৮ম অধ্যায়
পাচকবেশে ভীমের প্রবেশ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, অনন্তর ভীমপরাক্রম ভীমসেন সকললোকবিকাশী প্রভাকরের ন্যায় স্বীয় তেজঃপ্রভাবে দীপ্যমান হইয়া অসিতবসন [কৃষ্ণবস্ত্ৰ] পরিধান এবং করে কোষনিষ্কাশিত অসিতাঙ্গ আসি [মাংস কৰ্ত্তনাৰ্থ তীক্ষ্নাসু অস্ত্ৰ], মন্থদণ্ড ও দর্বী ধারণপূর্ব্বক সূপকারবেশে মৎস্যরাজ-সমীপে সমুপস্থিত হইলেন। মৎস্যরাজ ভূপতিসন্নিভ অন্তিকাগত কুন্তীকুমারকে অবলোকন করিয়া সমাগত জনপদবাসীদিগকে কহিলেন, “ঐ যে সিংহসদৃশ উন্নতস্কন্ধ, সূৰ্য্যসদৃশ পরম রূপবান, অদৃষ্টপূর্ব্বক যুবা দৃষ্টিগোচর হইতেছেন, উনি কে? আমি সবিশেষ করিয়াও উহার অভিসন্ধি স্থির করিতে সমর্থ হইতেছি না; অতএব তোমরা অবিলম্বে উহার পরিচয় জিজ্ঞাসা কর। উনি গন্ধর্ব্বরাজ হউন, বা দেবরাজই হউন, আমি বিচার না করিয়া ইঁহার মনোরথ পরিপূর্ণ করিব।”
তাহারা মৎস্যরাজের আদেশানুসারে দ্রুত পদসঞ্চারে ভীমসেন-সন্নিধানে সমুপস্থিত হইয়া সমুদয় রাজবাক্য নিবেদন করিল। মহাত্মা বৃকোদার তাহাদিগের বাক্যে প্রত্যুত্তর না করিয়া বিরাটের সন্নিকটে আগমনপূর্ব্বক অসঙ্কুচিতবাক্যে কহিলেন, “মহারাজ! আমি সূপকার, আমার নাম বল্লব। আমি অতি উত্তম ব্যঞ্জন প্রস্তুত করিতে পারি। আমাকে গ্ৰহণ করুন।”
বিরাট কহিলেন, “হে বল্লব! তোমাকে সুররাজের ন্যায়, নররাজের ন্যায় রূপলাবণ্য ও বিক্রমসম্পন্ন দেখিয়া সূপকার বলিয়া বিশ্বাস হইতেছে না।”
ভীম কহিলেন, “নরেন্দ্র! আমি সূপকার, আপনার পরিচারক। পূর্ব্বে রাজা যুধিষ্ঠিরের সুপাধিকারে [রন্ধনাগারে] নিযুক্ত ছিলাম। আমি কেবল সুপকাৰ্য্যে পারদর্শী নহি, আমার তুল্য বাহুযোদ্ধা বলবানও অতিদুর্লভ। আমি সর্ব্বদা হস্তী ও সিংহের সহিত সংগ্ৰাম করিতাম; এক্ষণে নিরন্তর আপনার প্রিয়কাৰ্য্য সম্পাদনা করিব।”
বিরাট কহিলেন, “বল্লব! আমি তোমার মনোরথ পরিপূর্ণ করিলাম। তুমি মহানসে অধিকার গ্রহণ কর; কিন্তু এ প্রকার কর্ম্ম তোমার উপযুক্ত বলিয়া বোধ হইতেছে না। তুমি সসাগরা ধরামণ্ডলের অধিকারযোগ্য। যাহা হউক, তুমি আত্মকামনানুসারে মহানসে নিযুক্ত হইলে। আমি তোমাকে তত্রস্থ সমস্ত অধিকৃতবর্গের উপরে আধিপত্য প্ৰদান করিলাম।”
ভীমসেন এইরূপে মহানসে নিযুক্ত হইয়া বিরাটনৃপতির সাতিশয় প্রতিভাজন হইলেন। তত্ৰস্থ পরিচারক বা অন্য কোন ব্যক্তি তাঁহার প্রকৃত পরিচয় অবগত হইতে সমর্থ হয় নাই।