এই আওয়াযের স্পন্দন তখনো মক্কার আশেপাশে শোনা যাচ্ছিলো, এমন সময় আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত নাযিল করেন, “তোমাকে যে আদেশ দেয়া হয়েছে, সেটা খোলাখুলি তুমি ঘোষণা করো এবং মোশরেকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
এরপর রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৌত্তলিকদের নোংরামি ও অকল্যাণসমূহ প্রকাশ্যে তুলে ধরে তাদের স্বপরূও উদঘাটন করেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে দিয়ে বুঝাতে থাকেন যে, মূর্তিসমূহ নিরর্থক এবং শক্তিহীন। তিনি আরো জানান যে, যারা এসব মূর্তিপূজা করে এবং নিজের ও আল্লাহর মধ্যে এদেরকে মাধ্যম হিসাবে স্থির করে, তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে রয়েছে।
পৌত্তলিক এবং মূর্তির উপাসকদের পথভ্রষ্ট বলা হয়েছে একথা শোনার পর মক্কার অধিবাসীরা ক্রোধে দিশেহারা হয়ে পড়লো। তাদের ওপর বজ্রপাত হলো,তাদের নিরুদ্বেগ শান্তিপূর্ণ জীবন যেন ঝড়ের তান্ডব দেখতে পেলো। এই কারণেই কোরায়শরা অকস্মাৎ উৎসারিত এই বিপ্লবের শিকড় উৎপাটনের জন্যে উঠে দাড়াঁলো। কেননা এই বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের পৌত্তলিক রুসম রেওয়াজ নির্মূল হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কোরায়শরা কোমম বেঁধে উঠে দাড়াঁলো। কারণ তারা জানতো যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য সকলকে মাবুদ হিসাবে অস্বীকার করা এবং রেসালাত ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের অর্থ হচ্ছে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে রেসালাতের হাতে ন্যস্ত এবং তার কাছে নিঃশর্তভাবে আত্নসমর্পণ করা। এতে করে অন্যদের তো প্রশ্নই আসে না, নিজের জানমাল সম্পর্কে নিজের কোন স্বাধীন অধিকার থাকে না। এর অর্থ হচ্ছে যে, আরবের লোকদের ওপর মক্কার লোকদের ধর্মীয় ক্ষেত্রে যে শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব ছিলো, সেটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এর ফলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ইচ্ছা ও মর্জিই হবে চূড়ান্ত, নিজেদের ইচ্ছামতো তারা কিছুই করতে পারবে না। নীচু শ্রেণীর লোকদের তারা যে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো, সকাল সন্ধা তারা যেসব ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত ছিলো সেসব থেকে তাদের দূরে থাকতে হবে। কোরায়শরা এর অর্থ ভালোই বুঝতে পারছিলো না। কিন্তু এটা কোন কল্যাণ বা মঙ্গলের প্রত্যাশায় নয়, বরং আরো বেশী মন্দ কাজে নিজেদের জড়িত করাই এর উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, বরং এর জন্যে যে, মানুষ চায় ভবিষ্যতেও তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হবে।
কোরায়শরা এসব কিছুই বুঝতে পারছিলো। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে, তাদের সামনে এমন এক ব্যক্তি ছিলেন যিনি ছিলেন, সত্যবাদী এবং বিশ্বাসী। তিনি ছিলেন আর্দশের উত্তম দৃষ্টান্ত। দীর্ঘকাল যাবত মক্কার অধিবাসীরা পূর্ব পুরুষদের মধ্যে এ ধরণের দৃষ্টান্ত দেখেনি, শোনেওনি। এমন এক ব্যক্তিত্বের সাথে তারা কিভাবে মোকাবেলা করবে, সেটাও ভেবে ঠিক করতে পারছিলো না। তারা ছিলো অবাক ও বিস্মিত। অবশ্য এভাবে বিস্মিত হওয়ার পেছনে কিছু কারণও ছিলো।
কোরায়শরা অনেক চিন্তা ভাবনার পর এ সিন্ধান্ত গ্রহণ করলো যে, তারা প্রিয় নবীর চাচা আবু তালেবের কাছে যাবে এবং তাকে এক মাস অনুরোধ করবে যে, তিনিই যেন নিজের ভ্রাতুষ্পুত্রকে তাঁর এই কাজ থেকে বিরত রাখেন। নিজেদের দাবীকে যুক্তিগ্রাহ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করতে তারা এ দলিল তৈরী করলো যে, তাদের উপাস্যদের পরিত্যাগ করার দাওয়াত দেয়া এবং তারা যেন ভালো-মন্দ কোন কিছু করার শক্তি রাখে না এ কথা বলা প্রকৃতপক্ষে তাদের উপাস্যদের প্রতি অবমাননাকর এবং মারাত্মক গালিস্বরূপ।
তাছাড়া এটা হচ্ছে আমাদের পিতা ও পিতামহ অর্থাৎ আমাদের পূর্ব পুরুষদের নির্বোধ এবং পথভ্রষ্ট আখ্যায়িত করার শামিল। কেননা বর্তমানে আমরা যে ধর্ম বিশ্বাসের ওপর রয়েছি, তারাও একই ধর্ম বিশ্বাসের ওপর জীবন যাপন করেছিলেন। অপরাপর কোরায়শদের এসব কথা বোঝানোর পর তারা সহজেই বুঝাতে পারলো এবং এতে দ্রুত সাড়া দিলো।