আত্মা—ইহার স্বরূপ ও লক্ষ্য
প্রাচীনতম ধারণা এই যে, মানুষের মৃত্যু হইলে সে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। মৃত্যুর পরও একটা সত্তা অবশিষ্ট থাকে এবং তাহাই বাঁচিয়া থাকে। মিশরীয়, ব্যবিলনীয় এবং প্রাচীন হিন্দু—সম্ভবতঃ পৃথিবীর প্রাচীনতম তিনটি জাতির মধ্যে তুলনা করিয়া তাহাদের প্রত্যেকের নিকট হইতে এই ধারণাটি গ্রহণ করা সমীচীন হইবে। মিশরীয় এবং ব্যাবিলনীয়দিগের মধ্যে একটি আত্মা-বিষয়ক ধারণা—একটি যুগ্ম-সত্তার ধারণা দেখিতে পাই। তাহাদের মতে এই দেহের অভ্যন্তরে অপর একটি দেহ বর্তমান, যাহা এখানে বিচরণ করিয়া কর্মাদি সম্পাদন করিতেছে। যখন বাহ্যদেহটির মৃত্যু হয়, তখন ঐ দ্বিতীয় দেহটি বাহিরে আসে এবং কিছুকাল বাঁচিয়া থাকে। কিন্তু এই দ্বিতীয় দেহটির জীবনকাল বাহ্যদেহটির সংরক্ষণের উপর নির্ভর করে। প্রথম দেহটির কোন অঙ্গ আহত হইলে দ্বিতীয়টিরও সেই অঙ্গ সমভাবে আহত হইবে। এই কারণেই প্রাচীন মিশরীয়দিগের মধ্যে মৃতব্যক্তির দেহকে সুগন্ধ আরক প্রভৃতি দ্বারা সুবাসিত করিয়া, পিরামিড প্রভৃতি নির্মাণ করিয়া সংরক্ষণ করিবার আগ্রহ দেখিতে পাই। আমরা দেখিতেছি যে, ব্যাবিলনীয় এবং প্রাচীন মিশরীয়দিগের মতে—এই দ্বিতীয় দেহটি অনন্তকাল বাঁচিয়া থাকিতে পারে না; বড় জোর ইহা কিছুকাল থাকিতে পারে, অর্থাৎ পরিত্যক্ত বাহ্যদেহটি যতদিন সংরক্ষিত হয় ততদিন।
পরবর্তী বৈশিষ্ট্যটি এই যে, এই দ্বিতীয়দেহ-সম্বন্ধীয় ধারণার সঙ্গে একটি ভয়ের ভাব মিশ্রিত রহিয়াছে। ইহা সর্বদাই অসুখী এবং দুর্দশাগ্রস্ত। তীব্রতম যন্ত্রণা সহ্য করিয়া ইহাকে বাঁচিয়া থাকিতে হয়। যাহারা জীবিত, তাহাদের নিকট সে পুনঃপুনঃ ফিরিয়া আসে এবং খাদ্য, পানীয় ও ভোগ্য বস্তুসমূহ, যেগুলি সে এখন পাইতেছে না, সেগুলি পুনঃপুনঃ প্রার্থনা করে। নীলনদের স্বচ্ছ জল, যাহা সে এখন পান করিতে পারে না, তাহা পান করিতে চায়। জীবিত থাকিতে যে-সব দ্রব্য সে ভোগ করিত, সেগুলি পাইবার আকাঙ্ক্ষা করে। যখন দেখে, সে এইগুলি পাইবে না, তখন অত্যন্ত হিংস্র হইয়া উঠে এবং সময়ে সময়ে ঐ-সকল খাদ্য না পাইলে জীবিত ব্যক্তিদের জীবন বিপন্ন করিয়া তোলে।
আর্যগণের চিন্তাধারা আলোচনা করিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ইহার একটি বিশেষ ব্যতিক্রম লক্ষ্য করি। এখানেও একটি দ্বিতীয় দেহের ধারণা রহিয়াছে; কিন্তু ঐটি একপ্রকার অধ্যাত্ম দেহ। অপর একটি বড় প্রভেদ এই যে, এই অধ্যাত্ম দেহ বা আত্মা বা যাহাই আমরা বলি না কেন, এইটির জীবনকাল পরিত্যক্ত দেহ দ্বারা বদ্ধ নয়। বরং আত্মা পূর্বদেহের বন্ধন হইতে মুক্তিলাভ করিয়াছে বলিয়াই মৃতদেহ দাহ করিবার অপূর্ব পদ্ধতিটি আর্যদের মধ্যে বর্তমান। মৃত্যের পরিত্যক্ত দেহ হইতে তাহারা অব্যহতি পাইতে চায়, আর মিশরীয়গণ এই দেহকে সুগন্ধ আরক দ্বারা সুবাসিত করিয়া, কবরে প্রোথিত করিয়া পিরামিড প্রভৃতি নির্মাণ করিয়া উহাকে সংরক্ষিত করিতে চায়। মৃতের দেহকে বিনষ্ট করিয়া দেওয়ার