ব্যস্ত হবেন না মিঃ ঘোঘ, আপনি বসুন ঐ খাটে।
শকুনি ধীরে ধীরে তার খাটের ওপর বসে। কিরীটী তখন প্রশ্ন শুরু করে।
এবারে বলুন, কাল রাত্রে ঠিক কটার সময় আপনি শুতে আসেন?
রাত তখন গোটাতিনেক হবে সে কথা তো একটু আগেই আপনাকে বললাম।
আপনি আমার মুখ থেকে আপনার মামার হত্যার সংবাদ শোনবার পূর্ব পর্যন্ত তাহলে সত্যিই। কিছুই শোনেননি বা জানতে পারেননি ঐ সম্পর্কে, এই কি সত্যি?
হ্যাঁ।
আচ্ছা আপনি বিছানায় শোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কাল রাত্রে?
কিরীটীর প্রশ্নে শকুনি ঘোষ প্রথমটায় কেমন যেন একটু ইতস্তত করে, তারপর মৃদুকণ্ঠে বলে, ঠিক সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম আসেনি। তবে বেশীক্ষণ জেগে যে ছিলাম না এও ঠিক।
হুঁ। সেই সময় কেউ আপনার ঘরে আসেনি?
শকুনি আবার কিছুক্ষণ যেন চুপ করে থাকে, একটু বিব্রত ও চিন্তিত সে। কিরীটী চেয়ে আছে শকুনির মুখের দিকে।
এবং তারপর যেন কতকটা দ্বিধাগ্রস্ত ভাবেই শকুনি বলে, না।
আবার কিরীটী কথাটার যেন পুনরুক্তি করে, কেউ আসেনি ঠিক বলছেন?
তাই।
ঠিক আপনার মনে আছে?
হ্যাঁ।
বাইরে ঠিক ঐ সময় যেন একটা দ্রুত পদশব্দ শোনা গেল। কে যেন এই ঘরের দিকেই আসছে মনে হল।
কিরীটী ঘরে ঢুকেই ভেতর থেকে ঘরের কপাট দুটো ভেজিয়ে প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই প্রায়-বন্ধ কপাটের দিকে চোখ তুলে তাকাল কিরীটী।
সহসা প্রায়-বন্ধ কপাট দুটি খুলে গেল এবং পরক্ষণেই উন্মুক্ত দ্বারপথে যে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল তার দিকে তাকিয়ে কিরীটী যেন বেশ একটু বিস্মিতই হয়।
কেবল আগন্তুককে দেখেই কিরীটী ততটা বিস্মিত হয়নি, যতটা হয়েছিল আগন্তুকের সমগ্র চোখেমুখে একটা ভীতি ও উৎকণ্ঠা মিশ্রিত চাঞ্চল্য দেখে।
আগন্তুক বোধ হয় কক্ষে প্রবেশ করেই কিরীটীকে দেখতে পায়নি, কারণ কিরীটী ঘরের একপাশে দাঁড়িয়েছিল সেই সময়।
শেকো, শুনেছিস কি সর্বনাশ হয়ে গেছে!
