৯৪তম অধ্যায়
দ্রোণের প্রতি দুর্য্যোধনের অভিযোগ
সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! এইরূপে মহাবীর ধনঞ্জয় জয়দ্রথবধার্থ দুর্ভেদ্য দ্রোণ সৈন্য ও ভোজ সৈন্য ভেদ করিয়া তম্মধ্যে প্রবিষ্ট, কাম্বোজ রাজতনয় সুদক্ষিণ ও মহাবল পরাক্রান্ত শ্রুতায়ুধ বিনষ্ট এবং সৈন্য সকল ছিন্ন ভিন্ন হইয়া পলায়ন পরায়ণ হইলে আপনার আত্মজ রাজা দুৰ্য্যোধন সত্বরে রথে আরোহণপূর্ব্বক দ্রোণাচার্য্যের নিকট গমন করিয়া কহিলেন, হে ব্ৰহ্মন্! অর্জ্জুন এই সমস্ত সৈন্য প্রমথিত করিয়া গমন করিয়াছে। এক্ষণে ভয়ঙ্কর লোকক্ষয়কর কালে অর্জ্জুন বিনাশের নিমিত্ত বুদ্ধি পূর্ব্বক কার্য্যাবধারণ করা আপনার কর্ত্তব্য হইতেছে। আপনিই আমাদিগের প্রধান আশ্রয়; অতএব অর্জ্জুন যাহাতে জয়দ্রথকে সংহার করিতে না পারে, তাহার উপায় নির্দেশ করুন। হুতাশন যেমন সমীরণের সাহায্যে
শুষ্ক তৃণ সকল ভস্মসাৎ করে, তদ্রূপ ধনঞ্জয় ক্রোধভরে আমার সৈন্য সমুদায় বিনষ্ট করিতেছে। পূর্ব্বে জয়দ্রথের রক্ষক ভূপালগণের স্থির বিশ্বাস ছিল যে, ধনঞ্জয় প্রাণসত্ত্বে কদাচ দ্রোণাচাৰ্য্যকে অতিক্রম করিবে না; কিন্তু এক্ষণে তাঁহারা তাঁহাকে সৈন্য ভেদ পূর্ব্বক আপনাকে অতিক্রম করিতে দেখিয়া সাতিশয় সংশয়াপন্ন হইয়াছেন। হে মহাত্মন্! আমি পার্থকে আপনার সমক্ষে সৈন্য মধ্যে প্রবেশ করিতে দেখিয়া অস্মৎপক্ষীয় বীরগণকে নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর এবং আপনাকে সৈন্য শূন্য বলিয়া বিবেচনা করিতেছি। হে মহাভাগ! আমি আপনাকে পাণ্ডবগণের হিতানুষ্ঠানে নিরত জানিয়া ইতিকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইতেছি। আমি সাধ্যানুসারে আপনার সহিত সদ্ব্যবহার এবং আপনাকে প্রীত করি, কিন্তু তৎসমুদায় আপনার হৃদয়ঙ্গম হয় না। আমরা আপনার একান্ত ভক্ত; তথাচ আপনি আমাদিগের হিতাভিলাষ করেন না; প্রত্যুত আমাদের অপকারে প্রবৃত্ত পাণ্ডবদিগকে নিরন্তর প্রীতি করিয়া থাকেন। আপনি আমাদিগের আশ্রয়ে জীবিকা নির্ব্বাহ করিয়া আমাদিগেরই অপকারে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। আপনি যে মধুলিপ্ত ক্ষুরসদৃশ, তাহা আমি এতকাল অবগত ছিলাম না। যদি আপনি পূর্ব্বে অর্জ্জুন নিগ্রহে স্বীকার না করিতেন, তাহা হইলে আমি গৃহগমনোম্মুখ সিন্ধুরাজ জয়দ্রথকে