কাকাবাবু বললেন, তিনজনের পাশাপাশি থাকা চলবে না। ভেতরে যদি একটা দল থাকে, তা হলে বাইরে নিশ্চয়ই পাহারাদার রেখেছে। আমাদের ছড়িয়ে পড়তে হবে, পাহারাদারদের ঘায়েল না করে ভেতরে ঢোকা যাবে না।
সন্তুর দিকে তাকিয়ে বললেন, যদি খুব বেশি বেকায়দায় পড়ে যাস, তা হলে একটা শিস দিবি।
বাড়িটার যেদিকে আলো জ্বলছে, সন্তু চলে গেল তার উলটো দিকে। আকাশ আজ পরিষ্কার, জ্যোৎস্নায় সব কিছুই অস্পষ্টভাবে দেখা যায়। বাড়িটা এমনই ভাঙা যে, মাঝে-মাঝে দেওয়াল হেলে পড়েছে। চতুর্দিকে ইট ছড়ানো। এমন জায়গা দেখলেই মনে হয় এখানে সাপখোপ আছে। সাপের ভয়েই সন্তু মাটির দিকে চেয়ে-চেয়ে হাঁটতে লাগল।
বেশ খানিকটা ঘুরেও সে কোনও পাহারাদার দেখতে পেল না।
এক জায়গায় মনে হল, ভেতরে ঢোকার একটা দরজা আছে। দরজাটা খোলা। একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে দরজার দিকে নজর রাখতে গেল যেই, অমনই হুড়মুড় করে কী যেন এসে পড়ল তার ঘাড়ে।
প্রথমে সে ভাবল, একটা বাঘ। তারপর ভাবল, হনুমান। তারপর বুঝতে পারল, মানুষ। সে চিন্তাই করেনি যে, পাহারাদার গাছের ওপর উঠে বসে থাকতে পারে! লোকটা গায়ে একটা কালো চাদর মুড়ি দিয়ে আছে।
পাহারাদারের শরীরের ওজনে সন্তু হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেছে মাটিতে।
পাহারাদারটি বলল, আরে, এ যে দেখছি একটা বাচ্চা!
সন্তু কেঁদে ফেলে বলল, ওরে বাবা রে, আমি ভেবেছি ভূত। ভূতে আমাকে মেরে ফেলল!
পাহারাদারটি বলল, অ্যাই, ওঠ। তুই এখানে কী করছিস?
সন্তু উঠে বসে, চোখ মুছতে-মুছতে বলল, রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি।
পাহারাদারটি ধমক দিয়ে বলল, রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিস মানে? এই জঙ্গলে রাত্তিরবেলা ঢুকেছিস কেন?
সন্তু বলল, বাবা মেরেছে। বাবা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
পাহারাদারটির হাতে একটা লম্বা ছুরি। সেটা নাচাতে নাচাতে বলল, তোর বাড়ি কোন গ্রামে?
সন্তু বলল, আমি যমের বাড়িতে থাকি। তুমি যাবে সেখানে?
লোকটি বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, কোথায়?
সঙ্গে-সঙ্গে সন্তু স্পিংয়ের মতন লাফিয়ে উঠে তার মুখে একটা লাথি কষাল। এত দ্রুত ব্যাপারটা ঘটল যে, লোকটা বুঝতেও পারল না। তা ছাড়া তার চেয়ে বয়েসে অনেক ছোট একটি ছেলে যে এইরকমভাবে মারতে সাহস করবে, তা সে কল্পনাও করেনি।
লোকটা ছিটকে পড়ে গেল খানিকটা দূরে। হাতের ছুরিটা খসে গেছে। সেটা সঙ্গে সঙ্গে কুড়িয়ে নিয়ে সন্তু লোকটার বুকের ওপর চেপে বসে বলল, আমি যমের বাড়ি থেকে আসছি। আমি চেহারা বদলাতে পারি। এই ছোট দেখছ, একটু পরেই প্রকাণ্ড হয়ে যাব। চ্যাঁচালেই তোমার গলাটা কেটে ফেলব, হাঁ করো, হাঁ করো!
