সভা ও সমিতি
প্রাচীন প্রাক্-বিভক্ত সমাজের শাসন-ব্যবস্থা সংক্রান্ত সাধারণভাবে জানতে পারা তথ্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হলে, বৈদিক সাহিত্যে সভা ও সমিতির গুরুত্ব বুঝতে পারা যাবে। অতএব আমরা এখানে এ-বিষয়ে মর্গানের গবেষণা থেকেই শুরু করবো।
মর্গান দেখাচ্ছেন, ট্রাইব্যাল সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতোই রাষ্ট্রব্যবস্থারও পরিচয় নেই। তাহলে সে-সমাজের শাসন কাজ ঠিক কী ভাবে চলে?
ট্রাইব্যাল-সংগঠনের মূলে হলো ক্লান। এই ক্লানের শাসন-পরিচালন পদ্ধতি থেকেই আমাদের আলোচনা শুরু করতে হবে।
ক্লানের শাসন-পরিচালন ব্যাপারে চূড়ান্ত ক্ষমতা ক্লানের সভার— মর্গানের পরিভাষায় তার নাম council। সভার সভ্য বলতে ক্লানের অন্তর্গত সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীই।
এই সভাই ক্লানের প্রধানদের নির্বাচন করবে—অর্থাৎ ক্লানের অন্তর্গত সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীই মত প্রকাশ করে প্রধানদের নির্বাচন করবে।
নির্বাচিত হবার পর সর্দার ও মোড়ল ক্লানের স্বার্থ যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করলে তাদের নেতৃত্বচু্যত করে নতুন নির্বাচন করা হবে। মর্গান(৩৯) তাই বলছেন, এদের পদমর্যাদা নামেমাত্র আজীবনের জন্য; পদচ্যুত হবার এই সম্ভাবনার দরুন কার্যত সে-পদ সংব্যবহারকালীন মাত্র।
সামগ্রিকভাবে ট্রাইবের শাসন-পরিচালন সংক্রান্ত চূড়ান্ত দায়িত্ব ট্রাইবের সমিতির উপর। বিভিন্ন ক্লান-নির্বাচিত মোড়ল ও সর্দার এই সমিতির সভ্য। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বিভিন্ন ক্লানের সাধারণ মানুষ সমিতির সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবার সুযোগ পাবে না। কেননা, সমিতির বৈঠক কখন বসবে তা আগে থাকতে সকলকে জানানো থাকে। দ্বিতীয়ত, এ-বৈঠক প্রকাশ্যে বসে। তৃতীয়ত, সমিতির বৈঠকে যে-কোনো ক্লানের যে-কোনো সাধারণ ব্যক্তি বক্তৃতা দিতে পারে এবং সমিতির সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
কন্ফেডারেসির স্তরেও একটি উচ্চতম সমিতি আছে। ট্রাইবের শাসনপরিচালন ব্যাপারে যে-রকম ট্রাইবের সমিতির চূড়ান্ত ক্ষমতা তেমনি সামগ্রিক ভাবে কনফেডারেসি-স্তরে শাসন-পরিচালনের চূড়ান্ত দায়িত্ব তার সমিতির উপর।