কদাচ নিবারণ করিতাম না। আমি দুৰ্ব্বদ্ধি প্রভাবে আপনার অস্ত্রবলে পরিত্রাণেচ্ছা করিয়া মোহবশত সিন্ধুরাজকে আশ্বাস প্রদান পূর্ব্বক মৃত্যুমুখে নিক্ষেপ করিয়াছি। বরং মনুষ্য কৃতান্তের করাল দংষ্ট্রান্তরে নিপতিত হইয়া মুক্তি লাভে সমর্থ হয়, কিন্তু জয়দ্রথ অর্জ্জুনের বশবর্তী হইলে কদাচ পরিত্রাণ পাইবেন না। অতএব হে মহাত্মন্! সিন্ধুরাজ যাহাতে অর্জ্জুন হইতে মুক্তি লাভ করিতে পারেন, এরূপ উপায় করুন। আমার এই আৰ্ত্তপ্রলাপে রোষ পরবশ হইবেন না।”
দ্রোণাচার্য্য রাজা দুর্য্যোধনের বাক্য শ্রবণানন্তর কহিলেন, মহারাজ! তুমি আমার আত্মজ অশ্বত্থামার তুল্য; আমি তোমার বাক্যে দোষারোপ করি না। এক্ষণে আমি যাহা নিশ্চয় বলিতেছি, তুমি তাহা শ্রবণ ও তদনুসারে কাৰ্য্য কর। কৃষ্ণ সারথি শ্রেষ্ঠ; তাঁহার অশ্ব সকল অতিশয় বেগগামী এবং মহাবীর অর্জ্জুন অত্যল্প মাত্র পথ প্রাপ্ত হইয়া শীঘ্র গমন করিতে সমর্থ হন। তুমি কি নিরীক্ষণ করিতেছ না যে, অর্জ্জুনের গমন কালে তাঁহার নিক্ষিপ্ত শরনিকর তাঁহার রথের এক ক্রোশ পশ্চাৎ নিপতিত হইতেছে। হে মহারাজ! আমি এক্ষণে অতিশয় বৃদ্ধ হইয়াছি, সুতরাং শীঘ্র গমনে সমর্থ নহি। বিশেষত পাণ্ডবদিগের সেনাগণ আমাদের সেনা মুখে সমুপস্থিত হইয়াছে। আরও আমি সকল ধনুর্ধারীদিগের সমক্ষে যুধিষ্ঠিরকে গ্রহণ করিব বলিয়া ক্ষত্রিয় মধ্যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছি; এক্ষণে যুধিষ্ঠিরও অর্জ্জুন কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া ঐ অগ্রে অবস্থান করিতেছে। অতএব আমি এ সময় ব্যূহমুখ পরিত্যাগ করিয়া অর্জ্জুনের সহিত যুদ্ধ করিব না। তুমি এই জগতের পতি, মহাবল পরাক্রান্ত ও জয়লাভে সুনিপুণ; অতএব যে স্থানে পার্থ অবস্থান করিতেছে, তুমি স্বয়ং সহায়সম্পন্ন হইয়া নির্ভয়ে তথায় গমন পূর্ব্বক সেই তুল্যাভিজন তুল্যকৰ্ম্মা একমাত্র পাণ্ডুতনয়ের সহিত সংগ্রামে প্রবৃত্ত হও।” তখন দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “হে আচার্য্য! আপনি সমুদায় শস্ত্রধারিগণের অগ্রগণ্য; ধনঞ্জয় আপনাকেও অতিক্রম করিয়াছে। অতএব আমি কি রূপে তাঁহাকে নিবারণ করিতে সমর্থ হইব। আমি কুলিশধারী পুরন্দরকেও সমরে পরাজয় করিতে পারি, কিন্তু অর্জ্জুনকে পরাজয় করিতে কোন মতেই সমর্থ হইব না। যে