লোকটি ভয়েভয়ে হাঁ করতেই সন্তু নিজের পকেটের রুমালটা ভরে দিল ওর মুখে। তারপর নির্দয়ভাবে ওরই ছুরি দিয়ে ওর চাদরটা ফালাফালা করে কেটে, এক-একটা টুকরো দিয়ে বাঁধল ওর মুখ, হাত, পা।
সন্তু বলল, এখানেই শেষ নয়। এবার ছুরিটা বসিয়ে দেব তোমার বুকে। খুব তাড়াতাড়ি যমের বাড়ি চলে যাবে।
আতঙ্কে লোকটার চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কথা বলতে পারছে, প্রবলভাবে মাথা নাড়ল।
সন্তু বলল, তা হলে এখানে চুপ করে শুয়ে থাকো।
লোকটাকে ফেলে রেখে, ছুরিটা হাতে নিয়ে সন্তু এগিয়ে গেল আলোটার দিকে।
একটু পরেই দেখল, কাকাবাবু আর অনির্বাণ আর একটা লোকের হাত-পা বাঁধছে।
অনির্বাণ বলল, একে কাবু করতে আমার কোনও অসুবিধেই হয়নি। নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছিল।
কাকাবাবু বললেন, আমরা চারদিক ঘুরে এসেছি, আর কেউ নেই। এবার ভেতরে ঢোকা যাক।
সামনেই একটা দরজা, তার ওপাশে একটা চাতাল। তার কোনও দেওয়াল নেই। আলোটা কিন্তু আর দেখা যাচ্ছে না। তবে কোথায় যেন মানুষের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে একটু-একটু।
চাতালটা ঘুরতে-ঘুরতে চোখে পড়ল একটা সিঁড়ি। সেটা নেমে গেছে নীচের দিকে।
কাকাবাবু বললেন, মাটির নীচেও ঘর আছে মনে হচ্ছে।
অনির্বাণ বলল, রাজা-মহারাজাদের বাড়িতে থাকত।
সেই সিঁড়ি দিয়ে কয়েক পা নামতেই আলোটা দেখা গেল। সিঁড়ির পাশে-পাশে দুটো ঘুলঘুলি, সেখান থেকে আলোটা আসছে।
অনির্বাণ আর কাকাবাবু দুটো ঘুলঘুলিতে চোখ রাখলেন।
নীচে একখানা ঘর বেশ পরিচ্ছন্ন। দেওয়াল-টেওয়াল ভাঙা নয়। মেঝেতে একটা শতরঞ্চি পাতা, তার মাঝখানে হ্যাজাক বাতি জ্বেলে বসে আছে তিনজন লোক। তারা খুব মনোযোগ নিয়ে বিস্কুটের মতন সোনার চাকতি গুনছে। অনেক চাকতি। পাশে তিন-চারটে কাগজের বাক্স।
কাকাবাবু সরে এসে সন্তুকে দেখতে দিলেন। তারপর তাকালেন অনির্বাণের দিকে। অনির্বাণ মাথা ঝাঁকাল।
ক্রাচের যাতে শব্দ না হয়, সেইজন্য কাকাবাবু ক্রাচ দুটো বগল থেকে সরিয়ে দেওয়াল ধরে-ধরে নামতে লাগলেন। সিঁড়ির নীচে একটা মজবুত লোহার গেট, মনে হয় নতুন। গেটটা অবশ্য এখন খোলা!
তিনজন প্রায় একসঙ্গে ঢুকে পড়ল ঘরে। ভেতরের লোকেরা সোনা গুনতে এতই মগ্ন হয়ে ছিল যে, এদিকে খেয়ালই করেনি। আওয়াজ পেয়ে মুখ তুলতেই তারা দেখল, দুজনের হাতে রিভলভার, একজনের হাতে ছুরি।
অনির্বাণ গম্ভীরভাবে আদেশ দিল, সবাই ঘরের এককোণে চলে যাও। মাথার ওপর হাত তুলে থাকো। কোনওরকম পালাবার চেষ্টা করলেই গুলি চালাব।
তারপর সে খুবই বিস্ময়ের সঙ্গে বলে উঠল, এ কী? ফাগুলাল না?
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ওকে তুমি চেনো?
অনির্বাণ বলল, ও তো পুলিশের লোক। ওর ওপরেই টোবি দত্তর বাড়ির ওপর নজর রাখার ভার দেওয়া হয়েছিল। ব্যাটার এই মতলব?
কাকাবাবু বললেন, রক্ষকই ভক্ষক। পুলিশের চাকরিতেও মাইনে পায়, আর স্মাগলারদের সঙ্গে থেকেও অনেক রোজগার করে।
ফাগুলাল ঘরের এককোণে দাঁড়িয়ে লজ্জায় মুখ ঢাকার চেষ্টা করছে।
কাকাবাবু বললেন, এই নোক তিনটিকে বাঁধতে হবে। দড়ি জোগাড় করা দরকার। সোনাগুলোও ফেলে রেখে যাওয়া যাবে না। সন্তু, তুই সোনাগুলো কাগজের বাক্সে ভর তো!
অনির্বাণ বলল, এটা একটা স্মাগলারদের ডেন বোঝা গেল! এইটা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য টোবি দত্ত অত আলোটালোর ব্যবস্থা করেছে?
