা পরিত্যাগ করতে হল।

চাতালের এদিকটায় ছড়িয়েছিটিয়ে চেয়ার-টেবিল। একখানা দু চেয়ারের টেবিলে টুপুর আর মিতিন বসল মুখখামুখি। একটু আগেও মিতিন বেশ হাসিখুশি ছিল, হঠাৎই কেমন গম্ভীর। পার্থর ক্যামেরা-মোবাইলখানা ব্যাগ থেকে বের করল। দেখছে কী যেন! ভাবছে।

টুপুর জিজ্ঞেস করল, দুম করে তোমার মুড চেঞ্জ হয়ে গেল যে?

মিতিন ঘড়ি দেখে বলল, তাড়াতাড়ি স্কুয়িড ভাজাটা খেয়েই উঠতে হবে। সময় নষ্ট করা যাবে না।

আহা, খেতে তো তুমিই চাইলে। আমি নাকি?

হুঁ, ভুল হয়ে গেল। ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট এজেন্সি বন্ধ না হয়ে যায়!

কথার মাঝেই এসে গিয়েছে প্লেট। সঙ্গে সসের বোল। মিতিনমাসির দেখাদেখি স্কুয়িড ভাজায় কামড় বসাল টুপুর। যতটা বিটকেল হবে বলে সে ধরে নিয়েছিল, মোটেই সেরকম নয়। ঝালমশলা দিয়ে মুচমুচে করে ভাজা দ্রব্যটি মাংসর পেঁয়াজির মতো। খুব একটা উৎকট গন্ধ নেই। মন্দ লাগে না খেতে। মাঝে মাঝে কোল্ড ড্রিঙ্কে চুমুক দিয়ে নিলে আরও যেন জমে যায়।

ঝটিতি প্লেট গ্লাস সাফ করে মাসি-বোনঝি ইস্ট-এন্ড মলের অন্দরে। মধ্যিখানের গোল জায়গাটায় মঞ্চ বানিয়ে রবিবারের নাচাগানা চলছে। জাপানি চেহারার একটি মেয়ে দারুণ সেজেগুজে খুব আবেগ দিয়ে গান গাইছিল। হঠাৎ গলা চড়িয়েছে সোপ্রানোয়। তুমুল হাতোলি দিচ্ছে শ্রোতারা।

গান শুনতে-শুনতে ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট খোঁজা চলছিল। মিলেও গেল অবিলম্বে। এসকালেটরকে পাক খেয়ে ঢুকে গিয়েছে প্যাসেজ, তারই শেষ প্রান্তে।

কাচের দরজা ঠেলে মিতিন আর টুপুর ভিতরে ঢুকে দ্রুত চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। দেওয়ালে নানা শহরের ছবি। জাকর্তা, ব্যাঙ্কক, কোয়ালালামপুর, টোকিও, মেলবোর্ন, সিডনি… কাউন্টারের ওপারে এক তামিল যুবক। পরনে সাদা শার্ট, কালো-স্ট্রাইণ্ড সুট, নেভি-ব্লু টাই। সামনে কম্পিউটার।

উঠে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে যুবকটি বলল, আপনাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি ম্যাডাম?

এখান থেকে কি গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে? মিতিন কায়দা করে ইংরেজিতে কথা শুরু করল, সিঙ্গাপুর ঘোরার জন্য?

নিশ্চয়ই।

আমি একটা মিৎসুবিশি গাড়ি চাইছি। সাদা।

 লোকটা পলকের জন্য থমকে থেকে বলল, দেখতে হবে ফ্রি আছে কিনা।

তার মানে আপনাদের একটা সাদা মিৎসুবিশি আছে?

 হ্যাঁ। কেন বলুন তো?

আপনাদের এখান থেকেই ভাড়া করা সাদা মিৎসুবিশি নিয়ে এক ভদ্রলোক চাংগি এয়ারপোর্টে আমাদের রিসিভ করতে গিয়েছিলেন.. মিতিন সহসা স্বর পালটে ফেলল, আমি সেই ভদ্রলোককে খুঁজছি।

যুবকটির চোখমুখ কুঁচকে গেল। ঈষৎ রুক্ষ গলায় বলল, আপনারা ঠিক কী জন্যে এসেছেন, বলুন তো? গাড়ি ভাড়া করতে? না সেই ভদ্রলোকের সন্ধানে?

ধরে নিন, দুটোই। তবে ভদ্ৰলোককে আগে দরকার।

আপনার কাছে ভদ্রলোকের সেলফোন নম্বর নেই?

