অমরলোকেতে হেথা দেব পুরন্দর।
মাতলির মুখে শুনি ধর্ম্মের উত্তর।।
মনেতে মানিয়া সুখ হরিষ বিধানে।
শীঘ্রগতি ডাকিলেন যত দেবগণে।।
ইন্দ্র আহবানে সবে আসে শীঘ্রগতি।
কহিতে লাগিল ইন্দ্র সবাকার প্রতি।।
পরম বান্ধব তুল্য রাজ যুধিষ্ঠির।
বিক্রমে বিশাল যার ভাই পার্থবীর।।
নিঃশঙ্ক করিল দেবে একাকী অর্জ্জুন।
কোটিকল্পে শোধ না হয় তার ঋণ।।
হেন জনে সমাদর করিতে উচিত।
কি যুক্তি সবার, এই মম বিবেচিত।।
গন্ধমাদনেতে আছে ভাই পঞ্চ জন।
চল সবে ধর্ম্মে গিয়া করি দরশন।।
শুনিয়া সম্মত হৈল যত দেবগণ।
মাতলিবে কহে রথ করিতে সাজন।।
পাইয়া ইন্দ্রের আজ্ঞা মাতলি সারথি।
দ্রুতগতি রথস্জ্জা করে মহামতি।।
আহবান করিয়া নিল যতেক অমর।
কৌতুকে বসিল রথোপরি পুরন্দর।।
শীঘ্র করি সারথি সে চালাইল রথ।
মুহূর্ত্তে উত্তরে গন্ধমাদন পর্ব্বত।।
কানননিবাসী যথা পঞ্চ সহোদর।
উপনীত হন তথা দেব পুরন্দর।।
ইন্দ্রে দেখি মহানন্দে উঠি ধর্ম্মপতি।
চরণে ধরিয়া বহু করিলা প্রণতি।।
সহিত আছিল যত আর দেবগণ।
একে একে সবাকারে করেন বন্দন।।
পাদ্য অর্ঘ্য আসনে পূজিয়া বিধিমতে।
করযোড়ে কহিলেন দেব শচীনাথে।।
পূর্ব্ব পিতামহ তপ করিলা দুল্লর্ভ।
সে কারণে আজি মম এতেক বৈভব।।
এখন জানিনু আমি নহি হীনতপা।
তুমি হেন জন আসি যারে কৈলে কৃপা।।
যজ্ঞ জপ তপ আর ব্রত আচরণ।
এ সব করিয়া নাহি পায় দরশন।।
আমার ভাগ্যের আজি নাহিক অবধি।
পাইলাম গৃহে বসি হেন রত্নানিধি।।
এত শুনি কহে তবে দেব পুরন্দর।
কহিলে যে কিছু সত্য, ধর্ম্ম নৃপবর।।
আপনাকে নাহি জান, তুমি স্বয়ং ধর্ম্ম।
পৃথিবী করিল ধন্য তোমার সুকর্ম্ম।।
তুমি রাজা হৈতে ধন্য অবনীমণ্ডল।
অনুগত আর যত অনুজ সকল।।
তোমা সবাকার গুণ করিয়া কীর্ত্তন।
অশেষ পাপেতে মুক্ত হয় পাপিগণ।।
তবে যে কহিলে, কষ্ট পাইলে কাননে।
বিধির বিধান নাহি লঙ্ঘে সাধুজনে।।
ধর্ম্ম অবতার তুমি ধর্ম্ম-আচরণ।
কিন্তু না করিহ রাজা ধর্ম্মেতে হেলন।।
ভীমার্জ্জুন দেখ এই অনুজ তোমার।
অনায়াসে খণ্ডাইবে পৃথিবীর ভার।।
আমা আদি যতেক অমর সমুদয়।
একা পার্থ সবাকারে করিল নির্ভয়।।
শত্রুভয় তুমি কিছু না করিহ মনে।
ভীমার্জ্জুন বধিবেক কর্ণ দুর্য্যোধনে।।
ইত্যাদি অনেক কথা কহি পুরন্দর।
যুধিষ্ঠিরে কহিলেন, মাগ ইষ্টবর।।
ধর্ম্মপুত্র বলে, মম এই নিবেদন।
ধর্ম্মে বিচলিত যেন নহে মম মন।।
শুনিয়া কহেন হাসি সহস্রলোচন।
ধর্ম্মে মতি রহিবে তোমার অনুক্ষণ।।
হেনমতে শান্ত করি রাজা যুধিষ্ঠিরে।
দেবরাজ ইন্দ্র গেল আপনার পুরে।।
মহাভারতের কথা সুধার আকর।
ইহা বিনা পুণ্যকথা নাহি কিছু আর।।