০৮. অনেক কিছু চিন্তা করছিলাম

অষ্টম পরিচ্ছেদ

০১.

অনেক কিছু চিন্তা করছিলাম বিকেলবেলায়। হ্যাকেটের ইঙ্গিত উদ্বেগের কারণ হলেও বিপদের কারণও হবে। আসল সমস্যা ক্যাডিলাকটার ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়াই ভাল। যদি কোনমতে একবার মেরামত করে নিতে পারতাম তাহলে অন্য সমস্যাগুলো সহজ হত।

সন্ধ্যের পরেই মনেহল কাজটা আমি খুব সহজেই করতে পারি। ওয়ালেট থেকে লেফটেন্যান্ট ওয়েস্টের দেওয়া সার্টিফিকেটটা বার করে পরীক্ষা করে দেখলাম। সমস্যার সমাধান সে নিজেই আমাকে করে দিয়েছে।

ফর্মটা পূরণ করতে গিয়ে সে কেবল লাইসেন্স নম্বরটাই লিখেছে। কিন্তু কোন কোম্পানির গাড়ি তা লেখেনি। পন্টিয়াকের নম্বর প্লেটটা যদি ক্যাডিলাকে লাগিয়ে মেরামতের জন্য স্থানীয় গ্যারেজে নিয়ে যাবার পথে যদি কেউ বাধা দেয় তবে সার্টিফিকেটটা আমার সমস্যার সমাধান করবে।

সার্টিফিকেটটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়েছিলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না সমাধান এত সহজে হবে। একমাত্র বিপদ ছিল যদি কোন পুলিশের লোক গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স ট্যাগের সঙ্গে নম্বর প্লেটটা মিলিয়ে দেখে। সে ক্ষেত্রে ভরাডুবি অবশ্যম্ভাবী কিন্তু ঝুঁকি একটা নিতেই হবে।

নম্বর প্লেটটা সন্ধ্যের আগে পালটাতে যাওয়া বিপজ্জনক। সন্ধ্যে হতে তখনও বেশ কয়েক ঘণ্টা বাকি। যতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে সেই সময়ে ব্যাপারটা লুসিলিকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া ভাল। সে ওয়েস্টের আকস্মিক আবির্ভাবে ভয়ানক নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। একটা উপায় যখন পাওয়া যাচ্ছে তখন তাকে সম্পূর্ণ নার্ভ হারাতে দেওয়া ঠিক নয়।

আইকেনের বাড়িতে ফোন করতেই লুসিলি ধরল।

চেস বলছি। শুনতে পাচ্ছ?

হ্যাঁ, কি ব্যাপার?

তোমাকে বলতে চাই যে আমি একটা উপায় পেয়েছি। মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে।

নীরবতার মধ্যে তার দ্রুত নিশ্বাসের শব্দ, তুমি কি তাই মনে করেছ?

হ্যাঁ, সব ঠিক হয়ে যাবে। দুজনেই ঝামেলা থেকে রেহাই পাব।

কেমন করে?

 ফোনে বলা ঠিক হবে না। তোমার আর চিন্তার কোন কারণ নেই। সেটাই জানাতে চাইছি।

 আচ্ছা, ঠিক আছে।

তুমি এখন বিশ্রাম নিতে পার। ব্যাপারটা সহজভাবে নেবার চেষ্টা কর।

 ঠিক আছে বলে লাইন রেখে দিল।

রিসিভারটা নামিয়ে রাখতে গিয়ে তার ব্যবহারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিলাম। আশা করেছিলাম, সে খুশি হবে এবং দুশ্চিন্তা ছাড়বে। কিন্তু মনে হল সে কিছুটা হতাশ হয়েছে।

বারান্দায় বসে এইসব চিন্তা করছিলাম আর সূর্য অস্ত যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সাড়ে আটটার আগে আশানুরূপ অন্ধকার হল না।

সোজা সিবোর্নের বাড়ি এলাম পন্টিয়াকটা নিয়ে।

পন্টিয়াকের নম্বর প্লেটটা খুলতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগল। টর্চের আলোয় কাজ করতে হচ্ছিল। স্ক্রগুলোতেও মরচে পড়েছিল, শেষ পর্যন্ত প্লেটটা খুলে পন্টিয়াকের সামনের দিকে এসে দেখলাম। সামনের প্লেটটার স্কুগুলোতে বিশ্রীভাবে মরচে পড়েছে। সেগুলো খুলতে প্রায় লড়াই করতে হল।

গাড়ির নিচে প্রায় অর্ধেক শরীর ঢুকিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে যখন মরচে–পড়া স্তুগুলো খুলতে ব্যস্ত ছিলাম তখন বাইরে মৃদু পায়ের শব্দ পেলাম।

