০৬.
শোবার ঘরের দরজায় কান পেতে দাঁড়িয়ে রইলো বারলো। ঘড়ির দিকে তাকালেন। রাত সাড়ে নটা। রবিবার। মেগ নীচের তলায় বসে টেলিভিশন দেখছে। এতক্ষণ ছিলেন নীচে। শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে চলে এসেছেন। মেগ নিস্পৃহভাবে একবার ঘাড় তুলে তাকিয়ে আবার টেলিভিশনের দিকে মন দিয়েছে।
যাক ভালোই হল। টেলিভিশন দেখুক না দেখুক ভারি বয়ে গেলো। আসলে ও নীচের তলায় রয়েছে এটাই শান্তি । এখন বেশ নিশ্চিন্ত মনে কাজ করা যাবে।
বারলো দেয়াল আলমারী খুললেন। স্নানের সাদা টুপি,রবারের দুটো গোলক, এবং রিভলভারটি নিয়ে পকেটে পুরলেন। ঠোঁটের কোণে তার ক্রুর হাসি ফুটে উঠল। আলমারির ডালা বন্ধ করে তিনি চাবি আটকালেন।
বারলো চোরের মতো চুপিচুপি ঘরের বাইরে এলেন। দরজার গায়ে তালা আটকালেন। তারপর নিঃশব্দে মৃদু পদ-সঞ্চারে ধাপে ধাপে চোরের মত চুপিচুপি ঘরের বাইরে এলেন নিঃশব্দে মৃদু পদ-সঞ্চারে ধাপে ধাপে সিঁড়ি বেয়ে নামলেন। বসবার ঘরের দরজায় কান পাতলেন। সেই পপ গায়কটা এখনও সরু গলায় ইনিয়ে-বিনিয়ে চলেছে। তিনি ধীরে ধীরে নিশ্চিন্ত মনে বাড়ির বাইরে এলেন।
বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। বারলো গাড়ি নিলেন না। গাড়ির শব্দ শুনলে মেগ হয়তো বুঝতে পারবে। বরং এই ভালো, ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডায় হেঁটে গ্লিন হিলে পৌঁছতে তার কতটুকু সময়ই বা লাগবে। আজ আর জেসনস্ গ্লেন নয়, আজ গ্লিন হিল…পাহাড়ের আড়ালে ছোট্ট এক ফালি উপত্যকা। তরুণ-তরুণীদের আর এক রমণীয় লীলাক্ষেত্র, আঃ দারুণ হবে।
বারলো অন্ধকারে গা মিশিয়ে এগিয়ে চললেন। প্রায় চল্লিশ মিনিট একনাগাড়ে হেঁটে পাহাড়ের পাদদেশে এসে পৌঁছলো। তারপর সামনের চড়াইটা পেরিয়ে এসে দাঁড়ালেন ঘন গাছপালা ঝোঁপঝাড় ঘেরা সুন্দর উপত্যকাটিতে।
.
আজ সোমবার। অ্যানসন সকাল থেকেই প্রু টাউনে যাবার তোড়জোড় করছে। দুপুর নাগাদ ফোন এলো।
অ্যানা ফোন তুলল, কাকে চাই? হ্যাঁ উনি এখানেই আছেন ওনাকে দিচ্ছি। অ্যানসনের দিকে তাকালো আনা, আপনার ফোম, মিসেস টমসন না কি যেন একটা নাম বললেন।
অ্যানসন এগিয়ে এসে রিসিভার তুললো বলুন।
জন আমি মেগ বলছি।
আনসন চমকে উঠল, মেগ! ভয়ার্ত চোখে অ্যানার দিকে তাকাল, অ্যানা মাথা নীচু করে মেসিনে কাগজ পরাচ্ছে। দেখো কাণ্ড। সেদিন বারণ করা সত্বেও আফিসেই আবার ফোন। রিসিভারটা শক্ত হাতে চের্গে ধরলো অ্যানসন কানের সঙ্গে, হ্যাঁ বলুন বুঝেছি, আপনার জন্য কি করতে পারি মিসেস টমসন।
আজ রাতে অতি অবশ্য একবার বাড়িতে এসো ভীষণ দরকার।
আচ্ছা যাবো খন, আচ্ছা ছাড়ছিধন্যবাদ, অ্যানসন ফোন নামিয়ে রাখলেন।
টেবিলে ফিরে কাগজপত্র গুছিয়ে তৈরী হল সে। আনাকে বলল যে রাতে ফেরা আর সম্ভব হবে না। সে পরদিন সকালে ফিরবে।
অ্যানসন অ্যাটাচিটা নিয়ে অফিস থেকে বেরোল। গাড়িতে বসে ইঞ্জিন চালু করলো। গাড়ি ছুটে চললো চওড়া রাস্তা ধরে।
মার্লবোরো হোটেলে খেতে ঢোকার আগে কয়েকটা টুকিটাকি জিনিষ কেনার জন্য রাস্তার পাশের এক দোকানের সামনে অ্যানসন গাড়ি থামাল। কেনাকাটা হয়ে গেলে দাম মেটানোর সময় কে যেন পেছন থেকে তার নাম ধরে ডাকল।
অ্যানসন ফিরে তাকাল। ললির সঙ্গে চোখাচুখি হল। তার চোয়াল শক্ত হল। মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট হল।
এই সেই ললি। আমি একদিন এর প্রেমেই হাবুডুবু খেতাম। ওঃ দিনের আলোয় কি বিশ্রীই না দেখাচ্ছে।
ও অসহ্য। কাউন্টারে দাম মিটিয়ে জিনিষের ছোট প্যাকেট সে পকেটে পুরলো। তারপর পেছন ফিরে বলল ললি কি খবর কেমন আছো?
ভালো, তুমি কেমন?
