সংবর্ত্তের যজ্ঞোপকরণ-সংগ্রহব্যবস্থা
“সংবৰ্ত্ত কহিলেন, ‘হে মহারাজ! অতঃপর তুমি যেরূপে উৎকৃষ্ট যজ্ঞোপকরণ সংগ্রহ করিতে পারিবে, তাহা কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। হিমালয়ের অনতিদূরে মুঞ্জবান্নামে এক পৰ্ব্বত আছে। ভূতভাবন ভগবান্ ভবানিপতি পার্ব্বতীর সহিত ঐ পৰ্ব্বতের শৃঙ্গ, বৃক্ষমূল ও গুহাতে পরমসুখে বিহার করিয়া থাকেন। রুদ্র, সাধ্য, বিশ্বদেব, বসু, ভূত, পিশাচ, গন্ধৰ্ব্ব, অপ্সরা, যক্ষ, দেবর্ষি, আদিত্য, মরুৎ ও রাক্ষসগণ এবং যম, বরুণ, কুবের ও অশ্বিনীকুমারদ্বয় সতত তাঁহার উপাসনা করেন। কুবেরের বিকৃতাকার অনুচরগণ তাঁহার চতুর্দ্দিকে ক্রীড়া করিয়া থাকে। তাঁহার রূপ নবোদিত সূর্য্যের ন্যায় সমুজ্জ্বল। তাঁহার রূপ, আকার, তেজ, তপস্যা ও বীর্য্য নিরূপণ করা কাহারও সাধ্যায়ত্ত নহে।।
“তিনি মুঞ্জবান্পৰ্ব্বতে অবস্থান করিতেছেন বলিয়া ঐ পৰ্ব্বতের কোন স্থানেই শীত, গ্রীষ্ম, প্রচণ্ড বায়ু, সূর্য্যের প্রখর উত্তাপ, জরা, ক্ষুৎপিপাসা, মৃত্যু ও ভয় বিদ্যমান নাই! ঐ পৰ্ব্বতে সূৰ্য্যরশ্মির ন্যায় সমুজ্জ্বল সুবর্ণরাশি বিদ্যমান আছে। কুবেরের প্রিয়চিকীর্ষ্য অনুচরগণ সৰ্ব্বদা উহা রক্ষা করিয়া থাকে। এক্ষণে তুমি সেই পৰ্ব্বতে গমনপূর্ব্বক ভগবান্ ভূত-ভাবনকে “হে দেবাদিদেব! তুমি সৰ্ব্ববেধা, রুদ্র, শিতিকণ্ঠ, সুরূপ, সুবর্চ্চা, কপর্দ্দী, করাল, হরিচক্ষু, বরদ, ত্রিনয়ন, পুষার, দন্তবিপাটক, বামন, শিব, যাম্য, অব্যক্তরূপ, সদ্বৃত্ত, শঙ্কর, ক্ষেম্য, হরিকেশ, স্থাণু, পুরুষ, হরিনেত্র, মুঙ্গ, কৃশ, উত্তারণ, ভাস্কর, সুতীর্থ, দেবদেব, বেগবান, উষ্ণীষধারী, সুবক্ত্র, সহস্রাক্ষ, কামপূরক, গিরীশ, প্রশান্ত, যতি, চীরবাসা, বিল্বদণ্ডধারী, সিদ্ধ, সৰ্ব্বদণ্ডধর, মৃগভেত্তা, মহান, ধনুর্দ্ধারী, ভব, বর, ব্যোমবক্ত্র, সিদ্ধমন্ত্র, চক্ষুঃস্বরূপ, হিরণ্যবাহু, উগ্র, দিকপতি, লেলিহান, গোষ্ঠ, বৃষ্টি, পশুপতি, ভূতপতি, বৃষ, মাতৃভক্ত, সেনানী, মধ্যম, স্রুবহস্ত, যতি, বুদ্ধিস্বরূপ, ভার্গব, অজ, কৃষ্ণনেত্র, বিরূপাক্ষ, তীক্ষ্ণদংষ্ট্র, তীক্ষ্ণ, বৈশ্বানরমুখ, মহাদ্যুতি, অনঙ্গ, সৰ্ব্বস্বরূপ, বিলোহিত, দীপ্ত, দীপ্তাক্ষ, মহৌজা, কপালমালাসম্পন্ন, সুবর্ণমুকুটধারী, মহাদেব, কৃষ্ণ, এ্যম্বক, অনঘ, ক্রোধন, নৃশংস, মৃদু, ক্রোধশালী, উগ্র, পতি, পশু, কৃত্তিবাসাঃ, দণ্ডী, তপ্ততপা, অক্রূরকৰ্ম্মা, সহস্রশিরা, সহস্রচরণ, ত্রিপুরহন্তা, বসুরূপ, দংষ্ট্রী, সুবর্ণরেতা, সুরূপ, অনন্ত, মহাদ্যুতি, পিনাকী, মহাযোগী, অব্যয়, ত্রিশূলহস্ত, ভুবনেশ্বর, ত্রিলোকেশ, মহৌজা, সৰ্ব্বভূতের সৃষ্টিকর্ত্তা, ধারণ, ধরণীধর, ঈশান, শিব, বিশ্বেশ্বর, ভব, উমাপতি, বিশ্বরূপ, মহেশ্বর, দশভুজ, দিব, বৃষধ্বজ, উগ্র, রৌদ্র, গৌরীশ্বর, ঈশ্বর, শিতিকণ্ঠ, অজ, শুক্র, পৃথু, পৃথুহর, বর ও চতুর্ম্মুখ, তোমাকে নমস্কার” বলিয়া প্রণাম কর। তুমি সেই সনাতন দেবাদিদেবকে নমস্কার করিয়া তাঁহার শরণাপন্ন হইলে অবশ্যই তোমার সেই সুবর্ণরাশি লাভ হইবে। তাহা হইলেই তুমি তদ্দারা অতি উৎকৃষ্ট যজ্ঞপাত্ৰসমুদয় নির্ম্মাণ করাইতে পারিবে; অতএব তুমি অবিলম্বে স্বীয় দূতগণকে সুবর্ণবহনার্থ মুঞ্জবান্পৰ্ব্বতে গমন করিতে আদেশ করিয়া স্বয়ং তথায় গমন কর।
“মহাত্মা সংবৰ্ত্ত এইরূপ উপদেশ প্রদান করিলে মহারাজ মরুত্ত অচিরাৎ মুঞ্জবানপৰ্ব্বতে গমন ও ভগবান ভবানীপতির সন্তোষসম্পাদনপূৰ্ব্বক এই সুবর্ণরাশি লাভ করিয়া যজ্ঞের আয়োজন করিতে লাগিলেন। শিল্পকরেরা সুবর্ণময় পাত্ৰসমুদয় প্রস্তুত করিতে আরম্ভ করিল। এ দিকে সুরপুরোহিত বৃহস্পতি মহারাজ মরুত্তের দেবদুর্ল্লভ সুসমৃদ্ধ যজ্ঞের বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া নিতান্ত সন্তাপিত হইলেন। তাঁহার ভ্রাতা সংবৰ্ত্ত ঐ যজ্ঞে পৌরোহিত্য করিয়া অতিশয় সমৃদ্ধিশালী হইবেন, বিবেচনা করিয়া তাঁহার শরীর দিন দিন ক্ষীণ ও বিবর্ণ হইতে লাগিল।”