একরাশ উৎকণ্ঠা আগন্তুকের কণ্ঠস্বরে যেন ঝরে পড়ে।
কিরীটী নিঃশব্দ পদসঞ্চারে আরও একটু পিছিয়ে গেল।
আগন্তুক কিরীটীকে তখনও দেখতে পায়নি। বলে, তোরা কেউ বিশ্বাস করিসনি বটে তবে এ যে হবে তা কিন্তু আমি প্রথম থেকে দাদার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম। আর এও তো জানা কথা এ কার কাজ–
আগন্তুকের বাকি কথাগুলো শেষ হল না, উপবিষ্ট নির্বাক স্থিরদৃষ্টি শকুনির দিকে চেয়ে এতক্ষণে বোধ হয় কেমন একটু মনে মনে সন্দিগ্ধ হয়ে পাশের দিকে তাকাতেই অদূরে দণ্ডায়মান নির্বাক কিরীটীর স্থির দুটি জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সঙ্গে নিজের চোখের দৃষ্টি মিলিত হয়ে গেল।
মুহূর্তে বক্তার সমগ্র শরীরের স্নায়ু ও উপস্নায়ু দিয়ে একটা তীব্র বিদ্যুৎ-তরঙ্গ বুঝি খেলে গেল।
কথাটা যা বলছিলেন গান্ধারী দেবী, হঠাৎ বলতে বলতে থেমে গেলেন কেন? কিরীটী প্রশ্ন করে।
মৃত রায়বাহাদুরের অপরূপ সুন্দরী বিধবা ভগিনী গান্ধারী দেবীই আগন্তুক।
মুহূর্তে যেন একটা বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে, প্রচন্ড একটা বৈদ্যুতিক শক্তি নিমেষে সমগ্র স্নায়ুতে আঘাত দিয়ে গান্ধারী দেবীর সমস্ত বাক্ ও বোধশক্তিকে যেন মুহূর্তে হরণ করেছে।
গান্ধারী দেবী যেন প্রাণহীন একটা পাথরে পরিণত হয়েছেন অকস্মাৎ।
মূক অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন গান্ধারী দেবী কিরীটীর মুখের দিকে।
বসুন গান্ধারী দেবী। আপনার যা বলবার বা শকুনিবাবুকে যা বলতে এসেছিলেন নির্ভয়ে বলুন। কোন ভয় নেই আপনার, আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে বিশ্বাস করুন, তৃতীয় কোন ব্যক্তিই এসব কথা জানতে পারবে না।
গান্ধারী দেবী তথাপিও কিন্তু নিরুত্তর।
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন গান্ধারী দেবী কিরীটীর মুখের দিকে।
বসুন গান্ধারী দেবী। ঐ চেয়ারটায় বসুন। কিরীটী পুনরায় আহ্বান জানায় গান্ধারী দেবীকে।
অত্যন্ত সহজ ভাবে কিরীটী কথাগুলো উচ্চারণ করলেও কণ্ঠস্বরে একটা সুস্পষ্ট নির্দেশের সুর যেন প্রকাশ পায়।
এ শুধুমাত্র অনুরোধই নয়, আদেশও।
এবং সে আদেশকে লঙঘন করা অনেকের পক্ষেই দুঃসাধ্য।
তথাপি কিন্তু গান্ধারী দেবী নিশ্চপ, পাষাণ-প্রতিমার মতই যেমন দাঁড়িয়ে ছিলেন তেমনি দাঁড়িয়ে রইলেন।
কিরীটী আবার বলে স্থির অপলক দৃষ্টিতে গান্ধারী দেবীর চোখের দিকে চেয়ে, বসুন গান্ধারী দেবী!
এবারে সত্যিসত্যিই গান্ধারী দেবী কতকটা মন্ত্রমুগ্ধের মতই যেন সামনের চেয়ারটার ওপর গিয়ে বসলেন
হ্যাঁ বলুন এবারে—একটু আগে যা বলতে বলতে থেমে গিয়েছিলেন!
কি বলব? ক্ষীণ কণ্ঠে এতক্ষণে গান্ধারী দেবী কথা কটি বলেন।
রায়বাহাদুরের হত্যাকারী সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনার মনে কোন সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে—আরও সোজা করে বলতে গেলে বলা যায়, নিশ্চয়ই আপনি কাউকে এ ব্যাপারে সন্দেহ করেছেন, তাই নয় কি?
সন্দেহ করেছি!
হ্যাঁ। একটু আগে তো সেই কথাই শকুনিবাবুর কাছে আপনি বলতে বলতে থেমে গেলেন।
আমি–
শুনুন গান্ধারী দেবী, আপনি নিজেই আপনার কথার ফাঁদে আটকে পড়েছেন। এখন আর উপায় নেই। কিন্তু তারও আগে একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই।
কি?
আপনি নিশ্চয়ই চান যে রায়বাহাদুর—আপনার ভাইকে যে অমন নিষ্ঠুরভাবে গতকাল হত্যা করেছে, সেই নৃশংস শয়তান হত্যাকারী ধরা পড়ুক এবং তার সমুচিত শাস্তিবিধান হোক।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই চাই।
এবং এও আপনারা সকলেই জানেন সেই নিষ্ঠুর ব্যাপারের মীমাংসাই আমি করতে চাই।
হ্যাঁ।
এও নিশ্চয়ই তাহলে স্বীকার করবেন যে, নিষ্ঠুর ঐ হত্যারহস্যের মীমাংসা করতে হলে আমাকে আপনাদের—এ বাড়ির সকলেরই সাহায্যের প্রয়োজন অল্প-বিস্তর? অন্যথায় ব্যাপারটা একটু জটিলই হবে?
