মহাকাশযান ছেড়ে বাইরে গিয়ে দুদিনের জন্যে হারিয়ে গিয়ে গ্রহের মেয়েদের সাথে একটা ঝামেলায় ফেঁসে যাওয়ার কারণে রোবি বাড়াবাড়ি রাগ করল। টুকি এবং ঝায়ের খাবার বন্ধ রাখল পুরো চব্বিশঘণ্টা এবং শাস্তি হিসেবে তাদেরকে দিয়ে মহাকাশযানের সবগুলো স্কু টাইট করালো। খাটো একটা স্কু ড্রাইভার দিয়ে স্কুগুলো টাইট করতে গিয়ে তাদের আঙুলের যা একটা দশা হল সেটি আর বলার। মত নয়।
মহাকাশযানে টুকি এবং ঝায়ের জীবন মোটামুটি দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়াল। হাবাগোবা রোবির কপোট্রনে রবোটদের নিজস্ব মানবিক অনুভূতি ঢুকিয়ে দেবার পর টুকি এবং ঝায়ের এক মুহূর্তে শান্তিতে থাকার উপায় রইল না। মাঝারী নক্ষত্রটার কাছাকাছি গিয়ে হাইপার ডাইভ দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগে তাদের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে সেরকম কোন আশাই নেই। নক্ষত্রটিতে পৌঁছাতে সপ্তাহ দুয়েক লাগার কথা, এই দুই সপ্তাহ একটি ডোতা যন্ত্রণা হিসেবে রোবি তাদের জীবনকে বিষিয়ে রাখবে টুকি এবং ঝা সেটা নিয়ে মোটামুটিভাবে নিশ্চিত ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তাদের জন্য আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছে। বিস্ময়গুলো হালকা বিস্ময় নয় ভয়ংকর ধরনের বিস্ময়। ব্যাপারটা শুরু হল এভাবে।
মহাকাশযানের তিন-চতুর্থাংশ স্কু টাইট করার পর যখন টুকি এবং ঝা আঙুলের ব্যথায় ঘুমাতে পারছে না তখন একদিন তারা জরুরী চ্যানেলে একটা আবেদন শুনতে পেল, কাছাকাছি একটা গ্রহের কক্ষপথে একটা মহাকাশযান আটকা পড়ে আছে। মহাকাশযানে খাবার জ্বালানী শেষের দিকে। ট্রান্সমিটারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে বলে সেটি দূরে খবর পাঠাতে পারছে না। কাছাকাছি একটা সাহায্যের আবেদন পাঠিয়ে যাচ্ছে। একজন বিপদগ্রস্থ মানুষ অন্য বিপদগ্রস্থ মানুষকে সাহায্য করতে পারে না এই যুক্তিতে প্রথমে টুকি এবং ঝা ব্যাপারটাকে উপেক্ষা করে চলে যেতে চাইছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সেটা করতে পারল না। বিপদগ্রস্থ মহাকাশযানটিকে সাহায্য করার জন্যে তারা নিজেদের কক্ষপথ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিল।
মহাকাশযানটির কাছাকাছি এসে টুকি এবং ঝা যোগাযোগ করল, বিপদগ্রস্থ মানুষটি কাতর গলায় জানাল তারা স্বামী স্ত্রী এবং দুটি সন্তান নিয়ে চারজন মানুষ। মহাকাশ-দস্যুর একটি দল তাদেরকে মুক্তিপণের জন্যে ধরে নিয়েছিল, তারা কোনভাবে পালিয়ে এসেছে। তাদের ছোট মহাকাশযানটি এমনিতেই বিধ্বস্ত ছিল তার উপর মাঝপথে জ্বালানী এবং খাবার দুইই শেষ হয়ে গেছে, এখন কোন ধরনের খাবার এবং জ্বালানী না পেলে তারাও শেষ হয়ে যাবে।
ঘটনাটি শুনে টুকি এবং ঝায়ের মন করুণায় দ্রবীভূত হয়ে গেল এবং রোবি হাউমাউ করে মাথাকুটে কাঁদতে শুরু করল। বিপদগ্রস্থ পরিবারটিকে সাহায্য করার জন্যে একটা পরিকল্পনা করা হল। পরিকল্পনাটি এরকম : মহাকাশযানটির কাছাকাছি গিয়ে তারা সেটাকে মাঝখানে রেখে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকবে এবং ঝা ছোট একটা স্কাউটশীপ নিয়ে বিধ্বস্ত মহাকাশযানটিতে যাবে। সেখানকার অবস্থা স্বচক্ষে দেখে তাদেরকে নিয়ে নিজেদের মহাকাশযানে ফিরে আসবে। তারপর তাদের নিজেদের গ্রহ বা আবাসস্থলে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী স্কাউটশীপে করে ঝা বিধ্বস্ত মহাকাশযানটিতে হাজির হল। কন্ট্রোল প্যানেলে রোবি এবং টুকি তার সাথে যোগাযোগ করছিল। ঝা পেশাদার মহাকাশচারী নয় কাজেই তাকে কেমন করে ডক করতে হয়, কেমন করে লগ করে বাতাসের চাপের সমতা আনতে হয়, কেমন করে মহাকাশযানের বৃত্তাকার দরজা খুলতে হয়, সবকিছুই বলে দিতে হচ্ছিল। স্কাউটশীপের যোগাযোগ মডিউল দিয়ে টুকি এবং রোবি ঝাকে দেখতে পাচ্ছিল, তারা তাকে তার বিশাল দেহ নিয়ে মহাকাশযানের ভিতরে ঢুকে যেতে দেখল, প্রায় সাথে সাথেই হঠাৎ করে ঝায়ের সাথে সমস্ত যোগাযোগ কেটে গেল। টুকি অবাক হয়ে বলল, কী হল? যোগাযোগ কেটে গেল কেন?
বুঝতে পারছি না। রোবি যোগাযোগ ফিরে পাবার জন্যে নানারকম যন্ত্রপাতি টেপাটেপি করতে থাকে কিন্তু কোন লাভ হল না। হঠাৎ করে তারা স্কাউটশীপের ক্যামেরায় দেখতে পেল মহাকাশযানের বৃত্তাকার দরজাটি সশব্দে বন্ধ হয়ে গেছে, শুধু তাই নয়, যে মহাকাশযানটি বিধ্বস্ত অবস্থায় মহাকাশে ঝুলে থাকার কথা সেটি গর্জন করে তার ইঞ্জিনগুলো চালু করে মহাকাশে ছুটে যেতে শুরু করে।
রোবি টুকির দিকে তাকিয়ে বলল, দেখেছ? দেখেছ?
টুকি, হ্যাঁ!
ঝা গিয়ে মহাকাশযানটাকে ঠিক করে দিয়েছে। চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে! রোবি তার গলায় বিস্ময়ের ভাব ফুটিয়ে বলল, আমি ভাবতাম ঝা গবেট ধরনের মানুষ। আসলে সে বড় মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ার।
টুকি রোবির দিকে তাকিয়ে বলল, ঝা মহাকাশ ইঞ্জিনিয়ার নয়, এই মহাকাশযানটি আমাদের ধোকা দিয়েছে। ঝাকে ধরে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই মহাকাশ দত্যু হবে।
সর্বনাশ! কী করব এখন?
ওটার পিছু পিছু যেতে হবে। তাড়াতাড়ি।
রোবি তাড়াতাড়ি কন্ট্রোল প্যানেলের উপর ঝুকে পড়ে মহাকাশযানটির গতিপথ পরিবর্তন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।