গন্ধর্ব তার ঘরে নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছে। রাত্রি গভীর। চারদিক খুবই নিস্তব্ধ।
এমন সময়ে দরজায় মৃদু টোকা পড়ল। “গন্ধর্ব! গন্ধর্ব! ওঠো।”
গন্ধর্ব চোখ মেলল। চকিতে উঠে বসল। চারদিকে বিদ্যুৎগতিতে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে সে খাট থেকে নামল।
দরজা খুলতেই তার ঘুমকাতর চোখ একটু বিস্ফারিত হয়ে গেল। চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছেন রতনবাবু এবং তাঁর পিছনে দু’জন বিকট চেহারার সন্ন্যাসী।
রতনবাবু মৃদুস্বরে বললেন, “গন্ধর্ব, এরা শ্বেত আর লোহিত। তোমার দাদুর বিশ্বস্ত দুই সহচর।”
গন্ধর্ব একটা হাই চাপল। তারপর বিড়বিড় করে বলল, “শ্বেত আর লোহিত! শ্বেত আর লোহিত…”
বলতে বলতেই তার চোখের ধোঁয়াটে ভাব কেটে উজ্জ্বলতা ফুটে উঠল। মুখে দেখা দিল হাসি। সে বলল, “হ্যাঁ, শ্বেত আর লোহিতের কথা দাদুর কাছে শুনেছি। আপনারা ঘরে আসুন।”
ঘরে ঢোকার পর উজ্জ্বল আলোয় সন্ন্যাসী দু’জনকে ভাল করে দেখল গন্ধর্ব। দু’জনের চেহারাই হুবহু একরকম। একই উচ্চতা, একই স্বাস্থ্য, একই রকম নাক চোখ মুখ। শুধু একজনের গায়ের রং ফর্সা, অন্যজনেরটা একটু তামাটে। দু’জন সন্ন্যাসীই অত্যন্ত কুটিল ও ঘোর সন্দিহান চোখে তাকে নিরীক্ষণ করছিল। মুখে কথা নেই।
শ্বেত এক পা এগিয়ে এসে খুব সটান হয়ে দাঁড়িয়ে তার চোখে দুই ভয়ংকর চোখ রেখে বলল, “বৈশাখী অমাবস্যা অবসানপ্রায়। আগামী পূর্ণিমায় অভিষেক। শুরু হোক দিগ্বিজয়। এবার আপনার সংকেতবাক্য বলুন।”
গন্ধর্ব মৃদু একটু হেসে বলল, “জলে অমৃত, বায়ুতে অমৃত, রৌদ্রে অমৃত।”
শ্বেত সহর্ষ বজ্রধ্বনিতে বলে উঠল, “সাধু। এবার আপনার অঙ্গুরীয় প্রদর্শন করুন।”
গন্ধর্ব তার হাত বাড়িয়ে দিল। অনামিকায় ঝকঝক করছে আংটি।
শ্বেত আর একবার বজ্রনিনাদে বলল, “সাধু। রাজা রামদুলালের বংশরক্ষাকারী কুমার গন্ধর্বের জয় হোক। আমরা আপনার ভৃত্য, আমাদের বংশধরেরাও আপনার এবং আপনার বংশধরদের আজ্ঞাবাহী হয়ে থাকবে।”
গন্ধর্ব হাত তুলে রাজকীয় ভঙ্গিতে বলল, “শুভ।”
শ্বেত এবার গন্ধর্বকে নিচু হয়ে প্রণাম করে রতনবাবুর দিকে ফিরে তাকাল। মৃদু গম্ভীর স্বরে বলল, “কুমার গন্ধর্বনারায়ণ যথাসময়ে আপনার কাছে উপস্থিত হয়ে শর্ত পালন করেছে।”
রতনবাবু অবিচলিত গলায় বললেন, “হ্যাঁ।”
“সাধু। শর্ত ছিল গন্ধর্বনারায়ণ যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে তার সম্পত্তি দাবি করলে সবই আপনি ফিরিয়ে দেবেন।”
“হ্যাঁ।”
“সাধু। এবার আপনার কাছে গচ্ছিত সম্পত্তির প্রতিভূ হিসেবে অঙ্গুরীয় প্রদর্শন করুন। আমরা দুটো আংটি মিলিয়ে দেখব।”
রতনবাবু অবিচলিত স্বরে বললেন, “আংটি চুরি গেছে।” ঘরের মধ্যে বজ্রপাত ঘটলেও যেন এর চেয়ে বেশি হতবাক কেউ হত। কয়েক সেকেণ্ড ঘরে এমন নিস্তব্ধতা নেমে এল যে, এ ওর হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল।
নীরবতা ভাঙল শ্বেত। মন্দ্রস্বরে সে বলল, “চুরি! আংটি চুরি যাওয়ার দণ্ডের কথা আপনি বিস্মৃত হননি তো!”
