সূতপুত্ৰ উগ্রশ্রবা কর্তৃক গুরুড় পুরাণের মাহাত্ম্য বর্ণনা
সূতমুনি উগ্রশ্রবা নৈমিষারণ্যে বসে ঋষিদের সামনে গরুড় পুরাণের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। সাত্ত্বিক পুরাণগুলির মধ্যে এই পুরাণ অন্যতম সেরা। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ এই পুরাণের প্রবক্তা। তিনি তার বাহক বিনতানন্দন গরুড়কে শ্রবণ করিয়ে ছিলেন। মহর্ষি বেদব্যাস এই পুরাণ লিপিবদ্ধ করেন। উগ্রশ্রবা তার কাছে থেকে এই পুরাণের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বিদিত হয়েছিলেন। এই পুরাণ যে পাঠ ও শ্রবণ করে, তার মঙ্গল সাধিত হয়।
গরুড় পুরাণের দুটি খণ্ড– পূর্ব খণ্ড ও উত্তরখণ্ড। বিভিন্ন ধরনের দেবদেবীর পুজো-আচ্চা, নানা উপাখ্যান, বৈদ্যশাস্ত্র, ধর্মকথা, অর্থনীতি, শ্রীগোবিন্দের ধ্যান ও পুজার নিয়ম, নীতিকথা, নানা ধরনের নিয়ম, সূর্য-চন্দ্রাদির বংশ কথা, নানা ধরনের প্রায়শ্চিত্ত ইত্যাদি নিয়ে পূর্ব খণ্ড রচিত। উত্তর খণ্ডের মধ্যে আছে মানুষের মৃত্যুর পারলৌকিক ক্রিয়াদি, বৃষোৎসর্গ, প্রেতত্ত্ব নানাকর্ম ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন নরকের নাম ও তার শাস্তি, বিবিধ দানের ফলাফল, পাপমৃত্যুর গতি, পাপাভেদে চিহ্ন ভেদ সম্পর্কেও এই খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে।
মানুষ যা কিছু জ্ঞাত হতে চায়, গরুড় সেই সকল প্রশ্ন তার প্রভু শ্রীকৃষ্ণের কাছে রেখেছেন। স্বয়ং শ্রীগোবিন্দ তার উত্তর দিয়েছেন, এর মধ্যে কোনো কল্পনার স্থান নেই। আমরা কলিকালের মানুষ। আমরা কী জানি? গুরু? ধর্ম? না, এসব কিছুই আমাদের মান্য নয়। আর পরলোকের কথা তো চিন্তাই করি না। কিন্তু এই গরুড় পুরাণ পাঠ বা শ্রবণ করলে জানা যাবে যে, স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে উত্তর প্রদান করেছেন তা বাস্তবক্ষেত্রে একেবারেই মিথ্যা নয়।
মানব-মানবীর মঙ্গল ও অমঙ্গল সূচক লক্ষণ।
যে পুরুষের পিঠ কচ্ছপের খোলকের মত উঁচু, ঘাম হয় না, নখ তাম্রবর্ণের, পায়ের তলা নরম, আঙুলগুলো পরস্পর লাগানো, সে তোক রাজা হয়। যার হাত পায়ের নখ রুক্ষু এবং পাণ্ডু বর্ণের, মুখের শিরাগুলি স্পষ্ট, আঙুলগুলো রুক্ষ, সে অর্থাভাবে দুঃখ ভোগ করে। যার গায়ে প্রতিটি লোমকূপে একটি করে রোম, জঙ্ঘা হাতির গুঁড়ের মতো গোলাকার, সেও রাজা হয়। আর যদি লোমকূপে লোমের সংখ্যা একের বেশি হয়, তা হলে পণ্ডিত হওয়ার লক্ষণ জানতে হবে। তবে প্রতি লোমকূপে তিনটি লোম থাকলে, দারিদ্রতা লাভ হয়। শীর্ণ জানুবিশিষ্ট পুরুষ আজীবন রোগ যন্ত্রণা ভোগ করে। স্থূলকায় লিঙ্গ বিশিষ্ট পুরুষ দরিদ্র হয়। যায় অন্ডকোষ একটি চিরকাল দুঃখভোগের লক্ষ্মণ। অণ্ডকোষ একটি বড়ো ও অন্যটি ছোটো, সুমতি যুক্ত পুরুষ দুটি সমান আকারের অণ্ডকোষের অধিকারী সে রাজা হয়। কোষ দুটি প্রলম্বিত হলে অল্পায়ু হয়। যে পুরুষের লিঙ্গ মণি পাণ্ডুর অথবা বিবর্ণ তাকে আজীবন দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়। শব্দের সঙ্গে যে মূত্র ত্যাগ করে, সে হয় দরিদ্র। মূত্র