ঠিক সকাল নটার সময় যাত্রা শুরু হল।
সন্তু এর আগে কালাপাথরের ওপরে উঠেছিল একবার। খুব বেশি দূর নয়। যদি তুষারপাত শুরু না হয়, তাহলে ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যাবে।
মিংমা আর নোরবুচলেছে একেবারে সামনে। তাদের পেছনে সন্তু। মিং তার স্বভাব অনুযায়ী নানারকম মজার কথা বলতে বলতে চলেছে। নোরবু গভীর। সে অন্য সময়ও এরকম গভীর থাকে, কিন্তু আজ তার মুখখানাই যেন বদলে গেছে। সন্তু মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখছে নোরবুকে। কিন্তু নোরবু একবারও তাকাচ্ছে না। তার দিকে।
বরফের ওপর দিয়ে পা টেনে টেনে চলা। কিছুতেই খুব জোরে যাওয়া যায় না। সকলেরই সঙ্গে কিছু কিছু মালপত্র। এমন কী কাকাবাবুরও পিঠের সঙ্গে একটা ব্যাগ বাঁধা। কালাপাথরের ওপরে উঠলে এভারেস্টচুড়া একেবারে স্পষ্ট দেখা যায়। এভারেস্ট! সত্যিই কি এভারেস্টের চুড়ায় ওঠা হবে? এত ছোট একটা দল নিয়ে? কাকাবাবু ক্ৰাচ বগলে নিয়ে এভারেস্টে উঠবেন? সন্তু কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারে না।
ঘণ্টা খানেক একটানা চলার পর কাকাবাবু দূর থেকে সন্তুর নাম ধরে ডাকলেন।
সন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, কাকাবাবু একেবারে পিছিয়ে পড়েছেন। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি আবার চেঁচিয়ে বললেন, সন্তু, আমার ওষুধ-।
কাকাবাবুকে কয়েকটা ওষুধের ট্যাবলেট খেতে হয় দিনে তিনবার। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পকেট থেকে ট্যাবলেটের কৌটো বার করতে তাঁর অসুবিধে হয় বলে সন্তু তখন সাহায্য করে কাকাবাবুকে। কিন্তু এখন তো ওষুধ খাবার সময় নয়। কাকাবাবু নিশ্চয়ই হাঁপিয়ে পড়েছেন!
সন্তু কাকাবাবুর কাছে ফিরে এল।
কাকাবাবু তাঁর কোটের ডান পকেটটা দেখিয়ে বললেন, ওখান থেকে ওষুধ বার কর।
তোমার কষ্ট হচ্ছে, কাকাবাবু?
কিছু না। শোন। গম্বুজের চুড়া থেকে রাত্তিরবেলা যে আলোর বিন্দু দেখেছিলাম, তা কতটা দূরে ছিল বলে তোর মনে হয়?
ঠিক বুঝতে পারিনি।
আমার আন্দাজ এই রকম জায়গা থেকে।
সন্তু চারদিকটা দেখল।
কাকাবাবু একটা ট্যাবলেট মুখে ফেলে বললেন, তুই অন্যদের নিয়ে এগিয়ে যা। কারুর থামবার দরকার নেই। ওদের বলবি, আমি একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। আমি এই জায়গাটা খানিকটা পরীক্ষা করে দেখতে চাই।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, মিংমাদের এগিয়ে যেতে বলে আমি থাকব। তোমার সঙ্গে?
কাকাবাবু উত্তর দিলেন, না, তোর থাকার দরকার নেই। তুই ওদের সঙ্গে যা! ওদের বল, আগে গিয়ে কালাপাথরের কাছে তাঁবু ফেলতে!
কাকাবাবু একটা পাথরের ওপর বসে নিশ্চিন্তভাবে পাইপ ধারালেন।
শেরপা ও মালবাহকের দলটা অনেক দূরে চলে যাবার পর কাকাবাবু উঠে দাঁড়িয়ে প্রথমে চারদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন। ডান দিকের এক জায়গায় তাঁর চোখটা থেমে গেল। পকেট থেকে ছোট্ট একটা দুরবিন বার করে সেদিকটা দেখতে লাগলেন ভাল করে। আপনমনেই বললেন, হুঁ!