কিন্তু–
তাহলে বলুন আপনি যা জানেন। অকপটে সব আমার কাছে খুলে বলুন কিছু গোপন করবেন না!
কি বলব?
কাকে আপনি এ ব্যাপারে সন্দেহ করছেন খুলে বলুন?
আবার গান্ধারী দেবী নিরুত্তর, চোখেমুখে তাঁর যেন সুস্পষ্ট একটা চিন্তা ও উদ্বেগের ছায়া ঘনিয়ে ওঠে।
বলুন—চুপ করে থাকবেন না!
ক্ষমা করবেন কিরীটীবাবু, আমি–মানে আপনি আমার কথা ঠিক বুঝতে পারেননি। শকুনিকে আমি ঠিক তা বলতে চাইছিলাম না—
বিচিত্র একটা হাসি যেন কিরীটীর ওষ্ঠপ্রান্তে মুহূর্তে জেগে উঠেই মিলিয়ে গেল। এবং কৌতুকে চোখের তারা দুটি ঝকঝক করতে লাগল।
গান্ধারী দেবী, আমি কিরীটী রায়। আমার সত্যিকারের পরিচয়টা হয়ত আপনার জানা নেই, নচেৎ বুঝতে পারতেন মানুষের মনের গোপন কথাকে টেনে বের করবার একটা শক্তি ঈশ্বর আমায় দিয়েছেন। আপনার গলার স্বরকে আপনি মূক করে রাখলেও আপনার দুটি চক্ষু, স্থিরনিবদ্ধ দুটি ওষ্ঠ অনেক কিছুই এই মুহূর্তে আমার কাছে সুস্পষ্টভাবেই ব্যক্ত করছে। আপনি আপনার গত রাত্রের জবানবন্দিতে যে বলেছিলেন—আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন এমন সময় আপনার মেয়ে রুচিরা দেবী এসে আপনার ঘুম ভাঙিয়ে আপনাকে রায়বাহাদুরের মৃত্যুসংবাদটা দেন, কথাটা যে সম্পূর্ণ মিথ্যে তা আর কেউ না জানলেও আমি কিন্তু ঠিকই ধরেছিলাম গতকালই।
মিথ্যে! কথাটা উচ্চারণ করে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে গান্ধারী দেবী কিরীটীর চোখের দৃষ্টির সঙ্গে নিজের দৃষ্টি মেলান।
হ্যাঁ, সম্পূর্ণ মিথ্যে। কিরীটীর দুচোখের দৃষ্টিতে আবার সেই শানিত ছুরির ফলার মতই তীক্ষ্ণতা ঘনিয়ে ওঠে।
এ আপনি কি বলছেন মিঃ রায়! পুনরায় প্রশ্ন করেন গান্ধারী দেবী।
হ্যাঁ, মিথ্যে। কারণ আমি জানি সে-সময় আপনি জেগেই ছিলেন এবং শুধু তাই নয়, পাশের ঘরে—মানে আপনার মেয়ের ঘরে কিছুক্ষণ পূর্বে যে সব কথাবার্তা হয়েছিল তার প্রত্যেকটি কথাই আপনার কানে গিয়েছিল।
এসব কি বলছেন আপনি মিঃ রায়!
