[পারি প্রদর্শনীতে স্বামীজীর এই বক্তৃতাদির বিবরণ স্বামীজী স্বয়ং লিখিয়া ‘উদ্বোধন’-এ পাঠাইয়াছিলেন।]
এই মাসের৩০ প্রথমাংশে কয়েক দিবস যাবৎ পারি (Paris) মহাপ্রদর্শনীতে “কংগ্রেস দ’ লিস্তোয়ার দে রিলিজিঅঁ” [Congress of the History of Religions, August 1900] অর্থাৎ ধর্মেতিহাস-নামক সভার অধিবেশন হয়। উক্ত সভায় অধ্যাত্ম-বিষয়ক এবং মতামতসম্বন্ধী কোন চর্চার স্থান ছিল না, কেবলমাত্র বিভিন্ন ধর্মের ইতিহাস অর্থাৎ তদঙ্গসকলের তথ্যানুসন্ধানই উদ্দেশ্য ছিল। এ বিধায়, এ সভায় বিভিন্ন ধর্মপ্রচারক-সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির একান্ত অভাব। চিকাগো মহাসভা এক বিরাট ব্যাপার ছিল। সুতরাং সে সভায় নানা দেশের ধর্মপ্রচারকমণ্ডলীর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় জনকয়েক পণ্ডিত, যাঁহারা বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি-বিষয়ক চর্চা করেন, তাঁহারাই উপস্থিত ছিলেন। ধর্মসভা না হইবার কারণ এই যে, চিকাগো মহামণ্ডলীতে ক্যাথলিক সম্প্রদায় বিশেষ উৎসাহে যোগদান করিয়াছিলেন; ভরসা—প্রোটেষ্টাণ্ট সম্প্রদায়ের উপর অধিকার বিস্তার; তদ্বৎ সমগ্র খ্রীষ্টান জগৎ—হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান প্রভৃতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিবর্গকে উপস্থিত করাইয়া স্বমহিমা-কীর্তনের বিশেষ সুযোগ নিশ্চিত করিয়াছিলেন। কিন্তু ফল অন্যরূপ হওয়ায় খ্রীষ্টান সম্প্রদায় সর্বধর্মসমন্বয়ে একেবারে নিরুৎসাহ হইয়াছেন; ক্যাথলিকরা এখন ইহার বিশেষ বিরোধী। ফ্রান্স ক্যাথলিক-প্রধান; অতএব যদিও কর্তৃপক্ষদের যথেষ্ট বাসনা ছিল, তথাপি সমগ্র ক্যাথলিক জগতের বিপক্ষতায় ধর্মসভা করা হইল না।
যে প্রকার মধ্যে মধ্যে Congress of Orientalists অর্থাৎ সংস্কৃত, পালি, আরব্যাদি ভাষাভিজ্ঞ বুধমণ্ডলীর মধ্যে মধ্যে উপবেশন হইয়া থাকে, সেইরূপ উহার সহিত খ্রীষ্টধর্মের প্রত্নতত্ত্ব যোগ দিয়া পারি-তে এ ধর্মেতিহাস-সভা আহূত হয়।
জম্বুদীপ হইতে কেবল দুই-তিনজন জাপানী পণ্ডিত আসিয়াছিলেন; ভারতবর্ষ হইতে স্বামী বিবেকানন্দ।
বৈদিক ধর্ম—অগ্নিসূর্যাদি প্রাকৃতিক বিস্ময়াবহ জড়বস্তুর আরাধনা-সমুদ্ভূত, এইটি অনেক পাশ্চাত্য সংস্কৃতজ্ঞের মত।
