০৭. কালা জব্বারের মৃতদেহটি

কালা জব্বারের মৃতদেহটি যেখানে পাওয়া গিয়েছিল তার কাছাকাছি যাবার আগেই মিলিটারি পুলিশ নিশীতাকে আটকাল। বিস্তৃত এলাকা কাটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, উপরে হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক তার, নিশীতা জেমসবন্ডের সিনেমাতে এ রকম দেখেছে, সত্যি সত্যি যে হতে পারে তার ধারণা ছিল না। মিলিটারি পুলিশটি ভদ্রভাবে বলল, আপনি কোথায় যেতে চাইছেন?

নিশীতা হেলমেট খুলে তার কার্ড বের করে দেখিয়ে বলল, আমি সাংবাদিক, এই এলাকার ওপর রিপোর্ট করতে এসেছি।

ও! সাংবাদিকদের জন্য আলাদা সেল করা হয়েছে–আপনি এই রাস্তা ধরে সোজা এক মাইল চলে যান। ঘণ্টায় ঘণ্টায় সেখানে নিউজ বুলেটিন দেওয়া হচ্ছে।

ঘণ্টায় ঘণ্টায় গৎবাঁধা যে বুলেটিন দেওয়া হয় সেটাতে নিশীতার উৎসাহ নেই, সে ভিতরে একবার দেখে আসতে চায়, তাকে যেতে দেবে বলে মনে হয় না, কিন্তু তবু একবার চেষ্টা করল, বলল, আমি মোটর সাইকেলটা এখানে রেখে ভিতর থেকে চট করে দুটো ছবি তুলে নিয়ে আসি?

নিশীতার কথা শুনে হঠাৎ করে মিলিটারি পুলিশটির মুখ শক্ত হয়ে গেল, সে কঠিন গলায় বলল, না, কাউকে ভিতরে যেতে দেওয়া যাবে না। আপনি সাংবাদিকদের সেলে যান।

নিশীতা মাথায় হেলমেট চাপিয়ে তার মোটর সাইকেল স্টার্ট করল, পুরো এলাকাটা একেবারে নিচ্ছিদ্রভাবে ঘিরে রাখা হয়েছে। এর ভিতরে কোথাও নিশ্চয়ই একটা মহাজাগতিক প্রাণী আছে, কী বিচিত্র ব্যাপার এখনো তার বিশ্বাস হতে চায় না।

সাংবাদিকদের জন্য সেলটি খুব সুন্দর করে করা হয়েছে, তাদেরকে সংবাদ দেওয়া থেকে আপ্যায়ন করার মাঝে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু সাংবাদিক এসেছেন, তারা মনে হয় বেশ ভালোভাবে আপ্যায়িত হয়ে আছেন। কয়েকটি কম্পিউটারে বুলেটিন প্রস্তুত করে তার প্রিন্ট আউট, রঙিন ছবি দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য একজন বড় অফিসার আছেন, তার সাথে সাদা পোশাক পরা দুজন ডাক্তার। সাংবাদিকরা তাদের নানা ধরনের প্রশ্ন করছে।

নিশীতা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাদের কথাবার্তা শুনল, যখন ভিড় একটু কমে এল সে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিল। বড় অফিসার মুখে বিস্তৃত হাসি ফুটিয়ে বলল, আপনাকে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

আমি ফ্রেড লিস্টার নামে একজন আমেরিকান বিজ্ঞানীকে খুঁজছি।

এখানে ফ্রেড লিস্টার নামে তো কেউ নেই।

এখানে না থাকতে পারেন, কিন্তু আমি নিশ্চিত এই এলাকায় আছেন। তাকে একটু খোঁজ দেওয়া যেতে পারে?

বড় অফিসারটি গম্ভীর মুখে বলল, আমি কমান্ডিং অফিসে খোঁজ করতে পারি।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ফ্রেন্ড লিস্টারকে পাওয়া গেলে তাকে একটা খুব জরুরি। ম্যাসেজ দিতে হবে।

কী ম্যাসেজ?

আমি একটা কাগজে লিখে দিই, ম্যাসেজটা কটমটে, এমনি বললে আপনার মনে থাকবে না। নিশীতা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ইংরেজিতে লিখল, আমি রিয়াজ হাসানের এলগরিদমের কথা জানি। বব ম্যাকেঞ্জির সুটকেস ছাড়া ই.টি. বিষয়ক সাংবাদিক সম্মেলন আটকানো যাবে না।

কাগজটি হাতে নিয়ে বড় অফিসারটি ম্যাসেজটি পড়ে বলল, ঠিকই বলেছেন, এই ম্যাসেজ পড়ে মনে রাখা অসম্ভব! সাঙ্কেতিক ভাষার লেখা মনে হচ্ছে, পড়ে কিছুই তো বুঝতে পারলাম না!