আছে। তবে রেসপন্স পাচ্ছি না। সুইচড অফ।

তা হলে তো কিছু করার নেই। এনি ওয়ে, আপনার কবে গাড়ি চাই?

প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে মিতিন বলল, আচ্ছা, যিনি গাড়িটা নিয়েছিলেন, তার ঠিকানা নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে আছে?

সরি ম্যাডাম। কাস্টমারদের অ্যাড্রেস জানানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

উনি কিন্তু পেটি কাস্টমার নন। একটা কোম্পানির প্রতিনিধি। পেঙ্গুইন রিসর্টস ইন্টারন্যাশনাল। ওঁদের এখানকার অফিসের অ্যাড্রেসটা দিলেও চলবে।

সরি ম্যাডাম। নিয়ম নেই।

তা হলে আর কী উপায়ে ভদ্রলোককে ট্রেস করা যায়, বলুন তো? মিতিন ঝট করে মোবাইলের একটা ছবি মনিটরে এনে সেটটা বাড়িয়ে দিল। ভারী গলায় বলল, দেখুন তো, এই ভদ্রলোকই গাড়ি নিয়েছিলেন কি না?।

খুদে পরদায় মিস্টার নারায়ণ। সাদা মিৎসুবিশির বনেটের সামনে। মুখ সামান্য ফেরানো, তবে চিনতে অসুবিধে নেই।

ছবিটা দেখে যুবকের চোখের মণি যেন পলকের জন্য চঞ্চল। পরক্ষণে স্বাভাবিক। মাথা নেড়ে বলল, উহুঁ, চিনতে পারছি না।

সে কী? উনি রেগুলার এখান থেকে গাড়ি নেন।

 তাই বলেছেন নাকি?

 নইলে জানব কোত্থেকে?

দুএক সেকেন্ড থেমে থেকে যুবকটি বলল, শুনুন, একটা কথা বলি। আমাদের বেশিরভাগ কাস্টমারই ইন্টারনেটের মাধ্যমে গাড়ির দরকারের কথা জানান। নেটেই পেমেন্ট আসে। আমরা গাড়ি পাঠিয়ে দিই।

তার মানে আপনি ভদ্রলোককে কখনওই দেখেননি?

মনে করতে পারছি না।

ও। ফোটোগ্রাফটা সিঙ্গাপুর পুলিশকে দিলে নিশ্চয়ই ভদ্রলোকের সন্ধান পাওয়া যাবে?

আপনার সমস্যাটা মনে হচ্ছে খুব গভীর? কেন ভদ্রলোককে এত খুঁজছেন, জানতে পারি?

উনি আমাদের পরিবারকে যথেষ্ট উত্ত্যক্ত করেছেন। ওঁকে একটু সহবত শেখাতে চাই।

আমার একটা পরামর্শ শুনবেন? মিছিমিছি ঝামেলায় যাবেন না। যুবক প্রায় বিনয়ের অবতার বনে গেল, দেখুন না, এক সময় না এক সময় মোবাইলে পেয়ে যাবেন। তখন যা বলার বলে দেবেন। … মনে তো হচ্ছে আপনারা টুরিস্ট। বেড়াতে এসে খামোকা পুলিশের হাঙ্গামায় কেন জড়াবেন? মাঝখান থেকে ফেরাটাও হয়তো আটকে যাবে।

বলছেন?

হ্যাঁ ম্যাডাম, টুরিস্টরা এখানে এসে অশান্তিতে পড়ুক, এটা মোটেই কাম্য নয়। পুলিশ-টুলিশের ভাবনা বরং মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

দেখি…আপনি তো পেঙ্গুইন রিসর্টস ইন্টারন্যাশনালের অ্যাড্রেসটাও দিচ্ছেন না। পেলে ওখানেই ভদ্রলোকের নামে কমপ্লেন ঠুকতাম..

বললাম তো, সরি। আমরা হেল্পলেস। …একটা কাজ করুন না ম্যাডাম। আপনার অভিযোগ লিখিতভাবে এখানে দিয়ে যান। আমরা ওদের লোকাল অফিসে পাঠিয়ে দেব।

পেঙ্গুইনের সিঙ্গাপুর অফিসটা যে লোকাল অফিস, এটা আপনি জানেন?

আবার একটু থমকাল স্টাইপড সুট। পরমুহূর্তে সামলে নিয়ে বলল, না মানে…অফিসটা তো এখানে, তাই লোকাল শব্দটা ব্যবহার করেছি।

 ও, মিতিন মাথা দোলাল, আপনাদের মালিক তো মিস্টার টি পি শঙ্করন। তাই না?