স্প্যানারটা তখনও হাতে, ভয়ে হিম হয়ে গেলাম। অন্ধকারে ক্যাডিলাকের ইঞ্জিনের দিকে চাইলাম। কানদুটো খাড়াকরেচুপকরে শুয়েছিলাম। বুকটাকাঁপছিলমনেহচ্ছিল তবেকি মনের ভুল।

আর কোন শব্দ শুনতে না পেয়ে ভাবলাম বাইরের কোন গোলমালের শব্দ কানে এসেছিল। আবার স্ক্রুগুলো খুলতে লাগলাম।

শেষ টা প্রায় খুলে এনেছি তখন গ্যারেজের দরজায় খট করে শব্দ হল।

 বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠল। যেখানে শুয়েছিলাম সেখান থেকে একটা কপাটের নিচের অংশ দেখা যায়। সেটা ক্রমশঃ খুলে আসছে।

শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে গাড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলাম। সামনের বাম্পারের নিচ থেকে বেরিয়ে আসার আগেই আলোটা নিভে গেল। তারপরেই গ্যারেজ ঘরের দরজা হাট করে খুলতে শুনলাম। এত ভয় পেলাম যে তাড়াতাড়ি গাড়ির নিচ থেকে বেরিয়ে এলাম।

পন্টিয়াকের নম্বর প্লেটটা হাতে নিয়ে যেই দাঁড়াবার চেষ্টা করছি অমনি একটা চোখ ধাঁধানো তীব্র আলো আমার উপর এসে পড়েই আবার চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল।

হতবুদ্ধি হয়ে প্রস্তর মূর্তির মত গুটিসুটি হয়ে বসে রইলাম। কারও ছুটে পালাবার শব্দ পেয়েই আমার বুদ্ধি কাজ করল। ব্যাপারটা কি হতে পারে বুঝতে পারলাম।

ফ্ল্যাশলাইট ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে কেউ আমাকে অনুসরণ করেছিল এবং পন্টিয়াকেরনম্বর প্লেটটা হাতে নিয়ে ভাঙ্গা চোরাক্যাডিলাকটার পাশে যখন হামাগুড়ি দিয়ে বসেছিলাম সেই অবস্থায় আমার ছবি তুলে নিয়েছে।

রাগে ও ভয়ে নম্বর প্লেটটা ফেলে দিয়ে গ্যারেজের বাইরে ছুটে এলাম।

ফটোগ্রাফ নেওয়া লোকটা রাস্তার দিকে ছুটে যাচ্ছিল। তার পায়ের শব্দে মনে হল পলাতক একজন পুরুষ। কোন মহিলার পক্ষে এত জোরে ছোটা সম্ভব নয়।

তার পিছনে ছুটলাম কিন্তু চাঁদের আলো না থাকায় ছোটার অসুবিধা হচ্ছিল।

রাস্তাটা আমি চিনতাম। জানতাম কয়েক শ গজ দূরে আমার বাংলোর ওপারে ফুলের চারাগাছ ও পামগাছের একটা বাগান আছে। বাগানটার ওপারে ভোলা রাস্তা বড় রাস্তা পর্যন্ত। রাস্তার দুপাশে ছিল বালির ছোট ছোট স্তূপ। ফলে কোন আড়ালের সৃষ্টি হয়নি।

এত জোরে আগে কখনও ছুটিনি। ফুলের চারাগাছ ও পামগাছের সারির কাছে এসে কোন শব্দ পেলামনা। বুঝতে পারলাম লোকটারাস্তা থেকে পালিয়ে কোন চারাগাছের পেছনে লুকিয়েছে।

নিঃসন্দেহ যে, এই লোকটাই আজ সকালে আমাকে ও লুসিলিকে ফোন করেছিল। এই লোকটাই ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছে। সে আমার একটা ছবি নিয়েছে যার জন্য দশ বছরের শাস্তি হতে পারে। কিছুতেই তাকে পালিয়ে যেতে দেবনা। যদি তাকে শেষ করে দিতে হয় তাও করব।

ফ্ল্যাশলাইটটা কেন যে সঙ্গে আনলাম না। চারিদিক এত অন্ধকার। লোকটা আমার সামনে কোথাও লুকিয়ে আছে। কোন রকম শব্দ না করে এগিয়ে চারাগাছের বাগানটায় এলাম। নিশ্চিত ছিলাম নোকটা এখানেই আছে। কিন্তু আলো ছাড়া তাকে বার করা বেশ কঠিন।

কিছুটা পথ হেঁটে শব্দ শোনার জন্য দাঁড়ালাম। কিন্তুনা, কোন শব্দ নেই। হামাগুড়ি দিয়ে আমার মতই ভয় পেয়ে হয়তো কাছে কোথাও লুকিয়ে আছে।

অন্ধকারে আমি হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ পায়ে কিছু একটা ঠেকতেই চমকে দ্রুত নিশ্বাস ফেলার শব্দ শুনতে পেলাম। অন্ধকারে হাত দুটো বাড়িয়ে দিলাম এবং একটা মুখের উপর আমার হাত পড়ল। চারাগাছ থেকে মানুষের একটা অস্পষ্ট চেহারা উঠে আসতে দেখলাম। পিছু হটে ঘুষি পাকালাম কিন্তু দেরী হয়ে গেছে।

একটা কিছু খুব জোরে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে হাত দুটো তুলে মাথা বাঁচাবার ভঙ্গিতে একপাশে সরে দাঁড়ালাম। কঠিন কিছু একটা ঘাড়ের উপর এসে পড়তে হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে পড়লাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথার উপর ভয়ানক আঘাত পেলাম।

নির্জন শূন্য অন্ধকারে লুটিয়ে পড়লাম।

.