ডানদিকে বেশ খানিকটা এগোবার পর এক জায়গায় দেখা গেল বরফের মধ্যে পর পর পাঁচ-ছটা ছোট গর্ত। ঠিক হাতির পায়ের চাপের গর্তের মতন।
কাকাবাবু চমকালেন না। ধীরে-সুস্থে তাঁর পিঠের ঝোলাকুলি নামিয়ে রাখলেন। ক্ৰাচ দুটোও পাশে রেখে তিনি সেই একটি গর্তের পাশে বসলেন।
গর্তটা যে কারুর পায়ের চাপে হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে হাতির পায়ের চেয়ে মানুষের পায়ের ছাপের সঙ্গেই বেশি মিল। শুধু তফাত এই যে, কোনও মানুষের পায়ের চাপে ওরকম গর্ত হতে পারে না। খুব ভাল করে লক্ষ করলে সেই পায়ের ছাপে আঙুলের চিহ্নও বোঝা যায়। তবে পাঁচটা নয়, চারটে আঙুল। বুড়ো আঙুল বা কড়ে আঙুল নেই, সব কটা আঙুলই সমান।
কাকাবাবুবিড়বিড় করে বলে উঠলেন, ইনক্রেডিবল! অ্যামেজিং?
কোটের পকেট থেকে ছোট ক্যামেরা বার করে তিনি খচখচ করে গর্তগুলোর ছবি তুলতে লাগলেন। ঠিক ছখানা পায়ের ছাপ। আজ সকাল থেকেই রোদ। বরফের ওপর সাধারণ মানুষের পায়ের ছাপ। এই রকম রোদে একটু পরেই গলে মিলিয়ে যায়। কিন্তু এই ছটা ছাপা গলেনি।
অনেকক্ষণ ধরে কাকাবাবু ব্যস্ত রইলেন সেই পায়ের ছাপগুলো নিয়ে। নানাভাবে সেগুলো মাপতে লাগলেন আর ছবিও তুললেন অনেকগুলো। তাঁর মুখে যেন একটা অখুশি অখুশ ভাব। চোখের সামনে দেখতে পেয়েও তিনি যেন পায়ের ছাপগুলোকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না।
একটু পরে দূরে একটা শব্দ হতে তিনি চোখ তুলে তাকালেন।
বেশ দূর থেকে কে যেন ছুটে আসছে তাঁর দিকে। ওপর দিকে দুহাত তোলা, মুখ দিয়ে কী যেন একটা আওয়াজও করছে।
কাকাবাবু বিচলিত হলেন না। রিভলভারটা বার করে সে দিকে চেয়ে বসে রইলেন। একটু পরেই তিনি দেখলেন, শুধু একজন নয়, পেছনে আরও কয়েকজন আসছে।
তখন তিনি রিভলভারটা কোটের পকেটে আবার ভরে ফেললেন। ইয়েতি-টিয়েতি কিছু নয়, ছুটে আসছে তাঁর নিজের লোকরাই।
বরফের ওপর দিয়ে দৌড়ানো অতি বিপজ্জনক, তবু যেন প্রাণভয়ে, একবারও আছািড় না খেয়ে প্রথমে এসে পৌঁছল মিংমা।
খুব জোরে হাঁপাতে হাঁপাতে কোনও রকমে দম নিয়ে মিংমা বলল, স্যার, ইয়েটি, ইয়েটি, ইতনা বড়া–?
কাকাবাবু বললেন, সত্যি? তুমি নিজের চোখে দেখেছ?
মিংমা বলল, নোরবু দেখেছে। সাব, আপ উঠিয়ে, আভি ভাগতে হবে এখান থেকে।
এর মধ্যে সন্তু এসে পৌঁছল।
তাকে দেখেই কাকাবাবু খুব ব্যস্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন, তুই দেখেছিস, সন্তু? নিজের চোখে?
সন্তুর মুখখানা শুকিয়ে গেছে। চোখ দুটোয় ভয় আর বিস্ময় মাখানো। সে বলল, হ্যাঁ, দেখেছি।
কাকাবাবু বললেন, কী রকম দেখতে? মানুষের মতন, না গেরিলার মতন?