রতনবাবু মাথা নেড়ে বললেন, “না।”
শ্বেত একটু হাসল। তারপর চাপা হিংস্র স্বরে বলল, “সাধু। এসব সম্পত্তি, এই বাড়ি এবং অন্যান্য যা আছে তার দলিল কার নামে রতনবাবু?”
রতনবাবু পিছন দিকে হাত বাড়াতেই দরজার ওপাশ থেকে পাঁচুর প্রেতসদৃশ একখানা হাত এগিয়ে এল। একতাড়া দলিল-দস্তাবেজ বাণ্ডিলে বাঁধা।
বনবাবু বাণ্ডিলটা খেতের হাতে দিয়ে বললেন, “রামদুলাল রায়কে সম্পত্তি একটু হাসলড়ৈ বললেন, ‘কথা দিয়েছিলাম যে, সব সম্পত্তিই তার নাতির নামে হবে। একজিকিউটার আমি। সব সম্পত্তিই তাই নাবালক গন্ধর্বের নামেই রয়েছে। এতকাল আমি সেই সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ ও ভোগ-দখল করেছি। কিন্তু এই সম্পত্তির পরিমাণ সামান্যই। গন্ধর্বের জন্য গচ্ছিত আছে এক বাক্স ভর্তি মোহর, মূল্যবান পাথর, নানারকম অলঙ্কার। তার দাম বহু লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্কের লকার থেকে আমি তা তুলে এনে রেখেছি। পাঁচু!”
সঙ্গে সঙ্গে পাঁচু একটা চমৎকার পেতলের কারুকাজ করা মাঝারি মাপের বাক্স অতি কষ্টে বয়ে ঘরে নিয়ে এল এবং মেঝের ওপর রেখে নিঃশব্দে অদৃশ্য হয়ে গেল।
রতনবাবু ডালাটা তুলে ধরতেই গন্ধর্বের চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল। তারপর প্রসন্নতায় ভরে গেল তার মুখ।
শ্বেত দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, “তবু এ বাক্সের শ্রেষ্ঠ সম্পদটিই নেই রতনবাবু। আপনি ভালই জানেন ওই আংটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই বংশের ভাগ্য।”
“জানি। কিংবদন্তি তাই বলে।”
শ্বেত গন্ধর্বের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, “কুমার, এখানে আপনার আর কালক্ষেপের প্রয়োজন নেই। লোহিত আপনার পেটিকা বহন করে নিয়ে যাবে। শহরের বাইরে আপনার জন্য একটি দ্রুতগামী যান প্রস্তুত রয়েছে। আপনি যাত্রা করুন। আমি সামান্য একটি কর্তব্য সেরেই আসছি। অনেক দিনের পুরনো একটা ঋণ শোধ করতে হবে।”
গন্ধর্ব কোনও কথা বলল না। তবে তার দুটি সুন্দর আয়ত চোখে একবার রতনবাবু এবং আর একবার খেতের দিকে পর্যায়ক্রমে তাকিয়ে দেখল।
লোহিত এতক্ষণ কোনও কথা বলেনি। এবার পেটিকাটি একটা কাপড়ে মুড়ে কাঁধে তুলে নিয়ে বলল, “চলুন কুমার। দেরি হলে চলবে না। পথ অনেক।”
গন্ধর্ব মাথা নাড়ল।