নিশীতা হাসার ভঙ্গি করে বলল, জানা না থাকলে সবই সাঙ্কেতিক।

তা ঠিক। আপনি ওখানে বসুন, চা কফি কোল্ড ড্রিংকস আছে। আমি খোঁজ করে দেখি ফ্রেন্ড লিস্টারকে পাওয়া যায় কি না।

নিশীতা জানালার কাছে একটা নরম চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে থাকে। তার ভিতরে এক ধরনের অস্থিরতা তাকে এক মুহূর্ত শান্তি দিচ্ছে ঠিক, কিন্তু কী করবে সে বুঝতে পারছে না। ফ্রেন্ড লিস্টারের সাথে এভাবে দেখা করাটাও ঠিক হচ্ছে কি না সেটা নিয়েও সে আর নিশ্চিত নয়।

কয়েক মিনিটের মাঝে বড় অফিসারটি এসে বলল, ফ্রেড লিস্টারকে পাওয়া গেছে। প্রথমে আপনার সাথে কথা বলতে চাইছিল না কিন্তু আপনার ম্যাসেজটুকু পড়ে শোনানোর পর ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে। একটা হেলিকপ্টারে করে চলে আসছে!

সত্যি?

হ্যাঁ। আপনি বসুন, বলেছে আধঘণ্টার মাঝে হাজির হবে।

আধঘণ্টার আগেই ছোট একটা খেলনার মতো হেলিকপ্টারে করে ফ্রেড লিস্টার হাজির হল। কাছাকাছি একটা ছোট মাঠে অনেক ধুলো ছড়িয়ে সেটি নামল এবং তার ভিতর থেকে ফ্রেন্ড লিস্টার মাথা নিচু করে নেমে এল। নিশীতা ঘরের ভিতরে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা। করতে থাকে।

ফ্রেড লিস্টারকে ঘরে ঢুকতে দেখে নিশীতা মুখে জোর করে একটা হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে গেল। ফ্রেড মুখ শক্ত করে বলল, তুমি কী চাও?।

আমি কী চাই সেটা পরে হবে, আগে সামাজিকতাটুকু সেরে নিই। নিশীতা হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত এগিয়ে দিল। ফ্রেড হাত স্পর্শ করতেই নিশীতা ঘুরে উপস্থিত সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনারা একটা ছবি নিন। ইনি ফ্রেন্ড লিস্টার, আমেরিকান খুব বড় বিজ্ঞানী। আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন।

সাংবাদিকেরা এগিয়ে এসে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে চোখের পলকে অনেকগুলো ছবি তুলে নিল। ফ্রেড লিস্টারের মুখ হঠাৎ করে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। নিশীতা গলার স্বর নিচু করে বলল, এই ছবিগুলো নষ্ট করার জন্য তোমার বব ম্যাকেঞ্জির সুটকেসে টান পড়বে না তো?

ফ্রেড লিস্টার চোখ দিয়ে আগুন বের করে বলল, তুমি কী চাও?

আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।

এস আমার সাথে।

কোথায়?

হেলিকপ্টারে।

তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে! আমি তোমার সাথে হেলিকপ্টারে উঠি আর তুমি ধাক্কা দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে ফেলে দিয়ে বল, এবোলা ভাইরাসের আক্রমণে মাথা খারাপ হয়ে হেলিকপ্টার থেকে লাফ দিয়েছে!

তা হলে কোথায় কথা বলবে?

বাইরে চল, ঐ গাছটার নিচে কেউ নেই।

নিশীতা ফ্রেড লিস্টারকে নিয়ে কাছাকাছি একটা ঝাঁপড়া কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়াল। ফ্রেড লিস্টার মুখ শক্ত করে বলল, তুমি কী বলতে চাও?

ড. রিয়াজ হাসান কোথায়?

সেটি আমি কী করে বলব?

দেখ ফ্রেড, আমার সাথে মামদোবাজি কোরো না। আমি জানি তুমি ড. রিয়াজ হাসানকে ধরে নিয়ে গেছ।

আমি তোমার কাছে সেই কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।

বেশ। তা হলে আমি বলি আমি কী করব। আমি জানি এই এলাকায় একটা মহাজাগতিক প্রাণী এসেছে। সেই প্রাণীর সাথে তোমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছ। ড. হাসানের এলগরিদমটা সে জন্য তোমাদের খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ভাইরাসের কথা আসলে একটা ভাঁওতাবাজি সেটা আমি খুব ভালো করে জানি।

তুমি এর কিছু প্রমাণ করতে পারবে না।

নিশীতা মাথা নাড়ল, তুমি এত নিশ্চিত হয় না। তোমার ছবি নেওয়া হয়েছে, ওয়েবসাইট থেকে তোমাদের ওরগানোগামটি ডাউনলোড করলেই দেখা যাবে তুমি ভাইরাসের এক্সপার্ট নও তুমি মহাজাগতিক প্রাণীর এক্সপার্ট। আমি একটা সাংবাদিক সম্মেলন করে কমপক্ষে এক শ সাংবাদিক নিয়ে আসতে পারি। আমরা থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি হতে পারি কিন্তু আমাদের সংবাদপত্র খুব স্বাধীন।

তুমি কত চাও?

