০৭. একটি মাত্র আলোকে

০৭.

টেবিলের ওপর রাখা ঘরের একটি মাত্র আলোকে দেরাজ আর কার্পেটের কিছুটা অংশ আলোকিত হয়ে উঠেছিল।

পুলিস ক্যাপ্টেন এত হ্যাকেট চোষ কাগজের ওপর অনবরত পেনসিলটা ঠুকছিল। আলোর পরিধি থেকে কিছু দূরে নেভা চুরুট মুখে লাগিয়ে গভীর চিন্তায় বসেছিল মিকলিন, তার চোখ কড়িকাঠে নিবদ্ধ। ফ্যান’শ দুহাতের চেটো দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সমানে হাই তুলে যাচ্ছিল। কাঁচা ঘুম ছেড়ে মাঝ পথেই উঠে সদর দপ্তরে ছুটে আসতে হয়েছে বেচারীকে।

টেবিলের ওপর যন্ত্রণাগ্রস্ত হাতটায় আঙুলেরপ্রলেপ দিচ্ছিলাম। আমার বাঁ হাতের ক্ষত থেকে চার চারটে গুলি বার করা হয়েছে। বড্ড শরীর খারাপ লাগছে আমার।

তাহলে আপনি অনুমান করতে পারছেন না, গুলিটা কে ছুঁড়েছিল? মুখ না তুলে সহসা প্রশ্ন করল হ্যাকেট।

নাঃ, আমি জবাবে বললাম। ট্যাক্সি ড্রাইভারের মুখ থেকেই তো সব শুনলেন। সে পুরুষ না মহিলা ছিল সেটুকু দেখার সুযোগও তার ভাগ্যে জোটেনি। এই ঘটনা সে নিজের চোখে ঘটতে দেখেছে, এরকম অঘটন তার জীবনে বোধহয় এই প্রথমবার। তাই সে এত ঘাবড়ে গিয়েছিল যে গাড়ির নম্বরটা অব্দি নেওয়ার ভাবনা তার মাথাতে আসেনি। আর আমার যা অবস্থা তখন আমি নিজেকেই নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।

তার লক্ষ্যে কে ছিল–আপনি না মিসেস হফম্যান?

খুব সম্ভব আমি।

বেশ। হ্যাকেট মুখ তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। দেখি চিন্তা করে, আমরা যদি ঘটনাটার কোন সমাধানে পৌঁছতে পারি। প্রথম থেকেই শুরু করা যাক। আপনি হফম্যানের বাড়ি যে গিয়েছিলেন, তার পেছনে কোন উদ্দেশ্য ছিল নিশ্চয়ই?

আমি ভেবেছিলাম জোইস শারম্যানের হয়ে সে এই কাজ করছে। আশা ছিল চাপ দিলে গরগর করে সে তার কর্মকাণ্ডের ইতিবৃত্তান্ত ঝেড়ে কাশবে।

জোইসের দেরাজ থেকে হফম্যানের কার্ড পাওয়া আর মিসেস হফম্যানের সঙ্গে আমার কথাবার্তার বিশদ-বিবরণ দিয়ে বলে উঠলাম, আমি জোর গলায় বলতে পারি, জোইস শারম্যান সে রাত্রে গা ঢাকা দেবার আগে হফম্যানের সঙ্গে নিশ্চয়ই সাক্ষাৎ করেছিল।

তোমার অনুমান যদি নির্ভূল হয় তাহলে তোমার বক্তব্য হল ওই-ই তাকে কিডন্যাপ করেছে? ফ্যান’শ প্রশ্ন করল।

.

না, মাথা নাড়লাম আমি। এখন মনে হচ্ছে ওকে কিডন্যাপ করা হয়নি। পুরো ব্যাপারটাই সাজানো। জোইস আর হফম্যান দুজনে মিলে কিডন্যাপনাটক করে মুক্তিপণের টাকাটা আত্মসাৎ করার মতলবে আছে।

এটা আবার তুমি কোত্থেকে আবিষ্কার করলে? বিরক্ত হয়ে ওঠে ফ্যান’শ।

মিসেস হফম্যানের কথা শুনেই তোমাকে এটা বলছি হফম্যানকে ও ফোনে জোইসের কাছ থেকে টাকা চাইতে নিজের কানে শুনেছে। সম্ভবতঃ জোইসকে সে ব্ল্যাকমেল করে তার কাছ থেকে টাকা খাচ্ছিল। আমার বিশ্বাস, ফোর্থ স্ট্রীটের দারোয়ানের খুনের ঘটনার সঙ্গে ওদের দুজনেরই হাত আছে।

জো ম্যাসনের কথা বলছেন? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে হ্যাকেটের প্রশ্ন। মঙ্গলবার রাতে ছুরি মেরে যাকে হত্যা করা হয়েছে?

হ্যাঁ, ঐ কিডন্যাপের দিন রাত্রের ঘটনা ওটা। সুসান গেলার্ট নামে একটি মেয়ের ইনসিওর পলিসি সম্বন্ধে জোইসের আগ্রহ ছিল। হফম্যানকে ঐ কাজেই লাগিয়েছিল জোইস। পলিসিগুলো দেখার উদ্দেশ্যে মেয়েটার অফিসে ওদের যুগলে আবির্ভাব ঘটেছিল।

আপনি বলতে চাইছেন ম্যাসনের খুনি অন্য কেউ নয়। স্বয়ং হফম্যান? আবার প্রশ্ন করল হ্যাকেট।

না। আমি ভালো ভাবেই জানি, পুলিশ আসার আগে পর্যন্তহফম্যান জানতোনা যে ম্যাসন মৃত।

তাহলে খুনটা করল কে?

যে ছুরিটা দিয়েছিলাম আপনাকে, পরীক্ষা করেছিলেন ওটা?

সামান্য ইতস্ততঃ করে ফোনে ডায়াল ঘুরিয়ে ফোন হাতে নিল। দু-একটা কথা মন দিয়ে শুনলো খানিকক্ষণ, তারপর বলল, বেশ, তুমি লেগে থাক, হ্যাচ।

টেলিফোন রেখে হ্যাকেটযখন আমার দিকে তাকাল, দেখলাম তার ধূসর রঙের চোখ দুটো এখন অদ্ভুত রকমের কঠিন হয়ে উঠেছে। ছুরিটা আপনি কোথা থেকে পেয়েছিলেন, মিঃ হারমাস?

আমি পাল্টা প্রশ্নের তীর ছুঁড়লাম, ঐ ছুরিতে তাহলে ম্যাসনকে হত্যা করা হয়নি?