যুবক্রের চোখের মণি এবার স্থির। যেন মিতিনমাসির ভিতরটা পর্যন্ত পড়তে চাইছে। চাউনিটা একদমই ভাল লাগল না টুপুরের। কী ভীষণ শীতল! ঠিক যেন সেন্টোসায় দেখা হাঙরটার মতো।

স্বরে এতটুকু উত্তেজনা না এনে অসম্ভব ঠান্ডা গলায় যুবকটি বলল, মালিকের নাম জেনে আপনার কী হবে?

আমি তাঁকে একটু মিট করতে চাই।

উনি এখন সিঙ্গাপুরে নেই। ব্যাঙ্কক গিয়েছেন। সাতদিন পরে ফিরবেন।

উনি..মানে মিস্টার শঙ্করন তো?

দৃষ্টি আবার স্থির। আবার সেই একই রকম হিমেল গলা, আপনি প্লিজ এখন আসুন ম্যাডাম। আমার হাতে কাজ আছে। অফিস বন্ধ করারও টাইম হয়ে এল।

তাও একটুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে এল মিতিন। টুপুরকে নিয়ে হাঁটছে সিমেই স্টেশনের দিকে। যেতে যেতে টুপুর জিজ্ঞেস করল, কী বুঝলে গো মিতিনমাসি?

ছোকরা মহা ধড়িবাজ। পাঁকাল মাছ। পিছলে-পিছলে যায়।

ওকে অত প্রশ্ন করছিলেই বা কেন? মিস্টার নারায়ণ কিংবা পেঙ্গুইনের ঠিকানা জেনে তুমি কী করবে?

জ্ঞানভাণ্ডার পুষ্ট করব।

তুমি কি সত্যি-সত্যি মিস্টার নারায়ণকে ফোন করেছিলে?

 হ্যাঁ রে বাবা, হ্যাঁ। আমি সব সময় গুল মারি নাকি?

 লাইন পাওনি?

রিং হচ্ছে বারচারেক, তারপর ভয়েস রেকর্ডারে চলে যাচ্ছে।

স্ট্রেঞ্জ! কাল হোটেলে এসে বসে রইলেন, পরে আবার ফোন করলেন…অথচ আজ যোগাযোগ রাখতে চাইলেন না? টুপুর বিস্মিত, এসব কাণ্ড কেন ঘটছে, মিতিনমাসি? কেন উনি এরকম করছেন?

ধূম্রজাল। কুজ্ঝটিকা, মিতিন হালকা হাসল, চল চল, ট্রেন ধরি।

টিকিটমেশিন থেকে কার্ড নিয়ে দুজনে ঢুকল প্ল্যাটফর্মে। এবার সঙ্গে-সঙ্গে ট্রেন নেই, মিনিটপাঁচেক দাঁড়াতে হল। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল টুপুর। হঠাৎই এক জায়গায় চোখ আটকেছে। ফিসফিস করে বলল, মিতিনমাসি, ওই ছেলেটাকে দ্যাখো!

কালো টিশার্ট আর জিনস পরা তাগড়াই চেহারার মালয়ী যুবকটার দিকে মিতিন তাকালই না। নিচু গলায় বলল, চোখ সরিয়ে নে। ও ইস্ট-এন্ড মল থেকে আমাদের ফলো করে আসছে।

তাই নাকি?

হ্যাঁ রে ভেবলু। সম্ভবত তোর মেসোর মোবাইলটা হাতাতে চায়। ওর ডান হাত যেভাবে পকেটে গোঁজা, আর্মস থাকাটাও বিচিত্র নয়।

সর্বনাশ! কী হবে তা হলে?

উত্তর দেওয়ার আগেই স্টেশনে ট্রেন। দরজা খুলতেই উঠে পড়ল মিতিন আর টুপুর। ছেলেটা এখনও প্ল্যাটফর্মে। গেট বন্ধ হওয়ার ঘোষণা হচ্ছে। হঠাৎই ত্বরিত পায়ে এগিয়ে এল।

টুপুর দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে। কামরায় সবে একটা পা রেখেছে ছেলেটা, আচমকা এক আজব ঘটনা ঘটে গেল। কোত্থেকে অন্য একটা লোক প্রায় ছুটে এসে ধাক্কা মেরে তাকে সরিয়ে সুড়ুৎ করে গলে এল দরজা দিয়ে। ছেলেটা ছিটকে পড়ে রইল প্ল্যাটফর্মে। ট্রেন ছেড়ে দিল।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে গিয়েও টুপুরের বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছে। এক ঝটকায় ছেলেটাকে ফেলে দিয়ে কামরায় ওঠা লোকটা আর কেউ নয়, সেন্টোসার সেই ফ্রেঞ্চকাট স্বয়ং! টুপুর প্রমাদ গুনল। তাকাল মিতিনমাসির দিকে। না জানি কী ভয়ংকর মতলবে ফের পিছু নিচ্ছে লোকটা!