ত্যাগকালে বেশি শব্দ হলে নরপতি হয়। সমানাকার উদর ভাগ্যবানের লক্ষ্মণ। কুম্ভের ন্যায় জঠর যার, সে হত দরিদ্র হয়। সুগঠিত তিনটি সমানাকার রেখা বিশিষ্ট কপালের অধিকারী ষাট বছর পর্যন্ত পূর্ণ সংসার করে। দুটো রেখাবিশিষ্ট কপাল চল্লিশ বছর আয়ুর লক্ষণ। বিশ বছর পরমায়ু হয় তার, যে একটি রেখাযুক্ত কপাল লাভ করে। স্বল্পায়ুদের কপালে রেখা কান পর্যন্ত ঝুলে পড়ে। কান পর্যন্ত প্রলম্বিত ললাট রেখা শতায়ুর লক্ষণ। রেখাগুলো স্পষ্ট না হলে বিশ বছর বেঁচে থাকে। যার কপাল রেখাবিহীন, সে হয় চল্লিশ বছর আয়ুর অধিকারী। ললাটে রেখা কাটাকুটি থাকলে, আঘাতে মৃত্যু নিশ্চয়ই হবে। কপালে ত্রিশূল আকারে রেখা থাকলে অর্থাৎ গরিমা যুক্ত নারী বা পুরুষ ধনে-মানে পুণ্যবান হয়। পৃথিবীতে একশো বছর বেঁচে থাকে।
যে স্ত্রীর কেশদাম কোঁকড়ানো, নাভী দক্ষিণাবর্ত, সে হল কুলবর্দ্ধিনী। সুবর্ণ গাত্রবর্ণ, হাতের তালু পদ্মের মতো লাল লক্ষণ যুক্ত নারী পতিব্রতা হয়। বক্রকেশযুক্ত গোলাকার চোখ বিশিষ্ট রমণী অচিরে বিধবা হয় ও আজীবন দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করে। যে রমণীর মুখ চাঁদের ন্যায়, নতুন অরুণের ন্যায় অঙ্গের রং, ঠোঁট দুটি লাল, টানা টানা দুটি চোখ –এমন নারী কখনও দুঃখকষ্ট পায় না। অসংখ্য রেখাবিশিষ্ট করতল নারী দুর্ভাগ্য ভোগ করে। শাস্ত্রে বলেছে যে রমণীর হাতে রেখার সংখ্যা অত্যন্ত কম সে দীনদরিদ্র হয়, হাতের রেখা লালাভ যার, সে সর্বদা সুখ ভোগ করে। হাতের রেখা কালো হলে, সেই কন্যা দাসীবৃত্তি করে।
আয়ুরেখা তর্জমা ও মধ্যমার মাঝখান দিয়ে সোজা চলে গেলে দীর্ঘায়ু লাভ হয়। জ্ঞানরেখা অঙ্কুষ্ঠের মূল হতে উদগত হয়। মধ্যমাঙ্গুলীয় মূলগত রেখা হল আয়ুরেখা। কনিষ্ঠাঙ্গুলির মূল থেকে এর উৎপত্তি বিচ্ছিন্ন বা বিভক্ত আয়ুরেখা শতায়ুর লক্ষণ। আয়ুরেখা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলেও শতবর্ষ লাভ হয়। কনিষ্ঠাঙ্গুলির মূল থেকে মধ্যমার মূল পর্যন্ত আয়ুরেখা বিস্তৃত হলে ষাট বছর বেঁচে থাকে।
যে কন্যার হাতে প্রকার ও তোরণাকার রেখা থাকে, সে প্রথমে দুঃখী হয়, পরে রানি হয়। নাভিদেশে লোম দেখা দিলে এবং তা ইতস্ততঃ ও পিঙ্গলবর্ণ হয়, ঊর্ধ্বদিকে বৃত্তাকারে গমন করে, সে রাজপরিবারে জন্মালেও দীনদুঃখী হয়।
যে কন্যার পায়ের অনামিকা ও অঙ্গুষ্ঠগুলি হাঁটার সময় মাটিতে পড়ে না, সে অচিরেই স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়। উজ্জ্বল চোখ সৌভাগ্যের লক্ষণ। যার দাঁত উজ্জ্বল, সে খাদ্যরসিক হয়। উজ্জ্বল গাত্রবর্ণযুক্ত কন্যা উত্তম শয্যালাভ করে। পা দুটি স্নেহযুক্ত হলে উত্তম বাহন লাভ হয়। কন্যার চরণ দুখানি স্নিগ্ধ সমুন্নত হয়, নখগুলো তামাটে রঙের সেখানে মৎস্য, অঙ্কুশ, পদ্মাদি চিহ্ন থাকলে জানবে শুভ লক্ষণ যুক্ত। সুলক্ষণা নারীর মধ্যে কোমল চরণতল, ও ঘামবিহীন দেখা যায়। জঙ্ঘা ও উরুরোমবিহীন, এবং হাতির শুড়ের মতো গোলাকার, সুগভীর নাভিদেশ ও দক্ষিণাবর্ত, স্তন দুটি লোমবিহীন, এই শ্রেণির রমণীকে ভগবান সুলক্ষণাযুক্ত বলেছেন।