০৭. বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধে

বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধে হয়ে এসেছে, এর মধ্যে কাকাবাবুর চা খাওয়া হয়ে গেছে তিনবার। সন্তু আর জোজো কিছুক্ষণ বাগানে ঘুরল। কামাল এখনও আসেননি।

জোজো আর ধৈর্য ধরতে পারছে না। সে ছুটে এসে বারান্দায় বসা কাকাবাবুকে জিজ্ঞেস করল, আপনাদের ডাকাতের দল ঘিরে ধরল, তারপর কী হল?

কাকাবাবু হাত নেড়ে বললেন, কামাল আসুক, কামাল আসুক। অংশু কোথায়, তাকে দেখছি না!

জোজো বলল, দুপুরে তো ওপরের ঘরে ঘুমোচ্ছিল।

কাকাবাবু বললেন, কাজে ফাঁকি মেরে ঘুম? ওকে ডেকে নিয়ে এসো-

জোজো ওপরতলা ঘুরে খানিক বাদে বলল, কাকাবাবু, সে ঘরে নেই, বাথরুমে নেই, বারান্দায় নেই, কোথাও নেই, সে পালিয়েছে!

কাকাবাবু ভুরু কুঁচকে বললেন, সত্যি পালাবে, এত সাহস হবে?

জোজো বলল, সব জায়গায় তো দেখলাম। ওর ঘরে চা দেওয়া হয়েছিল, সেই চাও খায়নি। একটা নতুন জামা-প্যান্ট পরে গেছে, বাকিগুলো ফেলে গেছে।

কাকাবাবু বললেন, গেটের বাইরে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কাছে জিজ্ঞেস করে এসো তো, অংশুঁকে বেরোতে দেখেছে কি না। ওরা নিশ্চয়ই নজর রাখছে।

সন্তু কাছে এসে সব শুনে বলল, আমি বাড়ির পেছন দিকটা খুঁজে দেখছি।

সমস্তটা বাগানটাই পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। একপাশে নদী। পেছন দিকের বাগানে কাঁচালঙ্কা, বেগুনগাছ লাগানো হয়েছে, বড় গাছ নেই, সেখানে কেউ লুকিয়ে থাকতে পারে না। পাঁচিলের ওপাশে ঝোপঝাড়, খানিক দূরে পাহাড় শুরু হয়েছে।

পাঁচিল বেশ উঁচু হলেও সন্তু অনায়াসে উঠে বসল। ওপাশে অনেক ঝোপঝাড়। সূর্য ঢলে পড়েছে। আকাশের পশ্চিম দিকটা লালে লাল হলেও ঝোপঝাড়ে নেমে এসেছে অন্ধকার। লাফ দিয়ে নীচে নেমে পড়ল সন্তু।

খানিকটা এদিক-ওদিক খুঁজতেই সে একটা খসখস শব্দ শুনতে পেল। কেউ পা টিপে টিপে যাচ্ছে।

সন্তু চেঁচিয়ে ডাকল, অংশুদা, অংশুদা!

অমনই কেউ জোরে ছুটতে শুরু করল। হলুদ-নীল ডোরাকাটা নতুন শার্টটা চিনতে পারল সন্তু। সে আবার বলল, অংশুদা, দাঁড়াও, যাচ্ছ কোথায়?

এদিক দিয়ে কোথায় যাবে?

সে-কথায় কান না দিয়ে আরও জোরে ছুটল অংশু। কিন্তু সে সন্তুর সঙ্গে পারবে কেন? ক্যাপ্টেন ভামিঙ্গোর সঙ্গে কোনও মানুষ দৌড়ে পারে! বুমচাক ডবাং ভুলু, বুমচাক ডবাং ভুলু বলতে বলতে যেন ঝড়ের মতন উড়ে যেতে লাগল সন্তু। একটু পরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে অংশুর কোমর ধরে ফেলল।

অংশু হাউহাউ করে কেঁদে উঠে বলল, আমায় ছেড়ে দাও ভাই সন্তু, আমায় ছেড়ে দাও। আমি পারব না।

সন্তু জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?

অংশু বলল, কবিতার লাইন ভাবতে-ভাবতে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি পাগল হয়ে যাব। তোমার কাকাবাবু এর চেয়ে আর যে-কোনও শাস্তি আমাকে দিন, আমি মাথা পেতে নেব। কবিতা মেলানো, ওরে বাপ রে বাপ, আমার দ্বারা সম্ভব নয়।

সন্তু হো-হো করে হেসে উঠল।

অংশু কাতরভাবে বলল, তুমি হাসছ? আমার যে কী কষ্ট হচ্ছে তুমি বুঝতে পারবে না। ভাল্লুক, মাল্লুক, জাল্লুক, কাল্লুক, খালুক শুধু এইসব মাথার মধ্যে ঘুরছে! এই দিয়ে পদ্য হয়? আমাকে বাঁচাও ভাই!