মিতিন নির্বিকার। টুপুরকে স্তম্ভিত করে হঠাৎই এগিয়ে গেল লোকটার কাছে। সপ্রতিভ স্বরে শুদ্ধ বাংলায় বলল, অনেক ধন্যবাদ মিস্টার দত্ত। ছেলেটা যথেষ্ট বিপজ্জনক ছিল।

জানি তো। কিন্তু আপনি আমায় চিনে ফেললেন?

ছদ্মবেশ ধরাটা যেমন আপনার কাজ, ছদ্মবেশের আড়ালের মানুষটাকে খুঁজে বের করাটা আমার কাজ, মিতিন ব্যাগ খুলে নিজের পরিচয়জ্ঞাপক কার্ড বের করে দিল। গলা নামিয়ে বলল, আপনি কিন্তু নাকখানা আনইউজুয়ালি লম্বা করে ফেলেছেন।

সুজিত দত্ত শেষ বাক্যটি যেন শুনেও শুনলেন না। কার্ডে চোখ রেখে বললেন, ও। আপনি তা হলে…?

সোজা বাংলায় টিকটিকি, মিতিন ঠোঁট টিপে হাসল, আপনি কি কার্লটন হোটেল ছেড়ে এখন সিমেইতে আছেন?

বাধ্য হয়েছি উঠতে। বেশিক্ষণ সিমেই-এর বাইরে থাকা চলবে না। পয়া লেবর স্টেশনে নেমে ফিরে যাব।

আপনার ফোন নম্বরটা পেতে পারি কি?

আপনার মোবাইলে আমি মিসড কল দিয়ে দেব।

পয়া লেবর এসে গিয়েছে। নেমে গেলেন সুজিত দত্ত। টুপুর মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছিল না। এদিকে কৌতূহলে পেট ফুলছে। চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, সুজিত দত্ত আসলে কে?

মিতিন হাসি হাসি মুখে বলল, গিরগিটি।

.

১০.

টুপুর শুয়ে ছিল। রুমে ফেরার পর থেকেই মিতিন ঠায় বসে আছে ব্যালকনিতে। একেবারে ধ্যানস্থ যেন। তার কাছে বারকয়েক গিয়েছিল টুপুর। প্রশ্নও করেছে একের পর এক। কিন্তু হুঁ, হা-এর বেশি জবাব পায়নি। কিংবা, কষছি তো অঙ্কটা, মিললে বলব ধরনের উত্তর। টুপুরের নিজের মাথাতেও ঘুরপাক খাচ্ছে ধাঁধা। টিভিতেও তাই মন বসছিল না। অগত্যা বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া ছাড়া উপায় কী?

বুমবুম আর পার্থ ফিরল রাত দশটা বাজিয়ে। রাতের চিড়িয়াখানা দেখে বুমবুমের প্রাণে উচ্ছাসের বান ডেকেছে। ঘরে ঢুকেই গলায় উদ্ভট শব্দ করতে করতে লাফাল খানিকক্ষণ। ওটা নাকি আফ্রিকান নাচ। লাঠি বল্লম নিয়ে, আফ্রিকার আদিবাসী সেজে, মাদল গোছের বাজনা বাজিয়ে, কিছু সিঙ্গাপুরি যুবক নাকি এরকমই লম্ফঝম্ফ করছিল চিড়িয়াখানায়। আগুন খাওয়া, আর মুখ দিয়ে আগুন উগরে দেওয়া…এটা অবশ্য দেখাতে পারল না বুমবুম। হোটেলের ঘরে আগুন জ্বালানো নিষেধ কিনা!

