০৮. জরুরি একটা সভা বসেছে

জরুরি একটা সভা বসেছে–কোয়াকম্পের অনুরোধেই এই জরুরি সভাটি ডাকা হয়েছে। সভাতে শারীরিকভাবে কেউ আসে নি, সবাই নিজের নিজের অফিসে বসেই সভায় হাজির হয়েছে। হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে সবারই মনে হচ্ছে তার চারপাশে অন্যরা বসে আছে। সভার শুরুতে প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রধান রিওন বলল, তোমাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাদের সভা শুরু করছি। আজকের সভায় তোমাদের অন্য সভার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোয়াকম্প সক্রিয়ভাবে উপস্থিত থাকবে। আমাদের সঙ্গে সে যেন সহজভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য আজকে তার ইন্টারফেসের সঙ্গে একটা কণ্ঠস্বর সিনথেসাইজার লাগানো হয়েছে। ও

কৃত্রিম কালো টেবিল ঘিরে বসে থাকা সামাজিক দপ্তরের প্রধান, আইন বিভাগের প্রধান, শিক্ষা বিভাগের প্রধান, স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সবাই একটু নড়েচড়ে বসল। সব গুরুত্বপূর্ণ সভাতেই কোয়াক উপস্থিত থাকে তবে সেটা হয় নীরব উপস্থিতি। সভার কথাবার্তাগুলো কোয়াকম্পের তথ্যভাণ্ডারে সরাসরি চলে যায়। সক্রিয়ভাবে কণ্ঠস্বর সিনথেসাইজারসহ কথা বলতে পারে এভাবে কোয়াকম্প খুব বেশি উপস্থিত থাকে না।

রিওন বলল, কোয়াকম্প, তুমি কি সভার শুরুতে আমাদের উদ্দেশে কিছু বলতে চাও?

কোয়াকম্পের ভাবলেশহীন শুষ্ক গলার স্বর শোনা গেল, তোমাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। তোমাদের সেবা করার সুযোগ পেয়ে আমি ধন্য হয়েছি।

রিওন বলল, কোয়াকম্প, তোমার অনুরোধে আজকের এই সভাটি ডাকা হয়েছে। তুমি কি বলবে ঠিক কী নিয়ে আজ আলোচনা শুরু হবে?

কোয়াকম্প বলল, আমি আমাদের নূতন প্রজন্ম নিয়ে আলোচনা করতে চাই।

চমৎকার! রিওন বলল, আমরা আমাদের কিছু পরিসংখ্যান নিয়ে শুরু করছি। আমাদের তরুণ সমাজকে নিয়ে আমি খুব চিন্তিত। আমাদের শতকরা পনের ভাগ তরুণ তরুণী আত্মহত্যা করছে। শতকরা তিরিশ ভাগ মাদকাসক্ত। শতকরা চল্লিশ ভাগ। হতাশাগ্রস্ত। বলা যায়, মাত্র পনের ভাগ মোটামুটিভাবে স্বাভাবিক। সেটাও খুব আশাব্যঞ্জক না। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরো অবস্থাটা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

শিক্ষা বিভাগের প্রধান বলল, একটা সময় ছিল, লেখাপড়া এবং জ্ঞানচর্চার পুরো বিষয়টা ছিল খুব কঠিন। কোয়াকম্প আসার পর থেকে পুরো বিষয়টা এখন হয়েছে খুব। সহজ। কিন্তু তারপরও তরুণ-তরুণীদের লেখাপড়ায় আগ্রহ নেই। তারা কিছু শিখতে চায় না। কিছু জানতে চায় না।

সামাজিক দপ্তরের প্রধান কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কোয়াকম্প তাকে বাধা দিয়ে বলল, মানুষের পরিসংখ্যান নিয়ে একটা ভীতি আছে। আমি কোয়ান্টাম কম্পিউটার হিসেবে তোমাদের আশ্বস্ত করতে চাই, পরিসংখ্যান নিয়ে তোমরা বিচলিত হয়ো না। তোমরা তোমাদের মূল লক্ষ্য এবং মূল উদ্দেশ্যটার দিকে নজর দাও। যতক্ষণ পর্যন্ত মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যের দিকে তোমরা অগ্রসর হতে পারবে, তোমাদের ভয়ের কিছু নেই।

রিওন ভুরু কুঁচকে বলল, কিন্তু আমরা কি অগ্রসর হতে পারছি?