তাহলে ট্রাইব্যাল সংগঠনে ক্লান থেকে শুরু করে কনফেডারেসি পর্যন্ত শাসন-পরিচালনের চূড়ান্ত দায়িত্ব নির্ভর করছে প্রকাশ এবং একান্ত গণতান্ত্রিক সভা-সমিতির উপর : ক্লান-স্তরে সভা, ট্রাইব-স্তরে সমিতি, কনফেডারেসি স্তরে সমিতি। মর্গান(৪০) – তাই বলছেন, the council was the great feature of ancient society,–সভাসমিতিই হলো প্রাচীন সমাজের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
বৈদিক সাহিত্য প্রাচীন বলেই প্রাচীন-সমাজের এই বৈশিষ্ট্য সে সাহিত্যেও প্রতিফলিত। এই প্রসঙ্গে ঋগ্বেদে আমরা নানান শব্দ পাই : সভা, সমিতি, বিদথ ইত্যাদি। বিদথ শব্দ প্রসঙ্গে সায়ন এক জায়গায় বলছেন, “বেদনার্থ বিবদমানয়োঃ” অর্থাৎ যে-স্থান বিবাদরত ব্যক্তিদিগের আবেদনের উপযোগী (ঋগ্বেদ ১.১৬৭.৩)। আধুনিক বিদ্বানেরা এগুলির তাৎপর্য নিয়ে প্রচুর আলোচনা করেছেন; কিন্তু প্রাচীন-সমাজ সংক্রান্ত সাধারণভাবে জানতে-পারা তথ্যের আলোয় ঋগ্বেদের সভা, সমিতি ও বিদথকে বোঝবার চেষ্টা করেননি। ফলে ভারততত্ত্ববিদেরা এ-বিষয়ে নানা রকম অস্পষ্ট এবং পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। সিদ্ধান্তগুলির তালিকার জন্য অধ্যাপক কীথ্ ও ম্যাকডোন্যাল-এর Vedic Index(৪১) দ্রষ্ট্রব্য।
ট্রাইব্যাল-সমাজ সংক্রান্ত সাধারণভাবে-জানতে-পারা তথ্যকে অগ্রাহ্য করবার একটি দৃষ্টান্ত এখানে উদ্ধৃত করবে। কীথ্ ও অধ্যাপক ম্যাকডোন্যাল বলেছেন, Samiti denotes an “assembly” of the Vedic tribes(৪২)— অর্থাৎ, সমিতি বলতে বৈদিক ট্রাইবদের এ্যসেমব্লি বোঝাতো। যদি তাই হয় তাহলে ঋগ্বেদের সমিতিকে সম্যকভাবে চিনতে হলে ট্রাইব মানে কী এবং ট্রাইবের এ্যসেমব্লি বলতে ঠিক কী বোঝায়—এ-প্রশ্ন অগ্রাহ্য করা যায় না। কিন্তু আলোচ্য বিদ্বানেরা সে-প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। আরো কথা আছে। তাঁরা বলেছেন, the assembly disappears as an effective part of government in the Buddhist texts, the Epic and the Law-book(৪৩)। মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উত্তরকালে সমাজ-সংগঠনে কোন ধরনের পরিবর্তনের ফলে শাসন-পরিচালনের ব্যাপারে ওই সমিতির গুরুত্ব লুপ্ত হলো সে আলোচনা না তুললে আমাদের কাছে এ-মন্তব্যের তাৎপর্য পূর্ণাঙ্গ হয় না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, মহাভারতের আলোচনা প্রসঙ্গে হপকিন্স(৪৪) দেখাতে চাইছেন, অভিজাত শ্রেণীর যুদ্ধ পরিষদ এবং পুরোহিত শ্রেণীর সংসদ গড়ে ওঠবার ফলেই পুরাকালের গণতান্ত্রিক সমিতি ভেঙে গিয়েছিলো।