বর্ণনাও চলছে সবিস্তার, বুঝলি দিদি, সে এক অন্ধকার ফরেস্ট। আমরা ট্রামে চেপে যাচ্ছি, আর হঠাৎ হঠাৎ দেখছি টাইগার দাঁড়িয়ে আছে, লায়ন হাই তুলছে…। রাইনো, ভল্লুক, হিপো, হাতি, বাইসন, হরিণ, বদর, সব দেখতে পেলাম।

টুপুর চোখ ঘুরিয়ে বলল, অন্ধকারে এত জন্তু দেখতে পেলি?

অ্যানিম্যালদের ওখানে আলো ছিল তো। দেখা যাচ্ছিল তো। সব অ্যানিম্যাল ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

কাছ থেকে দেখলি? না দূর থেকে?

একদম কাছ থেকে। ওনলি টেন ফিট।

বুমবুমের একটু বাড়িয়ে বলার অভ্যেস আছে। টুপুরের বিশ্বাস হচ্ছিল না। পার্থকে জিজ্ঞেস করল, সত্যি নাকি গো মেসো?

পার্থ বলল, আধা সত্যি। হরিণটরিনগুলো কাছাকাছি ছিল। তবে বাঘ-সিংহ অনেকটাই তফাতে। মাঝে পরিখা। এমনভাবে ফোকাস মেরে রেখেছে, জন্তুগুলোকে দেখা যাবেই। তবে জঙ্গলটা স্রেফ চালাকি। এমনভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ওরা নিয়ে যায়, মনে হবে তুই বোধ হয় আমাজনের জঙ্গলে ঢুকে পড়লি। অথচ পাঁচ-সাত মিনিট পর যেখানে থামছে, সেখানে দিব্যি স্ন্যাক বার, টয়লেট… তবে সব মিলিয়ে বেশ একটা নাইট সাফারির গা ছমছম করা এফেক্ট আছে। কিন্তু।

আর ওই শো’টার কথা বলো, বুমবুম ঝাঁপিয়ে পড়ল, একটা প্রকাণ্ড কাঠবেড়ালি কেমন সুড়সুড় করে দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে গেল! আর দুটো লোক গায়ে পাইথন জড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। একটা বেজি তো কানেকানে কথা বলছিল ট্রেনারের সঙ্গে।

তার মানে তোরা খুব এনজয় করেছিস?

পার্থ বলল, এনজয় করার মতোই জায়গা রে। ঢোকার মুখে মশালটশাল জ্বলছে, ভুরভুর করে খাবারের গন্ধ বেরোচ্ছে, অথচ কয়েক পা গেলেই অরণ্যের হাতছানি… একটাই যা চোখে লাগে, জন্তুগুলো বড্ড আড়ষ্ট। দেখে মনে হয়, ওই ভাবে শো না দিলে ওদের গর্দান যাবে।

আপনমনে বলেই চলেছে পার্থ। কী রকম ভিড় ছিল আজ নাইট সাফারিতে, কত দেশের কত ধরনের মানুষ এসেছিল, সরু সরু রহস্যময় পথে সে আর বুমবুম অন্ধকারে কেমন হেঁটে বেড়িয়েছে, ওখানকার কর্মচারীদের ব্যবহার কত মধুর, এই সব। বলতে বলতে হঠাৎই তার মনে হল মিতিন যেন বড় বেশি ভাবলেশহীন।

থমকে গিয়ে পার্থ জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার, তুমি এত চুপচাপ কেন? এখনও সেই কিছু না চুরি হওয়ার রহস্য নিয়ে ভেবে চলেছ?

পার্থ বুমবুম ফেরার পর ঘরে এসেছে মিতিন। বসেছিল টুলে। আলগাভাবে বলল, না তো, শুনছি তো।

সন্ধেটা হোটেলেই কাটালে?

বেরিয়েছিলাম একটু। সিঙ্গাপুরের এম-আর-টি চড়ে এলাম।

যাক। টুপুরের সন্ধেটা তা হলে একেবারে শুখা যায়নি।

টুপুর হাসল মৃদু। তাদের সান্ধ্য অভিযান আর সুজিত দত্তর প্রসঙ্গ তো এখনই তোলার জো নেই। মিতিনমাসি পইপই করে বারণ করেছে বলতে। কাঁধ ঝাকিয়ে বলল, তোমরাও কাল সকালে চড়ে নিতে পার। বুমবুমের খুব ভাল লাগবে।

পার্থ বলল, দেখি, যদি সময় পাই। ওদিকে তো আবার তোদের শপিংটপিংও আছে।

ঠিক বলেছ। দুখানা পারফিউম আমায় কিনতেই হবে। মা কাকে যেন দেবেন।

আমিও তো একটা ডিজিটাল ক্যামেরা দেখব।

 বুমবুম চেঁচিয়ে উঠল, আর আমার ভিডিয়ো গেমস?

