একনবতিতম অধ্যায়
চারি প্রকার আশ্রমধর্ম্মবর্ণন
অষ্টক কহিলেন, “মহারাজ! ব্রহ্মচারী, গৃহী, বানপ্রস্থ ও ভিক্ষু্ ইঁহারা কিরূপ আচরন করিলে সৎপথে থাকিয়া ধর্ম্মোপার্জ্জন করিতে পারেন, এই বিষয়ে নানাপ্রকার প্রবাদ আছে। আপনার মত কি?” যযাতি কহিলেন, “ব্রহ্মচারীর ধর্ম্ম এই যে, অধ্যাপনাদি গুরুকার্য্যের নিমিত্ত কদাচ গুরুকে প্রেরণা করিবেন না; গুরু যখন তাঁহাকে আহ্বান করিবেন, তখন অধ্যয়ন করিবেন; গুরুর শয়নের পর শয়ন ও গাত্রোত্থানের পূর্ব্বে গাত্রোত্থান করিবেন এবং মৃদু, দান্ত, সন্তুষ্ট-স্বভাব, অপ্রমত্ত ও বেদাধ্যয়নে নিরত থাকিবেন। গৃহস্থের ধর্ম্ম এই যে, ধর্ম্মতঃ ধনোপার্জ্জন করিয়া তদ্দ্বারা যাগদানাদি ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন করিবেন, অতিথিভোজন করাইবেন এবং অদত্ত বস্তু প্রতিগ্রহ করিবেন না। বানপ্রস্থের কর্ত্তব্য এই যে, স্বকীয় বীর্য্য উপজীব্য করিয়া জীবনধারণ করিবেন, কোনরূপ পাপকর্ম্মে আসক্ত হইবেন না; পরকে দান করিবেন; কাহাকেও কষ্টদান করিবেন না। ভিক্ষুক কর্ত্তব্য এই যে, শিল্পকর্ম্ম দ্বারা জীবিকানির্ব্বাহ করিবেন না; গুণবান্, জিতেন্দ্রিয়, বিষয়বাসনা হইতে বিরক্ত ও বৃক্ষমূলশায়ী হইবেন এবং অধিক দেশ পর্য্যটন করিবেন না। লোকে নিদ্রায় অভিভূত ও কামপরতন্ত্র হইয়া যে রজনী সুখে অতিবাহিত করে, জ্ঞানী ব্যক্তি সংযতচিত্তে অরণ্যে বাস করিয়া সেই রজনী যাপন করিবেন। যিনি এইরূপে অরণ্যবাস করিয়া তথায় কলেবর পরিত্যাগ করেন, তিনি পূর্ব্ব দশ পুরুষ,পশ্চাৎ দশ পুরুষ এবং আপনাকে-এই একবিংশতি পুরুষকে পরিত্রাণ করেন।”
মুনিলক্ষণ
অষ্টক কহিলেন, “মহারাজ! মুনি ও মৌনব্রতী কয় প্রকার, বলুন, শুনিতে আমাদিগের সাতিশয় বাসনা হইতেছে।” রাজা কহিলেন, “হে অষ্টক! যিনি পৃষ্ঠভাগে গ্রাম রাখিয়া কিংবা পৃষ্ঠভাগে অরণ্য রাখিয়া গ্রামে বাস করেন তাঁহাকেই মুনি বলা যায়।”
অষ্টক কহিলেন, “মহারাজ! যিনি অরণ্যে বাস করেন, তাঁহার পশ্চাদ্ভাগে অরণ্য থাকে, সে কি প্রকার?” রাজা কহিলেন, “যিনি অরণ্যে বাস করিয়া গ্রাম্য ফলমূলাদি ভক্ষণ করেন না, তাঁহার পশ্চাদ্ভাগে গ্রাম; আর যিনি গ্রামে বাস করিয়া অগ্নিহোত্রী নহেন, বাসস্থান নির্দিষ্ট নাই, অগোত্রচারী ও কৌপীনধারী এবং যতদিন প্রাণসংযোগ, ততদিন অন্নপানেচ্ছা, তাঁহারই পশ্চাদ্ভাগে অরণ্য। আর যিনি সর্ব্ববাসনাপরিশূন্য হইয়া সর্ব্বকর্ম্ম বিসর্জ্জন ও ইন্দ্রিয় দমনপূর্ব্বক মৌনাবলম্বন করিয়া থাকেন, তাঁহাকে মৌনব্রতী কহে; মৌনব্রতী সর্ব্বসিদ্ধিলাভ করিতে পারেন। ধৌতদন্ত, ছিন্ননখ, স্নাত, অলঙ্কৃত, অসিতকলেবর শুভকর্ম্মা মুনি সকলের অর্চ্চনীয়। যিনি তপস্যা দ্বারা কর্ষিত, ক্ষীণ, শীর্ণ-কলেবর, জীর্ণ-মাংস ও শুষ্কাস্থি হয়েন, সেই মুনি ইহলোক জয় করিয়া পরলোকও জয় করেন। আর যিনি নির্দ্বন্দ্ব হইয়া মৌনব্রতাবলম্বনপূর্ব্বক তপশ্চরণ করেন, তিনি ইহলোক জয় করিয়া পরলোক জয় করেন। যে মুনি মুখ দ্বারা গোবৎ৪ আহার অন্বেষণ করেন, ইহলোক ও পরলোক উভয়ই তাঁহার প্রীতিকর হইয়া উঠে।”