৮৪তম অধ্যায়
শাকম্ভরী প্রভৃতি প্ৰধান প্রধান তীৰ্থকথা
“পুলস্ত্য কহিলেন, “মহারাজ! অনন্তর ধর্ম্মতীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে মহাভাগ ধর্ম্ম তপানুষ্ঠান করিয়া উহাকে পবিত্র ও স্বনামে বিখ্যাত করিয়াছেন। তথায় ধর্ম্মশীল ও সমাহিত হইয়া স্নান করিলে নিঃসন্দেহে সপ্তমকুল পৰ্য্যন্ত পবিত্র হয়। তৎপরে জ্ঞানপাবন-নামক উত্তম তীর্থে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে অগ্নিষ্টোম-যজ্ঞের ফল ও মুনিলোকলাভ হয়। তৎপরে সৌগন্ধিকবনে গমন করিবে; যে স্থানে ব্ৰহ্মাদি দেবতা, মহর্ষি, সিদ্ধ, চারণ, গন্ধর্ব্ব, কিন্নর ও মহোরগগণ গমন করিয়া থাকে। তথায় প্রবেশ করিবামাত্র চিরসঞ্চিত পাপ হইতে বিমুক্ত হয়। পরে সরিদ্বরা, প্রক্ষা ও স্রোতস্বতী সরস্বতীতে গমন করিবে; তথায় বাল্মীকি-নিঃসৃত জলে স্নান করিয়া দেবতা ও পিতৃগণকে অৰ্চনা করিলে অশ্বমেধের ফললাভ হয়। তৎপরে বল্মীকি হইতে ষট্শম্যানিপাত পৰ্য্যন্ত ঈশানাধ্যুষিতনামক তীর্থ। প্রাচীনেরা কহেন, ঐ দুর্লভ তীর্থে স্নান করিলে সহস্র কপিলা-দান ও অশ্বমেধযজ্ঞের ফললাভ হয়। হে মহারাজ! সুগন্ধা, শতকুম্ভা ও পঞ্চযক্ষায় গমন করিলে স্বর্লোকে পূজিত হয়। তথায় ত্রিশূলখাতনামক এক তীর্থ আছে। ঐ তীর্থে অবগাহন করিয়া দেবতা ও পিতৃগণকে অৰ্চনা করিলে কলেবর পরিত্যাগপূর্ব্বক নিঃসংশয়ে গাণপত্যলাভ করিতে পারে।
অনন্তর পরমদূর্লভ দেবীস্থিনে গমন করিবে। ঐ তীর্থ ত্ৰিলোকে শাকম্ভরীনামে প্রখ্যাত আছে। পূর্ব্বে সুব্রতা-দেবী মাসে মাসে শাকাহারদ্বারা দিব্য সহস্রবর্ষ অতিবাহিত করিয়াছিলেন। একদা তথায় অনেক মহর্ষি আগমন করিলে সুব্রতা-দেবী ভক্তিপূর্ব্বক শাকদ্বারা অভ্যাগত তাপসদিগের আতিথ্য করিয়াছিলেন, এই নিমিত্ত ঐ তীর্থের নাম শাকম্ভরী বলিয়া প্ৰসিদ্ধ হইয়াছে। সমাহিত ও ব্রহ্মচারী হইয়া তথায় শাকভক্ষণপূর্ব্বক ত্রিরাত্র বাস করিলে দ্বাদশ বৎসর শাকাহারে যে ফল সঞ্চিত হয়, দেবীপ্রসাদে সেই ফললাভ হইয়া থাকে। তৎপরে ত্ৰিলোকবিশ্রুত সুবৰ্ণাখ্যা-তীর্থে গমন করিবে, পূর্ব্বে ভগবান বিষ্ণু যে স্থানে ভবানীপতিকে প্ৰসন্ন করিবার নিমিত্ত তাঁহার আরাধনা করিয়াছিলেন। অনন্তর দেবাদিদেব ত্ৰিলোচন প্রীত ও প্ৰসন্ন হইয়া বিষ্ণুকে দেবদুর্লভ বর প্রদানপূর্ব্বক কহিলেন, “হে জনার্দ্দন! তুমিই সকল