সন্তু দু-তিনবার ঢোঁক গিলে বলল, খুব ভাল করে দেখতে পাইনি, অনেকটা দূরে ছিল, আমরা কালাপাথরের কাছাকাছি যেতেই নোর বুভাই আর কুলির ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠল-আমি অন্যমনস্ক ছিলাম, চোখ তুলেই দেখি, কী একটা বিরাট কালো জিনিস সাঁত করে সরে গেল পাহাড়ের আড়ালে।
কাকাবাবু দারুণ রেগে ধমক দিয়ে বললেন, ইডিয়েট। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে জিনিসটাকে ভাল করে দেখতে পারলি না? এতই প্ৰাণের ভয়? তা হলে এসেছিস কেন?
সন্তু মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
মিংমা বলল, আপ কেয়া বোল রাহা হ্যায়, সাব? ইয়েটির সামনে গেলে কোনও মানুষ বাঁচে? বাপ রে বাপ! আমরা খুব টাইমে ভোগে এসেছি।
কাকাবাবু চিবিয়ে-চিবিয়ে বললেন, তোমরা ভোগে এলে, না ইয়েতিটাই ভোগে গেল। সে কি তোমাদের তাড়া করে এসেছিল?
সে-কথার উত্তর না দিয়ে মিংমা বরফের একটা গর্তের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়-বড় করে বলল, ইয়ে কেয়া হ্যায়, সাব? হে রাম! হে মহাদেও! এই তো ইয়েটির পায়ের ছাপা! ইখানে ভি ইয়েটি এসেছিল?
এরপর এসে পড়ল নোরবু আর মালবাহকরা। তারা সবাই মিলে একসঙ্গে এমন চ্যাঁচামেচি করতে শুরু করল যে, প্রথমে কিছুই বোঝা গেল না।
কাকাবাবু জোরে বললেন, চুপ! আস্তে! কে কী দেখেছ, সব একে একে বুঝিয়ে বলো। .
সবাই এক মুহুর্ত চুপ করে গিয়ে আবার মুখ খালার আগেই নোরবু এগিয়ে এল কাকাবাবুর সামনে। খানিকটা রুক্ষভাবে বলল, আভি লীেট চলো সাব! এক মিনিট টাইম নেহি?
কাকাবাবু বললেন, ভয়ের কিছু নেই। আমি তো আছি। ইয়েতি এলেও আমি তাকে ঠাণ্ডা করে দিতে পারব।
ইতিমধ্যে মালবাহকরাও বড় বড় পায়ের ছাপের গর্তগুলো দেখতে পেয়েছে। তারপর এক দারুণ গণ্ডগোল শুরু হল। মালবাহকরা শুরু করল। কান্নাকাটি আর শেরপা দুজন আরম্ভ করল তর্জন-গর্জন। তারা এক্ষুনি ফিরে যেতে চায়।
কাকাবাবু তাদের একটুক্ষণ বোঝাবার চেষ্টা করলেন, তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, বেশ তো, ফিরে যাও।
কিন্তু ওরা কাকাবাবু আর সন্তুকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে চায়। গভর্নমেন্টের লোক ওদের আসবার সময়ই বলে দিয়েছে কাকাবাবুর সবরকম হুকুম পালন করতে। এখন কাকাবাবুকে বিপদের মুখে ফেলে যেতেও ওরা রাজি নয়। তাহলে ফিরে গেলে শান্তি পেতে হবে।
কাকাবাবু কিছুতেই যেতে রাজি নন। সন্তু কাকাবাবুর জেদি স্বভাবের কথা জানে। বিরাট কালো ছায়াটা এক পলকের জন্য দেখে তার বুকটা কেঁপে উঠেছিল দারুণভাবে। তার মনে পড়েছিল কিং কঙের কথা। কিন্তু এখন অনেকটা ভয় কমে গেছে। সেও কাকাবাবুর সঙ্গে থাকবে।
নোরবু হঠাৎ চিৎকার করে দুবোধ্য ভাষায় কী যেন বলল, আর অমনি মালবাহকেরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল কাকাবাবুর ওপরে। কোনওরকম বাধা দেবার আগেই তাদের দুজন কাঁধে তুলে ফেলল কাকাবাবুকে। অন্য একজন সন্তুর কোটের কলার খিমচে ধরে দৌড়তে লাগল।
সন্তু ইচ্ছে করলে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু ওরা কাকাবাবুকে কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছে দেখে, সেও চলতে লাগল সেদিকে।
সবাই বারবার পেছন ফিরে দেখছে। ইয়েতি ওদের তাড়া করে আসছে। কিনা দেখবার জন্য।
গম্বুজটার কাছাকাছি ফিরে আসবার পরে কাকাবাবু বললেন, ভালই হল, আমাকে আর এতখানি কষ্ট করে হেঁটে আসতে হল না। এবার আমায় নামিয়ে দাও!
