রচনাকাল (অথর্ববেদ সংহিতা)
অথর্ববেদের রচনাকাল সম্পর্কে যে কোনো বিবরণকেই কতকটা স্ব-বিরোধী বলে মনে হতে পারে, কেননা সংক্ষেপে বলতে গেলে, ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদের তুলনায় অথর্ববেদ একই সঙ্গে প্ৰাচীনতর ও নবীনতর। সংহিতাপাঠের দিক দিয়ে সামবেদ তাৎপৰ্যহীন, যেহেতু পাঠগতভাবে এর অধিকাংশই ঋগ্বেদ থেকে ঋণ হিসাবে গ্ৰহণ করা হয়েছে। অথর্ববেদের বিষয়বস্তু, বিশেষত তার ঐন্দ্ৰজালিক অংশটি সভ্যতার উষাকাল থেকে জনসাধারণের মধ্যে বর্তমান ছিল; কিন্তু অথর্ববেদের বহু সূক্তই পরবর্তী কালে রচিত। আর্যরা তখন সদানীরা নদী অতিক্রম করে এতাবৎকাল পর্যন্ত নিষিদ্ধদেশ রূপে পরিচিত অঞ্চলে অর্থাৎ বিহার ও সম্ভবত উত্তর-পশ্চিম বাংলায় প্ৰবেশ করেছিল। অথর্ববেদের সাধারণ পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষত সেই ব্রাত্যগোষ্ঠীর উপস্থিতি–যাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত বা বুদ্ধদেবের সমকালীন নাস্তিক্যবাদী ধর্মগোষ্ঠীর পূর্বসূরি-আধ্যাত্মিক চাঞ্চল্য ও অস্থিরতার সূত্রপাত ঘটানোর অন্যতম কারণ ছিল। মগধে যে অপেক্ষাকৃত স্বাধীন, বেদবহির্ভূত অরক্ষনশীল ধর্মমত প্রচলিত ও স্বয়ংশাসিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যসমূহের সম্মিলিত সঙঘ বর্তমান ছিল—তা আৰ্যদের পরিচিত অভিজ্ঞতা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। নতুন অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবেশ, চিন্তাধারা ও প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান পরিচিতি এবং সেই সঙ্গে বৌদ্ধধর্ম ও অন্যান্য নাস্তিক্যবাদী গোষ্ঠী ও আন্দোলনের বিস্তারের ফলে সংহিতা রচনার পর্যায় সমাপ্ত হল। বৈদিক বিশ্ববীক্ষার দীর্ঘকাল-ব্যাপী ক্ৰমিক অবরোহণের পথে অথর্ববেদ সংহিতার সংকলন একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক।