তৃণাকে ডাক্তারের এ্যাপ্রনে সুন্দর দেখাচ্ছে। সাদা রঙের গাম্ভীর্য তার চেহারাতেও পড়েছে। তাকে এখন বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছে, তবে ছেলেমানুষি পুরোপুরি কাটাতে পারছে না। নিশানাথের কথাবার্তা যদিও সে বিচক্ষণ ভঙ্গি করে শুনছে, তবু বারবার হাসি আসছে। অনেক কষ্টে সে হাসি সামলাচ্ছে। ঘরে আর কেউ নেই। দীপা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তৃণাকে বলে গেছেন নিশানাথবাবুর সঙ্গে কথাবার্তা বলে ব্যাপারটা বুঝতে। তৃণার ধারণা বোঝাবুঝির কিছুই নেই। লোকটির মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। এই বয়সে তা অস্বাভাবিকও নয়। মাথা ঠিক থাকলেই বরং অস্বাভাবিক হত।
নিশানাথ বললেন, মা, তোমার কাছে বোধ হয় খুব অবাক লাগছে। তবে ব্যাপারটা সত্যি। আমি মানুষের মাথার ভেতর চলে যেতে পারি।
তৃণা মনে মনে বলল, মাথার ভেতরে কীভাবে যান? নাকের ফুটো দিয়ে ঢেকেন? নাকি কানের ফুটো দিয়ে। তার ইচ্ছা করছে মনে মনে না বলে শব্দ করেই বলতে। সে তা বলছে না, কারণ অসুস্থ মানুষকে রাগিয়ে দিয়ে লাভ নেই।
তুমি কি আমার কথা বিশ্বাস করছ?
করছি। করব না কেন? আপনি কেন শুধু শুধু আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলবেন?
আমি ইচ্ছা করলে তোমার মাথার ভেতরও ঢুকে যেতে পারি তুমি কী ভাবছ এইসব বলে দিতে পারি।
তৃণা কপট আতঙ্কের ভঙ্গি করে বলল, প্লিজ, এটা করবেন না। আমি অনেক আজেবাজে জিনিস ভাবি। আপনি জেনে ফেললে লজ্জার ব্যাপার হবে।
নিশানাথ বললেন, এটা খুব খাঁটি কথা বলেছ মা। বিনা অনুমতিতে অন্যের মাথায় ঢাকা উচিত না। খুবই গৰ্হিত কাজ। এই জন্যেই এখন আর সহজে কারো মাথায় ঢুকতে চাই না।
তৃণা অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে গম্ভীর মুখে বলল, অন্য সমস্যাও আছে। হয়তো কারো মাথায় ঢুকলেন, তারপর আর বেরুতে পারলেন না।
সারা জীবনের জন্যে আটকা পড়ে থাকতে হল। কী অদ্ভুত অবস্থা! আপনার শরীরটা চাদর গায়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে, আর আপনি আটকা পড়ে আছেন অন্য এক জনের মাথায়। হতে পারে না এরকম?
নিশানাথ বাবু ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। তাঁর মনে হল এই চমৎকার মেয়েটা তাঁকে নিয়ে মজা করার চেষ্টা করছে। তার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এক বার ইচ্ছা করল মেয়েটার মাথায় ঢুকে গোপন কিছু তথ্য জেনে নিয়ে মেয়েটাকে চমকে দেবেন। পরমুহূর্তেই চিন্তাটা বাতিল করে দিলেন।
এটা উচিত না খুবই গৰ্হিত কাজ।
তৃণা বলল, মানুষের মাথায় ঢোকা ছাড়া আর কিছু কি পারেন?
খুব ভালো চিন্তা করতে পারি। যেমন অঙ্ক মানসাঙ্ক চট করে করে ফেলতে পারি। বড়ো বড়ো ভাগ, গুণ, বৰ্গমূল খাতা-পেনসিল কিছুই লাগে না।
বাহ্, খুব মজা তো।
তুমি পরীক্ষা করে দেখ। একটা বিরাট ভাগ অঙ্ক দাও দেখ, কেমন চট করে উত্তর বলে দেব।
আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি আপনার সব কথা বিশ্বাস করছি।
না, তুমি বিশ্বাস করছ না, দাও একটা অঙ্ক–
তৃণা খানিকটা বিরক্তিনিয়েই বলল, আপনার যখন এতই ইচ্ছা, তাহলে বাইশকে সাত দিয়ে ভাগ দিন। ভাগফলটা আমাকে বলুন।
নিশানাথ বললেন, উত্তর হচ্ছে–তিন দশমিক এক চার, দুই, আই, পাঁচ, সাত, এক, দুই, চার, চার, নয়, আট, সাত, তিন, দুই, আট, তিন, এক–
এই পর্যন্ত বলেই নিশানাথ থেমে গেলেন। তৃণা বলল, থামলেন কেন?