খুব সম্ভব হয়েছে। ক্ষতটা ছুরির ফলার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, আর হাতলে জমাট বাঁধা রক্তটাও ম্যাসনের ব্লাড গ্রুপের।

ওটা আমি জোইসের শোবার ঘর থেকেই পেয়েছি। আমার বদ্ধমূল ধারনা ওটা দিয়েই লোকটাকে খুন করা হয়েছে।

থমথমে নীরবতা নেমে এল ঘরের মধ্যে। আপনি প্রমাণ করতে পারবেন? অবশেষে মৃদুস্বরে প্রশ্ন করল হ্যাকেট।

না, তবে হফম্যান পারবে। জোইসের সেক্রেটারির মুখেই শুনেছি, জোইস অসম্ভব অতিরিক্ত মদ্য পান করত। ঘরটা সার্চ করার পর সে কথার বহু প্রমাণ আমার হাতে এসেছে। এমনও হতে পারে, ম্যাসনের কাছে হঠাৎ করে বাধা পেয়ে নেশায় বুঁদ থাকা অবস্থাতেই বিভ্রান্ত জোইস ওকে ছুরি মেরে বসেছিল।

হ্যাকেট চিবুকে হাত বোলাতে লাগল। আচ্ছা গেলার্ট নামে যে মেয়েটার কথা বলছিলেন একটু আগে, এখানে তার ভূমিকা কি?

সে এক বিরাট ব্যাপার। জানিনা কেন এই ঘটনার সঙ্গে আমি ওর যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছি। সুসান গেলার্টের বীমা করানো শুরু থেকে আমাদের ডেড-লেকে যাওয়া পর্যন্ত সমক্ত ঘটনা একে একে খুলে বললাম। কিন্তু ডেনির দপ্তরে আমার আর হেলেনের মধ্যস্থতা করার ব্যাপারটা কতকটা ইচ্ছে করেই চেপে গেলাম।

সব শুনে মিকলিন জানতে চাইল, কিন্তু জোইস শারম্যানের এ মেয়েটা সম্বন্ধে এত আগ্রহই বা দেখাবে কেন? এর তো মাথামুন্ডুই বোঝা যাচ্ছে না!

সেটা আমার পক্ষেও বলা সম্ভব নয়। ওটা জানতে পারলে এই অদ্ভুত ইনসিওরেন্স পলিসিগুলোর রহস্যের জটগুলো একে একে খুলে যাবে আমাদের কাছে।

আমাদের তাহলে হাফম্যানকে ধরতে হবে,হ্যাকেট বলে উঠল। ওটা হবে আমাদের প্রথম প্রধান কাজ।

ধরে নিন, হফম্যান কিডন্যাপ করেছে কিন্তু আমার কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না, মিস শারম্যানকে কিডন্যাপ করা হয়নি এই উদ্ভট খেয়াল তোমার মাথায় এল কেন!–চিন্তিত গলায় ফ্যান’শ বলে উঠল।

ব্যাপারটাকে এইভাবে সাজিয়ে নিয়ে চিন্তা করুন,হ্যাকেট আর মিকলিনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরুকরি, ম্যাসনকে হত্যাকরার জন্য ব্ল্যাকমেল করবে জোইসকে। জোইসবুঝে গিয়েছিল, এভাবে টাকা শুষে হফম্যান ওকে নিঃশেষ করে ফেলবে। তাই ও চিরদিনের মতো উধাও হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রিক্ত হস্তেও উধাও হওয়া যায়না! তাই ও হফম্যানের সঙ্গে দেখা করে নিজের পঞ্চাশ হাজার ডলারের পলিসির কথাটা অকপটে খুলে বলে। তারপর দুজনে মিলিত হয়ে টাকাটা হাতানোর ব্যাপারে সুন্দর এক পরিকল্পনা বানায়। সেইমতো হফম্যান মুক্তিপণ দাবি করে চিঠি লেখে আর জোইস গাড়িটা ফুটহিল বুলভার্দ ছেড়ে গা বাঁচিয়ে সরে পড়ে। এবার তাদের একটাই বক্তব্য, টাকাটা হাতে এলেই নিজেদের ভাগ বুঝে নিয়ে চিরদিনের মতো গা-ঢাকা দেওয়া।…এবার বলুন, ভাবনার এই ধারনাটা আপনাদের কি রকম লাগল?

আপনার চিন্তাধারার কোন অন্ত নেই, বিরক্তির সুরে হ্যাকেট বলে ওঠে। এগুলো সবইতো অনুমান মাত্র। আমাদের হাতে উপযুক্ত প্রমাণের অভাব, কোথায় প্রমাণ? কথাগুলো অসম্ভব বলে আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না, তবে পুরোপুরি ভাবে মেনে নিতেও আমার মনের দিক থেকে সাড়া পাচ্ছি না। সবার আগে আমি হফম্যানকে গ্রেপ্তার করতে চাই।

সব কিছুর মূলে এই লোকটা।

আমার কিন্তু কথাগুলো বেশ ভালোই লেগেছে, ফ্যান জবাব দিল। সময় নষ্ট না করে ম্যাডক্সকেও জানিয়ে দেওয়া হোক। মুক্তিপণের টাকাটা এখুনি দেবার কোন প্রয়োজন দেখছিনা। লয়েড যদি তার নায়িকাকে ফিরে পেতে এতই আগ্রহী, তবে সেই না হয় এখন ওটা মিটিয়ে দিক। পরে কিডন্যাপিংয়ের খবর প্রমাণিত হলে আমরা তার টাকা ফিরিয়ে দেব।

টাকা আমাদের যে কোন মূল্যেই দিতে হবে,আমি বলে উঠলাম। রাইস ব্যাপারটা খবরের কাগজওলাদের কানে তুলে দিয়েছে। তা নিয়ে ওরা কেচ্ছা কাহিনী শুরু করলে কোম্পানির সুনাম বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। মুক্তিপণের টাকা আটকাবার একটা রাস্তাই আপাততঃ খোলা আছে তা হলো, জোইসকে ম্যাসনের খুনী প্রমাণ করা। আর সে কাজটা আমাদের তিদিনের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে।

সেটা কি এখনও প্রমাণ হয়নি? রুক্ষ কণ্ঠে ফ্যান’শ বলে উঠল।সেন্ট, দেরাজের ভেতর পাওয়া কার্ড, জুতোর বাক্সে ছুরি–আর কি পাবার আশা কর তুমি?

হাজারে হাজারে মেয়ে জয় সেন্ট ব্যবহার করছে আজ,আমি বললাম, ছুরি বা কার্ডের কথা বলছ, সে তো যে কেউ তার ঘরে গিয়ে রেখে আসতে পারে। এসব জিনিসকে মাধ্যম করে কোন কিছু প্রমাণ করা একেবারেই অসম্ভব।

ফ্যান’শ যাকেটকে প্রশ্ন করল, আপনারা কতদিনের মধ্যে হফম্যানের সন্ধান করতে পারবেন?

দুকাঁধে ঝাঁকুনি তুলল হ্যাকেট, হয়তো কাল, কিম্বা আগামী মাসে বা বছর খানেক লেগে যাবে তার কূল-কিনারা করতে করতে। এই ব্যাপারটা নির্ভর করে ভাগ্যের ওপর।

বাঃ চমৎকার! ফ্যান’শ কণ্ঠে ব্যঙ্গের সুর। বুঝতে পারছেন কি, এই তিনদিনের মধ্যে তাকে না পাওয়া গেলে পঞ্চাশ হাজার ডলার আমাদের গাঁট থেকে যাবে।

সেটা আমাকে স্মরণ না করালেও চলবে, চেয়ার পেছনে ঠেলে মিকলিনের মুখের দিকে তাকাল হ্যাকেট। এই নতুন পরিস্থিতিতে আমরা মিস শারম্যানের অনুসন্ধানের কাজে লেগে পড়তে পারি, কি বলো?