নিশীতা একটা নিশ্বাস ফেলল, মানুষটি টোপ গিলতে শুরু করেছে। ধরেই নিয়েছে সে টাকার জন্য করছে, মনে হয় এই লাইনেই কথাবার্তা চালিয়ে যেতে হবে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে বলল, প্রথমে রিয়াজ হাসানকে ছেড়ে দাও, তারপর আমি বলব।

ফ্রেড ঠোঁট কামড়ে খানিকক্ষণ কিছু একটা ভাবল, তারপর বলল, কিন্তু আমি কেমন করে নিশ্চিত হব যে তুমি কোনো পাগলামি করবে না?

আমার কথা তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে।

ঠিক আছে। তুমি এক ঘণ্টা পর হোটেল সোনারগাঁওয়ে যাও, সেখানে রিয়াজ হাসানকে পাবে।

চমৎকার।

তুমি নিশ্চয়ই জান, এই ব্যাপার নিয়ে তুমি উল্টাপাল্টা কিছু করলে তার ফল হবে ভয়ানক।

আমি জানি। নিশীতা ফিসফিস করে বলল, খুব ভালো করে জানি।

ফার্মগেটের কাছে পৌঁছানোর আগেই হঠাৎ নিশীতা শুনতে পেল তার সেলুলার টেলিফোনটি শব্দ করছে–কেউ একজন তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। অন্য কোনো সময় হলে সে টেলিফোনটি নিয়ে মাথা ঘামাত না, যে চেষ্টা করছে সে এক ঘণ্টা পরেও তার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে কিন্তু এখন নিশীতা কোনো ঝুঁকি নিল না। মোটর সাইকেল থামিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নিশীতা তার টেলিফোনটি কানে লাগাল, হালো।

নিশীতা?

কথা বলছি।

নিশীতা, খুব সাবধান। একটা নীল মাইক্রোবাসে করে কিছু মানুষ তোমার পিছু পিছু আসছে।

আপনি কে?

তুমি জান আমি কে।

এপসিলন! তুমি এপসিলন।

আমি এপসিলনকে ব্যবহার করছি।

নীল মাইক্রোবাসে কারা আছে?

ফ্রেড লিস্টারের মানুষ।

তারা কী করতে চায়?

তোমাকে খুন করতে চায়। এরা খুব ভয়ঙ্কর মানুষ নিশীতা।

ঠিক আছে, আমি দেখছি।

টেলিফোনটা ব্যাগে রেখে নিশীতা পিছনে তাকাল, এখনো কোনো নীল মাইক্রোবাস দেখা যাচ্ছে না। নিশীতা প্রথমবার এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করে, সত্যি সত্যি যদি ফ্রেড লিস্টারের মানুষ তাকে খুন করার চেষ্টা করে তা হলে সে কী করবে? এই মুহূর্তে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এটি নিয়ে ভেবে সে কোনো সমাধান বের করতে পারবে না। নিশীতা আবার মোটর সাইকেলে চেপে বসল, স্টার্ট দিয়ে এক মুহূর্তে রাস্তার ভিড়ের মাঝে মিশে গেল।

হোটেল সোনারগাঁওয়ে পৌঁছানোর আগেই হঠাৎ রিয়ার ভিউ মিররে নিশীতা দেখল তার খুব কাছাকাছি একটা নীল রঙের মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাসের জানালা দিয়ে ঝুঁকে একজন মানুষ বের হয়ে আছে, মানুষটি কী করছে সে দেখতে পেল না কিন্তু হঠাৎ তার ঘাড়ে তীক্ষ্ণ সুঁচ ফোঁটার মতো একটা যন্ত্রণা হল। নিশীতা ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখে সেখানে ছোট কাচের সিরিঞ্জের মতো একটি এল বিধে আছে, সেটাকে টেনে বের করে আনতেই হঠাৎ তার মাথা ঘুরে গেল, কোনো একটা বিষাক্ত ওষুধ তার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিশীতা কোনো ভাবে তার মোটর সাইকেলটা থামাল, কিন্তু সেখান থেকে নামতে পারল না। হুমড়ি খেয়ে নিচে পড়ে গেল। নিশীতা শুনতে পায় তার আশপাশে অসংখ্য গাড়ির হর্ন বাজছে, ব্রেক কষে থামার চেষ্টা করছে। নিশীতা চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করে, দেখতে পায় নীল মাইক্রোবাসটি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে, জানালার কাছে বসে থাকা মানুষটা মুখে এক ধরনের বিচিত্র হাসি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

দেখতে দেখতে তাকে ঘিরে মানুষের ভিড় জমে গেল, তাকে কিছু একটা বলছে সে শুনতে পাচ্ছে কিন্তু উত্তরে কিছু বলতে পারছে না। নিশীতা দেখল ঠিক পিছনে একটা জিপ এসে থেমেছে সেখান থেকে দুজন মানুষ নেমে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?