কাকাবাবু বললেন, হয়তো আরও কিছু আছে। খুঁজে দেখতে হবে। স্মাগলারদের ওপর টোবি দত্তর খুব রাগ। ওর ভাই আর বাবাকে স্মাগলাররাই খুন করেছে। যারা ওর পিঠে ছুরি মেরে ছিল, তারাও বোধ হয় এই দলের।
ফাগুলাল হঠাৎ নিচু হয়ে শতরঞ্চির একটা কোন ধরে জোরে টান মারল।
কাকাবাবু একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন। টাল সামলাতে পারলেন না। অনির্বাণও তাঁর সঙ্গে-সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। একমাত্র সন্তু শতরঞ্চিতে পা দেয়নি, তার কিছু হল না।
কাকাবাবু হাত থেকে রিভলভারটা ছাড়েননি। কিন্তু সেটা তোলার সময় পেলেন না। ফাগুলাল একলাফে তাঁর সেই হাতটার ওপর পা চেপে দাঁড়াল। অনির্বাণ পড়েছিল উলটো হয়ে। তাকেও ধরে ফেলল একজন।
কাকাবাবুর দারুণ আফসোস হল। শতরঞ্চি টানা একটা পুরনো কায়দা। তাঁর আগেই উচিত ছিল পা দিয়ে শতরঞ্চিটা গুটিয়ে দেওয়া।
ফাগুলাল আর অন্যরা কাকাবাবুদের রিভলভার কেড়ে নিল। তারপর ফাগুলাল বিশ্রী গলায় বলল, অ্যাই, উঠে দাঁড়া, উঠে দাঁড়া।
কাকাবাবুর বাঁ হাঁটুতে জোর গুঁত লেগেছে। তিনি আস্তে-আস্তে উঠতে লাগলেন।
ফাগুলাল ধমকে বলল, জলদি ওঠ, জলদি!
কাকাবাবু বললেন, একটু সময় দাও, দেখছ না খোঁড়া মানুষ!
ফাগুলাল বলল, খোঁড়া মানুষ তো এখানে মরতে এসেছিস কেন?
এই বলে ফাগুলাল কাকাবাবুর পেটে একটা লাথি কষাল!
সন্তু শিউরে উঠল। তার হাতে ছুরি আছে বটে, কিন্তু ওদের হাতে রিভলভার। সন্তু কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।
কাকাবাবু আস্তে-আস্তে বললেন, আমি তো উঠছিলামই। তবু তুমি আমাকে মারলে কেন? এর জন্য তোমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে!
ফাগুলাল হ্যা-হ্যা করে হাসতে-হাসতে বলল, ওরে চুনি, ওরে গোলা। এই খোঁড়াটা কী বলে রে! আমাদের নাকি শাস্তি দেবে!
চুনি নামে লোকটি বলল, এদের নিয়ে এখন কী করি? শেষ করে দিই?
ফাগুলাল বলল, এখানে মারলে লাশগুলো নিয়ে ঝঞ্ঝাট হবে! জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যাই, মেরে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেই কাম ফতে!
অনির্বাণ বলল, ফাগু, তুমি পুলিশের লোক হয়ে খুন করবে? তোমার ধরা পড়ার ভয় নেই?
ফাগুলাল ভেংচিয়ে বলল, ধরা পড়ার ভয় নেই! কে ধরবে? কে জানবে? এস. পি. সাহেব, তুমি তো জ্যান্ত ফিরছ না!
চুনি সন্তুর দিকে চেয়ে বলল, এই ছোঁড়াটা যে ছুরি বাগিয়ে আছে! এই, ফ্যাল ছুরিটা!
সন্তু চঞ্চলভাবে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল।
চুনি বলল, ওর হাতে গুলি চালাব?
কাকাবাবু কঠিন গলায় বললেন, ওর হাতে যে গুলি করবে, তার হাতখানা আমি ছিঁড়ে শরীর থেকে আলাদা করে দেব!
ওরা তিনজনই এবার কাকাবাবুর দিকে ফিরে তাকাল। এরকম কথা যেন তারা কখনও শোনেনি।
ফাগুলাল ভুরু তুলে একটুক্ষণ কাকাবাবুর দিকে চেয়ে থেকে বলল, এ-লোকটা তো অদ্ভুত! পাগল নাকি? তুই এত বড়বড় কথা বলছিস কেন রে? এক্ষুনি যদি তোর কপালটা ফুটো করে দিই, তা হলে তোকে কে বাঁচাবে?
