সানি একটা উঁচু বেঞ্চে শুয়ে আছে, তার উপর উবু হয়ে ঝুঁকে পরীক্ষা করছে ষুন। ষুনের মাথার উপর নানা ধরনের যন্ত্রপাতি, পাশে বড় বড় মনিটর। একটা দশ বছরের শিশুর যেটুকু শান্ত হওয়ার কথা, সানি তার থেকে অনেক বেশি শান্ত। যুনের কথামতো সে দীর্ঘ সময় বেঞ্চে চুপচাপ শুয়ে রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, তার হাবভাব চালচলনে একজন বয়স্ক মানুষের ছাপ খুব স্পষ্ট।
রিশান আর নিডিয়া বেশ খানিকটা দূর থেকে সানি এবং সুনকে লক্ষ করছিল। ষুন তৃতীয়বারের মতো সানির রক্ত পরীক্ষা করে অস্পষ্টভাবে মাথা নাড়ল, কিছু একটা হিসাব সে মিলাতে পারছে না। রিশান নিচু গলায় নিডিয়াকে জিজ্ঞেস করল, কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে?
হা। নিডিয়া মাথা নাড়ে। সানির শরীরে গ্রুনির বিরুদ্ধে একটা প্রতিষেধক থাকার কথা, সেটা পাচ্ছে না।
ও! রিশান খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তুমি কি সানি সম্পর্কে কিছু জান? কোথা থেকে এসেছে, কী বৃত্তান্ত?
হ্যাঁ। কাল রাতে পড়ছিলাম। এই বসতিতে নারা নামে একটা মেয়ে থাকত, খুব সাহসী মেয়ে। যখন বুঝতে পারল দীর্ঘ সময় এই বসতিতে থাকতে হবে তখন সে খুব একটা সাহসের কাজ করল।
ভ্রূণ ব্যাংক থেকে একটা বাচ্চা নিয়ে নিল?
না, সেটা তো খুব সাহসের কাজ হল না। সে ঠিক করল নিজের শরীরে একটা বাচ্চা করবে। আগে যেরকম করে করা হত।
সত্যি?
হ্যাঁ। তারপর সে নিজের শরীরে একটা ক্ৰণ বসিয়ে সেই শিশুটির জন্ম দিল। সেই শিশুটি হচ্ছে সানি।
কী আশ্চর্য! রিশান অবাক হয়ে মাথা নাড়ে–এও কি সম্ভব? পৃথিবীতেও তো মানুষ আজকাল সন্তান গর্ভধারণ করে না।
হ্যাঁ, কিন্তু নারা নামের এই মেয়েটি করেছিল। বাচ্চাটি জন্ম হবার পর মেয়েটির জীবন পাল্টে গেল–কী যে আনন্দে ছিল পরের তিন বছর! নিডিয়া বিষণ্ণ চোখে মাথা নেড়ে বলল, তিন বছর পর মেয়েটি মারা গেল, বাচ্চাটি একা একা বড় হয়েছে তারপর। একজন একজন করে সব মানুষ মারা গেল, তারপর বাচ্চাটি আরো একা হয়ে গেল। চারটি অপ্রকৃতিস্থ রবোট আর এই বাচ্চাটি! কী ভয়াবহ ব্যাপার–
রিশান আবার তাকাল, বেঞ্চে সানি চুপচাপ শুয়ে আছে, তার উপর ষুন খুব চিন্তিত মুখে উবু হয়ে ঝুঁকে আছে। গ্রুনির বিরুদ্ধে যে প্রতিষেধকটি তার শরীরে পাওয়া যাবে বলে সবাই ভেবেছিল সেটি তার শরীরে নেই। ষুন হতচকিতভাবে খানিকক্ষণ একটা মনিটরের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার আরো কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে সানির দিকে এগিয়ে যায়।
রিশান নিডিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, সানির মায়ের নাম ছিল নারা?
হ্যাঁ।
তার কি কোনো ছবি আছে?
হ্যাঁ, মূল তথ্যকেন্দ্রে তার ছবি আছে। কেন?
আমি, আমি একটু দেখতে চাই।
নিডিয়া উঠে দাঁড়াল, বলল, এস আমার সাথে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে রিশান হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল, নিডিয়া অবাক হয়ে বলল, কী হল থামলে কেন?
আমার একটা কথা মনে পড়েছে।
কী কথা?
মনে আছে প্রথম যখন আমরা এসেছিলাম তখন আমরা শীতলঘরে গিয়ে দেখেছিলাম সবগুলো মৃতদেহ পাশাপাশি দাঁড় করানো আছে?