এই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন প্রথা ছাড়াও কতকটা উন্নত জাতিগুলির মধ্যে মৃতদেহ বিনষ্ট করিবার যে রীতি দেখা যায়, তাহা দ্বারা বেশ প্রমাণিত হয় যে, উহাদের মধ্যে আত্মার ধারণাটি বর্তমান। যেখানেই দেহবিযুক্ত আত্মার ধারণাটি দেহের ধারণার সহিত যুক্ত, সেখানেই আমারা মৃতদেহ সংরক্ষিত করিবার এবং যে-কোন ভাবে ইহাকে প্রোথিত করিবার আগ্রহ লক্ষ্য করি। অপর পক্ষে যাহাদের মধ্যে এই ধারণা পরিস্ফুট হইয়াছে যে, আত্মা দেহ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক্ এবং মৃতদেহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হইলেও আত্মা আহত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না, তাহাদের মধ্যেই মৃতদেহকে দাহ করিবার রীতি অবলম্বিত হইয়াছে। তাই আমারা প্রাচীন আর্যজাতির মধ্যে এই মৃতদেহ দাহ করিবার প্রথা দেখিতে পাই, যদিও পারসীকরা অবশ্য এই প্রথাকে পরিবর্তন করিয়া একটি উচ্চস্থানে অনাবৃতভাবে মৃতদেহ রাখিবার প্রথা অনুসরণ করে। কিন্তু এই উচ্চস্থান বা দখ্ম(dakhma)-নামের অর্থ দাহ করিবার স্থান; ইহা দ্বারা প্রতীত হয় যে, প্রাচীনকালে তাহারাও মৃতদেহ পোড়াইত। আর্যজাতির অপর একটি বিশেষত্ব এই যে, তাহাদের এই দ্বিতীয়-দেহগুলির ধারণার সঙ্গে কোন ভীতির ভাব জড়িত ছিল না। দ্বিতীয়-দেহগুলি খাদ্য বা সাহায্যের জন্য এই পৃথিবীতে নামিয়া আসে না, বা ঐ সাহায্য হইতে বঞ্চিত হইলে হিংস্রও হয় না, অথবা জীবিত ব্যক্তি-গণের জীবন বিপন্ন করিতেও প্রয়াসী হয় না।; উহারা বরং আনন্দিত—দেহ-বন্ধন হইতে মুক্তিলাভ করিয়া আহ্লাদিত। চিতাগ্নি বিশ্লিষ্ট হইয়া যাওয়ার প্রতীক। দেহমুক্ত আত্মাকে ধীরে পিতৃপুরুষগণের নিকট—যেখানে দুঃখ নাই, যেখানে চির আনন্দ বিরাজিত—সেইখানে ধীরে বহন করিয়া লইবার জন্য এই চিতাগ্নির উদ্দেশে বলা হইয়া থাকে।
এই দুইটি ভাবধারা লক্ষ্য করিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝিতে পারি, দুটি ভাব স্বরূপতঃ এক—প্রাথমিকভাবে একটি আশাবাদী, অপরটি নৈরাশ্যবাদী; একটি অপরটির বিবর্তন মাত্র। ইহা খুবই সম্ভব যে, অতি প্রাচীন কালে মিশরীয়দের ন্যায় আর্যগণও এই ভাবধারা পোষণ করিতেন। তাঁহাদের প্রাচীন শাস্ত্রসমূহ অধ্যয়ন করিলে আমরা এই কথার সম্ভাব্যতা বুঝিতে পারি। কিন্তু ভাবটি যথার্থই সুন্দর এবং অপূর্ব। যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তখন এই আত্মা পিতৃপুরুষগণের নিকট গমন করিয়া তাঁহাদের সহিত সুখৈশ্বর্য সম্ভোগ করে। পিতৃপুরুষগণ আত্মাকে অত্যন্ত করুণাপূর্ণভাবে গ্রহণ করেন। আত্মা সম্বন্ধে ভারতের প্রাচীন ধারণা হইল এই। পরবর্তীকালে এই ভাবটি উন্নত হইতে উন্নত পর্যায়ে গিয়া পৌঁছিয়াছে। তখন দেখা গেল, তাঁহারা যাহাকে ‘আত্মা’ বলিয়া অভিহিত করেন, তাহা বস্তুতঃ আত্মা নয়। এই জ্যোতির্ময় দেহ, সূক্ষ্ম দেহ—যত সূক্ষ্মই হউক না কেন, বস্তুতঃ দেহমাত্র, এবং সূক্ষ্ম বা স্থূল সকল দেহই কোন না কোন উপাদানের দ্বারা গঠিত। যাহা কিছু