থানায় বসে যখন কথা হচ্ছিল তখন রাত আটটা। একটু আগে যে ঘটনা ঘটে গেল তাতে সবচেয়ে অবাক হয়েছে গোরক্ষনাথ। বাইরের ঘরে সে বেড়ালটাকে কোলে নিয়ে বসে রয়েছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অবনীবাবু বললেন, এখন কথা হচ্ছে, বেড়ালটাকে এমনভাবে ট্রেইন্ড কী করে করা হল? ওটা এক ছুটে রাস্তা পার হয়নি। মাঝখানে দাঁড়িয়ে রাগী চোখে গাড়িটাকে দেখেছিল। অর্থাৎ ড্রাইভার যদি ছুটন্ত বেড়ালকে ভালভাবে না দেখতে পায়, দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখবেই। সন্দীপের পক্ষে কি এই ট্রেনিং দেওয়া সম্ভব? আমার তো মনে হয় না।
কিন্তু ওটা তো ট্রেনিং পেয়েছে।
ঠিকই। এখন আমার পক্ষে সন্দীপকে অ্যারেস্ট করতে অসুবিধে নেই। ওর বাড়িতে না গিয়ে ওকেই থানায় আসতে বলি।
না। সেটা বোধ হয় ঠিক হবে না।
কেন?
সন্দীপ যদি বলে তার যে বেড়ালটা হারিয়েছে সেটা এটা নয়, তা হলে আপনি কী করবেন? ও যদি বলে গোরক্ষনাথকে কোনওদিন দ্যাখেনি, তা হলে?
বুঝতে পেরেছি। বেড়ালটাকে নিয়ে ওর বাড়ির সামনে গেলেই সমস্যাটার সমাধান হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু তা তো হল, এই মামলায় বেড়ালটা একটা বড় ভূমিকা নিচ্ছে। যতদিন বিচারক ওকে না দেখছেন ততদিন ওর দেখাশোনা কে করবে?
থানায় রাখা সম্ভব নয়। এখানে তো প্রচুর বেড়াল ঘোরে।
ঘোরে। কিন্তু এব্যাটা যদি পালায়, তা হলে?
এখন যার কাছে আছে, তার কাছেই রাখুন।
হুম অবনীবাবু একটু ভাবলেন। তারপর মুখটা অর্জুনের দিকে এগিয়ে নিয়ে এসে নিচু গলায় বললেন, ওটাকে তো গোরক্ষনাথ কাজে লাগবে।
কাজে মানে?
আরে! ওই যে প্রেতাত্মাদের সঙ্গে সংযোগ করবে। শকুন, বেড়াল, কাক। ওইসব করতে গিয়ে যদি বেড়ালটা কোনও বদ আত্মার হাতে মারা যায়?
হেসে ফেলল অর্জুন, আপনি এসব বিশ্বাস করেন নাকি?
না না। বিশ্বাস নিশ্চয়ই করি না। তবে শুনতে শুনতে কীরকম একটা অবস্থা হয়। মিথ্যে কথা লক্ষবার শুনতে শুনতে মনে হয় সত্যি কথা। তেমন আর কি!
আপনি গোরক্ষনাথকে ডাকুন। ও হ্যাঁ, আর একটা ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাই। আমার খুব ঘনিষ্ঠ পরিচিত দুই ভদ্রলোক এসেছেন আমেরিকা থেকে।
জানি। সার্কিট হাউসে রেখেছেন তাঁদের।
হ্যাঁ। ওঁরা আজ রাত্রে একটু হুতুমপুরে যেতে চান।
হুতুমপুর? সেটা কোথায়?
আপনার এলাকার মধ্যে পড়ে না। বার্নিশ পেরিয়ে খুব ভেতরে একটা প্রায় গণ্ডগ্রাম।
এত রাত্রে সেখানে কেন যাবেন ওঁরা?
ভূত দেখতে।
কী দেখতে? পাগল নাকি?
ওঁদের একজনের অভিযান করাটাই নেশা, অন্যজন ভূত-প্রেত-ভ্রাকুলা নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। কিছুই হবে না, তবু হুতুমপুর যে থানার আওতায় পড়ে তাদের যদি একটু জানিয়ে রাখা যায়। অর্জুন কথা শেষ করল না।
অবনীবাবু মাথা নাড়লেন, সাহেবরা যদি এসব নিয়ে মেতে থাকে তা হলে এদেশের অশিক্ষিত মানুষদের দোষ দিয়ে কী হবে। হুতুমপুর বললেন, তাই তো?