হাসি থামিয়ে সন্তু বলল, কবিতার জন্য কাউকে এত কষ্ট পেতে জীবনে দেখিনি! ঠিক আছে, আমি তোমাকে সাহায্য করছি। কাকাবাবু তো একটা লাইন মেলাতে বলেছে, আমি বলে দিচ্ছি, মুখস্থ করে নাও! প্রথম লাইনটা কী ছিল, বনের ধারে ফেউ ডেকেছে, নাচছে দুটো উল্লুক। এই তো? পরের লাইনটা, পরের লাইনটা, হ্যাঁ, এরকম হতে পারে, বাঘের হালুম শুনেই ভয়ে কাঁপছে সারা মুল্লুক! কী, ঠিক আছে? মুখস্থ করতে পারবে?

অংশু ঘাড় নেড়ে বলল, হ্যাঁ, পারব?

সন্তু বলল, ভাল করে মুখস্থ করে নাও। আর পালাবার চেষ্টা কোরো না!

ফেরার সময় অংশু বিড়বিড় করে লাইনটা মুখস্থ করতে লাগল। পাঁচিলে ওঠার আগে সন্তু একবার তার পরীক্ষা নিল। অংশু ঠিক-ঠিক বলে দিল লাইন দুটো।

পাঁচিল টপকে এপাশে এসে সন্তু একটা লঙ্কাগাছ থেকে কয়েকটা লঙ্কা ছিঁড়ে নিল। অংশুর হাতে দিয়ে বলল, কাকাবাবুকে বলবে, তুমি এদিকে লঙ্কা তুলতে এসেছিলে। রাত্তিরে ভাতের সঙ্গে খাবে।

অংশু বলল, আমি যে একেবারে ঝাল খেতে পারি না! লঙ্কা মুখে দিলেই পেট জ্বালা করে।

সন্তু বলল, খেতে হবে না। থালার পাশে রাখবে। এখন একটা কিছু বলতে হবে তো। আমি একটা লঙ্কা খেয়ে নেব।

কাকাবাবুর হাতে আর এক কাপ চায়ের পেয়ালা। ওদের দেখে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় পাওয়া গেল?

সন্তু কিছু বলবার আগেই অংশু বলল, ওদিকে কত লঙ্কার গাছ, আর বেগুন। বেগুনগুলো এখনও ছোট-ছোট, কিন্তু কত লঙ্কা হয়েছে, লাল-লাল, দেখতে কী সুন্দর লাগে।

কাকাবাবু বললেন, তাই নাকি, বাঃ! তুমি বুঝি খুব লঙ্কার ভক্ত?

অংশু হাতের মুঠো খুলে দেখিয়ে বলল, হ্যাঁ, লঙ্কা ছাড়া ভাত খেতে পারি। অনেক তুলে এনেছি। কাকাবাবু, লঙ্কার খেতে ঘুরতে-ঘুরতে হঠাৎ আমার মাথায় পদ্য এসে গেল। লাইনটা মিলিয়ে ফেলেছি।

কাকাবাবু বললেন, লঙ্কার খেতে কবিতার প্রেরণা? এরকম বোধ হয় পৃথিবীতে আগে কখনও হয়নি। তা হলে শুনিয়ে দাও!

অংশু জামার কলারটা ঠিক করে নিল, একবার গলাখাঁকারি দিল, তারপর বেশ জোর দিয়ে বলল,

নদীর ধারে শেয়াল ডাকছে, নাচছে একটা ভাল্লুক,
আর সবাই ভয় পেয়ে গেল, একটা বাঘ ডাকল হালুম!

জোজো খুকখুক করে হেসে ফেলল।

কাকাবাবু হাসতে গিয়েও গম্ভীরভাবে বললেন, এ আবার কী কবিতা? কতবার বলেছি, ভাল্লুক নয়, উল্লুক, উল্লুক! প্রথম লাইনটাই মনে রাখতে পারো না? আর যদি ভালুকও হয়, তার সঙ্গে হালুম আবার কী ধরনের মিল?

অংশু আড়চোখে সন্তুর দিকে তাকাল। সন্তু খুব মনোযোগ দিয়ে মুখ নিচু করে তার নিজের পায়ের জুতো দেখছে।

অংশু বলল, ঠিকই বানিয়েছিলাম সার, কিন্তু আমি বেশিক্ষণ মনে রাখতে পারি না।

জোজো বলল, কাকাবাবু, ধরে নিন এটা গদ্য কবিতা!