নোরবু বলল, নেহি!
মিংমা বলল, আমরা আজই থিয়াংবোচি ওয়াপস যাব। অতদূর যেতে না পারি। যদি তা হলে ফেরিচা গাঁওমে রুখে যাব।
কাকাবাবুর একটা পা খোঁড়া হলেও তাঁর দুই হাতে যে সাঙ্ঘাতিক জোর, তা এরা জানে না। এক ঝাঁটকায় তিনি নেমে এলেন মাটিতে। তবে, অন্য লোকদের মতন তিনি মাটিতে পড়েই আবার উঠে দাঁড়াতে পারেন না। তাঁর একটু সময় লাগে। সেই সুযোগ মালবাহকরা তাঁকে আবার তোলার চেষ্টা করতে যেতেই কাকাবাবু শুয়ে থাকা অবস্থাতেই রিভলভার উঁচু করলেন। কড়া গলায় বললেন, মানুষ খুন করা আমি পছন্দ করি না। আমায় গুলি চালাতে বাধ্য কোরো না।
সবাই ভয়ে সরে দাঁড়াল।
কাকাবাবু আস্তে আস্তে উঠে বসলেন। তারপর বললেন, সন্তু, আমার ক্রাচ দুটো দে।
মিংমার কাছে ক্ৰাচ ছিল, সে এগিয়ে দিল। কাকাবাবু তার দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টি দিয়ে বললেন, তুমি যে বলেছিলে, কোনও কিছুতেই ভয় পাও না? এখন ইয়েতির নাম শুনেই ভয় পেয়ে গেলে?
মিংমা বলল, সাব, আমায় একটা বন্দুক দিন, তাহলে আমার ডর লাগবে না। আমার তো বন্দুক নেই।
নোরবু মিংমাকে বকুনি দিয়ে হাত-পা নেড়ে নিজস্ব ভাষায় কী যেন বলল। মোটামুটি তার মানে বোঝা গেল এই যে, ইয়েতি সাক্ষাৎ শয়তান, বন্দুকের গুলিতে তাদের কিছু হয় না। ইয়েতি কারুর চোখের দিকে চাইলেই সে মরে যায়।
কাকাবাবু বললেন, তোমরা যদি ভয় পাও তোমরা চলে যেতে পারো। আমি সকলের টাকা পয়সা মিটিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমরা এখানে থাকব।
মিংমা খুব কাতরভাবে বলল, সাব, আপনিও ওয়াপস চলুন আমাদের সঙ্গে। পরে আবার বহুত বন্দুক পিস্তল আর সাহেবলোকদের নিয়ে এসে ইয়েটির সঙ্গে লড়াই করব।
করতে পারে না? যাও, যাও, তোমরা যাও
সত্যি-সত্যি একটুক্ষণের মধ্যেই সবাই চলে গেল। চারদিক হঠাৎ যেন দারুণ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এ কদিন গম্বুজের বাইরে মানুষজনের গলার আওয়াজ পাওয়া যেত। তবু, এখন চতুর্দিকে শুধু বরফ আর বরফ, তার মাঝখানে শুধু এই দুজন। একেবারে নিঝুম দুপুর।
কাকাবাবু বললেন, খিদে পায়নি? খাওয়াদাওয়ার কী হবে? সন্তু, তুই বিস্কুটের টিনটা বার কর। আর দ্যাখ, চীইজ আছে কি না।
সন্তু বিস্কুটের টিনটা খুঁজতে খুঁজতে মনে মনে ভাবতে লাগল, এখন না-হয় বিস্কুট খেয়ে খিদে মেটানো হবে। কিন্তু এর পর? শেরপা আর মালবাহকরাই রান্না-বান্না করত। শেরপাদের সাহায্য ছাড়া সন্তুরা তো এখান থেকে পথ চিনে। ফিরতেও পারবে না।
বিস্কুট আর চীইজ খেতে-খেতে কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কী রে, সন্তু, ভয় পেয়ে গেলি নাকি?
