আচ্ছা, তুমি যে বলছিলে ঘরে ঢুকে যখন তুমি বেগম সাহেবাকে মৃত দেখ তখন রাত দুটো–ঠিক রাত দুটো তা কি করে বুঝলে?
ঘড়িতে ঢং ঢং করে দুটো বেজেছিল।
ঐ সময় বারান্দায় জুতোর মম্ মম্ শব্দ শোনা গেল। কিরীটী চোখ তুলে তাকায় দরজার দিকে।
মানিকবাবু, দেখুন তো কে এলো!—কিরীটী শুধায়।
মানিকবাবুকে আর দেখতে হলো না। সুদর্শন একটি যুবাপুরুষ কক্ষে এসে প্রবেশ করল।
ইনি?—কিরীটী প্রশ্ন করে।
মানিক চাটুয্যে বলে, নাসির হোসেন, নবাব সাহেবের বোন সুলতানা বেগমের ছেলে।
কিরীটী তাকাল।
নাসির হোসেন। আলী সাহেবের একমাত্র ভগিনী সুলতানা বেগম সাহেবার একমাত্র সন্তান। নাসির হোসেনের বয়স বেশী হবে না। ত্রিশের নীচে বলেই মনে হয়। দোহারা চেহারা। মাথায় কোঁকড়া কোঁকড়া চুল। দাড়িগোঁফ নিখুঁতভাবে কামানো। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম। চোখেমুখে একটা বুদ্ধির দীপ্তি আছে। চোখে চশমাদামী সোনার ফ্রেম। পরনে টেরিলিনের আমেরিকান কাটের প্যান্ট ও বুশ শার্ট। পায়ে চপ্পল।
একা নাসির হোসেনই নয়, তার পিছন পিছন ঘরে এসে প্রবেশ করেন নবাব সাহেবের সরকার বা সেক্রেটারী সৌমেন কুণ্ডু মশাইও। শেষোক্ত ব্যক্তির বয়স ত্রিশের ঊর্ধ্বে বলেই মনে হয়। রোগা পাকানো চেহারা। গায়ের রং কুচকুচে কালো। মুখে ছোট ছোট কাঁচাপাকা দাড়ি। বোধ হয় ভদ্রলোক নিয়মিত ক্ষৌরকর্ম করেন না।
কথা বললেন প্রথমে সৌমেন কুণ্ডুই, চাটুয্যে সাহেব নাসির সাহেব বলছিলেন—
নাসির হোসেনই এবার কুণ্ড মশাইয়ের অর্ধসমাপ্ত কথাটা শেষ করলো, আমার বিশেষ কাজ আছে চাটুয্যে সাহেব, আমাকে একবার অনুমতি দিতে হবে আমি বাইরে যাবো।
মানিক চাটুয্যে নিঃশব্দে কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল।
আপনিই নাসির হোসেন সাহেব?
কিরীটী মৃদু কণ্ঠে প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ।
মিঃ কুণ্ডু, আপনি একটু বাইরে যাবেন—আমার নাসির হোসেন সাহেবের সঙ্গে কিছু কথা আছে।
সৌমেন কুন্ডু তখুনি বাইরে চলে গেলেন। এবার কিরীটী নাসির হোসেনের দিকে তাকাল। কিছু মনে করবেন না হোসেন সাহেব, আপনি কি ফিলমের–মানে ছবির কোন বিজনেস করেন?
হ্যাঁ, আমার একটি নিজস্ব চিত্র-প্রতিষ্ঠান আছে।–নাসির হোসেন জবাব দিলেন।
তাই আপনার ছবি আমি সিনেমা কাগজে দেখেছি। রিসেন্টলি কি একটা হিন্দি সিনেমা কাগজ আপনার কি সব ছবি নিয়ে লিখেছে। তাতে প্রথমেই আপনার ছবি আছে। একটা পাইপ হাতে–
মৃদু হাসলো নাসির হোসেন, হ্যাঁ, বের হয়েছে আমার নতুন ছবি ইয়ে জিন্দিগী কিতনী পিয়ারা হ্যায়।
বেশ সুন্দর নামটা তো ছবির।–কিরীটী বলে।
আমারই গল্প—আমারই সিনারি ও ডাইরেকশন।
তাই বুঝি?
কিরীটী আবার নাসির হোসেনের মুখের দিকে তাকাল।
হ্যাঁ।
আপনি তো তাহলে দেখছি অসাধারণ গুণী ব্যক্তি। তা মিউজিকটাও দিলেন না কেন আপনার ঐ ছবিতে ঐ সঙ্গে?
পরের ছবিতে দিচ্ছি।
হ্যাঁ দেবেন। সবই একহাতে—এক ব্রেন থেকে এলে জিনিসটা একটা সত্যিকারের ক্রিয়েশন হয়।
হ্যাঁ—আজকাল কেউ কেউ তাই করছেনও।
কিরীটী আবার প্রশ্ন করে, তা আপনার অফিস কোথায়?
বম্বেতেও আছে, এখানেও আছে। বম্বেতেমহালক্ষীতে, আর কলকাতায় ওয়াটারলু স্ট্রীটে—
সুটিং কোথায় হয়?
বম্বে কলকাতা দু জায়গাতেই। যখন যেমন প্রয়োজন হয়।
আপনার শেষ বই কি ছিল হোসেন সাহেব?
ইয়ে দুনিয়া গোল হ্যায়।
বাঃ, বেশ সুন্দর নাম তো!
হ্যাঁ, একদল মিল ওয়াকার্সদের নিয়ে গল্প–
হুঁ-আচ্ছা হোসেন সাহেব—আপনাদের তো শুনেছি এক একটা ছবি বিশেষ করে হিন্দি ছবি করতে প্রচুর টাকা লাগে, মানে লাখ লাখ টাকার ব্যাপার—তাই না?
নাসির হোসেন হেসে বলে, তা তো লাগেই।
তা কি ভাবে টাকাটা আপনি যোগাড় করেন?
ডিস্ট্রিবিউটররা দেয় অগ্রিম!
তাহলেও ইনিসিয়ালি তো একটা মোটা টাকা লাগেই?
তা লাগে।
আপনার মামা মানে নবাব সাহেবই বোধ হয় সে টাকাটা আপনাকে দেন?
একবার দিয়েছেন।
আর দেন নি?
না, তবে তবে?
এবার দেবেন বলেছেন যে নতুন ছবিটা ইস্টম্যান কালারে করবো ঠিক করেছি, সেটায় ফিনান্স করবেন হয়তো
হয়ত কেন বলছেন? সন্দেহ আছে নাকি কিছু?
মানে বাধা দিয়েছিলেন আমার ছোট মামী।
মানে জাহানারা বেগম—যিনি—
হ্যাঁ।