সঞ্জয় বলেন শুন অন্ধ নরপতি।
কালবশে দুর্য্যোধন পাইল দুর্গতি।।
ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ আদি সমরে দুর্জ্জয়।
একে একে বিনাশিল বার ধনঞ্জয়।।
তাহার সহায় কৃষ্ণ কমললোচন।
যাহার সর্ব্বদা বশ এ তিন ভুবন।।
কতেক মন্ত্রণা কৈল পান্ডব কারণ।
জতুগৃহ করিলেক বধিতে জাবন।।
তথা হৈতে নি দেশে আসি পুনর্ব্বার।
রাজসূয় যজ্ঞ কৈল পৃথিবীর সার।।
সম্পদ দেখিয়া তার দুঃখ হৈল মনে।
পাশা খেলাইল পুনঃ হিংসার কারণে।।
পাশায় হারিয়া পুনঃগেল বনবাস।
ধন ছিল রাজ্য ছিল সকলি নিরাশ।।
কাম্যবনে বসাত করিল কত দিন।
দুঃখের নাহিক সাম্য হয়ে ধনহীন।।
কতদিনে দুর্য্যোধন গেলসেই বনে।
ঘোষযাত্রা কার গেল প্রভাসের স্নানে।।
গন্ধর্ব্বের সনে তথা হইল সমর।
গন্ধর্ব্বের বান্ধিয়া নিল স্বর্গের উপর।।
যুধিষ্ঠির নিকটে আইল যত রাণী।
সবিনয় বচনে তুষিল ধর্ম্মমণি।।
সন্তষ্ট হইয়া ধর্ম্ম কহিল পার্থেরে।
গন্ধর্ব্বে জিনিয়া আন দুর্য্যোদন বীরে।।
আজ্ঞা মাত্র ধনঞ্জয় আনে সেই ক্ষণে।
গন্ধর্ব্ব সহিত আনে রাজা দুর্য্যোধনে।।
যুধিষ্ঠির রাজা দেখি বলিল বিস্তর।
হেন কর্ম্ম কদাচিৎ না করিহ আর।।
দোঁহারে বিদায় করি দিল যুধিষ্ঠির।
অভিমানে গেল সবে আপন মন্দির।।
তবে কত দিনান্তরে রাজা দুর্য্যোধন।
জয়দ্রথে পাঠাইল দ্রৌপদী কারণ।।
শূন্যপথে জয়দ্রথ সদা ফিরি বনে।
রথ আরোহণ করি সদা চিন্তি মনে।।
দৈবের নির্ব্বন্ধ কভু না যায় খন্ডন।
শূন্যঘর দেখি দুষ্ট হরিল তখন।।
দ্রৌপদী হরিয়া লয়ে যায় দুষ্টমতি।
রথেতে ক্রন্দন করে কৃষ্ণা গুণবতী।।
হেনকালে আইলেন তথা ভীমসেন।
তথা হৈতে দ্রৌপদীর স্বর শুনিলেন।।
দ্রৌপদী লইয়া যায় জয়দ্রথ বীর।
দেখি তবে দুই ভাই হইল অস্থির।।
কপিধ্বজ রথে চড়ি ধরিল তাহারে।
অনেক ভৎর্সনা কৈল বিবিধ প্রকারে।।
যথা ধর্ম্ম তথা জয় বেদের বচন।
যথা ধর্ম্ম তথা কৃষ্ণ আছে নিরূপণ।।
এই রূপে কহিল সঞ্জয় মহামতি।
শুনিয়া নিস্তব্ধ হন অন্ধ নরপতি।।
এইরূপে শোকাকুল অন্তঃপুরে যত।
বিদুর প্রভৃতি কান্দে করি মৌনব্রত।।
তথা যুধিষ্ঠির রাজা করেন ভাবনা।
দুর্য্যোধন কোথা গেল কহ সর্ব্বজনা।।
হেথা দুর্য্যোধন রাজা দ্বৈপায়ন হ্রদে।
সকল নাশিয়া হেথা রহিল বিষাদে।।
একাদশ অক্ষৌহিনী সৈন্য মম ছিল।
একে একে ভীম সব সংহার করিল।।
মুনি বলে অবধান কর নরপতি।
পরিণামে লাভ বিনা হয় হেন গতি।।
যথা ধর্ম্ম তথা জয় জানিহ রাজন।
যথা কৃষ্ণ তথা ধর্ম্ম বেদেরে বচন।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
কাহার শকতি ইহা বর্ণিবারে পারি।।
কাশীরাম বিরচিল পাঁচালীর মত।
এত দূরে শল্যপর্ব্ব হইল সমাপ্ত।।
শল্যপর্ব্ব সমাপ্ত।