০২.

অনেক দূরে ঘড়িতে নটা বাজার শব্দ শুনতে পেলাম। ঘণ্টা বাজার মিষ্টি মৃদু শব্দ অনেক দূর থেকে ভেসে এল। শব্দটা খুব পরিচিত। বুঝলাম লাউঞ্জে বারান্দায় ঝোলান আমার নিজের ঘড়িটার শব্দ শুনছি।

চোখ খুললাম। হাতুড়ি পেটানোর একটা জোর শব্দ তখনও মাথার মধ্যে পাচ্ছিলাম।

নিজের সোফায় শুয়েছিলাম। মাথার পেছনদিকে হাত রাখতেই ফোলা জায়গাটা ও রক্তের শুকনো দলাটার উপর হাত পড়ল। কয়েক মিনিট পরে উঠে বসে চারিদিকে চাইলাম।

সমস্ত আলোগুলো জ্বালান ছিল। পাশে ছোট একটা টেবিলে আমার সবচেয়ে ভাল হুইস্কির একটা বোতল ও একটা পাত্রে কিছুবরফ ছিল। এই হুইস্কি বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য এনে রেখেছিলাম। প্রায় সিকি ভাগ ফাঁকা।

আস্তে বাঁ দিকে চাইলাম। কিছু দূরে একটা চেয়ারে একজন লোককে বসে থাকতে দেখে, তার অস্পষ্ট চেহারা দেখেই বুঝলাম এই লোকটাই আমাকে ও লুসিলিকে ফোন করেছিল। পন্টিয়াকটার নম্বর প্লেটটা পালটাবার সময় আমার ছবি তুলেছিল এবং আমার মাথায় আঘাত করেছিল।

আবার চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিট চুপ করে রইলাম। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে উল্টো দিকে বসে থাকা লোকটার দিকে চাইলাম।

ধীরে ধীরে তার মুখটা স্পষ্ট হল। সুন্দরবলিষ্ঠ চেহারা। বয়স প্রায় তেইশ চব্বিশ, ফরসা গায়ের রং, গায়ের চামড়া তামাটে। গ্রীসিয়ান নাক, নীল চোখ এবং সরু গোঁফ? সুন্দর মাথার উপর চুলগুলো গুছিয়ে সাজানো। অবশ্য মেয়েদের কাছে আকর্ষণের অন্যতম কারণ।

পরনে ছিল নীল স্পোর্টিং স্যুট এবং পায়ে হরিণের চামড়ার জুতো, হাতে সোনার ভারী ব্রেসলেট তাতে ঘড়ি লাগানো ছিল। ডানহাতে ছিল হুইস্কির গ্লাস। আমার দিকে চেয়ে হাসতে মনে হল ছুটে গিয়ে একটা ঘুষি বসিয়ে দিই।

এই যে, শয়তান, বেশ উৎফুন্নভাবে সে বলল। আমি কি জোরে আঘাত করেছি?

 মারটা বেশ জোরে হয়েছে।

সে বললো, মদ খাবে?

 তুমি কে? এখানে কি করছ? গর্জন করে উঠলাম।

সামনের দিকে পা বাড়িয়ে সে বলল, একটু আলাপ হওয়া দরকার। তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে চলেছে। আমার নাম রস, বন্ধুরা অসকার বলে। আলাপ করার ইচ্ছে আছে নাকি?

ইচ্ছে হচ্ছে তোমার দাঁতগুলো ঘুষি মেরে মাথার ভিতর ঢুকিয়ে দিই, উঠে বললাম।

তোমাই দোষ দিতে চাই না, তবে তোমার অবস্থায় পড়লে আমি এসব চেষ্টা করতাম না। তোমার চেয়ে বড় মাতব্বররা ভেবেছিল আমাকে জব্দ করতে পারবে। কিন্তু হাল ছাড়তে হয়েছিল। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব নষ্ট না হয় যেন। সোজাসুজি লেনদেনের ব্যাপার। আমি কোন জিনিস বিক্রি করতে চাই, আর তুমি সেটা কিনতে চাও। একেবারে সোজা ব্যাপার।

লুসিলি তবে ঠিকই বলেছিল যে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা হচ্ছে। রস-এর দিকে সোজাসুজি চাইলাম। লোকটা কি ভয়ংকর হতে পারে ভাবছিলাম। প্রথমেই জানা দরকার সে ঘটনার কতটুকু জানে। তারপর ঠিক করব কি করতে হবে।

কি বিক্রি করবে ভাবছ?