নিশানাথ ক্লান্ত গলায় বললেন, এর উত্তর মিলবে না–অনন্ত কাল ধরে চলতেই থাকবে।
আপনি কি তা আগেই জানতেন, না এখন টের পেলেন?
এখন টের পেলাম। আগে জানতাম না।
তৃণা এখন খানিকটা আগ্রহ বোধ করছে, যদিও নিশানাথ বাবুর কথা সে ঠিক বিশ্বাস করছে না। পাইয়ের মান যে মানুষের অজানা তা অনেকেই জানে। হয়তো নিশানাথ বাবুও জানেন।
তৃণা বলল, আচ্ছা বলুন তো–আমার এই হাতব্যাগে কী আছে? নিশানাথ বিস্মিত গলায় বললেন, এটা কী করে বলব? আমি তোমার মাথার ভেতর ঢুকতে পারি কিন্তু ব্যাগের ভেতর তো ঢুকতে পারি না।
তৃণা এইবার ফিক করে হেসে ফেলল। অবশ্যি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মুখ থেকে হাসির রেখা মুছে ফেলে গম্ভীর গলায় বলল, আমি ভেবেছিলাম, যে মানুষের মাথায় ঢুকতে পারে, সে সব জায়গাতেই ঢুকতে পারে।
এটা ঠিক না। মানুষের মন বেতারতরঙ্গের মতো। বেতারতরঙ্গ ধরতে রেডিও সেট লাগে। মানুষের মাথা হচ্ছে সে রকম সেট-রিসিভিং স্টেশন। পশু, কীটপতঙ্গ এরাও এক ধরনের রিসিভিং সেট, তবে খুব দুর্বল।
আপনার কথা শুনে খুব ভালো লাগল, এখন তাহলে উঠি।
উঠবে?
হ্যাঁ। আমাকে এগারোটার মধ্যে হাসপাতালে যেতে হবে।
ও আচ্ছা। ঠিক আছে মা–তাহলে যাও।
আমার তো মনে হচ্ছে এখন আপনার শরীর বেশ ভালো।
হ্যাঁ ভালো। সারা দিনে কিছুটা সময় ভালো থাকে–আবার খারাপ হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে খুব খারাপ হয়।
আপনি আজেবাজে জিনিসযেমন মানুষের মাথার ভেতর ঢোকা এইসব নিয়ে একেবারেই চিন্তা করবেন না। প্রচুর রেস্ট নেবেন। খাওয়াদাওয়া করবেন। আমি এখন থেকে এক দিন পরপর আপনাকে এসে দেখে যাব।
তৃণা দরজা পর্যন্ত গিয়েছে, নিশানাথ ডাকলেন, মা, এক মিনিট দাঁড়াও।
তৃণা থমকে দাঁড়াল। নিশানাথ বললেন, এখন আমি তোমার ব্যাগে কী আছে বলতে পারব। তোমার সঙ্গে কথা বলতে-বলতে অন্যমনস্ক হয়ে তোমার মাথায় ঢুকে পড়েছিলাম। ঢোকামাত্র বুঝতে পারলাম।
কী বুঝতে পারলেন?
বুঝলাম যে তোমার ব্যাগে অনেক কিছুই আছে, তবে সে সব তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। লিপস্টিক, চুলের কাঁটা, একটা চিরুনি, একটা রুমাল।
এসব তো সব মেয়ের ব্যাগেই থাকে।
হ্যাঁ, তা থাকে। এই জন্যেই তো বলছি গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তবে একটা জিনিস আছে, যা নিয়ে তুমি খুব চিন্তিত। একটা খামে বন্ধ চিঠি। এই চিঠি তুমি এক জনকে দেবে। তার নাম হারুন। চিঠিটা তুমি অনেক দিন আগেই লিখে রেখেছ–দিতে পারছ না। আজ ঠিক করে রেখেছ, যে করেই হোক তুমি তাকে চিঠিটা দেবে।
তৃণা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। পুরো ব্যাপারটা তার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। নিশানাথ সহজ গলায় বললেন, চিঠির বিষয়বস্তুও আমি জানি।
কী জানেন?