হ্যাঁ। তার মাঝে একটা নিশ্চয়ই নারা।
হ্যাঁ
রিশান কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, আমি সেই ঘরটিতে আরেকবার যেতে চাই।
কেন?
মৃতদেহগুলো আরেকবার দেখতে চাই
নিডিয়া খানিকক্ষণ রিশানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, চল।
শীতলঘরটিতে যাওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলল না। ঘরটির সামনে দাঁড়িয়ে দুজনেই একটু দ্বিধা করতে থাকে, শেষ পর্যন্ত রিশান একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলল, এস নিডিয়া, আমি একা ভিতরে যেতে চাই না।
ভারি দরজাটা ঠেলে দুজনে ভিতরে ঢোকে, ভিতরে তাপমাত্রা অনেক কম; কিন্তু মহাকাশচারীর পোশাক পরে থাকায় দুজনের কেউ সেটা বুঝতে পারে না। মৃতদেহগুলো। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে, দেখে মনে হয় হঠাৎ বুঝি সবগুলো একসাথে জেগে উঠে এগিয়ে আসবে। রিশান কয়েক পা এগিয়ে যায়। চোখের সামনে কাঁচে জমে থাকা জলীয় বাষ্পটুকু পরিষ্কার করে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মৃতদেহগুলো ঘুঁটিয়ে ঘুঁটিয়ে দেখতে থাকে। প্রথম দুজন পুরুষ, তারপর একটি মেয়ে, তারপর আরো একজন পুরুষ। তারপর দুটি মেয়ে এবং তারপর আরেকজন পুরুষ। এই পুরুষটির পাশে দাঁড়ানো একটি মেয়ে এবং রিশান মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে পাথরের মতো জমে গেল।
নিডিয়া একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে রিশান?
রিশান হাত তুলে কাঁপা গলায় বলল এই কি নারা?
নিডিয়া অবাক হয়ে বলল, কিন্তু তুমি কেমন করে বুঝতে পারলে?
আমি যখন সানির খোঁজে বের হয়েছিলাম তখন একে দেখেছি।
নিডিয়া চমকে উঠে বলল, কী বললে? একে দেখেছ?
হ্যাঁ। স্পষ্ট দেখেছি, দুবার
তোমার চোখের ভুল কিংবা দৃষ্টিবিভ্রম।
হতে পারে, কিন্তু দৃষ্টিবিভ্রম হয়ে এই মেয়েটিকে কেন দেখব?
জানি না। আমি জানি না। নিডিয়া মাথা নেড়ে বলল, চল এই ঘর থেকে বের হয়ে যাই। এই ঘরের ভিতরে আমার ভালো লাগে না।
চল যাই।
দুজনে কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকে। সিঁড়ির কাছাকাছি এসে রিশান বলল, আমি যখন দ্বিতীয়বার এই মেয়েটিকে দেখেছি তখন তার ছবি তুলে রেখেছি।
কোথায় সেই ছবি?
নিশ্চয়ই আমার তথ্যকেন্দ্রে আছে
আমাকে দেখাও, আমি দেখতে চাই।
রিশান বুকের কাছাকাছি একটা সুইচ স্পর্শ করতে গিয়ে থেমে গিয়ে বলল, আমার একটু ভয় করছে। যদি দেখতে পাই কিছু নেই?
নিডিয়া একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ভয় পাওয়ার সময় পার হয়ে গেছে রিশান। তুমি ছবিটা বের কর
রিশান ছবিটা বের করল এবং রিশানের সাথে সাথে নিডিয়াও সবিস্ময়ে দেখল ছবিতে। সাদা একটি ছায়ামূর্তি স্থির চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ছবিটি কিংবা ছায়ামূর্তিটি খুব স্পষ্ট নয়; কিন্তু সেটি যে নারার ছায়ামূর্তি সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দুজন কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা বলল না, রিশান অনুভব করল আতঙ্কের একটা বিচিত্র অনুভূতি তার মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। নিডিয়া রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মনে হয় ব্যাপারটি সবাইকে জানানোর প্রয়োজন আছে।
হ্যাঁ, চল নিচে যাই।
নিচে বড় হলঘরটিতে চারটি রবোট পাশাপাশি বসেছিল। সানিকে নিয়ে পরীক্ষা শেষ হয়েছে, সে একটা গোল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ষুন চিন্তিত মুখে হাতে একটা ছোট ক্রিস্টাল ডিস্ক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। রিশান এবং নিডিয়াকে দেখে একটু এগিয়ে এসে বলল, আমি সানিকে খুব ভালো করে পরীক্ষা করে দেখেছি–অস্বাভাবিক কিছু পেলাম না। সে ঠিক অন্য সব মানুষের মতো
তাকে ইচ্ছে করলেই গ্রুনি আক্রমণ করতে পারে?