লোকের একমাত্র প্রিয়পাত্র ও সমুদয় সংসারমধ্যে প্রধানরূপে পরিগণিত হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।” হে মহারাজ! তথায় গমন করিয়া ভগবান রুদ্রকে অৰ্চনা করিলে অশ্বমেধফল ও গাণপত্যলাভ হয়। তৎপরে ধূমাবতী-তীর্থে গমন করিবে; তথায় ত্রিরাত্ৰ উপবাস করিলে নিঃসংশয় বাঞ্ছিত ফললাভ হয়। তৎপরে রথাবর্ত্ত-তীর্থে গমন করিবে। ঐ তীর্থ দেবী তীর্থের দক্ষিণাৰ্দ্ধদ্বারা নির্ম্মিত হইয়াছে; জিতেন্দ্ৰিয় ও ধর্ম্মশীল হইয়া পরমশ্রদ্ধাসহকারে তথায় গমন করিলে শঙ্করপ্ৰসাদে পরমগতি প্রাপ্ত হয়। তৎপরে তাহাকে প্ৰদক্ষিণপূর্ব্বক সর্ব্বপাপপ্ৰণাশন ধারাতীর্থে গমন করিবে। তথায় স্নান করিলে কদাচ শোকপ্ৰাপ্ত হইতে হয় না।
অনন্তর মহাগিরিকে নমস্কার করিয়া স্বৰ্গদ্বার তুল্য গঙ্গাদ্ধারে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে কোটি তীর্থের ফললাভ, পুণ্ডরীক-প্ৰাপ্তি এবং কুলও উদ্ধার হইয়া থাকে; আর সেই তীর্থে একরাত্রি বাস করিলে সহস্ৰগোদানের ফললাভ হয়। সপ্তগঙ্গা, ত্ৰিগঙ্গা ও শক্রাবর্তে বিধিপূর্ব্বক পিতৃলোকের তর্পণ করিলে পুণ্যলোকে পূজিত হয়। তৎপরে কনখল-তীর্থে স্নান ও ত্রিরাত্ৰ উপবাস করিলে অশ্বমেধ ফল ও স্বৰ্গলোকলাভ হয়। তৎপরে তীৰ্থপৰ্য্যটক ব্যক্তি কপিলাবটে গমন করিবে; তথায় উপবাসদ্বারা এক রজনী অতিবাহিত করিলে সহস্রগোদানের ফললাভ হয়।
তৎপরে নাগরাজ কপিলের ত্ৰিলোকবিশ্রুত নাগ-তীর্থে স্নান করিবে; তথায় স্নান করিলে সহস্ৰকপিলাদানের ফললাভ হয়। তৎপরে শান্তনুরাজের ললিতিক-তীর্থে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে কদাচ দুৰ্গতিপ্রাপ্ত হয় না। অনন্তর যে গঙ্গাযমুনাসঙ্গমে স্নান করে, তাহার দশাশ্বমেধ ফলপ্ৰাপ্তি ও সমস্ত কুল উদ্ধার হয়। তৎপরে ত্ৰিলোকবিশ্রুত সুগন্ধ-তীর্থে গমন করিলে নর চিরসঞ্চিত পাপরাশি হইতে বিনির্ন্মুক্ত হইয়া ব্ৰহ্মলোকে পূজিত হয়। তদনন্তর তীর্থসেবী ব্যক্তি রুদ্রাবর্তে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে স্বৰ্গলোকলাভ হয়। হে মহারাজ! জাহ্নবী ও সরস্বতীসঙ্গমে স্নান করিলে অশ্বমেধ-ফল ও স্বৰ্গলোক লাভ হয়। তৎপরে ভদ্রকৰ্ণেশ্বরে গমনপূর্ব্বক যথাবিধি দেবভদ্র কৰ্ণেশ্বরকে অৰ্চনা করিলে দুৰ্গতিশূন্য ও দেবলোকে পূজিত হয়। তৎপরে কুব্জাম্রক-তীর্থে গমন করিলে