মিথ্যে বা কল্পিত কিছুই বলছি না নিশ্চয়ই। সেটা অবশ্যই আমার চাইতেও আপনি ভালই বুঝতে পারছেন গান্ধারী দেবী।
কিন্তু আমার মেয়ে রুচিরাও কি আপনাকে বলেনি যে সে এসে আমাকে ঘুম হতে উঠিয়ে
হ্যাঁ বলেছিলেন, তবে ঘুম তো নয় সেটা আপনার গান্ধারী দেবীবলতে পারেন ঘুমের ভান মাত্র।
চকিতে শকুনি ঘোষ একবার গান্ধারী দেবী ও একবার কিরীটীর মুখের দিকে তাকায় ঐ সময়।
কিরীটীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে কিন্তু সেটুকুও ফাঁকি দিতে পারে না।
কিন্তু কিরীটীর চোখে মুখে তার কোন লক্ষণই প্রকাশ পায় না।
ঘুমের ভান! আমি ঘুমোইনি—ঘুমের ভান করে ছিলাম?
ঠিক তাই। কারণ ঐভাবে জেগে ঘুমোনোর হয়ত আপনার বহু সময়েই প্রয়োজন হয়, অবশ্য আপনার মেয়ে রুচিরা দেবীর পক্ষে সেটা না জানাই সম্ভব।
না জানাই সম্ভব!
হ্যাঁ। অন্যথায় নিশ্চয়ই রুচিরা দেবী আপনার সম্পর্কে সজাগ হয়ে থাকতেন এবং যথাবিহিত সতর্কতাও হয়ত অবলম্বন করতেন।
কিরীটীবাবু!
একটা রুক্ষ তীক্ষ্ণতা যেন গান্ধারী দেবীর কণ্ঠস্বরে ঐ মুহূর্তে প্রকাশ পায়।
গান্ধারী দেবী, কিরীটী রায়ের এই দুজোড়া চোখ ছাড়াও আর এক জোড়া চোখ—অদৃশ্যও বলতে পারেন, সদা এমন সতর্ক থাকে যে তার দৃষ্টিকে এড়িয়ে যাওয়া অনেকের পক্ষেই খুব সহজসাধ্য নয়। শুনুন তবে, গতরাত্রে আপনি যখন রায়বাহাদুরের ঘরে উঠে এসেছিলেন সে সময় আপনার চোখের পাতায় কোথাও আপনার ক্ষণপূর্বে কথিত নিদ্রার বিন্দুমাত্রও আমি দেখতে পাইনি। শুধু তাই নয়, আপনার মাথার চুল ও বেশভূষায় এমন একটা নিখুঁত পারিপাট্য ছিল যা অন্ততঃ কোন সদ্য-নিদ্রোথিত ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া যেতে পারে না। বিশেষ করে যাঁকে একটু আগে ঘুম থেকে ডেকে তুলে একটা দুঃসংবাদ দেওয়া হয়েছে এবং যার জন্য অন্ততঃ তিনি পূবাহ্নে আদপেই প্রস্তুত ছিলেন না। আরও একটা ব্যাপার যেটা হয়ত আপনার ভাববারও প্রয়োজন হয়নি এবং আপনার নজর দেওয়ারও অবকাশ হয়নি, আপনি কাল যখন রায়বাহাদুরের ঘরে এসে প্রবেশ করেছিলেন, আপনার গায়ে একটা ফুলহাতা গরম-জামা ছিল। নিশ্চয়ই গরম-জামা গায়ে দিয়েও যেমন আপনি নিদ্রা যান না তেমনি ও ঘরে আসবার পূর্বেও অত বড় একটা দুঃসংবাদ শোনবার পর গরম-জামাটা গায়ে দিয়ে আসবার কথাটাও আপনার মনে আসবার কথা নয় এবং স্বাভাবিকও নয়।
গান্ধারী দেবী কিরীটীর কথায় যেন সত্যিই একেবারে বোবা হয়ে যান।
তাহলেই এখন বুঝতে পারছেন তো কেন আমি আপনার নিদ্রা সম্পর্কে সন্দিহান?
এবারেও গান্ধারী দেবী কিরীটীর কথার কোন প্রত্যুত্তর দিলেন না।
গান্ধারী দেবী, মিথ্যে আপনি সব কথা আমার কাছে গোপন করবার চেষ্টা করছেন এখনও!