কাকাবাবু বললেন, না, না। ওসব চলবে না। একটা জিনিস বুঝতে পারছি। ও ছন্দটাই ধরতে পারছে না। যার কানে ঠিক ছন্দটা ধরা পড়ে না, সে কবিতা লিখতে পারে না, তাই না? সেইজন্য সকলে কবিতা লিখতে পারে না। কেউ পারে, কেউ পারে না।

অংশু সঙ্গে-সঙ্গে বলল, ঠিক বলেছেন সার। কেউ পারে না। আমি সাতজন্ম চেষ্টা করলেও পারব না।

কাকাবাবু বললেন, তা বলে নিষ্কৃতি নেই। কবিতা যারা লিখতে পারে না, তারাও পড়তে পারে। পড়ে-পড়ে মুখস্থ করতে পারে। অংশু, তুমি যে-কোনও কবিতার চার লাইন আমাকে মুখস্থ শোনাতে পারো?

অংশু মাথা চুলকে খানিকক্ষণ ভাবল। তারপর বলল, না সার, শুধু একটা হিন্দি গানের দুলাইন মনে পড়ছে। শোনাব?

কাকাবাবু প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, না, না, না, হিন্দি গান শোনাতে হবে। আমি বলছি বাংলা কবিতা। একটা কবিতাও জানো না! যে বাঙালির। ছেলে একটা বাংলা কবিতাও মুখস্থ বলতে পারে না, তার জেল হওয়া উচিত। জোজো, কাগজ-পেন্সিল এনে দাও তো ওকে!

জোজো দৌড়ে একটা প্যাড আর ডট পেন নিয়ে এল।

কাকাবাবু বললেন, ওকেই লিখতে দাও। যদি বানান ভুল করে, ঠিক করে দিয়ো।

তারপর কাকাবাবু ডিকটেশান দিলেন :

শুনেছো কী বলে গেল সীতানাথ বন্দ্যো
আকাশের গায়ে নাকি টক টক গন্ধ
টক টক থাকে নাকো হলে পরে বৃষ্টি
তখন দেখেছি চেটে, একেবারে মিষ্টি!

জোজো দুষ্টুমি করে বলল, কাকাবাবু, এই কবিতাটা আপনার খুব ফেভারিট, তাই না? এটা সুর করে আপনাকে গান গাইতেও শুনেছি। আপনি বুঝি আর অন্য কোনও কবিতা জানেন না?

কাকাবাবু বললেন, কী? সুকুমার রায়ের সব কবিতা আমার মুখস্থ। শুনবে?

এই সময় গেটের সামনে একটা গাড়ি এসে থামল। তার থেকে নামলেন কামালসাহেব। জোজো অমনই উঠে দাঁড়িয়ে বলল, গল্প, এবার গল্প শোনা হবে।

কাকাবাবু অংশুঁকে বললেন, তোমাকে কাল দুপুর পর্যন্ত মুখস্থ করার সময় দিলাম।

কামালসাহেব একটা বড় ঠোঙাভর্তি গরম-গরম শিঙাড়া নিয়ে এসেছেন। টেবিলের ওপর ঠোঙাটা রেখে বললেন, সাতনার শিঙাড়া খুব বিখ্যাত, ভেতরে কিশমিশ আর পেস্তা, বাদাম দেওয়া থাকে।

কাকাবাবু বললেন, তা হলে ইউসুফকে আর এক রাউন্ড চা বানাতে বলে দাও।

একটু পরে শুরু হল আফগানিস্তানের গল্প।

কামাল জিজ্ঞেস করলেন, কাল কোথায় যেন থেমে ছিল?

জোজো বলল, কাকাবাবু বাঘটাকে দেখে বন্দুক ছুড়লেন। বাঘটা পালাল কিন্তু সেই শব্দ শুনে ডাকাতের দল এসে ঘিরে ফেলল।

কামাল বললেন, হ্যাঁ, ছ-সাতজন ডাকাত। প্রত্যেকের কাঁধে রাইফেল। ওরা ঘোড়ায় চেপে পাহাড়ে-পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায়। যারা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ওই পথে যাতায়াত করে, ডাকাতের দল অতর্কিতে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সব লুটপাট করে নেয়। মেরেও ফেলে। আমরা অত কিছুই জানতাম না, আমাদের সঙ্গে দামি কোনও জিনিসও ছিল না। ছ-সাতজন ডাকাতের সঙ্গে লড়াই করারও প্রশ্ন ওঠে না। ওদের দেখেই আমরা হাত তুলে আত্মসমর্পণ করলাম।

কাকাবাবু বললেন, ওদের ভাষা কিছুই বুঝি না। আমি কিছুটা পুস্তু ভাষা শিখেছিলাম। কিন্তু ওইসব পাহাড়ের দিকে আরও অনেক ভাষা আছে। আমার কথাও ওরা বুঝল না। মারধোরও করল না বটে, ঠেলতে-ঠেলতে নিয়ে চলল। কামাল, আমাদের নদী পার হতে হয়েছিল, তাই না?