কাকাবাবু কটমট করে তাকিয়ে আছেন ঠিক ফাগুলালের চোখের দিকে। তাঁর কপাল ও মুখের চামড়া কুঁচকে গিয়ে ভয়ঙ্কর দেখাল। তিনি বিরাট জোরে চেঁচিয়ে বললেন, আমায় মারবি? মার দেখি তোর কত সাহস? রাজা রায়চৌধুরীকে যে মারবে সে এখনও জন্মায়নি।
ঠিক মশা-মাছি তাড়াবার ভঙ্গিতে কাকাবাবু বিদ্যুৎ-বেগে ফাগুলালের রিভলভার-ধরা হাতখানায় একটা চাপড় মারলেন। ফাগুলালও গুলি চালাল, কিন্তু হাতটা সামান্য বেঁকে যাওয়ায় সেই গুলি লাগল দেওয়ালে।
কাকাবাবু এর পরেই লোহার মতন মুষ্টিতে একটা ঘুসি মারলেন ফাগুলালের চোখে। সে আর্ত চিৎকার করে বসে পড়ল।
সন্তুও সঙ্গে-সঙ্গে লাফিয়ে পড়েছে চুনির ঘাড়ে। ছুরিটা তার গলায় ঠেকিয়ে বলল, রিভলভারটা ফেলে দাও! নইলে গেলে!
অন্য লোকটির কাছে কোনও অস্ত্র নেই। সে এইসব ব্যাপার-স্যাপার দেখে ভয় পেয়ে দৌড় লাগাল সিঁড়ির দিকে।
কিন্তু এই সাফল্য বেশিক্ষণ ভোগ করা গেল না।
কাকাবাবু আর সন্তু রিভলভার দুটো কুড়িয়ে নেওয়ার আগেই সিঁড়ির পাশের একটা ঘুলঘুলি থেকে গম্ভীর গলায় কেউ বলল, বাঃ বাঃ, নাটক বেশ জমে উঠেছিল। কিন্তু আর দরকার নেই। খেলা শেষ। রাজা রায়চৌধুরী, রিভলভারে হাত দেবেন না। এদিকে তাকিয়ে দেখুন, দুটো রিভলভার আপনার দিকে এইম করা আছে। একটু নড়লেই শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যাবে। আমি বাজে কথা বলি না।
কাকাবাবু দেখলেন, দুটো ঘুলঘুলি থেকে বেরিয়ে আছে দুটো রিভলভারের নল।
কাকাবাবু সোজা হয়ে দাঁড়ালেন।
সেই কণ্ঠস্বর আবার বলল, ছেলেটাকে বলুন, বাঁদরের মতন যেন আর লাফালাফি না করে। তা হলে আপনিই আগে মরবেন।
কাকাবাবু সন্তুর দিকে তাকালেন। সন্তু সরে গেল দেওয়ালের দিকে।
কণ্ঠস্বরটি আবার বলল, এই চুনি, এই ফাগু, অপদার্থের দল! একজন খোঁড়া, আর একটা বাচ্চা ছেলের সঙ্গেও লড়তে পারিস না? অস্তর দুটো কুড়িয়ে নিয়ে তাক করে থাক।
তারপর সিঁড়িতে জুতোর মশমশ শব্দ করে নেমে এসে ঘরে ঢুকল একজন লোক। থুতনিতে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, চোখে বড় কালো চশমা, মাথায় কাউবয়দের মতন টুপি। পাক্কা সাহেবের মতন পোশাক।
ঘরে ঢুকে বলল, চুনি, সোনাগুলো বাক্সে ভরে ফেল। আমার ঘোড়ায় তুলে দিবি।
তারপর কাকাবাবুর দিকে ফিরে হেসে বলল, মিঃ রাজা রায়চৌধুরী। আপনার অলৌকিক ক্ষমতা আছে নাকি? আপনাকে যে মারবে সে এখনও জন্মায়নি। আমার খুব কৌতূহল হচ্ছে। পর পর দুটো বুলেট যদি আপনার বুকে ঠুসে দিই, তারপর কী হবে?
কাকাবাবু শান্তভাবে বললেন, চেষ্টা করে দেখুন না!
লোকটি বলল, ওই ফাগুলালের মতন আমাকেও চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখাবেন নাকি? আমার হাত কাঁপে না। তবে বুলেটের বদলে অন্যভাবেও মারা যায়। আপনারা তো একটা গাড়ি এনেছেন দেখলাম। সেই গাড়িতে চাপিয়েই আপনাদের একটা পাহাড়ে নিয়ে যাব। সেখান থেকে গাড়িসুষ্ঠু গড়িয়ে ফেলে দেব একটা খাদে। গাড়িটায় আগুন জ্বালিয়ে দেব। তারপর দেখব, আপনারা কী করে বাঁচেন! সবাই ভাববে, আপনারা তিনজনেই গাড়ির অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছেন।
সন্তুর দিকে ফিরে সে বলল, নো হ্যাংকি-প্যাংকি বিজনেস। আজ পর্যন্ত আমার হাত থেকে কেউ পালাতে পারেনি। যদি তাড়াতাড়ি মরতে না চাও, তা হলে চুপচাপ থাকো।
কাকাবাবু বললেন, আপনি জিভের তলায় একটা গুলি রেখে গলার আওয়াজটা বদলাবার চেষ্টা করছেন। ওটার আর দরকার নেই। আমি ঠিকই চিনতে পেরেছি। থুতনির দাড়িটা যে নকল, তাও জানি। রাত্তিরবেলা কালো চশমা পরবারই বা দরকার কী?
