০৮. হেড মাস্টার হাফিজুল কবির

হেড মাস্টার হাফিজুল কবির সাহেব আজ একটু ব্যস্ত। ব্যস্ততার নানাবিধ কারণের একটি হচ্ছে নেত্রকোনা থেকে সিও রেভিন্যু এসেছেন গম চুরির তদন্তে। ভদ্রলোকের বয়স অল্প। নিতান্তই চেংড়া ধরনের। অল্পবয়স্ক অফিসাররা ঠাণ্ডা মাথায় কিছু ভাবে না। দশজনের কথা শুনতে চায় না। হুঁট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। গরম গরম কথা বলে। মানী লোকের মান রাখতে জানে না।

হাফিজুল কবির সাহেব যত্নের চূড়ান্ত করছেন। সিও সাহেব স্কুলে পা দেয়ার পরপরই তাকে দৈ মিষ্টি দেয়া হয়েছে। চায়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। কালিপদ স্কুলের বারান্দায় কেরোসিন কুকারে চা বসিয়ে দিয়েছে। হাফিজুল কবির সাহেব এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট এনে সিও সাহেবের সামনে রেখেছেন। তিনি প্যাকেট খুলে একটা সিগাবেটি ধরিয়েছেন। এটা আশার কথা। যদি বলতেন–সিগারেট কেন? তাহলে চিন্তার ব্যাপার হতো।

সিও সাহেব বললেন, গম চুরির ব্যাপারে আপনারা নিজেরা কোনো তদন্ত করেছেন?

হেড মাস্টার সাহেব বললেন, জি না স্যার।

করেন নি কেন?

তদন্ত কমিটি কবা হয়েছে কিন্তু কমিটির বৈঠক বসে নি।

বৈঠক বসল না কেন?

সেটা স্যার আমি বলতে পারি না। আমি কমিটিতে নেই।

মবিন সাহেবকে কি আপনি সরাসরি জিজ্ঞেস করেছেন?

কী জিজ্ঞেস করব? আমি কিছু জিজ্ঞেস করি নি।

গম চুরির বিষয়ে তাঁর কী বলাব আছে তা জানতে চেয়েছেন?

জি-না।

জিজ্ঞেস করেন নি কেন? মানী লোক।

জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগল।

ডাকুন, উনাকে ডাকুন। আমি জিজ্ঞেস করি…

উনি স্যার স্কুলে আসেন নি। কয়েকদিন ধরেই আসছেন না।

আই সি!

লজাতেই বোধহয় আসতে পারছেন না।

চুরি করবার সময় মনে ছিল না, এখন লজ্জায় মরে যাচ্ছেন। শুনুন হেড মাস্টার সাহেব, অ্যাডমিনিষ্ট্রেশান খুব সিরিয়াসলি ব্যাপারটা নিয়েছে। আপনি জানেন কি-না জানি না। জাতীয় দৈনিকে চিঠি ছাপা হয়েছে।

বলেন কী স্যার!

হেড মাস্টার সাহেব বিস্মিত হবার ভঙ্গি করলেন। চিঠি ছাপার ব্যাপারটা তিনি খুব ভালোমতো জানেন। চিঠি তারই লেখা। নেত্রকোনা গিয়ে নিজের হাতে পোস্ট করেছেন। সব কটা দৈনিকে চিঠি দিয়েছিলেন। শুধু একটাতে ছাপা হয়েছে। হেড মাস্টার সাহেব বললেন, চিঠিতে কী লেখা সারা?

সিও সাহেব ব্রিফ কেইস থেকে খবরের কাগজ বের করে এগিয়ে দিলেন। বিরস মুখে বললেন, কাগজটা আপনার কাছে রেখে দিন। হেড মাস্টার সাহেব অনেকবার পড়া চিঠি আবারো পড়লেন–

সরিষায় ভূত

নেত্রকোনা নীলগঞ্জ হাই স্কুলে সম্প্রতি গম চুরির এক কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটিয়াছে। উক্ত স্কুলের জনৈক প্ৰবীণ শিক্ষক স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত ১০০ বস্তা গমের মধ্যে ৯০ বস্তা গায়েব করিয়া দেন। এই ঘট বা অত্র অঞ্চলে তমুল আলোড়ন সৃষ্টি করিযাছে। যাহাদের হাতে শিশু-কিশোরদের নীতি শিক্ষাব দায়িত্ব ন্যস্ত তাহারা যদি চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হন তাহা হইলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী। জনগণের মনে আজ এই প্রশ্ন আলোড়িত হইতেছে।

জনৈক অভিভাবক
নীলগঞ্জ হাই স্কুল

হেড মাস্টার সাহেব শুকনো মুখে বললেন, পত্রিকায় খবর কে দিল?

