দুৰ্য্যোধনের দুষ্টকাৰ্য্যের ক্ষমাপ্রার্থনা
বৈশম্পায়ন বলিলেন, এইরূপে সেই শোকপরায়ণ প্রজাগণ কোন প্রত্যুত্তর প্রদান না করিয়া অপূর্ণনয়নে দণ্ডায়মান থাকিলে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র পুনরায় তাঁহাদিগকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “হে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ! নরপতি শান্তনু, ভীষ্মপরিরক্ষিত বিচিত্রবীৰ্য্য ও আমার প্রিয় ভ্রাতা পাণ্ডু যেরূপে রাজ্য প্রতিপালন করিয়া গিয়াছেন, তাহা আপনাদিগের অবিদিত নাই। এক্ষণে আমি আপনাদিগকে যেরূপ প্রতিপালন করিয়াছি, তাহা যদি সুন্দররূপ না হইয়া থাকে, তাহা হইলে আপনারা আমাকে তদ্বিষয়ে ক্ষমা প্রদর্শন করুন। দুর্য্যোধন যে সময়ে নিষ্কণ্টকে রাজ্যভোগ করিয়াছিল, সে সময়ে সেও আপনাদিগের নিকট কোন অপরাধ করে নাই। পরিশেষে তাহারই দুর্নীতি ও আমার অপরাধনিবন্ধন – এই অসংখ্য নরপতি কালকবলে নিপতিত হইয়াছেন। যাহা হউক, এক্ষণে আমা হইতে যাহা হইয়াছে, তাহা ভালই হউক, আর মন্দই হউক, আমি কৃতাঞ্জলিপুটে কহিতেছি, আপনারা আর উহা স্মরণ করিয়া আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হইবেন না। বৃদ্ধ, পুত্রবিহীন, দুঃখিত ও পূর্ব্বতন নরপতিদিগের পুত্র বলিয়া আমাকে ক্ষমা করুন। এই বৃদ্ধা গান্ধারীও আমার ন্যায় পুত্রহীনা ও শোকে একান্ত কাতরা হইয়াছেন। এক্ষণে আমরা উভয়েই আপনাদিগের নিকট এই প্রার্থনা করিতেছি যে, আপনারা প্রসন্ন হইয়া আমাদিগকে বনগমনে অনুমতি প্রদান করুন।
“আপনারা কি সম্পদ, কি বিপদ, সকল সময়েই যুধিষ্ঠিরের প্রতি সমান দৃষ্টি রাখিবেন। ধর্ম্মার্থকুশল অমিতপরাক্রম লোকপালসদৃশ ভীমাদি চারি ব্যক্তি যখন উহার মন্ত্রি, তখন উহাকে কখনই বিপদগ্রস্ত হইতে হইবে না। অতঃপর ভগবান ব্রহ্মার ন্যায় এই মহাতেজস্বী রাজা যুধিষ্ঠির আপনাদিগকে প্রতিপালন করিবেন। আমি ইঁহাকে আপনাদিগের হস্তে এবং আপনাদিগকে ইঁহার হস্তে সমৰ্পণ করিলাম। আপনারা পুৰ্ব্বাবধি কখনই আমার উপর কুপিত হয়েন নাই। আপনারা একান্ত প্রভুভক্ত। এক্ষণে আমি গান্ধারীর সহিত কৃতাঞ্জলিপুটে আপনাদিগের নিকট প্রার্থনা করিতেছি যে, আপনারা অনুগ্রহপূৰ্ব্বক আমার সেই অস্থিরবুদ্ধি, লোভমুগ্ধ, স্বেচ্ছাচারী, দুরাত্মা পুত্রদিগের অপরাধ ক্ষমা করিয়া আমাদিগকে বনগমনে অনুমতি করুন।”