মহাবীর অস্ত্রবলে ভোজরাজ, হার্দ্দিক্য ও আপনাকে পরাজয় এবং সুদক্ষিণ, শ্রুতায়ুধ, অচ্যুতায়ু, অম্বষ্ঠপতি ও অসংখ্য ম্লেচ্ছগণকে বিনাশ করিয়াছে, আমি কি রূপে সেই দহনোম্মুখ হুতাশন সদৃশ, নিতান্ত দুর্দ্ধর্ষ অস্ত্র বিশারদ অর্জ্জুনের সহিত যুদ্ধ করিব। আজি আপনিই বা কি রূপে অর্জ্জুনের সহিত আমার যুদ্ধ সম্ভবপর বলিয়া বিবেচনা করিলেন। হে আচাৰ্য্য! আমি ভৃত্যের ন্যায় আপনার অধীন, এক্ষণে আপনি অনুগ্ৰহ করিয়া আমার যশোরক্ষা করুন।”
দ্রোণাচার্য্য কহিলেন, “হে মহারাজ! ধনঞ্জয় যথার্থই দুর্দ্ধর্ষ কিন্তু তুমি যে রূপে তাঁহার বলবীৰ্য্য সহ্য করিতে সমর্থ হইবে, আমি এক্ষণে তাঁহার উপায় বিধান করিতেছি। আজি ধনুর্দ্ধরগণ এই অদ্ভুত ব্যাপার নিরীক্ষণ করুন, যে মহাবীর ধনঞ্জয় কৃষ্ণের সমক্ষে তোমার সহিত যুদ্ধ করিতে অসমর্থ হইতেছে। হে মহারাজ! আমি তোমার শরীরে এই কবচ বন্ধন করিয়া দিতেছি, ইহার প্রভাবে মানুষস্ত্র তোমার শরীরে বিদ্ধ হইবে না। যদি সমুদায় সুর, অসুর, যক্ষ, উরগ, রাক্ষস, মনুষ্যগণ তোমার সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হন, তাহা হইলেও তোমার কিছু মাত্র ভয় নাই। কি কৃষ্ণ কি অর্জ্জুন কি অন্য কোন শস্ত্রধারী বীর কেহই তোমার এই কবচে শরক্ষেপ করিয়া কৃতকার্য্য হইতে পারিবেন না, অতএব তুমি এই কবচ ধারণ করিয়া যুদ্ধার্থ সত্বরে অমর্ষপরায়ণ অর্জ্জুনের প্রতি ধাবমান হও; সে কদাচ তোমার বাহুবল সহ্য করিতে সমর্থ হইবে না।”
দুর্য্যোধনের অভেদ্য কবচ লাভ
ব্ৰহ্মবিদগ্রগণ্য দ্রোণাচাৰ্য্য এই বলিয়া স্বীয় বিদ্যাবলে সেই ভীষণ সংগ্রামস্থলস্থিত বীরগণের বিস্ময়োৎপাদন ও দুৰ্য্যোধনের জয়লাভের নিমিত্ত সত্বরে উদকস্পর্শ করিয়া যথাবিধি মন্ত্র জপ করত দুর্য্যোধনের গাত্রে এক তেজ প্রজ্বলিত অদ্ভুত কবচ আসঞ্জিত করিয়া কহিতে লাগিলেন। হে রাজন! যাবতীয় শ্রেষ্ঠতর সরীসৃপ এবং এক চরণ, বহু চরণ ও চরণ হীন প্রাণিগণের নিকট তুমি নিরন্তর মঙ্গল লাভ কর। ভগবান ব্ৰহ্মা, ব্রাহ্মণগণ, স্বাহা, স্বধা, শচী, লক্ষ্মী, অরুন্ধতী, অসিত, দেবল, বিশ্বামিত্র, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ, কশ্যপ, লোকপাল, ধাত, বিধাতা, দিক্সকল, দিক্পালগণ, ষড়ানন কার্ত্তিকেয়, ভগবান্ ভাস্কর, দিগ্গজ চতুষ্টয়, ক্ষিতি, গগন, গ্রহগণ এবং যযাতি, নহুষ, ধুন্ধুমার ও ভগীরথ প্রভৃতি সমস্ত রাজর্ষিরা তোমার মঙ্গল বিধান করুন। যিনি রসাতলে অবস্থান পূর্ব্বক নিরন্তর ধরা ধারণ করিতেছেন, সেই পন্নগশ্রেষ্ঠ অনন্ত তোমার মঙ্গলানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হউন।