কোনপ্রকার অবয়ববিশিষ্ট, তাহা অবশ্যই সীমিত, তাহা কখনই চিরস্থায়ী হইতে পারে না। যাহা অবয়ববিষিষ্ট, তাহাই পরিবর্তনশীল, আর যাহা পরিবর্তনশীল তাহা কিরূপে নিত্য হইতে পারে? সুতরাং এই জ্যোতির্ময় দেহের পশ্চাতে তাঁহারা যেন একটি সত্তাকে অনুভব করিয়াছেন, যাহাকে মানুষের আত্মা-নামে অভিহিত করা যায়। ইহাকেই ‘আত্মা’ বা ‘জীবাত্মা’ বলা হইয়া থাকে। আত্মা-সম্বন্ধীয় ধারণা এইখানেই আরম্ভ হইল, এইটিকেও অবশ্য বহু পরিবর্তনের মধ্য দিয়া যাইতে হইয়াছে। কেহ চিন্তা করিলেন, এই জীবাত্মা নিত্য; কেহ ভাবিয়াছেন, ইহা অতিসূক্ষ্ম, প্রায় এক-একটি অণুর মতো সূক্ষ্ম; ইহা শরীরের একটি বিশেষ অংশে বাস করে এবং যখন একজন মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাহার জীবাত্মা জ্যোতির্ময় দেহকে সঙ্গে লইয়া অন্তর্হিত হয়। আবার অন্য একদল লোক আছেন—যাঁহারা স্বীকার করেন না, জীবাত্মা আণবিক প্রকৃতিবিশিষ্ঠ ; জ্যোর্তিময় দেহ জীবাত্মা নয় , এ-কথা বলিতে গিয়া তাঁহারা যে যুক্তি দেন , জেবাত্মার আনতিক প্রকৃতি অস্বীকার করিতে গিয়াও তাঁহারা সেই একই-যুক্তি প্রদর্শন করেন।
এই-সব বিভিন্ন মতবাদ হইতে সাংখ্যদর্শনের উদ্ভব হইয়াছে এবং সেখানে আমরা প্রভূত প্রভেদ দেখিতে পাই। সাংখ্যদর্শনের প্রতিপাদ্য ভাব এই : মানুষের প্রথমতঃ একটি স্থূলদেহ আছে; স্থূলদেহের পশ্চাতে রহিয়াছে সূক্ষ্মদেহ, তাহা যেন মনের বাহক এবং ইহারও পশ্চাতে রহিয়াছে আত্মা বা সাংখ্যমতে ‘মনের জ্ঞাতা’ এবং তাহা সর্বত্র বিচরণশীল। অর্থাৎ তোমার আত্মা, আমার আত্মা এবং প্রত্যেকের আত্মা একইকালে সর্বত্র বিরাজিত। আত্মা যদি নিরবয়ব হয়, তবে কিরূপে বলা যায় যে তাহা ‘দেশে’ বদ্ধ হইবে? কেন না, যাহা স্থান অধিকার করে, তাহারই অবয়ব রহিয়াছে; যাহা নিরবয়ব, তাহাই অনন্ত হইতে পারে; সুতরাং প্রত্যেক আত্মাই সর্বব্যাপী। এই বিষয়ে দ্বিতীয় মতবাদটি আরও চমকপ্রদ। প্রাচীনকালে তাঁহারা লক্ষ্য করিয়াছেন যে, সব মানুষই প্রগতিশীল—অন্ততঃ তাহাদের মধ্যে অনেকে। তাহারা পবিত্রতা, শক্তি এবং জ্ঞানের পথে বর্ধিত। প্রশ্ন হইল—এই জ্ঞান, এই পবিত্রতা এবং এই শক্তি মানুষের মধ্যে কোথা হইতে বিকশিত হইয়াছে? একটি শিশুর কোন জ্ঞান নাই। এই শিশুটি বড় হইয়া শক্তিমান্, ক্ষমতাপন্ন বিজ্ঞ ব্যক্তিতে পরিণত হয়। কোথা হইতে এই শিশুটি তাহার জ্ঞান ও শক্তির উৎসের সন্ধান পাইল? উত্তর—ঐ জ্ঞান ও শক্তি তাহার মধ্যেই ছিল; শিশুর আত্মার মধ্যেই তাহার জ্ঞান, তাহার শক্তি প্রথমাবধি বর্তমান। এই শক্তি, এই পবিত্রতা এবং এই ক্ষমতা তাহার আত্মাতে ছিল, অবিকশিত অবস্থায় ছিল; তাহাই এখন বিকশিত। এই বিকশিত এবং অবিকাশিত অবস্থা বলিতে আমরা কি বুঝি? সাংখ্যবাদীরা বলেনঃ প্রত্যেক আত্মাই পবিত্র, পূর্ণ, সর্বশক্তিমান্ এবং সর্বজ্ঞ; কিন্তু ইহা যেরূপ মনের মধ্য দিয়া প্রতিফলিত হয়, সেইরূপেই বিকশিত হইতে পারে। মন যেন আত্মার প্রতিফলনের একটি আয়না মাত্র। আমার মন আমার শক্তির কিয়দংশ যেমন প্রতিফলিত করিতে পারে, তেমনি তোমার এবং অপরের আত্মাও করিতেছে। যে আয়না যত বেশী স্বচ্ছ, তাহাতে আত্মা তত বেশী সুন্দরভাবে প্রতিবিম্বিত হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি যেরূপ মনের অধিকারী, তাহার আত্মিক বিকাশও তেমনি হইয়া থাকে। কিন্তু সকল আত্মাই পবিত্র এবং পূর্ণ।