হ্যাঁ। তবে কাজটা আমাদের রেখে-ঢেকে বুঝে-শুনে করতে হবে। রাইস যদি একবারও টের পায় যে আমার তার স্ত্রীকে ম্যাসনের হত্যাকারী বলে সন্দেহের তালিকায় রেখেছি, অহলে এক্ষুণি সে আমাদের সকলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে বসবে।

ফ্যান’শ উঠে পড়ল। সে সব আপনারাই আমাদের থেকে ভালো বুঝবেন। আমরাও চলি। এসো স্টিভ, গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া যাক।

রাস্তায় নেমে আমি ফ্যান’শকৈ বললাম, তোমাকে এখন টাকার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। কারণ হ্যাকেট যদি ওদের খুঁজে না পায় তাহলে আমাদের ভরাডুবি।

ঠিক আছে আমি ম্যাডন্সের সঙ্গে কথা বলব। আর স্টিভ তুমি একটু সাবধানে চলাফেরা করো। ওরা যদি তোমার ওপরে গুলি চালিয়ে থাকে, সে আবার হয়তো তোমাকে মারার চেষ্টা করবে।

আচ্ছা দেখবো।…

হোটেলে ফিরে এসেসতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আমি শোবার ঘরের দরজাটা ভেতর থেকে তালা দিয়ে বন্ধ করে দিলাম। রিভালভারটা সযতে ঢুকিয়ে রাখলাম বালিশের তলায়।

যা অনুমান করেছিলাম সকালে উঠে কাগজ খুলতেই চোখে পড়ে, মুক্তিপণ বীমার কথাটা ফলাও করে ছাপা হয়েছে। অতিরঞ্জিত করে লেখাই তাদের ধর্ম। মাডল্পকে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয়েছিল, সে নাকি চাপের মুখে পড়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, মুক্তিপণের দাবি আসার পূর্বে জোইস শারম্যানের সন্ধান পাওয়া না গেলে আমাদের কোম্পানি বীমার টাকা দিতে বাধ্য থাকবে।

ওদের টাকা পাঠানোর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত করণীয় কিছুই নেই, তার ওপর আমার হাতে সামান্য ব্যথা থাকায় আমি আপাততঃ বিশ্রাম নেওয়াটাকেই যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে করলাম।

হেলেনের খবর নিতে পেটে ইগানকে ফোন করলাম তার হোটেলে। সে জানাল, হেলেন তার কাজে ব্যস্ত।

সদাজাগ্রত সতর্ক দৃষ্টি রেখে বসে আছে লেকের দিকে। মাঝে মধ্যে ইগানও তাকে সঙ্গ দেয়। তার কথা বলার ঢঙ দেখে মনে হল, নজর রাখার কাজে সেও খুব মজা উপভোগ করছে।

সন্ধ্যার সময় হেলেনের ফোন এল। ওকে সব খুলে বললাম। শুধুমাত্র গুলি খাবার কথা ইচ্ছে করেই চেপে গেলাম। হফম্যানের নিরুদ্দেশের খবর আর জোইস শারম্যানের ম্যাসনকে হত্যা করার নিশ্চিত প্রমাণ আমার হাতে এসেছে শুনে ও বিস্ময়ে হতবাক।

আমি তো মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না, স্টিভ। ওর মতো নামকরা এক অভিনেত্রীর একটা অখ্যাত স্টেজ নর্তকীর পলিসির সম্বন্ধে তার এতো কৌতূহল থাকবে কেন? এর মধ্যে যোগসূত্র কোথায়?

এই ব্যাপারটা আমিও বুঝতে পারছি না। সমস্তটাই আমার কাছে গোলক ধাঁধা।…

আসলে সত্যিও তাই। যত চিন্তা করছি ব্যাপারটা ততই অর্থহীন মনে হচ্ছে।

আমি চুপচাপ থাকলেও পুলিশ বিভাগ হফম্যানকে খুঁজে বার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু জোইস শারম্যান বা হফম্যানের টিকি পর্যন্ত দেখা কোথায়ও যাচ্ছিল না।

একটা একটা করে ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছিল আর সেই সঙ্গে ক্রমশঃ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছিল কোম্পানীর মুক্তিপণ দেবার প্রবল সম্ভাবনা।

আমি নিশ্চিত খবরের কাগজে এই খবরটা ওরকম ফলাও করে না ছাপা হলে ম্যাডক্স কোন না কোন উপায়ে টাকা দেবার ব্যাপারটাই এড়িয়ে যেত। দারোয়ানটাকে খুন করাই জোইস শারম্যানের অন্তর্ধানের অন্যতম কারণ, আমার এ তত্ত্ব ম্যাডক্সের মনেও ধরেছে।

মুক্তিপণের টাকাটা ফ্যান’শ আগে থাকতেই যোগাড় করে রেখেছিল। সেগুলো বর্তমানে কড়া পাহারায় সুরক্ষিত। সহজে বহন করার জন্য নোটগুলো দুটো বড় মাপের সুটকেসে ভরে সযত্নে রাখা হয়েছে। এত টাকা একসঙ্গে দেখা আমার জীবনে এই প্রথমবার।

তৃতীয় দিন বিকেলে আমরা সেদিন টাকা পৌঁছনোর নির্দেশ পাবার আশা করেছিলাম–আমি, ম্যাডক্স আর মিকলিন ফ্যান’শর দপ্তরে এসে আবার এক হলাম।

মিকলিনের নিকট নতুন কোন খবর ছিলনা, আর হ্যাকেটের যখন আবির্ভাব ঘটল, তার পাংশু মুখ দেখেই বুঝতে কষ্ট হল না, তার ভাগ্যেও সংবাদ কিছু জোটেনি।

লোকটা নিশ্চয়ই আশেপাশেই কোথাও আছে, ঘরের মধ্যে সিংহ বিক্ৰমে পায়চারি করতে করতে ম্যাডক্স গর্জে উঠল। আপনাদের পুলিশ বিভাগের অপদার্থতার জন্যে আজ আমাদের পঞ্চাশ হাজার ডলার জলে যেতে বসেছে।

শহরের বাইরেও সে চলে যেতে পারে,হ্যাকেট নিজের মনেই গজগজ করে উঠল। অনর্থক চেঁচামেচি না করে, যদি কিছু ভেবেও থাকেন, তাহলে দয়া করে আমাদের খুলে বলুন।

আপনারা কি ভাবে আপনাদের কাজ করবেন সেটা বলা তো আমার কথা নয়? খেঁকিয়ে ওঠে ম্যাডক্স। কোম্পানী এই হাড় জ্বালানি পলিসি করিয়েই আমার জন্য যথেষ্ট মাথাব্যথা জুটিয়ে রেখেছে।

শারম্যানের বাড়ি হয়ে আমি একবার আসি, একঘেয়ে কথোপকথন শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। তাই নিজের অজান্তেই কতকটা বিরক্ত হয়েই জবাব দিয়ে বসলাম। কোন খবর এলেই আপনাদের ফোন করে না হয় জানিয়ে দেব। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তখন হয়তো ফাঁদ পাতার কোন সুযোগ মিলেও যেতে পারে।

তার কোন সম্ভাবনার অবকাশ নেই, যাকেট বলে উঠল। নির্দেশ দেবার আগে ওরা আপনাকে বহু মাইল দূর নিয়ে যাবে। ওদের আমি সকলকেই প্রায় চিনি। ফাঁদ পাতার কথা ওরা আগে থাকতেই পরিকল্পনা করে নেয়।

ওঁকে একটা শটওয়েভ রেডিও লাগানো গাড়ি দিচ্ছেন নাই বা কেন? মিকলিন জানতে চাইল।

ওটার মাধ্যমে উনি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। নিজেদের আড়াল করে মাইল খানেক দূর থেকেও ওঁর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখে চলতে পারি।

এইতো, বাঃ! ম্যাডক্স পায়চারি থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এতক্ষণে একটা মনের মতো মতলব পাওয়া গেল। মিঃ হ্যাকেট, আপনি কী বলেন?

আমি এক্ষুণি ব্যবস্থা করে ফেলছি। কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারে, মিঃ হারমাস।

মিকলিন টাকাটা আনার সময় আমাদের একটা সেরা বেতার গাড়ি আপনার জন্য মনে করে নিয়ে আসবে। ওর এরিয়ালটা আমি বরং খুলে নেব। কোনরকম ঝুঁকি আমরা আর নিতে চাই না।

ঠিক আছে, তাহলে চলি আমি।

রাস্তায় নেমে পাশ-পথের ওপর দিয়ে হেঁটে গাড়ির দিকে এগিয়ে চলছি, এমন সময় গুডইয়ারকে ফ্যান’শর দপ্তরের দিকেই আসতে দেখলাম।

আরে অ্যালান? ওকে দাঁড় করালাম। দাঁড়া, দাঁড়া। আমাকে একটু শুভেচ্ছা-টুভেচ্ছা জানিয়ে যা। শারম্যানের বাড়ির দিকেই যাচ্ছিলাম। আমাদের অনুমান টাকা পাঠানোর নির্দেশ আজই পেয়ে যাব।

জোইসের দেখা এখনও মেলেনি?

নাঃ। সেইসঙ্গে হফম্যানও বেপাত্তা

টাকা তাহলে আমাদের-ই দিতে হচ্ছে? গুডইয়ারকে ভীষণ বিব্রত দেখাচ্ছিল। ওহ, কি কুক্ষণে যে পলিসিটা করিয়েছিলাম!

ওসব ছাড় তো। শোন্, প্রয়োজন তেমন না হলে ওখানে না হয় এখন নাই । ম্যাডক্স বর্তমানে ক্ষেপা ষাঁড়ের দাখিল।

গুডইয়ার মুখ বিকৃত করল। তাহলে থাক। যথেষ্ট ঝড় খেয়ে গেছি ওর কাছ থেকে। আচ্ছা স্টিভ, টাকাগুলো পরে সন্ধান করার কোন উপায়-ই কি নেই?

মানে আমার হাতছাড়া হওয়ার পর?…আমি তো কোন সম্ভাবনাই দেখছি না। নোটগুলো সব ছোট অঙ্কের। ফ্যান’শ ওগুলোর নম্বর নেবারও সময় পেয়ে ওঠেনি।

অর্থাৎ ওদের ধরতে না পারলে আমাদের সব টাকা জলে গেল?

তা তো গেলই। তবে সান্ত্বনা একটাই…বিনা খরচে আমাদের কোম্পানির প্রচার বেশ ভালো ভাবেই হয়ে যাচ্ছে।

ও শালাদের ধরার জন্য পুলিশ কি করছে? কিছু করা যায় না, এটা তো বিশ্বাসযোগ্য নয়!

ওরা আমাকে একটা রেডিও কার দিচ্ছে। এইরে, বলে ফেললাম! তুই আবার মুখ ফসকে কাউকে বুলে দিস না যেন। ভাগ্য সদয় হলে হয়তো ওদের ধরে ফেলতেও সফল হব। মাইল খানেক পেছন থেকে পুলিশ আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।

গুডইয়ারের মুখ এই প্রস্তাবে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বাঃ জব্বর মতলব মাথা খাটিয়ে বের করেছ বটে! তুই কিন্তু সাবধানে থাকিস স্টিভ, বিপজ্জনক কাজে ঝুঁকি তো আছেই।

তা জানি। আচ্ছা, মিস শারম্যানের সঙ্গে কথা বলে তোর কী মনে হয়েছিল?

কোন দিক দিয়ে?

শুনলাম ও নাকি অসম্ভব মাল টানে! তোর কী সেরকম কিছু মনে হয়েছিল?

ডাইনে-বাঁয়ে মাথা নাড়ল গুডইয়ার। কই, আমার চোখে তো সেরকম কিছু পড়েনি। আমার সঙ্গে বসে বসে দিব্যি কাজের কথা বলে গেল।

ওর সেক্রেটারিকে দেখেছিস? মেক্সিকানদের মতো যাকে দেখতে?

দর্শন হয়েছে বৈকি। ঐ তো আমাকে সঙ্গে করে জোইসের কাছে নিয়ে গেল।

তাহলে পলিসির কথা সেও জানে?

 মাথা নাড়ে গুডইয়ার।

ও জানে আমি চুরি আর আগুনের পলিসিটার জন্যই গেছি।নতুন পলিসিটার বিষয়ে ও কিছুই জানে না।

ওঃ, গোয়েন্দা হবার মজা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আচ্ছা, চলি।

অগ্রিম শুভেচ্ছা রইল আমার, স্টিভ। তোর এই যাত্রায় আমারও তোর সঙ্গী হতে মন চাইছে। এ দায়িত্বটা আমি সম্পূর্ণভাবে আমার বলেই মনে করি।

যাকগে, বাদ দে। ওর পিঠে চাপড় মেরে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলাম আমি।

শারম্যানের বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছতে আমার মিনিট দশেক মতো লাগল। ঘড়িতে ঠিক সোয়া ছটা। কতকগুলো তাগড়াই চেহারার সেপাই বাড়ির বাইরে পাহারা দিচ্ছিল। নিজের পরিচয় প্রমাণ করার পরই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি মিলল।

সাদা ফ্লানেলের প্যান্ট আর হাতকাটা গেঞ্জী পরে চাতালে পায়চারি করছিল পেরিরাইস। আমাকে দেখে রেলিংয়ের কাছে এসে বলল, আসুন।

কোন খবর আছে?

নাঃ। ওরা কিছু জানিয়েছে?

না। চঞ্চল চোখের দৃষ্টি রাইসের। চাপা উত্তেজনায় হাতের আঙুলগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছিল।

টাকা যোগাড় রাখা আছে। ওরা খবর দিলেই মিকলিন নিয়ে আসবে।

ওদের দাবি ছিল ছোট নোট, তাই রাখা হয়েছে তো?