অর্জুন মাথা নাড়তে তিনি একটা কাগজে কিছু লিখে রাখলেন।
গোরক্ষনাথ এসে দাঁড়িয়ে ছিল দরজায়, তার কোলে বেড়ালটা।
অবনীবাবু বললেন, বুঝতেই পারছ, তোমার কোলে যিনি আছেন তিনি একটি চিজ। ড্রাইভারদের মনে ভয় ঢুকিয়ে গাড়ি থামাতে বাধ্য করতেন। ডাকাতদের সঙ্গে ওঁকেও তো জেলে পুরতে হবে।
না বাবু, এ অবলা জীব, একে যেমন শেখানো হয়েছে, করেছে?
সেকথা ঠিক। তুমি এই বেড়ালটার দায়িত্ব নিতে পারবে?
হ্যাঁ বাবু।
যদি এটা পালিয়ে বা মরে যায় তা হলে তুমি দায়ী থাকবে?
হ্যাঁ বাবু।
যখনই বলব তখনই বেড়ালটাকে নিয়ে হাজির হবে, তাই তো?
যা বলবেন তাই করব।
কিন্তু যে জন্যে তোমার বেড়ালটাকে দরকার তার যদি গড়বড় হয়?
বুঝতে পারলাম না বাবু।
ওই প্রেতাত্মারা যদি ওর ঘাড় মটকায়?
পারবে না বাবু। শকুন আর কাক ওকে আগলে রাখবে। বললেন যখন তখন বলি, তেনাদের সবচেয়ে বেশি রাগ শকুনের ওপর। তারপর কানা কাক। ওই দুটোকে তেনারা আগে মারতে চাইবেন। কিন্তু এই তিনজন একসঙ্গে থাকলে কিছুতেই পেরে উঠবেন না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
ঠিক আছে, আমার সঙ্গে এক জায়গায় চলো। ফিরে এসে খাতায় সই করে ওটাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে। একটু বাইরে গিয়ে বোসো।
গোরক্ষনাথ চলে গেলে অবনীবাবু জিজ্ঞেস করলেন, আপনি যাবেন?
কোথায়? অর্জুন উঠে দাঁড়াল। আমি এখনই সন্দীপের বাড়িতে যাব। বেড়ালটাকে বাড়ির গেটের সামনে ছেড়ে দিলে ওটা নিশ্চয়ই ভেতরে ঢুকবে। ব্যস, আমার কাজ সহজ হয়ে যাবে।
সন্দীপের তিন বন্ধুর হদিস নেবেন। আমার মনে হয় ডাকাতির টাকা সন্দীপ তার নিজের বাড়িতে রাখেনি। ওটা ওর বন্ধুদের বাড়িতেই পেয়ে যাবেন। আমার মনে হয় আপনার এই অভিযানে আমার থাকা উচিত নয়। পরে ফোন করে জেনে নেব। অর্জুন পা বাড়াতে গিয়ে থেমে গেল, হুতুমপুরের ব্যাপারটা ভুলে যাবেন না যেন।
থানার সামনে যে এসটিডি বুথ রয়েছে সেখান থেকে মাকে ফোন করল অর্জুন। থানা থেকেই করতে পারত, তখন মনে ছিল না।
মা জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার রে?
আমার ফিরতে একটু রাত হবে। তুমি শুয়ে পড়ে।
তুই কোত্থেকে বলছিস?
থানার সামনে থেকে।
এক্ষুনি বাড়ি চলে আয়।
কেন?
ওঁরা এসেছেন। মা গলা নামালেন। কারা?
ওই যে, আমেরিকা থেকে যাঁরা এসেছেন।
দুটো টাকা ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে অর্জুন বাড়ির দিকে রওনা হল। মেজর এবং গোরানসাহেব তার বাড়িতে? হঠাৎ! ওঁরা কেউ বলেননি যে যাবেন।
দরজা খোলাই ছিল। মেজরের উঁচু গলা গলি থেকেই শোনা যাচ্ছিল। খুব প্রশংসা করছেন তিনি। অর্জুন ঘরে ঢুকতেই মা বললেন, আয়।
মেজর জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় ঘুরে বেড়াও বলো তো?