এক সময় এই ছেলেটিকে তুমি খুব পছন্দ করতে। তোমরা দুজন বিয়ে করবে, এ রকম পরিকল্পনা করে রেখেছ। কিন্তু এখন আর ছেলেটিকে তোমার পছন্দ না। মুখ ফুটে বলতে পারছ না বলে চিঠি লিখেছ।
তৃণা ক্ষীণ স্বরে বলল, আপনি তাহলে সত্যি সত্যি মানুষের মাথায় ঢুকতে পারেন?
হ্যাঁ পারি।
অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
নিশানাথ দুঃখিত গলায় বললেন, মানুষের মাথায় ঢাকার ব্যাপারটা অন্যায়। খুবই অন্যায়। খুবই গৰ্হিত কাজ। তুমি কিছু মনে কর না তৃণা।
না, আমি কিছু মনে করি নি। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না–যদিও জানি আপনার ক্ষমতাটা সর্তি। এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। আমি আরেকটু বসি আপনার সঙ্গে?
বস।
আপনার খবর প্রকাশিত হলে মেডিকেল সায়েন্সের জগতে কী রকম হৈচৈ শুরু হয়ে যাবে, সেটা কি আপনি জানেন?
না। জানি না।
তৃণা কাঁপা গলায় বলল, এই দেখুন আমার গা কাঁপছে। আচ্ছা, আপনি শুরু থেকে বলুন তো কখন আপনি প্রথম আপনার এই ক্ষমতার কথা বুঝতে পারলেন?
নিশানাথ জবাব দিলেন না। তাঁর মাথায় তীব্র যন্ত্রণা আবার শুরু হয়েছে। চারপাশের জগৎ ঘঘালাটে হয়ে আসতে শুরু করেছে। তিনি দুর্বল স্বরে বললেন, মা, তুমি এখন যাও।
আমার পুরো ব্যাপারটা জানতে ইচ্ছা করছে। না জেনে আমি যেতে পারব না।
নিশানাথ হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, সব তোমাকে বলব। এখন না। এখন পারব না। তোমাকে আমি খবর দেব। আমি নিজে নিজে চিন্তা করে অনেক কিছু বের করেছি। সে সবও তোমাকে বলব। আজ না। অন্য এক দিন।
কবে সেই অন্য এক দিন?
খুব শিগগিরিই। আমার হাতেও সময় নেই। আমি বাঁচব না। বাচার আগে কাউকে বলতে চাই। কারো সঙ্গে পরামর্শ করতে চাই।
নিশানাথ চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেললেন। যেন চেনা পৃথিবী থেকে লুকোতে চাচ্ছেন।
তৃণা দীপার খোঁজে রান্নাঘরে ঢুকেছে। দীপা পরিজ তৈরি করছেন নিশানাথ বাবুর সকালের নাশতা। সকালে চালের আটার রুটি করে দিয়েছিলেন, খেতে পারেন নি। পরিজ খেতে পারেন। তৃণা দীপার পাশে এসে দাঁড়ায়। দীপা বোনের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত গলায় বললেন, তোর কী হয়েছে?
কিছু হয় নি তো।
তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
জানি না। আপা, আমাকে এক কাপ চা করে দাও।
তুই হাসপাতালে যাবি না?
বুঝতে পারছি না। হয়ত যাব না।
রুগী কেমন দেখলি?
তৃণা জবাব দিল না। তার কথা বলতে ভালো লাগছে না। দীপা বললেন, তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?
হ্যাঁ।
শরীর খারাপ লাগলে উপরে গিয়ে শুয়ে থাক।
দুলাভাই কি বাসায় আছেন, আপা?
না। ও কাল রাতে ফেরে নি।
কখন ফিরবেন?
জানি না।
তৃণা রান্নাঘর থেকে বেরুল। অন্যমনস্ক ভাঙ্গিতে কিছুক্ষণ বারান্দায় হাঁটল। তারপর উঠে গেল দোতলায়। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবে। শরীর ভালো লাগছে না। একটু আগে চায়ের তৃষ্ণা হচ্ছিল, এখন তাও হচ্ছে না।
আলো তার শশাবার ঘরের অন্ধকার কোণে একটা বই নিয়ে বসে আছে। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় বইটিতে কেন্দ্ৰীভূত। তৃণা ঘরে ঢুকে এই দৃশ্য দেখল। খানিকক্ষণ ইতস্তত করে সে এগিয়ে গেল। আলো ছোট খালাকে দেখে জড়সড় হয়ে গেল। ছোট ছোট করে শ্বাস নিচ্ছে, দ্রুত চোখের পাতা ফেলছে। সে কি ভয় পেয়েছে।
তৃণা নরম গলায় বলল, কেমন আছ?
