অপূর্ব্ব সংগ্রাম, না হয় বিরাম,
হৈল জরাসন্ধ ভীমে।
গজরাজ নক্রে, বৃত্রাসুর শক্রে,
যেমত রাবণ-রামে।।
কেশ-বাস সারি, করে গদা ধরি,
দুই জন হৈল আগে।
কর্কশ বচন, করিছে ভৎসন,
দুই জন মত্ত রাগে।।
আরে রে পাণ্ডব, কোথা রে খাণ্ডব,
আইলা মগধ-দেশে।
নিকট মরণ, এই যে কারণ,
দৈবে বান্ধি আনে পাশে।।
শুনিয়া তর্জ্জন, করিয়া গর্জ্জন,
বলিছে কুন্তীর সুত।
তোমারে শমন, করিল স্মরণ,
আমি হয়ে এলাম দূত।।
ক্রোধে বৃকোদর, কম্পে কলেবর,
যেমন কদলীপাত।
মণ্ডলী করিয়া, ত্বরিত ফিরিয়া,
দোঁহে করে করাঘাত।।
বিপরীত নাদ, পড়িল প্রমাদ,
শ্রবণে লাগিল তালা।
দন্ত কড়মড়, শ্বাসে বহে ঝড়,
উড়ি যায় মেঘমালা।।
করে করে ছাঁদি, পদে পদে বাঁধি,
দুইজনে দোঁহা টানে।
ক্ষণে দোঁহা ছাড়ি, শিরে শিরে তাড়ি,
হৃদয়ে হৃদয় হানে।।
লোহিত নয়ন, লোহিত বদন,
নেহারে সকোপ দৃষ্টি।
দন্ত কড়মড়, মারিছে চাপড়,
বজ্র সম চড় মুষ্টি।।
ঊরুতে জঘনে, ছান্দিল সঘনে,
ভূমে গড়াগড়ি যায়।
শ্রম-জল অঙ্গে, রণ-ধূলি সঙ্গে,
ঢাকিল দোঁহার গায়।।
রুধিরে জর্জ্জর, দুই কলেবর,
অন্তর হইয়া ক্ষণে।
ক্রোধে কায় কম্পে, পুনঃ পুনঃ ঝম্পে,
দোঁহা’পর দুই জনে।।
ঘোর নাদ চট, দোঁহে বাহুস্ফোট,
গভীর গর্জ্জনে গর্জ্জে।
পদে ভূ বিদরে, চাপিয়া অধরে,
তর্জ্জনী তুলিয়া তর্জ্জে।।
সে দোঁহে দোঁহারে, গদার প্রহারে,
হৃদে ভুজ-শির-পিঠে।
ঘোরতর রণ, দেখি সর্ব্বজন,
গদাঘাতে অগ্নি উঠে।।
কেন নহে ঊন, ধরি পুনঃ পুনঃ,
হৃদয়ে হৃদয় চাপে।
ভুজে ভুজে তাড়ি, ভুমিতলে পাড়ি,
পুনঃ দোঁহে উঠে লাফে।।
যেন দ্বি-বারণ, বারণী কারণ,
যুঝয়ে পর্ব্বত মাঝে।
যেন দ্বি-বৃষভে, সুরভির লোভে,
গোষ্ঠের ভিতর যুঝে।।
কার্ত্তিক প্রথমে, প্রতিপদ-ক্রমে,
অহর্নিশি মত্ত রণে।
হৈল চতুর্দ্দশী, কহে দাস কাশী,
বিশ্রাম না পায় ক্ষণে।।