আবার এক সম্প্রদায় মনে করিলেন, এইরূপ হওয়া সম্ভব নয়। যদিও আত্মা স্বভাবতই পবিত্র ও পূর্ণ, এই পবিত্রতা ও পূর্ণত্ব সময় সময় যেন সঙ্কুচিত হয়, আবার সময় সময় যেন প্রসারিত হইয়া থাকে। কতকগুলি কাজ এবং চিন্তা যেন আত্মার প্রকৃতিকে সঙ্কুচিত করে, আবার কতকগুলি কাজ এবং চিন্তা যেন তাহার স্বভাবকে পরিস্ফুট ও বিকশিত করে। এই বিষয়টি আরও পরিষ্কাররূপে বিশ্লেষণ করা হইয়াছে। যে-সব চিন্তা ও কার্য আত্মার পবিত্রতা ও শক্তি সঙ্কুচিত করে, সেগুলি অশুভ; যে-সব চিন্তা ও কার্য আত্মার শক্তিকে পরিস্ফুট করে, সেইগুলি শুভ। দুইটি মতবাদের মধ্যে প্রভেদ অতি সামান্য। ‘সঙ্কোচন’ এবং ‘প্রসারণ’—এই দুইটি শব্দের ব্যাখ্যার উপরই ইহা নির্ভর করিতেছে। যে-মতে আত্মার যন্ত্র-স্বরূপ মনের গঠনের উপরেই আত্মার বিকাশের তারতম্য নির্ভর করে, সেই মতটি নিঃসন্দেহে স্পষ্টতর বলা যাইতে পারে। কিন্তু সঙ্কোচন এবং প্রসারণ-মতবাদী এই দুইটি শব্দের আশ্রয় লইতে চায়। তাহাদের নিকট প্রশ্ন করা কর্তব্য, আত্মার সঙ্কোচন এবং প্রসারণ বলিতে তাহারা কি বুঝিয়া থাকে? আত্মা চেতন বস্তু। প্রশ্ন করিতে পারো, স্থূল জড়পদার্থ বা সূক্ষ্ম চেতনবস্তু মন-সম্পর্কে সঙ্কোচন ও প্রসারণ বলিতে কি বুঝায়? কিন্তু ইহা ছাড়া যাহা জড় নয়, যাহা দেশ-কালের অতীত, তাহার সম্বন্ধে এই সঙ্কোচন ও প্রসারণ শব্দ-দুইটি কিরূপে প্রযুক্ত হইবে? সুতরাং মনে হয়, যে-মতবাদে আত্মা সর্বদাই পবিত্র ও পূর্ণ, শুধু মানসিক গঠনের তারতম্য অনুসারে আত্মার প্রতিফলনের তারতম্য ঘটে, সেই মতই অপেক্ষাকৃত ভাল। মনের পরিবর্তনের সঙ্গে ইহার স্বভাবও যেন ক্রমশঃ আরও শুদ্ধ হইতে থাকে এবং আত্মার বিকাশও উন্নততর হয়। যতদিন না মন শুদ্ধ হয়—তাহাতে আত্মার অন্তর্নিহিত সব গুণই পূর্ণবিকশিত না হয়, ততদিন এরূপ চলিতে থাকে; তারপর আত্মা মুক্ত হয়।
আত্মার প্রকৃতিই এই। কিন্তু চরম লক্ষ্য কি? ভারতের বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মার লক্ষ্য এক বলিয়াই প্রতীত হয়। সকলেরই মূল-ভাবটি এক—মুক্তি। মানুষ অনন্ত, এবং বর্তমানে যে বদ্ধ অবস্থায় সে আছে, ইহা তাহার স্বভাব নয়। কিন্তু এই বিভিন্ন বদ্ধ অবস্থার মধ্য দিয়াই আত্মা ক্রমশঃ মুক্তির পথে অগ্রসর হইবার প্রাণপন চেষ্টা করিতেছে এবং যতদিন না আত্মা স্বাধিকার—সেই অসীম, অনন্ত, মুক্ত স্বভাব—লাভ করিতেছে, ততদিন সে নিরস্ত হইবে না। আমরা আমাদের চতুর্দিকে যে-সব সংযোগ, পুনঃসংযোগ এবং বিকাশ দেখিতে পাইতেছি, সেগুলি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নয়—পথের ক্ষণিক ঘটনা মাত্র। পৃথিবী সূর্য, চন্দ্র নক্ষত্র, শুভ অশুভ, হাসি কান্না, আনন্দ ও দুঃখ প্রভৃতি সংযোগ আমাদিগকে অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে এবং অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়াই আত্মা সব বন্ধন ছিন্ন করিয়া নিজ পূর্ণ স্বরূপ প্রকাশ করে। আত্মা তখন অন্তঃ- ও বহিঃ-প্রকৃতির কোন নিয়মের দ্বারাই বদ্ধ হয় না। আত্মা তখন সব বন্ধন, সব নিয়ম ও সমগ্র প্রকৃতির ঊর্ধ্বে চলিয়া গিয়াছে। প্রকৃতি তখন আত্মার অধীন হইয়া পড়ে; আত্মা প্রকৃতির অধীন হয় না, এখন যেমন অধীন বলিয়া মনে হইতেছে। ইহাই আত্মার একমাত্র লক্ষ্য। যে অভিজ্ঞতা-পরম্পরার মধ্য দিয়া আত্মা বিকশিত হইতেছে, তাহার লক্ষ্য—মুক্তি লাভ। অভিজ্ঞতাগুলি আত্মার জন্ম ও জীবন বলিয়া প্রতিভাত হয়। আত্মা যেন একটি নিম্নতর দেহ ধারণ করে এবং উহার মধ্য দিয়া আত্ম-প্রকাশের চেষ্টা করিতেছে। আত্মা নিম্নতর দেহটি অপর্যাপ্ত মনে করিয়া দূরে নিক্ষেপ করিতেছে এবং একটি উন্নত ধরণের দেহ গ্রহণ করিতেছে। এটিকেও অকিঞ্চিৎকর বিবেচনা করিয়া পরিত্যাগ করে এবং উন্নততর দেহ ধারণ করে, অবশেষে আত্মা এমন একটি শরীরের সন্ধান পাইবে, যাহার সাহায্যে তাহার উচ্চতম আকাঙ্ক্ষা বিকশিত হইবে। তখনই আত্মা মুক্তি লাভ করিবে।
এখন প্রশ্ন এই, আত্মা যদি অনন্ত ও সর্বব্যাপী হয়, আত্মা যদি সূক্ষ্ম চেতন বস্তু হয়, তবে ইহার পর পর শরীর গ্রহণ করিবার অর্থ কি? তত্ত্বটি এই—আত্মা আসেও না, যায়ও না, জন্মগ্রহণও করে না এবং মরেও না। যাহা সর্বব্যাপী, তাহার জন্মগ্রহণ কিরূপে সম্ভব? আত্মা দেহে বাস করে—এরূপ বলা অর্থহীন নির্বুদ্ধিতা। যাহা অসীম, তাহা সীমাবদ্ধ স্থানে থাকিবে কিরূপে? কিন্তু এক ব্যক্তি যখন হাতে একখানি বই লইয়া পড়িতে পড়িতে পাতার পর পাতা উলটাইয়া অগ্রসর হইতে থাকে, তখন বইয়ের পাতাগুলি পুনঃপুনঃ স্থাণ পরিবর্তন করিতে থাকে, কিন্তু পাঠক যথাস্থানেই অবস্থান করে, আত্মার সম্বন্ধেও এই কথা প্রযোজ্য। সমগ্র প্রকৃতিই আত্মার নিকট একখানি পুস্তকের মতো—আত্মা যেন উহা পাঠ করিতেছে। এক একটি জীবন যেন সেই পুস্তকের একটি পাতা, ঐ পাতাটি পড়া হইয়া গেলে সে ক্রমশঃ পাতা উল্টাইয়া অগ্রসর হইতে থাকে, যতদিন না পুস্তক পড়া শেষ হইয়া যায়, এবং চরাচর বিশ্বের সমস্ত অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া আত্মা পূর্ণ হয়। তথাপি একই কালে এই আত্মা কখনও নড়ে নাই, আসে নাই, যায়ও নাই, শুধু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিতেছিল। কিন্তু আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আমরা যেন ঘুরিতেছি। পৃথিবী আবর্তিত হইতেছে, তখাপি আমরা মনে করি যে, পৃথিবীর পরিবর্তে সূর্য ঘুরিতেছে; আমরা জানি ইহা একটি ভুল—ইন্দ্রিয়ের ছলনামাত্র। আমরা জন্মগ্রহণ করি এবং মরি, আমার আসি এবং যাই—ইহাও একটি ভ্রান্তিমাত্র। আমরা আসিও না, যাইও না; আমরা জন্মগ্রহণও করি না। কেন না আত্মা কোথায় যাইবে? উহার গমনের কোন স্থান নাই। এমন কোন্ স্থান আছে, যেখানে আত্মা পূর্ব হইতেই বর্তমান নাই?
