সকালবেলার খাবারও বেশ লোভনীয়। হাতে-গড়া রুটি, কলা, ডিম সেদ্ধ আর কফি।
হাত-মুখ ধুয়ে, সেসব খেয়ে তিনজনেই বাইরে এসে দাঁড়াল, কাছাকাছি কোনও পাহারাদার নেই।
এবার জায়গাটা ভাল করে দেখা গেল।
চারপাশে বড় বড় গাছের ঘন জঙ্গল, মাঝখানে খানিকটা ফাঁকা জায়গা। যেঘরটায় কাকাবাবুরা রাত কাটালেন, সেরকম আরও কয়েকটা ঘর রয়েছে এদিকেওদিকে। দেখলেই বোঝা যায়, ঘরগুলো সব নতুন বানানো হয়েছে। বেশ কিছু বড় বড় গাছ কাটা হয়েছে, মাটিতে ছড়ানো রয়েছে গাছের গুঁড়ি। একটু দূরেও গাছ কাটার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
কয়েকজন লোককেও দেখা গেল মাটিতে পড়ে থাকা গাছগুলোর ডাল-পাতা ছাঁটার কাজে ব্যস্ত, তারা কেউ কাকাবাবুদের দিকে ভ্রুক্ষেপও করল না।
এক জায়গায় একটা উনুন জ্বলছে, সেখানে কিছু রান্না করছে দুটি মেয়ে। মনে হয় যেন, একদল যাযাবর অস্থায়ী আস্তানা গেড়েছে এই জঙ্গলে।
সন্তু জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, আমরা এই জঙ্গলের মধ্যে একটু ঘুরে দেখে আসব?
কাকাবাবু বললেন, যা, না। আস্তে আস্তে হাঁটবি। কেউ বারণ করলে ফিরে আসবি। আমাদের এখানে কেন নিয়ে এল, তাও তো বোঝা যাচ্ছে না।
সন্তু আর জোজো জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। কাকাবাবু ক্রাচদুটো নামিয়ে রেখে খানিকক্ষণ ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করলেন। মাটিতে শুয়ে পড়ে কোমর বেঁকিয়ে উঠতে গিয়ে দেখলেন পাশে একটা ছায়া পড়েছে। একজন লোক এসে দাঁড়িয়েছে।
লোকটির সারা মুখে দাড়ি, মাথায় জটলা চুল। খালি গা, কিন্তু প্যান্ট পরা, কোমরের বেল্টে রিভলভার, সে কাকাবাবুকে তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য ইঙ্গিত করল।
কাকাবাবু বিনা বাক্যব্যয়ে অনুসরণ করলেন তাকে। জঙ্গলের আর-একদিকে কিছুটা ঢুকে দেখা গেল, দুটো বড় গাছের মধ্যে একটা দোলনা টাঙানো হয়েছে। সেই দোলনায় শুয়ে আছে লাল আলখাল্লা পরা সেই বিশাল চেহারার লোকটি, গড়গড়ার নল মুখে দিয়ে তামাক টানছে। তার পাশেই
একটা মোড়ায় বসে আছে একজন ছোট্টখাট্টো মানুষ, মাথা ভর্তি টাক।
অন্য লোকটি কাকাবাবুকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল।
কাকাবাবু লাল আলখাল্লা পরা লোকটির দিকে চেয়ে ইংরেজিতে বললেন, নমস্কার। আপনার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ। আপনার নামটি এখনও জানা হয়নি। আমার নাম কালকেই বলেছি, রাজা রায়চৌধুরী।
সেই লোকটি কাকাবাবুর কথার কোনও উত্তর না দিয়ে তেলুগু ভাষায় বেঁটে লোকটিকে কিছু বলল।
বেঁটে লোকটি চোস্ত ইংরেজিতে বলল, মিস্টার রায়চৌধুরী, আমাদের লিডার ইংরেজি জানেন না। আপনার যা বলবার আমাকে বলুন। আপনি কি এঁকে চেনেন?
কাকাবাবু বললেন, না, এঁর সঙ্গে আমার আগে দেখা বা পরিচয়ের সৌভাগ্য হয়নি।
বেঁটে লোকটি জিজ্ঞেস করল, আপনি বিক্রম ওসমানের নাম শোনেননি?
