বীর ধনঞ্জয়, সংগ্রামে দুর্জ্জয়,
গাণ্ডীর ধনুক হাতে।
মস্তকে শোভিত, কনক রচিত,
পূর্ব্বে দিল সুরনাথে।।
ত্রিভুবন-পতি, গোবিন্দ সারথি,
ধবল চারি তুরঙ্গ।
কপিধ্বজ নাম, রথ অনুপাম,
জলদ-বরণ অঙ্গ।।
একই বরণ, রাজীব লোচন,
ধনঞ্জয় নারায়ণ।
তনু অনুপাম, দোঁহে ঘনশ্যাম,
দেখিতে বড় শোভন।।
পার্থ বীরবরে, বলিল কৃষ্ণেরে,
শীঘ্রগতি রথ বাহ।
গঙ্গার তনয়, সংগ্রামে দুর্জ্জয়,
তাঁহার অগ্রেতে লহ।।
আজি মহারণে, গঙ্গার-নন্দনে।
পাঠাইব যমালয়।
এত শুনি বাণী, দেব চক্রপাণি,
চালাইলা রথ হয়।।
পার্থেরে দেখিয়া, রথ চালাইয়া,
আগু হৈল গঙ্গাসুত।
দোঁহার সংগ্রাম, বড় অনুপাম,
এড়ে অস্ত্র যূথ যূথ।।
ঘোর শব্দ করি, পড়ে দোঁহাপরি,
সৈন্যে হৈল অন্ধকার।
ভৃগুদত্ত বাণ, রণে অনুপাম,
এড়ে গঙ্গার কুমার।।
হৈয়া জ্যোতির্ম্ময়, দেখি লাগে ভয়,
আইসে পার্থের পর।
এড়িলেন বাণ, পার্থ মতিমান,
বাণ কাটিল সত্বর।।
বাণ ব্যর্থ গেল, মনে ক্রোধ হৈল,
পুনরপি এড়ে বাণ।
অষ্টবক্র নাম, বাণ অনুপাম.
এড়ে পুরিয়া সন্ধান।।
আলো করি আইসে, যেন তারা খসে,
মহাভয়ঙ্কর শর।
পার্থ লৈয়া বাণ, কৈল খান খান,
প্রশংসে সব অমর।।
তবে পার্থ বীর, নির্ভয়-শরীর,
শতসংখ্যা বাণ এড়ে।
আকাশ আবরি, অন্ধকার করি,
ভীষ্মের গায়েতে পড়ে।।
সংগ্রামে প্রচণ্ড, তেজেতে মার্ত্তণ্ড,
দুর্জ্জয় গঙ্গার সুত।
এড়ি দিব্য বাণ, কৈল খান খান,
পার্থ মানিল অদ্ভুত।।
হৈয়া ক্রোধমন, গঙ্গার নন্দন,
পূরিল দিব্য সন্ধান।
বশিষ্ঠ-শিক্ষিত, জগত-পূজিত,
ব্রহ্মশির নাম বাণ।।
এড়ে ক্রোধভরে, উঠিল অম্বরে,
আশুনি সমান বাণ।
নানা শক্তি করে, নিবারিতে নারে,
এস্ত হৈলা ভগবান।।
বাজিল সত্বরে, পার্থের শরীরে,
নিবারিতে না পারিল।
সেই অস্ত্রঘায় পার্থ মোহ যায়,
গোবিন্দ এস্ত হইল।।
তবে নারায়ণ, পুরুষ প্রধান,
অঙ্গে হাত বুলাইল।
স্পর্শে পদ্মহাত, খণ্ডে অস্ত্রঘাত,
পার্থ সম্বিত পাইল।।
তবে ধনঞ্জয়, ক্রোধে অতিশয়,
পার্থ সম্বিত পাইল।
তবে ধনঞ্জয়, ক্রোধে অতিশয়,
লক্ষ লক্ষ এড়ে বাণ।
বাণে বাণ হানি, বীর কুরুমণি,
সব কৈল খান খান।।
ক্রোধে পুনরপি, মন্ত্র অভিষেকি,
লক্ষ লক্ষ বাণ এড়ে।
নারাচ তোমর, মুষল মুদগর,
পরিঘাদি শেল পড়ে।।
করে অস্ত্র বৃষ্টি, মজাইতে সৃষ্টি,
যেন বর্ষে ঘোর ঘন।
শরতে ছাইল, অন্ধকার হৈল,
না দেখি কৃষ্ণ অর্জ্জুন।।
হাহাকার বোলে, পাণ্ডবের দলে,
ভয়ে রণে ভঙ্গ দিল।
পাণ্ডুসৈন্যগণে, গঙ্গার নন্দনে,
প্রায় লণ্ডভণ্ড কৈল।।
বীর ধনঞ্জয়, সংগ্রামে দুর্জ্জয়,
কাটিল ভীষ্মের বাণ।
সূর্য্য অস্ত্র গেল, রাত্রি প্রবেশিল,
দিবা হৈল অবসান।।
হেনই সময়, গঙ্গার তনয়,
আজ্ঞা দিল যোধগণে।
শুন সর্ব্বজন, সম্বরহ রণ,
দিন হৈল অবসানে।।
ভীষ্মের বচনে, কুরু-পাণ্ডুগণে,
ত্যাগ কৈল সবে রণ।
যে যার সদন, গেন সর্ব্বজন,
কুরু পাণ্ডু বীরগণ।।
সন্ধ্যার সময়, কুরু-পাণ্ডুচয়,
পড়িল সংগ্রাম-স্থানে।
সৈন্য অগণন, হস্তী অশ্বগণ,
পড়িল বহুত রণে।।
বেড়ে প্রেতচয়, দেখি লাগে ভয়,
ভয়ঙ্কর রণস্থল।
কুক্কুর শৃগাল, করে কোলাহল,
কবন্ধ উঠে বহুদল।।
ভারত-চরিত্র, পরম পবিত্র,
শুনিলে পাপ বিনাশে।
কাশীরাম কয়, নাহিক সংশয়,
যে কহিলা মুনি ব্যাসে।।