অতএব প্রকৃতির বিবর্তন এবং আত্মার বিকাশের তত্ত্বটি আসিয়া পড়িল। বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়গুলি—উচ্চ হইতে উচ্চতর সংযোগসমূহ আত্মায় নাই। আত্মা যেমন তেমনই আছে। এইগুলি প্রকৃতিতে অবস্থিত; কিন্তু যেহেতু প্রকৃতি উচ্চ হইতে উচ্চতর পর্যায়ে বিবর্তিত হইতেছে, আত্মার মহিমাও ক্রমশঃ বিকশিত হইতেছে। মনে কর, এখানে একটি পর্দা রহিয়াছে, এবং পর্দার পশ্চাতে একটি আশ্চর্য দৃশ্য বর্তমান। এই পর্দায় একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে যাহার সেই ভিতর দিয়া ঐ দৃশ্যের কিয়দংশ আমাদের দৃষ্টিগোচর হইতেছে। মনে কর, ছিদ্রটি ক্রমশঃ বাড়িতে লাগিল। সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যটি আমাদের দৃষ্টিপথে অধিকতর পরিস্ফুর হইতে থাকে; যখন সমস্ত পর্দাটি অপসারিত হয়, তখত দৃশ্য ও তোমার মধ্যে কোন ব্যবধাব থাকে না, তুমি উহার সবটুকুই দেখিতে পাও। এই পর্দাটি হইল মানুষের মন। ইহার পশ্চাতে আত্মার সেই মহিমা, সেই পবিত্রতা, সেই অনন্ত শক্তি বর্তমান; এবং মন যতই স্বচ্ছ হইতে স্বচ্ছতর, পবিত্র হইতে পবিত্রতর হইতে থাকে, আত্মাও স্বমহিমায় ক্রমশঃ বিকশিত হইয়া উঠে। ইহার কারণ এই নয় যে, আত্মা পরিবর্তিত হইতেছে—পরিবর্তন যাহা কিছু, তাহা এই পর্দায়। আত্মা সেই অপরিবর্তনীয়, অমৃতস্বরূপ, পবিত্র আনন্দময় অদ্বৈত সত্তা।
সুতরাং শেষ পর্যন্ত তত্ত্বটি এইরূপ দাঁড়াইল : উচ্চতম হইতে নিম্নতম—নিকৃষ্ট ব্যক্তি পর্যন্ত, শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি হইতে ক্ষুদ্রতম বিচরণশীল কীটাণু পর্যন্ত—সকলেই সেই পবিত্রতা পূর্ণস্বরূপ, অসীম আনন্দময় সত্তা। কীটের মধ্যে আত্মার অনন্ত শক্তির স্বল্প বিকাশ; শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির মধ্যে আত্মার শক্তি সর্বাধিক বিকশিত হইতেছে। প্রভেদ শুধু বিকাশের তারতম্যে, মূলতঃ আত্মা একই। সকল জীবের মধ্যে সেই পবিত্র পূর্ণ আত্মা অবস্থান করিতেছে।
স্বর্গ বা অনুরূপ স্থানসমূহের যে উল্লেখ রহিয়াছে, সেগুলি গুরুত্বের দিক দিয়া দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত বলা যাইতে পারে। স্বর্গের ধারণাকে একটি নিম্নস্তরের ধারণা বলা যাইতে পারে। ভোগপূর্ণ একটি স্থানের ধারণা হইতেই ইহার উৎপত্তি হইয়াছে। আমরা নির্বোধের মতো বিশ্ব চরাচরকে আমাদের বর্তমান অভিজ্ঞতার মধ্যেই সীমিত করিয়া রাখিতে চাই। শিশুরা চিন্তা করে, সমগ্র বিশ্ব শিশুতে পরিপূর্ণ; উন্মাদের নিকট সমগ্র পৃথিবী একটি উন্মাদাগার। সুতরাং যাহাদের নিকট পৃথিবী কেবল ইন্দ্রিয়-ভোগের জন্য, যাহাদের