ঐ একরকম। আচ্ছা চলি, আমার একটু তাড়া আছে বলে আনসন পা বাড়ালো।
বাড়িতে থাকবে তো? আজ রাতে যাবো নাকি?
না আজ থাকছি না। কদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। ফিরে এসে তোমাকে ফোন করব। চলি।
ললি এগিয়ে এসেঅ্যামের হাত চেপে ধরলো, তোমার কি হয়েছে জন আমাকে দেখলেই এড়িয়ে যাও কি ব্যাপার? অথচ আগে সপ্তাহে একবার আমাকে না পেলে…
হা পাগল হয়ে যেতাম এই তো? অ্যানসন হাত ছাড়িয়ে বলল, আজকাল কাজের চাপ বড় ললি। তাই দেখা সাক্ষাৎ করার আর সময় হয় না।
সে আর দাঁড়ালো না। ললির ছোঁয়া বাঁচিয়ে পাশ কাটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠল। তারপর ইঞ্জিন চালু করে গাড়ি ছাড়লো।
মার্লবোরা হোটেলের সামনে গাড়ি…।
সে সোজা গিয়ে ঢুকলো রেস্তোরাঁয়। হ্যারী ডেভিস তাকে দেখে হাত তুললো। সে এগিয়ে গিয়ে হ্যারীর টেবিলে ওয়েটারকে খাবারের অর্ডার দিলো।
ছোটখাটো চেহারার মধ্যবয়সী এই হ্যারী ডেভিস বেশ আমুদে প্রকৃতির লোক। কোন এক তেল কোম্পানীর সে সেলম্যান। পথেঘাটে তার সঙ্গে অ্যানসনের প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। দেখা হলেই এটা-ওটা নিয়ে বেশ জমজমাট গল্প ফেঁদে বসে। সময় যে কোথা দিয়ে চলে যায় কেউ বুঝতেও পারে না।
হ্যারী আজও যথারীতি গল্প করতে থাকলো। উত্তরে অ্যানসন শুধু হু হু করলো। তার এখন গল্পে মন নেই। মেগ-এর ফোনের কথাগুলো এখনও তার মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। হ্যারীর সঙ্গে আজ দেখা না হলেই মনে হয় ভাল হত।
খাবার এল। অ্যানসন মাথা নীচু করে খেতে লাগল। মুরগীর মাংসের একটা বড় টুকরো মুখে পুরে বলল দিনকাল বড় খারাপ হে অ্যানসন। এতদিন-এ শহরটা নির্ঞ্ঝার্ট ছিল এখন দেখছি এখানেও নিশ্চিন্তে থাকা যাবে না।
অ্যানসন মুখ তুলে বললো কেন কি হলো?
কি হলো মানে? কি হলোনা তাই বল। দশ দিনের মধ্যে দু-দুটো খুন। পুলিস বিভাগের একটা বড়রকম রদবদল হওয়া দরকার। দিনের পর দিন খুন খারাপ বেড়ে যাবেঅথচ পুলিসনাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে, এটা তো আর বরদাস্ত করা যায় না।
কে আবার খুন হল?
দেখো কাণ্ড! তুমি কি কাগজ-টাগজ পড়াও আজকাল ছেড়ে দিলে নাকি? আজ সকালের কাগজ পড়নি?
তাহলে আর কোথা থেকে জানবে। কাল রাতে গিন হিলে এক ছোকরা গুলি খেয়ে মরেছে। বান্ধবীকে নিয়ে সে বেড়াতে গিয়েছিল সেখানে। গাড়িতেই বসেছিল। এমন সময় গাড়ির খোলা দরজা পথে হঠাৎ করে আততায়ী এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে গুলি করে ছেলেটিকে মেরে ফেলে। তারপর মেয়েটাকে টেনে নামিয়ে ধর্ষণ করে। ওঃ মেয়েটাকে যা অত্যাচার করেছেনা, বেচারীকে হাসপাতালে দিতে হয়েছে। ছেলেটাকে আমি চিনতাম জানো।
ওদের তিন বছরের প্রেম, আর কদিন বাদেই ওরা বিয়ে করতো। পুলিস যথারীতি একটা সূত্রও আবিস্কার করতে পারেনি। আততায়ীর চেহারার একটা বর্ণনা অবশ্য তারা মেয়েটির কাছ থেকে পেয়েছে। আমার মনে হয় পেট্রোল পাম্পের সেই খুন এবং এই খুন এ দুটো একই লোকের কাজ। পুলিসের বড়কর্তা জেনসন তো একেবারে আদা জল খেয়ে লেগেছেন এ দুটো রহস্যের কিনারা করার জন্য।
অ্যানসন আড়চোখে হ্যারীর দিকে তাকিয়ে বলল পেট্রল পাম্পের সেই খুনেটার তো কোন পাত্তা পাওয়া যায়নি এখনো তাই না?
হ্যারী বলল না এখনও কিছু করা যায়নি। কেউ কেউ বলছে দুজন খুনী আলাদা লোক। আবার কেউ কেউ বলছে ওরা একই লোক। আমি নিজেও বড় ভাবনায় পড়েছি ভাই। ব্যাপারটা কি জানো, হ্যারীশূন্য চোখে কড়িকাঠের দিকে তাকাল, আসল ব্যাপার হল আমারও বাড়িতে উঠতি বয়েসের মেয়ে, কপালে তার কি আছে ভগবান জানেন। এই বিকৃত কাম পুরুষ গুলোর এক অদ্ভুত মনস্তত্ব। একজনকে ধর্ষণ করে এদের চাহিদা মেটে না। এদের দরকার হয় নিত্য নিত্য নতুন খোরাক।
— হু, তা তো ঠিকই বলে অ্যানসন উঠে দাঁড়াল তারপর বিল মিটিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে এলো। হ্যারীর দুশ্চিন্তার কারণ থাকতে পারে, বাড়িতে তার উঠতি বয়েসের মেয়ে কিন্তু অ্যানসনের ওসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই, তার মনে এখন অন্য চিন্তা, এক মাত্র চিন্তা মেগের সেই টেলিফোন বার্তা আজ রাতে অবশ্য একবার এসো, ভীষণ দরকার। তা সেই ভীষণ দরকারটা কি?
