৭০তম অধ্যায়
পরশুরামকর্ত্তৃক ক্ষত্রিয়কুল-ধ্বংস কথা
নারদ কহিলেন, হে সৃঞ্জয়! বীরবর্গ পরিপূজিত মহাবল পরাক্রান্ত, যশস্বী মহাতপা পরশুরামও অতৃপ্ত হইয়া মৃত্যু মুখে নিপতিত হইবেন। তিনি এই পৃথিবীকে সুখময় ও উৎকৃষ্ট শ্রীলাভ করিয়াও কিছুমাত্র বিকৃত হন নাই। তাঁহার উৎকৃষ্ট চরিত্র চিরকালই অপরিবর্ত্তিত রহিয়াছে। ক্ষত্রিয়গণ তাঁহার পিতাকে পরাভব ও বৎসহরণ করিলে তিনি কাহারও পরামর্শ গ্রহণ না করিয়াই নিতান্ত দুর্জ্জয় মহাবীৰ্য্য কাৰ্ত্তবীৰ্য্যকে সংহার করেন। তিনি স্বীয় শরাসন প্রভাবে একাদিক্রমে চতুঃষষ্টি অযুত, কালগ্রস্ত ক্ষত্রিয় বিনাশ করিয়া পুনরায় অন্য চতুর্দ্দশ সহস্র ব্রাহ্মণদ্বেষী ক্ষত্রিয়গণকে আক্রমণ ও সংহার করিয়াছিলেন। ঐ মহাবীর মুষল দ্বারা সহস্র, অসি দ্বারা সহস্র ও উদ্বন্ধনে সহস্র হৈহয়কে সমরে বিনাশ করেন। ঐ সংগ্রামে পিতৃবধ জনিত ক্রোধে প্রদীপ্ত জামদগ্ন্য কর্ত্তৃক অসংখ্য রথ ভগ্ন এবং অশ্ব গজ ও বীরগণ বিনষ্ট হইয়া ভূতলশায়ী হইয়াছিল। তৎকালে জামদগ্ন্য পরশু দ্বারা দশ সহস্র বীরকে সমরে বিনাশ করিয়াছিলেন। হে রাম! মহর্ষি ভৃগুর প্রতি ধাবমান হও, ব্রাহ্মণগণ এই কথা বলিবামাত্র তিনি একান্ত ক্রোধ সন্তপ্ত হইয়া কাশ্মীর, দরদ, কুন্তি, ক্ষুদ্রক, মালব, অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, তাম্রলিপ্ত, বিদেহ, রক্ষোবহ, বীতহোত্র, ত্রিগৰ্ত্ত, মাৰ্তিকাবত, শিবি ও অন্যান্য নানা দেশ-সম্ভুত সহস্র সহস্র ভূপতিগণকে শরনিকরে বিনাশ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। এইরূপে তাঁহার হস্তে শত সহস্র কোটি ক্ষত্রিয় বিনষ্ট হয়।
অনন্তর জামদগ্ন্য ইন্দ্রগোপ-সবর্ণ, বন্ধুজীবসন্নিভ রুধিরপ্রবাহে সরোবর সকল পরিপূর্ণ ও অষ্টাদশ দ্বীপ আপনার বশীভূত করিয়া প্রভূত দক্ষিণদান সহকারে শত শত যজ্ঞানুষ্ঠান করেন। মহর্ষি কশ্যপ জামদগ্ন্যের নিকট অষ্টনল পরিমাণে সমুন্নত, বিধানানুসারে সর্ব্বরত্নে পরিপূর্ণ, পতাকা শত পরিশোভিত, সুবর্ণময় বেদী এবং গ্রাম্য ও আরণ্যক পশুগণে পরিপূরিত এই অখণ্ড ভূমণ্ডল প্রতিগ্ৰহ করিয়াছিলেন। মহাবীর পরশুরাম অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান পূর্ব্বক এই পৃথিবী দস্যুশূন্য ও শিষ্ট জন সঙ্কুল করিয়া মহর্ষি কশ্যপকে প্রদান করেন। ঐ যজ্ঞে মহর্ষি কশ্যপকে সুবর্ণালঙ্কৃার বিভূষিত শত সহস্র মাতঙ্গও প্রদত্ত হইয়াছিল।
হে শ্বিত্যনন্দন! মহাবীর পরশুরাম এক বিংশতিবার এই পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয়া করিয়া শত শত যাগ যজ্ঞানুষ্ঠান পূর্ব্বক সমুদায় ভূমণ্ডল বিপ্ৰসাৎ করেন। মহাতপা কশ্যপ রামের নিকট এই সপ্তদ্বীপা পৃথিবী প্রতিগ্ৰহ করিয়া কহিলেন, হে রাম! তুমি আমার আদেশানুসারে এই পৃথিবী হইতে নির্গত হও।’ তখন মহাবীর রাম ব্রাহ্মণের আজ্ঞা শিরোধার্য্য করিয়া শর নিক্ষেপপূর্ব্বক রত্নাকরকে উৎসারিত করত মহেন্দ্ৰ পর্ব্বতে বাস করিতে লাগিলেন। হে সৃঞ্জয়! তোমা অপেক্ষা সমধিক সত্য, তপ, দয়াও দান সম্পন্ন, তোমার পুত্র অপেক্ষা সমধিক পুণ্যবান্ ভৃগুকুল-কীৰ্ত্তিবর্দ্ধন মহা যশস্বী রামও মৃত্যুমুখে নিপতিত হইবেন; অতএব তুমি সেই অধ্যয়নাদিশূন্য অযাজ্ঞিক পুত্রের নিমিত্ত আর অনুতাপ করিও না। হে মহারাজ! এই সমস্ত অসংখ্য গুণসম্পন্ন ভূপালগণ মৃত্যুগ্রস্ত হইয়াছেন এবং আরও কত শত রাজা কালকবলে নিপতিত হইবেন।