কিছুক্ষণ অতঃপর সকলেই চুপ করে থাকে। ঘরের মধ্যে একটা স্তব্ধতা বিরাজ করে।
সেই স্তব্ধতা আবার ভঙ্গ করল কিরীটীই। সে-ই প্রশ্ন করল।
আপনার ধারণা তাহলে মিস মণ্ডল, মিঃ সাহা আত্মহত্যাই করেছেন?
আত্মহত্যা যে করেছেন কথাটা বুঝতে কারোরই কষ্ট হবার তো কথা নয় মিঃ রায়।
কিন্তু কথা হচ্ছে তাই যদি হয়ে থাকে সত্যি তো নিশ্চয় ঐভাবে আহত্যা করার কোন তাঁর কারণ ছিল বা ঘটেছিল!
হবে।
ব্যাপারটায় কোন রকম আলোকসম্পাত করতে পারেন আপনি?
না। আই অ্যাম র্যাদার বিউইলডার্ড।
আচ্ছা মিস মণ্ডল, আপনি যখন তাঁর পার্সোন্যাল সেক্রেটারী ছিলেন নিশ্চয়ই তাঁর আপনি কনফিডেন্স-এ ছিলেন? কিরীটী আবার প্রশ্ন করে।
তা ছিলাম।
তাঁর ব্যবসা-সংক্রান্ত ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও নিশ্চয়ই আপনি অনেক কিছু জানেন আশা করতে পারি? জিজ্ঞাসা করলেন এবার ও সি।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না, কারণ তিনি ও-ব্যাপারে অত্যন্ত রিজার্ভড ছিলেন। তবে তাঁর বিজনেস সংক্রান্ত ব্যাপারে অনেক কথাই জানি।
বিজনেসের অবস্থা তাঁর কেমন ছিল?
দেখুন, ও ব্যাপারে জানেন—আমার ধারণা—মিঃ মিত্র, আমার চাইতেও বেশী।
ইউ মিন সাধনবাবু?
হ্যাঁ। তবে আমি যতদূর জানি তাঁর বিজনেসের অবস্থা ক্রমশঃ ভালর দিকেই উত্তরোত্তর যাচ্ছিল।
আচ্ছা, এই সাধনবাবু লোকটিকে আপনার কেমন মনে হয় মিস মণ্ডল?
খুব ভদ্র, অমায়িক।
আপনার সঙ্গে আলাপ কেমন?
এক বাড়িতে থাকি, সর্বদা দেখাশোনা হয়, সেদিক দিয়ে আলাপ তো একটু বেশী হবারই
কথা।
তা অবিশ্যি ঠিক। আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম লোকটিকে কেমন মনে হয় আপনার? কিরীটীই প্রশ্ন করে।
খুব ইনটেলিজেন্ট আর অ্যামবিশাস।
ইউ লাইক হিম?
কি বলতে চান আপনি?
সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নটা করে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায় মিস রেবেকা মণ্ডল কিরীটীর দিকে।
একটু যেন অসন্তুষ্ট হয়েছে বলেও সে মনে হয় কারণ ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে ওঠে রেবেকার।
না। এই বলছিলাম আর কি, ভদ্রলোকটিকে আপনার ভাল লাগে কিনা?
সত্যিকারের কোন ভদ্রলোককে না ভাল লাগবার তো কোন কারণ থাকতে পারে না।
তা অবিশ্যি ঠিক। আচ্ছা ভাল কথা মিস মণ্ডল, কাল দুপুরে কে একজন সাহেব আত্মীয় আপনার শুনলাম দেখা করতে এসেছিলেন? আপনার সেই মামা নাকি?
মামা? কই না!
তবে কে এসেছিলেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে কাল দুপুরে?
কাল দুপুরে?
হ্যাঁ।
ও হ্যাঁ, মনে পড়ছে। মিঃ আথার মুর, সিংগাপুর থেকে এসেছিলেন মিঃ সাহার সঙ্গে দেখা করতে, এজেন্সীর ব্যাপারে।
কিন্তু তিনি জীবনকে বলেছিলেন তিনি নাকি আপনার আত্মীয়!
ননসেন্স! একথা বলতেই পারে না। জীবন বলেছে ঐ কথা?
হ্যাঁ।
ওর কথায় কান দেবেন না আপনারা।
কেন বলুন তো?
লোকটা একের নম্বরের মিথ্যাবাদী। লায়ার!
তাই বুঝি?
হ্যাঁ, ডাইনে-বাঁয়ে অকারণ মিথ্যে কথা বলে লোকটা।
তা কি করে জানলেন যে লোকটা মিথ্যাবাদী?
বহুবার বহু প্রমাণ পেয়েছি।
মিঃ সাহা জানতেন কথাটা?
জানতেন বৈকি। আর সেই জন্যই পুরনো বিশ্বাসী লোক হলেও ওকে তেমন পছন্দ করতেন না।
লোকটা তাহলে বিশ্বাসী?
অন্ততঃ মিঃ সাহার তাই ধারণা ছিল।
আপনার?
বিশ্বাসী বলেই মনে হয়।
ঐ সময়কার মত জবানবন্দি শেষ করে থানার ও সি সুখময় মল্লিক উঠে দাঁড়ান।
কিরীটীও বিদায় নেয় অতঃপর।