আমাদের মূল যুক্তির পক্ষে এখানে সভা, সমিতি ও বিদথ সংক্রান্ত সমস্ত আলোচনার অবতারণা নিম্প্রয়োজন। আমার শুধুমাত্র এটুকু দেখাবার চেষ্টা করছি যে, বৈদিক সাহিত্যে প্রাক্-বিভক্ত সমাজের বহু স্মৃতি খুঁজে পাওয়া যায়। মর্গানের গবেষণা থেকে আমরা দেখলাম, প্রাক্-বিভক্ত সমাজের শাসন-পরিচালন ব্যাপারে প্রধানতম দায়িত্ব সভা-সমিতির উপর। অতএব আমাদের যুক্তির পক্ষে এখানে দুটি বিষয়ের উল্লেখই পর্যাপ্ত হবে : (ক) ঋগ্বেদে সভা, সমিতি, বিদথের প্রভূত গৌরবময় স্থান রয়েছে, যদিচ (খ) উত্তরকালের রচনায় (পুরাণ, মহাভারত, স্মৃতিশাস্ত্র প্রভৃতিতে) এই সভা-সমিতির গৌরব লুপ্ত হতে দেখা যায়। অবশ্যই, প্রাচীন গ্রীক ও রোমান ইতিহাসে(৪৫) দেখা যায়, আদি-অকৃত্রিম প্রাক্-বিভক্ত ট্রাইব্যাল-সংগঠন ভেঙে যাবার পরও এই সভা-সমিতিমূলক শাসন-পরিচালন ব্যবস্থার রেশ বহুদিন পর্যন্ত টিকে ছিলো। তার মধ্যে প্রকৃত ট্রাইব্যাল-সমাজের অকৃত্রিম সভা-সমিতির পরিচয় না থাকলেও অন্তত তার স্মৃতির পরিচয়টুকু অস্পষ্ট নয়। ঋগ্বেদ-সংহিতা দীর্ঘ যুগ ধরে রচনার সংগ্রহ; তাই ঋগ্বেদেও সভা, সমিতি ও বিদথের তাৎপর্য যে সর্বত্রই আদি-আকৃত্রিম প্রাক-বিভক্ত সমাজের শাসন-পরিচালন ব্যবস্থার পরিচায়ক—এ-কথা মনে করাও ভুল হবে। কিন্তু তা না হলেও ঋগ্বেদের সভা, সমিতি ও বিদথ যে বৈদিক আর্যদেরই প্রাচীন প্রাক্-বিভক্ত পর্যায়ের স্মৃতি বহন করছে এ-বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকতে। পারে না। অতএব এর থেকেই প্রমাণ হবে যে, বৈদিক আর্যরাও এককালে প্রাচীন প্রাক্-বিভক্ত পর্যায়েই জীবন-যাপন করেছিলেন।
ঋগ্বেদে সভা, সমিতি ও বিদথের গৌরব যে কতোখানি এবার তাই দেখা যাক।
ত্বমগ্নে বৃজিনবর্তনিং নরং সল্পনপিপর্ষি বিদখে বিচর্ষণে।
যঃ শূরসাতা পরিতক্ম্যে ধনে দভ্রেভিশ্চিংসমৃতা হংসি ভূয়সঃ।।
অর্থাৎ, —হে বিশিষ্ট জ্ঞানযুক্ত অগ্নি, তুমি বিপথগামী নরকে সমবেত কর্মের উপযোগী সভায় (বিদখে) সংশোধন করিয়া থাক; যুদ্ধগুলির দ্বারা যাহারা চারিদিকে ধন বিতরণ করিয়াছে তুমি তাহাদিগের বলিষ্ঠ শক্রগুলিকে হনন কর। ঋগ্বেদ : ১.৩১.৬॥
সং যন্মহী মিথতী স্পধর্মানে তনূরুচা শূরসাতা যতৈতে।
