জিজ্ঞাসিল জন্মেজয় কহ মুনিবর।
তবে পুনঃ কি করিল পাঞ্চাল-ঈশ্বর।।
মুনি বলে, অবধান কর নৃপমণি।
পুনঃ পুনঃ রাজগণ বলে কটুবাণী।।
উপহাস করিবারে নৃপতি-মণ্ডলে।
মিথ্যা স্বয়ম্বর করি নিমন্ত্রি আনিলে।।
আমা সবা মধ্যে বিন্ধে নাহি হেন জন।
কহ বিন্ধিবারে তব যারে লয় মন।।
রাজগণ-বাক্য শুনি দ্রুপদ-কুমার।
ডাকিয়া বলিল তবে সভার ভিতর।।
ক্ষত্রকুলে আছহ সভাতে যত জন।
যে বিন্ধিবে তারে কৃষ্ণা করিবে বরণ।।
হৌক বা না হৌক রাজা না করি বিচার।
লভিবেক কৃষ্ণা, লক্ষ্য বিন্ধে শক্তি যার।।
পুনঃপুনঃ ধৃষ্টদ্যুন্ন সবাকার আগে।
এইমত বচন বলিল ক্ষত্রভাগে।।
তবে রাম দৃষ্টি করে কৃষ্ণের বদন।
ইঙ্গিতে বুঝিয়া তাঁরে বলে নারায়ণ।।
আমা সবাকার ইথে নাহি কিছু কাজ।
অকারণে সভায় উঠিয়া পাব লাজ।।
বলভদ্র বলে, তবে রহি কি কারণ।
ব্যর্থ স্বয়ম্বর কৈল পাঞ্চাল রাজন।।
নিমন্ত্রিয়া আনাইল একলক্ষ রাজা।
বিংশতি দিবস সবাকারে করে পূজা।।
কোন রাজা নোঙাইতে নারিল ধনুক।
তোমা হেন জন যাতে হইল বিমুখ।।
আর বা সংসার মধ্যে আছে কোনজন।
এ লক্ষ্য বিন্ধিয়া কন্যা করিবে গ্রহন।।
চল অকারণে আর কেন রহি ইথি।
পঞ্চদশ দিবস ছাড়িয়া দ্বারাবতী।।
গোবিন্দ বলেন, আজিকার দিন রহ।
লক্ষ্য বিন্ধিবারে দেহ কৌতুক দেখহ।।
যেই বিন্ধে ইতিমধ্যে নাহি কোন ব্যক্তি।
এই লক্ষ্য বিন্ধিবারে আছে কার শক্তি।।
পৃথিবীরে রাজা আছে ত্রৈলোক্য-মণ্ডলে।
ইন্দ্র যম কুবের প্রভৃতি দিক্পালে।।
এ লক্ষ্য বিন্ধিতে সবে একজন ক্ষম।
মনুষ্য-লোকেতে শ্রেষ্ঠ মহা-পরাক্রম।।
শুনিয়া বলেন রাম বিস্ময় বদন।
কহ কৃষ্ণ, এমত আছয়ে কোন্ জন।।
তিনলোক বীর তার নাহিক সমান।
নরে শ্রেষ্ঠ তোমা বিনা কেবা আছে আন।।
তোমা আমা হৈতে শ্রেষ্ঠ আছে যে মনুষ্য।
আশ্চর্য্য শুনিয়া মোর চিত্তে জাগে হাস্য।।
অবর্ণিত রূপ কৃষ্ণা লক্ষ্মী-স্বরূপিণী।
সম্পূর্ণ চন্দ্রমা মুখ, জাতিতে পদ্মিনী।।
এ কন্যা লভিবে যেই পুরুষ উত্তম।
কহ কৃষ্ণ তোমা হৈতে অন্য কেবা ক্ষম।।
গোবিন্দ বলেন, দেব কর অবধান।
এ লক্ষ্য বিন্ধিতে পার্থ বিনা নাহি আন।।
ইন্দ্রের নন্দন সেই পাণ্ডব মধ্যম।