গোসহস্রদানের ফল ও স্বৰ্গলোকলাভ হয়। তৎপরে অরুন্ধতীতটে গমন করিবে; তথায় সমুদ্রজলে স্নান ও ত্রিরাত্র উপবাস করিলে অশ্বমেধযজ্ঞ ও গোসহস্রদানের ফললাভ এবং কুল উদ্ধার হয়। পরে তীর্থসেবী ব্যক্তি সমাহিত ও ব্রহ্মচারী হইয়া ব্ৰহ্মাবর্তে গমন করিলে অশ্বমেধযজ্ঞের ফল ও সোমলোকপ্ৰাপ্ত হয়। হে মহারাজ! যমুনানদীর উৎপত্তিস্থানে গমন করিয়া তদীয় সলিলে অবগাহন করিলে অশ্বমেধের ফললাভ ও স্বৰ্গলোকে পূজিত হয়। তৎপরে ত্ৰৈলোক্যপূজিত দাবীসংক্রমণ-তীর্থে গমন করিলে অশ্বমেধের ফল ও স্বৰ্গলোকলাভ হয়। তদনন্তর সিদ্ধগন্ধর্ব্বসেবিত সিন্ধুপ্রভাবে গমন করিবে; তথায় পঞ্চরজনী বাস করিলে বহু সুবৰ্ণলাভ হয়। তৎপরে দুৰ্গমা বেদী-তীর্থে উপনীত হইলে অশ্বমেধের ফল ও স্বৰ্গলোকলাভ হয়। অনন্তর ঋষিকুল্যা ও বাশিষ্ঠতীর্থে গমন করিবে, বাশিষ্ঠ-তীর্থে বিধিবোধিত কর্ম্ম করিলে ক্ষত্ৰিয় প্রভৃতি বর্ণসমুদয় ব্রাহ্মণ হয়। ঋষিকুল্যায় স্নান এবং দেবতা ও পিতৃগণকে অৰ্চনা করিলে বিধুতপাপ হইয়া ঋষিলোকপ্রাপ্ত হয়। তৎপরে ভূগুতুঙ্গে গমন করিবে, তথায় শাকাহারপূর্ব্বক একমাস অতিবাহিত করিলে অশ্বমেধ ফলপ্ৰাপ্ত হয়। হে মহারাজ! বীরপ্রমোক্ষ-তীর্থে গমন করিলে সর্ব্বপাপ হইতে বিমুক্ত হয়।
তদনন্তর কৃত্তিকা-তীর্থে ও মঘা-তীর্থে গমন করিলে অগ্নিষ্টোম ও অতিরাত্রের ফলপ্ৰাপ্ত হয়। তৎপরে বিদ্যাতীর্থে গমন করিবে, তথায় সন্ধ্যার সময় স্নান করিলে সকল লোকের বিদ্যালাভ হইয়া থাকে। তৎপরে সর্ব্বপাপপ্রমোচন মহাশ্রমে এককাল নিরাহার হইয়া একরাত্রি বাস করিলে শুভলোকলাভ হয়। পরে মহালয়ে ষষ্ঠকাল অনাহারদ্বারা একমাস অতিবাহিত করিলে চিরসঞ্চিত পাপ হইতে বিনির্মুক্ত ও বহু সুবৰ্ণলাভ হয় এবং বংশের পূর্ব্বতন দশপুরুষ ও অধস্তন দশপুরুষ উদ্ধার হয়। তদনন্তর পিতামহ নিষেবিত বেতসিকা-তীর্থে গমন করিলে অশ্বমেধফল ও ঔশনসী গতিপ্রাপ্ত হয়। তৎপরে সিদ্ধগণসেবিত সুন্দরিকান্তীর্থে গমন করিলে উত্তম রূপলাবণ্যপ্রাপ্ত হয়। তৎপরে ব্ৰহ্মচারী ও জিতেন্দ্ৰিয় হইয়া ব্ৰাহ্মণী-তীর্থে গমন করিলে পদ্মবৰ্ণ যানে আরোহণপূর্ব্বক ব্ৰহ্মলোকপ্রাপ্ত হয়।