স্বামী বিবেকানন্দ উক্ত মত খণ্ডন করিবার জন্য ‘পারি ধর্মেতিহাস-সভা’ কর্তৃক আহূত হইয়াছিলেন এবং তিনি উক্ত বিষয়ে এক প্রবন্ধ পাঠ করিবেন, প্রতিশ্রুত ছিলেন। কিন্তু শারীরিক প্রবল অসুস্থতানিবন্ধন তাঁহার প্রবন্ধাদি লেখা ঘটিয়া উঠে নাই; কোনমতে সভায় উপস্থিত হইতে পারিয়াছিলেন মাত্র। উপস্থিত হইলে ইওরোপ অঞ্চলের সকল সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতই তাঁহাকে সাদরে অভ্যর্থনা করিয়াছিলেন; উঁহারা ইতঃপূর্বেই স্বামীজীর রচিত পুস্তকাদি পাঠ করিয়াছিলেন।
সে সময় উক্ত সভায় ওপর্ট নামক এক জার্মান পণ্ডিত শালগ্রাম-শিলার উৎপত্তি সম্বন্ধে এক প্রবন্ধ পাঠ করেন। তাহাতে তিনি শালগ্রামের উৎপত্তি ‘যোনি’ চিহ্ন বলিয়া নির্ধারিত করেন। তাঁহার মতে শিবলিঙ্গ পুংলিঙ্গের চিহ্ন এবং তদ্বৎ শালগ্রাম-শিলা স্ত্রীলিঙ্গের চিহ্ন।শিবলিঙ্গ এবং শালগ্রাম উভয়ই লিঙ্গ-যোনিপূজার অঙ্গ।
স্বামী বিবেকানন্দ উক্ত মতদ্বয়ের খণ্ডন করিয়া বলেন যে, শিবলিঙ্গের নরলিঙ্গতা সম্বন্ধে অবিবেক মত প্রসিদ্ধ আছে; কিন্তু শালগ্রাম সম্বন্ধে এ নবীন মত অতি আকস্মিক।
স্বামীজী বলেন যে, শিবলিঙ্গ-পূজার উৎপত্তি অথর্ববেদসংহিতার যূপ-স্তম্ভের প্রসিদ্ধ স্তোত্র হইতে। উক্ত স্তোত্রে অনাদি অনন্ত স্তম্ভের অথবা স্কম্ভের বর্ণনা আছে এবং উক্ত স্কম্ভই যে ব্রহ্ম, তাহাই প্রতিপাদিত হইয়াছে। যজ্ঞের অগ্নি, শিখা, ধূম, ভস্ম, সোমলতা ও যজ্ঞকাষ্ঠের বাহক বৃষ যে প্রকার মহাদেবের অঙ্গকান্তি, পিঙ্গল জটা, নীলকণ্ঠ, ও বাহনাদিতে পরিণত হইয়াছে, সেই প্রকার যূপ-স্কম্ভও শ্রীশঙ্করে লীন হইয়া মহিমান্বিত হইয়াছে।
অথর্বসংহিতায় তদ্বৎ যজ্ঞোচ্ছিষ্টেরও ব্রহ্মত্ব-মহিমা প্রতিপাদিত হইয়াছে।
লিঙ্গাদি পুরাণে উক্ত স্তবকেই কথাচ্ছলে বর্ণনা করিয়া মহাস্তম্ভের মহিমা ও শ্রীশঙ্করের প্রাধান্য ব্যাখ্যাত হইয়াছে।
পরে, হইতে পারে যে, বৌদ্ধাদির প্রাদুর্ভাবকালে বৌদ্ধস্তূপ-সমাকৃতি দরিদ্রার্পিত ক্ষুদ্রাবয়ব স্মারক-স্তূপও সেই স্তম্ভে অর্পিত হইয়াছে। যে প্রকার অদ্যাপি ভারতখণ্ডে কাশ্যাদি তীর্থস্থলে অপারগ ব্যক্তি অতি ক্ষুদ্র মন্দিরাকৃতি উৎসর্গ করে, সেই প্রকারে বৌদ্ধেরাও ধনাভাবে অতি ক্ষুদ্র স্তূপাকৃতি শ্রীবুদ্ধের উদ্দেশে অর্পণ করিত।