ঘরে যখন এই নাটক চলছে, তখন জানালার বাইরে কলাবতীঝোঁপের মধ্যে বসে-থাকা ষষ্ঠীর চোখে পলক পড়ছিল না। পেতলের বাক্সের ভিতরটা সে দূর থেকে দেখেছে। যা দেখেছে তাতে তার চোখ এমন ধাঁধিয়ে গেছে যে, সে আর চোখের পাতা ফেলতেই পারছে না। এত দামি জিনিস কালী-স্যাকরাও সাতজন্মে দেখেনি। ওই পুঁচকে ছোঁড়াটা ওই অত সব সোনাদানা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কালীদার কয়েক লাখ টাকা। টিকের দশ হাজার। সেই সঙ্গে ষষ্ঠীর পাঁচশো।
উত্তেজনায়, রাগে ষষ্ঠীর গায়ের রোঁয়া দাঁড়িয়ে যেতে লাগল।
গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে যাচ্ছিল ষষ্ঠী, ঠিক এই সময়ে কে যেন কাঁক করে ঘাড়টা চেপে ধরল। আর সেই সঙ্গে আর একখানা হাত এসে চাপা দিল তার মুখে।
অন্ধকারে দেখতে পেল না ষষ্ঠী, তবে যেই হোক তার গায়ে বেশ জোর আছে। অসুরের জোর। ষষ্ঠীকে ওই অবস্থায় প্রায় শূন্যে তুলে এক ঝটকায় অনেকটা দূরে নিয়ে এনে ফেলল।.
জায়গাটা নির্জন। চারদিকে কাঁটাঝোঁপ। “তুই ষষ্ঠী-চোর না?”
ষষ্ঠী দেখল, সামনে রতনবাবুর ছোট ছেলে বিরু দাঁড়িয়ে। ষষ্ঠী এই ছোঁকরাকে একটু ভয় খায়। ভারী গেরামভারী, রাগ রাগ চেহারা। একটু গুণ্ডাপ্রকৃতিরও বটে। পাশে আবার ফিচেল ভাইপো হাবুলটাও দাঁড়িয়ে আছে।
ষষ্ঠী মাথা নুইয়ে বলল, “আজ্ঞে হ্যাঁ। তবে আপনাদের বাড়িতে আমার চুরি করতে আসা নয়। ওই যে গন্ধর্ব না কি ওই ছোঁড়া, সে আজ আমাদের কী সর্বনাশ করেছে তা যদি শুনতেন! একেবারে সর্বস্বান্ত করে ছেড়েছে। রাজপুত্তুর না কী যেন শুনলাম। ছ্যাঃ ছ্যাঃ, ওই ফদি রাজপুত্তুর হয় তো তার চেয়ে আমাদের মতো চোর-ছ্যাঁচড় ভাল।”
বিরু ষষ্ঠীকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “বেশি সময় নেই। যা ঘটেছে তা ঠিক পাঁচ মিনিটে বলে ফেল। আমি ঘড়ি দেখছি।”
পুরো পাঁচ মিনিটও লাগল না। চার মিনিট তিপ্পান্ন সেকেণ্ডে ষষ্ঠী সব বলে ফেলল। কিছু বাকি রাখল না।
বিরু ষষ্ঠীর দিকে চেয়ে বলল, “এবার যা করতে বলব তা ঠিক-ঠিক করবি। একটু এদিক-ওদিক করিস না। যদি করতে না পারিস তবে এই এলাকা থেকে একেবারে দূর করে দেব। বুঝেছিস?”
তার চেয়ে আমাকটা ঝাঁকুনি দিয়ে আমি ঘড়ি দেখকেণ্ডে ষষ্ঠী সব ষষ্ঠী বুঝে গেছে। এও বুঝেছে ওই ছোঁকরার সঙ্গে টক্কর দেওয়া তার একার কম্ম নয়। তবে বিরুবাবুর কথা বলা যায় না। সে মাথা নেড়ে বলল, “গরিবের প্রাণটা যাতে না যায় সেটা একটু দেখবেন তো?”
বিরু বলল, “প্রাণ যাবে না। এখন মন দিয়ে শোন। ভুল করিস না…”
.
