০৯. খ্রাউস

খ্রাউস

নিরাপত্তা বাহিনীর কালো পোশাক পরা মানুষগুলো হেঁটে আমাদের খুব কাছে এসে দাঁড়িয়ে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রগুলো আমাদের দিকে তাক করে ধরল। যে কোনো একটি অস্ত্র দিয়েই তারা আমাকে ভস্মীভূত করে দিতে পারে, তার পরও কেন এতগুলো অস্ত্র আমাদের দিকে তাক করে রেখেছে সেটি একটি রহস্য!

নিরাপত্তা বাহিনীর লোকগুলোর পেছন থেকে খ্রাউস হেঁটে হেঁটে সামনে এসে দাঁড়ায়, আমি দেখতে পেলাম তার পেছনে আরো কয়েকজন মানুষ। তিনজনকে আমি বেশ ভালো করে চিনি–অত্যন্ত হৃদয়হীন এই তিনজন মানুষ আমার মস্তিষ্ক ম্যাপিং করেছিল, তারা এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্যদের আমি চিনি না–ক্রানা নামের সেই ডাক্তার মেয়েটিকে খুঁজলাম কিন্তু তাকে দেখতে পেলাম না।

খ্রাউস খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাকে এবং জিগিকে খানিকক্ষণ লক্ষ করল, তারপর একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, যখন শুনতে পেলাম পরাবাস্তব নেটওয়ার্কে কেউ ঢুকে গেছে তখন তাদের নিজের চোখে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।

জিগি কোনো কথা বলল না, যে কোনো জায়গাতে পৌঁছেই সে প্রথমেই পালিয়ে যাবার একটা ব্যবস্থা করে রাখে। এখানে সেটা করতে পারে নি বলে অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে আছে। আমি খ্রাউসের দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখে কি তোমার আশাভঙ্গ হয়েছে?

নিশ্চয়ই হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম দেখব খুব বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ, তার বদলে দেখছি একেবারে আজেবাজে অপদার্থ ফালতু মানুষ।

তোমার আশাভঙ্গের কারণ হবার জন্যে খুব দুঃখিত। তবে আমি ইচ্ছে করে। বাক্যটা অসমাপ্ত রেখে থেমে গেলাম।

খ্রাউস তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তবে?

তবে পরাবাস্তব জগতে তোমার অস্তিত্বটির কিন্তু আশাভঙ্গ হয় নি। সে অত্যন্ত চমৎকৃত হয়েছে।

আমার কথা শুনে খ্রাউস বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠল, আমি দেখলাম তার সমস্ত মুখমণ্ডল মুহূর্তে রক্তশূন্য ফ্যাকাসে হয়ে যায়, অনেক কষ্ট করে সে নিজেকে সংবরণ করে এবং জোর করে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে, তাই নাকি?

হ্যাঁ। আমিও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম, তোমার সাথে আমার পরিচয় হয় নি কিন্তু পরাবাস্তব খ্রাউসের সাথে আমার চমৎকার একটা পরিচয় হয়েছে। অত্যন্ত চমৎকার।

খ্রাউস অত্যন্ত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা নিশ্বাস ফেলল, আমি দেখতে পেলাম তার চোখ দুটো মুহূর্তের জন্যে হিংস্র শ্বাপদের মতো জ্বলে উঠল। এই মানুষটি তার পরাবাস্তব অস্তিত্বের মতোই নিষ্ঠুর।

খ্রাউস মাথা ঘুরিয়ে পুরুষের মতো দেখতে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলল, ক্লিশা তুমি নেটওয়ার্কটি দেখ–এর ভেতরের তথ্য বিকৃত হয়েছে কি না জানা দরকার।

আমি ক্লিশার দিকে তাকিয়ে বললাম, শুভ অপরাহ্ন ক্লিশা! আমি তোমাকে বলেছিলাম আবার আমাদের দেখা হবে–তুমি তখন আমার কথা বিশ্বাস কর নি। দেখা হল কি না?