সিও সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন, পত্রিকায় খবং কে দিল এটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ কী? আমরা অ্যাকশন কী নিয়েছি সেটা হলো কথা। ক্রিমিন্যাল কেইস করা হয়েছে?

জি-না স্যার। শুধু জিডি এন্ট্রি করেছি। কেইস করে দিন। মিস এপ্ৰোপ্রিয়েশন অব পাবলিক ফান্ড। সেটা কি স্যার ঠিক হবে?

অবশ্যই ঠিক হবে। এই সঙ্গে সাসপেনশন অর্ডার দিয়ে দিন।

সাসপেনশন?

হ্যাঁ।

স্কুলে স্যার ও-রকম ব্যবস্থা নেই।

ব্যবস্থা নেই, ব্যবস্থা করুন। স্কুলে গভর্নিং বডির মিটিং দিন। মিটিং-এ ডিসকাস করুন।

আপনি বললে অবশ্যই করব।

মনে রাখবেন, বর্তমান সরকার এ-জাতীয় কেলেংকারি সহ্য করবে না। দুনীতিমুক্ত সমাজ আমাদেরই তৈরি করতে হবে। পত্র-পত্রিকায় চিঠি ছাপা হয়ে গেছে। জনমত তৈরি হয়ে গেছে। আর অবহেলা করা যায় না।

তা তো বটেই স্যার।

গভর্নিং বডির মিটিং ডাকুন। আজই ডাকুন।

জি আচ্ছা স্যার।

 

গভর্নিং বডির মিটিং-এ পত্রিকায় ছাপা চিঠি পড়া হলো। হেড মাস্টার সাহেব সিও বেভিনিউ সাহেব যা যা বলে গিয়েছেন সব আবারো বললেন এবং দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কী করি কিছুই বুঝতে পারছি না। প্রাইভেট স্কুল হলেও সরকারি চাপ অগ্রাহ্য করা সম্ভব না। আমরা গভর্নমেন্ট ডিএ নেই। ডিএ বন্ধ হয়ে গেলে স্কুল উঠিয়ে দিতে হবে। গভর্নিং বডির একজন মেম্বাব হলেন রূপার বাবা আফজাল সাহেব। তিনি বললেন, পুরো ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য। মবিনুর রহমান এই কাজ করতে পাবেন না। কোথাও ভুল হয়েছে। অবশ্যই ভুল হয়েছে।

হেড মাস্টার সাহেব বললেন, ভুল হবার কোনো ব্যাপার না। মবিন সাহেব সিগনেচার করে গম নিয়েছেন।

আত্মভোলা মানুষ। তাকে প্যাঁচে ফেলে আটকানো হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না।

গমের দায়িত্ব তাহলে কে নিবে?

ঘণ্টাখানিক আলাপ-আলোচনা কবেও কোনো সিদ্ধান্তে আসা গেল না। আফজাল সাহেব মন খারাপ করে ঘরে ফিরলেন। মবিনুর রহমানকে তিনি অত্যন্ত পছন্দ করেন। তিনি বুঝতে পারছেন মবিনুর রহমান কোনো-একটা চক্রান্তে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁর ক্ষীণ সন্দেহ হচ্ছে এই চক্রান্তে হেড মাস্টার সাহেবের একটা ভূমিকা আছে। কিন্তু কী ভূমিকা তা ধরতে পারছেন না। মবিনুব রহমানের সঙ্গে হেড মাস্টােব সাহেবেব কোনো শক্ৰতা থাকার কথা নয়। একদল মানুষ আছে যাদেব কখনো কোনো শত্রু তৈরি হয় না। মবিনুর রহমান সেই দলের মানুষ। কিন্তু এখানে তিনি কী করে ঝামেলায় জড়িয়ে গেলেন? এই ঝামেলা থেকে মুক্তিব উপাযই বা কী?

