বলেন বৈশস্পায়ন শুনহ রাজন।
যুধিষ্ঠিরে তখন কহেন নারায়ন।।
অঙ্গীকার তথাপি না করেন রাজন।
পুনশ্চ কহেন কৃষ্ণ মধুর বচন।।
শুন ওহে ধর্ম্মরাজ ক্ষমা দেহ মনে।
হস্তিনানগরে চল আমার বচনে।।
পৃথিবী পালহ রাজা সিংহাসনে বসি।
ধর্ম্মের নন্দন তুমি হবে রাজ্যবাসী।।
যে দুঃখ পাইলে তুমি বেড়াইয়া বনে।
সে সকল কথা কেন নাহি কর মনে।।
রজঃস্বলা দ্রৌপদীর কেশেতে ধরিল।
সভামধ্যে দুঃশাসন বাটিতি আনিল।।
দ্রৌপদীরে উরু দেখাইল দুর্য্যোধন।
তাহা সব পাসরিলে ধর্ম্মের নন্দন।।
তথাপি এতেক ভয় বুঝিতে না পারি।
বিলম্ব না কর, চল হস্তিনানগরী।।
এত যদি কহিলেন দৈবকী নন্দন।
দিলেন পান্ডব জ্যৈষ্ঠ উত্তর বচন ।।
দুর্য্যোধন পাইল আপন কর্ম্মফল।
আমাকে উচিত নহে ভকবৎসল।।
রাজ্যভোগ কখন নাহিক মম মনে।
নিরবধি পড়ে মনে ভাই দুর্য্যোধনে।।
যুক্তি নহে সে সকল বচন শুনিতে।
ভীমার্জ্জুন লয়ে তুমি যাহ হস্তিনাতে।।
গোবিন্দ বলেন শুন পান্ডুর নন্দন।
পুনঃ পুনঃ মম বাক্য না কর লঙ্ঘন।।
তোমাকে না শোভে হেন দিতে অনুমতি।
তুমি রাজা হৈলে আমি পাইব পীরিতি।।
এমত কৃষ্ণের লীলা কেহ নাহি জানে।
অনুমতি দেন ধর্ম্ম কৃষ্ণের বচনে।।
হস্তিনা যাইব চল দেব গদাধর।
শুনি আনন্দিত হল বীর বৃকোদর।।
যুধিষ্ঠির রাজা হইবেন হস্তিনার।
শুনি আনন্দিত হয় মাদ্রির কুমার।।
অর্জ্জুন প্রফুল্ল হন ধর্ম্মের বচনে।
ত্বরা করিলেন সবে হস্তিনা গমনে।।
হেনকালে ধৃতরাষ্ট্র করেন ক্রন্দন।
কোথায় ছাড়িয়া যাই পুত্র দুর্য্যোধন।।
দুঃশাসন দুম্মুর্খ প্রভৃতি যত জন।
স্মরিয়া আমাকে লহ শুন বাছাধন।।
দেশেতে দেখিব গিয়া আমি কার মুখ।
পান্ডব নিলেক রাজ্য ধন জন সুখ।।
সকরুণে হেন কথা কহিল রাজন।
শুনি যুধিষ্ঠির হইলেন অচেতন।।
পড়িল ভূমিতে ধর্ম্ম হইয়া মুর্চ্ছিত।
কৃষ্ণার্জ্জুন সহদেব দেখি হৈল ভীত।।
তুলিয়া রাজাকে বসাইলেন শ্রীহরি।
বসিয়া কহেন রাজা কৃতাঞ্জলি করি।।
কি আর প্রবোধ দেহ ওহে দেব হরি।
জ্যেষ্ঠতাত শোক আর সহিতে না পারি।।
কেমনে এ সব কথা শনিব শ্রবনে।
শুন কৃষ্ণ কার্য্য নাহি মম রাজ্যধনে।।
দ্রোপদী মরিবে পঞ্চপুত্র বিবর্জ্জিতা।
অভিমন্যু শোকে কান্দে বিরাট দুহিতা।।
করি প্রাণ ত্যাগ প্রায়শ্চিত্ত যে ইহার।
আর কিছু নাহি বল দৈবকী কুমার।।
ধৃতরাষ্ট্র বিরাটদি দ্রুপদ রাজন।
রাজ্য হেতু নাশিলাম শুন নারায়ণ।।
পৃথিবীতে আছিল যতেক নরপতি।
মম হেতু সবাকার হইল দুর্গতি।।