এখান থেকে কাছেই সুন্দর সমুদ্রতীর আছে সেখানে ছেলেমেয়েরা একটু আমোদ করতে যায়। সেখানে লুকিয়ে থাকার মত একটু জায়গা আছে। টাকার দরকার হলে, সেখানে গিয়ে ওৎ পেতে বসে থাকি, গতরাতে অবশ্য ভাগ্য ভালই ছিল। এক বড় বিজ্ঞাপন কোম্পানির মালিকের স্ত্রীর সঙ্গে সেই অফিসেরই এক কর্মচারী বালির উপর কিছু একটা করছিল, মনে হল, সে হয়ত চাইবে না যে সেখানে কি হচ্ছিল, বলে দিই তার মনিবকে বরং কিছুটাকা খরচ করতে রাজি হবে। এই ভাবেই বছরের বিভিন্ন সময়ে অনেক রসিক লোককে পাকড়াও করি। এতে আমার দু পয়সা হয়।

 একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম, এটা ব্যবসা নয়। আসলে কথা দিয়ে কথা রাখা।

সে মাথা নাড়ল।

 ঠিক সমস্ত ব্যাপারটা ধামা চাপা দিতে সকলেই গোটা পঞ্চাশেক করে দেয়। আমি তোমার কাছে বেশি চাই না কিন্তু সেই সঙ্গে গাড়ি দুর্ঘটনাও আছে। বিজ্ঞাপন মালিকের স্ত্রীর দিকে তুমি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলে তাতে সে ভয়ে তোমার গাড়ি নিয়ে পালায়। পুলিশের একটা লোককে চাপা দেয়। নিশ্চয়ই সব কাগজে পড়েছ। ওর চাপা দেওয়ার দু মিনিট পরেই আমি সেখানে হাজির হই। সে থামেনি, তোমার গাড়িটা ভেঙেচুরে দুমড়ে গেছে। নম্বর প্লেট পালটানোর আইডিয়াটা চমৎকার। কিন্তু আমিও ফ্ল্যাশলাইট ও ক্যামেরা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তোমার বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। আমার ক্যামেরায় এখন একটা ছবি আছে তোমাকে আর মেয়েটাকে দশবছর শ্রীঘরে রাখবে। তুমি যদি তা না যেতে চাও এবং মেয়েটাকে পাঠাতে না চাও তবে আমিও তোমার। কাছে বেশ মোটা টাকা পাবার আশা করতে পারি।

বুঝতে পারলাম বেশ বড় রকমের ঝামেলায় পড়েছি।  

এই শয়তান, এতটা মুষড়ে পড়লে কেন? আর যাই হোক টাকা কেবলই টাকা। টাকার চেয়ে জীবনে বড় জিনিস আর কি আছে। আর লাখ টাকা নিয়ে জেলে থাকলে জীবনে ফুর্তি করবেকখন? আমারও টাকার বেশ দরকার। আমাকে শহরের বাইরে যেতে হবে। এক দফায় টাকা মিটিয়ে দাও। নগদ মিটিয়ে দাও, আমিও কোনদিন আর তোমার মনিবকে বলতে যাব না যে তার বৌ-এর সঙ্গে ফুর্তি করে তুমি তাকে বোকা বানাবার চেষ্টা করেছিলে। ছবিটাও আর পুলিশের লোকের কাছে পাঠাবার দরকার হবে না। কি বল?

তাহলে আরও পাবার জন্যে তুমি ফিরে আসবে।

হুইস্কিতে চুমুক দিয়ে সে দাঁত বার করে হাসল। তা নিশ্চয় তোমাকে অবশ্যই একটা বিপদের ঝুঁকি নিতে হবে। কিন্তু বেশ মোটা কিছু যদি ছাড় তবে তোমাকে একদম ভুলে যেতে পারি।

কত টাকা?

তিরিশ হাজার মত তোমাদের দেওয়া উচিত। লুসিলির কিছু হীরার গহনা আছে। আমার ধারণা সেগুলোর কিছু কিছু তুমিও হাতিয়ে নিয়েছ। ঠিক আছে। তিরিশ হাজারই কথা রইল। তোমারও সস্তাতেই সব মিটে গেল।

পাগল! আমার এত টাকাই নেই। ছবিটা পাঁচ হাজার দিয়ে কিনতে রাজি আছি–আর এক পয়সাও বেশি নয়।

সে হুইস্কি শেষ করে। বাঃ, সুন্দর স্কচ। টাকা জোগাড় করতে তোমায় এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি। আমি তোমাকে ফোন করে বলে দেব কোথায় টাকাটা জমা দিতে হবে। নগদ তিরিশ হাজার কিন্তু।