বৌদ্ধস্তূপের অপর নাম ধাতুগর্ভ। স্তূপমধ্যস্থ শিলাকরণ্ডমধ্যে প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ ভিক্ষুকদিগের ভস্মাদি রক্ষিত হইত। তৎসঙ্গে স্বর্ণাদি ধাতুও প্রোথিত হইত। শালগ্রাম-শিলা উক্ত অস্তিভস্মাদি-রক্ষণ-শিলার প্রাকৃতিক প্রতিরূপ। অতএব প্রথমে বৌদ্ধ-পূজিত হইয়া বৌদ্ধমতের অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে প্রবেশ লাভ করিয়াছে। অপিচ নর্মদাকূলে ও নেপালে বৌদ্ধপ্রাবল্য দীর্ঘস্থায়ী ছিল। প্রাকৃতিক নর্মদেশ্বর শিবলিঙ্গ ও নেপালপ্রসূত শালগ্রামই যে বিশেষ সমাদৃত, ইহাও বিবেচ্য।
শালগ্রাম সম্বন্ধে যৌনব্যাখ্যা অতি অশ্রুতপূর্ব এবং প্রথম হইতেই অপ্রাসঙ্গিক; শিবলিঙ্গ সম্বন্ধে যৌনব্যাখ্যা ভারতবর্ষে অতি অর্বাচীন এবং উক্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঘোর অবনতির সময় সংঘটিত হয়। ঐ সময়ের ঘোর বৌদ্ধতন্ত্রসকল এখনও নেপালে ও তিব্বতে খুব প্রচলিত।
অন্য এক বক্তৃতা—স্বামীজী ভারতীয় ধর্মমতের বিস্তার-বিষয়ে দেন। তাহাতে বলা হয় যে, ভারতখণ্ডের বৌদ্ধাদি সমস্ত মতের উৎপত্তি বেদে। সকল মতের বীজ তন্মধ্যে প্রোথিত আছে। ঐ সকল বীজকে বিস্তৃত ও উন্মীলিত করিয়া বৌদ্ধাদি মতের সৃষ্টি। আধুনিক হিন্দুধর্মও ঐ সকলের বিস্তার—সমাজের বিস্তার ও সঙ্কোচের সহিত কোথাও বিস্তৃত, কোথাও অপেক্ষাকৃত সঙ্কুচিত হইয়া বিরাজমান আছে। তৎপরে স্বামীজী শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধ-পূর্ববর্তিত্ব সম্বন্ধে কিছু বলিয়া পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের বলেন যে, যে প্রকার বিষ্ণুপুরাণোক্ত রাজকুলাদির ইতিহাস ক্রমশঃ প্রত্নতত্ত্ব-উদ্ঘাটনের সহিত প্রমাণীকৃত হইতেছে, সেই প্রকার ভারতের কিংবদন্তীসমস্ত সত্য। বৃথা প্রবন্ধ-কল্পনা না করিয়া পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা যেন উক্ত কিংবদন্তীর রহস্য-উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন। পণ্ডিত ম্যাক্সমূলার এক পুস্তকে লিখিতেছেন যে, যতই সৌসাদৃশ্য থাকুক না কেন, যতক্ষণ না ইহা প্রমাণিত হইবে যে, কোন গ্রীক সংস্কৃত ভাষা জানিত, ততক্ষণ সপ্রমাণ হইল না যে, ভারতবর্ষের সাহায্য প্রাচীন গ্রীস প্রাপ্ত হইয়াছিল। কিন্তু কতকগুলি পাশ্চাত্য পণ্ডিত ভারতীয় জ্যোতিষের কয়েকটি সংজ্ঞা গ্রীক জ্যোতিষের সংজ্ঞার সদৃশ দেখিয়া এবং গ্রীকরা ভারতপ্রান্তে একটি ক্ষুদ্র রাজ্য সংস্থাপন করিয়াছিল অবগত হইয়া, ভারতের যাবতীয় বিদ্যায়—সাহিত্যে, জ্যোতিষে, গণিতে—গ্রীক সহায়তা দেখিতে পান। শুধু তাহাই নহে, একজন অতি সাহসিক লিখিয়াছেন যে, ভারতের যাবতীয় বিদ্যা গ্রীকদের বিদ্যার ছায়া!!