কাকাবাবু চমকে গিয়ে বললেন, বিক্রম ওসমান? হ্যাঁ, এ নাম অবশ্যই শুনেছি। মানে, চন্দনদস্যু বিক্রম ওসমান?
লোকটি বলল, দস্যু বলছেন কেন? খবরের কাগজের লোকরা মিথ্যেমিথ্যি দস্যু বলে লেখে। আমরা ব্যবসায়ী। চন্দন কাঠের ব্যবসা করি।
কাকাবাবু বললেন, তার মানে এই যে গাছগুলো কাটা রয়েছে, এগুলো চন্দন গাছ? এটা চন্দনের বন?
লোকটি বলল, সব নয়। তবে এই বনে অনেক চন্দনগাছ আছে, তা ঠিক। বিক্রম ওসমান গম্ভীর গলায় বেঁটে লোকটিকে কিছু একটা আদেশ দিল।
সে বলল, হ্যাঁ, এবারে কাজের কথা হোক। আমার নাম ভুড়ু। আমি পুরো নাম কাউকে জানাই না। আমি ওসমান সাহেবের সেক্রেটারির কাজ করি। শুনুন মিস্টার রায়চৌধুরী, আপনার সঙ্গে আমাদের কোনও শত্রুতা নেই। আপনারা এখানে ভালভাবে থাকবেন, খাবেন, কাছাকাছি বেড়াতেও পারেন। আপনাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে নিছক ব্যবসায়িক কারণে। আপনাকে একটা চিঠি লিখতে হবে।
কাকাবাবু বললেন, চিঠি? কার কাছে?
এই সময় একটি পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের তরুণী ছুটতে ছুটতে সেখানে এল। সে পরে আছে একটা রঙিন ঘাঘরা আর কাঁচুলি, মুখোনি বেশ সুন্দর।
সে উর্দু ভাষায় বলল, আস্সালামু আলাইকুম সর্দার। আপ্পা রাওকে তুমি বারণ করো। সে আমার কোনও কথা শোনে না।
ওসমান জিজ্ঞেস করল, আপ্পা রাও আবার কী করেছে?
মেয়েটি বলল, এই বাবুটির সঙ্গে যে ছেলে দুটি এসেছে, আপ্পা রাও তাদের
ধরে বেঁধে রেখেছে। আমি বললাম, ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও, তো সে আমাকে ধমকে বলল, তুমি বলার কে?
কাকাবাবু উর্দু ভাষা বেশ ভালই জানেন, সব বুঝতে পারছেন, তিনি বললেন, ছেলে দুটিকে বেঁধে রাখবে কেন? ওরা তো পালাবার চেষ্টা করেনি।
ভুড়ু বলল, আপনি কী করে বুঝলেন, ওরা পালাবার চেষ্টা করেনি?
কাকাবাবু বললেন, আমাকে ছেড়ে ওরা কিছুতেই পালাবে না। ভুড়ু বলল, এখানে অনেকটা জায়গা আমাদের লোক দিয়ে ঘেরা আছে। ওসমান সাহেবের হুকুম ছাড়া কেউ ঢুকতেও পারবে না, বেরুতেও পারবে না।
ওসমান তরুণীটিকে বলল, ঠিক আছে কুলসম, তুমি যাও। আমি আপ্পা রাওয়ের সঙ্গে পরে কথা বলব। আমরা এখন কাজে ব্যস্ত আছি।
কুলসম মাথা নেড়ে বলল, না, এখনই বলে দাও। ছোট ছেলেদের বেঁধে রাখা আমি একদম পছন্দ করি না। ওরা কি জানোয়ার নাকি?
ওসমান বলল, আচ্ছা, আপ্পা রাওকে আমার নাম করে বলো ওদের ছেড়ে দিতে। যেন চোখে-চোখে রাখে।
কুলসম ঝুঁকে পড়ে ওসমানের হাতে একটা চুমু খেয়ে আবার ছুটে চলে গেল। ভুড়ু বলল, রায়চৌধুরী, তা হলে চিঠিটা লিখে ফেলুন! কাগজ-কলম দিচ্ছি।
কাকাবাবু বললেন, কীসের চিঠি, কাকে লিখব, সেটা আগে বলবে তো!