ক্লিশা আমার দিকে বিষদৃষ্টিতে তাকাল, কোনো কথা বলল না। তার সাথে সাথে লাল চুলের মানুষটি এবং সরীসৃপের মতো মানুষটি যন্ত্রপাতির দিকে এগিয়ে গেল। জিগি তাদের কাছে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই নিরাপত্তা বাহিনীর মানুষগুলো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উঁচু করে তাকে থামাতে চেষ্টা করে। জিগি খানিকটা অবহেলায় অস্ত্রগুলো সরিয়ে বলল, শুধু শুধু বিরক্ত করো না–তোমরা খুব ভালো করে জান এই ঘরে তোমরা এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না–তোমাদের শখের নেটওয়ার্ক নোড় তা হলে ধোঁয়া হয়ে উড়ে যাবে।

কথাটি সত্যি এবং তাই নিরাপত্তা বাহিনীর খুব অপমান বোধ হল, তারা তখন অস্ত্রের বাট দিয়ে জিগির মাথায় আঘাত করে তাকে নিচে ফেলে দিল। খ্রাউস হাত তুলে বলল, ওদের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত জানে মেরো না।

নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা খ্রাউসের কথামতো তাকে জানে না মেরে শারীরিকভাবে অমানুষিক নিষ্ঠুরতায় কয়েকবার আঘাত করল। আমি দেখতে পেলাম জিগির ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে এসেছে কিন্তু সেটি উপস্থিত কাউকেই এতটুকু বিচলিত করল না।

ক্লিশা এবং তার দুজন সঙ্গী তাদের যন্ত্রপাতির ওপর ঝুঁকে পড়ে এবং কিছুক্ষণের মাঝেই তাদেরকে অত্যন্ত বিভ্রান্ত দেখাতে থাকে। খ্রাউস ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?

বুঝতে পারছি না। ক্লিশা আমতা–আমতা করে বলল, মনে হচ্ছে ভেতরে সব ওলটপালট হয়ে গেছে–সিকিউরিটির অংশটুকু ওভারলোড হয়েছে। ছয়টা স্তর আছে। সেগুলো এমনভাবে জট পাকিয়েছে যে–

যে?

আলাদা করাই মুশকিল।

খ্রাউসের মুখ ধীরে ধীরে রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে। সে হিংস্র দৃষ্টিতে একবার আমার দিকে আরেকবার জিগির দিকে তাকিয়ে দাতে দাঁত ঘষে বলল, কী করেছ তোমরা?

জিগি হাতের উল্টোপৃষ্ঠা দিয়ে ঠোঁটের রক্ত মুছে বলল, সেটাই তোমাদের বলতে চাইছিলাম, তোমার নির্বোধ বোম্বেটে বাহিনী বলতে দেয় নি। আমাকে আচ্ছামতো পিটিয়েছে।

ঠিক আছে, এখন বলো।

এখন একটু দেরি হয়ে গেছে। আমার আর বলার ইচ্ছে করছে না।

জিগি জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, পারলে তোমরা নিজেরা বের করে নাও।

ক্লিশা তাড়াতাড়ি করে বলল, মহামান্য খ্রাউস, আমরা এক্ষুনি বের করে ফেলছি। এই সব তুচ্ছ মানুষের কথায় কোনো গুরুত্ব দেবেন না।

খ্রাউস একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, তুচ্ছ মানুষের কথায় যেটুকু গুরুত্ব দেবার কথা তার থেকে বেশি গুরুত্ব আমি দিই না। তবে যেটুকু না দিলেই নয় সেটুকু গুরুত্ব আমি দিই।

খ্রাউসের কথায় কী ছিল আমি জানি না কিন্তু দেখতে পেলাম ক্লিশা আতঙ্কে কেমন যেন শিউরে উঠল।

খ্রাউস খানিকক্ষণ অন্যমনস্কভাবে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর কেমন যেন ক্লান্তভাবে একটা নিশ্বাস ফেলে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন অফিসারকে বলল, এই দুজনকে কোনো একটি জায়গায় আটকে রেখো–আমার এদের সাথে কথা বলতে হবে।

নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারটি মাথা নেড়ে সাথে সাথেই আমাদের দুজনকে দু পাশ থেকে ধরে নিয়ে যেতে থাকে।

.

আমাদের দুজনকে যে ঘরটিতে আটকে রাখল সেখানে আরো একজন মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। মানুষটির নিশ্চয়ই কোনো একটা বিশেষত্ব রয়েছে, কারণ তাকে একটা খাঁচার ভেতরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে এবং তার হাত ও পা শিকল দিয়ে বাঁধা। মানুষটির মুখে এক ধরনের উদাস ভাব এবং আমাদের দুজনকে দেখে নিস্পৃহভাবে তাকাল। আমি এবং জিগি মানুষটির কাছে এগিয়ে গেলাম, কাছাকাছি যেতেই মানুষটি বলল–বেশি কাছে এস না, খাঁচার দেওয়ালে হাই ভোল্টেজ দিয়ে রেখেছে। শক খাবে।

আমরা থেমে গেলাম, খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন?