নিশীতার পাশে উবু হয়ে বসে থাকা একজন মানুষ বলল, জানি না। হঠাৎ করে মোটর সাইকেল থামিয়ে পড়ে গেলেন।

মনে হয় ডায়াবেটিক শক। কিংবা হার্ট এ্যাটাক–দেখি সবাই সরে যান, একটু বাতাস আসতে দিন।

মানুষজন সরে লোকটাকে জায়গা করে দিল, নিশীতা চিনতে পারল এই মানুষটাকে সে রিয়াজ হাসানের বাসায় দেখেছে। নিশীতা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে দেখল মানুষটি এসে তার হাত ধরে পালস গোনার ভান করল, চোখের পাতা টেনে দেখল, তারপর সোজা হয়ে পঁড়িয়ে বলল, একে এক্ষুনি হাসপাতালে নিতে হবে।

উপস্থিত লোকজনের ভিতর থেকে একজন বলল, কেমন করে নেব? এম্বুলেন্স?

মানুষটি বলল, আমি হাসপাতালে পৌঁছে দেব, একে গাড়িতে তুলে দিন।

নিশীতা চিৎকার করে বলতে চাইল, না–আমাকে এদের হাতে দিও না, কিন্তু সে একটা কথাও উচ্চারণ করতে পারল না। নিশীতাকে ধরাধরি করে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দেবার পর মানুষটি উপস্থিত মানুষদের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাদের কেউ সাথে যেতে চান?

একজন বলল, ঠিক আছে আমিও সাথে যাই।

নিশীতা চোখ ঘুরিয়ে মানুষটিকে দেখল, এই মানুষটিও তাদের দলের একজন, সবাইকে নিয়ে এখানে পুরোপুরি একটা নাটকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিশীতা বুঝতে পারে খুব ধীরে ধীরে সে অচেতন হয়ে পড়ছে। তার মাঝে টের পেল তার মোটর সাইকেলটাকেও পিছনে তোলা হচ্ছে। কয়েক মুহূর্তের মাঝে জিপটা ছেড়ে দিল, নিশীতা শুনতে পেল একজন উচ্চৈঃস্বরে হাসতে হাসতে বলল, চমৎকার অপারেশন। একেবারে নিখুঁত।

একজন নিশীতার ওপর ঝুঁকে পড়ে গলায় শ্লেষ এনে বলল, সাংবাদিক সাহেবা– আপনি কি এখনো জেগে আছেন??

নিশীতা চোখ খুলে তাকাল, মানুষটি কুৎসিত একটা ভঙ্গি করে বলল, পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে …।

.

নিশীতার মনে হল অনেক দূর থেকে কেউ একজন তাকে ডাকছে। সে সাবধানে চোখ খুলে তাকাল, সত্যি সত্যি তার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে কোনো একজন মানুষ তাকে কোমল গলায় ডাকছে। নিশীতা মানুষটিকে চিনতে পারল, রিয়াজ হাসান।

সে চমকে উঠে বসার চেষ্টা করতেই মনে হল তার মাথার ভিতরে কিছু একটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। যন্ত্রণার একটা শব্দ করে সে আবার শুয়ে পড়ল। রিয়াজ হাসান বলল, কেমন আছ নিশীতা?

ভালো নেই, মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা!

কমে যাবে। ওষুধের অ্যাফেক্টটা কেটে যেতেই কমে আসবে।

আমরা কোথায়?

ঠিক জানি না, মনে হয় বারিধারার কাছে কোনো বাসায়।

নিশীতা চোখ খুলে চারদিকে তাকাল, একটা বড় গুদামঘরের মতো জায়গার একপাশে খানিকটা জায়গা ঘিরে ঘরটা তৈরি করা হয়েছে। এটি নিয়মিত কোনো বাসা নয়। তাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে শক্ত মেঝেতে, নিচে হয়তো একটা কম্বল বিছানো হয়েছে এর বেশি কিছু নেই। ঘরের ভিতরে কোনো আলো নেই, বাইরের আলো স্কাই লাইটের ফাঁক দিয়ে ভিতরে এসে ঢুকছে। নিশীতা সাবধানে উঠে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসল, এই ভয়ঙ্কর এবং অনিশ্চিত পরিবেশেও সে প্রথমে হাত দিয়ে চুল বিন্যস্ত করতে করতে বলল, আমাকে কি ভূতের মতো দেখাচ্ছে?