লোকটি থুঃ করে একটা কাচের গুলি মুখ থেকে ফেলে দিল বাইরে। কালো চশমাটা খুলতে খুলতে বলল, আপনি বুদ্ধিমান লোক তা জানি। কিন্তু কেন আমার খপ্পরে পড়তে এলেন? এবারেই আপনার লীলাখেলা শেষ!
অনিবার্ণ দারুণ বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, কর্নেল সমর চৌধুরী? আপনি?
কাকাবাবু বললেন, মানুষের লোভের শেষ নেই। মিলিটারিতে এত ভাল চাকরি করেন, তবু স্মাগলারদের দলের নেতা হয়েছেন!
অনির্বাণ বলল, আর্মির দু-একজন অফিসার বর্ডারে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, এরকম রিপোর্ট পেয়েছি। কিন্তু কর্নেল সমর চৌধুরীর মতন মানুষ ভাবতেই পারিনি!
সমর চৌধুরী বললেন, চোপ! আর একটাও কথা নয়। এই ফাগু, সোনাগুলো চটপট ভরে নে। বেশি দেরি করা যাবে না। তোদের টাকা কাল পেয়ে যাবি। ঠিকঠাক বাড়িতে পৌঁছে যাবে।
কাকাবাবু তবু বললেন, এত সোনা, এর তো অনেক দাম।
সমর চৌধুরী বললেন, লোভ হচ্ছে নাকি? আমার দলে যোগ দেবেন?
কাকাবাবু বললেন, আপনার দলটাই তো আর থাকবে না। পুলিশ এবার সব জেনে ফেলবে!
সমর চৌধুরী বললেন, আপনার মনের জোর আছে তা স্বীকার করতেই হবে। পুলিশকে কে জানাবে? আর ঠিক আধঘণ্টার মধ্যে আপনারা তিনজনেই খতম। এ নিয়ে বাজি ফেলতে পারি।
কাকাবাবু বললেন, ঠিক আছে বাজি রইল!
সমর চৌধুরী হা-হা করে হেসে উঠে বললেন, কার সঙ্গে বাজি লড়ছি আমি? আপনি তো মরেই যাচ্ছেন, রাজা রায়চৌধুরী!
সোনাগুলো প্রথমে দুটো কাগজের বাক্সে রেখে তারপর দুটো ক্যাম্বিসের থলিতে ভরা হল। সমর চৌধুরী নিজে সে দুটো এক হাতে নিয়ে অন্য হাতে রিভলভারটা ধরে রইলেন।
তারপর সবাই বেরিয়ে এল ঘর থেকে।
কাকাবাবুর ঠিক পেছনে সমর চৌধুরী। তাঁর ঘাড়ের কাছে রিভলভারটা ঠেকিয়ে বললেন, যদি আধ ঘণ্টা আগেই মরতে না চান, তা হলে ভাল ছেলের মতন সিঁড়ি দিয়ে উঠুন।
চাতাল থেকে বাড়ির একেবারে বাইরে আসতেই একটা ঘোড়ার চিহিহি ডাক শোনা গেল। জ্যোৎস্নায় দেখা গেল, খানিকটা দূরে একটা গাছতলায় একটা ঘোড়া লাফালাফি করছে। তার ডাক শুনলে মনে হয়, সে ভয় পেয়েছে কোনও কারণে।
সমর চৌধুরী বললেন, ঘোড়াটার আবার কী হল?
ফাগুলাল বলল, কাছাকাছি বাঘ-টাঘ এসেছে নাকি?
সমর চৌধুরী বললেন, ঘোড়াটা বাঁধা আছে। বাঘ এলে কি এতক্ষণ আস্ত রাখত? অন্ধকারে একা থাকতে ওর ভাল লাগছে না। শোন ফাগুলাল, খানিকটা দূরে একটা জিপগাড়ি আছে। এরা এনেছে। এদের সেই জিপে চাপাতে হবে। তুই চালাবি। আমি ঘোড়া নিয়ে পাশে-পাশে যাব। তিনমুণ্ডি পাহাড়ের ওপর থেকে গাড়িসুষ্ঠু ওদের ফেলে দিতে হবে। পেট্রোল ট্যাঙ্কে আমি নিজে আগুন জ্বেলে দেব!