এক, ‘ম্লেচ্ছা বৈ যবনাস্তেষু এষা বিদ্যা প্রতিষ্ঠিতা। ঋষিবৎ তেঽপি পূজ্যন্তে’—এই শ্লোকের উপর পাশ্চাত্যেরা কতই না কল্পনা চালাইয়াছেন। উক্ত শ্লোকে কি প্রকারে প্রমাণীকৃত হইল যে, আর্যেরা ম্লেচ্ছের নিকট শিখিয়াছেন? ইহাও বলা যাইতে পারে যে, উক্ত শ্লোকে আর্যশিষ্য ম্লেচ্ছদিগকে উৎসাহবান করিবার জন্য বিদ্যার আদর প্রদর্শিত হইয়াছে।
দ্বিতীয়তঃ ‘গৃহে চেৎ মধু বিন্দেত, কিমর্থং পর্বতং ব্রজেৎ?’ আর্যদের প্রত্যেক বিদ্যার বেদে রহিয়াছে এবং উক্ত কোন বিদ্যার প্রত্যেক সংজ্ঞাই বেদ হইতে আরম্ভ করিয়া বর্তমানকালের গ্রন্থসকলে পর্যন্ত দেখানো যাইতে পারে। এ অপ্রাসঙ্গিক যবনাধিপত্যের আবশ্যকতাই নাই।
তৃতীয়তঃ আর্য জ্যোতিষের প্রত্যেক গ্রীকসদৃশ শব্দ সংস্কৃত হইতে সহজেই ব্যুৎপন্ন হয়, উপস্থিত ব্যুৎপত্তি ত্যাগ করিয়া যাবনিক ব্যুৎপত্তি গ্রহণে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের যে কি অধিকার, তাহাও বুঝি না।
ঐ প্রকার কালিদাসাদিকবি-প্রণীত নাটকে ‘যবনিকা’ শব্দের উল্লেখ দেখিয়া যদি ঐ সময়ের যাবতীয় কাব্যনাটকের উপর যবনাধিপত্য আপত্তি হয়, তাহা হইলে প্রথমে বিবেচ্য যে, আর্যনাটক গ্রীকনাটকের সদৃশ কিনা। যাঁহারা উভয় ভাষায় নাটকরচনা-প্রণালী আলোচনা করিয়াছেন, তাঁহাদের অবশ্যই বলিতে হইবে যে, ঐ সৌসাদৃশ্য কেবল প্রবন্ধকারের কল্পনাজগতে, বাস্তবিক জগতে তাহার কস্মিন্কালেও বর্তমানত্ব নাই। সে গ্রীক কোরস্ কোথায়? সে গ্রীক যবনিকা নাট্যমঞ্চের একদিকে, আর্যনাটকে তাহার ঠিক বিপরীতে। সে রচনা-প্রণালী এক, আর্যনাটকের আর এক।
আর্যনাটকের সাদৃশ্য গ্রীক নাটকে আদৌ তো নাই, বরং শেক্সপীয়র-প্রণীত নাটকের সহিত ভূরি ভূরি সৌসাদৃশ্য আছে।
অতএব এমনও সিদ্ধান্ত হইতে পারে যে, শেক্সপীয়র সর্ববিষয়ে কালিদাসাদির নিকট ঋণী এবং সমগ্র পাশ্চাত্য সাহিত্যে ভারতের সাহিত্যের ছায়া।
শেষ—পণ্ডিত ম্যাক্সমূলারের আপত্তি তাঁহারই উপর প্রয়োগ করিয়া ইহাও বলা যায় যে, যতক্ষণ ইহা না প্রমাণিত হয় যে, কোন হিন্দু কোন কালে গ্রীক ভাষায় অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিল, ততক্ষণ ঐ গ্রীক প্রভাবের কথা মুখে আনাও উচিত নয়।
তদ্বৎ আর্যভাস্কর্যে গ্রীক প্রাদুর্ভাব-দর্শনও ভ্রম মাত্র।
স্বামীজী ইহাও বলেন যে, শ্রীকৃষ্ণারাধনা বুদ্ধাপেক্ষা অতি প্রাচীন এবং গীতা যদি মহাভারতের সমসাময়িক না হয়, তাহা হইলে তদপেক্ষাও প্রাচীন—নবীন কোন মতে নহে। গীতার ভাষা মহাভারতের ভাষা এক। গীতায় যে-সকল বিশেষণ অধ্যাত্মসম্বন্ধে প্রয়োগ হইয়াছে, তাহার অনেকগুলিই বনাদি পর্বে বৈষয়িক সম্বন্ধে প্রযুক্ত। ঐ সকল শব্দের প্রচুর প্রচার না হইলে এমন ঘটা অসম্ভব। পুনশ্চ সমস্ত মহাভারতের মত আর গীতার মত একই এবং গীতা যখন তৎসাময়িক সমস্ত সম্প্রদায়েরই আলোচনা করিয়াছেন, তখন বৌদ্ধদের উল্লেখমাত্রও কেন করেন নাই?