ওঃ আমায় কি ভীষণ ভাবনায় না ফেলেছিলে মেগ দরজা খুলতে অ্যানসন বলল, আমি তো ভেবে ভেবে অস্থির। তা সেই ভীষণ দরকারটা কি?
বলছি, আগে ভেতরে এসো।
দুজনে বসবার ঘরে এলো! সোফায় বসলো পাশাপাশি।
এবার বলো কি সংবাদ?
জন, মেগ অসহিষ্ণু চোখে অ্যানসনের দিকে তাকাল, আমাদের এতো ভাবনা চিন্তা পরিশ্রম সব বোধহয় নিরর্থক হতে চললো। আমরা শিগগিরই এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
সেকি চলে যাবে কেন?
যেতে হবে তাই যাবো। কাল রাতেই ফিল আমাকে কথাটা বললো। আমরা এ বাড়ি ছেড়ে ফ্লোরিডায় গিয়ে উঠব।
অ্যানসন অধৈর্য হয়ে বললো ফ্লোরিডা, তুমি একি বলছো মেগ?
যা সত্যি তাই বলছি। মেগ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো হাডসন না কে যেন একজন তার নাকি ফ্লোরিডায় বিরাট ফুলের বাগান পরশু না কবে সে ফ্রামলের দোকানে এসেছিল। সেখানেই তার ফিল-এর সঙ্গে আলাপ ফিলকে পার্টনার করে বিরাট এক ব্যবসা কাঁদতে সে নাকি খুব ইচ্ছুক। ফিলের টাকা পয়সা কিছুই লাগবেনা। ওতো উত্তেজনায় একেবারে ছটপট করতে শুরু করেছে। এমন সুযোগ নাকি লাখে একটা মেলে না। ব্যবসায় ব্যবসা হবে, অথচ ঝুঁকি কিছু নেই। তাই আমরা চলে যাবো।
কবে?
এ মাসের শেষাশেষি। ফ্রামলের দোকানেও ইতিমধ্যেই চাকরি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ আর একটা কথা আমাকে ফিল বলছিল যে ইনসিওরটা নাকি ও বাতিল করে দেবে। যখন ব্যবসার জন্য আর টাকাই লাগছে না তখন অনর্থক আর বোঝা টেনে লাভ কি?
ওর সঙ্গে তুমিও যাবে তাই না?
মেগ ম্লান হেসে বললো, যাবো নাতে কি করবো, তোমাকে পেয়ে আমার সব চিন্তা ঘুচে গিয়েছিলো জন, কিন্তু না, দেখছি আমার কপালটাই খারাপ, যাহা চাই তা ভুল করে চাই।
অ্যানসন দু-হাতে তাকে বুকে টেনে নিলো। তপ্ত চুম্বন এঁকে দিলো তার ভেজা দুই চোখের পাতায়। না না মেগ তাকে ছেড়ে ফ্লোরিডায় চলে যাবে এ অসম্ভব, ভাবাই যায় না। যে কোন উপায়ে তাকে রাখতেই হবে। তাছাড়া তারা চলে যাবার সাথে সাথে পঞ্চাশ হাজার ডলারের আশাও নিশ্চিহ্ন হবে। না ওদের যাওয়া বন্ধ করতেই হবে। যে কোনও মূল্যে।
মেগ ধীরে ধীরে আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল। অস্থির ভাবে পায়চারি করে বেড়াতে লাগলো ঘরের এদিক থেকে ওদিক। তার চোখের দৃষ্টিতে চাঞ্চল্য, মুখে দৃঢ় সঙ্কল্পের ছাপ।
হঠাৎ থমকে দাঁড়াল মেগ, তাহলেই দেখো বিনা কারণে আমি তোমাকে ফোন করিনি।
কি করবো কিছুই ভেবে ঠিক করতে পারছিলামনা। আচ্ছা জন এখানে থাকতে থাকতেই ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় না। দেখো না। একটু ভেবে চিন্তে এ মাসের শেষাশেষি যদি কিছু একটা করা যায়।
দাঁড়াও দাঁড়াও। আমাকে ভাবতে দাও। আচ্ছা-এ মাস শেষ হতে এখনও কতদিন বাকি আছে?
আঠারো দিন।
অ্যানসন ঘাড় নাড়লো তাহলে অসম্ভব, একেবারেই অসম্ভব। মাত্র এই কটা দিনে কিছু করার উপায় নেই। ম্যাডক্স।
সবসময় শুধু ম্যাডক্স ম্যাডক্স! আচ্ছা ম্যাডক্স ছাড়া তোমার কি আর কোন কথা নেই।
মেগ উপায় নেই কারণ যা কিছু করি না কেন, ম্যাডক্স সব কিছুর মধ্যেই থাকছে।
কিন্তু, কিন্তু এ ছাড়া যে আর কোন উপায় নেই জন। এ মাসের মধ্যে যদি কিছু করতে পারা যায় তাহলে ভালো না হলে তো আশা আমাদের ছাড়তে হবে। তুমি বিশ্বাস করো জন, পঞ্চাশ হাজার ডলারের জন্য যে কোনও ঝুঁকি নিতে আমি তৈরী।
কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে কি হবে? কোথায় পাঁচ মাস আর কোথায় আঠারো দিন,নানা-এ একেবারেই অসম্ভব। আমি তো কোন কিনারাই পাচ্ছি না।
মেগ বুক ভরে শ্বাস নিলো। যাক এতক্ষণে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল,চলে যাবার গল্পটা সত্যি সত্যিই অ্যানসন বিশ্বাস করেছে। ওঃ এতদিন ধরে তাকে কম ভাবতে হয়েছে। ভেবে ভেবে তবে না এরকম একটা গল্প খাড়া করা গেছে। মেগ গেলারকে বেঁধে রাখার জন্য সবকিছু করতে পারে। গেলার তার জীবন, তার স্বপ্ন, আশা, ভবিষ্যত।
মেগ ব্যাপারটা নিয়ে আমাকে ধীরে সুস্থে ভাবতে হবে। আজ রাতটা যদি এখানে থাকি তাহলে তোমারকি কোনও অসুবিধে হবে?