ভুড়ু বলল, আগেই বলেছি, এটা ব্যবসার ব্যাপার। মোহন সিং কুড়ি লাখ টাকার জামিনে আপনাকে পাঠিয়েছে। আমরা পঞ্চাশ লাখ পেয়ে গেলেই আপনাকে ছেড়ে দেব। আপনি চিঠি লিখে পঞ্চাশ লাখ টাকা আনিয়ে নিন।
কাকাবাবু হো হো করে হেসে উঠলেন।
ওদের দুজনের ভুরু কুঁচকে গেল।
কাকাবাবু বললেন, তোমরা মোহন সিং-কে কুড়ি লাখ টাকা আগেই দিয়ে দিয়েছ নাকি? এই রে, খুব ঠকে গেছ! তোমাদের নকল জিনিস গছিয়ে গেছে!
ভুড়ু বলল, নকল মানে? তুমি রাজা রায়চৌধুরী নও?
কাকাবাবু বললেন, আমি আসল রাজা রায়চৌধুরী ঠিকই। কিন্তু আমার জন্য পঞ্চাশ লাখ টাকা কে দেবে?
কেন, তুমি ভারত সরকারের বড় অফিসার।
বড় অফিসার ছিলাম, এখন নই। পা ভাঙার জন্য আগেই রিটায়ার করে গেছি। জানোই তো, যতই বড় অফিসার হোক, রিটায়ার করার পর আর কেউ পাত্তা দেয় না। আমি মরি কি বাঁচি, তা নিয়ে গভর্নমেন্ট মাথা ঘামাতে যাবে কেন?
তা হলে তোমার বাড়ির লোককে লেখো!
বাড়ির লোক মানে, আমি আমার দাদার বাড়িতে থাকি। দাদা সাধারণ মধ্যবিত্ত। পঞ্চাশ লাখ তো দূরের কথা, পাঁচ লাখও দিতে পারবে না।
তবে যে শুনেছি, তুমি পশ্চিমবাংলায় খুব নামকরা লোক?
নাম আছে, দাম নেই। আমার জন্য কেউ অত টাকা দেবে না।
কাকাবাবু এবার ওসমানের দিকে তাকিয়ে উর্দুতে বললেন, বিক্রম ওসমান, আপনি খুব ঠকে গেছেন। মোহন সিং ধাপ্পা দিয়েছে। কোনও বড় কোম্পানির মালিক কিংবা কোনও মন্ত্রীর ছেলেকে ধরে আনলে টাকা আদায় করতে পারবেন।
ওসমান ধড়মড় করে উঠে বসে বলল, কী? মোহন সিং আমাদের ধোঁকা দিয়েছে? তার কল্জেটা ছিঁড়ে নেব তা হলে!
কাকাবাবু বললেন, তাই করুন। মোহন সিংকে ধরে আনুন, আমাকে ধরে রেখে কোনও লাভ নেই।
ভুড়ু বলল, কিন্তু একটা মুশকিল হল, তোমাকে নিয়ে এখন কী করা যায়? তোমাকে তো এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায় না।
কাকাবাবু বললেন, টাকা না পেয়েও যদি আমাদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে চাও, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। এই চন্দনের বনে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যেতে আমার ভালই লাগবে!
ভুড়ু বলল, খাওয়ানোর প্রশ্ন নয়। তোমার মুণ্ডুটা যে কেটে ফেলতেই হবে।
কাকাবাবু বললেন, ছি ছি, এ কী কথা! কারও সামনে তার মুণ্ডুটা কেটে ফেলার কথা কেউ বলে? সত্যজিৎ রায়ের একটা গান আছে, মুণ্ডু গেলে খাবটা কী, মুণ্ডু ছাড়া বাঁচব না কি, বাঘারে…, তোমরা বোধ হয় গানটা শোনোনি?