আমাকে ভয় পায়।

কেন?

কারণ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ।

সবচেয়ে খারাপ মানুষ?

হ্যাঁ। মানুষটি মুখে এক ধরনের হাসি ফুটিয়ে আমার দিকে তাকাল, আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করি। সেখানে ভয়ংকর একটি অমানবিক দৃষ্টি দেখে বুকের ভেতরে এক ধরনের কাঁপুনি হতে থাকে। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, মানুষ সবচেয়ে খারাপ কেমন করে হয়?

হয় না। তৈরি করতে হয়। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তৈরি করতে হয়।

তোমাকে জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তৈরি করেছে?

হ্যাঁ। মানুষটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসার মতো ভঙ্গি করল এবং সেটি দেখে আমি আবার শিউরে উঠলাম। মানুষটির সোনালি চুল এবং সবুজ চোখ, অত্যন্ত সুগঠিত দেহ, উঁচু চোয়াল এবং খাড়া নাক। মানুষটির চেহারায় একটি অত্যন্ত বিচিত্র পাশবিক ভাব রয়েছে, দেখে এক ধরনের আতঙ্ক হয়। মানুষটি একটি নিশ্বাস ফেলে বলল, অনেক গবেষণা করে আমাকে তৈরি করেছে। আমার মনে হয় মোটামুটি নিখুঁতভাবেই তৈরি করেছে।

জিগি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে কৌতূহল নিয়ে মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলল, কেন একথা বলছ?

কারণ আছে বলেই বলছি। যেমন মনে কর

কী?

তোমরা দুজন ঘরে আসতেই আমি প্রথমেই ভাবলাম কীভাবে তোমাদের খুন করা যায়।

খুন করা যায়?

হ্যাঁ। ভেবে বের করেছি।

তুমি বলতে চাও তুমি এই খাঁচার ভেতর থেকে আমাদের দুজনকে খুন করতে পারবে?

হ্যাঁ।

কীভাবে?

মানুষটি কোনো কথা না বলে আবার হাসল এবং আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম সে সত্যি কথা বলছে। আমি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, আমার নাম ব্রাতুল। জিগিকে দেখিয়ে বললাম, ও হচ্ছে জিগি।

মানুষটি এক ধরনের অবহেলার ভঙ্গি করে হাত নাড়ল। নিজে থেকে নাম বলল না বলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কী?

আমার নাম কী তাতে কিছু আসে–যায় না। যে পরিবেশে একজন মানুষের নাম ব্যবহার করতে হয় আমাকে কখনো সেখানে যেতে দেওয়া হবে না। কাজেই আমার নামের কোনো প্রয়োজন হয় না।

তুমি কি বলতে চাইছ তোমার কোনো নাম নেই?

মাঝে মাঝে আমাকে নুরিগা বলে সম্বোধন করে। এটা আমার নাম কি না আমি জানি না।

তোমার সাথে পরিচিত হয়ে সুখী হলাম নুরিগা।

বাজে কথা বোলো না। আমার সাথে পরিচিত হয়ে কেউ সুখী হয় না। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ।

পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ? কী আশ্চর্য!

নুরিগা ঘুরে আমার দিকে তাকাল, তারপর বলল, কেন? আশ্চর্য কেন?

কারণ পৃথিবীতে একজন সবচেয়ে নিখুঁত মানুষও আছে–তার নাম রিয়া। তাকেও জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তৈরি করা হয়েছে।

নুরিগা খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, হ্যাঁ আমি শুনেছি। আমি যেরকম পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ, সেরকম পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো একজন মানুষ আছে। সবচেয়ে ভালো এবং নিখুঁত।

আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, হ্যাঁ আছে।

তার সাথে আমার দেখা করার খুব ইচ্ছে করে।

হঠাৎ আমার বুক কেঁপে উঠল, আমি শুকনো গলায় বললাম, কেন?

কৌতূহল।

তার সাথে দেখা হলে তুমি কী করবে?