আলো চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল। ছোটখালার কথা সে কিছুই বুঝতে পারে নি। শুধু বুঝেছে ছোটখালা তাকে নরম স্বরে কিছু বলেছেন। যা বলেছেন তাতে আদর ও ভালোবাসা মাখানো। কেউ আদর ও ভালোবাসা মাখিয়ে কিছু বললে আলোর চোখে পানি এসে যায়। তাকে ইচ্ছা করে আদরও ভালোবাসা মাখিয়ে কিছু বলতে। কী করে বলতে হয় তা সে জানে না।
তৃণা আরো কাছে এগিয়ে এল। একটা হাত রাখল আলোর মাথায়। আলোর হাতের বইটি মেঝেতে পড়ে গেল। তৃণা লক্ষ করল মঞ্চত একটা সাদা কাগজ এবং পেনসিল। কাগজে কী সব লেখা। তৃণা কাজটা হাতে নিল। গোটা গোটা হরফে নানান শব্দ লেখা–
সাফল্য
প্ৰতিজ্ঞা
শ্ৰবণ
মন্দির
দিবস
তৃণা লেখার দিকে ইঞ্চিত করে বিক্রিত গলায় বলল, এগুলি তুমি লিখেছ? আলো এই প্রশ্ন বুঝতে পারল সে হ্যা-সূচক মাথা নাড়ল। তৃণা বলল, কেন লিখেছ? আলো এই প্ৰশ্ন বুঝতে পারল না। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল।
তৃণা কী যেন লতে গেল। তার আগেই আলো কাগজ টেনে নিয়ে পেনসিল দিয়ে গুটি গুটি করে লিখতে শুরু করল। লেখা শেষ হবার পর তৃণার দিকে কাগজটি বাড়িয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে বসে রইল। তার বড়ো লজ্জা লাগছে।
কাগজে গোটাটো করে লেখা–খালা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
এর মানে কী? মূক-বধির একটি মেয়ে হঠাৎ করে কেন কাগজে লিখবে খালা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
এর অর্থ কি সে জানে? কেউ হয়তো এই একটি বাক্য লেখা শিখিয়ে দিয়েছে। অক্ষর-পরিচয়হীন মানুষ যেমন নিজের নাম সই করতে শেখে। হয়তো এও সে রকম কিছু।
কে তোমাকে লেখা শিখিয়েছে?
আলো প্রশ্নের জবাব দিল না। তৃণার দিকে কাগজ এগিয়ে দিয়ে ইঙ্গিত করল লিখে দেবার জন্যে। বিস্মিত তৃণা লিখল, তুমি কি লিখতে পার?
আলো উত্তরে লিখল, হ্যাঁ।
কে তোমাকে শিখিয়েছে?
স্যার।
নিশানাথ বাবু?
হ্যাঁ।
কখন শেখালেন?
এর উত্তরে আলো কিছু লিখল না।
তৃণা লিখল, তুমি বই পড়তে পার?
পারি।
বই পড়ে বুঝতে পার?
পারি।
চশমা কী জান?
চোখে দেয়।
প্ৰতিজ্ঞা কী জান?
না।
কাগজের খণ্ডটিতে আর লেখার জায়গা নেই। তৃণা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। কী হচ্ছে এ বাড়িতে? এ বাড়ির মানুষজন কি জানে কী হচ্ছে?
তণা আলোর খাটে শুয়ে পড়ল। তার মাথা ধরেছে। বমি-বমি লাগছে। দীপা চা নিয়ে এসে দেখলেন তৃণা মড়ার মতো পড়ে আছে। তিনি কোমল গলায় বললেন, তোর তো মনে হচ্ছে সত্যি শরীর খারাপ। ডাক্তারদের শরীর খারাপ করলে কি ডাক্তার ডাকার নিয়ম আছে? থাকলে বল এক জন ডাক্তারকে খবর দিই।
তৃণা উঠে বসতে-বসতে বলল, দুলাভাইয়ের সঙ্গে আমার কিছু কথা বলা দরকার আপা। দুলাভাই কখন আসবেন?
ও এসেছে।
এসেছেন? কোথায়?
নিচে। নিশানাথ চাচাকে দেখতে গিয়েছে। ওর সঙ্গে কি কথা বলবি?