না না অসুবিধে আর কি? তুমি থাকবে এতে আর বলার কি আছে। মেগ বিলোল কটাক্ষে অ্যানমনের দিকে তাকিয়ে বলল, এগিয়ে এসে দুহাতে অ্যানসনের গলা জড়িয়ে ধরল। অ্যানসনের হাত তার শরীরের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতে লাগল। ঘৃণায় বিরক্তিতে মেগ বারবার শিউরে শিউরে উঠল।
আকাশে চাঁদ উঠেছে। খোলা জানলা দিয়ে ঘরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছেন জ্যোৎস্নার আলো। মেগ নিঃসাড়ে উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমুচ্ছে। রাত প্রায় শেষ হয়ে গেল। তিনটে বাজে। অ্যানসন-এর চোখে ঘুম নেই। একের পর এক চিন্তা তার মনে এসে ভিড় করছে।– হঠাৎ তার মাথায় বিদ্যুৎচমকের মতো কথাটা খেলে গেলো। তাইতো হ্যারী ডেভিস যে কি বলেছিল, হ্যাঁ মনে পড়েছে হ্যারী বলেছিল ব্যাপারটা কি আমার বাড়িতেও উঠতি বয়েসের মেয়ে আছে। তার কপালে কি আছে ভগবান জানেন। এই বিকৃত কাম মানুষগুলোর এক অদ্ভুত মনস্তত্ব, একজনকে ধর্ষণ করে এদের আশা মেটে না। এদের দরকার এখন আরো খোরাক নিত্যনতুন নতুন মেয়ে।
তা এ মতলবটা ত খারাপ না।
অ্যানসন ধড়মড় করে উঠে বসল, মেগকে ঠেলা দিলো, এই মেগ ওঠো ওঠো।
মেগ চোখ মেলে আড়মোড়া ভেঙে অ্যানসন-এর দিকে তাকাল। ওঠো ওঠো, হয়ে গেছে সব ঠিক হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি ওঠো।
মেগ উঠে বসল, বলল কি, কি হয়ে গেছে। অ্যানসন-এর চোখে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল।
কালকের খবরের কাগজটা কোথায়?
আছে নীচের তলায়, কেন, কি দরকার?
সেটা ঝটপট নিয়ে এসো, আর একটু কড়া করে কফি করো। হয়ে গেছে আর চিন্তার কোন কারণ নেই।
মেগ-এর বিস্ময়ের ঘোর তখনো কাটেনি। সে উঠে গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে দরজার দিকে এগোল।
তাড়াতাড়ি যাও। অতো ভেবে চিন্তে হাঁটার সময় এটা না। যাও পরে অনেক ভাবনা চিন্তার সময় পাবে, অ্যানসন বিছানায় উঠে বসল। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে ঘন ঘন টান দিতে লাগল।
মেগকয়েক মিনিট পরে এলো। তার হাতে কফির ট্রে। ট্রের ওপরে খবরের কাগজখানা ভজ করা। হে মেরে অ্যানসন কাগজটা তুলে নিল। চোখের সামনে মেলে ধরে জোরে জোরে প্রথম পৃষ্ঠার বিশেষ খবরটা পড়তে লাগল।
কাপে পট থেকে কফি ঢালতে ঢালতে মেগ চোখ তুলে বলল কি ব্যাপার কি পড়ছে?
আনসন হাত তুলে তাকেকথা বলতে বারণ করল। তারপর আগাগোড়া সংবাদটি পড়ে কাগজ ভাঁজ করে রেখে সে মুখ তুললল। ব্যস আর কোনো চিন্তা নেই। সব ঝামেলা চুকে গেল। এই দেখো। কাগজটা সে মেগ-এর দিকে বাড়িয়ে দিলো। মেগ হাতে নিয়ে কাগজ মেলে ধরলো তার চোখের সামনে। বললো, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
কি আশ্চৰ্য্য বুঝতে না পারার কি আছে। অ্যানসন কফির কাপ তুলে নিল। ওই যে, সেই বিকৃতকাম আততায়ী কর্তৃক যুবক নিহত, যুবতী ধর্ষিত, ওইটা আগাগোড়া পড়।
সংবাদটা মেগ আগাগোড়া পড়লো। শেষ চুমুক দিয়ে কাপ নামিয়ে রেখে অ্যানসন একটা সিগারেট ধরালো। মুখে ফুটে উঠলো আত্মপ্রসাদের হাসি।
মেগ পড়া শেষ করে চোখ তুলতে অ্যানসন বলল, একে বলে মাথা, বুঝলে?