আফজাল সাহেবের মন-খারাপ ভাব বাসায় এসে কেটে গেল। কী কারণে মন খারাপ তাও পর্যন্ত মনে রইল না। তার মেজো ছেলে জহির এসেছে চিটাগাং থেকে। সঙ্গে তার বন্ধু তানভির। রাজপুত্রের মতো ছেলে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখতে হয়। ছেলের সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বলেই তার মনে হলো যে ভাবেই হোক এই ছেলের সঙ্গে রূপার বিয়ে দিতে হবে। একে কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। তিনি ঘাটে লোক পাঠালেন ভালো মাছের জন্যে। যাকে পাঠালেন তার উপর ঠিক ভরসা করতে পারলেন না। নিজেই খানিকক্ষণ পর রওনা হলেন। তানভির বলল, চাচা। আপনি যাচ্ছেন কোথায়?

মাছের জন্যে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে ঘাটে খুব ভালো মাছ পাওয়া যায়।

চাচা, আমি কি আপনার সঙ্গে যেতে পারি?

যেতে চাও?

অবশ্যই যেতে চাই।

রাস্তায় কিন্তু খুব কাদা।

তানভির হাসতে হাসতে বলল, আমি খালি পায়ে যাব।

ঘাট থেকে সবচে বড় চিতল মাছটি কেনা হলো; আফজাল সাহেব মাছের দাম

দিতে পারলেন না। তানভির দাম দিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে রাতে খাবার সময় তানভির বলল, আমি তো চিতল মাছ খাই না।

আফজাল সাহেব হতভম্ব হয়ে বললেন সে কী। চিতল মাছ খাও না তাহলে কিনলে কেন? ঘাটে আরো তো মাছ ছিল!

তানভির হাসতে হাসতে বলল, আমার পরিকল্পনা ছিল সবচে বড় মাছটি কিনিব। তাই কিনেছি। কিনেছি বললেই যে খেতে হবে সে রকম তো কোনো আইন নেই।

তানভিব হচ্ছে সেই ধরনের মানুষ যারা আশেপাশের সবাইকে মন্ত্ৰমুগ্ধ করে রাখতে পছন্দ করে। এবং অতি সহজেই তা পারে। রাত দশটায় সে ঘোষণা করল–ম্যাজিক দেখানো হবে। বাচ্চারা যারা এখনো ঘুমাও নি চলে এসো। বাচ্চা বলতে জেবা এবং রুবাবা। রুবালা ঘুমিয়ে পড়েছে। জেবা জেগে আছে। তবে সে কঠিন মুখে বলল, ম্যাজিক আমার ভালো লাগে না। আমি দেখব না। রূপাও বলল, তার প্রচণ্ড মাথা ধরেছে, সে কিছু দেখবে না।

মিনু বলল, পাগলামি করো না তো রূপা। এসো। এমন চমৎকার একটা ছেলে আর তুমি মুখ শুকনো করে আছ? কী কাণ্ড! শাড়ি বদলে একটা ভালো শাড়ি পর।

রূপা বলল, বেনাবসি পরব?

বেনারসি তো পরবেই। কয়েকটা দিন পর। আপাতত সুন্দর একটা শাড়ি পাব। নীল সিস্কের শাড়িটা পর।

নিজেকে সুন্দর কবে সাজিয়ে দেখতে যাব?