হবে, হবে। সব হবে, পার্থ পেটে হাত বোলাল, কিন্তু এখন যে একটু খিদেখিদে পাচ্ছে। পেটে একটু দানাপানি ফেলতে হয়।

মিতিন নিজের মোবাইলটা টেপাটেপি করছিল। চোখ তুলে বলল, কেন, তোমরা খেয়ে আসোনি?

নাইট সাফারিতে ঢাকার সময় খেয়েছিলাম। বার্গার আর চিকেন নাগেটস।

আর ভিতরেও যে খেলে? বুমবুম ফুট কাটল, শিক কাবাব, স্যান্ডউইচ…

সে তো জঙ্গলে হেঁটে কখন হজম হয়ে গিয়েছে।

মিতিন বলল, তা হলে চলো, আমাদের সঙ্গে আর-একপ্রস্থ সাঁটাবে।

মুখে খাইখাই করল বটে, ডাইনিং হলে গিয়ে পার্থ অবশ্য বিশেষ কিছু নিল না। একবাটি থাই সুপ আর টুপুরের প্লেট থেকে একটুখানি ফ্রায়েড রাইস, ব্যস। বুমবুম শুধু আইসক্রিম।

খাওয়া শেষ করে মিতিন উঠে দাঁড়াল। ঘড়ি দেখতে-দেখতে বলল, তোমরা বিল মিটিয়ে রুমে যাও। আমি একটু আসছি।

পার্থ বিস্মিত স্বরে বলল, এত রাতে কোথায় যাবে?

একটা অর্থপূর্ণ হাসি ছুড়ে দিয়ে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে গেল মিতিন।

বুমবুমের দৌড় শেষ, রুমে এসেই শয্যা নিয়েছে। পার্থ ঢুকল স্নানে। কাল দুবার স্নান করেছিল সে, আজ এই নিয়ে তৃতীয় বার। এখানকার গরমে তার নাকি সারাক্ষণ চিড়িয়াখানার জলহস্তীদের মতো জলে গলা ড়ুবিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে।

বেশ খোশমেজাজে বাথরুম থেকে বেরোল পার্থ। গুনগুন গান গাইছে। চুল আঁচড়াতে-আঁচড়াতে টুপুরকে বলল, দুটো-তিনটে ইন্টারেস্টিং সাইট কিন্তু আমাদের দেখা বাকি, বুঝলি। তোর মাসির মুড ঠিকঠাক থাকলে কাল ভোরেই বেরিয়ে পড়া যায়।

টিভির রিমোট টিপে-টিপে এ চ্যানেল-ও চ্যানেল ঘুরে বেড়াচ্ছিল টুপুর। জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাবে?

যেমন ধর, নেতাজির যদি কোনও মেমোরিয়াল থাকে, সেখানে তো একবার যাওয়া উচিত।

তেমন আছে নাকি কিছু?

এদের টুরিং-লিফলেটগুলোতে তো সেভাবে দেখছি না। তবে আমি যদ্দুর জানি, একটা ওয়ার-মেমোরিয়াল এখানে আছে। আজাদ হিন্দ ফৌজের স্মৃতিতে।

রাসবিহারী বসু এই সিঙ্গাপুরেই তো নেতাজির হাতে আজাদ হিন্দ ফৌজের ভার তুলে দিয়েছিলেন। তাই না?

হুঁ… তারপর ধর, এখানকার পোর্টের দিকে যেতে পারি। কিংবা বোটানিকাল গার্ডেন।

ওসব বোধ হয় এবার আর হল না গো। কাল কেনাকাটা আছে, গোছগাছ আছে, সন্ধের মধ্যে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে…

সত্যি, টুরটা খুবই ছোট হল। ব্যাটারা যদি ফাইভ ডেজ ফোর নাইটস দিত, দিব্যি ধীরেসুস্থে ঘোরা যেত। বলতে বলতে পার্থর যেন একটা দরকারি কথা মনে পড়ে গিয়েছে। ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করল, হ্যাঁ রে, তোর মাসি যে আমার হ্যান্ডিক্যাম আর মোবাইল ফোনটা আটকে রাখল…কী করল রে ও দুটো নিয়ে?

সেন্টোসার ক্যাসেটটাই আবার দেখছিল।

 সেই অনুসরণকারীর ভূত এখনও ঘাড় থেকে নামেনি?… তা দেখে লাভ হল কিছু?