কামাল বললেন, হ্যাঁ, এক জায়গায় পাহাড়ের বাঁকে নদী খানিকটা সরু হয়ে গেছে, কিন্তু খুব স্রোত। সেইখানে আমাদের ঘোড়াসুন্ধু পার হতে হল। আমাদের অসুবিধে হয়নি, কিন্তু ডাকাত দলেরই একটা লোক নদীতে পড়ে গিয়ে খুব হাবুড়ুবু খেল!

কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ ঠিক। তারপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হল একটা গুহার মুখে। সেখানে আরও কিছু লোক আগুন জ্বেলে বসে আছে। যদিও। গ্রীষ্মকাল, কিন্তু একটু আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় খুব ঠাণ্ডা হাওয়া বইছিল। সেখানেই বসে ছিল ডাকাত দলের আসল সর্দার, তার নাম জাভেদ দুরানি।

কামাল বললেন, তার চেহারার একটু বর্ণনা দিই? কাবুলিওয়ালারা এমনই। সবাই লম্বা-চওড়া হয়, কিন্তু এই লোকটি যেন একটি দৈত্য। যেমন মোটা, তেমনই লম্বা, হাত দুখানা গদার মতন, বুকটা যেন লোহার দরজা, সারা মুখের দাড়িতে মেহেদি রং লাগানো। চোখ দুটো ঠিক বাঘের মতন। একটা পাথরের ওপর বসে সে গড়গড়ার তামাক টানছিল। তাকে দেখলেই ভয় হয়।

কাকাবাবু বললেন, জাভেদ দুরানি অবশ্য ইংরিজি জানে। তাতে খানিকটা সুবিধে হল। আমি কাকুতি-মিনতির সুরে সেই ডাকাতের সর্দারকে বললাম, আমরা সামান্য পর্যটক, আমাদের সঙ্গে দামি কোনও জিনিস নেই, আমাদের মতন চুনোনাপুঁটিকে মেরে আপনি হাত গন্ধ করবেন কেন? আমাদের ছেড়ে দিন। তাই শুনে জাভেদ দুরানি অট্টহাস্য করে উঠল। ঠিক মেঘের ডাকের মতন সেই হাসির আওয়াজ। তারপর বলল, এখানে তো কেউ এমনি-এমনি বেড়াতে আসে না। তোমরা কী মতলবে এসেছ, ঠিক করে বলো! আমি তখন বললাম, আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে খুব আগ্রহ আছে। আফগানিস্তান আর রাশিয়ার সীমান্তের এক জায়গায় পাহাড়ে সম্রাট অশোকের শিলালিপি আছে বলে শুনেছি, মানে পড়েছি, আমরা সেই শিলালিপির ছবি তুলে আনব। এর অন্য কোনও দাম নেই। শুধু ইতিহাস নিয়ে যারা চর্চা করে, তাদের কাজে লাগবে।

সন্তু বলল, কিন্তু কাকাবাবু, তুমি বলেছিলে সম্রাট অশোকের সাম্রাজ্য ছিল হিন্দুকুশ পর্বত পর্যন্ত। তুমি যে-জায়গাটার কথা বলছ, সেটা তো আরও অনেক দূরে। সেখানে অশোকের শিলালিপি থাকবে কী করে?

কাকাবাবু আর কামাল পরস্পরের দিকে তাকালেন। দুজনেই হাসলেন।

কামাল বললেন, দাদা, আজকালকার ছেলেরা অনেক কিছু জানে। অনেক বেশি পড়ে। টিভিতে কতরকম ছবি দেখে। এদের ধোঁকা দেওয়া শক্ত।

কাকাবাবু বললেন, তুই ঠিক ধরেছিস সন্তু। অশোকের শিলালিপি-টিপির কথা আমরা বানিয়েছিলাম। সেসব কিছু নেই। আমরা আসলে অন্য একটা জিনিস খুঁজতে গিয়েছিলাম। সেটা ওদের বলতে চাইনি।

কামাল বললেন, ডাকাতদলের লোকরা সন্তুর মতন ইতিহাস-ভূগোল কিছু জানে না। তবু ওদের মধ্যে একজন আমাদের কথায় সন্দেহ করেছিল। সে বলে উঠল, এত সামান্য কারণে কেউ এতদূর আসে না। নিশ্চয়ই এদের অন্য কোনও মতলব আছে।