ঘোড়াটা এই সময় দু পা তুলে দাঁড়িয়ে একটা বীভৎস চিৎকার করল। যেন সে মরতে বসেছে।
সঙ্গে-সঙ্গে একটা আলো এসে পড়ল সেখানে। টর্চের আলো নয়। অনেক তীব্র। এই আলো আসছে গড়বাজিতপুরের টোবি দত্তের বাড়ির ছাদ থেকে।
সেই আলোয় দেখা গেল ঘোড়াটার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা ধবধবে সাদা কঙ্কাল। মাঝে-মাঝে সে এক হাত দিয়ে ঘোড়াটার পেটে মারছে।
সমর চৌধুরী বললেন, ওটা কী?
ফাগুলাল কাঁপতে কাঁপতে বলল, ভূ-ভূ-ভূ-ভূত! সেই ভূতটা আবার এসেছে! আমাদের তিনজনকে মেরেছে!
অন্য লোকগুলো ভয়ে চিৎকার করতে-করতে দৌড় লাগাল উলটো দিকে।
সন্তুর বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। এবার তো তার চোখের ভুল নয়। সবাই দেখছে।
সমর চৌধুরী ভয় পাননি। ঠোঁট বেঁকিয়ে বললেন, ভূত না ছাই! কেউ একটা সঙ সেজে এসেছে।
পর-পর দুবার গুলি চালাল সে। সে-গুলি ছিটকে বেরিয়ে গেল, কঙ্কালটার কোনও ক্ষতি হল না।
কঙ্কালটা একটা বাচ্চা ছেলের গলায় বলে উঠল, আচ্ছা, আচ্ছা, আচ্ছা!
তারপর দুলে-দুলে এগিয়ে আসতে লাগল এদিকে।
এবার ফাগুলালও বাবা রে বলে দৌড় লাগাল প্রাণপণে।
কাকাবাবু ঠাট্টার সুরে বললেন, কী হে কর্নেল চৌধুরী, তুমিও এবার পালাবে না?
সমর চৌধুরী মুখ ফিরিয়ে চোটপাট করে বললেন, এটা কী? তোমরা এনেছ?
কাকাবাবু বললেন, নাঃ! আমরা কঙ্কাল-টঙ্কালের কারবার করি না।
অনির্বাণ জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, এটা কি সত্যিই একটা কঙ্কাল?
কাকাবাবু বললেন, তুমি যা দেখছ, আমিও তাই দেখছি!
অনির্বাণ বলল, একটা কঙ্কাল কি সত্যি-সত্যি হাঁটতে পারে? এ কখনও হয়?
কাকাবাবু বললেন, না, কঙ্কাল হাঁটতে পারে না। তা হলে এটা কঙ্কাল নয়।
সমর চৌধুরী কঙ্কালটার ঠিক মাথা লক্ষ করে আর-একটা গুলি চালালেন। এবারও ছিটকে গেল সেই গুলি। কঙ্কালটার দু চোখের গর্তে জ্বলে উঠল লাল আলো। হঠাৎ জোরে-জোরে এগিয়ে এসে এক হাতে চেপে ধরল সমর চৌধুরীর ঘাড়। সেই অবস্থায় তাকে শূন্যে তুলে ঝাঁকুনি দিতে লাগল।
সমর চৌধুরীর হাত থেকে খসে পড়ল রিভলভার। তিনি বিকট চিৎকার করতে-করতে বলতে লাগলেন, রায়চৌধুরী, বাঁচাও বাঁচাও! তুমি যা চাইবে দেব। সব সোনা দিয়ে দেব। বাঁচাও!
কাকাবাবু বললেন, সব ব্যাপারটা কেমন বদলে গেল? এখন সমর চৌধুরী আমার কাছে সাহায্য চাইছে। কিন্তু কী করে সাহায্য করব?
কঙ্কালটা এবার দু হাত দিয়ে সমর চৌধুরীকে ধরে শূন্যে ঘোরাতে লাগল। যেন এবার একটা প্রচণ্ড আছাড় মেরে ওর হাড়গোড় ভেঙে দেবে!
এই সময় ঘোড়াটার পেছন দিকের অন্ধকার থেকে কেউ ডেকে উঠল। রোবিন! রোবিন!
কঙ্কালটা সঙ্গে-সঙ্গে থেমে গেল। শূন্যে তুলে রাখল সমর চৌধুরীকে।
অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল টোবি দত্ত। তার একটা চোখ, অন্য চোখটার জায়গায় অন্ধকার।
সন্তু এখন যদিও জানে যে, টোবি দত্তর একটা চোখ পাথরের, তবু সেটা এখন নেই, চোখের জায়গায় খোঁদলটা দেখে তার বুকটা কেঁপে উঠল।
টোবি দত্ত জাপানি ভাষায় কিছু একটা আদেশ করতেই কঙ্কালটা সমর চৌধুরীকে আছাড় না মেরে আস্তে করে নামিয়ে দিল মাটিতে।
টোবি দত্ত এবার এক হাত বাড়িয়ে অস্বাভাবিক গলায় চেঁচিয়ে বলল, আই ফর অ্যান আই! চোখের বদলে চোখ! রাজু, তুই আমার একটা চোখ নষ্ট করেছিলি, আজ তোর একটা চোখ আমি খুবলে নেব!