সমগ্র জীবন আহার এবং প্রমোদে ব্যয়িত হয়, যাহাদের সঙ্গে পশুরা ব্যবধান অত্যন্ত সামান্য, তাহারা স্বভাবতই এই জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব লক্ষ্য করিয়া এমন একটি স্থানের কল্পনা করে, যেখানে তাহারা আরও ভোগসুখ লাভ করিবে। তাহাদের ভোগাকাঙ্ক্ষা অসীম, সুতরাং তাহারা এমন একটি স্থানের কল্পনা করিতে বাধ্য, যেখানে অবিরত ইন্দ্রিয়সুখ রহিয়াছে, এবং যতই আমরা অগ্রসর হই, ততই দেখি, যাহারা ঐ-সকল স্থানে যাইতে আকাঙ্ক্ষা করে, তাহাদের অবশ্যই সেখানে যাইতে হয়। তাহারা স্বপ্নের মধ্য দিয়া চলে—একটি স্বপ্ন শেষ হইলে অপর একটি স্বপ্নের মধ্যে গিয়া পড়ে, যেখানে ইন্দ্রিয়ভোগের প্রাচুর্য বর্তমান। তারপর যখন তাহাদের স্বপ্ন ভাঙিয়া যায়, তাহারা অন্য একটি জিনিসের জন্য চিন্তা করিতে বাধ্য হয়। এইরূপে তাহারা এক স্বপ্ন হইতে অন্য স্বপ্নে তাড়িত হইতে থাকিবে।
তারপর শেষ তত্ত্ব—আত্মা সম্বন্ধে আরও একটি ধারণা। যদি আত্মা পবিত্র এবং স্বরূপতঃ পূর্ণ, যদি প্রতি আত্মা অনন্তশক্তিসম্পন্ন এবং সর্বব্যাপী হয়, তবে বহু আত্মার কল্পনা কিরূপে সম্ভব হইতে পারে? একই সঙ্গে বহু অনন্তের কল্পনা সম্ভব নয়। বহুর কথা ছাড়িয়া দাও, একই সঙ্গে দুইটিরও কল্পনা করা যায় না। যদি দুইটি অনন্ত থাকিত, তবে একটি অপরটির দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকিত, ফলে দুইটিই সীমিত হইত। অনন্ত কেবল একটিই হইতে পারে এবং সাহসের সহিত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, অনন্ত এক—দুই নয়।
দুইটি পক্ষী একই বৃক্ষে অবস্থান করিতেছে—একটি শীর্ষদেশে, অপরটি নিম্নে। উভয়ই বিচিত্র বর্ণের; একটি ফল ভক্ষণ করে, কিন্তু অপরটি শান্ত, মহিমময় হইয়া নিজ গৌরবে অবস্থান করিতেছে। নিম্নতর পক্ষীটি ভাল ও মন্দ ফল ভক্ষণ করিতেছে এবং ইন্দ্রিয়ভোগ্য বস্তুর পশ্চাতে ধাবিত হইতেছে। যখনই পক্ষীটি একটি তিক্ত ফল ভক্ষণ করে, তখনই উর্ধ্বগামী হয়; ঊর্ধ্বে দৃষ্টিপাত করিয়া সে দেখে, অপর পক্ষীটি সেখানে শান্ত সংযত হইয়া অবস্থান করিতেছে; সে ভাল বা মন্দ কোন ফলেরই আকাঙ্ক্ষা না করিয়া, কোনপ্রকার ইন্দ্রিয়তৃপ্তির অনুসন্ধান না করিয়া, আত্মস্থ হইয়া অবস্থান করিতেছে। নিম্নস্থ পক্ষীটি ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী পক্ষীটিকে দেখিয়া ক্রমশঃ উহার সমীপবর্তী হইবার চেষ্টা করিতেছে। একটু ঊর্ধ্বে উঠিতেছে, কিন্তু পূর্বপূর্ব সংস্কারসমূহ বলবৎ থাকায় সে একই ফল আবার ভক্ষণ করিতেছে। আবার একসময়ে একটি অত্যন্ত তিক্ত ফল খাইয়া মর্মাহত হয় এবং ঊর্ধ্বে নিরীক্ষণ করে। সেখানে সেই