কেন পাপ আশা আমি বাড়ইনু মনে।
নাশ হৈল কুরুকুল আমার কারণে।।
রাজ্যলুব্ধ হয়ে আমি হইনু দুরন্ত।
ভীষ্ম হেন পিতামহ করিলাম অন্ত।।
অর্জ্জুনের বাণে পিতামহ ম্রিয়মান।
শিখন্ডী সম্মূখে গিয়া কৈল অপমান।।
রথ হৈতে যখন পড়িল ভীষ্মবীর।
আকাশ হইতে যেন খসিল মিহির।।
পুষিয়া পালিয়া মোরে শিখাইল নীত।
হেন পিতামহে মারি না হয় উচিত।।
কহিতে অধিক দুঃখ উঠে নারায়ণ।
রাজ্যে কার্য্য নাহি মম পুনঃ যাব বন।।
তবে ব্যাস প্রবোধ দিলেন নরবরে।
শুন ধর্ম্ম, শোক কেন ভাবহ অন্তরে।।
আমি যাহা কহি তাহা শুন মন করি।
গতজীবে শোক কৈলে বাড়ে যত বৈরী।।
যথায় সংযোগম তথা বিয়োগ অবশ্য।
সলিলের বিন্ব যেন সংসার রহস্য।।
জন্মিলে মরণ যেন অবশ্যই লোক।
জন্ম মৃত্যু দেহ ধরি না করিহ শোক।।
এ সব ঈশ্বর লীলা শুন নরপতি।
সেই সে বুঝিতে পারে কৃষ্ণে যার মতি।।
ইহাতে বিবাদ কেন শুনহ রাজন।
পুনঃ পুনঃ আপনি কহেন নারায়ন।।
এত বলি কহিলেন বহু ইতিহাস।
যুধিষ্ঠিরে প্রবোধ দিলেন মুনি ব্যাস।।
সংসার প্রসঙ্গে সেই কথা মুনিগণে।
সনকেরে সিজ্ঞাসা করিল তপোবনে।।
শুনিল মুনিয়া যাহা সনেকের স্থানে।
সে কথা কহেন ব্যাস ধর্ম্মের নন্দনে।।
অনিত্য শরীর ভাই শুন সর্ব্বজন।
নানামত ব্যাধি হেতু প্রাণীর নিধন।।
বিধাতা লিখিল যারে যেমন প্রকারে।
খন্ডন না হয় সেই জনমিলে মরে।।
আপনার কর্ম্ম হেতু মরয়ে আপনি।
চিরজীবী কেহ নহে শুন নৃপমণি।।
প্রথম বয়সে কেহ, কেহ মধ্যকালে।
শেষকাল সরে কেহ বার্দ্ধক্য হইলে।।
বড় ছোট নাহি জানি মরে সর্ব্বজন।
কর্ম্ম অনুরূপ জান পান্ডুর নন্দন।।
অস্ত্রাঘাতে মরে কেহ জলেতে ডুবিয়া।
আস্ত্রাঘাতী হয় কেহ গরল খাইয়া।।
সর্পাঘাতে মরে কেহ গরল খাইয়া।
সর্পাঘাতে মরে কেহ মরে সান্নিপাতে।
শার্দ্দুল ভক্ষনে কেহ মাতঙ্গ হইতে।।
যাহার যেমত কর্ম্ম তার সেই গতি।
হেতু মাত্র মৃত্যু হয় শুন নরপতি।।
মহাধনবান রাজা নানা ভোগ করে।
শুন যুধিষ্ঠির সেই কাল পেলে মরে।।
ভিক্ষা মাগি যেই জন খায় নিতি নিতি।
কাল প্রাপ্তে সে ও মরে শুন নরপতি।।
নানা শাস্ত্র বিচারিয়া করয়ে বিচার।
ভোগ হৈলে অন্তে মৃত্যু হয় যে তাহার।।
অতি দুঃখী মরে চিরজীবী কেহ নয়।
শুন যুধিষ্ঠির এই সর্ব্ব শাস্ত্রে কয়।।
এ সব ঈশ্বর আজ্ঞা কালে মরে প্রাণী।
তুমি জ্ঞানবান কত বুঝাইব আমি।।
নিত্য শত স্বর্ণ কেহ দ্বিজে দেয় দান।
কালে তার মৃত্যু হয় না হয় এড়ান।।
কোন কোন জন নিত্য নিত্য পাপ করে।