কোয়াকম্প শুক স্বরে বলল, পারছি। তোমাদের জীবনের মান আগের থেকে উন্নত হয়েছে। আমরা আমাদের শক্তির প্রয়োজন প্রায় মিটিয়ে ফেলেছি। শক্তির অভাব ঘুচিয়ে ফেলাই হচ্ছে মানবসভ্যতার সত্যিকারের লক্ষ্য। যদি অফুরন্ত শক্তি থাকে তা হলে আমরা যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারব।

সামাজিক দপ্তরের প্রধান বিড়বিড় করে বলল, কিন্তু নূতন প্রজন্মের মনে যদি আনন্দ না থাকে, সুখ না থাকে তা হলে অফুরন্ত শক্তি দিয়ে আমরা কী করব?

কোয়ান্টাম কম্পিউটার বলল, এই একটি বিষয়ে আমি তোমাদের বুঝতে পারি না। আনন্দ এবং সুখ। আমি আগেও লক্ষ করেছি, আনন্দ এবং সুখ কথাগুলো মানুষ অনেক সময় বিপরীত অর্থে ব্যবহার করে। আমার ধারণা, যে পরিবেশে মানুষের সুখী হওয়ার কথা, অনেক সময়ই সেই পরিবেশে তারা অসুখী। যেই পরিবেশে তাদের আনন্দ পাওয়ার কথা, সেই পরিবেশে অনেক সময় তাদের মানসিক যন্ত্রণা হয়। আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারি না।

রিওন হাসার চেষ্টা করে বলল, তোমার সেটা নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, কোয়াকম্প। মানুষ নিজেও অনেক সময় সেটা বুঝতে পারে না।

সামাজিক দপ্তরের প্রধান বিড়বিড় করে বলল, মানুষকে বোঝা এত সহজ নয়।

শিক্ষা দপ্তরের প্রধান বলল, নূতন প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহের খুব অভাব, তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সব সময় আমাদের নূতন কিছু খুঁজে বের করতে হয়। কিছুদিন আগে একটা কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে, সেই কনসার্টে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন দিয়ে মস্তিষ্কে রেজোনেন্স করা হয়েছে। এর আগে আমরা নূতন একটা পানীয় বাজারে ছেড়েছিলাম-খুব হালকাভাবে স্নায়ু উত্তেজক। নূতন ফ্যাশন বের করতে হয়, নূতন গ্যাজেট বের করতে হয়। সব সময় আমাদের নূতন কিছু দেওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও গলায় বলল, আমার মনে হয় নূতন প্রজন্মকে ব্যস্ত রাখার জন্য নূতন আরো একটা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া যায়।

কী প্রজেক্ট?

আমাদের হাতে একটা জলমানব আছে।

রিওন চমকে উঠে বলল, কী বললে? জলমানব?

হ্যাঁ।

তুমি কোথা থেকে জলমানব পেয়েছ?

যে জলমানবটাকে তুমি তার এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলে, আমি সেটাকে পরীক্ষা করার জন্য জৈব ল্যাবরেটরিতে নিয়ে এসেছি।

রিওন কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারল না, কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, কিন্তু কিন্তু আমি আমার মেয়েকে কথা দিয়েছিলাম সেই জলমানবটাকে তার এলাকায় ফিরিয়ে দেব।

আমি জানি। কোয়ান্টাম কম্পিউটার শুক গলায় বলল, কিন্তু এই জলমানবটা আমাদের প্রয়োজন ছিল। জলমানবদের বিবর্তন নিয়ে আমাদের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, সেটা কতটুকু সত্যি পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন ছিল।

রিওন অধৈর্য গলায় বলল, কিন্তু আমি আমার মেয়ের সামনে মিথ্যাবাদী প্রিমাণিত হয়েছি।

তোমার মেয়ে যদি কখনো সত্যি কথাটা জানতে পারে তা হলে তুমি মিথ্যাবাদী প্রিমাণিত হবে। তার সত্যি কথাটা জানার কোনো প্রয়োজন নেই।

রিওন হতাশার ভান করে বলল, কিন্তু কিন্তু

কোয়ান্টাম কম্পিউটার কঠিন গলায় বলল, তোমরা মানুষেরা ছোট বিষয় নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়। প্রতিদিন খাবারের জন্য তোমরা শত শত প্রাণী হত্যা কর। অথচ বিশেষ প্রয়োজনে একটি জলমানব ধরে নিয়ে আসা হলে সেটি তোমাদের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়?

