৭৯তম অধ্যায়
নকুলের কৃষ্ণনির্ভরতা
নকুল কহিলেন, “হে মাধব! ধর্ম্মপরায়ণ অতি বদান্য ধৰ্মরাজ যেসকল বাক্য প্রয়োগ করিয়াছেন, মাহাত্মা ভমিসেন যুধিষ্ঠিরের বাক্যশ্রবণানন্তর যেরূপ সন্ধিস্থাপনের উল্লেখ ও স্বীয় ভুজবীৰ্য্য প্রকাশ করিয়াছেন এবং মহাবীর অর্জ্জুন যাহা যাহা কহিয়াছেন, আপনি তৎসমুদয় শ্রবণ ও তদ্বিষয়ে বারংবার স্বীয় মত প্রকাশ করিলেন; কিন্তু যদি শক্রগণের মত আপনাদের মতের বিপরীত হয়, তবে আপনাদের এইসমুদয় পরিত্যাগপূর্ব্বক পুনরায় কর্ত্তব্য বিষয়ে বিবেচনা করিয়া কাৰ্য্য করিতে হইবে। নিমিত্তের বিভিন্নমতানুসারে মতেরও বিভিন্নতা হইয়া থাকে; অতএব উপস্থিত মতে কাৰ্য্য করাই মনুষ্যের পক্ষে শ্ৰেয়ঃ। কাৰ্য্য এক প্রকার চিন্তা করিলে প্রায়ই অন্য প্রকার হইয়া উঠে।
“লোকের বুদ্ধিবৃত্তির স্থিরতা নাই; দেখুন, আমরা যৎকালে বনে বাস করিতাম, তখন আমাদের এই প্রকার বুদ্ধি ছিল; যখন অজ্ঞাতবাস করিয়াছিলাম, তখন আর এক প্রকার বুদ্ধি হইয়াছিল; এক্ষণে দৃশ্যভাবে রহিয়াছি, বুদ্ধিও অন্য প্রকার হইয়াছে। হে মধুসূদন! এক্ষণে রাজ্যগ্রহণে আমাদের যাদৃশ আস্থা হইয়াছে, বনবাসকালে তাদৃশ ছিল না। হে জনাৰ্দন! আপনার প্ৰসাদে আমরা বনবাস হইতে নিবৃত্ত হইয়াছি, শ্রবণ করিয়া এই সপ্তঅক্ষৌহিণী আমাদের নিকট সমাগত হইয়াছে। এইসকল অচিন্ত্যবলবিক্রম পুরুষগণকে সমরে অস্ত্ৰধারণ করিতে দেখিয়া কাহার মন ব্যথিত না হয়?
“অতএব আপনি কুরুসভায় গমনপূর্ব্বক অগ্ৰে সন্ত্ববাদ, পশ্চাৎ ভয়জনক বাক্য প্রয়োগ করিবেন; এরূপ কথা কহিবেন, যেন দুরাত্মা দুৰ্য্যোধন ক্রুদ্ধ না হয়। হে মহাত্মন! কোন রক্তমাংসধারী পুরুষ যুধিষ্ঠির, ভমিসেন, অর্জ্জুন, সহদেব, বলরাম, সাত্যকি, বিরাট, উত্তর, অমাত্যসমভিব্যাহারে দ্রুপদ, ধৃষ্টদ্যুম্ন, কাশীরাজ ও চেদিরাজ ধৃষ্টকেতুর এবং আপনার ও আমার সহিত সংগ্রাম করিতে সাহস করিবে? অতএব স্পষ্টই বোধ হইতেছে, আপনি কৌরবসভায় গমন করিলেই ধর্ম্মরাজের অভিপ্ৰেত অর্থসাধন করিতে পরিবেন। মহাত্মা বিদুর, ভীষ্ম, দ্রোণ ও বাহ্লীক ইহারা আপনার বাক্যের তাৎপৰ্য্য অবগত হইয়া মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র এবং দুৰ্মতি দুৰ্য্যোধন ও তাহার অমাত্যগণকে বুঝাইবেন। হে জনাৰ্দন! আপনি বক্তা ও বিদুর শ্রোতা হইলে কোন কাৰ্য্য সুসম্পন্ন না হয়?”