যট্সপ্ততিতম অধ্যায়
দেবযানী-চরিত
জনমেজয় কহিলেন, হে তপোধন! দশম প্রজাপতি যযাতি রাজা আমাদিগের পূর্ব্বপুরুষ। তিনি পরমদুর্লভা শুক্রতনয়া দেবযানীকে কিরূপে লাভ করিলেন, আমি তাহা সবিশেষ শ্রবণ করিতে বাসনা করি। আপনি এই বৃত্তান্ত এবং তাঁহার বংশপরম্পরা কীর্ত্তন করিয়া আমার একান্ত কৌতুকাক্রান্ত চিত্তকে পরিতৃপ্ত করুন।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, দেবরাজসম প্রভাবসম্পন্ন নহুষপুৎত্র যযাতি রাজাকে শুক্র ও বৃষপর্ব্বা যেরূপে বরণ করেন এবং তিনি যে প্রকারে দেবযানীকে লাভ করেন, হে মহারাজ! আমি সেই সমস্ত বৃত্তান্ত কীর্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন। পূর্ব্বে এই সচরাচর বিশ্বরাজ্যলাভার্থে দেবতা ও অসুরদিগের পরস্পর তুমুল সংগ্রাম হইয়াছিল। তৎকালে দেবতারা জিগীষাপরবশ হইয়া বৃহস্পতিকে যজ্ঞানুষ্ঠানে পুরোহিতরূপে বরণ করিয়াছিলেন। অসুরগণ শুক্রাচার্য্যকে তৎকর্ম্মে ব্রতী করিয়াছিলেন। একরূপ কর্ম্মে দীক্ষিত হইয়াছেন বলিয়া বৃহস্পতি ও শুক্রাচার্য্য ইঁহারা প্রতিনিয়ত পরস্পরের প্রতি স্পর্দ্ধা করিতে লাগিলেন। ঐ যুদ্ধে দেবগণ যে-সকল অসুর সংহার করিতেন, শুক্র মৃতসঞ্জীবনী-বিদ্যাবলে তাহাদিগকে পুনরুজ্জীবিত করিতেন। সেই সকল পুনর্জ্জীবিত অসুরেরা উত্থিত হইয়া দেবতাদিগের সহিত সংগ্রাম করিত। কিন্তু অসুরেরা যুদ্ধে যে-সকল দেবতার প্রাণনাশ করিত, সুরাচার্য্য বৃহস্পতি আর তাহাদিগকে পুনর্জ্জীবিত করিতে পারিতেন না; কারণ; মহর্ষি শুক্রাচার্য্য যে বিদ্যাপ্রভাবে দানবগণকে পুনর্জ্জীবিত করিতেন, বৃহস্পতি তদ্বিষয়ে অনভিজ্ঞ ছিলেন।
অনন্তর দেবতারা বিষাদাপন্ন ও শুক্রাচার্য্যের ভয়ে উদ্বিগ্ন হইয়া বৃহস্পতির জ্যেষ্ঠ পুৎত্র কচের নিকট উপস্থিত হইয়া কহিলেন, “হে কচ! আমরা তোমার শরণাপন্ন হইলাম, তোমাকে আমাদিগের এক মহৎ কার্য্য সম্পাদন করিতে হইবে। অমিততেজা শুক্রাচার্য্য যে মৃতসঞ্জীবনীবিদ্যা জানেন, তুমি সত্বর তাহা অপহরণ কর। এই কর্ম্ম করিলে তুমি সর্ব্ববিষয়ে আমাদিগের অংশভাগী হইবে। সম্প্রতি বৃষপর্ব্বার নিকটে তুমি শুক্রাচার্য্যকে দেখিতে পাইবে। তিনি তথায় দানবগণকে সর্ব্বদা রক্ষা করিতেছেন, কিন্তু দেবতাদিগের প্রতি কটাক্ষপাতও করেন না। তুমি অল্পবয়স্ক বালক। তুমিই তাঁহার আরাধনায় সক্ষম হইবে। সেই মহাত্মার দেবযানীনাম্নী এক কন্যা আছেন, তাঁহাকেও আরাধনা করিতে তোমা ভিন্ন অন্য কেহই সমার্থ হইবে না। দয়াদাক্ষিণ্য-সুশীলতাদি গুণে দেবযানীকে সন্তুষ্টা করিতে পারিলে তুমি নিশ্চয়ই সেই সঞ্জীবনীবিদ্যা লাভ করিবে।”