“পরে সিদ্ধগণনিষেবিত অতিপবিত্র নৈমিষ-তীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে ব্ৰহ্মা দেবগণের সহিত সতত বাস করেন; ঐ তীৰ্থ অন্বেষণ করিলে পাপের অৰ্দ্ধ ও তথায় প্রবেশ করিলে সমগ্র পাপ হইতে বিনির্ন্মুক্ত হয়। তীৰ্থতৎপর ব্যক্তি তথায় একমাস বাস করবে। এই পৃথিবীতে যে সমস্ত তীৰ্থ বিদ্যমান রহিয়াছে, তথায় সংযত ও নিয়তাশন হইয়া স্নান করিলে গোমেধযজ্ঞের ফলপ্ৰাপ্তি ও সপ্তমকুল পৰ্য্যন্ত পবিত্র হয়। যে ব্যক্তি তথায় উপবাস-পরায়ণ হইয়া প্ৰাণ পরিত্যাগ করে, সে সকললোকে আনন্দিত হয়। তৎপরে গঙ্গোদ্ভেদে গমন করিবে, তথায় ত্রিরাত্ৰ উপবাস করিলে বাজপেয়—যজ্ঞের ফল ও ব্ৰহ্মত্বপ্ৰাপ্তি হয়। তৎপরে সরস্বতীতে উপস্থিত হইয়া পিতৃলোক ও দেবগণের তর্পণ করিলে নিঃসন্দেহ সারস্বতলোকপ্ৰাপ্তি হয়।
তদনন্তর ব্রহ্মচারী ও সমাহিত হইয়া বাহুদাতীর্থে গমন করিবে। তথায় একরাত্রি বাস করিলে স্বৰ্গলোক-পূজিত দেবসত্ৰনামক যজ্ঞের ফললাভ হয়। তৎপরে পুণ্যজনপরিবৃত হইয়া অতিপবিত্র ক্ষীরাবতী-তীর্থে গমন করিবে, তথায় পিতৃদেবার্চ্চনে রত হইলে রাজপেয়—যজ্ঞের ফলপ্রাপ্ত হয়। তৎপরে সমাহিত হইয়া বিমলা শোক-তীর্থে গমন করিবে, তথায় এক রজনীমাত্র বাস করিলে স্বৰ্গলোকে পূজিত হয়। তৎপরে সরযূ নদীর গোপ্রতার—নামক উত্তম তীর্থে গমন করিবে, যে স্থানে রঘুকুলতিলক রামচন্দ্ৰ বল, বাহন ও ভৃত্যগণ-সমভিব্যাহারে কলেবর পরিত্যাগ করিয়া তদীয় প্রভাবে স্বর্গে গমন করিয়াছিলেন; তথায় স্নান করিলে রামচন্দ্ৰ-প্ৰসাদে কর্ম্মানুষ্ঠানবশতঃ চিরসঞ্চিত পাপরাশি হইতে বিনির্ন্মুক্ত হইয়া স্বৰ্গলোকে পূজিত হয়। তৎপরে রাম-তীৰ্থ গোমতীতে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে অশ্বমেধ ফলপ্ৰাপ্তি ও নিজকুল পবিত্র হয়। তত্রত্য শতসাহস্ৰাক নামক তীর্থে সংযত ও মিতাহারী হইয়া স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফললাভ হয়। তৎপরে কোটি-তীর্থে স্নান ও ভগবান কার্ত্তিকেয়কে অৰ্চনা করিলে গোসহস্রদানের ফলপ্ৰাপ্তি ও তেজস্বী হয়। তৎপরে বারাণসীতে উপনীত হইয়া বৃষভবাহন মহাদেবকে অৰ্চনা ও কপিলাহ্রদে স্নান করিলে রাজসূয় যজ্ঞের ফলপ্ৰাপ্তি হয়। তৎপরে অবিমুক্ত-তীর্থে গমন করিয়া দেবাদিদেব মহাদেবকে দর্শন করিবামাত্ৰ ব্ৰহ্মহত্যাজনিত পাপ হইতে বিনিমুক্ত হয় এবং তথায় প্ৰাণ পরিত্যাগ করিলে মোক্ষপ্রাপ্ত হয়। তৎপরে লোকবিশ্রুত গোমতীগঙ্গাসঙ্গমে অতি দুর্লভ মার্কণ্ডেয়তীর্থে গমন করিলে অগ্নিষ্টোমফলপ্ৰাপ্ত ও কুল উদ্ধার হয়। তৎপরে ব্ৰহ্মচারী