সাজা তো অপরাধ না।

আমার ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া ভাবি বিশ্বাস কর, আমার প্রচণ্ড মাথা ধরেছে।

এসে তো তুমি। আমাদের তরুণ মাজিসিয়ান সাহেব তোমার মাথা ধরা সারিয়ে দেবেন। আর যদি সারাতে না পারেন তাহলে আমার কাছে অ্যাসপিরিন আছে।

গ্ৰহরা যেমন নক্ষত্ৰকে ঘিরে রাখে তানভিরকে তেমনি সবাই ঘিরে আছে। আসরের মধ্যমণি হয়ে সে বসে আছে নক্ষত্রের মতোই। তার সামনে একটা খবরের কাগজ। এই কাগজ দিয়েই ম্যাজিক দেখানো হবে। আপাতত গল্প-গুজব হচ্ছে। কথক তানভির একা। বাকি সবাই মুগ্ধ শ্রোতা। রূপা শাড়ি বদলেছে। চুল বেঁধেছে। মিনু খুব হালকা করে রূপার চোখে কাজলও দিয়েছে। তার প্রয়োজন ছিল না। রূপাকে এমনিতেই ইন্দ্রাণীর মতো দেখায়।

তানভিরের গল্প বলার কৌশল চমৎকার। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যাচ্ছে। এত সহজে যে মাঝে মাঝে মনে হয় সব গল্প বোধহয় সাজানো। নম্বর দেয়া আছে কোন গল্পের পর কোনটি বলা হবে। সে রূপার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘদিনের চেনা মানুষের মতো বলল, রূপা তুমি কি মোনালিসার ছবি দেখেছ?

রূপা হকচকিয়ে গেল। নিতান্ত অপরিচিত একজন মানুষ পরিচিতের ভঙ্গিতে কথা বললে হকচকিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

দেখেছ মোনালিসার বিখ্যাত ছবি?

জি।

অরিজিনাল নিশ্চয়ই দেখ নি–রিপ্ৰডাকশান দেখেছি। দেখারই কথা। পৃথিবীর অন্য কোনো ছবি এত খ্যাতি পায় নি। এত লক্ষ কোটি বার অন্য কোনো ছবির রিপ্রডাকশনও হয় নি। বলা যেতে পারে মোনালিসা হচ্ছে এই পৃথিবীর সবচে খ্যাতনামা মহিলা। অফকোর্স ছবির মহিলা। এখন বলো দেখি এই মহিলার বিশেষত্ব কী?

চোখ।

উঁহু, চোখ না। যদিও সবাই চোখ চোখ বলে মাতামাতি করে। তবু আমার মনে হয়। অন্য কিছু। কী তা-কি জানো?

না।

মোনালিসার ভুরু নেই। এই জগদ্বিখ্যাত মহিলার জগদ্বিখ্যাত চোখের ভুরু নেই। কী, ব্যাপারটা অদ্ভুত না?

রূপা কিছু না বললেও মনে মনে স্বীকার করল ব্যাপারটা অদ্ভুত। তানভির হাসতে হাসতে বলল, আমার কথা বোধহয় ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। আচ্ছা, আমি হাতে-নাতে প্রমাণ করে দিচ্ছি। আমার মানিব্যাগে মোনালিসাব পাসপোর্ট সাইজের একটা ছবি আছে।

তানভির মানিব্যাগ থেকে ছবি বের করল। ছবি সবার হাতে হাতে ফিরছে। সবাই চোখ কপালে তুলে বলেছে–তাই তো! তাই তো। রূপাব একটু মন খারাপ লাগছে। কারণ তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে এই মানুষটির প্রতিটি গল্প সাজানো। সাজানো বলেই মানিব্যাগে মোনালিসার ছবি রেখে দেয়া।

আচ্ছা, এখন শুরু হবে ম্যাজিকের খেলা। এখানে একটা খবরের কাগজ আছে। সবার সামনে কাগজ কেটে আমি দুখণ্ড করব, তারপর জোড়া দেব।

জহির বলল, আমি কাটতে পারি? না-কি ম্যাজিসিয়ানকেই কাটতে হবে?

যে কেউ কাটতে পারবে।

মিনু বলল, রূপা কাটুক, রূপা।

রূপা কাগজ কাটল। কাটা কাগজ রুমাল দিযে। ঢাকা হলো। রূপা ভেবেছিল রুমাল উঠাবার পর দেখা যাবে কাগজ জোড়া লেগেছে। রুমাল উঠাবার পর দেখা গোল কাগজের টুকরোগুলো নেই। সেখানে সুন্দর একটা কাগজের ফুল। সোবাহান সাহেবের মতো মানুষও চেচিয়ে বললেন, অপূর্ব, অপূর্ব অপুর্ব!

