[ইওরোপে অবস্থানকালে—‘বেদান্তদর্শনে ঈশ্বরের যথার্থ স্থান কোথায়?’—এই প্রশ্নের উত্তরে স্বামীজী বলেনঃ]
ঈশ্বর সকল ব্যষ্টির সমষ্টি-স্বরূপ। তথাপি তিনি ‘ব্যক্তি-বিশেষ’, যেমন মনুষ্যদেহ একটি বস্তু, ইহার প্রত্যেক কোষ একটি ব্যষ্টি। সমষ্টি—ঈশ্বর, ব্যষ্টি—জীব। সুতরাং দেহ যেমন কোষের উপর নির্ভর করে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব তেমনি জীবের অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে। ইহার বিপরীতটিও ঠিক তেমনি। এইরূপে জীব ও ঈশ্বর যেন সহ-অবস্থিত দুইটি সত্তা—একটি থাকিলে অপরটি থাকিবেই। অধিকন্তু আমাদের এই ভূলোক ব্যতীত অন্যান্য উচ্চতর লোকে শুভের পরিমাণ অশুভের পরিণাম অপেক্ষা বহুগুণ বেশী থাকায় সমষ্টি (ঈশ্বর)-কে সর্বমঙ্গল-স্বরূপ বলা যাইতে পারে। সর্বশক্তিমত্তা ও সর্বজ্ঞত্ব ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ গুণ, এবং সমষ্টির দিক্ হইতেই ইহা প্রমাণ করিবার জন্য কোন যুক্তির প্রয়োজন হয় না। ব্রহ্ম এই উভয়ের ঊর্ধ্বে, এবং একটি সপ্রতিবন্ধ বা সাপেক্ষ অবস্থা নয়। ব্রহ্মই একমাত্র স্বয়ংপূর্ণ, যাহা বহু এককের দ্বারা গঠিত হয় নাই। জীবকোষ হইতে ঈশ্বর পর্যন্ত যে-তত্ত্ব অনুস্যূত, যাহা ব্যতীত কোন কিছুরই অস্তিত্ব থাকে না এবং যাহা কিছু সত্য, তাহাই সেই তত্ত্ব বা ব্রহ্ম। যখন চিন্তা করি—আমি ব্রহ্ম, তখন মাত্র আমিই থাকি; সকলের পক্ষেই এ-কথা প্রযোজ্য; সুতরাং প্রত্যেকেই সেই তত্ত্বের সামগ্রিক বিকাশ।