হ্যাঁ। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে তাকে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত করছে না?
না। রিশান সানির দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, আমরা এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাপার ঘটতে দেখেছি তার থেকে একটা জিনিস পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, গ্রুনি অত্যন্ত নিম্ন শ্রেণীর একটা জীবাণুবিশেষ; কিন্তু একটা খুব বুদ্ধিমান প্রাণী তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সানি যে এই জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে না তার কারণ সেই বিশেষ বুদ্ধিমান প্রাণী তাকে আক্রান্ত করতে চায় না।
ষুন ভুরু কুঁচকে বলল, আমি জানি না তুমি কেন এই কথা বলছ। অসংখ্যবার এই গ্রহকে তন্ন তন্ন করে খোজা হয়েছে, গ্রুনি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় নি। এই গ্রহের একমাত্র জীবন্ত প্রাণী হচ্ছে গ্রুনি। গ্রুনি একটা জীবাণু ছাড়া কিছু নয়, তার বুদ্ধিমত্তা থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না।
আমি সেটা নিয়ে এখন কিছু বলতে চাই না ষুন। কিন্তু আমি যখন সানিকে খুঁজতে গিয়েছিলাম তখন কী দেখেছি তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে। আমি তার ছবি তুলে এনেছি, নিডিয়া সেই ছবি দেখেছে।
কিসের ছবি?
রিশান সানির দিকে তাকাল, সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রিশান একটু ইতস্তত করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন ঘরঘর করে কোয়ারেন্টাইন ঘরের দরজা খুলে লি–রয় বড় হলঘরটিতে ঢুকল। মহাকাশচারীর পোশাকের মাঝে তার চেহারাতে এক ধরনের বিচলিত ভাব।
রিশান লি–রয়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, কী খবর লি–রয়?
আমি স্কাউটশিপটা দেখতে গিয়েছিলাম। তোমরা বিশ্বাস করবে না সেখানে কী হয়েছে।
কী?
খুব যত্ন করে কেউ একজন নিয়ন্ত্রণ মডিউলের মূল ভরকেন্দ্রটি নষ্ট করেছে। মহাকাশযান থেকে আরেকটা না আনা পর্যন্ত স্কাউটশিপটা চালানোর কোনো উপায় নেই।
কেউ কিছুক্ষণ কোনো কথা বলল না। হঠাৎ সানি একটু এগিয়ে এসে বলল, তোমার কি মাথা ব্যথা করছে?
লি–রয় অবাক হয়ে সানির দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ। তুমি কেমন করে বুঝতে পারলে।
সানি লি–রয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল, তোমার কি মাথার বাম পাশে বেশি ব্যথা করছে।
লি–রয় একটু অস্বস্তির সাথে ডান হাতটা উপরে তুলে বলল, হ্যাঁ মাথার বাম পাশে চিনচিন করে ব্যথা করছে?
ডান হাতটা কি তোমার অবশ লাগছে?
লি–রয় অবাক হয়ে নিজের ডান হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ। সত্যিই ডান হাতটা কেমন জানি অবশ অবশ লাগছে। তুমি কেমন করে জান?
সানি কোনো কথা না বলে লি–রয়ের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর ঘুরে রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, এই মানুষটিকে গ্রুনি আক্রমণ করেছে। একটু পরেই এই মানুষটি মারা যাবে। তাকে তোমরা শুইয়ে রাখ।
ঘরে কেউ কোনো কথা বলল না। সবাই স্থির দৃষ্টিতে সানির দিকে তাকিয়ে থাকে, রিশান খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, কিন্তু কিন্তু লি–রয় মহাকাশচারীর পোশাক পরে আছে, তার ভিতরে কোনো কিছু ঢুকতে পারবে না।
লি–রয় হাত তুলে বলল, আমার মনে হয় সানি ঠিকই বলেছে, বাইরে আমার পোশাকের মাঝে হঠাৎ একটা সূক্ষ্ম ফুটো হয়েছে, অত্যন্ত সূক্ষ্ম, আমার পোশাকের মূল মডিউল সেটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে আমাকে রক্ষা করেছে। কিন্তু আমি জানি বাইরে কিছুক্ষণের জন্যে আমার পোশাকটি নিশ্ছিদ্র ছিল না।
কেউ কোনো কথা বলল না। লি–রয় খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ঘরের এককোনায় হেঁটে গিয়ে তার মহাকাশচারীর পোশাকটা খুলে ফেলতে ফেলতে বলল, এখন শুধুশুধু এটা পরে থাকার কোনো অর্থ হয় না–যা হবার তা হয়ে গেছে।
ষুন এগিয়ে গিয়ে বলল, কিন্তু একটা বাচ্চা ছেলের কথায় বিশ্বাস না করে–
লি–রয় হাত তুলে সুনকে থামিয়ে দিয়ে বলল, সে হয়তো বাচ্চা ছেলে কিন্তু এই গ্রহের ব্যাপারে সে সম্ভবত একমাত্র অভিজ্ঞ মানুষ। তাছাড়া আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার শরীরের মাঝে কিছু একটা ঘটছে। আমি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার আগে তোমাদের। সাথে ব্যাপারটা আলোচনা করতে চাই। তোমরা কাছাকাছি আস।
লি–রয় মহাকাশচারীর পোশাক থেকে বের হয়ে লম্বা একটা বেঞ্চে বসে ক্লান্ত গলায় বলল, মহাকাশযান থেকে হান আর বিটিকে ডাক, আমি শেষবার তোমাদের সাথে কথা বলে নিই। লিরয় সানির দিকে ঘুরে তাকিয়ে নরম গলায় বলল, সানি–
সানি লি–রয়ের দিকে ঘুরে তাকাল।
আমার কতক্ষণ সময় আছে সানি?