ভেবে ভেবে কেমন একখানা বের করেছি। বিকৃতকাম ধর্ষণকারী পুরুষ, সহজে ওদের আশ মেটেনা। দিনের পর দিন লোভ ওদের বেড়েই চলে। এই আততায়ীটিই হবে আমাদের দাবার বোড়ে। বারলোকে খুন করে সে তোমাকে ধর্ষণ করবে। ম্যাডক্স তো কোন ছার। স্বয়ং ভগবান। এলেও এবার আর অবিশ্বাস করতে পারবে না।
আমাকে ধর্ষণ করবে, আমি তো ছাই কিছু বুঝতেই পারছি না। প্লিজ জন, একটু ভেঙে বলল।
ভেঙে বলার আর আছেটা কি। সবই তো খবরে পরিস্কার বলে দেওয়া হয়েছে। অ্যানসন সিগারটে এক দীর্ঘ টান দিলো একমুখ ধোয়া ছাড়লো, পলিস গুলো সব তরুণ-তরুণীদের এখন থেকে সাবধানে থাকতে বলেছে। তাদের ধারণা এই যৌন বিকারগ্রস্ত আততায়ী হয়তো আবার কাউকে আক্রমণ করতে পারে। এর মানে হল এই, পুলিস আর একটা আক্রমণের আশায় আছে। আমাদের পক্ষেও এটুকুই যথেষ্ট। উত্তেজনায় বিছানার উপর পা মুড়ে বসলো অ্যানসন, মেয়েটা পুলিসের কাছে আততায়ীর যে বর্ণনা দিয়েছে তার থেকে আমরা জানতে পারি আততায়ী বেঁটে, মুখ চ্যাপ্টা, চোখের দৃষ্টি জ্বর। পরনে ছিল তার কালো ওভারকোট কান অবধি নামানো কালো টুপি। মেয়েটির সঙ্গে হাতাহাতি করতে গিয়ে মাথার টুপি খসে পড়ে এবং তার মাথাজোড়া টাক প্রকাশ হয়ে পড়ে। একেবারে ছবির মতো বর্ণনা। তোমাকে-এর প্রতিটা শব্দ বহু মুখস্থ করে ফেলতে হবে। এই লোকই তোমার স্বামীকে গুলি করবে এবং তোমাকে ধর্ষণ করবে। পুলিস যখন আততায়ীর চেহারা জানতে চাইবে তুমি তাদের দ্বই এই বর্ণনা দিয়ে দেবে। ব্যস ঝামেলা চুকে গেল। পুলিসের মনে আর সন্দেহের চিহ্নমাত্র থাকবে না। আমরা বিনা ঝামেলায় পঞ্চাশ হাজার ডলারের মালিক হয়ে যাবো।
মেগ অবাক চোখে অ্যানসনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার মুখে কথা বেরোল না।
অ্যানসন আর একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, সেদিন তুমি না বলেছিলে, এ মাসের শেষাশেষি তোমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। তারিখটা কতো? কি বার?
আর তিনদিন পর শুক্রবার। মেগ বিমুখের মতো বললো কেন এটা জেনে কি হবে?
অ্যানসন বিড়বিড় করে বলল মোটে চারদিন। চারদিন মাত্র সময়, ঠিক আছে ওতেই হবে।
ওইদিন তোমাকে নিয়ে বাইরে ডিনার খেতে যেতে তুমি বারলোকে বাধ্য করবে। ডিনারের পর বায়না ধরবে। দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য কোন নির্জন স্থানে তোমাকে নিয়ে যেতে। হ্যাঁ ঠিক। গ্রিন হিল নয় তুমি ওকে জেসনস্ প্লেনে যাবার কথা বলবে। আমি ওখানে থাকবো। তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবো।
তারপর, মেগ জানতে চাইল। যেন বহুদূর থেকে তার গলার স্বর ভেসে এলো।
তারপর আর কি। অ্যানসন আঙুল দিয়ে খবরের কাগজ দেখালো এই ঘটনাই ঘটবে।
তার মানে ফিলকে তুমিই গুলি করবে?
আলবাত। আমি ছাড়া আর কে করবে, শুধু তাই নয় গুলি করার পর তোমাকে আমি আক্রমণ করবো, ধর্ষণ করবে। মেগ দ্যাখো, সত্যি কথা বলতে পঞ্চাশ হাজার ডলার–তা অমনি অমনি আকাশ থেকে টুপকরে তোমার কোলের ওপর পড়বেনা।এরজন্য তোমাকেকসরত করতে হবে। তোমার অবস্থা এমন হওয়া দরকার, যাতে পুলিশবা ম্যাডকারুর মনেই তিলমাত্র সন্দেহের উদ্রেক হয়। তাদের যেন বুঝতে অসুবিধা না হয় যে সেই বিকৃতকাম কোন বিকারগ্রস্ত আততায়ীই তোমাকে আক্রমণ করেছে। তারপর আততায়ীর চেহারা সম্পর্কে তোমার নিখুঁত বর্ণনা, ব্যস, কেল্লাফতে সুড়সুড় করে পঞ্চাশ হাজার ডলার গড়িয়ে আসবে।
কিন্তু আমি বলছিলাম।
এর মধ্যে আর কোন কিন্তুর স্থান নেই মেগ। অ্যানসন ঘাড় নাড়লো, ফ্লোরিডায় চলে যাবার আগে একমাত্র এভাবেই আমাদের কাজ হাসিল করা সম্ভব। এছাড়া অন্য কোন রাস্তা নেই। অন্ততঃ ম্যাডক্সকে এই একটা মাত্র উপায়েই বোকা বানানো যেতে পারে। অন্য যেভাবেই করিনা কেন, তাকে ফাঁকি দেওয়া যাবেনা। আমাদের এই পরিকল্পনার একটা চালাকি আছে। পুলিস যা আশা করে আমরা তেমনই করছি নতুন কিছু না।
মেগ অধৈর্য হয়ে,.বলল জন তোমার পরিকল্পনা সম্পর্কে আমার কিছুই বলার নেই। কিন্তু অন্য কয়েকটা খুঁটিনাটি বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। ধরো যদি সেদিন বৃষ্টি হয়, বৃষ্টির মধ্যে ফিল মোটেই জেসনস্ প্লেনে যেতে রাজি হবে না।
কথাটা অবশ্য মিথ্যে বলোনি।তবে আমরা আশা করবো, বৃষ্টি হবেনা।হলে তখন আর উপায় নেই। এখানে এই বাড়িতেই তখন যা করার করতে হবে।
