দশ দশ যোজন চৌদিকে হৈল খেদা।
আড়ে দীর্ঘে শত ক্রোশ রক্তে হৈল কাদা।।
দ্বিজে মার মার বলি পূর্ব্বে শব্দ হৈল।
সেই ভয়ে যতেক ব্রাহ্মণ পলাইল।।
ঊর্দ্ধশ্বাস হীনবাস আউদর চুলি।
দণ্ড কমণ্ডলু পড়ে, নাহি লয় তুলি।।
ফেলে চর্ম্ম-পাদুকা ও স্কন্ধ হৈতে ছাতা।
মৃগচর্ম্ম ফেলে কেহ, ছিঁড়ি ফেলে পৈতা।।
বায়ুবেগে ধায় সবে, পাছে নাহি চায়।
লক্ষ লক্ষ চতুর্দ্দিকে ব্রাহ্মণ পলায়।।
পশ্চাৎ হইল যুদ্ধ ক্ষত্র ভঙ্গিয়ান।
বর্ণনে না যায় রাজগণ-অপমান।।
কোথা রথ কোথা গজ কোথা ভৃত্যগণ।
কেবল লইয়া প্রাণ ধায় রাজগণ।।
যে দিকে যে পারে যেতে সে গেল সে দিকে।
পলায় পশ্চিম-বাসী রাজা পূর্ব্ব ভাগে।।
উত্তরের রাজগণ দক্ষিণেতে গেল।
পথাপথ নাহি জ্ঞান যে দিক পাইল।।
হুড়াহুড়ি ঠেলাঠেলি না পাইয়া পন্থ।
একে চাপি অন্যে যায় যেই বলবন্ত।।
বৃষ উষ্ট্র হয় হস্তী সেনা অগণন।
রথ রথী সারথি পলায় ভীতমন।।
রথের উপর বেগবন্ত আসোয়ার।
অবস্থা হইল যত কি কব তাহার।।
ঠেলাঠেলি চাপাচাপি অর্দ্ধ-সৈন্য মৈল।
স্থানে স্থানে পর্ব্বত-আকার সব রৈল।।
এক পদ কাটা কার কাটা দুই ভুজ।
বুকের প্রহারে কেহ হইয়াছে কুঁজ।।
সর্ব্বাঙ্গ বহিয়া পড়ে শোণিতের ধার।
মুক্তকেশ, ভগ্নদেহ কাণ কাটা কার।।
আড়েওড়ে ঝাড়েঝোড়ে অরণ্যে পশিয়া।
জলেতে পড়িয়া কেহ যায় সাঁতারিয়া।।
ক্ষত্র দেখি ব্রাহ্মণ পলায় উভরড়ে।
দ্বিজে দেখি ক্ষত্রিয় লুকায় ঝাড়েঝোড়ে।।
দ্বিজের ক্ষত্রিয়-ভয়, ক্ষত্রে দ্বিজ-ভয়।
দ্বিজ ক্ষত্রবেশ ধরে, ক্ষত্রে দ্বিজ হয়।।
ধনুর্ব্বাণ ফেলিল হাতের গদা শূল।
মাথার মুকুট ফেলি মুক্ত কৈল চুল।।
তুলিয়া লইল ছত্রদণ্ড কমণ্ডুল।
ধনুর্ব্বাণ তুলি নিল ব্রাহ্মণ সকল।।
প্রাণভয়ে কেহ গিয়া ডুবে রহে জলে।
কেহ কাঁটাবনে পশে, কেহ বৃক্ষডালে।।
মড়ার ভিতরে কেহ মড়া হৈয়া রহে।
দূর দূরান্তরে কেহ ভয়ে স্থির নহে।।
ভাঙ্গিল রাজ্যের ঘর দেউল প্রাচীর।
বৃক্ষলতা চূর্ণ হৈল প্রাসাদ মন্দির।।
পাঞ্চালের রাজ্যে না রহিল বৃক্ষ ঘর।
কেবল পাইল রক্ষা দ্রুপদ-নগর।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীদাস বিরচিল সাধু করে পান।।