তৃণা জবাব দিল না। চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগল।
নিশানাথকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না–তিনি জেগে আছেন না ঘুমিয়ে আছেন। ইজিচেয়ারে লম্বালম্বি শুয়ে থাকা একজন মানুষ, যার চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। বাইরের কেউ হঠাৎ দেখলে চমকে উঠবে। মহসিনের সঙ্গে তাঁর রোজই দেখা হচ্ছে, তবু মহসিন চমকে উঠলেন কী কুৎসিতই না মানুষটাকে লাগছে। শরীরে মনে হচ্ছে পানি এসে গেছে। পা দুটো ফোলা অথচ পায়ের আঙ্গুলগুলো শুকিয়ে পাখির নখের মতো হয়ে আছে। মহসিন মৃদু স্বরে বললেন, স্যার কি জেগে আছেন?
নিশানাথ খসখসে গলায় বললেন, বুঝতে পারছি না, বাবা। এখন এমন হয়েছে-কখন জেগে থাকি, কখন ঘুমিয়ে থাকি বুঝতে পারি না।
আপনি বিশ্রাম করুন।
আর বিশ্রাম, আমি যাবার জন্যে তৈরি হচ্ছি বাবা। কোথায় যাব তাইবা কে জানে?
মহসিন কিছু বললেন না। মৃতপ্রায় মানুষটির সামনে তার দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে না, আবার চলে যেতেও বাধোবাধো লাগছে।
নিশানাথ বললেন, তুমি একটু বস।
বারান্দায় বসবার জায়গা নেই। মহসিন দাঁড়িয়ে রইলেন। নিশানাথ বললেন, অমার গলার স্বরটা কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে–তুমি কি লক্ষ করেছ? করেছ?
জ্বি করেছি।
নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারি না। যখন কথা বলি মনে হয় অন্য কেউ কথা বলছে।
আমার মনে হয় কথা না বলে এখন চুপচাপ শুয়ে থাকাই ভালো।
সব ভালো জিনিস তো বাবা সব সময় করা যায় না। এখন আমার সারাক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছা করে। আমার পরিকল্পনা কি জান? আমার পরিকল্পনা হচ্ছে, মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমি কথা বলব। মৃত্যু কী এই সম্পর্কে বলব–রানিং কমেট্রি। যখন কথা বলতে পারব না, তখন কারো মাথার ভেতর ঢুকে যাব। তাকে জানিয়ে যাব ব্যাপারটা কী।
মহসিন আড়চোখে ঘড়ি দেখলেন। এক জন অসুস্থ মানুষের আবোলতাবোল কথা শুনতে তাঁর ভালো লাগছে না। অথচ উঠে যাওয়া যাচ্ছে না।
মহসিন।
জ্বি স্যার।
আমি একটা পরীক্ষা করতে চাই–বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।
কী পরীক্ষা? আমার যে অংশ অন্যের মাথায় ঢেকে, সেই অংশের কোনো মৃত্যু আছে কি না তা জানা। শরীরের সঙ্গে সঙ্গে ঐ অংশটাও কি মরে যায়, না ঐ অংশ বেঁচে থাকে। যদি বেঁচে থাকে, সে কোথায় থাকে।
আমি মনে হয় আপনার কথা পরিষ্কার বুঝতে পারছি না।
নিশানাথ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললেন, আমি নিজেই নিজের কথা বুঝি না, তুমি কী করে বুঝবে?
মহসিন আবার ঘড়ি দেখলেন। আর থাকা যায় না, এবার উঠতে হয়।
মহসিন।
জ্বি স্যার।
আমার কথা কি তোমার কাছে পাগলের প্রলাপ বলে মনে হচ্ছে?
জ্বি না। তবে আমার মনে হয় এইসব জটিল বিষয় নিয়ে আপনার চিন্তা করা উচিত না। আপনার উচিত চুপহপ বিশ্রাম করা, যাতে স্নায়ু উত্তেজিত না হয়।
মহসিন, আমার মনে হয় তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছ না। আমার কথাগুলি যে পাগলের প্রলাপ নয়, কিন্তু আমি প্রমাণ করে দিতে পারি। খুব সহজেই পারি।
আমি তার কোনো প্রয়োজন দেখছি না, স্যার।
তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর, এটা আমি চাই। কারণ মৃত্যু কী, তা বোঝার জন্যে আমি তোমার সাহায্য চাই। তোমার সাহায্য ছাড়া তা সম্ভব নয়। তুমি যদি আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস কর, তাহলেই সাহায্য করবে।
আমি আপনার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করছি।
না, করছ না। আমি এখন তোমার মাথার ভেতর ঢুকব। এ ছাড়া তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে না।
মহসিন সাহেব বিরক্তিতে ভ্রূ কোঁচকালেন আর ঠিক তখনই বাঁ দিকের কপালে সূক্ষ যন্ত্ৰণা বোধ করলেন। এই যন্ত্ৰণা দীর্ঘস্থায়ী হল না। তিনি বুঝতেও পারলেন না নিশানাথ তার মাথায় ঢুকে গেছেন। মস্তিষ্কের অতলান্তিক কুয়ায় অতি দ্রুত নেমে যাচ্ছেন। কুয়ার গহিন থেকে প্রবল আকর্ষণী শক্তি নিশানাথকে নিচে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এ কী! তিনি এ কী দেখছেন?