বলছি তো আমার অত টাকা নেই। পাঁচ হাজার অবধি দিতে পারি।

ছেলেমানুষী কোরো না। ভেবে দেখ। এই বাংলোটা বিক্রি করলে পনের হাজার মিলবে। লুসিলিও কিছু দিতে পারবে। দুজনে মিলেমিশে একটা ব্যবস্থা কর। টাকাটা কিন্তু এক দফায় দিতে হবে। বার বার আসতে পারব না। আমি আর ফিরে আসছি না শোন। আমি যখন গভীর জলে ছিপ ফেলি তখন নিশ্চিত জানি যে বঁড়শিতে মাছ গাঁথবেই। হয় মেয়েটাকে নিয়ে জেল খাটো নয়তো তিরিশ হাজার টাকা জোগাড় করার ব্যবস্থা কর। বৃহস্পতিবার ফোন করে জানব কতদূর কি করলে। আমার কি করা উচিত আমি জানি। তবে তুমি যা ভাবছ আমার চিন্তাধারা সেরকম নাও হতে পারে। তবে তোমার মধুর স্বপ্ন নষ্ট হতে দিও না। টাকাতে কি আসে যায়? তোমাকে আঘাত দেওয়ার জন্যে দুঃখিত তবে এটার জন্যে তুমিই দায়ী। আবার আমাদের দেখা হবে। আজ চলি, পানীয়ের জন্য ধন্যবাদ।

আমি তার দিকে চাইলাম সেদরজার দিকে গেল। মাথার যন্ত্রণায় বেশ অসুস্থ বোধ করছিলাম।

 সে বলল, ব্যাপারটা হালকা ভাবে নিও না। কিছু সময় নিতে পার। এটা অবশ্য স্বাভাবিক একটা কিছু উপায় বেছে নেবেকারণ তুমি এখন বঁড়শিতে গাঁথা, পরে আরও ভালভাবে বুঝবে যে বঁড়ণ্টিা ভিতরে গিয়ে শক্তভাবে আটকে গিয়েছে।

কিছুক্ষণ পরেই সে চলে গেল। গাড়িতে স্টার্ট দেওয়ার শব্দ শুনলাম।

টলতে টলতে গিয়ে ক্যাবিনেট থেকে একটা গ্লাস বার করে কড়া হুইস্কি ঢালোম। সেটা খেয়ে বাথরুমে এসে ঠাণ্ডা জলের কলটা খুললাম। মাথাটা তার নীচে রাখলাম। বেশ আরাম হচ্ছিল। আর এক গ্লাস হুইস্কি ঢেলে নিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম।

ভাবছিলাম তাহলে ব্ল্যাকেমেলের চেহারাটা এই রকম। রস বলছিল বঁড়শিটা বেশ ভালভাবেই গেঁথেছে নিস্তার পাওয়ার কোন উপায় নেই। দেখাই যাক তার কথামত বঁড়শিটা কতদূর গিয়েছে।

অনেক চিন্তার পরে মনে হল বঁড়শিটা সত্যিই বেশ গভীরে ঢুকেছে। যে দিকেই যাই না কেন ধরা পড়ব। যদি আইকেনের কাছে গিয়ে সত্যি কথা বলি, তিনি আমাকে বার করে দেবেন। পুলিশকে সত্যি কথা বললে, তারা লুসিলিকে চেপে ধরবে। যদি কোন রকমে তিরিশ হাজার ডলার জোগাড় না করতে পারি, তবে আমার ভরাডুবি নিশ্চিত, বিশেষ করে নিউইয়র্কের চাকরীটা যাবে।

তাহলে এখন আমার কি করা কর্তব্য?

একটি মাত্র পথ আছে তাতে শুধু যে মুক্তি পেতে পারি তাই নয়, রসকেও ধরিয়ে দিতে পারি। তাহলে সে আমার আর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। হয় তাকে পাকড়াও করতে হয় নতুবা নিজের সর্বনাশ ডেকে আনতে হয়।

এখন আমার প্রথম কর্তব্য হচ্ছে ক্যাডিলাকটাকে নিরাপদে সরিয়ে রাখা।

সাড়ে নটা বাজে, সাম লোথারকে ফোন করলাম। সে একটা গ্যারেজের মালিক। আমার গাড়ির মেরামতির কাজ সে-ই করে।

সাম, এত রাতে ফোন করার জন্যেদুঃখিত, কিন্তু ক্যাডিলাকটা নিয়ে বড় ঝামেলায় পড়েছি। একটা গাছে গিয়ে ধাক্কা লেগেছে। তোমার কাজের চাপ কেমন? তাড়াতাড়ি মেরামত করে দিতে হবে।