সহসা এবারে গান্ধারী দেবী একটু যেন রূঢ় কণ্ঠেই জবাব দিলেন, আমি কিছুই জানি না কিরীটীবাবু। কেবল এইটুকু বলতে পারি, সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণার বশবর্তী হয়েই মিথ্যে আপনি আমাকে জেরা করছেন।
যদি তাই হয়, তবে একটু আগে এই ঘরে ঢোকবার মুহূর্তে শকুনিবাবুকে যে কথাটা বলতে গিয়ে তৃতীয় ব্যক্তি আমাকে এখানে দেখেই হঠাৎ চুপ করে গেলেন—সে কথাটা কি? কি কথা ওঁকে বলতে যাচ্ছিলেন—সেটা অন্ততঃ জানতে পারি কি?
না।
যেন একটা রূঢ় কঠিন আঘাতের মতই না শব্দটি কিরীটীর মুখের ওপর এসে পড়ে তাকেও নিশ্চুপ করে দিল।
ক্ষণকাল গভীর অনুসন্ধানী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিরীটী গান্ধারী দেবীর মুখের দিকে চেয়ে থেকে হঠাৎ বলে ওঠে, গান্ধারী দেবী, একটা কথা—সমীরবাবুর সঙ্গে সত্যিসত্যিই কি আপনার মেয়ে রুচিরা দেবীর বিবাহ-ব্যাপারটা স্থির হয়ে গিয়েছে?
হ্যাঁ। ধীর কণ্ঠে গান্ধারী দেবী এবারে জবাব দিলেন।
আপনার নিশ্চয়ই এ বিবাহে খুব মত আছে?
আছে।
আপনার মেয়ে রুচিরা দেবীর?
কিরীটীবাবু, এটা সম্পূর্ণ আমাদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ব্যাপার। এর সঙ্গে দাদার মৃত্যুর কোন সংস্পর্শ আছে বলেই আমি মনে করি না। অতএব একান্তই অবান্তর নয় কি প্রশ্নটা আপনার?
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক হলেও আমি এ প্রশ্নটার জবাব চাই গান্ধারী দেবী!
আর যদি না দিই?
তাহলে বলব মিথ্যেই আপনি সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে জেদাজেদি করছেন, কারণ আপনি ঢাকবার বা গোপন করবার চেষ্টা করলে কি হবে আমি আগেই জেরা করে রুচিরা দেবীর কাছ থেকে তাঁর কথাতেই জেনেছি।
কি–কি জেনেছেন আপনি? নিরতিশয় উৎকণ্ঠা ও ব্যাকুলতা যেন গান্ধারী দেবীর কণ্ঠস্বরে ও চোখেমুখে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বললাম তো, যা জানবার তাই জেনেছি।
কি জেনেছেন আপনি? কি রুচিরা আপনাকে বলেছে?
মাপ করবেন গান্ধারী দেবী, সেটা আমার অনুসন্ধানের ব্যাপারে একান্ত ব্যক্তিগত ও গোপনীয় ব্যাপার।
আপনি বলতে চান রুচি আপনাকে বলেছে যে সে সমীরকে পছন্দ করে না, বিবাহ সে করবে না?
বললাম তো গান্ধারী দেবী, তিনি রুচিরা দেবী আমাকে কি বলেছেন বা না বলেছেন। বা আমি কি বলতে চাই বা না চাই সেটা প্রকাশ করতে আপনার কাছে আমি বাধ্য তো নই-ই, ইচ্ছুকও নই।
আমি বিশ্বাস করি না কিরীটীবাবু, রুচি ঐ ধরনের কোন কথা আপনাকে বলতে পারে আর যদি সে বলে থাকেও এ কথাটা যেন সে ভুলে না যায় যে, এখনও আমি তার মাথার ওপরে বেঁচে আছি। খুশিমত তাকে আমি চলতে দেব না।
হঠাৎ কিরীটী হেসে ফেলে এবং হাসতে হাসতেই বলে, গান্ধারী দেবী, এবারে আপনাদের কাছ থেকে আমি আপাততঃ বিদায় নেব। কারণ আমার কফি বোধ হয় ঠাণ্ডা-হয়ে গেল সত্যিসত্যিই এতক্ষণে। আচ্ছা আসিনমস্কার
বলতে বলতে কিরীটী দ্বিতীয় আর কোন কথা না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
স্তম্ভিত বিস্ময়ে শকুনি ও গান্ধারী দেবী কিরীটীর গমনপথের দিকে চেয়ে রইল।