ও সমাহিত হইয়া গঙ্গায় গমন করিবামাত্ৰ অশ্বমেধ-ফলপ্রাপ্ত হয়। ঐ স্থানে ত্ৰিলোকবিখ্যাত অক্ষয় বট আছে, তথায় পিতৃলোকের উদ্দেশে দান করিলে তাহা অক্ষয় হয়। তৎপরে মহানদীতে স্নান করিয়া পিতৃলোক ও দেবগণের উদ্দেশে দান করিলে তাহা অক্ষয় হইয়া থাকে এবং তৰ্পণ করিলে অক্ষয়লোকলাভ ও নিজকুল উদ্ধার হয়। তৎপরে ধর্ম্মারণ্যোপশোভিত ব্ৰহ্মসরোবরতীর্থে গমন করিলে ব্ৰহ্মলোকপ্রাপ্ত হয়। ভূতভাবন ভগবান ব্ৰহ্মা সেই সরোবরে যূপকাষ্ঠ নিখাত করিয়া রাখিয়াছেন; ঐ যূপকে প্রদক্ষিণ করিলে অশ্বমেধের ফললাভ হয়। তৎপরে লোকবিশ্রুত ধেনুক-তীর্থে গমন করিবে, তথায় এক রাত্রিকাল বাস করিয়া তিল ও ধেনু প্ৰদান করিলে সর্ব্বপাপ-বিবর্জ্জিত ও নিশ্চয়ই সোমলোক লাভ হয়। পূর্ব্বে পর্ব্বতোপরি সঞ্চরণকালে সবৎসা কপিলার পদচিহ্ন তথায় নিপতিত হইয়াছিল; উহা অদ্যাপিও পরিদৃশ্যমান হয়। হে মহারাজ! সেই সমস্ত পদচিহ্নে স্নান করিলে যে কিছু অশুভ কর্ম্ম সঞ্চিত থাকে, তাহাও বিনষ্ট হইয়া যায়।
অনন্তর গৃধ্র-বটনামে দেবস্থানে গমন করিবে; তথায় বৃষভবাহন শিবসন্নিধানে উপনীত হইয়া সর্ব্বাঙ্গে ভস্মলেপন করিলে ব্রাহ্মণগণের দ্বাদশবার্ষিক ব্ৰত অনুষ্ঠিত ও ইতর বর্ণের সর্ব্বপাপ প্ৰণষ্ট হয়। তৎপরে সঙ্গীত-নিনাদিত উদ্যান্ত-নামক পর্ব্বতে গমন করিবে; এই স্থানে সাবিত্রীর পদচিহ্ন পরিদৃশ্যমান হইয়া থাকে; তথায় সংশিত-ব্রত হইয়া সন্ধ্যোপাসনা করিলে দ্বাদশবার্ষিকী সন্ধ্যোপাসনার ফল হয়। তথায় যোনিদ্বারনামক প্রখ্যাত তীর্থে গমন করিলে যোনিসঙ্কট হইতে মুক্ত হয়।
যে ব্যক্তি গয়া-তীর্থে কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষে বাস করে, তাহার সপ্তম কুল পবিত্র হয়, সন্দেহ নাই। মনুষ্যের বহু পুত্ৰ কামনা করা কর্ত্তব্য; কারণ, তাহাদিগের মধ্যে যদি কেহ গয়ায় গমন, অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠান অথবা নীলকায় বৃষ উৎসর্গ করে, তাহা হইলে বাঞ্ছিত ফললাভ হয়। তৎপরে ফল্গু-তীর্থে গমন করিলে অশ্বমেধের ফল ও মহতী সিদ্ধিলাভ হয়। তৎপরে সমাহিত হইয়া ধর্ম্মপ্রস্থে গমন করিবে; যে স্থানে ধর্ম্ম প্রতিনিয়তই বিরাজমান আছেন, তথায় কূপখননপূর্ব্বক স্নান করিয়া দেবতা ও পিতৃগণের তর্পণ করিলে মুক্তপাপ ও স্বৰ্গলাভ হয়। তৎপরে তত্রস্থ শ্রান্তিশোক-বিনাশন