মিঃ স্কট, আপনার যদি খুব তাড়া থাকে তবে কাজটা এখনই হাতে নিতে পারি। আমার এখানে কয়েকজন লোক আছে গাড়িটা এলেই ওরা সেটা মেরামতের কাজে লেগে যাবে। বুধবারেই হয়তো গাড়িটা পাবেন কিন্তু কথা দেওয়ার আগে গাড়ির ক্ষতির পরিমাণটা একবার দেখতে চাই।

অনেক ধন্যবাদ সাম। আমি আধঘণ্টার মধ্যেই গাড়িটা নিয়ে আসছি।

ঠিক আছে কিন্তু একটা কথা মিঃ স্কট। গাড়ির ধাক্কা খাওয়ার খবরটা পুলিশের কাছে আপনাকে রিপোর্ট করতে হবে। আমার উপর পুলিশের কড়াকুম আছে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ছাড়া কোন গাড়ির কাজ যেন হাতে না নিই। খবরের কাগজে নিশ্চয়ই একথা পড়েছেন। আপনি কি একটা সার্টিফিকেট জোগাড় করতে পারেন?

ইতিমধ্যেই সার্টিফিকেট জোগাড় করেছি। ঘটনাটা ঘটা মাত্রই পুলিশের কাছে রিপোর্ট করি। ওরা সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে সার্টিফিকেট দেয়।

বাঃ, চমৎকার। তাহলে গাড়িটা নিয়ে আসুন। আমি লোকগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেব।

নম্বর প্লেটটা পালটানো হয়েছে। তা হয়ত সে ধরে ফেলতে পারে, কিন্তু ঝুঁকি তো একটা নিতেই হবে। একটা অজানা গ্যারেজে যাওয়ার চেয়ে তার ওখানে অনেক অবান্তর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

বাংলোতে তালা লাগিয়ে প্রায় পৌনে এক মাইল পায়ে হেঁটে সিবোর্নের বাড়ি এলাম পন্টিয়াকটা যে ভাবে রেখে গিয়েছিলাম সেভাবেই রয়েছে।

মাথাটা দপদপ করছিল তবুও ভিতরে ঢুকে সামনের নম্বর প্লেট লাগানোর কাজটা তাড়াতাড়ি সেরে নিলাম। শুকনো রক্তের দাগগুলো তুলতে হবে। যদি সত্যিই কোনদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় তবে আমার অনুকূলে যে সব সাক্ষ্য আছে সেগুলি আমি মুছে ফেলতে চাই। এক বালতি জল এনে রক্তের দাগ ধুয়ে ফেললাম। তারপরে ক্যাডিলাকটা রাস্তায় এনে পন্টিয়াকটা গ্যারেজে ঢোকালাম। গ্যারেজে তালা লাগিয়ে গাড়ি নিয়ে বড় রাস্তায় এলাম।

রাস্তা জনহীন ছিল বলা চলে। একটা হেডলাইটেই গাড়ি চালাতে হচ্ছিল। যে কয়েকটা গাড়ি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল তাদের একটা আলোর দিকেনজর পড়েছেবলে মনেহলনা। সামের গ্যারেজে সোজা চলে এলাম।

স্বল্প আলোকিত টিনের বড় ছাউনির নিচে গাড়ি নিয়ে এসে দেখলাম, সাম দুজন মেকানিকের সঙ্গে কথা বলছে।

দীর্ঘ, সুগঠিত সাম বেরিয়ে এসে করমর্দন করে বলল। গুড ইভনিং, মিঃ স্কট। নিশ্চয়ই আপনি গাড়িটা জোরে ধাক্কা মেরেছেন।

হা। মেয়েদের গলা জড়িয়ে জোরে গাড়ি চালালে এ রকমটা হয়।

সে দাঁত বার করে হেসেবলে জানি। বলে দিতে হবেনা। নিজেরও অনেকবার হয়েছে। মেয়েরা অনেক সময় সর্বনাশ ডেকে আনে। আমার মনে হয় এক সপ্তাহের আগে সারানো সম্ভব হবে না।

মেকানিকরা গম্ভীর মুখে গাড়িটা দেখছিল। গাড়ির প্যানেলটা পরীক্ষা করে সাম বলল। এই দাগ দুটো গর্ত হয়ে গিয়েছে। তোমরা কাজে লেগে যাও দরজাটা খুলে গর্তটা মেরে দিয়ে আবার লাগাবে। মিঃ স্কট, পুলিশের সার্টিফিকেটটা এনেছেন?

ওয়ানেটটা বার করার জন্য যখন পকেটে হাত দিলাম দূরে একটা মোটর সাইকেল এগিয়ে আসার শব্দ শুনতে পেলাম। পুলিশের একজন লোক গ্যারেজের বাইরে এসে দাঁড়াল।

সাম, এক সেকেন্ড বলেই পুলিশের লোকটির কাছে গিয়ে এই যে টিম কি ব্যাপার?

একটা ভাঙাচোরা গাড়ি দেখছি?