অদেবযং বিদখে দেবযুভিঃ সত্রা হতং সোমসূতা জনেন।।
অর্থাৎ, —যে দুইজন পরম্পর অত্যন্ত হিংসাযুক্ত এবং স্পর্ধিত হইয়া দৈহিক বল ও শৌর্য প্রদর্শন করিয়া হিংসা করিতে সচেষ্ট, সোমসবনকারী দেবতার অনুমোদিত জনসমূহ কর্তৃক সেই দেবতাবিহীন নরগণ বিদথে (সভায়) নিহত হইল।। ঋগ্বেদ : ৭.৯৩.৫ ৷৷
উতাশিষ্ঠা অম্বু শৃণ্বন্তি বহ্নয়ঃ সভেয়ো বিপ্রো ভরতে মতী ধনা।
বীলুদ্বেষা অনু বশ ঋণমাদদি সহ বাজী সমিথে ব্রহ্মণস্পতিঃ।।
অর্থাৎ, —শীঘ্রগামী অশ্ব আমাদিগের স্তোত্র শ্রবণ করিয়া এবং অতএব আমাদিগের যজ্ঞে তাহারা সভার উপযোগী হইয়া এবং ধনযুক্ত হইয়া প্রবেশ করে; ইহার পর প্রবল রাক্ষসদিগের দ্বেষকারী সেই অন্নবান ব্রহ্মণস্পতি এই সভায় আমাদিগের অভিলাষ অনুরূপ দাবীও (ঋণ) দিয়াছিলেন।। ঋগ্বেদ : ২.২৪.১৩।।
গোমী আগ্নেহবিমাঁ অশ্বী যজ্ঞো নৃবৎসখা সদমিদপ্রমৃষ্যঃ।
ইলাবাঁ এষো অসুর প্রজাবান্ দীর্ঘো রয়িঃ পৃথুবুধ্নঃ সভাবান্।।
অর্থাৎ, —হে অসুর (অগ্নি), আমাদের এই যজ্ঞ গোযুক্ত, অশ্বযুক্ত, অন্নযুক্ত, প্রজাযুক্ত, প্রচুর ধনযুক্ত এবং প্রভূত ধনোৎপাদনের কারণযুক্ত কর; হে অগ্নি তুমি মানুষের ন্যায়ই আমাদের সখা এবং সভার সদস্য (সভাবান্)।। ঋগ্বেদ : ৪.২.৫।।
সোমো ধেনুং সোমো অর্বন্তমাশুং সোমো বীরং কর্মণ্যং দদাতি।
সাদন্যং বিদথ্যং সভেয়ং পিতৃশ্রবণং যে দদাশদস্মৈ ৷।
অর্থাৎ, সোম ধেনু দান করেন, সোম শীঘ্রগামী অশ্ব দান করেন এবং সোম কর্মক্ষম বীর দান করেন। সেই সোম গৃহস্থিত বিদধের উপযুক্ত, সভার উপযোগী, পিতার প্রবণের উপযোগী (হবি) ইহাকে (= যজমানকে) দান করিয়াছিলেন।। ঋগ্বেদ : ১.৯১.২০॥
যুয়ং গাবো মেদয়থা কৃশং চিদশ্রীরং চিৎকৃণুথা সুপ্রতীকম্।
ভদ্রং গৃহং কৃনুথ ভদ্ৰবাচো বৃহদ্বো বয় উচ্যতে সভাসু।।
অর্থাৎ, —হে গরুগণ। তোমরা মেদযুক্ত হও এবং ক্ষীণ অথবা অশ্লীল (বিকৃত?) অঙ্গবিশিষ্ট হইয়াও শোভন লক্ষণযুক্ত হও; গৃহকে ভদ্র কর, বাক্যকে ভদ্র কর, এই কথাই আমরা বিশেষভাবে সভাগুলিতে বলিতেছি, তোমাদের অন্ন প্রচুর।। ঋগ্বেদ : ৬.২৮.৬॥
অশ্বী রথী সুরূপ ইৎ গোমাঁ ইদিন্দ্র তে সখা।
শ্লাত্রভাজা বয়সা সচতে সদা চন্দ্রো যাতি সভামূপ।।
অর্থাৎ, —হে ইন্দ্ৰ, তোমার সখা অশ্বযুক্ত, রথযুক্ত, সুন্দর এবং গোযুক্ত; অন্নের দ্বারা ধনলাভের যোগ্য (ব্যক্তি) সর্বদা তোমার সহিত মিলিত হয় এবং সজ্জিত হইয়া সভায় গমন করে।। ঋগ্বেদ : ৮.৪.৯।।