নুরিগা এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, খুন করব। খুন করায় এক ধরনের আনন্দ আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত মানুষটিকে খুন করার সবচেয়ে নিখুঁত আনন্দ।

নুরিগা হঠাৎ শব্দ করে হাসতে শুরু করে, সেই ভয়ংকর হাসি শুনে আমি পিছিয়ে আসি। ভয়ার্ত চোখে আমি জিগির দিকে তাকালাম। জিগি প্রশ্ন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল, বলল, কী হয়েছে?

আমি ফিসফিস করে বললাম, না, কিছু হয় নি। আমার শুধু মনে হচ্ছে—

কী মনে হচ্ছে?

এরা নুরিগাকে পরাবাস্তব জগতে পাঠাবে।

কেন?

জানি না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তাকে নিশ্চয়ই পাঠাবে।

জিগি কোনো কথা না বলে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

নুরিগা, পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষটি তার ছোট খাঁচার ভেতরে বসে হাত এবং পায়ের শিকল নাড়িয়ে বিচিত্র এক ধরনের গান গাইতে থাকে, সেই গানে সুর বা মাধুর্য কিছুই নেই কিন্তু তবুও শুনতে কেমন যেন আনন্দ হয়। আমি এবং জিগি ঘরের দেওয়ালে হেলান দিয়ে সেই গান শুনতে শুনতে অপেক্ষা করতে থাকি। ঠিক কিসের জন্যে অপেক্ষা করছি জানি না বলে সেটি হয় খুব দীর্ঘ এবং খুব কষ্টকর।

দীর্ঘ সময় পর হঠাৎ করে দরজা খুলে গেল এবং সরীসৃপের মতো দেখতে মানুষটি আরো কয়েকজন মানুষকে নিয়ে ঘরে ঢুকল। নুরিগার খাঁচাটিকে তারা যন্ত্রপাতি দিয়ে ধরে টেনে বাইরে নিতে থাকে–নুরিগা কোনো রকম উত্তেজনা না দেখিয়ে চুপ করে বসে থাকে। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, বিদায় নুরিগা।

নুরিগা কোনো কথা বলল না, সে আমার কথাটি শুনেছে বলে মনে হল না। আমি আবার বললাম, নুরিগা, তুমি কিন্তু আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ নও।

নুরিগা আমার দিকে প্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকাল। আমি বললাম, প্রথম যখন আমরা তোমার। কাছে আসছিলাম, তুমি কী বলেছিলে জান?

কী?

বলেছিলে আমরা যেন তোমার বাঁচার কাছে না আসি। কাছে এলে শক খাব। তুমি আমাদের ইলেকট্রিক শক থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলে। খারাপ মানুষ কাউকে রক্ষা করে না।

নুরিগা বিভ্রান্তভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে দেখিয়ে বললাম, পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষ হচ্ছে এরা যারা জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তোমাকে তৈরি করেছে।

নুরিগার মুখ দেখে মনে হল সে কী যেন ঠিক বুঝতে পারছে না, আমি নরম গলায় বললাম, তোমাকে একটা জিনিস বলা হল না।

ততক্ষণে নুরিগাকে তার খাঁচার ভেতরে করে ঘরের বাইরে বের করে নিয়েছে। সে কৌতূহলী হয়ে উঠে দাঁড়াল, বলল, কী জিনিস?

রক্তের রঙ লাল।

কী বললে?

রক্তের রঙ লাল। সবুজ নয়—

আমি বুঝতে পারছি না তুমি কী বলছ।

ততক্ষণে নুরিগাকে অনেক দূর নিয়ে গেছে–আমি চিৎকার করে বললাম, আবার যখন দেখা হবে তখন বলব।

জিগি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, বলল, তুমি কী বলছ?

ঠিকই বলছি।

কী ঠিক বলছ?

নুরিগাকে নিচ্ছে তার মস্তিষ্ক ম্যাপিং করতে। তাকে পরাবাস্তব জগতে পাঠাবে। সম্ভবত আমার আর রিয়ার অস্তিত্বকে খুন করার জন্যে।

খুন করার জন্যে?

হ্যাঁ। তাই তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি।

বাঁচানোর চেষ্টা? কীভাবে?

নুরিগাকে দিয়ে আমার অস্তিত্বের কাছে একটা খবর পাঠালাম।

কী খবর?

আমি বিড়বিড় করে বললাম, রক্তের রঙ লাল।

জিগি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।