কাকাবাবু অস্ফুট গলায় বললেন, সমর চৌধুরীই তা হলে রাজু। ওরা দুই পুরনো শত্রু!
টোবি দত্ত আবার বলল, আমার পোষা কঙ্কাল তোর হাড় গুঁড়ো করে দিতে পারত। কিন্তু আমি নিজের হাতে তোকে শাস্তি দেব! হেলিকপটার নিয়ে গিয়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিলি? তোর ওই হেলিকপটার আমি ইচ্ছে করলেই গুলি করে উড়িয়ে দিতে পারতাম। খালি হাতে লড়ার সাহস আছে? আয়!
সমর চৌধুরী অনেকটা সামলে নিয়েছেন। একবার পেছন ফিরে তিনি কঙ্কালটাকে দেখলেন। সমর চৌধুরী শক্তিশালী পুরুষ। খালি হাতে লড়াই করলে তিনিই হয়তো জিতবেন।
কঙ্কালটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কাকাবাবুদের দিকে গ্রাহ্যই করছে না।
কাকাবাবু বললেন, এবার বুঝতে পারলে, ওটা একটা রোবট। জাপানে রোবট দিয়ে অনেক কলকারখানায় এখন কাজ করানো হয়। টোবি দত্ত সেখান থেকে রোবট বানানো শিখে এসেছে। তারপর কঙ্কালের মতন সাজিয়েছে।
অনির্বাণ বলল, ও আমাদের কিছু করবে না?
কাকাবাবু বললেন, নিশ্চয়ই কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা। ভয়েস অ্যাকটিভেটেড। টোবি দত্ত হুকুম না দিলে কিছুই করবে না।
ওদিকে সমর চৌধুরী একটা ঘুসি চালাতে যেতেই টোবি দত্ত ধরে ফেলল তাঁর হাত। এক হ্যাঁচকা টানে তাঁকে ফেলে দিল উলটে। টোবি দত্ত তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগেই সমর চৌধুরী আবার উঠে দাঁড়ালেন। দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, ত্যাপা, তোর মতন দু-তিনটেকে আমি ছিঁড়ে ফেলতে পারি।
তারপর শুরু হয়ে গেল শুম্ভ-নিশুম্ভর লড়াই। একবার টোবি সমরকে মাটিতে ফেলে বুকে চেপে বসে, আবার সমর দু-পায়ের লাথিতে টোবিকে ছিটকে ফেলে দেন। কঙ্কাল-রোবটটা ওঁদের পাশে-পাশে ঘুরছে, যেন সে রেফারি। মারামারিতে বাধা দিচ্ছে না।
কাকাবাবু বললেন, সন্তু, সোনার থলি দুটোর ওপর তুই নজর রাখ।
অনির্বাণ, তুমি সমরের রিভলভারটা তুলে নাও। যদি ওর চ্যালারা ফিরে আসে, তখন কাজে লাগবে। তবে মনে হয় ভূতের ভয়ে ওরা আর ফিরবে না। এই রোবটটাও ওদের তিনজনকে মেরেছে।
অনির্বাণ বলল, এদের লড়াই কতক্ষণ চলবে? কে জিতবে বোঝা যাচ্ছে না।
কাকাবাবু বললেন, আমি চাই টোবি জিতুক। সমর চৌধুরী আর্মি অফিসার হয়েও স্মাগলারদের দল চালান। এঁরা দেশের শত্রু। সমাজের ঘৃণ্য জীব। সেই তুলনায় টোবি এমন কিছু অন্যায় করেনি। সে প্রতিশোধ নিতে এসেছে!
অনির্বাণ বলল, একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে এরকম খুনোখুনির লড়াই আমার দেখা উচিত নয়। ওদের ছাড়িয়ে দিয়ে অ্যারেস্ট করা দরকার।
কাকাবাবু বললেন, চেষ্টা করে দ্যাখো!
অনির্বাণ কাছে এগিয়ে যেতেই কঙ্কালটা একটা হাত বাড়িয়ে দিল। সে অন্য কাউকে কাছে যেতে দেবে না।
হঠাৎ টোবি দত্ত সমর চৌধুরীকে বাগে পেয়ে একটা গাছের সঙ্গে চেপে ধরে। দুবার মাথা ঠুকে দিল খুব জোরে। সমর চৌধুরী আর সহ্য করতে পারলে না। ঢলে পড়ে গেলেন মাটিতে।
টোবি দত্ত জয়ের আনন্দে একটা দৈত্যের মতন হুঙ্কার দিয়ে বলল, এইবার রাজু, আর কোথায় পালাবি? চোখের বদলে চোখ। চোখের বদলে চোখ! আমার চোখ নষ্ট করেছিলি, তোর দুটো চোখই আমি আজ গেলে দেব!
সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটা সরু কাঠি খুঁজতে লাগল।
অনির্বাণ উত্তেজিতভাবে বলল, ও সমর চৌধুরীর চোখ গেলে দেবে। এই দৃশ্য আমরা দেখব?
কাকাবাবু বললেন, তুমি আর সন্তু ওকে আটকাও। আমি কঙ্কালটাকে সামলাচ্ছি।
কাকাবাবু কঙ্কালটার কাছে এগিয়ে যেতেই সে হাত বাড়িয়ে বাধা দিল। কাকাবাবুও খপ করে তার হাতখানা চেপে ধরলেন। তারপর শুরু হল পাঞ্জার লড়াই।
কাকাবাবুর হাতে দারুণ শক্তি, কিন্তু একটা রোবটের সঙ্গে পারবেন কেন? কঙ্কালের হাতখানা লোহার, তাতে সাদা রং করা। কাকাবাবু প্রাণপণে লড়তে লাগলেন।
টোবি দত্ত অন্য কিছু না পেয়ে একটা গাছের সরু ডাল ভেঙে নিয়ে অজ্ঞান সমর চৌধুরীর বুকের ওপর চেপে বসল।
কাকাবাবু প্রাণপণে রোবটের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছেন, তাঁর পাশ দিয়ে সন্তু আর অনির্বাণ ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল টোবি দত্তর ওপর। টোবি দত্ত দু হাত চালিয়ে ওদের সরিয়ে দিতে চাইল। সন্তু চেপে ধরল তার গলা, অনির্বাণ রিভলভারের বাঁট দিয়ে খুব জোরে মারল তার মাথায়। তারই মধ্যে টোবি দত্ত গাছের ডালটা ঢুকিয়ে দিয়েছে সমর চৌধুরীর এক চোখে।
কাকাবাবু বললেন, আমি আর পারছি না! সন্তু, তোরা সরে যা শিগগির!
কঙ্কালটা তাঁকে ঠেলে ফেলে দিল দূরে। তারপর এগিয়ে গিয়ে ঝুঁকে সন্তু আর অনির্বাণকে দু হাতে তুলে ছুড়ে দিল। টোবি দত্ত অজ্ঞান হয়ে গেছে। কঙ্কালটা তাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিল। তারপর দুলতে-দুলতে হেঁটে-হেঁটে মিলিয়ে গেল জঙ্গলের অন্ধকারে।
অনির্বাণ ধুলো ঝেড়ে উঠে বসে বলল, টোবি দত্তকে নিয়ে চলে গেল?
কাকাবাবু বললেন, নিশ্চয়ই সেরকম প্রোগ্রাম করা ছিল রোবটটাকে। এখন আমরা চেষ্টা করলেও টোবিকে উদ্ধার করতে পারব না। পরে অনেক সময় পাবে। এর পর টোবিকে ধরা কিংবা তাকে শাস্তি দেওয়া পুলিশের কাজ। আমি আর সন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নই। সমর চৌধুরীর এক্ষুনি চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে যে তিনি মারা যাবেন! ওঁকে বাঁচানো দরকার। বাঁচিয়ে কঠিন শাস্তি দেওয়া দরকার।
সমর চৌধুরীর ঘোড়াটা কোনওক্রমে বাঁধন খুলে পালিয়ে গেছে এর মধ্যে। সমর চৌধুরীকে নিয়ে যেতে হবে খানিকটা দূরে জিপে। তাঁর এখনও পুরো জ্ঞান ফেরেনি। চোখ দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে আর গলা দিয়ে বেরোচ্ছে একটা গোঙানির শব্দ।
সন্তু আর অনির্বাণ সমর চৌধুরীকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে চলল। কাকাবাবুকে নিতে হল সোনার থলি দুটো। ফাগুলালের দলবল কঙ্কালের ভয়ে একেবারেই পালিয়েছে।
জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যেতে-যেতে কাকাবাবু ওপরের দিকে তাকালেন। আকাশে আজ ফুটফুট করছে জ্যোৎস্না। দমকা হাওয়া উঠছে মাঝে-মাঝে। তাতে জঙ্গলের নানারকম গাছে নানারকম পাতায় শব্দ হচ্ছে বিভিন্ন রকম।
কাকাবাবু মনে-মনে বললেন, কী সুন্দর আজকের রাতটা! এর মধ্যেও মানুষ মারামারি, খুনোখুনি করে? ছিঃ! এর চেয়ে নদীর ধারে বসে গান গাইলে কত ভাল লাগত!