হ্যাঁ।

পকেট থেকে রুমাল বার করে মুখ মুছল রাইস। বেশ। কোন ভুল পদক্ষেপ নেওয়া যোক আমি চাইনা। আমার স্ত্রী যেমন গেছে তেমনি অক্ষত অবস্থায় যেন ফিরে আসে। টেবিলে সাজানো পানীয়ের বোতলগুলোর দিকে আমাকে চাইতে দেখে বলে উঠল, আপনি পছন্দমতো ঢেলে নিন। এই মুহূর্তে আপনাকে সঙ্গ দিতে আমি অপারগ। অনেক কাজ আছে।বলেই ওখান থেকে সরে পড়ল।

খানিকটা হুইস্কি,সোডা সহযোগে সদ্ব্যবহার করার পর আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। বারান্দায় অসম্ভব রোদের তাত। মনের মধ্যে চিন্তার বোঝা না থাকলে বাগানের দৃশ্যটা হয়তো উপভোগ করতে পারতাম। কিন্তু ভাগ্যে নেই। অগত্যা বসে বসেই ভাবতে লাগলাম।

হঠাৎ করে মনে হল, জোইস শারম্যান যদি সত্যি সত্যিই ম্যানকে হত্যা করে থাকে, তাহলে এরকম বিলাসিতার জীবন গড়তে তার কষ্ট হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ও গা ঢাকা দিয়ে আছেই বা কোথায়?…প্রায় আধঘণ্টা বসে থাকার পর গরমে উত্যক্ত হয়ে উঠে পড়তে বাধ্য হলাম। দেখা যাক কথা বলার মতো এখানে কারুর দেখা পাই কিনা। মীরী ল্যাসটিস হলেই সব থেকে ভালো, অবশ্য অন্য কেউ হলেও কোন আপত্তি নেই।

হাঁটতে হাঁটতে বারান্দার একেবারে শেষ প্রান্তে চলে গেলাম। ওখানে একটা সিঁড়ি, নীচের গোলাপ বাগান পর্যন্ত নেমে গেছে। নেমে ফুলগুলো দেখব কিনা তাই ভাবছি, এমন সময় একজনের গলা কানে এল। গলার আওয়াজ আসছিল খুব কাছের একটা খোলা জানালা থেকে। এক মুহূর্ত শুনতেই বুঝতে অসুবিধা হলনা ঐ কণ্ঠস্বর মীরার। ও বলছিল? তুমি এতো জোরের সঙ্গে কী করে ও কথা বলতে পার? ও তো ফিরেও আসতে পারে! তুমি এত নিশ্চিত হচ্ছ কীসের জোরে?

নিঃশব্দে জানালার কাছে এসে কান পাতলাম। ও কখনোই ফিরবে না, রাইসের গলা, কেন ফিরবে না তা ঠিক বলতে পারব না, তবে ফিরবে না সে আমি জানি। ইসিওর কোম্পানির টাকা মিটিয়ে দিলেই আমরা এখান থেকে সরে পড়তে পারি। যাচ্ছো তো আমার সঙ্গে?

যাবো। আমার কাছে এর থেকে সুখের আর কীই বা হতে পারে। তবে ও যে ফিরছেনা একথা নিশ্চিতভাবে না জানা পর্যন্ত আমি এক পাও নড়ব না এখান থেকে।

আমি তো বলছি, ও আর ফিরছে না–তুমি কেন আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইছ না? উত্তেজনায় রাইস ফেটে পড়ে। ওরা যদি তাকে প্রাণে মেরে না থেকে থাকে, এতক্ষণে মদ ছাড়া ও কিছুতেই থাকতে পারবেনা,মদে ডুবে থাকাইযার ধর্ম।যাবার সময় ওরহাল তোস্বচক্ষেই দেখলে?

তোমার ওকে যেতে দেওয়া একদমই উচিত হয়নি, পেরি। আমার অবশ্য কিছুই করণীয় ছিলনা, কিন্তু যে অবস্থায় ও গেছে তা দেখে আমার বুক ধড়ফড় করছিল। তুমি ওকে আটকানোর চেষ্টা অন্ততঃ করতে।

জাহান্নামে যাক ও! খেঁকিয়ে ওঠে রাইস। ও চলে যাওয়াতে আমি খুশী। কিডন্যাপের পরিবর্তে ওর মৃত্যু হলে আমি আরও খুশী হতাম।

পেরি, একটা সত্যি কথা বলবে?…সত্যি সত্যিই কী ওকে কিডন্যাপ করা হয়েছে?

কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর গুরগম্ভীর গলায় রাইস প্রশ্ন করল, কী বলতে চাও তুমি?

দেখো পেরি, অমন চোখে আমার দিকে তাকিও না, ভয়ার্ত গলার স্বর মীরার। তুমি কি করে এতো জোর দিয়ে বলছে যে ওর ফেরার আর কোন সম্ভাবনাই নেই? প্যারিসে যদি যাওয়া হয়,টাকা আসবে কোত্থেকে?…প্লিজ পেরি, আমার কাছে যা সত্যি তাই বল। আমি জানি তোমার কাছে ফুটোকড়ি, নেই–অত বোকানই আমি।বিলগুলো আমাকেই মেটাতে হয়। হাজার হাজার টাকার দেনা ওর মাথায়, তোমারও একই অবস্থা। তুমি কী ভাবে…।

দোহাই তোমার চুপ করবে? খরখরে গলায় রাইস বলে ওঠে। এসব কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হবার যোগাড়া যাবে তো বলল, না হলে আমি একাই চলে যাব।

কেন এরকম করে বলছে, গো? তুমি কী বুঝতে পারনা তোমার প্রতি ভালবাসা আমার কতখানি? প্লিজ

তাহলে তোমার এই অনর্থক প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ আপাততঃ বন্ধ রাখো। আমাকে এখন একটু একলা থাকতে দাও।শীঘ্রই যদি বেড়িয়ে পড়তে হয় আমাকেও অনেক কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। যাও, নিজের কাজ করো তুমি।

নিঃশব্দে জানলা থেকে সরে গিয়ে দৌড়ে বারান্দায় পূর্বের সেই নির্দিষ্টস্থানে ফিরে এলাম। ফ্যান’শকে ফোনে করার আগেই বাড়ির নিঝুম বিভীষিকাময় নিস্তব্ধতা চুরমার করে ঝনঝন শব্দে টেলিফোনটা বেজে উঠল।

সিঁড়ির দরজা খুলতেই রাইসকে চোখে পড়ল। তার চোখের শৃগাল চাউনি আমাকে চমকে দিল।

কিডন্যাপারদেরই ফোন হবে হয়তো। উত্তরটা আপনি দিন-তবে তাড়াতাড়ি।ঘরের দিকে ইঙ্গিত করলো সে।

তিনলাফে টেলিফোনের কাছে পৌঁছে আমি রিসিভার তুলে ধরলাম। হ্যালো! জোইস শারম্যানের বাড়ি থেকে বলছি।

কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকার পর একটা চাপা গলা ভেসে এলঃ কে কথা বলছেন?

আমি হারমাস-ন্যাশানাল ফিডালিটির কর্মী। গলাটা চিনতে পেরেছি। প্রথমবার নির্দেশ দেওয়ার সময় এই লোকটাই কথা বলেছিল।

আমাদের টাকা প্রস্তুত?

