নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষে ৬২২ ঈসায়ী সালের জুন মাসে মদীনা থেকে ৭০ জন মুসলমান হজ্জ পালনের জন্যে মক্কায় আগমণ করেন। এরা নিজ কওমের পৌত্তলিক হাজীদের সঙ্গে মক্কায় আসছিলেন। মদীনায় থাকার সময়েই অথবা মক্কায় আসার পথে তারা পরস্পরকে বললেন, কতোদিন পর্যন্ত প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমরা মক্কায় এভাবে কষ্টকর অবস্থায় ফেলে রাখবো? তিনি মক্কায় যেভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি সম্মুখীন হচ্ছেন, সে সম্পর্কেও তারা আলোচনা করলেন।
মক্কায় পৌঁছার পর গোপনে তারা প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে গোপনে যোগাযোগ করলেন এবং সিন্ধান্ত হলো যে, উভয় দল আইয়ামের তাশরিকের মাঝামাঝি ১৫ই যিলহজ্জ তারিখে মিনার জামারায়ে উলায় অর্থাৎ জামরায়ে আকবার ঘাঁটিতে একত্রিত হয়ে রাতের অন্ধাকারে গোপন আলোচনা করবেন।
এই সম্মেলন ইসলাম ও মূর্তিপূজার সংঘাতের মধ্যে সময়ের গতিধারা পরিবর্তন করে দিয়েছিলো। একজন আনসার নেতার মুখে সেই সম্মেলেনর বিবরণী উল্লেখ করা যাচ্ছে।
হযরত কা’ব ইবনে মালেক (রা) বলেন, আমরা হজ্জের জন্য বেরিয়েছিলাম। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আইয়ামে মাঝে আকাবায়ে আমাদের সাথে কথা বলার সময় নির্ধারণ করলেন। অবশেষে সেই রাত এলো, যে রাত কথা বলার তারিখ ছিল। আমাদের সাথে আমাদের সম্মানিত নেতা আবদুল্লাহ ইবনে হারামও ছিলেন। তিনি কখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। আমরা তাকে সঙ্গে নিলাম। আমাদের সঙ্গী অমুসলিমদের কাছে এই সম্মেলনের বিষয় গোপন রাখা হয়েছিলো। আবদুল্লাহ ইবনে হারামের সাথে আমরা আলোচনা করে তাকে বললাম, হে আবু জাবের আপনি আমাদের একজন সম্মানিত নেতা। আপনার বর্তমান অবস্থা থেকে আমরা আপনাকে বের করতে চাই। অন্ততকাল দোযগের আগুন থেকে আপনি মুক্তি লাভ করবেন এটাই আমরা চাই। এরপর আমরা তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলাম এবং প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আমাদের আলোচনার বিষয় তাঁকে জানালাম। তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং আমাদের সাথে আকাবায় গেলেন। তাঁকে নকীব মনোনীত করা হলো।
হযরত কা’ব (রা) ঘটানার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বলেন, সেই রাতে আমরা নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ডেবায় শুয়ে পড়লাম। রাতের এক তৃতীয়ংশ কেটে যাওয়ার পর আল্লাহর রাসূলের সাথে পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় মিলিত হলাম। চড়ুই পাখী যেমন চুপিসারে বাসা থেকে বের হয়, আমরাও ঠিক সেভাবেই ডেরা থেকে বের হয়েছিলো। এক সময় আমরা আকবায় সমবেত হলাম। সংখ্যায় ছিলাম আমরা ৭৫ জন। ৭৩ জন পুরুষ এবং ২ জন মহিলা। দুইজন হচ্ছেন বনু মাজেন ইবনে নাজ্জার গোত্রের উম্মে আম্মার নাছিবা বিনতে কা’ব এবং বনু সালমা গোত্রের উম্মে মানীঈ আসমা বিনতে আমর।
আমরা সবাই ঘাঁটিতে পৌঁছে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। এক সময় তিনি এসে পৌঁছুলেন। তাঁর সাথে তাঁর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মোত্তালেব ছিলেন। তিনি তখনো যদিও ইসলাম গ্রহণ করেননি, তবুও ভ্রাতুষ্পুত্রের হিতাকাঙ্খী ছিলেন। সর্বপ্রথম বার্তা তিনিই শুরু করেন।