রিয়াজ হাসান হেসে বলল, তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে সেটাই তোমার প্রথম চিন্তার বিষয়?

নিশীতা একটু কষ্ট করে হেসে বলল, আমার ব্যাগটা কি আছে?

কেন?

ভিতরে একটা আয়না আছে, কেমন দেখাচ্ছে দেখতাম। চিরুনি দিয়ে চুলটা ঠিক করতাম।

রিয়াজ হাসান উঠে গিয়ে ঘরের অন্যপাশ থেকে তার ব্যাগটা এনে দিল। নিশীতা ব্যাগটা খুলতেই তার সেলুলার ফোনটি চোখে পড়ল, সে চোখ উজ্জ্বল করে বলল, সেলুলার ফোন! আমরা বাইরে ফোন করতে পারব!

রিয়াজ হাসান মাথা নাড়ল, বলল, না, পারবে না। তোমাকে যখন এখানে রেখে গেছে তখন লোকগুলো সেটা নিয়ে কথাবার্তা বলেছে। তোমার ফোনের ব্যাটারি ডিসচার্জ করে দিয়েছে।

নিশীতা ফোনটি হাতে নিয়ে দেখল সতি সত্যি এটি পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে আছে। ফোনটি পাশে সরিয়ে রেখে সে তার কমপ্যাক্ট বের করে তার ছোট আয়নাটাতে নিজেকে দেখে একটা গম্ভীর হতাশাব্যঞ্জক শব্দ বের করল। সে ব্যাগ হাতড়ে একটা চিরুনি বের করে তার চুলগুলোকে এক মিনিটের মাঝে বিন্যস্ত করে নেয়। রিয়াজ হাসানকে আড়াল করে ঠোঁটে দ্রুত একটু লিপস্টিকের একটা ছোঁয়া লাগিয়ে নিল।

রিয়াজ শব্দ করে হেসে বলল, আমি জানতাম না তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে সেটা তোমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ।

কেমন দেখাচ্ছে নয়–বলেন, ভূতের মতো দেখাচ্ছে কি না!

রিয়াজ হাসান একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি জানি না, তোমাকে ঠিক পরিবেশে বলার সুযোগ পাব কি না তাই এখনই বলে রাখি, তুমি যেভাবেই থাক তোমাকে কখনোই ভূতের মতো দেখায় না।

রিয়াজের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল সেটা শুনে নিশীতা একটু অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল। রিয়াজ একটু লজ্জা পেয়ে বলল, আমি জানি না তোমাকে এর আগে কেউ বলেছে কি না–তোমার মাঝে একটা অসম্ভব সতেজ ভাব আছে। দেখে ভালো লাগে।

নিশীতা এবারে শব্দ করে হেসে ফেলল, বলল, শুনে খুশি হলাম যে অন্তত কেউ একজন বলল আমার সতেজ ভাবটি ভালো লাগে। সারা জীবন শুনে আসছি আমার তেজ হচ্ছে আমার সব সর্বনাশের মূল।

সেটিও নিশ্চয়ই সত্যি! রিয়াজ বলল, আজকে যে তুমি এখানে এই গাড্ডায় পড়েছ, আমার ধারণা সেটাও তোমার তেজের জন্য।

নিশীতা মাথা নাড়ল, বলল, না, পুরোটা তেজের জন্য না। আপনি জানেন একটা বিশাল ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমি ধরে ফেলেছি সেটাই হচ্ছে সমস্যা। নিশীতা দেয়াল ধরে সাবধানে উঠে দাঁড়াল, দাঁড়িয়ে চারদিকে একবার তাকিয়ে বলল, আপনাকে কেন ধরে এনেছে?

আমার সেই কোডটার জন্য।

আপনি কি দিয়েছেন?

দিতে হয় নি। বাসা তোলপাড় করে নিজেরাই বের করে নিয়েছে।

তা হলে আপনাকে ধরে এনেছে কেন?

রিয়াজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি যেন কাউকে বলে না দিই সে জন্য। আমার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করবে।

কীভাবে করবে?

এ ব্যাপারে আমাদের ফ্রেন্ড লিস্টারের সৃজনী ক্ষমতা খুব কম। তার ধারণা টাকা দিয়েই সব করে ফেলা যায়।

নিশীতা ছোট ঘরটি ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা করতে করতে হঠাৎ করে বলল, আমাদেরকে মেরে ফেলবে না তো?