অর্জুন ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, আপনারা আসবেন বলেননি তো!
মেজর বললেন বাংলায়, আরে। ওই টিফিন ক্যারিয়ার কি সার্কিট হাউসে পড়ে থাকবে? বাড়িতে তো কেউ দশটা ওই জিনিস রাখে না। যদি প্রয়োজন হয় তা হলে তোমার মা কী করবেন?
বোঝ! ওঁরা ওটা ফেরত দিতে এসেছেন। মা বললেন।
কতক্ষণ? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।
আধঘণ্টা হয়ে গেল। মেজর বললেন।
গোরানসাহেব চুপচাপ শুনছিলেন। বাংলায় কথা হলে তিনি যে কিছুই বুঝতে পারছেন না তা কিন্তু বুঝতে দিচ্ছেন না। এখন ওঁর মুখে সেই বীভৎস অভিব্যক্তি নেই। বেশ শান্তমুখে বসে আছেন এখন।
অর্জুন ঘড়ি দেখল, আপনারা গাড়িটাকে কখন আসতে বলেছেন?
এসে গেছে। তাতে চড়েই তোমাদের এখানে এলাম। বড় রাস্তায় রাখতে বলেছি, গলিতে ঢোকাইনি। আমরা তো ট্রেন ধরতে যাচ্ছি না। কথাগুলো বলে মায়ের দিকে তাকালেন মেজর। মা হেসে ভেতরে ঢুকে গেলেন।
গোরানসাহেব এবার কথা বললেন, আজকে যদি তেমন কিছু না ঘটে তা হলে আমার মনে হয় কালই রওনা হওয়া ভাল।
ঠিক। মেজর মাথা নাড়লেন, অর্জুন, এখান থেকে হাসিমারায় যেতে কতক্ষণ লাগবে?
রাস্তা ভাল নয়। অন্তত আড়াই-তিন ঘণ্টা ধরে নিতে পারেন।
বাঃ। তা হলে আমরা বেলা বারোটা নাগাদ রওনা হতে পারি।
কথাবার্তা ইংরেজিতে হচ্ছিল। গোরানসাহেব জিজ্ঞেস করলেন, কালকে ওখানে গিয়ে কোনও হোটেল বা গেস্ট হাউসে নিশ্চয়ই ওঠা যাবে?
অর্জুন মাথা নাড়ল, না। ওদিকে হোটেল আছে ফুন্টশলিং-এ। হাসিমারার আধঘণ্টা দূরে। শহরটা ভুটানের বর্ডারে। কিন্তু ডাকবাংলো আছে, ফরেস্ট বাংলো পাবেন। মনে হয় খালি পাওয়া যাবে।
গোরানসাহেব বললেন, না পাওয়া গেলেও ক্ষতি নেই, আমাদের সঙ্গে টেন্ট আছে। আশা করি টেন্টে থাকতে তোমার অসুবিধে হবে না।
আমার? অবাক হল অর্জুন।
হ্যাঁ। মেজর বলেছেন তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। তাই তো?
এটা তো বলার দরকার পড়ে না। উত্তরবাংলায় অভিযান করব আর তুমি সঙ্গে থাকবে না এটা আমি ভাবতেই পারি না। মেজর হাসলেন।
এই সময় মা একটা ট্রে হাতে ঢুকলেন। তাতে বড়বড় চিনেমাটির বাটিতে গাঢ় পায়েস থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পায়েসের বুকে কিশমিশ ফুলে উঠেছে। মেজর চিৎকার করে উঠলেন, গ্র্যান্ডি?
অর্জুন অবাক হয়ে গেল। মায়ের সঙ্গে মেজরের কথা হয়েছে এবং তার ফলে হল এই পায়েস। মেজর তখন গোরানসাহেবকে নিয়ে পড়েছেন, এটাকে বলে পায়েস। অমৃত। তোমাদের দেশে এ-জিনিস পাবে না। এর চেয়ে ভাল ডিনার আমি আর কিছুই আশা করতে পারি না।
মা বললেন,তোরা অনেকদূরে যাবি। ফিরতে রাত হলে তো খাবি না। তাই একটু পায়েস করে দিলাম। নলেন গুড় বাড়িতে ছিল— কেমন হয়েছে কে জানে?