হ্যাঁ।

ছোট ছোট নোটে তো?

হা, কুড়ি ডলারের ওপরে কিছু নেই।

বেশ। শুনুন এখন। এলমো স্প্রিংস চেনেন?

চিনি। লস এঞ্জেলসের একশো মাইল উত্তরে পাহাড়ের গায়ে একটা ছোট্ট শহর এলমো ম্প্রিংস।

ওখানে পৌঁছতে আপনাদের সময় দেওয়া হল ঘণ্টা তিন। পরের নির্দেশ ব্লুটাঙ্গেল পেট্রল পাম্পে গিয়ে পাবেন। আর শুনে রাখুন।… কোনরকম চালাকির চেষ্টা করলে ক্ষতিটা কিন্তু শারম্যানের ভাগ্যে জুটবে।

অত ব্যস্ত হবার কিছু নেই, নরম গলায় বলি আমি। টাকা আপনি ঠিকই পাবেন। কিন্তু আপনাদের কথার কী গ্যারান্টি, টাকা দিয়েও আমরা মিস শারম্যানকে ফেরত পাবোই?

মনে করছেন ওকে আমাদের কাছেবন্দীরাখব?ভয় নেই। কুত্তিটা আমায় সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। ও মাগী এতক্ষণে যত বোতল মাল তার পেটে ঢেলেছে তাতে একটা নৌকা ভাসানো যেতো।

ওকে একবার নিয়ে আসুন তো। আমি কথা বলব।

ও এখানে নেই, বন্ধু,লোকটার গলার স্বর এখন অনেক হালকা। আর থাকলেও হেঁটে আসার মতো টেংরির জোর ওর থাকতনা।

আচ্ছা, এবার বলুন, ওকে আমরা ফেরত পাচ্ছি কি ভাবে?

মালকড়িগুলো মিটিয়ে দিন,বলে দেব। যাক, ওসব বাজে প্রসঙ্গ এখন থাক। তিনঘণ্টার মধ্যে টাকা আমার কাছে যেন এসে যায়। ক্লিক শব্দে লাইন কেটে গেল।

ফ্যান’শর নম্বর ডায়াল করতে করতে আমি রাইসকে বললাম, এলমো স্প্রিংস, তিন ঘণ্টার মধ্যে। ওখানে গেলে অন্য নির্দেশ পাব।

জোইসের সম্পর্কে কী বলল লোকটা। কাঁপা কাঁপা গলায় জানতে চাইল রাইস।

টাকা পেলে জানাবে।

হ্যাকেট ফোন ধরল আমায় কোথায় যেতে হবে তাকেও জানালাম। শুনে সে বলল, ঠিক আছে, এক্ষুণি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি আমি। আপনি এলমো স্প্রিংস এ পৌঁছনোর আগেই আমাদের গাড়ি দুটো যথাসময়ে সেখানে চলে যাবে। ধন্যবাদ বলে আমি ফোন রেখে দিলাম।

রাইস আমার নিকট এগিয়ে এল। ওরা কোন জাল পাতার ফন্দি আঁটছে না তো?

জোরে জোরে মাথা ঝাঁকালাম। সেটা সম্ভব নয়। তাছাড়া মিস শারম্যানকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের আগ্রহ আপনার থেকে কিছু কম নয়।

স্থির চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর, আপন মনে বিড়বিড় করতে করতে বেড়িয়ে গেল রাইস। আমি আবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। মিনিট দশেক পরে একটা গাড়ি তীব্রগতিতে ছুটে এসে বাড়ির দোরগোড়ায় দাঁড়াল। নীচে নেমে এলাম দ্রুত পদক্ষেপে।

মিকলিন আর ম্যাডক্স গাড়ি থেকে নামল। পেছনের সিটে রাখা দুটো বিরাট স্যুটকেসের দিকে চোখ পড়ল আমার। নিন, মিকলিন বলে উঠল, এবার রওনা হয়ে যান। যোগাযোগ রাখবেন, আপনার পেছনেই আমরা থাকব। ভাগ্যে থাকলে তাকে আমরা ধরেই ছাড়ব।

ধীরে-সুস্থে গাড়িতে উঠে বসলাম আমি। এলমো স্প্রিংস-এ পৌঁছে আমি… কথাটা শেয় করার আগেই রাইস হাজির। মিকলিন থামানোর আগেই গাড়ির দরজা খুলে শর্টওয়েভ রেডিও সেটটা তার চোখে পড়ে গেল।

হুঁ, তাহলে এই ছিল আপনাদের মতলব! দাঁত কিড়মিড় করে বলে ওঠে রাইস। জাহান্নমে যান আপনারা। আমি এর আগেও বলেছি, কোনরকম ছল-চাতুরির আশ্রয় যেন না নেওয়া হয়। নামুন, গাড়ি থেকে?

যেখানে আছেন ওখান থেকে একপাও নড়বেন না! ম্যাডক্স তাকে টেনে ধরল। কাজটা পরিচালনার দায়িত্ব আমার। টাকাটা যখন আমাদের, আর…

আমি ওকে কখনোই গাড়ি নিয়ে যেতে দেবনা। ম্যাডক্সের হাত ছাড়িয়ে আমার নিকট আসার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয় রাইস। জোইসের যদি কিছু হয়ে যায়…

আমি তাড়াতাড়ি ইঞ্জিন চালু করে বেড়িয়ে গেলাম। ম্যাডক্স আর মিকলিন দুজনে মিলে রাইসকে সামলাতে লাগল।….

শারম্যানের বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলাম প্রায় সাতটা নাগাদ। লস এঞ্জেলসের যানবাহনের ভিড়ে প্রথমটায় বেশি জোর এগোনো সম্ভবই হচ্ছিল না, কিন্তু হাইওয়েতে পড়া মাত্র গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলাম। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি সড়কে গাড়ি চালাতে যথেষ্ট অসুবিধের সম্মুখীন হতে হচ্ছিল, তবে জায়গাটার কাছাকাছি আসার পর দেখতে পেলাম, আমার হাতে সময় তখনও মিনিট দশ আছে।

একটা জায়গায় গাড়ি দাঁড়করালাম। বেতার যন্ত্রটা একবার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ছোট্ট একটা ইস্পাতের আকাশ-তার খাটিয়ে আমি সঙ্কেত জানালাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাকেটের দিক থেকে উত্তর এল।

আমি বলে উঠলাম, দেখছিলাম যন্ত্রটা ব্যবহার করা যায় কিনা?