মহর্ষি মতঙ্গের আশ্রমে প্রবেশ করিলে গোমেধযজ্ঞের ফললাভ হয় এবং তত্ৰত্য ধর্ম্ম-তীর্থে স্নান করিলে অশ্বমেধের ফলপ্রাপ্ত হয়। তৎপরে উৎকৃষ্ট ব্রহ্মস্থানে গমন করিবে; তত্ৰস্থ ভগবান ব্ৰহ্মার নিকট উপনীত হইলে রাজসূয়-যজ্ঞ ও অশ্বমেধের ফললাভ হয়। তৎপরে রাজগৃহ তীর্থে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে কাক্ষীবান মুনির ন্যায় আনন্দিত হয় এবং যক্ষিণীর নৈবেদ্য ভোজন করিলে তাহারই প্ৰসাদ বলে। ব্ৰহ্মহত্যাজনিত পাপ হইতে বিনিমুক্ত হয়।
অনন্তর মণিনাগ-তীর্থে গমন করিয়া যে ব্যক্তি সেই তীৰ্থজাত দ্রব্য ভোজন করে, ভূজঙ্গদংশিত হইলেও তাহার শরীরে বিষসঞ্চার হয় না। সেই স্থানে এক রজনী বাস করিলে গোসহস্রদানের ফললাভ হয়। তৎপরে ব্রহ্মর্ষি গৌতমের প্রিয়তম বনে গমন করিবে; তথায় অহল্যাহ্রদে স্নান করিলে পরমগতিপ্ৰাপ্ত হয় এবং আশ্রম-প্ৰবেশ করিলে সম্পত্তিলাভ হয়; সেই স্থানে ত্ৰিলোকবিশ্রুত এক কূপ আছে, ঐ কৃপসলিলে স্নান করিলে অশ্বমেধযজ্ঞের ফললাভ হয়। রাজর্ষি জনকের দেবপূজিত এক কুপ আছে, তথায় স্নান করিলে বিষ্ণুলোক-প্ৰাপ্তি হয়। তৎপরে সর্ব্বপাপ-প্ৰমোচন বিনশন-নামক তীর্থে গমন করিলে বাজপেয়াযজ্ঞের ফললাভ ও সোমলোক-প্ৰাপ্তি হয়। তৎপরে সর্ব্বতীৰ্থজলোদ্ভব গণ্ডকী-তীর্থে গমন করিলে বাজপেয়-ফল ও সূৰ্য্যলোকলাভ হইয়া থাকে। তৎপরে ত্ৰিলোক-প্রখ্যাত বিশল্যা নদীতে গমন করিলে অগ্নিষ্টোমফল-লাভ ও স্বৰ্গলোক-প্ৰাপ্তি হয়। তৎপরে অধিবঙ্গনামক তপোবনে প্ৰবেশ করিলে গুহ্যকগণমধ্যে পরিগণিত হইয়া নিঃসন্দেহ আনন্দিত হইয়া থাকে। তৎপরে সিদ্ধগণনিষেবিত কম্পনানদীতে গমন করিলে পুণ্ডরীক-প্ৰাপ্তি ও স্বৰ্গলোকলাভ হয়। তৎপরে মাহেশ্বরী-ধারায় গমন করিলে অশ্বমেধ ফল-প্রাপ্তি ও কুল উদ্ধার হয়। তৎপরে সুরপুষ্করিণীতে গমন করলে দুৰ্গতি-বিনির্মুক্ত ও অশ্বমেধফললাভ হয়।
অনন্তর ব্ৰহ্মচারী ও সমাহিত হইয়া সোমপদে গমন করিবে; তত্ৰস্থ মাহেশ্বর পদে স্নান করিলে অশ্বমেধফললাভ হয়। সেই স্থানে কোটি তীর্থের সমাবেশ আছে, পূর্ব্বে অতি দুরাত্মা এক অসুর কুর্ম্মরূপ পরিগ্রহ করিয়া ঐ তীর্থ-সকল অপহরণ করিয়াছিল। অনন্তর প্রভবিষ্ণু বিষ্ণু তাহাদিগকে প্রত্যাহরণ করিলেন। সেই কোটিতীর্থে অবগাহন করিলে পুণ্ডরীক-লাভ ও বিষ্ণুলোক-প্ৰাপ্তি হয়। তৎপরে নারায়ণস্থানে গমন