শুন নরপতি সে ও কাল পেলে মরে।।
কিন্তু ধর্ম্ম পথে প্রাণী করিবে যতন।
কদাচিত পাপ পথে নাহি দিবে মন।।
ধর্ম্ম কর্ম্ম আচরিতে বেদের বিধান।
এ সব ঈশ্বর লীলা শুন সাবধান।।
আমার কৌতুক দেখ সকল সংসার।
কালেতে হরিবে সব ধর্ম্মের কুমার।।
শীত গ্রীষ্ম বর্ষা যথা হয় পরিবর্ত্ত।
সেইমত দুঃখ সুখ কালের বিবর্ত্ত।।
শুন যুধিষ্ঠির কেহ কারে নাহি মানে।
অগাধ সলিলে মৎস্য থাকয়ে বন্ধনে।।
বনে চরে মৃগ, কারে না করে হিংসন।
দেখহ ঈশ্বর লীলী তাহার মরণ।।
ঔষধে না করে ত্রাণ জানাই তোমারে।
কর্ম্মক্ষয় হৈলে প্রাণী অকস্মাৎ মরে।।
ছাওয়াল অকর্ম্মা থাকে বাক্য না সরে।
ভোগ না সমপ্তি হৈতে কেন সেই মরে।।
ইথে কি তোমার, শোক কেন কর বৃথা।
মনে বিচারিয়া দেখ তব পিতা কোথা।।
কোথা সে মান্ধাতা পৃথিদিলেক দ্বিজেরে।
যযাতি নহুষ কোথা শিবি নরবরে।।
হরিশচন্দ্র রুক্মাঈদ ধর্ম্মশীল দাতা।
কালেতে মরিল তাহা বল আছে কোথা।।
দুইখানি কাষ্ঠ স্রোতে একএ মিলিন।
পুনশ্চ বিচ্ছেদ হয় কে কোথায় রয়।।
সেই মত জানিবা বান্ধব সমাগম।
জ্ঞানবান লোকে তাহা না করয়ে ভ্রম।।
নারীগণ গীতবাদ্য করে অনুক্ষণ।
লজ্জাহীন হয়ে শেষে করয়ে ক্রন্দন।।
পিতৃ মাতৃ দেখহ যতেক পরিবার।
মনে বিচারিয়া দেখে কেহ নহে কার।।
কত জন্ম মরণ, নির্ণয় নাহি জানি।
জননী রমনী হয়, রমনী জননী।।
পুত্র হয়ে পিতা হয়, পিতা হয় পুত্র।
অদ্ভুত ঈশ্বর লীলা কর্ম্ম মাত্র সূত্র।।
পথিক সহিত যেন পরিচয় পথে।
সেইমত দিন কত থাকে এক সাথে।।
তাহাতে বিচ্ছেদ হয় নিজকর্ম্ম গুণে।
শোক ত্যাজ যুধিষ্ঠির কিবা ভাব মনে।।
কালে আসে কালে যায় কেহ নাহি দেখে।
কোথা হতে আসে প্রাণী কোথা গিয়া থাকে।।
ক্ষণেক সংযোগ হয় সদা বিভিন্নতা।
শুন যুধিষ্ঠির তুমি শোক কর বৃথা।।
কোথা আছিলাম পূর্ব্বে কোথা চলি যাব।
কে বুঝে ঈশ্বর লীলা কাহাকে কহিব।।
কুম্ভকার চক্রে যেন দিবানিশি ভ্রমে।
সেইমত জানিহ বান্ধব সমাগমে।।
ভাস্করের গতায়াতে দিন হয় ক্ষয়।
সংসার কর্ম্মেতে থেকে তৈন্য হারায়।।
জন্ম জরা মরণ দেখিতে সদা হয়।
তথাপি লোকের মনে নাহি হয় ভয়।।
যখন জন্ময়ে লোক এইত সংসারে।
তখন আইসে প্রাণী যম অধিকারে।।
রসিক জনাতে যেন সেবে মহারস।
জরা জীর্ণসুখে থাকে নহে মৃত্যুবশ।।
ধ্যানে নিরবধি থাকে তপস্বীর সনে।
শুন যুধিষ্ঠির তারে হরে লয় যমে।।
আপনার শরীর রাখিতে নাহি পারি।
কি লাগিয়া পর লাগি শোক করে মরি।।