হ্যাঁ, হা। মিঃ স্কট ওঁর ক্যাডিলাকটা নিয়ে এসেছেন। একটা গাছে গিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন।

পুলিশের লোকটি কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ক্যাডিলাকটার দিকে এগিয়ে ভাঙ্গা হেডল্যাম্পটা দেখছিল।

 ইতিমধ্যে আমিও খানিকটা ধাতস্থ হয়ে, ওয়ালেট থেকে সার্টিফিকেটটা বার করে তার দিকে এগিয়ে বললাম।

গাড়িটার ক্ষতি হওয়ায় আমার কাছে সার্টিফিকেট আছে, লেফটেন্যান্ট ওয়েস্ট আমাকে দিয়েছেন।

সে ঘুরে হাতটা বাড়িয়ে দিল। তার অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাতে যথেষ্ট সাহসের প্রয়োজন। কিন্তু আমি তার দিকে চেয়ে রইলাম।

সে সার্টিফিকেটটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। সে নম্বর প্লেটটা দেখে আমার সার্টিফিকেটটা দেখল। টুপিটা মাথার পিছন দিকে ঠেলে দিয়ে মুখে বাতাস টেনে গাল দুটো ফুলাল।

লেফটেন্যান্টের সঙ্গে আপনার কখন দেখা হয়েছিল?

তিনি মিঃ আইকেনের বাড়ি গিয়েছিলেন। আমি মিঃ আইকেনের কাছে চাকরি করি। লেফটেন্যান্ট আমার ও মিঃ আইকেনের গাড়ি দেখে সার্টিফিকেট দেন। সাম আমাকে চেনে। সে আমার গাড়ি প্রায়ই মেরামত করে। আমার গলার স্বর কাঁপছিল।

গাড়িটার এমন দশা কেমন করে হল?

গাছে ধাক্কা মারি।

সাম হেসে বলল, মিঃ স্কট একটি মেয়ের সঙ্গে ফুর্তিকরছিলেন। ওঁরবয়সেআমি নিজেও আমোদ স্ফুর্তি করেছি। অবশ্য গাড়ির ক্ষতি হলে সোজা কোন গ্যারেজে গিয়ে মেরামত করে নিতাম।

সার্টিফিকেটটা আমাকে দিতে দিতে পুলিশের কর্মচারীটি কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল আমার ইচ্ছা হচ্ছে আপনাকে ধরে নিয়ে যেতে। আপনিও কাউকে চাপা দিতে পারতেন।

 হা জানি। লেফটেন্যান্টও একই কথা বলেছিলেন। তাকে বলেছি আর কোনও দিন এ রকম হবে না। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললাম।

বুঝতে পারলাম সে এই নিয়ে কিছু একটা করতে চাইছিল, কিন্তু ওয়েস্টের নাম বলাতে আর কিছু করতে সাহস পাবে না।

ভবিষ্যতে আর কখনও করবেন না, বলে সামের কাছে গিয়ে বলল, ভেবেছিলাম ও’ব্রায়ানকে হত্যা করেছে যে লোকটা তাকে ধরে ফেলব। গাড়িটা দেখেছে এমন একজন ড্রাইভারের কাছে খবর পেলাম। ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। বলে গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে গেল।

সাম চোখ টিপে বলল। ভাগ্যে তাড়াতাড়ি লেফটেন্যান্টের কথা বলেছিলেন নইলে মাথামোটা লোকটা হয়ত ঝামেলায় ফেলত।

আমি তাকে সার্টিফিকেটটা দিলাম।

 তোমার কি এটা দরকার হবে?

হা হবে। বলে সাম সার্টিফিকেটটা পকেটে পুরল। আপনাকে কি একটা গাড়ি ব্যবহার করতে দেব, মিঃ স্কট?

পেলে খুব ভাল হয়।

 বুইকটা নিন। শুক্রবারের মধ্যেই ক্যাডিলাকটা মেরামত হয়ে যাবে। বাড়ি ফেরার পথে বুইকটা এখানে নিয়ে আসবেন, ক্যাডিলাক তৈরী থাকবে।

ধন্যবাদ জানিয়ে বুইকে চড়ে বড় রাস্তার দিকে ছুটলাম।

তখন এগারটা বাজতে বিশ মিনিট। পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ঝামেলার জন্য তখনও বুকটা কাঁপছিল তাই নির্জন বাংলোয় যেতে ইচ্ছে হল না। শহরের দিকে গাড়ি চালালাম।

একটা বারে এসে ঢুকলাম। নতুন আইডিয়া মাথায় আনার জন্য আমি এবং জো অনেক সময় এখানে এসে মদ খেতাম।

বারের মালিক বয়স্ক, মোটা, হাসিখুশি। সে আমাকে দেখে হাত তুলে অভিবাদন জানাল। আমরা তাকে স্লিম বলতাম।

টুলে বসতে বসতে বললাম ডবল স্কচ।

 তখন বারে মাত্র চারজন লোক ছিল দূরে এক প্রান্তে।

 স্লিম বলল, এখনই আনছি মিঃ স্কট। আজ আপনার দেরী হয়েছে।

হ্যাঁ। তা হোক, কাল তো রবিবার।

তা অবশ্য সত্যি, রবিবার আমার প্রিয় দিন। চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটার শেষ খবর শুনেছেন?