আসর ভাঙল রাত বারোটায়। রূপা ঘুমোতে গিয়ে দেখল জেবা এখনো জেগে।

মশারি ফেলে মশারির ভেতর চুপচাপ বসে আছে। রূপা বিক্ষিত হয়ে বলল, এখনো জেগে?

হুঁ।

কেন?

ঘুম আসছে না?

না।

রূপা হালকা গলায় বলল, আমরা সুন্দর ম্যাজিক দেখলাম। তুমি আমাদের সঙ্গে থাকলে তোমারও ভালো লাগত। এসো এখন ঘুমানো যাক। ঘুমানোর আগে কি পানি খাবে? বাথরুমে যাবে?

না।

বাতি নিভিয়ে রূপা মশারির ভেতর ঢুকতেই জেবা বলল, ফুপু ঐ লোকটা তোমাকে পছন্দ করেছে। খুব বেশি পছন্দ করেছে। এখন সবাই মিলে ঐ লোকটার সঙ্গে তোমার বিয়ে দিয়ে দেবে।

রূপা হালকা গলায় বলল, দিলে দিবে। কী আর করা।

জেবা রূপার কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলল, এখন থেকে এই বাড়িতে দুটা দল হলো। ঐ লোকটাব একটা দল। সবাই সেই দলে। আর তোমার একার একটা দল। তোমাল দলে শুধু আছি আমি একা।

রূপা বলল, কী সব অদ্ভুত কথা যে তুমি বলো। এখন ঘুমাও তো।

জেলা বলল, আমি মোটেও অদ্ভুত কথা বলছি না। আমি যে অদ্ভুত কথা বলছি না তুমি তাও জানো। খুব ভালো করে জানো।

কাঁপা বলল, ঘুমাও তো জোরা। প্লিজ ঘুমানোর চেষ্টা করি!

আচ্ছা।

জেবা পাশ ফিরল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ল। রূপা ঘুমোতে পারল না। রাত জাগা তার অভ্যাস হয়ে ছে? জেগে থাকতে খারাপও লাগছে না। তক্ষক ডাকছে। গভীর বাতে তক্ষকগুলি অন্যািরকম কবে ডাকে। দিনে তাদের ডাক এক রকম, বাতে অন্য রকম। স্যারকে একবার জিজ্ঞেস করতে হবে। উনি নিশ্চয়ই চমৎকার কোনো ব্যাখ্যা দেবেন। স্যারকে একটা ধাঁধাও জিজ্ঞেস কবিতে হবে। তব্দে ধাঁধা জিজ্ঞেস করলে উনি খানিকটা হকচকিয়ে যান এবং এমন অস্থিবি বোধ করেন যে রূপারই খারাপ লাগে। একবার সে স্যারকে জিজ্ঞেস করল, স্যার বলুন তো এটা কী–আমবাগানে টুপ করে শব্দ হলো। একটা পাকা আম গাছ থেকে পড়েছে।

যে দুজন শুনল সে দুজন গেল না।
অন্য দুজন গেল।।
যে দুজন গেল সে দুজন দেখল না।
অন্য দুজন দেখল।।
যে দুজন দেখল সে দুজন তুলল না।
অন্য দুজন তুলল।।
যে দুজন তুলল সে দুজন খেল না।
অন্য দুজন খেল।।

স্যার এখন বলুন ব্যাপারটা কী? তিনি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। করুণ গলায় বললেন–ব্যাপারটা তো মনে হচ্ছে খুব জটিল।

মোটেই জটিল না স্যার। অত্যন্ত সহজ।

তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, জটিল জিনিসের ব্যাখ্যা খুব সহজ হয়। সহজ জিনিসের ব্যাখ্যাই জটিল।

রূপার মনে হলো স্যারের কথাটা তো খুব সত্যি। ভালোবাসা ব্যাপারটা অত্যন্ত সহজ কিন্তু ব্যাখ্যা কি অসম্ভব জটিল না?

তক্ষক ডাকছে। জেগে আছে রূপা। আজ রাতটাও মনে হচ্ছে তাকে জেগেই কাটাতে হবে।