সন্তু শুকনো গলায় বলল, না!
তুই সত্যি-সত্যি কিছু একটা দেখেছিলি? না নোরবুর চিৎকার শুনেই ভেবেছিস-
কোনও মানুষ নয় তো?
না, মানুষের চেয়ে অনেক বড়, খুব কালো, সারা গায়ে লোম।
মুখ দেখেছিলি? ভালুক-টালুক নয় তো?
মুখটা দেখতে পাইনি। তবে ভালুক নয়…সোজা খাড়া…।
তোর মনে হয়, তুই ইয়েতিই দেখেছিস?
তা ছাড়া আর কী হবে?
তা হলে রাত্তিরবেলা গম্বুজের ওপর থেকে আমরা ইয়েতিই দেখেছিলাম, তাই না?
তুমি তো ইয়েতির পায়ের ছাপও দেখলে। অত বড় বড় পা
হুঁ! শেষ পর্যন্ত আমরা ইয়েতির পাল্লায় পড়লুম! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাত্তিরবেলা ইয়েতিরা কি হাতে হ্যারিকেন কিংবা টর্চ লাইট নিয়ে ঘোরে? আমরা আলো দেখলুম কিসের?
সন্তু একটুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর এই প্রশ্নের একটা উত্তর তার মনে পড়ে গেল। সে উত্তেজিতভাবে বলল, কাকাবাবু, একটা জিনিস-মানে, এমনও তো হতে পারে যে, রাত্তিরবেলা ইয়েতিদের চোখ আগুনের মতন জ্বলে? যেমন বনের মধ্যে বাঘ-সিংহের চোখ রাত্তিরে জ্বলজ্বল করে।
কাকাবাবু বললেন, তাই নাকি? বাঘ-সিংহের মতো? মানুষের মতন চেহারা, অথচ বিরাট লম্বা, রাত্রে চোখ দিয়ে আগুন বেরোয়, চোখের নিমেষে। অদৃশ্য হয়ে যায়-এ-রকম একটা প্রাণী–যদি জ্যান্ত ধরতে পারি কিংবা ছবি তুলতেও পারি।তা হলে সারা পৃথিবীতে হৈ চৈ পড়ে যাবে। আসল ব্যাপার কী জানিস, মানুষের মধ্যে দুরকম প্রবৃত্তি থাকে। মানুষ একদিকে চায় পৃথিবীর সব রহস্যের সমাধান করতে। সেই জন্য সব জায়গায় খুঁজে-খুঁজে। সব কিছু বার করে। আবার মানুষ অন্য দিকে চায় এখনও পৃথিবীতে অজানা, অদেখা, অদ্ভুত রহস্যময় কিছু কিছু জিনিস থেকে যাক। যেমন এই ইয়েতি।
একটু থেমে কাকাবাবু বললেন, ভায়ের কিছু নেই। এই গম্বুজের মধ্যে আমরা থাকবে, এখানে ইয়েতি কিছু করতে পারবে না। আজ সকালেই আমি থিয়াংবোচির সঙ্গে ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করেছি। ওখান থেকে আর একটি দল পাঠাবে। তারা এসে পড়বে কাল বিকেলের মধ্যেই।
খাওয়া-দাওয়া সেরে কাকাবাবু শুয়ে পড়ে পাইপ টানতে লাগলেন। সন্তু একবার গিয়ে উঁকি মারাল গম্বুজের বাইরে। রোদ চলে গিয়ে আবার মেঘ এসেছে। বাইরেটা অন্ধকার-অন্ধকার। দুরের দিকে তাকালে অকারণেই গা ছম ছম করে।
কাকাবাবু বললেন, গোটটা ভাল করে বন্ধ করে রাখ। আজ আর বাইরে যাসনি। তবে ইয়েতি নিশ্চয়ই এতদূরে আসবে না।
কিছুই করার নেই বলে সন্তুও এসে শুয়ে পড়ল। আর ঘুমিয়ে পড়ল একটু বাদেই।
তার ঘুম ভাঙল একটা জোর শব্দে। কে যেন লোহার দরজায় দুম দুম করে। ধাক্কা দিচ্ছে। কাকাবাবুও উঠে বসেছেন, তাঁর হাতে রিভলভার।