কাকাবাবু বললেন, সেই লোকটির নাম অবোধরাম পেহলবান। যদিও অবোধরাম নাম, মুখোনা সূচলো মতন, চোখ দুটো দুষ্টু বুদ্ধিতে ভরা। ওকে ডাকাতদলের মধ্যে দেখে আমরা অবাক হয়েছিলাম। সে লোকটি ভারতীয়। আফগানিস্তানে অবশ্য হিন্দু-মুসলমানে কোনও ঝগড়া নেই, তখন ভারত থেকেও অনবরত লোকজন যাতায়াত করত। ওই ডাকাতদলের সঙ্গে ব্যবসার সম্পর্ক ছিল অবোধরামের। ডাকাতরা লুটপাট করে যেসব জিনিসপত্র পেত, সেসব বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে তো, অবোধরাম করত সেই কাজ। অবোধরামের চেহারাটাও বেশ শক্তিশালী, পেহলবান তো, তার মানে পালোয়ান।

কামাল বললেন, কেন জানি না, বাঙালিদের ওপরে অবোধরামের খুব রাগ। সে আবার বলল, বাঙালিরা ভীরু, কাপুরুষ, দুর্বল হয়। তারা এতদূর এসেছে, তাও মাত্র দুজন, এরা নিশ্চয়ই সরকারের চর। এদের বন্দুক পিস্তল কেড়ে নিয়ে মেরে নদীতে ফেলে দেওয়া হোক। ডাকাতের সর্দার জাভেদ দুরানিও বলল, ঠিক। বাঙালি কাওয়ার্ড, বাঙালি লড়াই করতে জানে না, শত্রুর

সামনে পড়লে বাঙালি কাপড় নষ্ট করে ফেলে, তোমরা দুজন মাত্র বাঙালি এই পথে এসেছ, জানো না, এখানে কত বিপদ হতে পারে? কীজন্য এসেছ, ঠিক করে বলো!

কাকাবাবু বললেন, আমি তখন বললাম, সর্দার, তুমি বাঙালিদের এত নিন্দে করছ, তুমি জানো না, স্বদেশি আমলে বাঙালিরা কত লড়াই করেছে ইংরেজদের সঙ্গে? বাঙালিরাই প্রথম বোমা বানাতে শিখিয়েছে। চট্টগ্রাম পাহাড়ে বাঙালি ছেলেরা ইংরেজ সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। তাই শুনে জাভেদ বলল, ওসব শুনতে চাই না। তোমরা আমার দলের কারও সঙ্গে লড়তে পারবে? সে হিম্মত আছে? যে-কেউ তোমাদের ঘাড় মটকে দেবে। কামাল অমনই লাফিয়ে উঠে বলল, আমি লড়তে রাজি আছি। কার সঙ্গে লড়তে হবে বলুন!

কামাল বললেন, বাঙালিদের অত নিন্দে শুনে আমার রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিল। ভাবলাম, এদের হাতে যদি মরতেই হয়, লড়াই করেই মরি!

কাকাবাবু বললেন, কামালের সঙ্গে যে লড়াই করতে এল, তার প্রায় ডবল চেহারা। থাবার মতন দুটো হাত তুলে তেড়ে এল। কিন্তু কুস্তি তো শুধু গায়ের জোরে হয় না, বুদ্ধি লাগে। লোকটা একেবারে মাথামোটা। কামাল তো মরিয়া হয়ে দারুণ কায়দায় লড়ে গিয়ে খানিক বাদেই তাকে উলটে ফেলে দিল। আমি কিন্তু প্রথমটায় ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু কামাল অসাধারণ সাহস দেখিয়েছে, বাঙালির মান রেখেছে।

কামাল বললেন, আর আপনি কী করলেন দাদা? তার কোনও তুলনা হয় না। আমি জিতে যেতেই ডাকাতের সদারের মুখোনা রাগে গনগনে হয়ে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে কোমরের খাপ থেকে সড়াত করে তলোয়ার টেনে বার করে তোমাদের কাকাবাবুকে সে বলল, এবার তুমি আমার সঙ্গে লড়ো! তার যা গায়ের জোর, এক কোপেই সে মুণ্ডু কেটে ফেলতে পারে। এ তো কুস্তি নয়, ওদের তলোয়ার চালাবার কত অভ্যেস আছে। আমি ভাবলাম, এইবার শেষ, প্রথমে রাজাদাদাকে মারবে, তারপর আমাকে।