করিবে; যথায় ত্ৰিলোকীনাথ নারায়ণ নিরবচ্ছিন্ন বাস করিতেছেন এবং ব্ৰহ্মাদি দেবতা, ঋষি, আদিত্য, বসু ও রুদ্রগণ তাঁহাকে উপাসনা করিয়া থাকেন। তিনি তথায় অদ্ভুতকর্ম্ম শালগ্রামনামে বিখ্যাত; সেই অব্যয়, বরদাতা বিষ্ণুর নিকট উপনীত হইলে অশ্বমেধফলপ্ৰাপ্তি ও বিষ্ণুলোকলাভ হয়। তথায় সর্ব্বপাপপ্রমোচন এক কুপ আছে, ঐ কূপে সর্ব্বদা সমুদ্রচন্তুষ্টয় সন্নিহিত রহিয়াছে; উহাতে স্নান করিলে কদাচ দুৰ্গতিপ্রাপ্ত হয় না। হে মহারাজ! মনুষ্য অব্যয়, বরদ, মহাদেব রুদ্রের সন্নিহিত হইলে মেষনির্মুক্ত শশাঙ্কের ন্যায় মোভমান থাকে এবং সংযতচিত্ত ও শুচি হইয়া জাতিস্মর-তীর্থে স্নান করিলে নিঃসন্দেহ জাতিস্মরত্ব প্রাপ্ত হয়। তৎপরে মহেশ্বরপুরে গমন করিয়া তথায় বৃষভবাহন ভবানীপতিকে অৰ্চনা ও উপবাস করিলে নিঃসংশয় অভীষ্টলাভ হয়।
‘অনন্তর সর্ব্বপাপপ্রমোচন বামন-তীর্থে গমন করিবে। তথায় ত্ৰিলোকীনাথ হরিকে পূজা করিলে মনুষ্য কদাচ দুৰ্গতিপ্রাপ্ত হয় না। তৎপরে পাপহারক কুশিকাশ্রমে গমন করিবে; তত্ৰস্থ পাপপ্ৰণাশিনী কৌশিকীতে উপস্থিত হইলে রাজসূয় যজ্ঞের ফললাভ হয়। তৎপরে চম্পকারণ্যে গমন করিবে; তথায় এক রজনী বাস করিলে গোসহস্রদানের ফললাভ হইয়া থাকে। তৎপরে পরমদূর্লভ জ্যোষ্ঠিল—তীর্থে গমন করিবে; তথায় এক রজনী বাস করিলে গোসহস্রদানের ফললাভ হয়। তথায় দেবী-সমভিব্যাহারী বিশ্বেশ্বরকে সন্দর্শন করিলে মিত্রাবরুণলোক-প্রাপ্তি ও ত্রিরাত্ৰ উপবাস করিলে অগ্নিষ্টোম-যজ্ঞের ফললাভ হয়। তৎপরে সংযত ও মিতাহারী হইয়া কন্যাসংবেদ্য-তীর্থে গমন করিলে প্রজাপতি ভগবান মনুর লোকলাভ হইয়া থাকে; ঐ তীর্থে যৎকিঞ্চিৎ দান করিলে তাহা অক্ষয় হয়। অনন্তর নির্বীরা-তীর্থে গমন করিলে অশ্বমেধ-ফললাভ ও বিষ্ণুলোক-প্ৰাপ্তি হয়। যে ব্যক্তি নির্বীরাসঙ্গমে দান করে, সে অনাময় ইন্দ্ৰলোকে গমন করিয়া থাকে। তত্ৰস্থ ত্ৰিলোকবিশ্রুত বশিষ্ঠাশ্রমে গমন করিবে; সেই স্থানে স্নান করিলে বাজপেয়-ফলপ্ৰাপ্ত হয়। তৎপরে দেবর্ষিগণ সেবিত দেবকুটে গমন করিলে অশ্বমেধ-ফলপ্ৰাপ্তি ও স্বীয় কুল উদ্ধার হয়। তৎপরে কৌশিক মুনির হ্রদে গমন করিবে; যে স্থানে কৌশিক বিশ্বামিত্র পরমাসিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন। তথায় একমাস বাস করিলে অশ্বমেধের ফললাভ হয়। যিনি সর্ব্বতীর্থশ্রেষ্ঠ ঐ মহাহ্রদে বাস