মেজর এবং গোরানসাহেব একসঙ্গে প্রশংসা শুরু করলেন। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে গেল যে, মা লজ্জা পেয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
বেরোবার সময় মা জিজ্ঞেস করলেন, তোরা কতদূরে যাচ্ছিস?
হুতুমপুর। অর্জুন জবাব দিল।
সে আবার কোথায়?
এখান থেকে ঘণ্টাখানেক।
কারও সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিস?
হ্যাঁ।
অর্জুন আর কথা বাড়াল না। গোরানসাহেব যাদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তাদের কথা শুনলে মা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করবেন। জীবনে আর কখনও মেজরদের বেঁধে কিছু খাওয়াবেন না। বাঙালি মায়েরা এখনও বিশ্বাস করেন তেনাদের সঙ্গে মজা করা ঠিক নয়। কখন কী হয়ে যাবে কিছুই বলা যায় না।
অর্জুন ড্রাইভারের পাশে বসে ছিল। হাইওয়ের দিকে যেতে-যেতে ড্রাইভার বলল, এত রাত্রে আপনারা যেতে চাইলেন, আমি টাকার লোভে না বললাম না। কিন্তু–।
কি-কিন্তু? মেজর পেছন থেকে খেকিয়ে উঠলেন।
খুব ডাকাতি হচ্ছে সার। হাইওয়েতে এখন ডাকাতি লেগেই আছে।
অর্জুন মাথা নাড়ল, হ্যাঁ, হয়েছে। কিন্তু এখন আর হবে না।
আপনি কী বলছেন সার? কাল রাত্রেও হয়েছে।
বললাম তো, আর হবে না।
আপনি শোনেননি বোধ হয়। একটা বেড়াল এসে রাস্তা কাটে, গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়, আর তখনই ডাকাতরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। ড্রাইভার জোর করে বোঝাবেই।
পড়লে পড়বে। আমাদের সঙ্গে আছেটা কী যে, ডাকাতি করবে।
মেজর প্রসঙ্গটা থামাতে চাইলেন, তা ছাড়া আমাকে তুমি ডাকাত দেখিও না। জীবনে কত ডাকাত দেখলাম। সেবার সাহারার বুটে টেন্ট খাটিয়ে বসে সবে হুইস্কিতে চুমুক মেরেছি, সঙ্গে সঙ্গে উটের পিঠে চেপে কালিবান ডাকাতরা এসে হাজির।
অর্জুন জিজ্ঞেস করল, কী বললেন কথাটা? তালিবান, না কালিবান?
কালিবান। তালিবানরা আফগানিস্তানে, কালিবান সাহারায়। গুলিয়ে ফেলো না। একা, বুঝলে, স্রেফ একা এই হুইস্কির বোতল হাতে নিয়ে এমন বক্তৃতা দিলাম যে, ব্যাটারা হাত পেতে বসে পড়ল। সবাইকে হুইস্কি খাওয়াতে খুশি হয়ে চলে গেল। আমাকে ডাকাত দেখাতে এসেছ?
মেজরের কথা শেষ হতেই অর্জুন বলল, তোমার ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। যারা ডাকাতি করছিল তারা একটু আগে ধরা পড়েছে।
আমাদের শহরে?
হ্যাঁ। রেসকোর্স পাড়ার সন্দীপকে চেনো?
আই বাপ! অত বড়লোকের ছেলে ডাকাতি করে?
ওকে তুমি চেনো?
চিনব না? আমাদের পাড়ার কাবুল ওর জিগরি দোস্ত। কাবুলটা খুব ভাল বাইক চালাত। দুবছর আগে অ্যাক্সিডেন্টে ওর পা দুটো উড়ে যায়। ওর কাছেই যায় সন্দীপ। ছেলেবেলার বন্ধু বলেই এখনও টান আছে।
কোন পাড়া তোমাদের?