বুদ্ধের পরবর্তী যে-কোন গ্রন্থে বিশেষ চেষ্টা করিয়াও বৌদ্ধোল্লেখ নিবারিত হইতেছে না। কথা, গল্প, ইতিহাস বা কটাক্ষের মধ্যে কোথাও না কোথাও বৌদ্ধমতের বা বুদ্ধের উল্লেখ প্রকাশ্য বা লুক্কায়িতভাবে রহিয়াছে—গীতার মধ্যে কে সে প্রকার দেখাইতে পারেন? পুনশ্চ গীতা ধর্মসমন্বয়-গ্রন্থ, সে গ্রন্থে কোন মতের অনাদর নাই, সে গ্রন্থকারের সাদর বচনে এক বৌদ্ধমতই বা কেন বঞ্চিত হইলেন, ইহার কারণ-প্রদর্শনের ভার কাহার উপর?
উপেক্ষা—গীতায় কাহাকেও নাই। ভয়?—তাহারও একান্ত অভাব। যে ভগবান্ বেদপ্রচারক হইয়াও বৈদিক হঠকারিতার উপর কঠিন ভাষা প্রয়োগেও কুণ্ঠিত নহেন, তাঁহার বৌদ্ধমতের আবার কি ভয়?
পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা যে প্রকার গ্রীক ভাষার এক এক গ্রন্থের উপর সমস্ত জীবন দেন, সেই প্রকার এক এক প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থের উপর জীবন উৎসর্গ করুন; অনেক আলোক জগতে আসিবে। বিশেষতঃ এ মহাভারত ভারতেতিহাসের অমূল্য গ্রন্থ। ইহা অত্যুক্তি নহে যে, এ পর্যন্ত উক্ত সর্বপ্রধান গ্রন্থ পাশ্চাত্য জগতে উত্তমরূপে অধীতই হয় নাই।
বক্তৃতার পর অনেকেই মতামত প্রকাশ করেন। অনেকেই বলিলেনঃ স্বামীজী যাহা বলিতেছেন, তাহার অধিকাংশই আমাদের সম্মত এবং স্বামীজীকে আমরা বলি যে, সংস্কৃত-প্রত্নতত্ত্বের আর সে দিন নাই। এখন নবীন সংস্কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের মত অধিকাংশই স্বামীজীর সদৃশ এবং ভারতের কিংবদন্তী পুরাণাদিতে যে বাস্তব ইতিহাস রহিয়াছে, তাহাও আমরা বিশ্বাস করি।
অন্তে—বৃদ্ধ সভাপতি মহাশয় অন্য সকল বিষয় অনুমোদন করিয়া এক গীতার মহাভারত-সমসাময়িকত্বে দ্বৈত মত অবলম্বন করিলেন। কিন্তু প্রমাণ-প্রয়োগ এইমাত্র করিলেন যে, অধিকাংশ পাশ্চাত্য পণ্ডিতের মতে গীতা মহাভারতের অঙ্গ নহে।
অধিবেশনের লিপিপুস্তকে উক্ত বক্তৃতার সারাংশ ফরাসী ভাষায় মুদ্রিত হইবে।