ভুড়ু বলল, কেন তোমার মুণ্ডু কাটতে হবে, বুঝিয়ে দিচ্ছি। বাজারে আমাদের একটা সুনাম আছে, আমরা কথায় যা বলি, কাজেও তা করি। কোনও একজনকে ধরে এনে তার জন্য টাকা চেয়ে চিঠি পাঠাই। টাকা না পেলে দশ দিনের মধ্যে মেরে ফেলা হবে, তা জানিয়ে দিই। সেই ভয়ে তারা টাকা দিয়ে দেয়। তোমাকে যে ধরে আনা হয়েছে, তা এ-লাইনের অনেকেই জেনে যাবে। তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিলে সবাই ভাববে, আমরা নরম হয়ে গেছি। আর আমাদের ভয় পাবে না। সেইজন্যই তোমার মুণ্ডুটা কেটে জঙ্গলের বাইরে ফেলে রাখতে হবে।
কাকাবাবু বললেন, তোমরা শুধু চন্দনগাছ কাটো না, মানুষ গুম করাও তোমাদের ব্যবসা?
ভুড়ু বলল, এটা আমাদের সাইড ব্যবসা। আমরা নিজেরা মানুষ ধরে আনি, অন্যরা ধরে এনে আমাদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেয়, আমরা বেশি টাকা আদায় করি, আমাদের খরচও তো কম নয়, গ্রামের লোকদের টাকা দিতে হয়, যাতে পুলিশ আসবার আগেই তারা আমাদের খবর দিয়ে দেয়।
কাকাবাবু বললেন, টাকা পাওয়া যায়নি, এজন্য আগে কারও মুণ্ডু কেটেছ?
ভুড়ু বলল, হ্যাঁ। তিনজনের মুণ্ডু কাটা গেছে।
কাকাবাবু বললেন, আমার জন্যও টাকা পাওয়ার কোনও আশাই নেই। সুতরাং আমারও মুণ্ডুটা কাটতেই হবে?
ভুড়ু হাসতে হাসতে বলল, উপায় কী বলো, ব্যবসার খাতিরে কাটতেই হচ্ছে। তুমি নিজে না লিখতে চাও, আমরাই সরকারের কাছে পঞ্চাশ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছি। দশ দিনের মধ্যে টাকাটা না এলে—
কাকাবাবু হঠাৎ বজ্রমুষ্টিতে ভুড়ুর ঘাড়টা চেপে ধরে বেঁকিয়ে দিলেন। যে যন্ত্রণায় আঁ আঁ করে উঠল।
কাকাবাবু বললেন, তুমি হাসতে হাসতে মানুষের মুণ্ডু কাটার কথা বলছ। নিজের মুণ্ডুটা কাটা গেলে কেমন লাগে তা ভাবো না? এক্ষুনি আমি তোমার ঘাড় মটকে দিতে পারি।
বিক্রম ওসমান রেগে ওঠার বদলে মহাবিস্ময়ে কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর হেসে উঠল বাতাস কাঁপিয়ে। মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে এমন হাসতে লাগল যে, মনে হল যেন দোলনা থেকে পড়েই যাবে।
কাকাবাবু ভুড়ুর গলাটা ছেড়ে দিয়ে দুহাত ঝাড়লেন।
ভুড়ু কাকাবাবুর বদলে ওসমানের দিকে হতভম্বের মতন তাকিয়ে রইল।
হাসি থামিয়ে ওসমান বলল, আরে ভুডিয়া, তোর মুখোনা কী মজার দেখাচ্ছিল! হাসি সামলাতে পারিনি।
তারপর কাকাবাবুকে বলল, শাবাশ বাবুজি! আমার সামনে আমার কোনও শাগরেদের গায়ে কেউ হাত তোলে, এ আমি আগে কখনও দেখিনি। তুমি এত সাহস দেখালে কী করে? আমি যদি সঙ্গে সঙ্গে তোমায় গুলি করতাম?