তখন তোমাকে অন্য গল্প করতে হবে। বলবে, কে যেন দরজায় কড়া নাড়লো। তোমার স্বামী দেখতে গেল, তুমি ওপর থেকে একটা গুলির শব্দ শুনতে পেলে। তারপর সেই উন্মাদ তোমার ঘরে এসে ঢুকলল, তোমাকে আক্রমণ করলে, এই হবে তখনকার গল্প। অবশ্য জেসনস্ প্লেনে হলেই সুবিধে হয়, এখানে হলে একটু বেশি ঝুঁকি নেওয়া হবে।
আর একটা কথা ধরো সেই লোক শুক্রবার রাতের আগেই ধরা পড়লো। এদিকে আমরা কিছু জানতেও পারলাম না। সেরকম অবস্থায় পুলিসের কাছে কাগজের মতো বর্ণনা দিতে গিয়ে তো বোকা বনতে হবে।
ঠিক, এটা মাথায় আসেনি। বেশ ভালকথা মনে করিয়ে দিয়েছে। এসব খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আমাকে আরো ভাবতে হবে। মোটামুটি খসড়া পরিকল্পনা তোমাকে আমি জানিয়ে রাখলাম। যেটুকু পাল্টাবো, তোমাকে পরে জানাবো। আহা বেশ তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর পুলিসের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষমতাও তোমার থাকবে না। এর মধ্যে আমি খোঁজখবর নিয়ে জানবো সেই লোক ধরা পড়েছে কিনা। যদি ধরা পড়ে, আমি তোমাকে লাল ফুলের গুচ্ছ পাঠাবে। যদি ধরা না পড়ে থাকে, তবে পাঠাবো গোলাপের তোড়া।
যদি লাল ফুল পাঠাও, অর্থাৎ সে যদি ধরা পড়ে, তাহলে কি বলবো?
কি আর বলবে, যে কোন একটা লোকের বর্ণনা দিয়ে দেবে। এরকম তো প্রায়ই দেখা যায় একজন দুবৃত্ত একটা কাজ করার পর অন্য দুবৃত্তিরাও সেই কাজ করতে উৎসাহিত হয়। সুতরাং অন্য লোকের বর্ণনা দিলে পুলিসের মনে করার কিছু নেই।তবে ধরা না পড়লে ভালো। তাহলে সব একেবারে নিঝঞ্ঝাট হয়ে যায়।
মেগ অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। আনসন বলল কি ভাবছো তুমি?
না তেমন কিছু নয়। মেগ অ্যানসনের চোখে চোখ রাখলো। ঐ যে তুমি বললে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর আমার কথা বলার মতো শক্তি থাকবে না। ওকথা কেন বললে?
বাঃ সাতকাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা কার বাপ, আরে বাবা এতক্ষণ ধরে তাহলে কি বললাম। কাগজেই বা কি পড়লে তুমি। বদমাইশটা মেয়েটাকে তাড়া করতে করতে অনেক দূর নিয়ে গেছে, তাকে পিটিয়ে প্রায় আধমরা করেছে, তারপর তাকে ধর্ষণ করেছে।
মেয়েটির অবস্থা এখন সাংঘাতিক, এসব তো কাগজেরই খবর। তোমারও তো এরকমই হবে। অভিনয় বা ভান করার আর দরকার হবেনা। আর তাছাড়া অভিনয় করলেই তো আর পার পাওয়া যাবেনা, ম্যাডক্স তো ডাক্তারের রিপোর্ট দেখতে চাইবে। যখন দেখবে, সত্যিই তুমি ধর্ষিত হয়েছ তখনই সে স্থির নিশ্চিত হবে। সুতরাং বুঝতেই পারছে আগাগোড়া ব্যাপারটা তোমারই হাতে। তুমি যদি রাজি হও সবকিছু সামলাতে পারবে বলে ভরসা দাও তবেই হবে। তা না হলে সব মাটি।
মেগ উঠে জানলার কাছে গেল। মাঠের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মনের গোপনে একটা ভয়, একটা আতঙ্ক এসে তিলে তিলে দানা বাঁধতে লাগলো। দূর থেকে যেন ভেসে এলো গেলার এর কণ্ঠস্বর… ।
এ মাসের মধ্যেই আমার টাকা চাই। তোমার কাজ হবে, অ্যানসনকে এর মধ্যেই যা কিছু করার করতে বাধ্য করা। যদি তা করতে পার তাহলে তোমার আমার সম্পর্ক বজায় থাকবে। নাহলে ব্যস, পায়ে মাথা খুড়ে মরলেও আমাকে আর তুমি পাবে না।
তার চোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। গেলার জেরী প্রিয়তমা আমার, তোমাকে আমি হারাতে পারবো না, কিছুতেই পারবো না। তোমার জন্য আমি যে কোন দুঃখ কষ্ট মাথা পেতে নেবো। তুমি আমার, আমারই।
হাতের পিঠে চোখের জল মুছে ঘুরে দাঁড়াল মেগ। ম্লান হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে, ঠিক আছে জন, ঠিক আছে, তোমার জন্য আমি সব করবো। সব…
বুক থেকে যেন একটা বিরাট বোঝা নেমে গেলো অ্যানসন-এর। সে আরামে বালিশে মাথা রাখলো। কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে বললো পরশু অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আমি এখানে আসবো। খুঁটিনাটি সবকিছু নিয়ে সেদিন বিশদ আলোচনা হবে, তাহলে তুমি কথা দিচ্ছ। তোমার স্বামীকে নিয়ে তুমি শুক্রবার বেরোচ্ছো, জেসনস্ প্লেনে যাচ্ছে।
হ্যাঁ যাবো, ওকে রাজি করানোর ভার আমার।
অ্যানসন নাটকীয় ভঙ্গিতে দুহাত বাড়িয়ে দিলো, তাহলে এসো দেবী আমার, পঞ্চাশ হাজারী দেবী, আমার হৃদয়ে এসো অধিষ্ঠিত হও।
মেগ অনিচ্ছা সত্বেও এগোলো। অ্যানসনের আলিঙ্গনে ধরা দিলো।
.