পেতলের বাক্সটা মন-খানেকের ওপর ভারী। এই ভারী বাক্স টানতে লোহিতের অবশ্য তেমন কোনও কষ্ট হচ্ছিল না। বয়স সত্তর হলেও তার শরীর পালোয়ানের মতো! দু’খানা হাত যেন দু’খানা লোহার মুগুর।
তবে বাক্সটা বারবার কাঁধ বদলে বহন করতে হচ্ছে। প্রচণ্ড গরম বলে ঘামও হচ্ছে তার। বেশি জোরে হাঁটা সম্ভব হচ্ছে না। পথও অনেকখানি।
খুব ধীরে-ধীরে হেঁটে গন্ধর্ব আর লোহিত আমবাগানের ছায়ায় ঢুকল। গন্ধর্বের হাতে টর্চ। মাঝে-মাঝে আলো ফেলছে পথ দেখার জন্য। কেউ কোনও কথা বলছে না।
হঠাৎ পিছন থেকে খুব বিনীত কণ্ঠে কে যেন বলে উঠল, “তা কুমারবাহাদুর কি চললেন?”
গন্ধর্ব চিতাবাঘের মতো ঘুরে দাঁড়াল। টর্চের আলো গিয়ে পড়ল ষষ্ঠীর বিগলিত মুখে। চোখ মিটমিট করে তো-হাসি হাসছে। কুঁজো হয়ে দু’হাত কচলে ভারী বিনয়ী ভাবভঙ্গি করছে সে।
গন্ধর্ব ব্যঙ্গের স্বরে বলল, “আরে কানাইবাবু! একটু আগে যে আপনাকে বাড়ি রওনা করে দিয়ে গেলাম! চোর-ছ্যাঁচড়ের উৎপাতের কথা বলছিলেন যে!”
ষষ্ঠী খুব বিগলিত হেসে বলল, “আজ্ঞে মনটা কেমন উড়ুউড়ু করছিল তখন থেকে। ভাবছিলাম আপনার মতো এত বড় একজন গুণী লোককে কাছে পেয়েও কিছু শিখে না নিলে খুবই লোকসান হবে। এত বিদ্যে, এত নিখুঁত হাতসাফাই,এসব আর এ তল্লাটে কে শেখাবে বলুন। এসব ভেবে ঘরে গিয়েও তিষ্ঠোতে পারলাম না। ভাবলাম, যাই, কুমারবাহাদুরের দোরগোড়ায় গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকি। এই যাওয়ার পথেই আপনার সঙ্গে দেখাটা হয়ে গেল। তা কোথায় চললেন আজ্ঞে?”
গন্ধর্ব একটু কঠিন স্বরে বলল, “কিসের বিদ্যে আর কিসেরই বা হাতসাফাই বলুন তো! আমি তো কিছুই জানি না।”
“আজ্ঞে, গুণীদের তো বিনয় থাকবেই। তবে কিনা এই গরিবকে কেন মিছে ছলনা করছেন কুমারবাহাদুর? নিজের চোখে না দেখলে প্রত্যয় হত না।” বলতে বলতে ষষ্ঠী আনন্দাশ্রু বিসর্জন করতে লাগল। ধুতির খুঁটে চোখ মুছতে-মুছতে বলল, “আহা, কী দেখলাম! চোখ যেন জুড়িয়ে গেল। অমন ধুরন্ধর কালী-স্যাকরা পর্যন্ত স্বীকার করল, হ্যাঁ, ওস্তাদ লোক বটে। তারপর টিকে গুণ্ডার মতো দশাসই লাশটাকে কী হেনস্থাই করলেন। এইটুকু বয়সে এমন উঁচু দরের ওস্তাদ হলেন কী করে সেটাই ভেবে অবাক হচ্ছি।”
লোহিত এতক্ষণ অন্ধকারে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। পেতলের বাক্সটা এক কাঁধ থেকে আর এক কাঁধে চালান করে সে এবার একটা বাঘা ধমক দিল, “চোপ কর বেয়াদপ! কার সঙ্গে কথা বলছিস জানিস?”