বেশি সময় নাই। ঘণ্টাখানেক পরে তোমার ব্যথাটা কমে যাবে, তখন তোমার খুব ঘুম পেতে থাকবে। এক সময় তুমি ঘুমিয়ে যাবে তখন আর ঘুম থেকে উঠবে না
ঘণ্টাখানেক তো খারাপ সময় নয়। এর মাঝে অনেক কিছু করে ফেলা যায়। সময় নষ্ট করে লাভ নেই, এস তোমাদের আমি কয়েকটা নির্দেশ দিয়ে যাই।
ষুন এগিয়ে এসে বলল, আমি তবু তোমাকে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে চাই লি–রয়। তুমি এখানে শুয়ে পড়।
লি–বয় বাধ্য ছেলের মতো বেঞ্চে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল। ষুন তার মাথায় একটা চতুষ্কোণ প্রোব লাগিয়ে একটা মনিটরের দিকে তাকিয়ে একটা ছোট নিশ্বাস ফেলল। লি–রয় মাথা ঘুরিয়ে ষুনের দিকে তাকিয়ে বলল, নিশ্চিত হতে পেরেছ ষুন?
ষুন কোনো কথা না বলে মাথা নাড়ল।
লি–রয় জোর করে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলল, কথাটা খুব খারাপ শোনাবে তবু আমি একটা কথা বলে যাই। আমার ধারণা তোমরা যারা এখানে আছ তোমরা কেউ বেঁচে ফিরে যেতে পারবে না। কাজেই হান আর বিটি যেন কোনো অবস্থায় এই গ্রহে নেমে না আসে।
ষুন মাথা নেড়ে বলল, আমাদের পৃথিবীর নির্দেশমতো গ্রহটিকে জীবাণুমুক্ত করা উচিত ছিল।
লি–রয় উত্তরে কিছু বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখন সানি এগিয়ে এসে বলল, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে পারি?
কী কথা?
তুমি কি আমার মাকে একটা কথা বলবে?
তোমার মাকে?
হ্যাঁ। বলবে আমি এখানে এভাবে থাকতে চাই না। আমার ভালো লাগে না। আমি তার কাছে যেতে চাই।
লি–রয় খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ঠিক আছে বলব।
আর বোলো স্কাউটশিপে মূল ভরকেন্দ্র যেন ফিরিয়ে দেয়–যদি তারা রাজি না হয় তুমি নিজে ফিরিয়ে এনো।
লি–রয় অবাক হয়ে সানির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি কী বলছ আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
সানি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তুমি যদি না বোঝ কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু তবু তুমি শুনে রাখ। ঠিক আছে?
লি–রয় মাথা নাড়ল।
চারটি রবোট এতক্ষণ চুপ করে বসেছিল, হঠাৎ তারা চার জন একসাথে উঠে দাঁড়ায়। একজন গলা নামিয়ে বলল, শীতলঘরে জায়গা করতে হবে।
হ্যাঁ সতের নম্বর মৃতদেহটা ডানদিকে সরিয়ে দিয়ে নয় নম্বরটা সামনে নিয়ে এলেই হবে।
অন্য দুইজন কলের পুতুলের মতো মাথা নেড়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। নিডিয়া একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি খুবই দুঃখিত লি–রয়। আমি খুবই দুঃখিত।
লি–রয় খানিকক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, এখানে দুঃখ পাবার কিছু নেই। আমি এখন যা বলি তোমরা মন দিয়ে শোন। আমাদের হাতে একেবারে সময় নেই।
সবাই একটু এগিয়ে আসে।