রিয়াজ হাসান চমকে উঠে বলল, মেরে ফেলবে? মেরে ফেলবে কেন? একজন মানুষকে মেরে ফেলা কি এত সোজা?

জানি না। আমার কেন জানি ব্যাপারটা ভালো লাগছে না।

রিয়াজ মাথা নাড়ল, বলল, না। মেরে ফেলবে না। তোমার কথাটি ধর, তোমাকে মারতে চাইলে ঐ রাস্তাতেই মেরে ফেলতে পারত। মারে নি। তোমাকে অজ্ঞান করেছে– অনেক মানুষ দেখেছে তুমি রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছ, তোমাকে কিছু মানুষ তুলে নিয়ে গেছে। এখন যদি দেখে তোমার ডেডবডি, ব্যাপারটি নিয়ে সন্দেহ করবে না? পত্রপত্রিকায় হইচই শুরু হয়ে যাবে না? ফ্রেড লিস্টার একটা জিনিসকে খুব ভয় পায়–সেটা হচ্ছে খবরের কাগজ।

আপনার কথা যেন সত্যি হয়। নিশীতা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, কিন্তু কেন জানি পুরো ব্যাপারটি নিয়ে আমার কেমন ভয় ভয় করছে। আমার মনে হচ্ছে এর মাঝে খুব বড় একটা অশুভ ব্যাপার রয়েছে।

রিয়াজ আর নিশীতা দেয়ালে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। এ রকম পরিবেশে ক্ষুধা–তৃষ্ণার অনুভূতি থাকার কথা নয়, কিন্তু দুজনেই বেশ অবাক হয়ে আবিষ্কার করল তাদের বেশ খিদে পেয়েছে। রাত দশটার দিকে একজন গোমড়ামুখো আমেরিকান মানুষ এসে তাদের কিছু খাবার দিয়ে গেল। খাবারগুলো পশ্চিমা খাবার, খুব সম্ভ্রান্ত রেস্টুরেন্ট থেকে আনা হয়েছে–দুজনে বেশ গোগ্রাসে খাওয়া শেষ করল। এ রকম সময়ে ঘরের দরজা দ্বিতীয়বার খুলে গেল এবং দেখা গেল সেখানে ফ্রেন্ড লিস্টার দাঁড়িয়ে আছে। ফ্রেন্ড লিস্টারের পিছনে আরো দুজন পাহাড়ের মতো আমেরিকান মানুষ, মাথার চুল ছোট করে ছাটা দেখে মনে হয় মেরিন বা কমান্ডো জাতীয় কিছু। মানুষগুলো প্রকাশ্যেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে ঘুরছে। ফ্রেন্ড লিস্টার মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলল, রিয়াজ, পুরোনো বন্ধু আমার, তোমাকে আর তোমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে আসতে দেরি হয়ে গেল। আমি খুবই দুঃখিত। তবে– ফ্রেড লিস্টার নোংরা একটা ভঙ্গি করে চোখ টিপে বলল, আমি সবাইকে বলে দিয়েছিলাম কেউ যেন তোমাদের ডিস্টার্ব না করে। কথা শেষ করে সে বিকট স্বরে হাসতে শুরু করে।

রিয়াজ ফ্রেন্ড লিস্টারের হাসি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল, তারপর বলল, তুমি আমাদের ধরে এনেছ কেন?

তোমরা বুদ্ধিমান মানুষ–এখনো সেটা বুঝতে পার নি?

তুমি আমাদেরকে যত বুদ্ধিমান তাব, আমরা তত বুদ্ধিমান নই।

ফ্রেড আবার সহৃদয় ভঙ্গিতে হেসে বলল, তোমাদের দুজনকে এখানে নিয়ে এসেছি যেন প্রজেক্ট নেবুলার কোনো সমস্যা না হয়।

প্রজেক্ট নেবুলা?

হ্যাঁ ফ্রেড ঘরের মেঝেতে পুরোনো বন্ধুর মতো সহজ ভঙ্গিতে বসে বলল, হ্যাঁ, আমরা নাম দিয়েছিলাম প্রজেক্ট নেবুলা, কারণ এটা শুরু হয়েছিল খুব কাছাকাছি একটা ছোটখাটো নেবুলা থেকে। ফ্রেড রিয়াজ হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি চলে আসার পরপরই আমরা প্রথম মহাজাগতিক একটা সঙ্কেত পেয়েছিলাম।

রিয়াজ সোজা হয়ে বসে বলল, সত্যি?

হ্যাঁ সত্যি। এটা খুব গোপন খবর, সারা পৃথিবীতে সব মিলিয়ে ডজনখানেক মানুষের বেশি জানে না।

রিয়াজ কোনো কথা না বলে চুপ করে ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে রইল, ফ্রেড মাথা নেড়ে বলল, অত্যন্ত কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ছিল সেটি।

কোনটি?