কাকাবাবু হালকাভাবে বললেন, গুলি খেলেও আমি মরি না। আমি গুলি হজম করে ফেলতে পারি।
ওসমান বলল, পরখ করে দেখব নাকি? দেখি তো কেমন গুলি হজম করতে পারো।
ওসমান কোমর থেকে রিভলভার বার করতেই কাকাবাবু একটা ক্রাচ তুলে বিদ্যুতের মতন বেগে সেই হাতটার ওপর মারলেন। রিভলভারটা ছিটকে দূরে পড়ে গেল।
ওসমান এবারও রাগ না করে ভুরু তুলে বলল, হ্যাঁ বাবুজি, তোমার খুব এলেম আছে। কিন্তু এই করেও তো তুমি বাঁচতে পারবে না। তুমি খোঁড়া মানুষ, দৌড়বার ক্ষমতা নেই। আমি হাঁক দিলে দশজন লোক ছুটে আসবে, তোমাকে শেষ করে দেবে। তুমি এখান থেকে পালাতে পারবে না।
কাকাবাবু বললেন, আমি পালাতে চাইলে দৌড়বার দরকার হয় না। তোমরা
আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করলে আমার এখন পালাবার ইচ্ছেও নেই।
মাটিতে পড়ে-থাকা রিভলভারটা তুলে নিয়ে সেটা দোলাতে দোলাতে কাকাবাবু বললেন, এটা যদি আমি এখন তোমার বুকের ওপর চেপে ধরি, তা হলে তোমার দশজন লোক ছুটে এসেও কি আমার গায়ে হাত দিতে সাহস করবে?
ওসমান বলল, হ্যাঁ। তাতেও তোমার কোনও লাভ হবে না। আমি জানের পরোয়া করি না। আমার পরে কে সর্দার হবে, তা ঠিক করাই আছে। আমার হুকুম দেওয়া আছে, আমাকে যদি কেউ কখনও ধরেও ফেলে, তা হলেও ওরা গুলি চালাবে। আমাকে বাঁচাবার জন্য দলের ক্ষতি করা যাবে না!
কাকাবাবু রিভলভারটা লক করে ওসমানের কোলের ওপর ছুড়ে দিয়ে বলল, এই নাও, আমি শুধু শুধু কাউকে ভয় দেখাই না। তবে, আমার হাতে রিভলভার থাকলে দশজন লোকও আমাকে আটকাতে পারবে না। আমি দৌড়তে পারি না, কিন্তু ঘোড়া চালাতে জানি।
রিভলভারটা হাতে নিয়ে ওসমান কাকাবাবুর দিকে একটুক্ষণ বিস্মিত ভাবে চেয়ে রইল। তারপর বলল, তুমি একটা অদ্ভুত মানুষ বটে। পিস্তলটা পেয়েও ফেরত দিলে? এরকম আগে দেখিনি। কিন্তু বাবুজি, ভুড়ু কিছু ভুল বলেনি। আমরা এমনি এমনি কাউকে ছেড়ে দিই না। তুমি সরকারকে চিঠি লিখে দেখেই না, টাকাটা দিয়ে দিতেও পারে।
কাকাবাবু বললেন, না। আমি নিজের জন্য কারও কাছেই টাকা চাইব না।
ওসমান বলল, ঠিক আছে, আমরাই চিঠি পাঠাচ্ছি। দশ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে তখন একটা কিছু ব্যবস্থা নিতেই হবে। এই দশ দিন তোমার ছুটি। খাও দাও, মজা করো। তুমি দাবা খেলতে জানো?
কাকাবাবু বললেন, তা বেশ ভালই জানি। ওসমান বলল, ঠিক আছে, পরে তোমার সঙ্গে দাবা খেলব।
ভুড়ু এতক্ষণ গলায় হাত বুলোতে বুলাতে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। এবারে সে বলল, ওসমানজি, এই রায়চৌধুরীকে বাঁচিয়ে রাখার একটাই উপায় আছে। ও আমাদের দলে যোগ দিক। লোকটার বুদ্ধিও আছে, গায়ের জোরও আছে। দলের অনেক কাজে লাগবে। কী রায়চৌধুরী, তুমি থাকবে এই দলে?
কাকাবাবু বললেন, ভুড়ু, তুমি আমাকে পুরোপুরি চিনতে পারোনি। এখনও অনেক বাকি আছে।