আদরপাড়া। ড্রাইভার মাথা নাড়ল, আমি ভাবতেই পারছি না।
পেছন থেকে মেজর বললেন, পৃথিবীতে থাকার মজা এটাই। যা ভাবতে পারবে না তাই ঘটতে দেখবে। কত দেখলাম।
ড্রাইভার আর কথা বাড়াল। গাড়ি তিস্তা ব্রিজে উঠল। দুপাশে ঘন অন্ধকার। শুধু ব্রিজের আলোগুলো জ্বলছে। এখন এই হাইওয়েতে গাড়ি খুব কমে গিয়েছে। মাঝে মাঝে লাইন দিয়ে ট্রাক যাচ্ছে।
বার্নিশের মোড়ে এসে দুটো পান-বিড়ির দোকান খোলা পেল ওরা। হুতুমপুরের কথা জিজ্ঞেস করতেই রাস্তার হদিস পাওয়া গেল। বাইপাস ধরে আর একটু এগিয়ে গেলে ডান দিকে মাটির পথ ধরে দুই ক্রোশ যেতে হবে। অর্জুন জানে এই দুই ক্রোশের কথা স্রেফ আন্দাজে বলল লোকটা।
শেষপর্যন্ত মাটির রাস্তাটা চোখে পড়তেই গাড়িটাকে ডান দিকে ঘোরাতে বলল অর্জুন। নির্জন রাস্তার একপাশে একটা জিপ দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি দেখে জিপ থেকে নেমে এলেন দুজন পুলিশের পোশাক পরা মানুষ। হাত নেড়ে থামতে বললেন। ড্রাইভার গাড়ি থামালে একজন সাব ইনস্পেক্টর এগিয়ে এলেন পাশে।
আপনারা কোত্থেকে আসছেন?
জলপাইগুড়ি। অর্জুন উত্তর দিল। হুতুমপুরে যাবেন?
হ্যাঁ।
আপনাদের নামটা জানতে পারি?
আমি অর্জুন।
নমস্কার সার। এস. পি. সাহেবের কাছ থেকে ফোন এসেছে। আপনারা আমাদের গাড়িটাকে ফলো করুন।
কেন? আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?
আপনাদের সঙ্গে থাকতে বলেছেন এস.পি, সাহেব।
আরে না না। আমরা ওখানে যাচ্ছি এই কথাটাই শুধু জানাতে বলেছিলাম লোকাল থানাকে, এসকর্ট চাইনি।
ও। কিন্তু ওখানকার কোনও মানুষকে কি আপনারা চেনেন?
না। আমরা গ্রামে ঢুকব না। গ্রামের পাশে তেঁতুলবন আছে, সেখানে যাব।
তেঁতুলবন? ডেঞ্জারাস জায়গা সারা দিনের বেলাতেই কেউ যায় না সেখানে।
এঁরা তাই যেতে চান।
মুশকিলে পড়লাম। অফিসার চিন্তিত হলেন।
কেন?
রাতবিরেতে আপনাদের ডাকাত বলে ভুল করে গ্রামের লোক যদি হামলা করে? অবশ্য তেঁতুলবনে গেলে ওরা জানতে পারবে না।
এক কাজ করুন। আপনার জিপ এখানে থাক। আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন। তেমন হলে গ্রামের লোকদের বোঝাতে পারবেন।
আমি? না না। এই রামরতন, এদিকে এসো। সাহেবদের সঙ্গে যাও।
রামরতনের কানে সম্ভবত তেঁতুলতলার কথা পৌঁছেছিল। সে বলল, সার, আমার মনে হয় আপনার যাওয়াই ভাল। আমার বাঁ পায়ে খুব ব্যথা।
এতক্ষণ তো ব্যথার কথা শুনিনি, অমনি ব্যথা হয়ে গেল? অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তেঁতুলতলার কথা শুনে ভয় পাচ্ছেন কেন?
ভয়? ভয় ঠিক নয়। ঠিক আছে, চলুন।
অতএব অফিসার গাড়িতে উঠলেন। উঠে মেজরদের দিকে তাকিয়ে অন্ধকারেই নমস্কার করলেন, নমস্কার সার। আমার নাম উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়।
অর্জুন বলল, সর্বনাশ।
আর বলবেন না। মা আমার সর্বনাশ করে গেছেন। অত বিখ্যাত একজন মানুষের নামে কেউ নাম রাখে?
কোনও অন্যায় করেননি তিনি, মেজর বললেন, সার আশুতোষ, সুভাষচন্দ্র, বিধান রায়ের নামে যদি নাম রাখা যায় তা হলে উত্তমকুমারেও দোষ নেই। তা উত্তমকুমারবাবু, তেঁতুলবন কতখানি জায়গা নিয়ে বলুন তো?
প্রায় সিকি মাইল। ভয়ঙ্কর জায়গা সার, দিনের বেলায় গা ছমছম করে।