অ্যানসনকে লিফট থেকে বেরোতে দেখে জাড় জোন্স উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে অভিবাদন। করলো। জোন্স অ্যানসনের অফিস বাড়ির নৈশ প্রহরী। গাট্টাগোট্টা শক্ত সবল চেহারার পুরুষ।
জাড মাথা তুলে বললল গুড ইভনিং মিঃ অ্যানসন। আপনার কি আজ বেশি রাত হবে কাজ সারতে?
কাজের চাপ কদিন হল বেড়েছে। দেরী হতে পারে। চট করে যা হোক দুটো খেয়ে আসি। ফিরে এসে আবার কাগজপত্র নিয়ে বসবো। বড়জোর এগারোটা অবধি থাকবো। আলো জ্বলতে
দেখে তুমি আবার ভেবো না যে আমার ঘরে চোরটোর ঢুকে পড়েছে।
না, না, মিঃ অ্যানসন কি যে বলেন, তা কেন ভাবতে যাবো। জোন্স-এর মুখে বিগলিত হাসি ফুটে উঠল। আপনি বললেন ব্যস, আপনাকে আর বিরক্ত করতে যাবো না।
জোন্সকে অ্যানসনের হাতে রাখতে হয়েছে। সে এখন না হয় নিপাট ভালোমানুষ, আগে কোনো কোনো দিন টাকা পয়সার ঘাটতি পড়লে রাস্তা থেকে সস্তা মেয়েদের অফিসেই নিয়ে আসতো অ্যানসন। জোন্স দেখেও দেখত না। বড়দিনে বা অন্যান্য বিশেষ উৎসবের দিনে সে জোন্সকে দুহাত ভরে বকশিস দিতো। ওতেই জোন্স সন্তুষ্ট।
অ্যানসন চোখ তুলে তাকাল, পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে পাঁচ ডলারের একখানানোট তুলে বললো নাও এটা ধরো জোন্স, কদিন ধরেই দেখছি রোজ তুমি একই শার্ট পরে অফিসে আসছ। একটা নতুন শার্ট কিনে নিও।
জোন্স নোটটা নিয়ে হেসে একটা বিরাট সেলাম ঠুকলো। অ্যানসন বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসে গাড়ি ছাড়লো।
লুইসির ছোট রেস্তোরাঁর এক কোণে বসে খাবার খেতে খেতে আগাগোড়া পরিকল্পনাটা মনে মনে অ্যানসন পর্যালোচনা করলো। বারবার নিজের বুদ্ধিকে তারিফ করলো। মেগ-এর ঝাটের কিছু নেই। তাকে কেউ সন্দেহ করবে না। তবে হ্যাঁ, আমারও যথেষ্ট সাবধানে থাকতে হবে। সন্দেহের ছোঁয়াচ যেন আমার গায়েও না লাগে।
অ্যানসন খাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি অফিসে ফিরে এলো। নিজের ঘরে ঢুকে একটা সিগারেট ধরালো। চেয়ারে শরীর এলিয়ে একমুহূর্ত চিন্তা করে স্থির করলো তার পরের কার্যপদ্ধতি।
জোন্স-এর রুটিন তার মুখস্থ। রাত দশটার প্রথম চক্করে বেরোয় সে। লিফটে উঠে একেক তলা ঘুরে ঘুরে দেখে। তারপর সাড়ে এগারোটা নাগাদ নিজের ঘরে ফিরে আসে। দ্বিতীয়বার বেরোয় সোয়া একটার।
অ্যানসন অ্যাসট্রেতে সিগারেট নিভিয়ে সোজা হয়ে বসলো। টেপ রেকর্ডারে নতুন এক রীল ফিতে লাগাল। মাইক্রোফোন এনে রাখলো টাইপ মেসিনের সামনে। তারপর সুইচ টিপে চালু করে টাইপ করা শুরু করল। প্রায় একঘণ্টা ধরে অ্যানসন এলোপাথাড়ি হাত চালাল। কতগুলো। অর্থহীন খটখট শব্দ ধরা পড়লো টেপ রেকর্ডারের ফিতেয়।
দশটা বাজার কিছুক্ষণ পর লিফটের শব্দ শোনা গেলো। জোন্স বেরিয়েছে তার পরিক্রমায়। এবার আরো তাড়াতাড়ি হাত চালান অ্যানসন। কিছু সময় পর আবার লিফটের শব্দ হতে সে বুঝলো, জোন্স ওপর তলায় গেলো। টাইপ করা বন্ধ করে সে টেপ বন্ধ করলো। সযত্নে রীলটা খুলে রেখে দিলো ড্রয়ারে। তারপর ঘরের আলো নিভিয়ে দরজা বন্ধ করলো। সোজা সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় নেমে এসে গাড়িতে উঠে গাড়ি ছাড়ল।
.