চতুর্থ মাত্রার বুদ্ধিমত্তার একটি প্রাণীকে পৃথিবীতে ডেকে আনা।

রিয়াজ চিৎকার করে বলল, তোমরা চতুর্থ মাত্রার প্রাণীকে পৃথিবীতে ডেকে এনেছ? তোমরা কি উন্মাদ?

আমাদের কোনো উপায় ছিল না।

কী বলছ তুমি? কিসের উপায় ছিল না?

ফ্রেড একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, দেশের অর্থনীতিতে মন্দাভাব এসে গেছে, দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে–আমাদের এটা থামানো দরকার। নতুন একটা টেকনোলজি দরকার। একেবারে নতুন যেটা পৃথিবীতে নেই।

নতুন একটা টেকনোলজির জন্য তুমি চতুর্থ মাত্রার একটা প্রাণীকে পৃথিবীতে ডেকে এনেছ? মানুষ কত বড় নির্বোধ হলে এ রকম একটি কাজ করে?

ফ্রেড মুখে হাসি ফুটিয়ে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, যখন ভালোয় ভালোয় সব শেষ হয়ে যাবে, মহাজাগতিক প্রাণী আমাদেরকে টেকনোলজি দিয়ে তাদের গ্যালাক্সিতে ফিরে যাবে তখন আমাকে কেউ নির্বোধ বলবে না।

তোমরা কি যোগাযোগ করতে পেরেছ?

 হ্যাঁ পেরেছি। তোমার কোড ব্যবহার করে আজকে আমরা প্রথমবার মহাজাগতিক প্রাণীর সাথে যোগাযোগ করেছি। ফ্রেড কেমন জানি একটু শিউরে উঠে বলল, তুমি চিন্তা করতে পারবে না ব্যাপারটি কেমন ভয়ঙ্কর।

রিয়াজ একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমি খুব ভালো করে জানি এটা কত ভয়ঙ্কর। তোমাকে নিশ্চয়ই অনুমতি দেওয়া হয় নি, তুমি অনুমতি ছাড়াই এটা করেছ?

হ্যাঁ।

সেজন্য তুমি বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেট দিয়েছ যদি ভালোয় ভালোয় যোগাযোগ করা না যায় নিউক্লিয়ার বোমা দিয়ে ধ্বংস করে দেবে?

হ্যাঁ। এর মাঝে নিউক্লিয়ার মিসাইল এখানে টার্গেট করে ফেলা হয়েছে।

রিয়াজ বিস্ফারিত চোখে ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে রইল, খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, পৃথিবীতে জনবসতিহীন কত জায়গা রয়েছে–সাহারা মরুভূমি, এন্টার্কটিকা, আন্দ্রিজ পর্বতমালা ওসব ছেড়ে তোমরা এ রকম ঘনবসতি একটা লোকালয় কেন বেছে নিলে?

তার কারণ প্রাণীটি জনবসতিহীন জায়গায় যেতে চাইছিল না। এটি মানুষের কাছাকাছি আসতে চাইছিল।

কেন?

কারণ মানুষকে ব্যবহার করে সে বিচরণ করতে চায়।

রিয়াজ আর্তচিৎকার করে উঠল, বুকের মাঝে আটকে থাকা একটা নিশ্বাস বের করে দিয়ে বলল, মহাজাগতিক প্রাণী কি সেটা করতে পেরেছে?

ফ্রেড মাথা নাড়ল। বলল, হ্যাঁ। সেটা মানুষের শরীরকে ব্যবহার করে কিছু চলাচল করেছে। সীমিততাবে–কিন্তু করেছে।

যার অর্থ পৃথিবীর মানুষ এখন এই মহাজাগতিক প্রাণীর দয়ার ওপর নির্ভর করছে। এটি যদি আমাদের পৃথিবী দখল করে নিতে চায় তা হলে দখল করে নেবে?

ফ্রেড কোনো কথা না বলে তার হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে রইল। রিয়াজ চাপা স্বরে চিৎকার করে বলল, নির্বোধ আহাম্মক কোথাকার।

ফ্রেড খুব ধীরে ধীরে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, এই মহাজাগতিক প্রাণী যখন তার টেকনোলজি আমার হাতে দিয়ে ফিরে যাবে তখন কেউ আমাকে নির্বোধ বলবে না।

তোমাকে সে কোন টেকনোলজি দেবে?

তাদের স্পেসশিপের আবরণটি যেটি দিয়ে তৈরি সেটা হলেই আর কিছু প্রয়োজন নেই। আমি ইঞ্জিনটার প্রক্রিয়াটাও পাওয়ার চেষ্টা করছি।

যদি না পাও?