এটা কি মহসিনের মস্তিষ্ক? এই কুয়ার চারপাশের দেয়ালে থরে থরে সাজান স্মৃতিগুলি কি সত্যি তাঁর এককালের প্রিয় ছাত্র মহসিনের? মৃদুভাষী মহসিন। ছেলেমেয়ের অতি আদরের বাবা। দীপার ভালোবাসার মানুষ। শান্ত, বিবেচক, বুদ্ধিমান ও হৃদয়বান একজন মানুষ। না-না-না, তিনি যা দেখছেন তা ভুল! কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়েছে। এটা নিশ্চয়ই অন্য কারোর মস্তিষ্ক।
কারণ এই মস্তিষ্কের মানুষটি খুব ঠাণ্ডা মাথায় একটি খুনের পরিকল্পনা করেছে। খুন করা হবে একটি মেয়েকে, যার নাম দীপা। যে মেয়েটি তারই। স্ত্রী। এমনভাবে হত্যাকাণ্ডটি হবে যে কেউ বুঝতে পারবে না কেউ সন্দেহ করবে না। শশাকে ও কষ্টে মানুষটি ভেঙে পড়ার অভিনয় করবে। তারপর এক সময় শশাকের তীব্রতা কমে যাবে। সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বাচ্চাগুলির দেখাশোনার জন্যেই তখন সবাই তাকে বিয়ে করবার জন্যে চাপ দেবে। সে বিয়ে করবে। এ বাড়িতে একটি মেয়ে এসে উঠবে, যার মাথার চুল ছোট-ছোট করে কাটা, যার গায়ের রঙ শ্যামলা, যার চোখ বড় বড়, যার নাম নুশরাত জাহান, যাকে আদর করে এই লোকটি নুশা বলে। দীপাকে হত্যা না করেও এই লোকটি নুশাকে ঘরে আনতে পারে। খুব সহজেই পারে। দীপাকে ত্যাগ করলেই হয়। তা সে করবে না, কারণ তাতে সামাজিকভাবে সে হেয় হবে তার চেয়েও বড়ো কথা দীপাকে ত্যাগ করা মানে দীপার বিশাল সম্পত্তি ত্যাগ করা। এই সম্পদ দীপা তার বাবার কাছ থেকে নিয়ে এসেছে। ঐ চেয়ে হত্যাই ভালো। কেউ কোনো দিন জানবে না। জানার কোনো উপায় নেই। কারণ পরিকল্পনা করা হয়েছে ভেবেচিন্তে।
দীপাকে অফিস থেকে এক বার টেলিফোন করে বলা হবে দীপা, আমি একটু বাইরে যাব। আমার নীল স্যুট, লাল একটা টাই আর স্ট্রাইপদেওয়া শার্টটা কাউকে দিয়ে অফিসে পাঠিয়ে দাও। দীপা তাই করতে যাবে। স্ট্রাইপ-দেওয়া সাদা শার্ট যেহেতু ইস্ত্ৰি নেই, সে ইস্ত্রি করতে বসবে। ঘটনাটা ঘটবে তখন। ইস্ত্রির ভেতরের তার শর্ট সার্কিট করা থাকবে বডির সঙ্গে। ইণ্ডাসট্রিয়াল পাওয়ার লাইটের হাই-ভোল্টেজ তার শরীর দিয়ে প্রবাহিত হবে। সে বড় ধরনের চিঙ্কার করারও সময় পাবে না।
ঘটনাটা কবে ঘটবে? খুব শিগগিরই ঘটবে। দেরি করার কোনো মানে হয় না। ইস্ত্ৰি ঠিকঠাক করে ঝামেলা চুকিয়ে ফেললেই হয়। এত বড় একটা ব্যাপার দীর্ঘদিন মাথার উপর চেপে রাখার মানে হয় না। শিগগিরিই হবে। খুব শিগগির। হয়তো আজ, কিংবা কাল, কিংবা পরশু।
নিশানাথ মহসিনের মাথা থেকে বের হয়ে এলেন। তিনি আর থাকতে পারছেন না। বার বার মনে হচ্ছিল আর কিছুক্ষণ থাকলে বের হওয়া যাবে না। সারা জীবনের জন্যে আটকা পড়ে যেতে হবে। নিশানাথ হাঁপাচ্ছেন। বড়ো বড়ো করে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। তার মনে হচ্ছে বাতাস কোনো কারণে অক্সিজেনশূন্য হয়ে পড়েছে।
মহসিন বিস্মিত হয়ে বললেন, কী হয়েছে স্যার?