শান্ত সংযত পক্ষীটিকে আবার দেখে। সে উহার নিকটবর্তী হইবার চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু পূর্ব সংস্কার-প্রভাবে পুনঃপুনঃ নিম্নগামী হইয়া স্বাদু এবং তিক্ত ফল ভক্ষণ করিতেছে। সে আবার একটি তিক্ত ফল ভক্ষণ করিয়া ঊর্ধ্বে চাহিয়া দেখিল এবং ঐ পক্ষীটির আরও সমীপবর্তী হইল। এইরূপে যতই সে নিকটে যাইতে লাগিল, ততই অপর পক্ষীটির দেহ-বিচ্ছুরিত আলোকে তাহার উপর পড়িতে লাগিল। উহার নিজের পালকগুলি যেন খসিয়া পড়িতেছে। যখন সে অনেকটা নিকটবর্তী হইয়াছে, তখন সমস্ত দৃশ্যটি পরিবর্তিত হইয়া গেল। নিম্নের পক্ষীটি কোন দিনই ছিল না; যাহা ছিল, তাহা শুধু ঐ ঊর্ধ্বের পক্ষীটি; নিম্নের পক্ষীটি বলিয়া যাহা এতক্ষণ মনে হইয়াছিল, তাহা উহার এক সামান্য প্রতিবিম্ব মাত্র।
আত্মার প্রকৃতি বলিতে ইহাই বুঝায়। এই মানুষের আত্মা পার্থিব ইন্দ্রিয়ভোগ ও অনিত্য বস্তুর পশ্চাতে ছুটাছুটি করিতেছে। পশুর মতো ইহা কেবল ইন্দ্রিয়সুখ, কেবল ক্ষণিক স্নায়ু-উত্তেজনার পশ্চাতে ধাবমান। যখন আঘাত আসে, মুহূর্তের মধ্যে মস্তিষ্ক ঘূর্ণিত হইতে থাকে এবং সমস্ত কিছুই তখন অদৃশ্য হইয়া যায়। তখন পৃথিবীকে সে যেরূপ ভাবিয়াছিল, জীবনটাকে যত সহজ ভাবিয়াছিল, আর সেরূপ দেখিতে পায় না। ঊর্ধ্বে নিরীক্ষণ করিয়া অনন্ত ঈশ্বরকে দেখে, সেই পরম পুরুষের ক্ষণিক অনুভূতি লাভ করে, আরও একটু সমীপবর্তী হয়, কিন্তু অতীত কর্মের দ্বারা আবার নিম্নমূখী হইয়া পড়ে। অপর একটি আঘাত আসিয়া তাহাকে আবার সেই স্থানে প্রেরণ করে। সে আর একবার সেই পূর্ণসত্তার অনুভূতি লাভ করে এবং সমীপবর্তী হয়। এইরূপে সে যতই নিকটে যাইতে থাকে, দেখিতে পায় তাহার ব্যক্তিত্ব—হীন নিকৃষ্ট অত্যন্ত স্বার্থপূর্ণ ব্যক্তিত্ব—ধীরে ধীরে নষ্ট হইয়া যাইতেছে। যে ক্ষুদ্র সত্তাকে সুখী করিতে গিয়া সে পৃথিবীকে ত্যাগ করিতে তৎপর হইয়াছিল, তাহার সেই আকাঙ্ক্ষা ক্রমশঃ লয় পাইতেছে; এবং আরও যতই অগ্রসর হয়, ততই ধীরে ধীরে প্রকৃতি অপসৃত হইতে থাকে। যখন সে যথেষ্ট নিকটবর্তী হয়, তখন সমস্ত দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটে, এবং সে দেখিতে পায় অপর পক্ষীটি—সেই অনন্ত সত্তা, যাহাকে সে এতদিন দূর হইতে দেখিতেছিল, যাহার অপূর্ব মহিমা এবং গৌরবের আভাস সে পাইয়াছিল, তাহা বস্তুতঃ তাহার নিজ আত্মারই, এবং উহা সেই নিত্যবস্তু। যাহা সর্ব বস্তুতে সত্যরূপে অধিষ্ঠিত, যাহা প্রতি অণুতে বিরাজিত ও সর্বত্র প্রকাশিত, যাহা সমস্ত বস্তুর মূল সত্তা, যাহা এই চরাচর বিশ্বের ঈশ্বর, আত্মা তখন তাহাকেই খুঁজিয়া পায়। জানো ‘তত্ত্বমসি’—তুমি সেই; জানো—তুমি মুক্ত।