না পেলে নাই। পৃথিবীতে যারা ঝুঁকি নেয় না তারা কোনো কিছু অর্জন করতে পারে না।

রিয়াজ হিংস্র গলায় বলল, মানুষ নিজের জীবনকে দিয়ে ঝুঁকি নিতে পারে–তুমি নিয়েছ অন্যের জীবনকে নিয়ে।

প্রজেক্ট নেবুলা অনেক বড় প্রজেক্ট। পৃথিবীর কিছু মানুষ বা অনেক মানুষের জীবনের এখানে কোনো মূল্য নেই।

তুমি কি মনে কর তোমার এই কাজকর্মকে ক্ষমা করা হবে?

প্রজেক্ট নেবুলার ভিতরের কথা খুব বেশি মানুষ জানে না। তোমরা দুজন জান। তোমাদের এই প্রজেক্টের কথা জানাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

রিয়াজ ভুরু কুঁচকে বলল, কেন আমাদের জানাতে আপত্তি নেই।

পুরো যোগাযোগটা করা হয়েছে তোমার কোড ব্যবহার করে–তোমার এটা জানার একটা নৈতিক অধিকার আছে।

এটাই কি একমাত্র কারণ?

ফ্রেড একটা নিশ্বাস ফেলে অন্যদিকে তাকাল, বলল, না, অন্য কারণ আছে।

কী কারণ? ফ্রে

ড তার হাতের বড় ম্যানিলা এনভেলপটি রিয়াজের দিকে এগিয়ে দেয়, বলে, দেখ।

রিয়াজ এনভেলপটি খুলে চমকে উঠল। ভিতরে তার এবং নিশীতার খুব অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে বসে থাকার ছবি। কোনো একটি রেস্টুরেন্টে বসে দুজনে খাচ্ছে, সামনে বিয়ারের বোতল। রিয়াজ ছবিগুলো দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফ্রেডের দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, এগুলো কী?

তোমাদের ছবি। এডবি ফটোশপ দিয়ে তৈরি করেছি।

কেন তৈরি করেছ?

কারণ আজ রাতে তোমার গার্লফ্রেন্ড যখন তোমাকে মোটর সাইকেলে করে নিয়ে যাবে তখন আশুলিয়ার কাছে খুব খারাপভাবে অ্যাকসিডেন্ট করবে। তোমরা দুজনেই সাথে সাথে মারা যাবে।

রিয়াজ এবং নিশীতা চমকে উঠল, বলল, কী বলছ তুমি?

হ্যাঁ। তোমরা প্রজেক্ট নেবুলার ভিতরের খবর জান। তোমরা বেঁচে থাকলে আমার খুব সমস্যা। তোমাদের বেঁচে থাকা চলবে না।

রিয়াজ এবং নিশীতা বিস্ফারিত চোখে ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে রইল, ফ্রেড একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, অ্যাকসিডেন্টের পর যখন তোমাদের ডেড বডি পাওয়া যাবে তখন। এই ছবিগুলো আমরা রিলিজ করব। সবাই দেখবে তোমরা গভীর রাত পর্যন্ত ফুর্তি করেছ, মদ খেয়ে পুরোপুরি মাতাল হয়ে মোটর সাইকেল চালাতে চেষ্টা করেছ–তোমাদের অ্যাকসিডেন্ট না হলে কার হবে?

নিশীতা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না—অবাক হয়ে ফ্রেডের ভাবলেশহীন মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ফ্রেড অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল, পোস্টমর্টেম করে দেখলেও কোনো গরমিল পাবে না। তোমাদের শরীরে এলকোহলের পার্সেন্টেজ থাকবে খুব বেশি। আমরাই ইনজেক্ট করে দেব।

কেন? রিয়াজ শুকনো গলায় বলল, কেন তোমরা এটা করতে চাইছ?

ফ্রেড উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমাদের কোনো উপায় নেই। সারা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ এর সাথে জড়িত, এখানে কোনো ঝুঁকি নেওয়া যায় না। এত বড় প্রজেক্টে আমি কোনো ঝুঁকি নিতে পারি না রিয়াজ।

রিয়াজ চিৎকার করে ফ্রেডের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছিল কিন্তু সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দুজন সামনে এগিয়ে এসে তাকে ধরে ফেলল। একজন তাকে আঘাত করতে হাত উপরে তুলতেই ফ্রেড তাকে থামাল, বলল, না ওর গায়ে হাত দিও না। আজ রাতের অ্যাকসিডেন্টের আঘাত ছাড়া শরীরে অন্য কোনো আঘাত থাকা চলবে না।

রিয়াজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে ফ্ৰেড তার দুজন বডির্গাডকে নিয়ে বের হয়ে গেল।

নিশীতা বিস্ফারিত চোখে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে আর কয়েক ঘণ্টার মাঝে খুব সুপরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হবে।