লক্ষ্য বিন্ধিবারে মাত্র সেই জন ক্ষম।।
রাম বলিলেন, শুনি গোবিন্দের কথা।
তবে কৃষ্ণ কি হেতু রহিবে আর হেথা।।
এ তিন লোকের মধ্যে কেহ না পারিল।
যে পারিবে দ্বাদশ বৎসর সে মরিল।।
আশ্চর্য্য লাগিল মম শুনি তব ভাষ।
অনুমানে বুঝি কৃষ্ণ করি উপহাস।।
অগ্নিমধ্যে পুড়িল যে পাণ্ডুর নন্দন।
তাহা বিনা লক্ষ্য বিন্ধে নাহি হেন জন।।
তবে কে বিন্ধিবে লক্ষ্য কহ নারায়ণ।
কি হেতু রহিতে বল, না বুঝি কারণ।।
কৃষ্ণ বলে, পাণ্ডুপুত্র পুড়ি নাহি মরে।
মহাবীর্য্যবন্ত তারা, অবধ্য সংসারে।।
দেব হৈতে হৈল পঞ্চ কুন্তীর কুমার।
ভূমিভার নিবারিতে জন্ম সবাকার।।
তা সবা মারিতে পার কাহার শকতি।
কতকালে গুপ্তে কাটাইল যথি তথি।।
এই সভা মধ্যেতে আছয়ে পঞ্চজন।
শুনিয়া বিস্ময় হৈল রোহিণী-নন্দন।।
রাম বলিলেন, কহ অদ্ভুত কথন।
শুনিয়া আর্শ্চয্যযুক্ত হৈল মম মন।।
অগ্নিতে মরিল পুড়ি, বিখ্যাত ভুবনে।
এতকাল কোন্ দেশে বঞ্চিল গোপনে।।
কোন্ বেশে, কোন্ খানে আছে পঞ্চজন।
পার্থ লক্ষ্য বিন্ধিতে না উঠে কি কারণ।।
এত শুনি বলিতে লাগিল যদুবীর।
হের দেখ দ্বিজ-সভা মধ্যে যুধিষ্ঠির।।
এক্ষণে কেমনে বা উঠিবে ধনঞ্জয়।
লক্ষ্য বিন্ধিবারে তারে কেহ নাহি কয়।।
যখন ব্রাহ্মণগণে দ্রুপদ বলিবে।
লক্ষ্য বিন্ধিবারে পার্থ তখনি উঠিবে।।
শুনিয়া চাহেন রাম যুধিষ্ঠির-পানে।
পিঙ্গল মলিন বস্ত্র বিরস-বদনে।।
তৈল বিনা তাম্রবর্ণ লোমাবলি চুলি।
মাথে তাল-পত্র-ছত্র, স্কন্ধে ভিক্ষা-ঝুলি।।
রাম বলিলেন, কৃষ্ণ কর অবধান।
ধর্ম্মশ্রেষ্ঠ যুধিষ্ঠির লোকেতে বাখান।।
তবে কেন হেন গতি দেখি যুধিষ্ঠিরে।
অনাহারে মহাক্লিষ্ট দুঃখিত অন্তরে।।
রাজা দুর্য্যোধন দেখি অতুল বৈভব।
সভায় বসিয়াছেন দ্বিতীয় বাসব।।
গোবিন্দ বলেন, অবধান মহাশয়।
পাপাত্মা সে দুর্য্যোধন, জানিহ নিশ্চয়।।
পাপেতে পাপীর ধন বৃদ্ধি হয় নিতি।
পশ্চাতে হইবে সবমূলেতে বিনশ্যতি।।
কালেতে অবশ্য জয় লাভে ধর্ম্মিজন।
দুঃখসুখ কত কাল দৈবের লিখন।।
কৃষ্ণের এতেক বাক্য শুনি যদুগণ।
সবাই ত্যজিল লক্ষ্য-বিন্ধিবার মন।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।