হে গান্ধারীতনয়! পূৰ্ব্বকালে ইন্দ্রাদি দেবগণ বৃত্রাসুরের সহিত সংগ্রামে পরাজিত, ক্ষত বিক্ষতাঙ্গ ও বলবীর্য্যবিহীন হইয়া ভয়ে ব্রহ্মার শরণাগত হইয়াছিলেন, তাঁহারা সকলে কৃতাঞ্জলিপুটে কমলযোনিকে কহিলেন, হে দেবসম! আপনি বৃত্রমর্দ্দিত সুরগণের একমাত্র গতি হইয়া ইঁহাদিগকে এই মহৎ ভয় হইতে রক্ষা করুন। তখন ভগবান্ পদ্মযোনি স্বীয় পার্শ্বস্থিত বিষ্ণু ও শক্ৰাদি সুরগণকে বিষন্ন দেখিয়া কহিতে লাগিলেন, হে দেবগণ! তোমাদিগকে ও ব্রাহ্মণগণকে রক্ষা করা আমার কর্ত্তব্য; কিন্তু এক্ষণে আমি বৃত্রাসুরকে সংহার করিতে সমর্থ নহি। বিশ্বকৰ্ম্মার অতি দুঃসহ তেজ প্রভাবে বৃত্রাসুরের জন্ম হইয়াছে। পূর্ব্বকালে বিশ্বকর্ম্মা দশলক্ষ বৎসর তপশ্চরণপূর্ব্বক মহেশ্বর নিকটে অনুজ্ঞা লাভ করিয়া সেই অসুরকে সৃষ্টি করিয়াছেন। দুরাত্মা বৃত্রাসুর দেবাদি দেব মহাদেবের প্রসাদে তোমাদিগকে বিনাশ করিতে সমর্থ হইয়াছে। হে দেবগণ! মন্দর-পর্ব্বতে গমন করিলে তপশ্চরণনিদান, দক্ষযজ্ঞবিনাশন, সৰ্ব্বভূতপতি, ভগনেত্রনিপাতন, ভগবান্ পিনাকপাণির সহিত সাক্ষাৎকার লাভ হয়, অতএব তোমরা অবিলম্বে তথায় গমন কর, তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ হইলেই বৃত্রাসুরকে পরাজয় করিতে পারিবে। তখন সুরগণ ব্রহ্মার পরামর্শানুসারে তাঁহার সহিত মন্দর-পর্ব্বতে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, তথায় কোটি সূর্য্যসঙ্কাশ তেজো রাশি ভগবান্ পিনাকপাণি বিরাজিত হইতেছেন। তিনি দেবগণকে সমাগত দেখিয়া স্বাগত প্রশ্ন করিয়া কহিলেন, হে সুরগণ! আমাকে তোমাদিগের কি কর্ম্ম সম্পাদন করিতে হইবে? আমার দর্শন অমোঘ। অতএব অবশ্যই তোমাদিগের অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে। সুরগণ মহেশ্বরের বাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন, হে দেব! দুরাত্মা বৃত্রাসুর আমাদিগের তেজক্ষয় করিয়াছে। এই দেখুন, আমাদিগের কলেবর তাহার প্রহারে জীর্ণ হইয়া গিয়াছে। যাহা হউক, এক্ষণে আমরা আপনার শরণাপন্ন