রিওন মাথা নাড়ল, বলল, কোয়াকম্প, তুমি বুঝতে পারছ না। মানুষের ভেতরে যারা আপনজন, তাদের ভেতরে একটা সম্পর্ক থাকে। সেই সম্পর্কটা হচ্ছে বিশ্বাসের সম্পর্ক। একজন মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক নষ্ট করে না। নষ্ট করতে চায় না

কোয়াকম্প রিওনকে বাধা দিয়ে বলল, আমার একটা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্ব পালন করার জন্য আমাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তোমাদের সেই সিদ্ধান্তগুলো মেনে নিতে হবে। তোমরা নিশ্চয়ই অস্বীকার করতে পারবে না যে আমি এখন পর্যন্ত কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিই নি কিংবা এখন পর্যন্ত আমার কোনো ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রিমাণিত হয় নি।

রিওন বলল, কোয়াকম্প, তোমার কাছে আমাদের সব তথ্য জমা থাকে। তুমি সেগুলো বিশ্লেষণ কর-কাজেই তোমার ভুল সিদ্ধান্ত নেবার কোনো সুযোগ নেই। তোমার ভবিষ্যদ্বাণীও ভুল হতে পারবে না। যেদিন তোমার সিদ্ধান্ত কিংবা ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রিমাণিত হবে সেদিন তুমি আর আমাদের দায়িত্ব নিতে পারবে না। তোমাকে সেদিন বিদায় নিতে হবে।

কোয়াকম্প এক মুহূর্ত দ্বিধা করে বলল, হ্যাঁ রিওন। তোমার কথা সত্যি।

যাই হোক, আমরা আগের কথায় ফিরে যাই। রিওন বলল, তুমি জলমানব নিয়ে কিছু একটা বলছিলে।

কোয়াকম্প বলল, হ্যাঁ, জলমানব নিয়েও আমার সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। তারা। পানিতে অত্যন্ত কঠিন একটা জীবন যাপন করে, সেই জীবনে কোনো সৃজনশীলতা নেই। কাজেই যতই সময় যাচ্ছে ততই তাদের বুদ্ধিমত্তা কমে আসছে। বিবর্তন উল্টো দিকে গেলে কী হতে পারে জলমানব হল তার প্রিমাণ। জলমানবটি ধরে নিয়ে এসে আমি তাকে পরীক্ষা করে দেখেছি। বুদ্ধিমত্তার নিনীষ স্কেলে সে মাত্র প্রথম স্কেলে। তার বয়সী একজন সাধারণ মানুষ থাকে সপ্তম স্কেলে। জ্ঞান-বিজ্ঞান দূরে থাকুক, সাধারণ সংখ্যা পর্যন্ত সে জানে না। ছোট সংখ্যা যোগ করতে পারে, বিয়োগ করতে পারে না। এই মুহূর্তে আমরা তাদের জলমানব বলে সম্বোধন করি, আগামী শতক পরে তাদের জলজ প্রাণী বলে সম্বোধন করা হবে।

হলোগ্রাফিক কালো টেবিল ঘিরে থাকা অনেকেই সম্মতির ভঙ্গি করে মাথা নাড়ল। কোয়াকম্প তার ভাবলেশহীন গলায় একঘেয়ে সুরে বলল, জলমানব বুদ্ধিমত্তার দিকে অনেক পিছিয়ে গেলেও শারীরিকভাবে একটা চমকপ্রদ ক্ষমতার অধিকারী। এই জলমানবটি দীর্ঘসময় পানির নিচে নিঃশ্বাস না নিয়ে থাকতে পারে। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, এই জলমানবটি পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন তার ত্বকের ভেতর দিয়ে নিতে পারে। খুব বেশি পরিমাণে নয়, কিন্তু কয়েক মিনিট বেশি বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট।

শিক্ষা দপ্তরের প্রধান অবাক হয়ে বলল, সত্যি?

 হ্যাঁ সত্যি। কোয়াকম্প বলল, তার শারীরিক চমকপ্রদ ক্ষমতার কথা খুব বেশি মানুষ জানে না, কিন্তু যে জিনিসটা অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে নেবে সেটা হচ্ছে তার সুঠাম শরীর আর দৈহিক সৌন্দর্য। আমাদের নূতন প্রজন্মের অনেকের কাছেই সেটা অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হতে পারে। সেটা আমাদের জন্য একটা সমস্যা হতে পারে।

রিওন ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, কী সমস্যা?

জলমানব একটি জন্তু ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু নূতন প্রজন্ম যদি তাদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে তা হলে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

রিওন কঠিন মুখে জিজ্ঞেস করল, কেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে। সমুদ্রের বুকে ঝড়বৃষ্টি টাইফুনে তারা এমনিতেই ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু যত তাড়াতাড়ি শেষ হবার কথা, তারা এত তাড়াতাড়ি শেষ হচ্ছে না। টাইফুনের সময় তারা কেউ ছিল না, টাইফুন শেষে হঠাৎ করে তারা হাজির হয়েছে। তারা পর মতো বেঁচে থাকতে শিখে যাচ্ছে। পশুর মতো বেঁচে থাকবে পশুরা, মানুষের জন্য পশুর মতো বেঁচে থাকা ঠিক নয়। আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

রিওন শীতল গলায় জিজ্ঞেস করল, তা হলে তুমি কী করতে চাও?