করেন, তাঁহার কদাচ দুৰ্গতি হয় না; প্রত্যুত বহুসংখ্যক সুবৰ্ণলাভ হইয়া থাকে। তৎপরে বীরাশ্রমবাসী কুমারসন্নিধানে গমন করিলে নিঃসন্দেহ অশ্বমেধের ফলপ্রাপ্ত হয়। তৎপরে ত্ৰিলোকবিশ্রুত অগ্নিধারাতীর্থে গমন করিবে। তথায় স্নান করিলে অগ্নিষ্টোম-ফলপ্ৰাপ্তি হইয়া থাকে। তৎপরে অব্যয় বরদাতা বিষ্ণুর নিকট উপনীত হইয়া হিমাচলসন্নিধানে ব্ৰহ্মার সরোবরে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে অগ্নিষ্টোম-ফললাভ হয়। ঐ সরোবর হইতে ত্ৰিলোকবিশ্রুতা লোকপাবনী কুমারধারা নির্গত হইতেছে; সে স্থানে স্নান করিলে “কৃতাৰ্থ হইলাম” বলিয়া বিশ্বাস জন্মে। তথায় ষষ্ঠ কাল [অপরাহ্ন—দিবামানের পাঁচ ভাগের পর] উপবাস করিলে ব্ৰহ্মহত্যাজনিত পাপ হইতে বিনিমুক্ত হয়।
অনন্তর ত্ৰিলোকবিশ্রুত গৌরীশিখরে আরোহণপূর্ব্বক স্তনকুণ্ডে গমন করিবে; তথায় স্নান এবং পিতৃ ও দেবগণকে অৰ্চনা করিলে অশ্বমেধ এবং বাজপেয়-ফলপ্ৰাপ্তি ও ইন্দ্ৰলোকলাভ হয়। তৎপরে ব্ৰহ্মচারী ও সমাহিত হইয়া তাম্রারুণ-তীর্থে গমন করিলে অশ্বমেধ ফল ও ব্ৰহ্মালোক-লাভ হয়। তৎপরে নন্দিনী-তীর্থে দেবনিষেবিত কূপে উপনীত হইলে নরমেধের ফললাভ হয়। তৎপরে কৌশিকারুণমধ্যে গমন করিয়া কালিকাসঙ্গমে স্নান ও ত্রিরাত্ৰ উপবাস করিলে সর্ব্বপাপবিনির্ন্মুক্ত হইয়া থাকে। তৎপরে সোমাশ্রিমনামক উর্ব্বশী-তীর্থে গমন ও কুম্ভকৰ্ণাশ্রমে প্রবেশ করিলে পৃথিবীতে পরম পূজিত হয়। প্রাচীনেরা দেখিয়াছেন, ব্ৰহ্মচারী ও যতব্ৰত হইয়া কোকামুখে স্নান করিলে জাতিস্মরত্ব প্রাপ্ত হয়। নন্দা-তীর্থে একবার গমন করিলে সর্ব্বপাপবিনির্ন্মুক্ত হইয়া ব্ৰাহ্মণ হয় ও ইন্দ্ৰলোকে গমন করিয়া থাকে। তৎপরে ঋষভ-দ্বীপস্থ ক্ৰৌঞ্চনিসূদন-তীর্থে গমন করিয়া সরস্বতীনদীতে স্নান করিলে বিমানস্থ হইয়া পরামশোভা-প্ৰাপ্ত হয়। তৎপরে মুনিগণনিষেবিত ঔদ্দালকতীর্থে স্নান করিলে সর্ব্বপাপবিনির্ন্মুক্ত হয়। তৎপরে ব্রহ্মর্ষিনিষেবিত অতিপবিত্র ধর্ম্মতীর্থে গমন করিলে বাজপেয়-ফলপ্রাপ্তিপূর্ব্বক বিমানস্থ হইয়া পূজিত হয়। তৎপরে চম্পতীর্থে গমনপূর্ব্বক ভাগীরথীতে তৰ্পণ করিয়া দণ্ডার্ত্ত স্থানে উপস্থিত হইলে গোসহস্ৰদান-ফললাভ হইয়া থাকে। তৎপরে পুণ্যোপশোভিতা অতিপবিত্র ললিতিকা-তীর্থে গমন করিয়া রাজসূয়-ফললাভ হয় ও বিমানন্থ হইয়া পূজিত হইয়া থাকে।’ ”