সর্বে নন্দন্তি যশসাগতেন সভাসাহেন সখ্যা সখায়ঃ।
অর্থাৎ, —(হে সোম) সকলে সভার উপযোগী সখ্যযুক্ত বন্ধুদিগের সহিত, প্রসিদ্ধিযুক্ত তোমাকে পাইয়া আনন্দিত হয়।। ঋগ্বেদ : ১০.৭১.১০।।
ত্বেষং রূপং কৃণুত উত্তরং যং সংপৃঞ্চানঃ সদনে গোভিরদ্ভিঃ।
কবির্বুধ্নং পরি মর্মৃজ্যতে ধীঃ সা দেবতাতা সমিতির্বভূব।।
অর্থাৎ, —(হে প্রাতঃস্মরণীয় অগ্নি), গৃহে গরুগুলিদ্বারা, জলসমূহের দ্বারা সম্পৃক্ত হইয়া যে উৎকৃষ্ট রূপ তুমি পরিগ্রহ কর এবং ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টা হইয়া ধনোৎপাদনের উপায়সমূহ (বুধ্ন) নিজ তেজের দ্বারা বিস্তৃত কর, সেই তেজ, হে দেবতা, তুমি সমিতিতে স্থাপিত করিয়াছ।। ঋগ্বেদ : ১.৯৫.৮ ॥
পরি সদ্মেব পশুমান্তি হোতা রাজা ন সত্যঃ সমিতীরিয়ানঃ।
সোমঃ পুনানঃ কলশাঁ অযাসীৎ সীদন্মৃগো ন মহিষো বনেষু।।
অর্থাৎ, —হোতা পণ্ডযুক্ত হইয়া রাজার ন্যায় যেরূপ গৃহ অভিমুখে গমন করে সেইরূপ সত্যপরায়ণ পবিত্র সোম সমিতিতে আসিয়া কলসসমূহে প্রবেশ করে, বনেস্থিত মহিষ ও পশুগুলি যেমন উপবেশন করে।। ঋগ্বেদ : ৯.৯২.৬ ॥
বয়ং ত ইন্দ্র বিশ্বহ প্রিয়াসঃ সুবীরাসো বিদথমা বদেম।
অর্থাৎ, —হে ইন্দ্র, আমরা তোমার চিরদিনের প্রিয় এবং মহান বীর; আমরা এই সভায় কথা বলিতেছি।। ঋগ্বেদ : ২.১২.১৫।।
স রেবান্যাতি প্রথমো রথেন বসুদাবা বিদথেষু প্রশস্তঃ।
অর্থাৎ, —সেই ধনবান রথে করিয়া প্রথমে গমন করেন এবং সভাসমূহে প্রশস্তরূপে ধনদান করেন। ঋগ্বেদ : ২.২৭.১২ ৷।
নৃপেশসো বিদথেষু প্র জাতা অভীমং যজ্ঞং বি চরন্ত পুর্বীঃ।।
অর্থাৎ,–সভাসমূহতে জাত নররূপীগণ এই যজ্ঞের অভিমুখে বিচরণ করুন।। ঋগ্বেদ : ৩.৪.৫।।
কৃতং নো যজ্ঞং বিদথেষু চারুং কৃতং ব্ৰহ্মাণি সূরিষু প্রশস্তা।
উপো রয়ির্দেবজুতো ন এতু প্রণঃ স্পার্হাভিরূতিভিস্তিরেতম্।।
অর্থাৎ,—(হে ইন্দ্র বরুণ), আমাদিগের যজ্ঞ সমাপ্ত হইয়াছে, সভাসমূহে বীরগণের মধ্যে সুন্দর প্রশস্ত স্তুতিগুলি সমাপ্ত হইয়াছে; দেবতাদিগের উদ্দেশ্যে প্রেরিত ধনসমূহ আমাদিগের নিকট আগমন করুক এবং স্পৃহণীয় রক্ষা দ্বারা আমাদিগকে তোমরা বর্ধিত কর।। ঋগ্বেদ : ৭.৮৪.৩ ॥
বিশেষ উল্লেখযোগ্য এই যে, বৈদিক সমাজ যতো অবধারিতভাবেই পুরুষপ্রধান হোক না কেন ঋগ্বেদেই এমন কিছুকিছু নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে যা থেকে অনুমিত হয় যে, ওই অংশগুলি রচিত হবার সময়েও নারীদের সভাগমনঅধিকার বর্তমান ছিলো।