কাকাবাবু বললেন, আমাদের কলেজ জীবনে ওয়াই. এম. সি. এ-তে ফেনসিং শেখানো হত। আমি সেখানে দুবছর শিখেছিলাম, মোটামুটি ভালই পারতাম। তারপর অনেকদিন অভ্যেস ছিল না। কী আর করি, রাজি হয়ে গেলাম। আমাকে একটা তলোয়ার দেওয়া হল, সবাই সরে গিয়ে মাঝখানের জায়গাটা খালি করে দিল। ওই বিশাল দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করার কথা ভাবতেই আমার বুক কেঁপে উঠেছিল। ও যদি আমাকে একটা ঘা মারতে পারে, তা হলেই আমার শেষ! চেষ্টা করতে হবে, যাতে ও কিছুতেই আমাকে ছুঁতে না পারে। তখন তো আর আমার পা খোঁড়া ছিল না, লাফাতে পারতাম, ছুটতে পারতাম খুব। আমি জাভেদ দুরানিকে ঘিরে লাফাতে লাগলাম শুধু, ও তলোয়ার চালাচ্ছে আর আমি সরে যাচ্ছি। ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলতে লাগল। মিনিট পনেরো এইরকম চালাবার পর একবার মাত্র ওকে একটু অন্যমনস্ক করে দিতেই আমি ওর ঠিক হাতের মুঠোর কাছে প্রাণপণে দিলাম এক আঘাত। ওর তলোয়ারটা শূন্যে উড়ে গিয়ে অনেক দূরে পড়ল, আমি আমার তলোয়ারের ডগা ঠেকালাম ওর বুকে।

কামাল বললেন, দাদা, আপনি মোটেই ভয় পাননি। প্রথম থেকেই আপনার ঠোঁটে হাসি ছিল।

কাকাবাবু বললেন, ভেতরে ভয় ছিল ঠিকই। তবু মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে রাখতে হয়। তাতে প্রতিপক্ষ একটু হকচকিয়ে যায়।

কামাল বললেন, বুকে তলোয়ার ঠেকানো মানেই চূড়ান্ত পরাজয়। কিন্তু দাদা তবু ডাকাতের সর্দারকে বললেন, তলোয়ারটা কুড়িয়ে এনে আবার লড়তে চান? সে খনখনে গলায় বলল, না, তুমি জিতেছ। এবার আমাকে মেরে ফেলল। আমাদের এখানকার নিয়ম, যে হারে, তাকে মরতে হয়। তুমি মারো আমাকে। দাদা বললেন, না, আমি মানুষ মারি না। সর্দার ধমক দিয়ে বলল, শিগগির মারো বলছি, নইলে আমার অপমান হবে। দাদা বললেন, তলোয়ার খেলতে বলেছিলে, খেলেছি। তোমাকে মারব কেন? আমি কাউকে মারতে চাই না। এই বলে দাদা নিজের হাতের তলোয়ারটাও ফেলে দিলেন। অন্য ডাকাতরা সবাই হাতে তলোয়ার কিংবা বন্দুক উঁচিয়ে ধরে আছে। অবোধরামের হাতে রিভলভার। জাভেদ দুরানি হাত তুলে সবাইকে বললেন, থামো! তারপর দাদাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আমার কাছে কী চাও বাঙালি? এ-পর্যন্ত আর কেউ আমার হাত থেকে তলোয়ার খসাতে পারেনি। বাঙালিদের সম্পর্কে আমার ভুল ধারণা ছিল।

কাকাবাবু বললেন, আমি তখন সর্দারকে একটু তোষামোদ করে বললাম, সর্দার, তুমি প্রকৃত বীর। যে-কোনও খেলাতেই জয়-পরাজয় আছে। জয়ের মতন পরাজয়টাও মেনে নিতে হয়। এবার আমি জিতেছি, পরেরবার নিশ্চয়ই তুমিই জিততে। এটা একটা খেলা, খুনোখুনি করার কী দরকার! আমরা তোমাদের কোনও ক্ষতি করতে আসিনি। আমাদের ছেড়ে দাও, আমরা চলে

যাই।

কামাল বললেন, সর্দার তখন একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দাদার কাঁধ চাপড়ে বলেছিলেন, তোমরা শুধু-শুধু পাহাড়ে ঘোরাঘুরি করতে যাবে কেন? আবার অন্য দলের হাতে পড়বে। তার চেয়ে বরং আমাদের দলে যোগ দাও। অনেক টাকা পাবে। অনেক টাকা।

কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ ঠিক, আমাদেরও ডাকাতের দলে ভর্তি করে নিতে চেয়েছিল বটে। আমি হাত জোড় করে বলেছিলাম, মাফ করো সর্দার, ডাকাতি করা আমাদের ধাতে সইবে না। আমরা শহরের লোক, -চারদিন পাহাড়ে ঘোরাঘুরি করে আবার শহরে ফিরে যাব। সর্দার তখন আমাকে একটা পাঞ্জা দিল। লোহার তৈরি একটা মেডেলের মতন। সেটা আমার বাড়িতে এখনও আছে। সর্দার বলেছিল, পথে অন্য ডাকাতের দল ধরলেও ওই পাঞ্জাটা দেখালে ছেড়ে দেবে। ওই অঞ্চলের সবাই জাভেদ দুরানিকে ভয় পায়।

