তবে দ্রোণাচার্য্য সব রাজপুত্র লৈয়া।
কহিতে লাগিল সবে একান্তে বসিয়া।।
অস্ত্রবিদ্যা সবারে করাব অধ্যয়ন।
শিক্ষা করি মম বাক্য করিবা পালন।।
আমার যে বাঞ্ছা বলি শুন সব শিষ্য।
সত্য কর, তোমরা তা করিবে অবশ্য।।
দ্রোণের বচন শুনি যত শিষ্যগণ।
নিঃশব্দ হইল সবে, না কহে বচন।।
অর্জ্জুন বলেন, করি সত্য অঙ্গীকার।
করিব পালন, হয় যে আজ্ঞা তোমার।।
অর্জ্জুন-বচনে দ্রোণ হরিষ- অন্তর।
আলিঙ্গিয়া চুম্ব দিল মস্তক-উপর।।
একান্তে বলেন দ্রোণ করি অঙ্গীকার।
শিষ্য না করিব কারো সদৃশ তোমার।।
তবে দ্রোণাচার্য্য লৈয়া যত শিষ্যগণ।
সর্ব্বদা করান নানা অস্ত্র-অধ্যয়ণ।।
অস্ত্রশিক্ষা করে কুরু-পাণ্ডব-কুমার।
রাজ্যে রাজ্যে গেল দ্রোণ-গুরু সমাচার।।
যত রাজপুত্রগণ শিক্ষার কারণ।
হস্তিনানগরে সবে করিল গমন।।
বৃষিবংশ-যদুবংশ-তনু ভোজ আদি।
আর যত রাজগণ সাগর অবধি।।
কর্ণ মহাবীর অধিরথের নন্দন।
সদা দুর্য্যোধনের সে অনুগত জন।।
সেও অস্ত্র দ্রোণ-স্থানে করে অধ্যয়ন।
হেন মতে বহুশিষ্য হইল ঘটন।।
শিক্ষা হেতু শিষ্যগণ থাকে নিরন্তর।
নিজ পুত্রে পড়াইতে নাহি অবসর।।
সবারে কহেন দ্রোণ কপট করিয়া।
গঙ্গাজল আনন কমণ্ডলুতে করিয়া।
কমণ্ডলু লয়ে যত রাজপুত্রগণ।
জল আনিবারে সবে করিল গমন।।
একান্তে পাইয়া দ্রোণ পুত্রে শিক্ষা দেন।
গুরুর এ কৌশল বুঝিলেন অর্জ্জুন।।
বরুণ নামেতে অস্ত্র ধনুকে জুড়িয়া।
কমণ্ডলু লৈয়া দিল জলেতে পূরিয়া।।
জল আনিবারে যায় সব শিষ্যগণ।
অশ্বত্থামা অর্জ্জুন করেন অধ্যয়ণ।।
অহর্নিশি পার্থের নাহিক অবসর।
নাহি নিদ্রা শ্রম সদা হাতে ধনুঃশর।।
নিরবধি গুরুপদে করেন সেবন।
কৃতাঞ্জলি, সদা স্তুতি, বিনয় বচন।।
পার্থের সৌজন্য দেখি দ্রোণ বড় প্রীত।
বহুবিদ্যা অর্জ্জুনে দিলেন অপ্রমিত।।
আদিপর্ব্ব ভারত বিচিত্র উপাখ্যান।
কাশীরাম কহে সাধু সদা করে পান।।