কাতরে কহেন রাম দেবী পদতলে।
আর্দ্রচিত্ত রোমাঞ্চিত ভাসে অশ্রুজলে।।
কৃতাঞ্জলি হয়ে রাম স্তুতিবাক্যে কয়।
হের গো নয়নে কালী মোর অসময়।।
পরাৎপরা সারাৎসারা বিপদ-ছেদিনী।
মহামায়ারূপে ত্রিজগৎ-আচ্ছাদিনী।।
তুমি কর্ম্ম, তুমি মূল কর্ম্মের কারণ।
তুমি স্মৃতি বৃত্তি দয়া লজ্জা নিরূপণ।।
সর্ব্বময়ী সর্ব্ব-আত্মা তুমি সর্ব্বশক্তি।
তোমাতে আশ্রিত জীব সংসারানুরক্তি।।
সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের কারণ গো তুমি।
সজীব অজীব ব্যাপ্তি স্বর্গ সুরভূমি।।
সকলি কর মা তুমি শুভাশুভ যত।
আপন সম্পদ ধর্ম্মাধর্ম্ম অনুগত।।
তুমি কর্ম্মাকর্ম্ম ভোগ মোক্ষ প্রদায়িনী।
স্ত্রী পুরুষ নপুংসক জীব-সহায়িনী।।
যোগমায়া-যোগে মোরে আনিলে ভূতলে।
বিড়ম্বনা করিয়া ভাসালে শোকজলে।।
চিন্তামণি নাম দিয়া চিন্তা সমর্পণ।
তুমি কর্ম্মে প্রযোজক প্রযোজ্য গণন।।
সর্ব্বভূতে সর্ব্বরূপে ভিন্ন কর দেহ।
তুমি শক্তি সর্ব্বধারা ছাড়া নহে কেহ।।
সংসার তোমার মায়া ছায়াবাজী প্রায়।
তোমার এ নাট্য-খেলা পুত্তলিকা প্রায়।।
কারে কর রাজা, কারে মন্ত্রী কর তার।
কেহ গজবাহী, কেহ গজ রক্ষাকার।।
কেহ দীর্ঘজীবী, কেহ অল্পদিনে পাত।
কারো শিরে ছত্র, কারো শিরে বজ্রাঘাত।।
কেহ যার শিবিকায়, কেহ তারে বয়।
কেহ সুখী মহাভোগী, কেহ কষ্টে রয়।।
কারো স্বর্ণপাত্রে অন্ন পঞ্চাশ ব্যঞ্জন।
কারো অন্ন নাহি মিলে, ভিক্ষায় ভক্ষণ।।
কেহ রোগী, রাগী কেহ হয় বলাম্বিত।
কেহ সাধু, চোর কেহ ধর্ম্মে ধর্ম্মাতীত।।
এইরূপে সংসারের কর মা স্থাপন।
আমারে করেছ মাত্র দুঃখের ভাজন।।
ত্রিভুবনে দুঃখ তাপে স্থাপিছ আমায়।
আর দুঃখ দিও না মা, নিবেদি তোমায়।।
সুখভাণ্ড অল্প হলো দুঃখ তাহে ভারি।
তথাপি রাখিছ দুঃখ পূর্ব্ব না বিচারি।।
নিষেধ করি গো তাই যদি ভেঙ্গে যায়।
এ দুঃখ রাখিতে স্থান পাইবে কোথায়।।
বলে অবসন্ন আমি, যা জান তা কর।
হইয়াছি অতিশয় জীর্ণ কলেবর।।