কামাল বললেন, অবোধরাম পেহেলবান তখনও বলেছিল, সর্দার, এদের এভাবে ছাড়বেন না। এরা এই আস্তানাটা চিনে গেল, এর পর এখানে পুলিশ নিয়ে আসবে। সর্দার তাকে এক ধমক দিয়ে বলেছিল, চোপ! আমার কথার ওপর কেউ কথা বলবে না।

কাকাবাবু বললেন, সদারের একজন লোক নদী পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দিয়ে এল। নদী পার হয়ে শুরু হল আমাদের যাত্রা।

সন্তু জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, ওই পথে যে তোমাদের ওরকম বিপদ হতে পারে, তা তোমরা আগে আন্দাজ করতে পারোনি?

কাকাবাবু বললেন, বিপদের ঝুঁকি তো নিতেই হবে। ইতিহাসের যারা চর্চা করে, তাদের অনেক সময় বিপদে পড়তে হয়। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মহেঞ্জোদরো-হরপ্পা আবিষ্কার করছিলেন মরুভূমির মধ্যে, তখনও সেখানে ডাকাতরা আক্রমণ করেছিল।

জোজো জিজ্ঞেস করল, ওই পাহাড়ে আর অন্য লোকজন যায় না?

কাকাবাবু বললেন, যাবে না কেন? লোকজন যাতায়াত না করলে ডাকাতরাই বা আসবে কেন? তবে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যায়, তারা যায় দল বেঁধে, অন্তত পঞ্চাশ-ষাট জন, সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র থাকে, ডাকাতরা তাদের কাছে। ঘেঁষে না। ছোট দল হলেই বিপদ।

সন্তু বলল, তোমরা মাত্র দুজন গিয়েছিলে কেন? সঙ্গে আরও অনেক লোক নিয়ে যেতে পারতে না?

কাকাবাবু বললেন, অনেক লোক নিতে অনেক টাকা লাগে। আমরা যে জিনিসটার খোঁজে যাচ্ছিলাম, সেটা যে আছেই, তার কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ ছিল না। অনেকেই বিশ্বাস করেনি। অনেকটা ইংরিজিতে যাকে বলে, ওয়াইল্ড গুজ চেইজ। ভারত সরকার সেইজন্য আমাদের বেশি সাহায্য করেনি। আফগানিস্তান সরকারের সাহায্যও চেয়েছিলাম, তারা আমাদের প্রস্তাবে পাত্তাই দেয়নি। সেইজন্যই আমরা মাত্র দুজন গিয়েছিলাম। ছোট দল থাকার সুবিধেও আছে। ইচ্ছেমতন যেখানে খুশি যাওয়া যায়, যে-কোনও জায়গায় লুকিয়ে পড়া যায়।

জোজো বলল, তারপর? তারপর?

কামাল বললেন, তার পরের দিন আমরা একটা গ্রামে পৌঁছে বিশ্রাম নিলাম। গ্রামের মানুষগুলো ভারী সরল হয়। ওই গ্রামের একটা লোক এক সময় কলকাতায় এসে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসা করত। তখন বেশ বুড়ো হয়ে গেছে। আমরা বাঙালি শুনে কী খাতিরই করল! থাকার জন্য একটা ঘর দিল, খাওয়াদাওয়ার জন্য কিছুতেই পয়সা নিতে চায় না। সে কলকাতায় ভবানীপুরে থাকত, বারবার সেই গল্প করতে লাগল।

কাকাবাবু বললেন, শেষ পাহাড়টায় পৌঁছতে আমাদের আরও দুদিন লেগেছিল, তাই না কামাল?

কামাল বললেন, না, তিনদিন। পথে সেরকম কোনও বিপদ হয়নি। একটা গাছের ডালে চোট লেগে আমি একবার ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়েছিলাম শুধু। আর ডাকাতের পাল্লায় পড়তে হয়নি। অন্য ডাকাতরা বোধ হয় জেনে গিয়েছিল যে, আমাদের কাছে জাভেদ দুরানির পাঞ্জা আছে। কিন্তু মাঝে-মাঝেই মনে হত, কেউ আমাদের পেছন-পেছন আসছে। আমাদের অনুসরণ করছে। একবারও দেখতে পাইনি, কিছু-কিছু শব্দ শুনে সন্দেহ হত। শজারুটার কথা মনে আছে দাদা?

