৯৪তম অধ্যায়
সামনীতিতে নৃপতির দৃঢ়প্রতিষ্ঠা
“বামদেব বলিলেন, “হে রাজন! যুদ্ধ না করিয়া অরাতিপরাজয় করাই ভূপতির অবশ্য কর্ত্তব্য। রাজা সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়া যে জয়লাভ করেন, তাহা সাধুসমাজে জঘন্য বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। নরপতি দৃঢ়মূল না হইয়া কদাচ অলব্ধ বস্তুলাভ করিবার চেষ্টা করিবেন না। মূল দৃঢ় না হইলে তাহার কাচ কোন বস্তুলাভের সম্ভাবনা নাই। যে রাজার অসংখ্য মন্ত্রী থাকে, জনপদ অতি বিস্তীর্ণ ও সম্পত্তিসম্পন্ন হয় এবং প্রজাগণ সতত সন্তুষ্ট, ধনধান্যশালী ও বশীভূত হইয়া সকল লোকের উপর দয়া প্রকাশ করে, তাঁহাকেই দৃঢ়মূল বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। যে রাজার যোধগণ সন্তোষশালী ও শত্রুগণের প্রবঞ্চনায় পটু হয়, তিনি অল্পসৈন্য লইয়াও সমুদয় পৃথিবী জয় করিতে পারেন। মহীপতি যখন আপনাকে প্রতাপান্বিত বোধ করিবেন, সেই সময়েই স্বীয় বুদ্ধিবলে শত্রুর ভূমি ও ধনহরণ করিতে চেষ্টা করা তাঁহার কর্ত্তব্য। অভ্যুদয়শালী মহীপাল প্রাণীগণের প্রতি দয়াপ্রকাশ ও আত্মরক্ষায় যত্ন করিলে ক্রমে ক্রমে সকলকেই পরাজয় করিতে পারেন। যে নরপতি আত্মীয়গণের সহিত সতত সম্পূর্ণ মিথ্যাব্যবহার করেন, তাহাকে অচিরাৎ বিনষ্ট হইতে হয়। যে রাজা নিয়ত শত্রুপীড়ন না করেন, তাঁহার শত্রুগণ কখনই অবসন্ন হয় না এবং যিনি ক্রোধ-সংবরণ করিতে পারেন, কেহই তাহার সহিত বিপক্ষাচরণ করে না। পণ্ডিত ভূপতি সজ্জনবিদ্বিষ্ট ব্যবহার পরিত্যাগ ও সতত মঙ্গলকাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করিবেন। যে রাজা কৰ্তব্যকৰ্ম্ম সুম্পন্ন করিয়া সুখ অনুভব করেন, তাহাকে কদাপি অনুতাপিত বা জনসমাজে অবজ্ঞাত হইতে হয় না। হে মহারাজ! নরপতি এইরূপ ব্যবহার করিলেই ইহলোকে ও পরলোকে জয়লাভ করিতে পারেন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! মহারাজ বসুমনা বামদেবকর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া তদনুরূপ কার্য্যানুষ্ঠান করিয়াছিলেন। এক্ষণে তুমিও সেইরূপ কার্য্যে প্রবৃত্ত হও; তাহা হইলে নিঃসন্দেহেই উভয়লোক জয় করিতে পারিবে।”