হইলাম, আপনি আমাদিগকে রক্ষা করুন।” তখন মহাদেব কহিলেন, হে দেবগণ! মহাবল পরাক্রান্ত প্রাকৃত জনের দুর্নিবাৰ্য্য বৃত্রাসুর যে বিশ্বকর্ম্মার তেজ প্রভাবে সমুৎপন্ন হইয়াছে, ইহা তোমাদের অবিদিত নাই; যাহা হউক, দেবগণের সাহায্য করা আমার অবশ্য কর্ত্তব্য। অত এব হে ইন্দ্র! তুমি আমার গাত্ৰস্থিত এই ভাস্বর কবচ গ্রহণ করিয়া মনে মনে এই মন্ত্র পাঠ করিয়া ধারণ কর।”
বরদাতা মহাদেব এই বলিয়া ইন্দ্রকে বৰ্ম্ম ও বৰ্ম্মধারণ মন্ত্র প্রদান করিলেন। তখন দেবরাজ সেই বৰ্ম্ম পরিধান পূর্ব্বক বৃত্ৰ সৈন্যের অভিমুখীন হইলেন। বৃত্রাসুর তাঁহার উপর নানাবিধ অস্ত্র নিক্ষেপ করিতে লাগিল, কিন্তু কোন ক্রমেই তাঁহার সন্ধিস্থল ভেদ করিতে সমর্থ হইল না। কিয়ৎক্ষণ পরে দেবরাজ অবসর পাইয়া সেই সংগ্রামে বৃত্ৰকে শমনসদনে প্রেরণ করিলেন। হে দুৰ্য্যোধন! সুররাজ পুরন্দর বৃত্রাসুর-নিধনান্তর সেই হরদত্ত বৰ্ম্ম ও মন্ত্র অঙ্গিরাকে প্রদান করেন। তৎপরে অঙ্গিরা স্বীয় মন্ত্রবেত্তা পুত্র বৃহস্পতিকে ও বৃহস্পতি ধীমান অগ্নিবেশ্যকে ঐ মন্ত্র সমবেত বৰ্ম প্রদান করিয়াছিলেন; মহাত্মা অগ্নিবেশ্য উহা আমাকে প্রদান করিয়াছেন। হে নৃপসম! অদ্য তোমার দেহ রক্ষাৰ্থ সেই বৰ্ম্ম মন্ত্রপূত করিয়া তোমার গাত্রে বন্ধন করিতেছি।”
সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! আচার্য্যপুঙ্গব দ্রোণ দুর্য্যোধনকে এই কথা বলিয়া পুনরায় মৃদুস্বরে কহিলেন, হে পার্থিব? পূৰ্ব্ব কালে ব্রহ্মা সংগ্রাম সময়ে বিষ্ণুর শরীরে এবং তারকাময় যুদ্ধে ইন্দ্রের শরীরে যেমন দিব্য কবচ বন্ধন করিয়াছিলেন, সেই রূপ আজি আমি তোমার গাত্ৰে ব্ৰহ্মসূত্র দ্বারা কবচ বন্ধন করিয়া দিতেছি।” মহাত্মা দ্রোণাচার্য্য এই বলিয়া যথাবিধমন্ত্রপাঠ পূর্ব্বক দুৰ্য্যোধনের শরীরে কবচ বন্ধন করিয়া তাঁহাকে সেই ভয়াবহ যুদ্ধে প্রেরণ করিলেন। হে রাজন! মহাবাহু দুৰ্য্যোধন এইরূপে আচার্য্য কর্ত্তৃক বদ্ধ কবচ হইয়া ত্রিগর্ত্ত দেশীয় সহস্র রথ, বিপুল বলশালী সহস্র মত্ত মাতঙ্গ, নিযুত অশ্ব ও অন্যান্য মহারথগণ সমভিব্যাহারে নানাবিধ বাদিত্র বাদনপূর্ব্বক বিরোচন তনয় বলির ন্যায় মহাড়ম্বরে অর্জ্জুনের প্রতি ধাবমান হইলেন। এইরূপ দুৰ্য্যোধন অগাধ সমুদ্রের ন্যায় ধাবমান হইলে কৌরব সৈন্য মধ্যে মহা শব্দ সমুন্থিত হইল।