এত সব তত্ত্ব কথা সনক কহিল।
অস্র নামে ব্রাক্ষ্মণের সন্দেহ ভাঙ্গিল।।
শোক ত্যজ যুধিষ্ঠির শুন নরপতি।
মহাসুখে ভুঞ্জ সসাগরা বসুমতী।।
ব্যাসের বচন শুনি ধর্ম্ম নৃপবর।
মৌনেতে রহেন কিছু না দেন উত্তর।।
কৃষ্ণেরে কহেন তবে বীর ধনঞ্জয়।
কত ক্লেশ পান রাজা কহিতে সংশয়।।
জ্ঞাতিবধ পাপে মগ্ন রাজা যুধিষ্ঠির।
বিশেষ আকুল বড় ভীম মহাবীর।।
কেমনে পাইবে রাজ্য কহ ভগবান।
বৃথা করিলাম তবে এতক সংগ্রাম।।
আপনি নিশ্চয় কহ রাজা যুধিষ্ঠিরে।
তবে রাজ্য পাই প্রভু জানাই তোমারে।।
দেশান্তরী হয়েছিনু রাজ্যের কারণে।
স্মরিয়া সে সব কথা দুঃখ উঠে মনে।।
বিরাট নগরে বঞ্চিলাম বৎসরেক।
হীনকর্ম্ম করিলাম কহিব কতেক।।
হেন রাজ্য ত্যাজিতে চাহেন যুধিষ্ঠির।
আপনি বুঝাও ও পুনঃ শুন যদুবীর।।
রাজ্য হেতু জ্ঞাতিগণ হইল বিনাশ।
যুধিষ্ঠিরে আপনি বুঝাও শ্রীনিবাস।।
বিক্রম করেছি যত শুনহ শ্রীহরি।
বুঝাও ধর্ম্মেরে তুমি মায়া দূর করি।।
সকল তোমার সাধ্য শুন নারায়ণ।
রাজ্য লাগি করিলাম যত পরাক্রম।।
রাজ্য করিবারে প্রভু বড় ইচ্ছা হয়।
আপনি বিশেষ তাহা জান মহাশয়।।
রাজ্য ধন নাহি চান ধর্ম্ম নৃপমণি।
আমাকে চাহিয়া, নৃপে বুঝাও আপনি।।
অর্জ্জুনের বাক্য শুনি উঠেন গোবিন্দ।
নয়ন প্রসন্ন যেন বিকচারবিন্দ।।
ভক্তি করি কাছে গিয়া বসেন আপনি।
যুধিষ্ঠির হাতে ধরি কহেন তখনি।।
শোক ত্যাজ মহারাজ শান্ত কর মন।
কেন নাহি শুন রাজা ব্যাসের বচন।।
যে সব মরিল রণে জ্ঞাতি বন্ধুজন।
শোক কৈলে পাবে হেন না হয় রাজন।।
সেব্যমান উদ্বেগে কলহ কন্ডু বাড়ে।
শোকে মন দিল রাজা লক্ষী তারে ছাড়ে।।
আপনি নারদ পুনঃ সঞ্জয়ে কহিল।
তবেত সঞ্জয় রাজা শোক পাসরিল।।
হিতকথা কহিলেন ব্যাস মুনিবর।
তাহাতে আপনি কেন না দেহ উত্তর।।
এতেক কহেন যদি কমললোচন।
কিছু না কহেন তবে ধর্ম্মের নন্দন।।
পুনঃ ব্যাস মুনি তাঁরে বুঝান বিস্তর।
মৌনভাবে রাজা তাঁরে না দেন উত্তর।।
কহিল নারদ মুনি নানা উপদেশ।
না করিবা শোক রাজা কহিনু বিশেষ।।
জ্ঞাতিবধ বলি নাহি ভয় কর চিতে।
শোক নিবারিয়া রাজা চল হস্তিনাতে।।
শ্রাদ্ধ শান্তি কর দুর্য্যোধন আদি করি।
দূর কর মৃত্যুশোক হও দন্ডধারী।।
ধর্ম্মকথা নিরবধি করহ শ্রণ।
তবে শোকহীন হবে শান্ত কর মন।।
গঙ্গা হৈতে জাত ভীষ্ম শান্তনু তনয়।
তাঁর দরশনে পাপ হইবেক ক্ষয়।।
মহাবলবান ভীষ্ম শান্তনু নন্দন।
তাঁর দরশনে পাপ হবে বিমোচন।।
শ্রবণ করিতে বেদ অভ্যাস করিল।