টুপুর ফাঁপরে পড়ল। কী বলবে, কতটুকু বলবে, ভেবে পাচ্ছিল না। পার্থমেসোর প্রশ্ন কোত্থেকে কোথায় ঠেলে নিয়ে যায় তার ঠিক কী।

সাজিয়েগুছিয়ে অশ্বথামা হত ইতি গজঃ ধরনের একটা জবাব খাড়া করছিল টুপুর, মিতিন ফিরেছে। তাড়াতাড়ি প্রসঙ্গ পালটে টুপুর বলে উঠল, এতক্ষণ কোথায় ঘুরছিলে?

খাটে বসে মিতিন বলল, হাঁটতে হাঁটতে একটু মুস্তাফা সেন্টারে গিয়েছিলাম।

পার্থর চোখ গোল-গোল, মাঝরাতে মুস্তাফা?

বা রে, তুমি তো বলছিলে সারা রাত খোলা থাকে। সেটাই একবার পরখ করে এলাম।

টুপুর আহত মুখে বলল, একাই গেলে? আমাদের ফেলে?

তোরা কাল যাস। তখন নয় আমি ঘরে থাকব।

শুধুই দেখতে গিয়েছিলে? পার্থর তেরচা প্রশ্ন, নাকি কিছু কিনলেটিনলে?

সামান্য কিছু। আমার গয়নাগাটি।

 দেখাও।

দেখবে? ব্যাগ খুলে একটা ম্যাগনিফায়িং গ্লাস বের করল মিতিন। হেসে বলল, ডিটেকটিভের কাছে এটাই গয়না।

পার্থ মুখ বাঁকাল, বাড়িতে তো খানচারেক আছে। আবার আর একটা?

থাক। সিঙ্গাপুরের স্মৃতিচিহ্ন, মিতিন কোলে বালিশ টানল, যাক গে, জরুরি কথা শোন। কাল সকালে তোমায় একটা কাজ করতে হবে।

কটার সময়?

 সাতটার মধ্যে। বাবুর ঘুম ভাঙবে তো?

হুকুম করলে বান্দা সারারাত জেগে থাকবে। লেকিন কাম কেয়া হ্যায়?

একটা ই-মেল পাঠাবে। পেঙ্গুইন রিসর্টস ইন্টারন্যাশনালে।

তাদের আবার কী লিখব?

বয়ান মোটামুটি বলে দিচ্ছি। তুমি ইংরেজি করে নিয়ো। একটা চমৎকার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ উপহার দেওয়ার জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। তবে আমাদের পক্ষ থেকে একটি অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ঘটে গিয়েছে। আপনাদের প্রতিনিধি মিস্টার কে এস এস নারায়ণকে মূল আমন্ত্রণপত্রটির বদলে ভুল করে তার একটা কপি দিয়েছিলাম। মিস্টার নারায়ণ বারবার মূল চিঠিটি চাওয়া সত্ত্বেও আমি তাঁকে সেটা দিতে পারিনি। কারণ চিঠিটা তখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে, কাল দুপুরে, আমার স্ত্রীর হাতব্যাগের খাঁজে সেটি হঠাৎই আবিষ্কৃত হয়। তারপর থেকে…

অ্যাই, দাঁড়াও দাঁড়াও, পার্থ হাত তুলে মিতিনকে থামাল, তুমি সত্যি চিঠিটা পেয়েছ নাকি?

নয় তো কি বানিয়ে বলছি?

 তোমার ভ্যানিটিব্যাগেই ছিল?

তাই তো দেখছি।

কিন্তু..তোমার ব্যাগে গেল কী করে?

নিশ্চয়ই তুমিই রাখতে দিয়েছিলে। তারপর তোমারও স্মরণে নেই, আমারও না, অম্লানবদনে মিতিন ফের খেই ধরল, যাক গে, তারপর লিখবে, চিঠিটা পেয়েই তুমি মিস্টার নারায়ণের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েছ। কিন্তু মিস্টার নারায়ণ সম্ভবত তোমার কোনও আচরণে আহত হয়েছিলেন, এবং হয়তো সেই কারণেই কাল সারা দিনে একটিবারও তিনি তোমার ফোন ধরেননি।

এ কী? আমি তো মিস্টার নারায়ণকে ফোন করিনি।

 করেছ। ভুলে গিয়েছ।

বুঝলাম…তারপর?