কাকাবাবু বললেন, হ্যাঁ, তোরা শজারু দেখেছিস? এখন বিশেষ দেখা যায় না, প্রাণীটা খুব কমে গেছে। সারা গায়ে লম্বা লম্বা কাঁটা থাকে, যখন দৌড়ে যায়, ঝমঝম শব্দ হয়। একদিন রাত্তিরে তাঁবুতে শুয়ে ওইরকম ঝমঝম শব্দ শুনে চমকে উঠেছিলাম। মনে হয়েছিল, কোনও মেয়ে নাচছে বুঝি! কামাল বলেছিল, এরকম বনের মধ্যে এত রাতে মেয়ে কোথা থেকে আসবে, নিশ্চয়ই কোনও পেত্নি!

কামাল হেসে বলল, হ্যাঁ, সেরকমই মনে হয়েছিল বটে! তারপর টর্চের আলো ফেলে সেটাকে দেখা গেল। গায়ে অত কাঁটা থাকলেও শজারুর মাংস খুব সুস্বাদু। এক গুলিতে ওটাকে মেরে ফেলা যেত। কিন্তু বন্দুকের শব্দ হলে যদি আবার কোনও ঝাট হয়, তাই লোভ সামলেছি।

গল্পের মাঝখানে ইউসুফ মিঞা এসে বললেন, এখন আপনাদের খাবার দেব সার?

সন্তু চেঁচিয়ে বললেন, না, এখন না, এখন না, একটু পরে।

ইউসুফ মিঞা বলল, ঠাণ্ডা হয়ে যাবে যে!

সন্তু বলল, পরে আবার গরম করে দেবেন!

কামাল একটা হাই তুলে বললেন, এই পর্যন্তই আজ থাক বরং। ইউসুফ মিঞার রান্না দ্বিতীয়বার গরম করলে আর আগের মতন স্বাদ পাওয়া যায় না

আমাকেও এবার উঠতে হবে।

কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কামাল, তুমি আমাদের সঙ্গে খাবে না?

কামাল বললেন, না দাদা, আমার ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করে থাকবে। আমি ওদের সঙ্গে রোজ রাত্তিরে খেতে বসি। দিনের বেলা সময় পাই না, ওরাও স্কুলে যায়। সেইজন্যই আমি রাত্তিরে বাইরে কোথাও খেতে যাই না।

জোজো বলল, আর একটু বসুন। আর একটুখানি শুনি গল্পটা।

এই সময় বাইরে হঠাৎ পুলিশের হুইল বেজে উঠল। দুজন পুলিশ ছুটে এল। গেটের কাছে দেখা গেল একজন সাদা পোশাকপরা মানুষ।

কামাল আর সন্তুও দৌড়ে গেল গেটের দিকে। তার আগেই পুলিশ সেই লোকটাকে ধরে ফেলেছে।

লোকটি কাঁচুমাচুভাবে বলল, আমি একটা চিঠি দিতে এসেছি। একজন আমাকে একশো টাকা দিয়ে বলল, এই বাংলোর সাহেবকে একটা চিঠি পৌঁছে দিতে।

লোকটি একটা খাকি লম্বা খাম বার করে দিল। তার মধ্যে ইংরিজিতে টাইপ করা একটা চিঠি। চিঠিখানা কাকাবাবুকে উদ্দেশ করে লেখা :

রাজা রায়চৌধুরী, আপনি আমাকে একবার হাতেনাতে ধরে ফেলেও ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমাকে আপনি ইচ্ছে করলে মেরে ফেলতে পারতেন, কিংবা পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারতেন। তার কোনওটাই আপনি করেননি। সে-কথা আমি কখনও ভুলব না। আমি অকৃতজ্ঞ নই। সেইজন্যই আপনাকে জানাচ্ছি যে, আমি খবর পেয়েছি, এখানে আপনার আরও কিছু শত্রু আছে। আপনার যে-কোনও সময়ে বিপদ হতে পারে। আমি সাধ্যমতন তাদের আটকাবার চেষ্টা করব। তবুও আপনার এখান থেকে চলে যাওয়াই ভাল। ইতি–
আপনার
বিশ্বস্ত সুরপ্রসাদ

কাকাবাবু চিঠিখানি পড়ে বললেন, এ কী, এ তো আমাকে ভয়-দেখানো চিঠি নয়। আমাকে সাবধান করে দিতে চেয়েছে। এরকম চিঠি তো আমায় কেউ লেখে না!

কামাল বললেন, সূর্যপ্রসাদ নিজের নাম দিয়ে আপনাকে এরকম চিঠি লিখেছে? অতি আশ্চর্য ব্যাপার! তাকে আপনি নাকখত দিইয়েছিলেন,

সে-অপমান সে ভুলে যাবে?

জোজো জিজ্ঞেস করল, কাকাবাবু, ওই সুরপ্রসাদকে আপনি কোথায় ধরেছিলেন? কেন নাকখত দিইয়ে ছিলেন?

কাকাবাবু হেসে বললেন, আরে, সে তো আর-একটা গল্প। একসঙ্গে কত গল্প শোনাব?