৬ষ্ঠ অধ্যায়
রূপকথায় সংসারের চিত্রপ্রদর্শন
অনন্তর ধৃতরাষ্ট্র দুঃখ প্রকাশ করিয়া কহিলেন, “হায়! সেই ব্রাহ্মণের তথায় অবস্থান করা নিতান্ত কষ্টকর হইল, সন্দেহ নাই। তিনি কি নিমিত্ত তথায় অবস্থান করিতে সম্মত হইলেন? তিনি যে স্থানে বাস করিতেছিলেন, সে স্থান কোথায় এবং তথা হইতে তাঁহার পরিত্রাণের উপায়ই বা কি, তাহা কীৰ্ত্তন কর। তাঁহার উদ্ধারের নিমিত্ত আমার নিতান্ত বাসনা হইতেছে।”
বিদুর কহিলেন, “মহারাজ! মোক্ষধর্ম্মবিৎ [মুক্তিপ্রদ ধর্ম্মে অভিজ্ঞ] পণ্ডিতগণ পূর্বোক্ত উপাখ্যান সংসারের আদর্শস্বরূপ কীৰ্ত্তন করিয়া গিয়াছেন। মানবগণ উহা বিশেষ অবগত হইয়া ও সাবধানে অবস্থান করিতে পারিলে পরলোকে সুকৃতিলাভে সমর্থ হয়। ইতিপূর্বে আপনাকে যে মহারণ্যের কথা কহিলাম, উহা মহাসংসার। উহাতে যেসকল হিংস্ৰজন্তু আছে, তাহারা ব্যাধি, আর সেই বৃহৎকায় কামিনী রূপ-লাবণ্যবিনাশিনী জরা এবং সেই কূপ মানবগণের দেহস্বরূপ। ঐ কূপের অধোভাগে যে মহাসর্প বাস করিতেছে, সে মনুষ্যগণের সর্ব্বসংহারকর্ত্তা, প্রাণীগণের অন্তক কাল। ঐ কূপমধ্যে যে লতা সঞ্জাত হইয়াছে এবং যাহাতে সেই ব্রাহ্মণ লম্বমান রহিয়াছে, উহা মনুষ্যদিগের জীবিতাশা; যে ষড়ানন কুঞ্জর ওই কূপমুখস্থিত বৃক্ষসমীপে গমন করিতেছে, উহা সংবৎসর; উহার ছয় মুখ ছয় ঋতু এবং দ্বাদশ চরণ দ্বাদশ মাস। যেসকল মূষিক ও পন্নগ ঐ বৃক্ষ ছেদন করিতেছে, উহারা প্রাণীগণের আয়ুক্ষয়কর দিবা ও রাত্রি। আর যেসকল মধুকরের কথা উল্লেখ করিয়াছি, উহারা কাম। আর সেই বৃক্ষ হইতে যে মধুধারা নিঃসৃত হইতেছে, উহা কামরস। মানবগণ ওই রসে সতত নিমগ্ন হইয়া থাকে। হে মহারাজ! পণ্ডিতগণ সংসারকে এইরূপ স্থির করিয়া উহাতে বদ্ধ হয়েন না।”