না, কিছু না।
এরকম ঘামছেন কেন?
কিছু না, তুমি যাও। ঠিক হয়ে যাবে।
ডাক্তারকে খবর দিই?
কাউকেই খবর দিতে হবে না। তুমি যাও।
নিশানাথ চোখ বন্ধ করে থরথরিয়ে কাঁপতে লাগলেন। তিনি কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছেন না। সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। এ তিনি কী দেখলেন? যা দেখলেন তা কি সত্যি না মায়া? মহসিন খানিকক্ষণ পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তিত মুখে চলে এলেন বেসার ঘরে ঢুকে টেলিফোনে ডাক্তারকে খবর দিলেন, যদিও ঘরেই ডাক্তার ছিল। তৃণা যে ঘরে আছে, তিনি জানতেন না।
তৃণা এই মানুষটাকে খুব পছন্দ করে। কেমন ঠাণ্ডা একজন মানুষ। কথা কম বলাও যে এক ধর্মের আর্ট, তা এই মানুষটা জানে। বড় বড় পার্টিতে তৃণা লক্ষ করেছে, তার দুলাভাই একেবারেই কথা বলছেন না। অথচ তিনি যে কথা বলছেন, না চুপচাপ আছেন তাও ধরা পড়ছে না। এমন নয় যে তিনি কথা বলতে পারেন না। ভালোই পারেন। যখন কথা বলেন মুগ্ধ হয়ে শুনতে হয়।
তৃণা বলল, কেমন আছেন দুলাভাই?
মহসিন হাসলেন, এই হাসি একসঙ্গে অনেক কথা বলে ফেলল। তৃণা মনে মনে ভাবল আপার মত ভাগ্যবতী মেয়ে হয় না।
দুলাভাই।
বল।
আমার দিকে একটু ভালো করে তাকান তো দুলাভাই।
তাকালাম।
আমাকে দেখে কী মনে হচ্ছে।
মহসিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার উপর দিয়ে একটা বড় ধরনের ঝড় বয়ে গেছে।
ঠিক ধরেছেন। এখন আন্দাজ করুন ঝড়ের কারণটা কী।
আন্দাজ করতে পারছি না। আন্দাজের ব্যাপারে আমি বেশ কাঁচা।
তবু আন্দাজ করুন।
মনে হচ্ছে তোমার ভালোবাসার কোনো মানুষ তোমাকে হঠাৎ বিনা কারণে ত্যাগ করেছে।
হয় নি। কারণটা কি আপনি জানতে চান?
তুমি বলতে চাইলে অবশ্যই জানতে চাই। বলতে না চাইলে জানতে চাই না।
আমি বলতে চাই। আপনাকে বলার জন্যেই বসে আছি, নয়তো কখন চলে যেতাম।
বল।
এখানে না। আমার সঙ্গে বাগানে চলুন।
সিরিয়াস কিছু নাকি?
হ্যাঁ, সিরিয়াস। খুব সিরিয়াস বলব আপনি কিন্তু মন দিয়ে শুনবেন। হাসতে পারবেন না।
হাসি আসলেও হাসব না।
না। প্রতিজ্ঞা করুন হাসবেন না।
প্ৰতিজ্ঞা করলাম।
বলুন–প্রমিস।
প্রমিস।
তাহলে চলুন বাগানে যাই।
বাগানে হাঁটতে হাঁটতে মহসিন তৃণার কথা শুনলেন। তিনি হাসলেন না, বিরক্ত হলেন। তৃণা বলল, দুলাভাই, আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করলেন?
না।
না, কেন?