ষষ্ঠী তিন হাত লাফিয়ে উঠে বুকে হাত চেপে ধরে জুলজুল করে চেয়ে বলল, “ওরে বাবা রে? উটি আবার কে কুমারবাহাদুর? মানুষের মূর্তি দেখছি। ও বাবা, ওর যে আবার সন্ন্যাসীর ভেক।”
লোহিত বাক্সটা মাটিতে নামিয়ে রেখে ত্রিশূলটা বাগিয়ে ধরে গন্ধর্বকে জিজ্ঞেস করল, “লোকটা কে কুমার?”
গন্ধর্ব মৃদু হেসে বলল, “কানাইবাবু, ভাল লোক। তবে দোষের মধ্যে রাতের বেলা একটু বেরোন-টেরোন আর কি।”
লোহিত ত্রিশূলটা তুলে বলল, “দশ গুনতে-গুনতে হাওয়া হয়ে যা। নইলে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেব।”
ষষ্ঠী কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “কিন্তু আমি তো কিছু করিনি। কুমারবাহাদুরকে শুধু গুরু বলে মানছি। উনি যদি আমাকে শিষ্য করে নেন তো চিরজীবন কেনা গোলাম হয়ে থাকব। আমার কথায় বিশ্বাস না হয় ওঁর কোমরের গেজেটা খুলে দেখুন। কালী-স্যাকরার সর্বস্ব ওর মধ্যে আছে।”
লোহিত একটু বিরক্তির স্বরে গন্ধর্বকে বলল, “এ লোকটা কী বলছে? কালী-স্যাকরার কাছ থেকে…”
গন্ধর্ব মৃদু স্বরে বলল, “তেমন কিছু নয়। পরে বলব।”
লোহিত যেন এ কথায় খুশি হল না। বিড়বিড় করে বলল, “কথাটা আগে বলা উচিত ছিল।”
গন্ধর্ব মিনমিন করে বলল, “সময় পেলাম কই! বলতাম ঠিকই।”
লোহিত হাত বাড়িয়ে বলল, “গেজেটা দেখি।”
গন্ধর্ব তার কোমরে হাত চেপে ধরে বলল, “না। এটা আমার রোজগার।”
লোহিত বাঘা গলায় বলল, “চালাকি কোরো না। তাতে ভাল হবে না। রাজার ছেলের মতো আচরণ না করে চোরের মতো করেছ। স্বভাব যাবে কোথায়? এখন গেজেটা দাও। যা আছে তার বখরা সবাই পাবে।”
বলতে বলতে লোহিত ষষ্ঠীর দিকে একবার তাকাল। কিন্তু ষষ্ঠী কোথায়? তার চিহ্নও নেই।
লোহিত চকিতে চারদিকে চাইল। তারপর পেতলের বাক্সটা টপ করে ঘাড়ে তুলে নিয়ে বলল, “লোকটা পালিয়েছে। আর দেরি করা ঠিক নয়। তাড়াতাড়ি চলো।”
বলে লোহিত পা বাড়াতেই ঝপ করে একটা মাছধরার জাল নিখুঁতভাবে এসে তাকে ছেয়ে ফেলল। টাল সামলাতে না পেরে বাক্স সমেত দড়াম করে পড়ে গেল সে।
একটা টর্চের আলো এসে পড়ল গন্ধর্বের মুখে। একটা গম্ভীর গলা বলে উঠল, “এই যে নকল নারায়ণ রায়, অভিনয়টা চমৎকার করে গেছ ভাই। শুধু এই শেষ সময়টায় ফেঁসে গেলে।”
গন্ধর্ব সামান্য একটু হাসল। তারপরই একটা চিতাবাঘের মতো ক্ষিপ্রতায় মাথার ওপর একটা ডাল লাফিয়ে ধরে তীব্র একটা ঝুল খেয়ে সে পা বাড়িয়ে টর্চধারীর হাতে লাথি মারল। টর্চটা উড়ে গিয়ে গাছের ডালে আটকে রইল।
অন্ধকারে তখন শুরু হল এক দারুণ লড়াই।
কে জিতছে, কে হারছে তা বলা শক্ত। তবে দু’পক্ষই বোঝা গেল শক্ত ধাতের লোক। কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। ঘুসি, লাথি, ক্যারাটে, কুংফু সব কিছুই চলতে লাগল।