আপনার গলা আমরা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি, গমগম করে উঠল হ্যাকেটের কণ্ঠস্বর। এগিয়ে যান আপনি। আমরা ঠিক আধমাইল পেছনেই আছি।

এরপর এলমো স্প্রিংস-এ পৌঁছেই যোগাযোগ করব।

রেডিওটা বন্ধ করে, আকাশ তারটা খুলে রেখে আমি এবার গাড়ি চালাতে মন দিলাম। এবারের রাস্তা ভালো। নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট পাঁচ আগেই এলমো স্প্রিংস-এ পৌঁছে গেলাম।দূরে বড় রাস্তার ওপর নীলরঙের নিয়ন আলোর ত্রিকোণ দেখা যাচ্ছিল। গাড়িটা সেখানে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালাম।

পেট্রলপাম্পে টিমটিমে আলো। জায়গাটা একেবারে নির্জন। তিনটে পাম্পের পাশে ছোট্ট একটা অফিস ঘর। আমাকে দেখে সাদা পোষাক পরা একটি ছেলে ভেতর থেকে বেরিয়ে এল।

পেট্রল বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম, হাত-পা গুলো একটু খেলাতে হবে। ছেলেটি গাড়ির পেট্রল ভরার ঢাকনিটা খোলার জন্য এগোতেই তাকে দেখে বলে উঠলাম, আমার নাম হারমাস। আমার জন্য একজনের এখানে খবর রেখে যাওয়ার কথা, এ বিষয়ে তুমি কিছু জানো? নিশ্চয়ই। আপনার নামে একটা চিঠি আছে আনছি।

ঘরের মধ্যে থেকে খাম হাতে বেড়িয়ে এল সে। খামের ওপরে বড় বড় অক্ষরে ৫ নাম। খামটা নিয়ে গাড়ি থেকে সরে এসে টিমটিমে আলোর নীচে দাঁড়ালাম।

লেখাটা সংক্ষিপ্ত ।

এখান থেকে ক্যানিয়ন পাসে চলে যান। পরবর্তী
নির্দেশ হাইওয়ের পথ নির্দেশিকার তলায় পাথর চাপা দিয়ে রাখা আছে।

চিঠিটা পকেটে গুঁজে ছেলেটার কাছে জানতে চাইলাম, যে লোকটা তোমাকে এই চিঠিটা দিয়েছিল তাকে কেমন দেখতে বলতে পার?

আমি তাকে দেখিনি। আধঘণ্টা আগে একটা বেনামী ফোন আসে। সেই আমাকে বলে আপনার জন্য একটা চিঠি এখানে থাকবে। ঠিক দশ মিনিট পরে আমার টেবিলের ওপর কয়েকটা টাকার সঙ্গে এই খামটা পেয়েছিলাম।

সত্যি বলছো তাকে তুমি দেখোনি? দেখো, দেখলে কিন্তু এক্ষুণি দশ ডলার তোমার ভাগ্যে জুটে যাবে।

ছেলেটির জীবনে এই প্রথমবার হয়তো এতো ডলার প্রাপ্তির সুযোগ ঘটল। আকস্মিক ভাবেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না। তার চোয়াল ঝুলে পড়েছে। আমি দিব্যি গেলে বলছি বাবু তাকে দেখিনি। ইস দশ পাত্তি!

পাঁচ ডলারের একটা নোট তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। এখান থেকে ক্যানিয়ন পাস কীভাবে যাব বলো দেখি?

ছেলেটি নির্দেশ দিল আমাকে।

এখান থেকে জায়গাটা কত দূর?

কম করে তিরিশ মাইল তো বটেই। বড় রাস্তা থেকে একবার পাহাড়ি সড়কে পড়লে ও জায়গায় আপনি ঠিক পৌঁছে যাবেন। ওখানে যাবার ওটাই এক মাত্র রাস্তা।

ছেলেটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। মাইল খানেক এগোবার পর গাড়ি দাঁড় করিয়ে আবার যোগাযোগ করলাম হ্যাকেটের সঙ্গে।

ক্যানিয়ন পাসের দিকে এগোচ্ছি। লিখিত নির্দেশ হাতে এসেছে তবে চিঠি প্রেরককে পেট্রল পাম্পের ছেলেটি দেখেনি। ক্যানিয়ন পাস জায়গাটা জানা আছে তো?

হ্যাকেট মৃদু কণ্ঠে অশ্রাব্য এক গালি আমার উদ্দেশ্যে বর্ষণ করার পর বলল, জানি। ওখানে যাবার রাস্তা ঐ একটি, গা ঢাকা দেবার মতো কোন স্থান সেখানে নেই। লোকটা অসম্ভব রকমের ধূর্ত। ঠিক আছে মিঃ হারমাস, আপনি একাই এগিয়ে যান, ওর চোখকে ফঁকি দেওয়া সম্ভব হবে না, ও ঠিক ধরে ফেলবে আমাদের।

অন্ধকারও হয়ে এসেছে, ওখানে যেতে যেতে রাত আরো বাড়বে, আলো নিভিয়েও আসতে পারবেন না?

অসম্ভব। রাস্তাটা একবার দেখলেই বুঝে যাবেন। আলো জ্বালিয়েই পথ চলা দুঃসাধ্য, সেখানে আলো না জ্বালিয়ে চেষ্টা করাতো আত্মহত্যার সামিল। আমরা নীচে অপেক্ষা করব। আমি চেষ্টা করছি তিনটে গাড়িকে পাহাড়ের উল্টো দিকের রাস্তায় পাঠিয়ে দিতে, তবে অতখানি রাস্তা ঠেঙিয়ে তারা সময় মতো পৌঁছতে পারবে বলে তো মনে হয়না।

তাহলে এখন থেকে আমি একা এই পথের পথিক, তাইতো?

একরকম তাই। লোকটা যদি ঐ রাস্তা দিয়েই ফেরে, তাহলে আমরা তার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারি।

টাকা উদ্ধারের এর থেকে ভালো মতলব আর হয়না, তবে ব্যাপারটা আমার পক্ষে মোটেই সুবিধের নয়। ধরুন, সে যদি আমাকে শেষ করে দেবার মতলবে থাকে?

আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম কাজটায় ঝুঁকি আছে, হ্যাকেটের কণ্ঠে বিরক্ত ঝরে পড়ল, যদি আর এগোনোর বাসনা না থাকে, ওখানেই অপেক্ষা করুন। মিকলিনকে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

না, আমি-ই যাবো দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিই। ক্যানিয়ন পাসে গিয়ে আবার যোগাযোগ করব।

ঠিক আছে। গাড়িগুলো আমি পাঠাচ্ছি। ধীরে সুস্থে চালাবেন। ওদিকে পৌঁছতে আমার লোকদের একটু সময় লেগে যাবে।

গ্রাহক নামিয়ে রেখে ইঞ্জিন চালু করালাম। সহসা ঠাণ্ডা আর কঠিন কিছু আমার ঘাড়ের পেছন

স্পর্শ করতেই ভয়ঙ্কর ভাবে চমকে উঠলাম। জিনিসটা আমার চেনা। ওটা রিভালবার। দুটো হাত শক্ত করে স্টিয়ারিং চেপে ধরে পাথরের মতো বসে রইলাম আমি। প্রতি মুহূর্তে খুলি উড়ে যাবার তীব্র আশঙ্কা।

নড়ো না–তাকাবার চেষ্টা কোরো না, অচেনা কণ্ঠ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে উঠল। কথা না শুনলে মুণ্ডুর ঘিলুগুলো কোলে ছড়িয়ে পড়বে।