মানুষ অন্যের মনের কথা বুঝতে পারে না। থটরিডিং বলে কিছু নেই। ম্যাজিশিয়ানরা মাঝে মাঝে থটরিডিং-এর কিছু খেলা দেখান। তার কৌশল ভিন্ন।
ম্যাজিশিয়ানদের থটরিডিং-এর কথা বলছি না দুলাভাই, নিশানাথ বাবুর কথা বলছি। উনি সত্যি সত্যি মানুষের মনের কথা বলতে পারেন। মানুষের মাথার মধ্যে কে যেতে পারেন।
উনি কোনো জীবাণু বা ভাইরাস না যে মানুষের মাথার মধ্যে ঢুকে যাবেন। যা শোন তাই বিশ্বাস কর কেন? তুমি একজন ডাক্তার, তুমি হবে যুক্তিবাদী।
আপনি বুঝতে পারছেন না। আমি যুক্তিবাদী বলেই নিশানাথ বাবুর ক্ষমতা দেখে এত আপসেট হচ্ছি।
আপসেট হবার কোনোই কারণ নেই। তুমি বাসায় যাও। ঠাণ্ডা পালিতে গোসল করে ঘুমাও।
তৃণা মন খারাপ করে ফেলল। মহসিন বললেন, এই পৃথিবী এই গ্ৰহনক্ষত্ৰ চলছে লজিকের ওপর। তুমি যা বলছ, তা লজিকের বাইরে। কাজেই আমরা তা অস্বীকার করব।
প্রমাণ দেখলেও অস্বীকার করব?
হ্যাঁ। কারণ তুমি যা প্রমাণ বলে ভাবছ, অ প্রমাণ নয়। প্রমাণ থাকতে পারে না।
যদি থাকে। বললাম তো নেই।
মহসিন অফিসে গেলেন না সারা দিন ঘরেই রইলেন। খানিকক্ষণ বাগানের কাজ করলেন। স্টেরিওতে গান শুনলেন। দীপাকে বললেন, চল, আজ রাতে বাইরে কোথাও খেতে যাই। তৃণাও যখন আছে, ভালোই লাগবে। অনেক দিন বাইরে যাওয়া হয় না।
দীপা বললেন নিশানাথ চাচাকে এই অবস্থায় রেখে বাইরে খেতে যাবার প্রশ্নই ওঠে না।
শরীর কি আরো খারাপ করেছে নাকি?
হ্যাঁ। কী সব আবোল-তাবোল বকছেন!
আবোল-তাবোল তো সব সময়ই বলতেন, এটা নতুন কি?
এখন যা বলছেন, তার কোনো মাথামুণ্ডু নেই। এখন আমাকে ডেকে বললেন মা, খবরদার তুমি ইস্ত্ৰিতে হাত দেবে না। কোনোক্রমেই না। ঘরে যে কটা ইস্ত্ৰি আছে, সব আমার কাছে দিয়ে যাও।
মহসিন স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। তাঁর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্ৰম হল। দীপা বললেন, কী যন্ত্রণা বলতো দেখি! দুটা ইস্ত্ৰিই ওঁর কাছে দিয়ে আসতে হয়েছে।
তুমি দিয়ে এসেছ?
হ্যাঁ। না দিয়ে কী করব বল? যা হৈচৈ করছেন।
মহসিন ঠাণ্ডা মাথায় দ্বিতীয় সিদ্ধান্তই নিলেন। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত নিতে তাঁর খুব বেগ পেতে হল না। তিনি নিজেকে বোঝালেন, অসুস্থ, বৃদ্ধ একজন মানুষের অকারণে বেঁচে থাকার কোন অর্থ হয় না। এই বৃদ্ধ তো এমনিতেই মারা যাচ্ছে। দু দিন আগে মারা গেলে কারোর কোন ক্ষতি হবে না। এক জন অথর্ব বুড়োকে হত্যা করাও কঠিন কিছু নয়। সহজ, খুবই সহজ। অনেক পদ্ধতি আছে। সেই অনেক পদ্ধতির যে কোনো একটি গ্রহণ করা যায়। যেমন নাকের উপর একটা বালিশ চেপে ধরা। দীর্ঘ সময় চেপে ধরার কোনোই প্রয়োজন নেই। দুই থেকে তিন মিনিটের মামলা।
এই মামলা সেরে ফেলা উচিত। মোটেই দেরি করা উচিত নয়। আজ রাতে সেরে ফেলাই ভালো। দেরি করা যায় না। কিছুতেই না।
দীপা বললেন, তোমাকে এত চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন?
এম্নি। শরীরটা মনে হয় ভালো না।
যাও, শুয়ে থাক।
তিনি শুয়ে রইলেন। ঠাণ্ডা মাথায় তাঁকে ভাবতে হবে। খুব ঠাণ্ডা মাথায়। সময় নেই। হাতে একেবারেই সময় নেই।
দীপা বললেন, মাথায় হাতু বুলিয়ে দেব?
তিনি বললেন, দাও।
তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। দীপা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আরামে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, কিন্তু তিনি ঘুমুচ্ছেন না। ঘুমুবার উপায় নেই। তাঁকে জেগে থাকতে হবে। ভাবতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়। খুব ঠাণ্ডা মাথায়।