ললি চা চা ক্লাবের বারে এক গ্লাস হুইস্কি নিয়ে কোণের এক টেবিলে একলা বসে আছে। বসে বসে পায়ে খিল ধরে গেছে। ওঃ একটা ঘন্টা পার হয়ে গেল, খদের এখনো জুটলো না। হঠাৎ ঘৃণায় চোখ ঘোট ঘোট করে সে দরজার দিকে তাকাল। বেরিল হরসি এসে গটমট করে ঢুকলো। বেরিল কি জোই না দিয়েছে। লাল রঙের কোট, কানে বড় বড় কানপাশা, জো ডানকানকে একেবারে হাতের পুতুল করে রেখেছে। তার দু-চক্ষের বিষ এই বেরিল হরসি। খদ্দের ভাগানো এই হতচ্ছাড়িটাকে দেখলেই ঈর্ষায় তার শরীর রি রি করে ওঠে।
বেরিল কিন্তু এসব দেখেও দেখে না। সে একটু বেপরোয়া ধরনের, এই মেয়েটার সঙ্গে কারোর অসদ্ভাব নেই। সে ললিকে দেখে যথারীতি হাত তুলল। এগিয়ে এসে বসলো তার মুখোমুখি চেয়ারে।
তারপর? সে বললো একেবারে একলা কি ব্যাপার?
একজনের আসার কথা বসে আছি। ও হ্যাঁ, তারপর তোমার কেমন চলছে বলো।
ভালো, এখন জোর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। ও হ্যাঁ ভালোকথা, তোমাকে আজকাল অ্যানসনের সঙ্গে দেখি না। ঝগড়া ঝাটি হয়েছে নাকি? না, ঝগড়া ঝাটির কি? আমিই আর যাই না। যার পকেটে দু-পয়সা নেই যে এক গ্লাস হুইস্কি অবধি কিনে খাওয়াতে পারে না, তার সঙ্গে আবার সম্পর্ক কিসের? ওকে আমিই ভাগিয়ে দিয়েছি।
আবোল-তাবোল কি বকছু, বাঁকা তুলে বেরিল বলল অ্যানসনের টাকা নেই, টাকা না থাকলে জোর হাজার ডলার সে সুদ সমেত ফেরৎ দেয় কিভাবে? তুমি জানো না অ্যানসন গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে। পেয়ে তোমাকে ভাগিয়ে আর কাউকে নিয়ে আটকে পড়েছে। পতঙ্গে র পাখা গজিয়েছে।
বেরিল নিজের রসিকতায় নিজেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল।
বেরিল-এর হাসির শব্দটা যেন ললির মস্তিষ্কের কোষে কোষে আগুন ছড়ালো। তাইতো, অ্যানসন হাজার ডলার শোধ করলো কোত্থেকে। টাকানা থাকলে কেউ হাজার ডলার বের করতে পারে। ও টাকা পেল কোত্থেকে, কত পেলো।
ললি গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে উঠল। হ্যালো কে কথা বলছেন?
জেরী…আমি মেগ।
বলল, কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলে তো।
অ্যানসন রাজি হয়েছে, সব ঠিকঠাক। এই সময় তোমার সঙ্গে একবার দেখা হলে ভাল হত।
গেলার নড়েচড়ে বসল। সব ঠিকঠাক? কাজটা কবে হচ্ছে?
শুক্রবার, ও বৃহস্পতিবার এখানে আসছে। তার আগেই তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই।
ঠিক আছে কাল আমি যাবো। ছাড়ছি। গেলার ফোন নামিয়ে রাখল।
পাশের মেয়েটা পাশ ফিরে বলল, মনে হল যেন মেয়েছেলের গলা, কে কথা বলছিল?
গেলার বিছানায় শুয়ে তাকে দুহাতে বুকের কাছে টেনে নিল। তার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল আমার মাগো মা, মার সঙ্গে কাল একবার দেখা করতে যাবো। কতদিন মাকে দেখিনি।
মা? তোমার আবার মা আছে নাকি? বাঃ আছে না। সে তাকে আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরলল, মা না থাকলে আমি হলাম কোত্থেকে। দুষ্টু কোথাকার তুমি কিছু জানো না, গেলার তার থুতনি ধরে নেড়ে দিল। বুকের ওপর উঠে বসল।
.
দরজা খুলে ম্যাডক্স-এর কামরায় ঢুকে প্যাটি দেখলো ম্যাডক্স অভিনিবেশ সহকারে একখানা পলিসির ওপর ঝুঁকে রয়েছেন।
সে একটু ইতস্ততঃ করলো, বললো ঠিক আছে, আপনি এখন ব্যস্ত আমি বরং পরে আসবো।
ম্যাডক্স মুখ তুলে বললো কেন? কি দরকার বলে।
বারলোর ব্যাপারে সেই ডিটেকটিভ এজেন্সি রিপোর্ট পাঠিয়েছে। আপনি কি রিপোর্টটা এখন দেখবেন?
বারলো…তিনি কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে একমুহূর্ত কি যেন ভাবলেন, ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, সেঁই মালী থুড়ি বাগান ব্যবসায়ী, হ্যাঁ নিশ্চয়, এখনই দেখবোর তুমি দেখেছ নাকি।
দেখেছি। সংবাদগুলো বেশ চমকপ্রদ। আপনার ভাল লাগবে। সে হাতের ফাইলটা তার দিকে এগিয়ে দিলো। স্বামীটির বিষয়ে তেমন কিছু নেই। যা কিছু খবর সব ওর স্ত্রীর সম্বন্ধে, আহা কি একখানা জিনিস!
জিনিস! সে আবার কি?
দেখুন পড়লেই সব বুঝতে পারবেন। মৃদু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে প্যাটি।
ম্যাডক্স একটা সিগারেট ধরালেন। পর পর কয়েকটা টান দিয়ে একমুখ ধোয়া ছাড়লেন।তারপর ফাইল খুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে সেই আশ্চর্য রিপোর্ট পড়তে লাগলেন।