না, নতুন কিছু?

রেডিওতে বলল, মাত্র মিনিট দশেক আগে একজন পুরুষ ও একজন মহিলাকে বড় রাস্তা ধরে সমুদ্রের তটের দিকে যেতে দেখা গিয়েছিল। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে সেই দিকেই তারা যাচ্ছিল। পুলিশ তাদের থানায় আসতে বলেছে। পুলিশ সন্দেহ করছেও’ব্রায়ানকে যে গাড়িটা চাপা দিয়েছিল তারা সেটা দেখেছে অথবা নিজেরাই চাপা দিয়েছে।

অনেকক্ষণ ধরে হুইস্কিতে চুমুক দিলাম।

 তাই বুঝি?

বাজি রেখে বলতে পারি তারা থানায় আসবে না। একজন মহিলা নিশ্চয়ই সেখানে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে যায় নি। তারা নিশ্চয়ই চাইবে না যে তাদের নাম খবরের কাগজের প্রথম পাতায় ছাপা হোক।

সত্যি কথা। যে লোকটা চাপা দিয়েছে তাকে ধরার জন্য পুলিশের লোকেরা নিশ্চয়ই আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

হ্যাঁ, সমস্ত ব্যাপারটা কেমন যেন প্রহসন মনে হচ্ছে। দিনের প্রতি সেকেন্ডে প্রায় একজন লোক মারা যায়। কিন্তু পুলিশের লোক বলে চারিদিকে সাড়া পড়ে গেছে।

হঠাৎ তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, অসকার রস নামে কোন লোককে তুমি চেন?

হ্যাঁ, চিনি। মাউন্ট ক্রেস্তায় লিটনট্যাভার্ননাইটক্লাবেরবারম্যান। আপনি তাকে চেনেন, মিঃ স্কট?

না, কে একজন বলছিল শহরের সবচেয়ে ভাল বারম্যান। আমি ভাবছিলাম তার এমন কি বিশেষত্ব আছে।

নিশ্চয়ই কোন মহিলা আপনাকে বলেছে। শহরের সবচেয়ে ভাল বারম্যান! খুব বড় বড় কথা। তাছাড়া এ কাজ সে শখে করে। মার্তিনি যা তৈরি করে একটা বেড়ালেও বমি করে উগরে দেবে। তার কি আছে জানেন, আসলে তার আছে রূপ। মেয়েরা দলে দলে তার পাশে আনাগোনা করে। তাছাড়া বিশেষ কোন গুণ নেই। আমি হলে এই বারে তাকে নিতাম না। বিনা পয়সায় কাজ করলেও না।

লিটল ট্যাভার্ন? আচ্ছা। ওখানে ডলোরেস লেন গান করে না?

ঠিক বলেছেন। সেখানে না গিয়ে আপনার অবশ্য ক্ষতি হয়নি। কারণ চোখের ঘুম হারাবার মত মেয়েটার কিছু নেই।

সে কি পুলিশের যে লোকটা মারা গিয়েছে, তার বাগদত্তা ছিল না?

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। এমনও হতে পারে যে এটা সংবাদপত্রের বানানো গল্প। নাইট ক্লাবের গায়িকা। কেন একজন পুলিশকে বিয়ে করবে?

হুইস্কি শেষ করে। ঠিকই বলেছেন। অবশ্য খবরের কাগজে যা পড়ি তার অর্ধেকটা আমি বিশ্বাস করি। ঠিক আছে। আমাকে এবার বাড়ি ফিরতে হবে। যাচ্ছি ফ্লিম।

মাঝে মাঝে আপনার দেখা পেলে খুশি হব, মিঃ স্কট। সপ্তাহের শেষটা আনন্দে কাটাবেন নিশ্চয়ই।

একটা সিগারেট ধরালাম বুইকে বসে। ভাবলাম তাহলে রস ও ডলোরেস একই নাইট ক্লাবে চাকরি করে। সত্যিই তো স্লিমের কথাই ঠিক, নাইট ক্লাবের গায়িকা কেন পুলিশের লোককে বিয়ে করতে যাবে? ব্যাপারটা একটু তদন্ত করে দেখা দরকার।

ঠিক করলাম লিটল ট্যাভার্ন নাইট ক্লাবটা একবার ঘুরে দেখে আসি।

স্টার্টারে চাপ দিয়ে রাতের রাস্তায় মাউন্ট ক্রেপ্তারের দিকে গাড়ি ছুটালাম।