তবে বীর মহাকায়, লঙ্কা প্রবেশিতে চায়,
ভল্লুক বানর গড়-দ্বারে।
মন্ত্রেতে মৃত্তিকা কাটে, যেন কাদম্বিনী উঠে,
তাহাতে সুড়ঙ্গ হৈল দ্বারে।।
তবেত রাক্ষস মহী, মহাক্রোধ-মূর্ত্তি হই,
ছাড়ে বীর মহা হুহুঙ্কার।
চতুর্দ্দিকে কপিগণ, মধ্যখানে নারায়ণ,
পরি বসিয়াছে মৃগাম্বর।।
সম্মুখে কোদণ্ড বাণ, বসিয়া অনুজস্থান,
করযোড়ে বীর হনূমান।
অঙ্গদ বালির বেটা, লইয়া বানর ঘটা,
কত বীর নাহি পরিমাণ।।
অষ্ট অঙ্গে হনুবীর, রামপদে নতশির,
শ্রীরাম-লক্ষ্মণ প্রতি বলে।
আজ্ঞা কর গদাধর, ভাঙ্গি লঙ্কা পাটোয়ার,
রাবণেরে ধরি আনি চুলে।।
আর যত কপিগণ, সিংহ সম সর্ব্বজন,
গাছ পাথর করি নিল হাতে।
নিদ্রা নাহি রাত্রি-দিনে, রাবণের নাশ বিনে,
সবে রহে যুদ্ধ হেতু পথে।।
বিভীষণ মহাশয়, শ্রীরাম নিকটে রয়,
লয় সব লঙ্কার সন্ধান।
হেনকালে মহীবীর, দেখে চক্ষু করি স্থির,
বহু সৈন্য রহে বিদ্যমান।।
সবাকারে নিরখিল, মনেতে বিস্ময় হৈল,
বিভীষণে দেখে তার মাঝ।
অসম্ভব দেখি বীর, মনেতে করিল স্থির,
এই হেতু হৈয়াছে অকাজ।।
বানরের মধ্যখান, খুড়া কেন বিদ্যমান,
কোন হেতু ইহার ভিতরে।
বুজিলাম অনুমানে, পাইলা মোর সন্ধানে,
খুড়া হেতু সর্ব্ব সৈন্য মরে।।
খুড়া যেই কর্ম্ম করে, জ্ঞাতি-বন্ধু সবে মরে,
বুঝি রামের লয়েছে শরণ।
মোর মনে হেন লয়, জানিলাম সুনিশ্চয়,
খুড়া হেতু সবার নিধন।।
ইন্দ্র চন্দ্র দেবগণ, যারে ডরে সর্ব্বজন,
তার পুরে প্রবেশে বানর।
ব্রহ্মা আদি করে ডর, তার পুরে নাহি ঘর,
আনন্দেতে গর্জ্জে পশুবর।।
বুঝিলাম এই হৈল, খুড়া হেতু সব মৈল,
ভেদ করি কৈল সর্ব্বনাশ।
আগে যাই পিতা স্থানে, বিশেষিয়া শুনি কাণে,
তবে পাঠাইব যমপাশ।।
দেখি আগে নৃপমণি, আগে সব কথা শুনি,
তবেত করিব মনে যাহা।
না রাখিব কারো তরে, পাঠাইব যমঘরে,
রাক্ষসেরা করে যেন আহা।।
মারিয়া বানরগণ, লব সবার জীবন,
নর-বানর কিবা জানে সন্ধি।
ধরিয়া মায়ার বলে, লইয়া যাব পাতালে,
মোর ঘরে লৈয়া করি বন্দী।।
এত অনুমানি মনে, চলিল বাপের স্থানে,
দণ্ডবৎ করিল চরণে।
উঠিয়াত লঙ্কেশ্বরে, চুম্বন করিল শিরে,
কোলে করি করে আলিঙ্গনে।।
জিজ্ঞাসিল বাপস্থানে, খুড়া রামস্থানে কেনে,
কিবা হেতু দেখিল তাহাকে।
রাবণ বলিল তারে, এই দুঃখ কব কারে,
যত হৈল বিভীষণ পাকে।।
সেইত করিল এত, রাক্ষস করিল হত,
এত দুঃখ তাহার কারণ।
সেই কৈল সঙ্গী জনা, বসাইল বানর-থানা,
রক্ষকুল করিল নিধন।।
সেই মোর কাল হৈল, রামের শরণ লৈল,
সেই এত করিল জঞ্জাল।
মহী বলে কহি আমি, রামেরে বধিবে তুমি,
কেনে আইল লঙ্কার মাঝার।।
শুনি কহে দশানন, শুন পুত্র বিবরণ,
যে কারণে এত দ্বন্দ্ব হৈল।
অযোধ্যার দশরথ, তার পুত্র রঘুনাথ,
সীতার সহিত বনে আইল।।
শুনিয়া বাপের বাণী, কহে মহী যুড়ি পাণি,
নিশ্চিন্তে থাকহ পিতা ঘরে।
আগে খুড়া বিনাশিব, তবে সৈন্য সংহারিব,
পশ্চাতে মারিব রঘুবীরে।।
এত বলি মহীবীর, ক্রোধে কম্পয়ে শরীর,
গড়ের বাহির শীঘ্র হৈল।
ভারত অমৃত-কথা, দীর্ঘ ছন্দ যাহে গাঁথা,
কাশীরাম দাস বিরচিল।।