কোয়াকম্প শুষ্ক গলায় বলল, আমি আমাদের নূতন প্রজন্মের ভেতর আর জলমানবের ভেতর একটা দূরত্ব তৈরি করতে চাই।

তুমি সেটা কীভাবে করবে?

জলমানব যে মানুষ থেকে একেবারেই ভিন্ন আমি সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

শিক্ষা দপ্তরের প্রধান বলল, তুমি সেটা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে?

কাজটি সহজ। জলমানব একটা জন্তুর মতো, তাকে অন্য কোনো জন্তুর সাথে প্রদর্শন করতে হবে।

উপস্থিত যারা ছিল তারা সবাই সম্মতির ভঙ্গি করে মাথা নাড়তে থাকে। শুধু রিওন বলল, আমার মেয়ে এখনো আসল ব্যাপারটি জানে না। প্রদর্শনী হলে নিশ্চিতভাবে জেনে যাবে। আমি তখন তার সামনে মুখ দেখাতে পারব না।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার রিওনের আপত্তিটুকু গায়ে মাখল না, বলল, সামুদ্রিক কোনো প্রাণীর সঙ্গে এই জলমানবের যুদ্ধের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তরুণ প্রজন্ম স্বচক্ষে দেখতে পেলে সেটি খুব উপভোগ করবে।

শিক্ষা দপ্তরের প্রধান বলল, হ্যাঁ, সেরকম একটা কিছু করতে হবে। শুধু একটা প্রদর্শনী হলে কেউ যাবে না। আজকালকার ছেলেমেয়েরা মিউজিয়াম বা চিড়িয়াখানাতেও যায় না। তারা সাধারণ কিছু দেখে আনন্দ পায় না। সেখানে তায়োলেন্স থাকতে হয়। উত্তেজনা থাকতে হয়। মস্তিষ্কে স্টিমুলেশন থাকতে হয়।

রিওন বলল, আমি এখনো বুঝতে পারছি না জলমানবকে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করলে কেন আমাদের তরুণ প্রজন্মের সাথে দূরত্বের সৃষ্টি হবে।

কোয়াকম্প শান্ত গলায় বলল, সেটা নির্ভর করবে তাকে কীভাবে প্রদর্শন করা হয় তার ওপর। আমরা তাকে পশু হিসেবে উপস্থাপন করব, সে অন্য পশুর সাথে থাকবে, পশুর মতো। আচরণ করবে।

রিওন বলল, আমি এখনো নিশ্চিত নই।

কোয়াকম্প শীতল গলায় বলল, তোমার নিশ্চিত হবার কোনো প্রয়োজন নেই রিওন। বিষয়টাকে তুমি আমার হাতে ছেড়ে দাও। মনে রেখ আমি তোমাদের একমাত্র কোয়ান্টাম কম্পিউটার হিসেবে তোমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি। আমার ওপরে বিশ্বাস রেখ।

রিওন কোনো কথা না বলে একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

কোয়াকম্প বলল, প্রদর্শনীটার আয়োজন করবে সামাজিক দপ্তর। শুধু প্রদর্শনী হলে হবে না তার সাথে থাকতে হবে একটা কনসার্ট

সামাজিক দপ্তরের প্রধান বিড়বিড় করে বললেন, শুধু আমাদের পক্ষে এ রকম একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করা সম্ভব হবে না। বিষয়টার দায়িত্ব আরো কাউকে দিতে হবে।

কথাটা লুফে নিয়ে কোয়াকম্প বলল, হ্যাঁ। আমরা এই জলমানবকে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিতে পারি, তারা একে ব্যবহার করে যা করা দরকার তা-ই করতে পারবে। যেখানে অর্থের বিনিময় নেই সেখানে সৃজনশীলতা নেই।

রিওন কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে বসে রইল। হঠাৎ করে সে সভায় কথা বলার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। সে হঠাৎ করে কোয়াকম্পের সত্যিকারের পরিকল্পনাটা বুঝতে পেরেছে। নূতন প্রজন্মের উপস্থিতিতে এই জলমানবটিকে কোনো জলজ প্রাণীকে দিয়ে হত্যা করানো হবে। সেই হত্যাকাণ্ডটি করানো হবে সবার সম্মতিতে– সবার আগ্রহে। না জেনে না বুঝেই নূতন প্রজন্ম সম্মিলিতভাবে এই ঘটনার দায়তার গ্রহণ করবে। অপরাধবোধ থেকে তাদের ভেতরে জন্ম নেবে ক্রোধ আর ঘৃণা! জলমানবের বিরুদ্ধে ক্রোধ, জলমানবের জন্য ঘৃণা!

রিওন হঠাৎ করে নিজের ভেতরেই একধরনের ঘৃণা অনুভব করতে থাকে।