ব্রক্ষ্মার তনয় হৈতে সুশিক্ষা পাইল।।
মার্কন্ডেয় মুনি হৈতে ধর্ম্মের নন্দন।
পরশুরাম হৈতে পাইল অস্ত্রগণ।।
ত্রিভুবনে প্রতিষ্ঠিত তাঁহার সম্পদ।
সাক্ষাৎ ব্রক্ষ্মার যিনি ছিল সভাসদ।।
মহাধর্ম্মশীল ভীষ্ম মহাতেজোময়।
তিনি সব ঘুচাবেন তোমার সংশয়।।
তাঁর দরশনে দূর হবে অমঙ্গল।
শুনিলে জ্ঞানের কথা হইবে নির্ম্মল।।
শোক ত্যজ মহারাজ শান্ত কর মন।
হস্তিনাতে কর গিয়া প্রজার পালন।।
অনাথ ব্রাক্ষ্মণ সব চাহেন তোমাকে।
তোমার কারণে নিত্য কাঁদে প্রজালোকে।।
অবশেষে যত আছে পৃথিবীর পতি।
উপাসা হেতু আছে শুন নরপতি।।
এত শুনি যুধিষ্ঠির করেন সম্মতি।
হস্তিনায় যাইতে দিলেন অনুমতি।।
ধৃতরাষ্ট্র অগ্রে করি পান্ডুর নন্দন।
হস্তিনাপুরীতে শীঘ্র করেন গমন।।
দিব্যরথে চড়িলেন পান্ডবের পতি।
তাহাতে সারথি হৈল ভীম মহামতি।।
কৃষ্ণার্জ্জুন রথেতে চলেন দুইজন।
সহদেব নকুল রথেতে আরোহণ।।
ধৃতরাষ্ট্র নরপতি চাপিল বিমানে।
সঞ্জয় যুযুৎসু আদি চলে সব জনে।।
কুন্তী ও গান্ধারী আদি চলে সব জনে।।
কুন্তী ও গান্ধারী আদি নারীগণ যত।
হস্তিনা গমনে সবে চাপিলেক রথ।।
শোকেতে গান্ধারী দেবী নেউটিয়া চায়।
দুর্য্যোধন বলিদেবী কান্দে উভরায়।।
থাক্ কুরুক্ষেত্রে মম শতেক নন্দন।
আমি অভাগিনী যাই আপন ভবন।।
দারুণ বিধাতা এত করিল আমাকে।
কোথায় ত্যাজিয়া আমি যাই সে সবাকে।
সাতকিচাপিল রথে হরষিত চিতে।
কোলাহল করিয়া চলেন হস্তিনাতে।।
ভীম করে সিংহনাদ পেয়ে মনে প্রীত।
তাহা দেখি গান্ধারীর হৃদয় দুঃখিত।।
শীঘ্রগতি দ্বারী গেল হস্তিনানগরে।
ধর্ম্ম আগমন জানাইল সবাকারে।।
দূতমুখে সন্বাদ পাইল পাত্রগণ।
সবে মেলি করে তবে নগর সাজন।।
চান্দোয়া চামর আনি টাঙ্গাইল পথে।
প্রবাল মুকুতাদাম শোভে চারিভিতে।।
বান্ধিল তোরণ সব বড় উচ্চ করি।
কদলী রোপণ করিলেক সারি সারি।।
পুষ্পমালা বনমালা নগরে নগরে।
সুবর্ণের ঘট শোভে দুয়ারে দুয়ারে।।
রাজমার্গ সুসংষ্কার করিল যতনে।
সুবাসিত কৈল পথ অগুরু চন্দনে।।
হস্তিনানগরে যত আছয়ে ব্রাক্ষ্মণ।
ধর্ম্ম আগমণ শুনি আনন্দিত মন।।
আনন্দেতে নানা বাদ্য সবে বাজাইল।
শুভক্ষণে র্ধম্মরাজ পুরে প্রবেশিল।।
বিজয় পান্ডব কথা অমৃত লহরী।
কাহার শকতি ইহা বর্ণিবারে পারি।।
অবহেলে শুনে যেন সকল সংসার।
কাশীরাম দাস কহে রচিয়া পয়ার।।
অপূর্ব্ব ভারত কথা পুরাণ প্রধান।
এতদূরে নারীপর্ব্ব হৈল সমাধান।।
নারীপর্ব্ব সমাপ্ত।