অস্বীকার করে লাভ নেই। ভয়ে আমি হিম হয়ে গিয়েছিলাম। কিডন্যাপ যে করেছে সে সশরীরে আমার পেছনে। পেট্রল পাম্পের পেছনে বসে যখন কথা বলছিলাম সেই সুযোগে লোকটা গাড়িতে উঠে পড়ে। অর্থাৎ ঐ ছেলেটা এরই সহযোগী। এর আরও একটা অর্থ দাঁড়ায়। এ ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করার পর ছেলেটাকে যে পুলিশের হাতে তুলে দেব সে উপায় তারা আর রাখবে না।

চালাও! যা বলছি সেই মতো কাজ করো, নয়তো ঐ ভুলটাই তোমার জীবনের শেষ, ভুল হবে।

লোকটা রিভালবারের ঠাণ্ডা নলটা ঘাড়ে পেঁচাতে হিমের স্রোত নামতে শুরু করে দিল আমার মেরুদণ্ড বেয়ে।

কাঁপা কাঁপা হাতে কোনরকমে স্টিয়ারিং ধরে আমি এগিয়ে চললাম।

মাইলখানেক যাবার পর পেছন থেকে লোকটার নির্দেশ এল, বাঁদিকে ঘুরে চলতে থাকো। ক্যানিয়ন পাসের ঠিক উল্টো দিকের পথে ঘুরে যাচ্ছি আমি। তাই সাহায্য লাভের শেষ আশ্রয়টুকুর আশাও ছাড়তে হল। ফোঁটা ফোঁটা ঘামের বিন্দু নাক গড়িয়ে হাতের ওপর এসে পড়ছিল। ভাগ্য ভালো, হেলেন এখানে উপস্থিত নেই, না হলে আমার এই হাল সে বোধহয় সহ্য করতে পারত না। পৌরুষ, সাহস, সব কিছু খুইয়ে রিক্ত হস্তে নিঃসঙ্গ হয়ে বসে আছি।

চালাকি করতে গিয়েছিলে, আঁ? পেছন থেকে ব্যঙ্গের সুর বেজে উঠল লোকটির কণ্ঠ থেকে। এখন দেখার বিষয় বুদ্ধির দৌড় কার বেশি। কোন বাজিতে টাকা লাগাতে হয় আমি ভালোভাবেই জানি।

অচেনা লোকের সঙ্গে বাজি ধরার মানসিকতা নেই আমার,আমার গলাটা বর্তমানে ব্যাঙের ডাকের মতো শোনাল। নিজের দুর্বলতায় নিজেই বিরক্ত। আমরা চলেছি কোথায়?

অস্থির মনটা গাড়ি চালানোয় দিলেই ভালো কথা বলল না।

মুখে কুলুপ এঁটে বাধ্য ছেলের মতো গাড়ি চালাতে লাগলাম। লোকটার নির্দেশ মতো প্রথমে বাঁ দিকে তারপর ডায়ে বেঁকে আবার ঘুরে গেলাম বাঁ-দিকে। কোন পথে চলেছি তার বিন্দু মাত্র ধারণা আমার নেই। কুড়ি মিনিট এভাবে চলার পর পেছন থেকে কণ্ঠস্বরে এবার নির্দেশ : ঠিক আছে, এখানেই চলবে। গাড়ি থামাও।

আমাদের একপাশে ছিল ঝোঁপঝাড় আর অন্য পাশে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা হাহাকার শূন্যতা। জায়গাটা জুড়ে বিরাজ করছে মহাশ্মশানের স্তব্ধ নীরবতা। অনেক নীচে কতকগুলো গাড়ি হেডলাইট জ্বালিয়ে পাহাড়ী সড়ক বেয়ে উঠে আসছিল। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল আমার–তবে তার সঠিক কারণ পাহাড়ের উচ্চতা না মনের ভীতি সেটা ঠিক এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

জোইস শারম্যানের কী হল? গাড়ি থামিয়ে আমি জানতে চাইলাম।

তোমার কী মনে হয়। ঘরছাড়া হওয়ার দুঃখে বেচারি মারা গেছে? নাও, এখন চুপ করে যা বলছি শোনে। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে একবার জানাও যে, তুমি ক্যানিয়ন পাসে এসে গেছ। গলার স্বর যেন স্বাভাবিক থাকে, কোথাও একটু বেচাল দেখলেই আমার হাতের জিনিসটা গর্জে উঠবে।

তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে জোইস শারম্যান আর জীবিত নেই। তাকেও মেরে ফেল হয়েছে?

মাথার পেছনে অতর্কিত সূজোরে এক বারি পড়তেই চোখে সর্ষেফুল দেখলাম।

চোপ! পুলিশকে ফোন করো।

 হ্যাকেটের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম।

আমি ক্যানিয়ন পাসে পৌঁছে গেছি। সারা শরীরে ঘামে সপসপ করছে। রিভলভারের নলটা আমার ডান কানের ওপর। আমি জানি, হ্যাকেটের সঙ্গে কথা শেষ হতে যতক্ষণ দেরী, তারপর আমার জীবনেও যবনিকা নেমে আসবে।

ওকে বলল, নির্দেশ মতো টাকাটা তুমি মাইল পোস্টের তলায় রেখে দিচ্ছো,আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে উঠল লোকটার ঠোঁট।আমাকে এখানে টাকা দিতে হবে,হ্যাকেটকে বললাম। আমার ডান হাতটা ধীরে ধীরে গাড়ির দরজার হাতলের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল। ওগুলো আমি মাইল পোস্টের নীচে রেখে দিচ্ছি।

আশে পাশে কেউ কোথাও নেই? হ্যাকেটের প্রশ্ন।

না।

ঠিক আছে, টাকাটা রেখে ফিরে আসুন। রাস্তায় কোন লাল আলো চোখে পড়লে হেডলাইটটা তিনবার জ্বালাবেন আর নেভাকেন।না হলে আপনাকেও গুলি হজম করতে হবে। আচ্ছা, ছাড়ছি।

হাতলটা ঠেলেই বুঝতে কষ্ট হলনা, দরজা খুলে গেছে। লাইনটা কেটে যাওয়া মাত্র সজোরে একটা হাত ওপর দিকে চালিয়ে এক ঝটকায় বাইরে এসে পড়লাম। সাঁই সাঁই শব্দে কয়েকটা গুলি ছুটে এল।

আমি গড়িয়ে রাস্তার ধারে আসবার আগেই একটা গুলি রাস্তায় পড়ে ধূলো ময়লায় ভরিয়ে দিল আমার মুখবদন। মরিয়া হয়ে পাহাড়ের প্রসারিত একটা অংশ লক্ষ্য করে ছুটতে লাগলাম। লোকটাকে এবার চোখে পড়েছে।

গাড়ি থেকে নেমে গাঁট্টাগোট্টা একটা ছায়ামূতি দৌড় আসছিল আমার দিকে। তৃতীয়বার লক্ষ্য ভ্রষ্ট হবার প্রবৃত্তি তার নেই। নিজের রিভলভারটা বের করার সুযোগও পেলাম না। কাছাকাছি আসতেই লোকটার হাতে ধরা রিভলভারটা আমার দিকে উঠতে লাগল। সব চিন্তাভাবনা জলাঞ্জলি দিয়ে নীচের ফাঁকা অন্ধকার লক্ষ্য করে ঝাঁপ দিলাম।…