গুহা চরন্তী মনুষো ন যোষা সভাবতী বিদথ্যেব সং বাক্।
অর্থাৎ,—মানুষ নিগূঢ়ভাবে বিচরণ করে, যেমন সভাস্থিত নারী সভার উপযোগী বাক্য প্রয়োগ করে ।। ঋগ্বেদ : ১ ১৬৭.৩ ॥
ত্রী যধস্থা সিদ্ধবস্ত্রিঃ কবীনামুত ত্রিমাতা বিদথেষু সম্রাট।
ঋতাবরীর্যোষণাস্তিস্রো অপ্যাস্ত্রিরা দিবো বিদথে পত্যমানাঃ ॥
অর্থাৎ, —হে সিন্ধুগণ, তিনটি লোক, কবিদিগের তিনটি মাতা, বিদথগুলির সম্রাট্, ঋতযুক্ত তিনটি নারী দিবসে তিনবার সভায় আগমন করে।। ঋগ্বেদ : ৩.৫৬.৫ ॥
দিবসে তিনবার সভায় আগমন-প্রসঙ্গ অবশ্যই যজ্ঞের কথা মনে করিয়ে দেয়। অন্যত্রও সভার সঙ্গে যজ্ঞের সম্পর্কের ইংগিত পাওয়া যায়।
ব্ৰাতংব্রাতং গণংগণং সুশস্তিভিরগ্নের্তামং মরুতামোজ ঈমহে।
পৃষদশ্বাসো অনবভ্ররাধসে গন্তারো যজ্ঞং বিদথেষু ধীরাঃ ॥
অর্থাৎ, —ধীর আমরা প্রতি ব্রাতে ও প্রতি গণে অগ্নি ও মরুৎগণের ওজঃ এবং বিচিত্রবর্ণ অশ্বসমূহ ও ক্রটিবিহীন ধনসমূহ-যাহা যজ্ঞের অভিমুখে গমন করে সেইগুলিকে— শোভন ভতিদ্বারা এই বিদথগুলিতে যাজ্ঞা করিতেছি।। ঋগ্বেদ : ৩.২৫.৬ ॥
অতএব, সভার প্রসঙ্গ থেকে আমরা বৈদিক যজ্ঞের আলোচনায় উপনীত হই। বস্তুত, যজ্ঞকথা বাদ দিলে বৈদিক সাহিত্যের আলোচনাই সম্ভব নয়। এবং যজ্ঞকথা প্রসঙ্গে প্রথমেই আমাদের আলোচনা-পদ্ধতির বিরুদ্ধে একটি আপত্তি উঠতে পারে।
——————
৩৯. H. L. Morgan AS. 73, cf. K. P. Jayaswal HP 1:11-2 “the Samiti was the national assembly of the whole people or visah ; for we find the whole people’ or samiti, in the alternative, electing and re-electing the rajan or ‘king (Rigveda 10. 173. 1 & Atharvaveda 6. 87.1 ; 6.88. 3.; 3.4.2). The whole people were supposed to be present in the Assembly. The functions of the samiti may be gathered from different references. We have already noticed the most important business of the samiti, to wit, electing the rajan. It could also re-elect king who had been banished. They were thus a sovereign body from the constitutional point of view.”
৪০. H. L. Morgan op cit 84.
৪১. A. B. Keith & A. A Macdonell op. cit. Sabha di Samiti.
৪২. Ibid 2:430.
৪৩. Ibid.
৪৪. JAOS XII:148-52.
৪৫. G. Thomson SAGS ch. 3 &4·