অনন্তর বৃহস্পতি-তনয় কচ ‘তথাস্তু’ বলিয়া বৃষপর্ব্বার সমীপে গমন করিলেন। দেবগণপ্রেরিত কচ দ্রুতগমনে তথায় উপনীত হইয়া অসুরেন্দ্র বৃষপর্ব্বার সমীপে শুক্রকে দেখিয়া কহিলেন, “মহাশয়! আমি মহর্ষি অঙ্গিরার পৌৎত্র, সাক্ষাৎ বৃহস্পতির পুৎত্র, আমার নাম কচ, আপনাকে গুরু স্বীকার করিলাম। আপনি আমার গুরুত্বে বৃত হইলে আমি সহস্র বৎসর ব্রহ্মচর্য্য অনুষ্ঠান করিব, আপনি আমাকে অনুমতি করুন।” শুক্র কহিলেন, “হে কচ! তোমার পিতা বৃহস্পতি অতি পূজনীয়, অতএব আমি তোমার বাক্য অঙ্গীকার করিলাম। এক্ষণে তোমাকে ব্রহ্মচর্য্যব্রতে অধিকারী করি।”
কচের শুক্র-শিষ্যত্ব-গ্রহণ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ কচ ভৃগু-পুৎত্র শুক্রাচার্য্য কর্ত্তৃক আদিষ্ট ব্রহ্মচর্য্যব্রত গ্রহণ করিলেন এবং ব্রতকালের অব্যাঘাতে উপাধ্যায়ের ও তৎপুৎত্রী দেবযানীর আরাধনা করিতে লাগিলেন। তিনি প্রতিদিন নৃত্য, গীত বাদ্য এবং ফলপুষ্পাদি আহরণ দ্বারা অত্যল্প দিবসের মধ্যেই প্রাপ্তযৌবনা দেবযানীর পরিতোষ জন্মাইলেন। দেবযানীও গীত বাদ্যদ্বারা ব্রতধারী কচের পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন। এইরূপ ব্রতাচরণ করিতে করিতে কচের পঞ্চশত বর্ষ অতীত হইল। অনন্তর দানবেরা কচের অভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া উপাধ্যায়ের গোরক্ষণে নিযুক্ত কাননস্থ কচকে বিনাশ করিল এবং তদীয় দেহ খণ্ড খণ্ড করিয়া শৃগাল-কুক্কুরগণকে ভক্ষণ করিতে দিল। তখন গো-সকল গোপশূন্য হইয়া স্ব স্ব নিবেশনে প্রত্যাগত হইল। পরে দেবযানী কচকে না দেখিয়া পিতার নিকট নিবেদন করিলেন, ‘হে পিতা! আপনার অগ্নিহোত্রে আহুতি প্রদান করা হইল, সূর্য্যদেব অস্ত গমন করিলেন এবং গো-সকল গোপশূন্য হইয়া গৃহে আগমন করিল; কিন্তু কচকে প্রত্যাগত দেখিতেছি না, অতএব নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, কচ আহত বা কালগ্রস্থ হইয়াছে। আমি সত্য কহিতেছি, কচ ব্যতিরেকে জীবনধারণ করিতে পারিব না।’ শুক্র কহিলেন, ‘বৎসে! চিন্তা কি? কচ এই মুহূর্ত্তেই আসিবে। আমি মৃত কচকে পুনর্জ্জীবিত করিব।’ এই বলিয়া সঞ্জীবনীবিদ্যা প্রয়োগপূর্ব্বক কচকে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করিতে লাগিলেন। আহূত কচ সঞ্জীবনীবিদ্যাপ্রভাবে পুনর্ব্বার জীবনপ্রাপ্ত হইয়া শৃগাল কুক্কুরগণের দেহ বিদীর্ণ করিয়া হৃষ্টমনে উপাধ্যায়সমীপে উপস্থিত হইলে দেবযানী কহিলেন, ‘কচ! তোমার আসিতে এত বিলম্ব হইল কেন?’ কচ উত্তর করিলেন, ‘হে ভাবিনি! আমি সমিৎ, কুশ এবং কাষ্ঠভার দ্বারা আক্রান্ত ও একান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া গোগণের সহিত বিশ্রামার্থ এক বটবৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় লইয়াছিলাম। ইত্যবসরে অসুরগণ তথায় আসিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিল, ‘তুমি কে?’ আমি কহিলাম, ‘আমি বৃহস্পতির পুৎত্র, আমার নাম কচ।’ এই কথা কহিবামাত্র তাহারা আমাকে বধ করিয়া তদ্দণ্ডে আমার শরীর খণ্ড খণ্ড করিয়া শৃগাল-কুক্কুরগণকে ভক্ষণার্থ প্রদানপূর্ব্বক পরমসুখে স্ব স্ব গৃহে প্রতিনিবৃত্ত হইল। এক্ষণে মহাত্মা ভার্গবের বিদ্যাবলে পুনর্ব্বার জীবন পাইয়া তোমার নিকট উপস্থিত হইলাম।’
অনন্তর একদা দেবযানী পুষ্পচয়নার্থ কচকে অরণ্যে প্রেরণ করিলেন। দানবেরা কাননস্থ কচের শরীর চূর্ণ করিয়া সমুদ্রজলে মিশ্রিত করিয়া দিল। এদিকে দেবযানী কচের বিলম্ব দেখিয়া পিতার নিকট নিবেদন করিলেন। তখন শুক্র বিদ্যাপ্রভাবে কচকে আহ্বান করিলে কচ পুনর্ব্বার আসিয়া গুরুসন্নিধানে সমস্ত বৃত্তান্ত নিবেদন করিলেন। তৃতীয়বার অসুরেরা কচকে বিনষ্ট ও ভষ্মাবশিষ্ট করিয়া শুক্রাচার্য্যের সুরার সহিত মিশ্রিত করিয়া দিল। তখন দেবযানী পুনর্ব্বার পিতাকে নিবেদন করিলেন, ‘হে পিতাঃ! আমি পুষ্পাহরণার্থ কচকে প্রেরণ করিয়াছিলাম, কিন্তু এখনও তাহাকে প্রত্যাগত দেখিতেছি না। বোধ হয়, সে আহত বা মৃত হইয়া থাকিবে। হে পিতাঃ! আমি নিশ্চয় কহিতেছি, কচ ব্যতীত জীবনধারণ করিতে পারিব না।’ শুক্রাচার্য্য কহিলেন, ]হে পুৎত্রি! বৃহস্পতির পুৎত্র কচ নিশ্চয়ই মৃত হইয়াছে। আমি সঞ্জীবনীবিদ্যা প্রভাবে বারংবার তাহার জীবন রক্ষা করিতেছি; কি করি, অসুরেরা তথাপি তদ্বিনাশে বিরত হইতেছে না; অতএব হে দেবযানি! তুমি শোক বা রোদন করিও না। তোমার সদৃশ্মী মহিলারা সামান্য মর্ত্ত্যলোকের নিমিত্ত শোকমোহে অভিভূত হয় না। দেখ, ব্রহ্মা, ব্রাহ্মণগণ, ইন্দ্রাদি দেবগণ, অষ্টবসু, যমজ অশ্বিনীকুমার, অসুরগণ এবং সমস্ত জগৎ তোমাকে মহাপ্রভাব শালিনী জানিয়া নমস্কার করেন। কচের জীবন রক্ষা করা বৃথা বোধ হইতেছে, যেহেতু, অসুরেরা সুযোগ পাইলেই পুনর্ব্বার তাহার প্রাণসংহার করিবে।’ দেবযানী কহিলেন, “বৃদ্ধতম মহর্ষি অঙ্গিরাঃ যাঁহার পিতামহ, তপোনিধি বৃহস্পতি যাঁহার পিতা,তাঁহার নিমিত্ত কেনই বা রোদন ও শোক করিব না? কচ নিজেও সামান্য লোক নহেন। তিনি ব্রহ্মচারী, তপোধন ও সর্ব্বকার্য্যে সুনিপুণ। হে তাত! আমি নিরাহারে প্রাণত্যাগ করিয়া কচের অনুগামিনী হইব। কচ আমার নিতান্ত প্রিয়পাত্র। আমি তাঁহাকে না দেখিয়া ক্ষণমাত্রও জীবনধারণ করিতে পারিব না।”
মহর্ষি শুক্র দেবযানী কর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া কচকে আহ্বান করিয়া ক্রোধভরে কহিলেন, “নিশ্চয়ই অসুরেরা আমার প্রতি বিদ্বেষাপন্ন হইয়াছে এবং এই নিমিত্তই বারংবার আমার শিষ্যের প্রাণনাশ করিতেছে। দুর্দ্দান্ত দানবেরা এই পৃথিবীকে ব্রাহ্মণশূন্য করিবার অভিলাষে আমার প্রতি এইরূপ অত্যাচার করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। ভাল, আমি এক্ষণেই তাহাদিগের এই পাপের দণ্ডবিধান করিতেছি। ব্রহ্মহত্যাকৃত পাপ ইন্দ্রকেও দগ্ধ করিতে পারে।” এই বলিয়া কচকে বিদ্যাবলে আহ্বান করিতে লাগিলেন। সমাহূত কচ গুরুর ভয়ে ভীত হইয়া জঠর হইতে অল্পে অল্পে উত্তর দিলেন। শুক্রাচার্য্য নিজ জঠর হইতে তাঁহার কথা শুনিতে পাইয়া কহিলেন, “কচ! তুমি কি প্রকারে আমার উদরে প্রবিষ্ট হইয়াছ?” কচ কহিলেন, “আপনার প্রসাদে বলবতী স্মরণশক্তি আমাকে পরিত্যাগ করে নাই, এই নিমিত্ত আমার যথাবৎ বৃত্তান্ত স্মরণ হইতেছে। আর আমার তপস্যা কিছুমাত্র ক্ষয় হয় নাই, এই নিমিত্ত এই দারুণ ক্লেশ সহ্য করিতে সমর্থ হইয়াছি। অসুরেরা আমাকে দগ্ধ ও চূর্ণ করিয়া আপনার সুরার সহিত মিশ্রিত করিয়া দিয়াছিল। আপনি বিদ্যমান থাকিতে আসুরী মায়া কখনই ব্রাহ্মী মায়াকে অতিক্রম করিতে পারিবে না।” শুক্র কহিলেন, “বৎসে দেবযানী! অদ্য কিরূপে তোমার প্রিয়কার্য্য সম্পাদনা করিব? আমি প্রাণ পরিত্যাগ না করিলে কচের প্রাণরক্ষা হয় না। কচ আমার উদরের অভ্যন্তরে অবস্থিতি করিতেছে; সুতরাং কুক্ষি-বিদারণ ব্যতিরেকে কচ কিরূপে নির্গত হইবে?” দেবযানী কহিলেন, “তাত! কচের বিনাশ ও আপনার উপঘাত (অপমৃত্যু) এক্ষণে এই উভয়ই আমার পক্ষে সাক্ষাৎ অগ্নিকল্প বোধ হইতেছে। কচের বিনাশ হইলে আমার জীবন নষ্ট হইবে এবং আপনার বিয়োগে কিরূপেই বা প্রাণধারণ করিব?” তখন শুক্র উদরস্থ কচকে কহিলেন, “হে বৃহস্পতি-পুৎত্র কচ! যেহেতু, দেবযানী তোমাকে ভক্ত বলিয়া আদর করেন, অতএব বোধ হয়, তুমি কোন সিদ্ধপুরুষ অথবা কচরূপী ইন্দ্র হইবে। যাহা হউক, অদ্য তোমাকে এই সঞ্জীবনীবিদ্যা প্রদান করিব। ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্য কেহ পুনর্জ্জীবিত হইয়া আমার উদর হইতে বহির্গত হইতে পারে না, অতএব অঙ্গীকার করিতেছি, তোমাকে বিদ্যা দান করিব, কিন্তু বৎস! তুমি পুৎত্ররূপে আমার দেহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া পুনর্ব্বার বিদ্যাবলে আমাকে জীবিত করিবে। দেখিও, এই ধর্ম্ম-প্রতিপালনে যেন পরাঙ্মুখ হইও না।”
কচের সঞ্জীবনীবিদ্যা লাভ
অনন্তর কচ শুক্রসন্নিধানে সঞ্জীবনীবিদ্যা-প্রাপ্তিপূর্ব্বক কুক্ষিভেদ করিয়া পূর্ণিমা-শশাঙ্কের ন্যায় তৎক্ষণাৎ নিষ্ক্রান্ত হইলেন। নিষ্ক্রান্ত হইয়া দেখিলেন, মৃত শুক্রাচার্য্য ভূতলে পতিত আছেন। কচ অবিলম্বে সিদ্ধবিদ্যা দ্বারা তাঁহাকে জীবিত করিয়া অভিবাদনপূর্ব্বক কহিলেন, “ভগবন! যিনি কর্ণে অমৃত-নিষেকস্বরূপ মন্ত্র প্রদান করেন, আমি তাঁহাকে পিতামাতা স্বরূপ স্বীকার করি; কোন্ ব্যক্তি এমত মূঢ় যে, তাদৃশ হিতৈষী লোকের অনিষ্ট-চেষ্টা করিবে? সত্যফলপ্রদ নিধির নিধিস্বরূপ ও পরম-পূজনীয় গুরুদেবকে যে ব্যক্তি আদর না করে, সেই পাপিষ্ঠ ইহলোকে অপ্রতিষ্ঠিত হইয়া পরলোকে নিরয়গামী হয়।” মহানুভব শুক্র সুরাপান-জনিত অজ্ঞানতাপ্রযুক্ত অভিরূপ১ কচকে সুরাসহকারে উদারস্থ করিয়াছিলেন, এই বলিয়া সুরার প্রতি জাতক্রোধ হইলেন। তিনি বিপ্রগণের প্রিয়সম্পাদনার্থ কহিলেন, “অদ্যাবধি যে মূঢ়মতি ব্রাহ্মণ ভ্রান্তিক্রমেও মদ্যপান করিবে, সে অধার্ম্মিক ও ব্রহ্মহা২ হইয়া ইহকাল ও পরকালে ঘৃণিত ও নিন্দিত হইবে। আমি বিপ্রধর্ম্মের এই সীমা৩ সংস্থাপন করিলাম। গুরুশুশ্রূষা-পরায়ণ ব্রাহ্মণগণ ও অন্যান্য লোক ইহা শ্রবণ করুন।” তপোনিধি এই বলিয়া মূঢ়বুদ্ধি দানবদিগকে আহ্বান করিয়া এই কথা কহিলেন, “অরে নির্ব্বোধ দানবগণ! আমার তুল্য প্রভাবশালী মহাত্মা কচ সঞ্জীবনীবিদ্যা-প্রভাবে ব্রহ্মভূত হইয়া আমার নিকট বাস করিবেন।” এই কথা কহিয়া তিনি বিরত হইলেন। তৎপরে দানবেরা বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া স্ব স্ব নিকেতনে গমন করিল। কচ সহস্র বৎসর গুরুগৃহে বাস করিয়া পরিশেষে তাঁহার অনুমতি লইয়া দেবলোকে প্রস্থান করিলেন।