তারপর লিখবে, যেহেতু মূল আমন্ত্রণপত্রটি জমা দিতে তুমি দায়বদ্ধ, তাই তোমার স্ত্রী দায়িত্বটি নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল। মিস্টার নারায়ণ যে গাড়িটি চাংগি বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তার নম্বরটি তোমার স্ত্রীর স্মরণে ছিল, সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গাড়ির মালিক ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট ট্র্যাভেল এজেন্সির নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে ফ্যালো এবং মিস্টার নারায়ণের সন্ধানে তাদের সিমেই অফিসে সোজা চলে যায়।

তো-তো-তোমরা সিমেই গিয়েছিলে?

হ্যাঁ। সন্ধেটা নষ্ট করিনি।

সিমেই জায়গাটা কোথায়?

শহরের পূর্ব প্রান্তে। এয়ারপোর্টের কাছাকাছি, মিতিন এবার মৃদু ধমক দিল, কথার মাঝে বারবার ব্যাগড়া দিয়ো না তো! আমাকে তা হলে আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে।

না না, আমার মনে আছে। সুডোকু করা ব্রেন তো, একবার শুনলেই মুখস্থ হয়ে যায়। তুমি শেষ করো।

হ্যাঁ…এবার লিখবে…দুর্ভাগ্যবশত, ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্টের কর্মচারীটি, মিস্টার নারায়ণ কিংবা আপনাদের ঠিকানা দিতে অস্বীকার করে। মিস্টার নারায়ণের একটি ছবি আমার মোবাইলে ছিল, সেটি দেখেও মিস্টার নারায়ণকে সে চিনতে পারে না। উপায়ন্তর না দেখে আমি স্থির করেছি, কলকাতায় ফিরে চিঠিটি আপনাদের কোনও প্রতিনিধির হাতে প্রত্যর্পণ করব। সিঙ্গাপুরেই চিঠিটি আপনাদের দিয়ে দিতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু আজ আর মিস্টার নারায়ণকে খুঁজে বেড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সকালে কিছু কেনাকাটা করার আছে, তারপর দুপুরবেলাটা আমরা বিশ্রাম আর গোছগাছের কাজে ব্যস্ত থাকব। আশা করি, কলকাতায় গিয়ে চিঠিটা দিলে আপনাদের কোনও অসুবিধে হবে না। শেষে ওদের অসুবিধে ঘটানোর জন্য আর একবার দুঃখ প্রকাশ করবে। ঠিক আছে?

তা আছে, পাৰ্থ নাক কুঁচকোল, কিন্তু তুমি চিঠিটা দেওয়ার জন্য হঠাৎ এমন ব্যস্ত হয়ে পড়লে কেন?

ইনভিটেশন লেটারে সেরকমই কিন্তু লেখা ছিল।

 জানি তো। তবে ব্যাপারটা তো চুকেই গিয়েছে।

তা হোক পেয়ে যখন গিয়েছি, দেব না কেন? মিতিনের ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি, মিছিমিছি একটা অনুচিত কাজ করা তো ঠিক নয়।

তার জন্য এত বড় একটা ই-মেল লেখার দরকার কী? নারায়ণকে একটা এস-এম-এস ঝেড়ে দিলেই তো হয়। গট অরিজিনাল। কাম অ্যান্ড টেক। ব্যাটা রাগটাগ ভুলে সুড়সুড়িয়ে এসে নিয়ে যাবে।

না। ই-মেলই কোরো, মিতিনের হাসি চওড়া হয়েছে, মিস্টার নারায়ণের ওই শুটকো মুখ আর দেখতে ইচ্ছে করছে না।

কী জানি বাবা, তোমার মনে কী প্যাঁচ! পার্থ হাই তুলল, সকালে ডেকে দিয়ো। কাজ হয়ে যাবে।

চিঠির বয়ানে যেন গড়বড় না হয়। যা-যা বলেছি, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যেন লেখা হয়।

হবে।

টুপুর চুপটি করে মাসি-মেসোর কথোপকথন শুনছিল। ছেঁড়া-ছেঁড়া কয়েকটা সুতো দেখতে পাচ্ছিল শুধু, কিন্তু কিছুতেই সেগুলো জুড়তে পারছিল না। টের পাচ্ছে, একটা কোনও বড়সড় পরিকল্পনা আছে মিতিনমাসির। অথচ তার চেহারা এখনও ঝাপসা।

নাঃ, মিতিনমাসির চিন্তার গতিপ্রকৃতি আন্দাজ করা টুপুরের কম্মো নয়।